নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শাহজাহান হোসেন আহমেদ, কবিতা, অকবিতা।

শাহজাহান আহমেদ

• ধুমপানের বদ অভ্যাসটা সামান্য আছে। ( ঈদে চাঁন্দে আর কি) •মানুষের সাথে মিশতে ভাল লাগে। তবে সবার সাথে না। যাদের মাথায় সামান্য পরিমান হলেও গিলু নামের বস্তুটি আছে তাদের সাথে। • গান শুনতে ভাল লাগে। প্রিয় শিল্পিঃ প্রিতম আহমেদ। কুমার বিশ্বজিৎ। চন্দনা মজুমদার। আইয়ুব বাচ্চু। প্রয়াত সন্জিব চৌধুরী। • বই পড়তে ভালবাসি। যে কোন বই। গল্প উপন্যাস কবিতা সব কিছু। রাতের বেলায় ঘুমোতে যাওয়ার আগে ভুতের গল্প পড়ে ভয় পেতে ভাল লাগে। •রাত জাগতে ভাল লাগে। দু চোখে প্রচণ্ড ঘুম এবং সীমাহিন ক্লান্তি নিয়েও মাঝে মাঝে সারা রাত জেগে থাকি।

শাহজাহান আহমেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

এক জরাজীর্ণ অতীতের কথা বলছি, বালিকা শুন।

০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:১৭

এক জরাজীর্ণ অতীতের কথা বলছি, বালিকা শুন।



সেই সাদা-কালো যুগে, এক রাজ্যে এক মরা নদী ছিল।

তার পাশে পত্র-পল্লবহীন এক বৃক্ষ ঘুমিয়েছিল। প্রান্তরে বিবর্ণ ঘাসের গালিচা। ঝরে পড়া শুকনো পাতা। রাজপ্রাসাদের ঘুণে ধরা ইট খসে পড়ত প্রতিদিন।

সেই রাজ্যের সীমানা-প্রাচিরও ছিল নড়বড়ে, পোকায় কাটা। সেই ক্ষয়ে যাওয়া রাজ্যে এক রাজকন্যা ছিল।



সীমানা প্রাচিরের ওপারে থাকত এক রাখাল বালক। তাঁর ছিল সবুজ পাতায় মোড়ানো একটা ছোট কুটির। একটা নদী। নদীর পাড়ে কাশবন। একটা বটবৃক্ষ। রাজকন্যা প্রতিদিন সেই সীমানা প্রাচিরের ওপার থেকে রাখালের দিকে তাকিয়ে থাকত।

রাখাল ভাবতো আহা, রাজকন্যা বুঝি আমাকে ভালবেসে ফেলেছে!



সেই থেকে রাখাল রাজকন্যাকে নিয়ে কল্পনায় সংসার শুরু করল। তাঁর ছোট্ট কুটির মুহূর্তেই পরিনত হয় রাজপ্রাসাদে! নদীর ঘাটে বেঁধে রাখা তাল গাছের খোলের ডিঙিটা হয়ে যায় ময়ুরপঙ্খি নাও! সেই নাওয়ে চড়ে ছোট্ট নদীর বুকে রাখাল প্রতিদিন রাজকন্যাকে নিয়ে ভেসে বেড়ায়। রাজকন্যার কোঁকড়ানো চুলে বাতাস স্পর্শ করে।

কিছু চুল উড়ে এসে রাখালের মুখ ছুয়ে দেয়। রাজকন্যার চুলের গন্ধে সে মাতাল হয়।

চাঁদনি রাতে, বিস্তৃত সবুজ প্রান্তরে রাখাল এবং রাজকন্যা পাশা-পাশি শুয়ে থাকে। দুজনের হাতে দুজনার হাত। দৃষ্টি আকাশের দিকে। চাঁদের চারপাশে যত মেঘ, সব দূরে সড়ে যায়। চাঁদের আলো তীব্র হতে থাকে। রাখাল রাজকন্যার কাছে আসে। খুব কাছে।



কল্পনার রাজ্যে এভাবে অনেকদিন কেটে যাওয়ার পর, রাখাল একদিন রাজকন্যার সাথে কথা বলল।

"রাজকন্যা কেমন আছো"

"আমার মন ভাল নেই।"

"কেন তোমার মন ভাল নেই?" রাখাল জানতে চাইল।

"আমার নদীতে কোন জল নেই। তাই মন ভাল নেই।"

রাখাল রাজকন্যাকে জল দিল। রাজকন্যার নদীতে জোয়ার এল। নদীর বুক চিড়ে স্রোত বয়ে গেল।

তবুও রাজকন্যার মন খারাপ দেখে রাখাল আবার জানতে চাইল "কেন তোমার মন খারাপ?"

"আমার খুব সবুজ দেখতে ইচ্ছা করে। কিন্তু আমার রাজ্যের সমস্ত গাছ ফ্যাকাশে... তাই আমার মন খারাপ।"

রাখাল রাজকন্যাকে সবুজ দিল। রাজ্যের সকল গাছ সজীব হয়ে উঠল। মাঠের বিবর্ণ ঘাসের গালিচায় রং লাগল। এখনো রাজকন্যার মন খারাপ। রাখাল কারণ জানতে চাইল।

"আমার কাশবন নাই। তাই মন খারাপ।"

রাখাল কাশবন দিল।

"আমার একটা বিশাল বটবৃক্ষ নাই। তাই মন খারাপ।"

বটবৃক্ষ দেওয়া হল।

"সখিদের নিয়ে খেলার জন্য আমার পাতায় ছাওয়া কুড়েঘর নাই। তাই মন খারাপ।"



রাখাল তাঁর কুড়েঘরটাও রাজকন্যাকে দিয়ে দিল। তবুও রাজকন্যা মুখ কালো করে ঘুরে বেড়ায়। রাজকন্যার মুখে হাসি নেই। রাখাল অবাক হয়। ভাবে, তাঁর জন্যই মনে হয় রাজকন্যার মুখে হাসি নেই।

"রাজকন্যা এখনো তোমার মন খারাপ কেন?"

রাজকন্যা কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বলল।

"আমার একজন সঙ্গী প্রয়োজন। আমার একজন রাজপুত্রের প্রয়োজন। সুঠাম পেশীর টগবগে যুবক রাজপুত্র।"

রাখাল দীর্ঘশ্বাস ফেলে। আর কোন প্রশ্ন করেনা। মাথা নিচু করে রাজকন্যার চোখের আড়ালে চলে আসে। তাঁর যা দেবার ক্ষমতা ছিল সে দিয়েছে। সব দিয়ে সে আজ নিঃস্ব। তাঁর এখন নদী নাই। বটবৃক্ষের ছায়া নাই। রাতে ঘুমানোর আশ্রয় নাই। তার ভুবন এখন শূন্য।।



এখনো সেই ক্লান্ত, বিষণ্ণ রাখাল দূর হতে রাজপ্রাসাদের দিকে তাকিয়ে থাকে। কখনো যদি রাজকন্যা এসে বলে

"আমার একটা মানুষের টাটকা হৃদপিণ্ডের প্রয়োজন। বিজ্ঞান পরিক্ষার জন্য প্র‍্যাকটিক্যাল খাতা লিখতে হবে!"



(শাহজাহান আহমেদ)

১২-০৩-১৩

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.