নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার ভেতরের কারণগুলো জানতে এবং বিশ্লেষণ করতে চেষ্টা করি এবং সবার সাথে শেয়ার করতে পছন্দ করি। সামাজিক, রাজনৈতিক আর আন্তর্জাতিক বিষয়ে লেখালেখি করতে ভালো লাগে। তাই ব্লগে পদচারনা।
মালালার বয়স যখন ১২ বছর, তখন তার লেখা ডায়েরির কয়েকটি পাতার বাংলা অনুবাদ এখানে প্রকাশ করছি। তালেবান-শাসিত সোয়াত উপত্যকার পরিবেশ, শিক্ষার প্রতি ছোট্ট মেয়েটির গভীর অনুরাগ ও পারিপার্শ্বিক কিছু খণ্ডচিত্র এখানে ফুটে উঠেছে।
শনিবার, ৩ জানুয়ারি ২০০৯
খুব ভয় করছে
কাল রাতে একটা ভয়ানক স্বপ্ন দেখলাম... মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার ওপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে তালেবান। তবু সকালের নাশতা খেয়ে ভয়ে ভয়ে স্কুলে গেলাম। যাওয়ার পথে শুনলাম একটা লোক আমায় শাসাচ্ছে, ‘তোকে মেরে ফেলব।’ সোয়াতে সেনা অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে এমন স্বপ্ন আমি প্রায়ই দেখি।
রোববার, ৪ জানুয়ারি ২০০৯
স্কুলে যেতে হবে
আজ ছুটি। ঘুম ভেঙেই শুনলাম গ্রিন চকে তিনটা লাশ পড়ে আছে, সেই নিয়ে কাদের সঙ্গে যেন আলোচনা করছে বাবা। সেনা অভিযান শুরুর আগে রোববারগুলোয় কত জায়গায় পিকনিক করতে যেতাম। কিন্তু দেড় বছর হলো সেসব বন্ধ। আগে রাতে খাওয়ার পর হাঁটতেও বেরোতাম। এখন সূর্য ডোবার আগেই ঘরে ঢুকতে হয়। কাল স্কুলে যেতে হবে। ভাবলেই হৃৎস্পন্দন বেড়ে যাচ্ছে।
সোমবার, ৫ জানুয়ারি ২০০৯
রঙিন জামা পরা বারণ
স্কুলের জন্য তৈরি হচ্ছিলাম। তখনই মনে পড়ল ইউনিফর্ম পরে যাওয়া বারণ। তাই আমার প্রিয় গোলাপি জামাটা পরলাম। প্রার্থনার সময় আমাদের রঙিন পোশাক পরতে বারণ করা হয়। কারণ, সেটা তালেবান পছন্দ করবে না। বিকেলে বাড়ি ফিরে টিভিতে শুনলাম শাকার্দায় কারফিউ উঠে গেছে। বেশ আনন্দ হলো। স্কুলে যিনি ইংরেজি পড়ান, তিনি ওখানে থাকেন। আশা করি এবার স্কুলে আসবেন।
বুধবার, ৭ জানুয়ারি ২০০৯
গুলি নেই, ভয় নেই
মহররমের ছুটি কাটাতে এসেছি বুনেয়ার-এ। পাহাড় আর ঘন সবুজের জন্য এই জায়গাটা আমার খুব পছন্দ। এখানে সোয়াতের মতো অশান্তিও নেই। পীর বাবার সমাধিতে প্রার্থনা করতে গিয়েছিলাম। মা কয়েকটা কানের দুল আর চুড়ি কিনেছে।
শুক্রবার, ৯ জানুয়ারি ২০০৯
মাওলানা ছুটিতে?
স্কুলে বন্ধুদের বুনেয়ার ভ্রমণের গল্প করলাম। আর আলোচনা হলো মাওলানা শাহ দওরানের মৃত্যুর গুজব নিয়ে। দিন কয়েক হলো উনি এফএমে বক্তৃতা দিচ্ছেন না। মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার ওপরে নিষেধাজ্ঞা উনিই জারি করেছিলেন। বন্ধুদের মধ্যে কয়েকজন বলল, উনি মারা গেছেন। একজন বলল, উনি নাকি ছুটি নিয়েছেন! সন্ধ্যায় টিভিতে শুনলাম লাহোরে বিস্ফোরণ হয়েছে। কেন যে পাকিস্তানে এই বিস্ফোরণগুলো হয়!
বুধবার, ১৪ জানুয়ারি ২০০৯
আর হয়তো স্কুলে যাওয়া হবে না
মন ভালো নেই। কাল থেকে শীতের ছুটি পড়ছে। কিন্তু কবে খুলবে জানা নেই। প্রিন্সিপ্যালও কিছু বলেননি। আমার মনে হয় ১৫ জানুয়ারি থেকে মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার ওপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে তালেবান। তাই কেউই এবারের ছুটি নিয়ে খুশি নয়। আজ স্কুলের শেষ দিন। তাই একটু বেশি সময়ই খেলা হয়। বাড়ি ফেরার সময় স্কুলবাড়িটার দিকে তাকিয়ে মনে হলো আর বোধ হয় কখনো ওখানে যাওয়া হবে না।
©somewhere in net ltd.