![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমরা জানি একদিন আমরা মরে যাব এই জন্যেই পৃথিবীটাকে এত সুন্দর লাগে।যদি জানতাম আমাদের মৃত্যু নেই তাহলে পৃথিবীটা কখনোই এত সুন্দর লাগতো না
ঘুম। নির্ঘুম। বেশি ঘুম। ঘুমঘুম ভাব। ঘুমের অভাব। ঘুমের ব্যাঘাত। স্বপ্নের আঘাত। ঘুমিয়েও না ঘুমের ভাব। আনন্দের অভাব। দিনের বেলা তন্দ্রাচ্ছন্ন ভাব। কান্তিবোধ। দুর্বল মনোযোগ। খিটমিটে মেজাজ। এসব কিছুই ঘটে ঘুমের অভাবে, যাকে আমরা বলি নির্ঘুম বা অনিদ্রা।
সুনিদ্রার বিপরীত অনিদ্রা। ঘুম ভালো হলে তাকে বলে সুনিদ্রা। সুনিদ্রা হলে শরীর ও মন সতেজ থাকে। কাজে মন বসে। মনে আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে। মেজাজ ভালো থাকে। ভালো ভালো কাজের পাহাড় গড়ে ওঠে।
গড়ে একজন মানুষের দৈনিক সাত-আট ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন হয়। সাধারণভাবে যদি কারো ঘুম না আসে, কিংবা কারো ঘুমোতে অসুবিধা হয়, অথবা খুব ভোরে ঘুম ভেঙে যায় এবং আর ঘুমোতে না পারে, আবার কারো কারো রাতে বারবার ঘুম ভেঙে যায়। এসব ঘটনা সপ্তাহে অন্তত তিনবার করে এক মাস ধরে ঘটতে থাকলে তার দিনের বেলা তন্দ্রাচ্ছন্নভাবে বৃদ্ধি পাবে। কাজে মনোযোগ হারাবে। পেশাগত দায়িত্ববোধ কমে যাবে। সামাজিক যোগাযোগে বিঘ্ন ঘটবে। মনে অশান্তি সৃষ্টি হবে। এসব লক্ষণের মাধ্যমে অনিদ্রার পরিচয় ফুটে ওঠে।
অনিদ্রার বিভিন্ন কারণ রয়েছে। এর মধ্যে মানসিক চাপ, বিষন্নতা, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা অন্যতম। বিষণœতায় অনিদ্রার চরিত্র হচ্ছে, খুব সকালে ঘুম ভেঙে যাওয়া। উদ্বেগ আক্রান্ত রোগীদের ঘুম আসে কাজের মধ্যে বা ভ্রমণের সময়। আর নারকোলেপ্সির রোগীদের দিনের বেলা ঘুমের শেষ নেই, যদিও সে রাতে ভালো ঘুমিয়ে থাকে। উত্তেজক খাবার বা পানীয়, যেমন ক্যাফেইন বা অ্যালকোহলের অভ্যাস, ঘুমের বড়ির আসক্তি প্রভৃতিও ঘুম কমিয়ে দেয়ার কারণ হতে পারে। ব্যথার ওষুধ, উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ, মানসিক অবসাদের ওষুধ, ক্যান্সারের কেমোথেরাপি প্রভৃতিও ঘুম বিভ্রাট তৈরি করে থাকে।
অভ্যাসের পরিবর্তন, শোয়ার জায়গা পরিবর্তন, চা-কপি পান, রাত জাগার অভ্যাস, শোয়ারঘরে টেলিভিশন দেখার অভ্যাস প্রভৃতি কারণেও ঘুম বিভ্রাট হয়ে থাকে।
জনমানসে দুই ধরনের ঘুম রয়েছে। হালকা ঘুম ও গভীর ঘুম। এ গভীর ঘুমে মানুষ স্বপ্ন দেখে। গভীর ঘুম মানুষকে শান্তি এনে দেয়। মনকে সতেজ করে। ভালো ঘুমই মানুষকে ভালো রাখে। আর ভালো ঘুমের জন্য চাই ভালো খাবার। কিছু ভিটামিন, অ্যামিনো অ্যাসিড, এনজাইম আছে, যা ঘুমকে প্রভাবিত করে। মস্তিষ্কের পিনিয়াল গ্রন্থি এ পুরো পদ্ধতিটাকে নিয়ন্ত্রণ করে। খাবারে কিছু কিছু পদার্থের উপস্থিতি ও অনুপস্থিতি ঘুমের গভীরতা বাড়াতে বা কমাতে পারে। কিন্তু ঘুমের সময় এসব পদার্থ বাড়াতে সাহায্য করে না।
মেলাটনিন সেই রকমই একটি পদার্থ। বয়স্কদের জন্য মেলাটনিন খুব প্রয়োজনীয়। মেলাটনিন দিনের বেলা কোনো কাজ করে না। তাই দুপুরে ঘুমের জন্য মেলাটনিনের প্রয়োজন হয় না। আলোতে মেলাটনিন কমে যায়। ভাত, কলা, কর্ন, রসুন, টমেটোতে প্রচুর পরিমাণ মেলাটনিন থাকে। ট্রিপটোফ্যানও ঘুমের জন্য উপকারী। ট্রিপটোফ্যান মস্তিষ্কের অন্য এনজাইমগুলো ব্যবহার করে ঘুম বাড়ানোর নির্দেশ দেয়। অনিদ্রা কাটাতে ট্রিপটোফ্যানের জুড়ি নেই। দুধ, ছানা, পনির, আম, সূর্যমুখী তেল, তিলের তেলে প্রচুর ট্রিপটোক্যান থাকে। আলু, কলা, পাউরুটি, প্রভৃতিতে যে সারাটনিন থাকে তা ঘুম পাড়াতে সাহায্য করে। কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট, বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ঘুমের জন্য উপকারী। সবুজ শাকসবজিতে থাকে প্রচুর ম্যাগনেশিয়াম, যা ঘুমের জন্য খুব উপকারী।
ঘুমের ব্যাঘাত করে এমন সব খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। যেমন কফি, সুপারি, চকোলেট, প্রিজারভিটিস দেয়া খাবার, বেগুন, পালং শাক প্রভৃতি। আর ভালো ঘুমের জন্য সারা দিন প্রচুর পানি পান করুন। কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট খাবার, যেমন ফল-মূল, শাকসবজি ঘুমের জন্য উপকারী। রাতে মিষ্টিজাতীয় খাবার বা কফি পান থেকে বিরত থাকুন। ভিটামিন ‘বি’ যুক্ত খাবার বেশি বেশি খেতে হবে। মাছ, গোশত, ডিম, সবুজ শাকসবজিতে প্রচুর ভিটামিন ‘বি’ পাওয়া যায়।
অনিদ্রা কাটাতে প্রতিদিন শোয়ার আগে দুধ-মধুর শরবত পান করতে পারেন। গরম দুধে মধু মিশিয়ে প্রতিদিন এক গ্লাস করে খেতে পারেন অনিদ্রায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা। গরম দুধ ঘুমের জন্য উপকারী। দুধে থাকে ট্রিপটোক্যান নামক অ্যামিনো অ্যাসিড, যা সিভেটিভ হিসেবে কাজ করে। দুধে ক্যালসিয়ামও থাকে, যা মস্তিষ্ককে ট্রিপটোফ্যান ব্যবহারে সাহায্য করে। আর মধুতে থাকে গ্লুকোজ, যা মস্তিষ্কে অরেক্সিনের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে। অরেক্সিন এক ধরনের নিউরো ট্রান্সমিটার, যা অ্যালার্টনেসকে প্রভাবিত করে।
ভালো ঘুমের জন্য একটি রুটিন মেনে চলুন। প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যান। প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম থেকে উঠুন। রাতের খাবার সন্ধ্যা রাতে সেরে নিন। রাতে খাবার সহজপাচ্য হওয়া দরকার। ঘুমোনোর আগে ধূমপান করবেন না। ঘুমের বড়ি খাবেন না। সন্ধ্যার পর চা-কফি খাবেন না। ঘুম নিয়ে দুশ্চিন্তা করবেন না। ঘুমোনোর আগে প্রস্রাব করে নিন। দিবা নিদ্রা বাদ দিন। ঘুমোনোর আগে হালকা ব্যায়াম করুন। ঘুমের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করুন। শোয়ারঘরে টিভি রাখবেন না। ঘুম যদি না আসে বিছানায় শুয়ে থাকবেন না। বিছানা ছেড়ে উঠে কিছু সময় হাঁটাহাঁটি করুন। বই পড়ার অভ্যাস থাকলে একটি বই নিয়ে কিছুক্ষণ পড়–ন। তার পর আবার বিছানায় যান, দেখবেন ভালো ঘুম হবে। সবচেয়ে বড় কথা, ঘুমের ব্যাপারে ইতিবাচক চিন্তা করুন। ঘুম আপনার কাছে আসবেই।
ঘুমের সমস্যা নিয়ে কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন? যদি আপনি সারা দিন কান্তিবোধ করেন। ঘুম থেকে ওঠার পরও তরতাজা না লাগে। ঘুম আসতে সমস্যা হলে। ঘুমের মধ্যে নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হলে। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর মাথাব্যথা করলে। অসময়ে কিংবা দিনের বেলা অথবা কাজের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়লে।
ঘুমের বড়ির বাজার দুনিয়া জোড়া। ঘুমের বড়ি মানুষকে কৃত্রিম ঘুম দেয় বলে একবার কেউ এতে অভ্যস্ত হয়ে পড়লে ঘুমের বড়ি ছাড়া সে ঘুমোতে পারে না। তাই ঘুমের বড়ি সেবনের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। ঘুমের বড়ি ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ব্যবহার করবেন না। অনিদ্রার কারণ চিহ্নিত করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিলে ঘুমের বড়ির প্রয়োজন হবে না। অনিদ্রার নিদ্রা ফেরাতে হোমিওপ্যাথি ওষুধ আপনাকে সাহায্য করতে পারে।
©somewhere in net ltd.