![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এতদ্রুত ক্যাপ্টেন সাহেবকে ফেরত আসতে দেখে একটু অবাক হলেন ল্যান্স নায়েক শফি।এর আগে তিনি বেরিয়ে যাবার পরপরই কিউএম সারা ব্যাটালিয়ন ফলইন করিয়ে সিডিয়ে মার্কেটসহ আরও অনেক জায়গায় লাগিয়েছেন।ক্যাপ্টেন আহমেদ আলীকে গ্রেফতার করে কোয়ার্টার গার্ডে ভরেছেন। পাকিস্তনি ক্যাপ্টেন বেচারা আধো ঘুম আধো জাগরণে কিছু বুঝে ওঠার আগেই কোয়ার্টার গার্ডে ঢুকে পড়েছেন, স্ট্রাইপড স্লিপিং স্যুটে তাঁকে লাগছে জেল খানার কয়েদির মত।খালেক গাড়ি থেকে নেমেই, দৌড়ে দো’তলায় উঠতে উঠতে তাঁকে বললেন ‘হুসিয়ার রাহে না, টু আইসি আসছেন’।খালেক সাহেবকে কখনও উর্দু বলতে শোনেনি শফি। এসব হচ্ছে কী?
একটু পর জিয়া এসে দেখলেন, ক্যাপ্টেন খালেকুজ্জামান জনাপাচেক, সৈনিক নিয়ে তাঁকে অভ্যর্থনা করার জন্যে দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি গাড়ি থেকে নেমেই পাকিস্তানি অফিসার দু’জনকে গ্রেফতার করার ইশারা করে বললেন, ‘খালেক, গেট এ জিপ’। পাকিস্তানি অফিসারদের গ্রেফতার করতে দেখে, ট্রাকের বাঙালি সৈনিকরা উৎফুল্ল হয়ে উঠল, কেউ কেউ জয় বাংলা বলে চিৎকার দিয়ে উঠলো, তাদের থামাতে ইশারা করলেন, জিয়া, উৎসব করার সময় এখনও আসেনি। আসে পাশের পাকিস্তানিরা সতর্ক হয়ে যেতে পারে। অলি আহমেদ নীচে নামার আগেই, সিওর জীপ এসে হাজির হল, সিও কে নামিয়ে দিয়ে খানিক আগে সেটি ফেরত এসেছেন।জিয়া গাড়িতে উঠে বসলেন, সিও’র সাথে বোঝাপড়া বাকি আছে।ততক্ষণে অলি নেমে এসেছেন, ‘ বললেন, স্যার এসকর্ট নিয়ে যান। জিয়া দাঁড়ালেন না। ড্রাইভারকে বললেন, ‘আল হামরা’।
লেঃ কর্ণেল জাঞ্জুয়ার সরকারি বাসভবন আল হামরা। জিয়াকে বন্দরে, ব্রিগেডিয়ার আনসারির কাছে পাঠিয়ে তিনি নিশ্চিন্তে ঘুমোতে গিয়েছিলেন। বাসার বাঙালি গার্ডদের সরানোর কথা তাঁর মনে হয়নি। তিনি ভেবেছিলেন, টু আইসি গ্রেফতার হলে, এমনিতেই তাঁদের মনোবল ভেঙে যাবে। জিয়া কে দেখে কোন ভাবান্তর হলো না গার্ডদের, বরং এই গভীর রাতে তাঁকে দেখে ভাবলেন, তিনি গার্ডদের ডিউটি চেক করতে এসেছেন। জিয়া সরাসরি চাপ দিলেন কল বেলে।জাঞ্জুয়া নিজেই দরজা খুলে, পাজামা-পাঞ্জাবি পরা অবস্থায় বেরিয়ে এলেন। জিয়া কে দেখে তিনি ভুত দেখার মতই চমকে উঠলেন, ‘বললেন উহা পার সব ঠিক ঠাক হায়?’ জিয়া তার উত্তর না দিয়ে বললেন, স্যার আপনার সাথে কথা আছে, বাইরে আসেন।অত্যন্ত ধূর্ত জাঞ্জুয়া, বললেন, ঠিক হ্যায়, আন্দার আওনা, চায়ে পিও ফের বাত কারেঙ্গে।জিয়া বললেন, এখানে নয়, লেটস গো টু দ্য লাইন আদার অফিসার্স আর আলসো ওয়েটিং’। কিছুক্ষণ ভাবলেন জাঞ্জুয়া, তারপর বললেন ‘ঠিক হ্যায়, চ্যলে’।
ড্রাইভিং সিটে উঠে বসলেন জিয়া, জাঞ্জুয়া বসলেন তাঁর পাশে। ড্রাইভারসহ জাঞ্জুয়ার বাসার দু’জন সৈনিক উঠলো পেছনে।একটু পর গাড়ি থামলো, কোয়ার্টার গার্ডের সামনে। সেখানে ক্যাপ্টেন খালেক, লান্স নায়েক, শফি আর সেপাই রবিউল আনাম অস্ত্র হাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন।গাড়ি থেকে নেমে রবিউলের রাইফেল, ছিনিয়ে নিয়ে জাঞ্জুয়া কিছু বোঝার আগে তার বুকে তাঁক করলেন, জিয়া, বললেন, ‘ স্যার, ইউ আর আন্ডার এরেস্ট, ডোন্ট ট্রাই টু রিগেইন দ্য কমান্ড।একেবারে স্তব্ধ হয়ে গেলেন, জাঞ্জুয়া, জিয়া খালেককে বললেন, ‘টেইক হিম টু দ্য কোয়ার্টার গার্ড’।
জাঞ্জুয়া স্বপ্নেও এই পরিণতির কথা ভাবেননি। কোয়ার্টার গার্ডে গিয়ে তিনি একেবারে মুসড়ে পড়লেন। তোতলাতে তোতলাতে বললেন, ‘মাই ফ্যামিলি স্যুড নো হোয়্যার আই এম’।খালেক বললেন, ‘স্যার, কোন চিন্তা করবেনা, ভাবীদের জানিয়ে দেওয়া হবে।
মেজর জিয়ার হাতে তখন নষ্ট করার মত সময় নেই। তিনি দ্রুত দো’তলায় উঠে রাজনীতিবিদদের সাথে টেলিফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেন।ডিসি এসপিকেও বার্তা পাঠানোর চেষ্টা করলেন। ক্যাপ্টেন, অলি বললেন, ‘স্যার আমরা যেহেতু বিদ্রোহ শুরু করেছি, ট্রুপ্সদের বিক্ষিপ্ত অবস্থায় বাইরে রাখা ঠিক হবে না’। তিনি ক্যাপ্টেন সাদেক, লেফটেন্যান্ট শমসের মুবিন, আর মাহফুজকে খবর পাঠালেন বায়েজিদ বোস্তামি থেকে চলে আসতে।
এইটথ, বেঙ্গলের মেসের দক্ষিণে ইপিআর মেসে দু’জন পাকিস্তানি অফিসার থাকতেন, খালেকুজ্জামান, তার ব্যাটম্যান সেপাই নুরুলকে পাঠালেন তাদের ডেকে আনতে। নুরুলঅকে দেখেই ক্যাপ্টেন নজর নামে তাদের একজন, রাইফেল তুলে হুমকি দিলেন। অফিসারদের রুমে রাইফেল থাকার কথা না। ভয় ও বিষ্ময় নুরুলকে যুগপৎ ভাবে নার্ভাস করে ফেললো। তিনি সরাসরি গুলি করলেন নজরকে। অন্য জনকে গ্রেফতার করা হলো। নজরের মৃত্যুর সংবাদে মন খারাপ হলো খালেকের কিছুদিন আগেই তারা এক সঙ্গে ক্যাপ্টেন থেকে মেজর হয়ার পরীক্ষা দিয়েছেন। নজর ছিলেন তাঁর স্টাডি পার্টনার।যুদ্ধ কত কিছু বদলে দেয়!
জাঞ্জুয়াকে আনার সময় মেজর জিয়া মেসে গিয়ে, মীর শওকতকে জাগিয়ে এসেছিলেন। তিনি ইউনিটে এলেন একটু পর।জিয়ার সাথে তাঁর দেখা হলো কোয়ার্টার গার্ডের সামনে।জিয়া বললেন, ‘তুমি কী আমাদের সাথে আছো?’ এক মুহুর্তও চিন্তা করলেন না শওকত, বললেন, ‘অবকোর্স, হোয়াই নট?
জিয়া এসময়, জাঞ্জুয়াকে অধিনায়কের অফিসে নিয়ে গেলেন। অফিসারের চেয়ারেই তাঁকে বসতে দেওয়া হলো।অন্য অফিসাররা রয়ে গেলেন কোয়ার্টার গার্ডের সামনে। অলি আহমেদ তখন জিয়ার হয়ে নেতাদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। একটু পর শওকত উপরে গেলেন। জিয়া নেমে এসে আবার রাইফেল হাতে নিলেন, বললেন, ‘খুব সতর্ক থাকো সবাই, কেউ চালাকি করলেই গুলি’। খালিকুজ্জামান তখন নেভির গাড়ির ড্রাইভার আর বন্দী একজন নেভী সৈনিকের দিকে আগাচ্ছিলেন, রাইফেল নিয়ে ভয় দেখাতে, তাঁরা দু’জনই কেঁদে ফেললো, স্যার আমরা, বাঙালি স্যার, আমার বাড়ি পটুয়াখালি, আর হ্যার বাড়ি যশোর’। হেসে ফেললো, অন্য সবাই। এরকম সিরিয়াস অবস্থার সাথে সেতা মানানসই নয়। জিয়া তখন ব্যাটালিয়নের নতুন সিও। তাঁর দিকে চোখ পড়তেই, হাসি বন্ধ হয়ে গেলো সবার।
সুবেদার মেজর মোহাম্মাদ আলী ইউনিটের বয়োজ্যেষ্ঠ সৈনিক, তবে তাঁর চলা ফেরা দেখে সে সব বোঝা যাচ্ছিলো না, তিনি সকল সৈনিককে জড়ো করে ফেললেন কোয়ার্টার গার্ডের সামনে, তারপর শওকতকে বললেন, ‘স্যার নতুন সিও সাবরে কিছু বলতে বলেন’।
শওকতসহ ইউনিটের সবাই তখন কেমন ঘোরের মধ্যে। শওকতের মন খারাপ হয়ে গেলো, তার কোম্পানিটা পোর্ট থেকে ফেরত আসতে পারেনি।তিনি বললেন, এখন টু আইসি সাহেব আপনাদের সাথে কথা বলবেন, কোন দরবার নয়, বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে তিনি কথা বলবেন।
নতুন অধিনায়কের কথা শোনার জন্যে সৈনিকরা উদগ্রীব। নির্বাচনে আওয়ামীলীগের জয়ের পর থেকেই তারা বাঙালি সরকারের অপেক্ষায় ছিলো।এতদিন বিভিন্ন ভাবে নিজেরা নিজেরা মানসিক ভাবে প্রস্তুতি নিয়েছিলো।সরাসরি অফিসারদের অংশগ্রহণ এবং নেতৃত্ব তাদের কাছে স্বপ্নের মত লাগছিলো। তাঁদের আবেগে জিয়াও আবেগাক্রান্ত হয়ে পড়লেন।তিনি সকলকে শপথ করালেন,বললেন, ‘পশ্চিম পাকিস্তানিরা যে যুদ্ধের মধ্যে আমাদের ঠেলে দিয়েছে, দেশ স্বাধীন করে তাঁর দাঁত ভাঙ্গা জবাব দিতে হবে।হয় মারবো নয় বীরের মত মরবো তোমরা রাজী’।সকলে সমস্বরেঃ জবাব দিলো ‘জয় বাংলা’। মধ্য রাতের নিরবতা বিদির্ণ করে সেই ধ্বনি নাসিরাবাদ এবং আশেপাশের ভীতবহবল, এবং আক্রান্ত বাঙালিদের মনে সাহস ছড়িয়ে দিতে লাগলো।
©somewhere in net ltd.
১|
০৮ ই আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৩:৩০
সামাজিকমানুষ বলেছেন: ভাই আপনার একটা লিখা পড়ে জানতে পারলাম আপনি "ইমারজেন্স বায়ো এনারজি " কোমপানি তে কাজ করছেন, আপনার কাছ থেকে আমার কিছু পরামর্ষ নিতে হবে।
তাই আপনার মোবাইল নাম্বারটা আমাকে দিন।
[email protected]