নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আত্মানুসন্ধানের অভিযাত্রী

একজন সৈকত

এক দেশ এক জাতি- দেশের নাম পৃথিবী জাতির নাম মানুষ। মধ্যপ্রাচী 'র মরূস্থান কিবা স্ক্যান্ডিনাভিয়ান বরফ শীতল মেঘল চেরাপুন্জী কিবা অস্ট্রেলীয় প্যাসিফিক উপকূল যেখানেই থাকি জন্মভূমি তুমি দূরে নও দূরে নও.... লেখালিখির স্বত্ব সংরক্ষিত © - লেখক

একজন সৈকত › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রিয় এক ডজন প্রেমের কবিতা (আবৃত্তির লিংকসহ)

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১০:০৩

১।

নির্জন স্বাক্ষর

-জীবনানন্দ দাশ





২।

এক গাঁয়ে

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর





৩।

সে তোমাকে পাবে না

- মইনুল আহসান সাবের





৪।

যদি ভালোবাসা পাই

- রফিক আজাদ





৫।

প্যারিসের চিঠি

লতিফুল ইসলাম শিবলী





৬।

যে আমাকে প্রেম শেখালো

-মাকিদ হায়দার





৭।

প্রস্থান

- হেলাল হাফিজ





৮।

চিঠি দিও

-মহাদেব সাহা





৯।

সত্যবদ্ধ অভিমান

-সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়





১০।

যাত্রা-ভঙ্গ

নির্মলেন্দু গুণ





১১।

দোতলার ল্যন্ডিং মুখোমুখি ফ্ল্যাট। একজন সিঁড়িতে, একজন দরোজায়-

আহসান হাবীব





১২।

তুই কি আমার দুঃখ হবি?

-আনিসুল হক























১।

নির্জন স্বাক্ষর

-জীবনানন্দ দাশ



তুমি তা জানো না কিছু, না জানিলে-

আমার সকল গান তবুও তোমারে লক্ষ্য ক’রে!

যখন ঝরিয়া যাব হেমন্তের ঝড়ে,

পথের পাতার মতো তুমিও তখন

আমার বুকের ‘পরে শুয়ে রবে?

অনেক ঘুমের ঘোরে ভরিবে কি মন

সেদিন তোমার!

তোমার এ জীবনের ধার

ক্ষয়ে যাবে সেদিন সকল?

আমার বুকের ’পরে সেই রাতে জমেছে যে শিশিরের জল,

তুমিও কি চেয়েছিলে শুধু তাই!-

শুধু তার স্বাদ

তোমারে কি শান্তি দেবে!

আমি ঝরে যাব, তবু জীবন অগাধ

তোমারে রাখিবে ধরে সেইদিন পৃথিবীর’ পরে-

আমার সকল গান ও তবুও তোমারে লক্ষ্য ক’রে!



রয়েছি সবুজ মাঠে-ঘাসে-

আকাশ ছড়ায়ে আছে নীল হয়ে আকাশে আকাশে।

জীবনের রঙ তবু ফলানো কি হয়

এই সব ছুঁয়ে ছেনে!-সে এক বিস্ময়

পৃথিবীতে নাই তাহা – আকাশেও নাই তার স্থল-

চেনে নাই তারে অই সমুদ্রের জল!

রাতে রাতে হেঁটে হেঁটে নক্ষত্রের সনে

তারে আমি পাই নাই, কোনো এক মানুষীর মনে

কোনো এক মানুষের তরে

যে জিনিস বেঁচে থাকে হৃদয়ের গভীর গহ্বরে!-

নক্ষত্রের চেয়ে আরো নিঃশব্দে আসনে

কোনো এক মানুষের তরে এক মানুষীর মনে!



একবার এথা ক’য়ে দেশ আর দিকের দেবতা

বোবা হয়ে পড়ে থাকে–ভুলে যায় কথা!

যে-আগুন উঠেছিল তাদের চোখের তলে জ্ব’লে

নিভে যায় — ডুবে যায় — তারা যায় স্খ’লে!

নতুন আকাঙক্ষা আসে — চলে আসে নতুন সময়

পুরনো সে নক্ষত্রের দিন শেষ হয়,

নতুনেরা আসিতেছে ব’লে!–

আমার বুকের থেকে তবুও কি পড়িয়াছে স্খ’লে

কোনো এক মানুষীর তরে

যেই প্রেম জ্বালায়েছি পুরোহিত হ’য়ে তার বুকের উপরে!



আমি সেই পুরোহিত– সেই পুরোহিত!–

যে নক্ষত্র মরে যায়, তাহার বুকের শীত

লাগিতেছে আমার শরীরে–

যেই তারা জেগে আছে, তার দিকে ফিরে

তুমি আছো জেগে–

যে আকাশে জ্বলিতেছে, তার মতো মনের আবেগে

জেগে আছো–

জানিয়াছে তুমি এক নিশ্চয়তা — হয়েছ নিশ্চয়!

হয়ে যায় আকাশের তলে কত আলো-কত আগুনের ক্ষয়;

কতবার বর্তমান হ’য়ে গেছে ব্যথিত অতীত–

তবুও তোমার বুকে লাগে নাই শীত

যে নক্ষত্র ঝরে যায় তার!

যে পৃথিবী জেগে আছে, তার ঘাস– আকাশ তোমার!

জীবনের স্বাদ লয়ে জেগে আছ– তবুও মৃত্যুর ব্যথা দিতে

পার তুমি;

তোমার আকাশের তুমি উষ্ণ হয়ে আছ, তবু–

বাহিরের আকাশের শীতে

নক্ষত্রের হইতেছে ক্ষয়,

নক্ষত্রের মতন হৃদয়

পড়িতেছে ঝ’রে–

ক্লান্ত হয়ে– শিশিরের মতো শব্দ ক’রে!

জানো নাকো তুমি তার স্বাদ,

তোমারে নিতেছে ডেকে জীবন অবাধ,

জীবন অগাধ!

হেমন্তের ঝড়ে আমি ঝরিব যখন–

পথের পাতার মতো তুমিও তখন

আমার বুকে পরে শুয়ে রবে? — অনেক ঘুমের ঘোরে ভরিবে কি মন

সেদিন তোমার!

তোমার আকাশ — আলো — জীবনের ধার

ক্ষয়ে যাবে সেদিন সকল?

আমার বুকের পরে সেই রাতে জমেছে যে শিশিরের জল

তুমিও কি চেয়েছিলে শুধু তাই! শুধু তার স্বাদ

তোমারে কি শান্তি দেবে!

আমি চ’লে যাব — তবু জীবন অগাধ

তোমারে রাখিবে ধরে সেই দিন পৃথিবীর ‘পরে;–

আমার সকল গান তবুও তোমারে লক্ষ্য ক’রে!





২।

এক গাঁয়ে

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর



আমরা দুজন একটি গাঁয়ে থাকি

সেই আমাদের একটিমাত্র সুখ ,

তাদের গাছে গায় যে দোয়েল পাখি

তাহার গানে আমার নাচে বুক ।



তাহার দুটি পালন - করা ভেড়া

চরে বেড়ায় মোদের বটমূলে ,

যদি ভাঙে আমার খেতের বেড়া

কোলের ' পরে নিই তাহারে তুলে ।



আমাদের এই গ্রামের নামটি খঞ্জনা ,

আমাদের এই নদীর নাম অঞ্জনা ,

আমার নাম তো জানে গাঁয়ের পাঁচ জনে—

আমাদের সেই তাহার নামটি রঞ্জনা ।



দুইটি পাড়ায় বড়োই কাছাকাছি ,

মাঝে শুধু একটি মাঠের ফাঁক—

তাদের বনের অনেক মধুমাছি

মোদের বনে বাঁধে মধুর চাক ।



তাদের ঘাটে পূজার জবামালা

ভেসে আসে মোদের বাঁধা ঘাটে ,

তাদের পাড়ার কুসুম - ফুলের ডালা

বেচতে আসে মোদের পাড়ার হাটে ।



আমাদের এই গ্রামের নামটি খঞ্জনা ,

আমাদের এই নদীর নাম অঞ্জনা ,

আমার নাম তো জানে গাঁয়ের পাঁচ জনে—

আমাদের সেই তাহার নামটি রঞ্জনা ।



আমাদের এই গ্রামের গলি -' পরে

আমের বোলে ভরে আমের বন ,

তাদের খেতে যখন তিসি ধরে

মোদের খেতে তখন ফোটে শণ ।



তাদের ছাদে যখন ওঠে তারা

আমার ছাদে দখিন হাওয়া ছোটে ।

তাদের বনে ঝরে শ্রাবণধারা ,

আমার বনে কদম ফুটে ওঠে ।



আমাদের এই গ্রামের নামটি খঞ্জনা ,

আমাদের এই নদীর নামটি অঞ্জনা ,

আমার নাম তো জানে গাঁয়ের পাঁচ জনে—

আমাদের সেই তাহার নামটি রঞ্জনা ।



৩।

সে তোমাকে পাবে না

- মইনুল আহসান সাবের



একা একা ভালবেসে এইভাবে বেড়ে যায় পাপ,

তুমি কোনদিন দেখবেনা, তার দুঃখ অনুস্তাপ।

কোন কোন মাঝ রাতে বৃষ্টি হবে,

সে তখন তোমাকে পাবেনা।

বৃষ্টি যেমন ক্রমান্বয়ে পৃথিবীর বস্ত্র হরণ করে,

টানে টানে খসে যায় আবরণ,

পরে থাকে বিশুদ্ধ যৌবন

ঠিক সেই ভাবে বস্ত্র হরণ করেও,

সে তোমাকে পাবেনা।

কোন কোন দুপুরে নীল আকাশে ভেসে যাবে একা চিল,

সে তখন তোমাকে পাবেনা।

আকাশের মত বিস্তৃত করেও,

সে তোমাকে পাবেনা।

সে তোমার ঠোঁট ছোঁবে, স্তনাগ্র, তোমার চিবুক,

তবু মাঝ রাতে বৃষ্টি হলে তুমি তার হবেনা।



তোমার পুরুষ সে তো জানেনা, মাঝ রাতে বৃষ্টি হলে কেন তুমি ভেসে যাও

কে তোমায় বাজায় তখন,

কার কন্ঠে গান গায় একান্তের স্মৃতি,

কোন সে হাত এসে সিঁথি কাটে তোমার চুলে,

তোমাকে শয্যা থেকে তুলে নেয়,

তোমাকে তোমার শরীর থেকে তুলে নেয়,

কোন সে পুরুষ?

তোমার পুরুষ সে তো জানেনা, বোঝেনা, মাঝ রাতে বৃষ্টির অর্থ,

জানেনা নির্জন করিডোরে নতজানু এক নিঃসঙ্গ যুবক,

তোমাকে মাঝরাতে বৃষ্টির কথা বলেছিল,

তোমার চমকিত চোখে বরিষন দেখেছে সে,

বলেছিল তোমার নিজস্ব পুরুষ সে তো জানেনা,

নিজস্ব ছাড়িয়ে আরো কিছু থাকে।



৪।

যদি ভালোবাসা পাই

- রফিক আজাদ



যদি ভালবাসা পাই

আবার শুধরে নিব জীবনের ভুল গুলি



যদি ভালবাসা পাই

ব্যাপক দীর্ঘ পথে তুলে নিব ঝুলা ঝুলি



যদি ভালবাসা পাই

শীতের রাতের শেষে মকমল দিন পাব



যদি ভালবাসা পাই

পাহার ডিঙ্গাব আর সমুদ্র সাঁতরাব



যদি ভালবাসা পাই

আমার আকাশ হবে ধ্রুত শরতের নীল



যদি ভালবাসা পাই

জীবনে আমিও পাব মধ্য অন্তমিল



৫।

প্যারিসের চিঠি

লতিফুল ইসলাম শিবলী



প্রিয় আকাশি,

গতকাল ঠিক দুপুরে তোমার চিঠি পেয়েছি । খামের উপর নাম ঠিকানা পড়েই চিনতে পেরেছি তোমার হাতের লেখা , ঠিকানা পেলে কিভাবে লিখনি ,

কতদিন পর ঢাকার চিঠি, তাও তোমার হাতের লেখা,

ভাবতে পারো আমার অবস্থা ?



গতকাল প্যারিসে ঝড়েছিল এ বছরের রেকর্ড ভাঙ্গা তুষারপাত ।

তামাক ফুরিয়ে গেছে আনতে পারিনি

এই প্রথম আমি অনেকটা সময় নিয়ে ভুলেছিলাম তামাকের গন্ধ ।



তোমার চিঠিতে পরিবর্তন আর বদলে যাওয়ার সংবাদ

তুমি কষ্ট পেয়ে লিখেছো,

রাত্রির ঢাকা এখন নিয়নের স্নিগ্ধতা ছেড়ে নিয়েছে,

উৎকট সোডিয়ামের সজ্জা,

আমাদের প্রিয় রমনা রেস্তোরা এখন কালের সাক্ষী,

শীতের বই মেলা পরিনত হয়েছে মিনাবাজারে,

টি এস সি র চত্বর যেন উত্তপ্ত বৈরুত।



বদলে যাওয়া কষ্টের অপর নাম স্মৃতি,

এখন তাই নিয়ে বুঝি মেতে আছো,

এই পরবাসে আমার চোখের সামনেও

বদলে যেতে দেখলাম কত সুদৃঢ় ইতিহাস

বালির বাঁধের মত ভেসে গেল পুর্ব ইউরোপ

নদীর পাড় ভাঙ্গার মত ভেঙ্গে গেল বার্লিন প্রাচীর

ইংলিশ চ্যানেলের তল দিয়ে হুইসেল বাজিয়ে চলছে ট্রেন

ইউরোপের মানচিত্র এখন রুটি হয়ে গেছে ,

ক্ষিদে পেলেই ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাও …

স্বাধীনতা মানেই যেন উদর পুর্তি



তুমি লিখেছ “তোমাকে ভুলে গেছি কিনা ?”



প্রিয় আকাশি,

আমি জেনে গেছি

পৃথিবীতে সবচেয়ে কঠিন কাজ

ভুলে থাকা।

স্মৃতি থেকে পালিয়ে বাঁচার জন্য

এই সুদীর্ঘ প্রবাসের অর্ধেকটা কাটিয়েছি

বোহেমিয়ানদের মত ঘুরে ঘুরে

মাদ্রিদ থেকে হামবুর্গ,

নিউক্যাসল্ নেপোলি থেকে প্রাগ বুখারেষ্ট মাসিডোনিয়া

নর্থ সি থেকে মেডিটোরিয়ান কিংবা ব্ল্যাক সি।

তবু বাঁচতে পারিনি স্মৃতি থেকে,

ফ্রাঙ্কফুটের বই মেলায় নতুন বইয়ের গন্ধে মনে পড়েছে তোমাকে।

সিসটাইন চ্যাপেলের “লাষ্ট জাজমেণ্টে”র মত মহান সৃষ্টি পিয়েতা”র সামনে দাঁড়িয়ে

প্রথমেই মনে পড়েছে তোমাকে।

সিসিলির কার্নিভেলে

এথেন্সের কফি শপের জমজমাট কবিতা পাঠের আসরে, মনে পড়েছে তোমাকে ।

সুইজারল্যন্ডের লেকের কাছে স্বচ্চ জলে নিজের ছায়ার পাশে যাকে খুঁজেছি,সে তুমি।

ভ্যাটিক্যানের প্রার্থনা সভা শেষে

এক গ্রীক তরুনীকে বাংলায় কি বলেছিলাম জানো ?

বলেছিলাম- “তুমি আমার আকাশী হবে ?”

ভুলতে পারিনি তোমাকে,

শত চেষ্টা করেও পারিনি ।



আর কেউ না জানুক

অসংখ্য জিপসি রাত জানে সেই না ভুলতে পারার ইতিহাস।



তুমি জানতে চেয়েছো প্যারিসের কথা -

সত্যি বলতে কি -

প্যারিস খুলে দিয়েছে আমার আত্নার চোখ

সংগীত আর শিল্পের অভিন্ন সুর আমি শুধু প্যারিসেই শুনেছি ।

ক্লিয়নে কনসার্টে যতবার মোৎসার্ট

কিংবা বিটোভেন শুনেছি

ততবারই কেন যেন চিরদুঃখী পাগল ভিনসেন্ট ভ্যানগগের কথা মনে পড়েছে।

সমস্ত প্যারিসের রাস্তায়, গ্যালারিতে, ফেষ্টিভেলে ,খুঁজে ফিরেছি ভিনসেন্টের কষ্ট ।

তোমার প্রিয় গায়ক

জিম মরিসনের শেষ দিনগুলো কেটেছে এই প্যারিসে ।

প্যারিসেই জিমের কবর ।

অগনিত শিল্পীর কষ্ট থেকে প্যারিস পেয়েছে সৌন্দর্য,

কষ্টই প্যারিসের ঐশ্বর্য ।



আমাদের সুবর্ন সময়ের স্বপ্নের প্যারিসে

আজ নিজেকে ভীষন একা মনে হয়

এলোমালো পড়ে আছি

শিল্প সাহিত্যের এই জাগ যজ্ঞে।

তীব্র শীতের শ্বাসকষ্ট ভোগায় মাঝে মাঝে

এইতো সেদিন

আবারও বদলালাম চশমার কাঁচ।

প্রতিনিয়ত হেরে যাচ্ছি, সময়ের কাছে,

তুমি মনে রেখো

পরিবর্তনের দমকা হাওয়ায়

আমি বদলাইনি এতটুকু ।

বাইজেনটাইন সম্রাজ্ঞীর মত

তোমাকে ঘিরে থাক পৃথিবীর সমস্ত সুখ ।

তুমি অনিন্দ্য সুন্দরী হয়ে ওঠো তোমার সৃষ্টিতে ।



তুমি ভালো থেকো …….



৬।

যে আমাকে প্রেম শেখালো

-মাকিদ হায়দার



যে আমাকে প্রেম শেখালো

জোৎস্না রাতে ফুলের বনে

সে যেন আজ সুখেই থাকে



সে যেন আজ রানীর মত

ব্যক্তিগত রাজ্যপাটে

পা ছড়িয়ে সবার কাছে

বসতে পারে

বলতে পারে মনের কথা

চোখের তারায়

হাত ইশারায়



ঐ যে দেখ দুঃখি প্রেমিক

যাচ্ছে পুড়ে রোদের ভিতর

ভিক্ষে দিলে ভিক্ষে নেবে

ছিন্ন বাসে শীর্ন দেহে

যাচ্ছে পুড়ে রোদের ভিতর



কিন্তু শোন প্রজাবৃন্দ

দুঃসময়ে সেই তো ছিলো

বুকের কাছে হৃদয় মাঝে

আজকে তারে দেখলে শুধু

ইচ্ছে করে

চোখের পাতায় অধর রাখি



যে আমাকে প্রেম শেখালো

প্রেম শিখিয়ে চিনিয়েছিলো

দুষ্টু গ্রহ অরুন্ধতী

বৃষ্টি ভেজা চতুর্দশী

জোৎস্না রাতের উজ্জ্বলতা

ভোরের বকুল শুভ্র মালা

নগর নাগর ভদ্র ইতর

রাজার বাড়ি

সেই তো আবার বুঝিয়েছিলো



যাওগো চলে আমায় ছেড়ে



যে আমাকে প্রেম শেখালো

জোৎস্না রাতে ফুলের বনে

সে যেন আজ সুখেই থাকে



নিজের দেহে আগুন জ্বেলে

ভেবেছিলাম

নিখাদ সোনা হবোই আমি

শীত বিকেলের টুকরো স্মৃতি

রাখবো ধরে সবার মত

হৃদয় বীণার মোহন তারে

ভুলেই গেলাম

যখন তুমি আমায় ডেকে

বললে শুধু



পথের এখন অনেক বাকি

যাও গো শোভন

যাও গো চলে বহুদুরে

কণ্ঠে আমার অনেক তৃষা

যাও গো চলে আপন পথে



এই না বলেই

হাসলে শুধু করুন ঠোঁটে

বাজলো দুরে শঙ্খ নিনাদ

কাঁদলো আমার বুকের পাথর

কাঁদলো দুরে হাজার তারা

একলা থাকার গভীর রাতে

একলা জাগার তিন প্রহরে



তাইতো বলি সবার কাছে

যে আমাকে দুঃখ দিলো

সে যেন আজ সবার চেয়ে

সুখেই থাকে

যে আমাকে প্রেম শেখালো

প্রেম শিখিয়ে বুকের মাঝে

অনল দিলো

সে যেন আজ সবার চেয়ে

সুখেই থাকে



সুখেই থাকে



৭।

প্রস্থান

- হেলাল হাফিজ



এখন তুমি কোথায় আছো কেমন আছো, পএ দিও

এক বিকেলে মেলায় কেনা খামখেয়ালীর তাল পাখাটা

খুব নিশীথে তোমার হাতে কেমন আছে, পএ দিও।

ক্যালেন্ডারের কোন পাতাটা আমার মতো খুব ব্যথিত

ডাগর চোখে তাকিয়ে থাকে তোমার দিকে, পএ দিও।

কোন কথাটা অষ্টপ্রহর কেবল বাজে মনের কানে

কোন স্মৃতিটা উস্কানি দেয় ভাসতে বলে প্রেমের বানে

পএ দিও, পএ দিও।



আর না হলে যত্ন করে ভুলেই যেও, আপত্তি নেই।

গিয়ে থাকলে আমার গেছে, কার কী তাতে?

আমি না হয় ভালবাসেই ভুল করেছি ভুল করেছি,

নষ্ট ফুলের পরাগ মেখে

পাঁচ দুপুরে নির্জনতা খুন করেছি, কি আসে যায়?

এক জীবনে কতোটা আর নষ্ট হবে,

এক মানবী কতোটা বা কষ্ট দেবে!



৮।

চিঠি দিও

-মহাদেব সাহা



করুনা করে হলেও চিঠি দিও

খামে ভরে তুলে দিও

আঙ্গুলের মিহিন সেলাই।

ভুল বানানেও লিখো প্রিয়, বেশী হলে কেটে ফেলো

তাও

একটু সামান্য দাবী চিঠি দিও



তোমার শাড়ির মত

অক্ষরের পাড় বোনা একখানি চিঠি

চুলের মত কোন চিহ্ন দিও,

বিষ্ময় বোঝাতে যদি চাও

সমুদ্র বোঝাতে চাও, মেঘ চাও,

ফুল, পাখি, সবুজ পাহাড়

বর্ননা আলস্য লাগে

তোমার চোখের মত চিহ্ন দিও, কিছু



আজো তো অমল চিঠি চাই,

পথ চেয়ে আছি

আসবেন অচেনা রাজার লোক

তার হাতে চিঠি দিও, বাড়ি পৌছে দেবে।

এককোনে শীতের শিশির দিও একফোঁটা,

সেন্টের শিশির চেয়ে

তৃনমূল থেকে তোলা ঘ্রান

এমন ব্যস্ততা যদি শুদ্ধ করে একটি শব্দেই

লিখো তোমার কুশল।



ওইতো রাজার লোক যায়,

ক্যাম্বিসের জুতো পায়,

কাঁধে ব্যাগ, হাতে কাগজের একগুচ্ছ

সীজন ফ্লাওয়ার ।

কারো কৃষ্ণচূড়া, কারো উদাসীন উইলোর ঝোপ,

কারো নিবিড় বকুল।



ওর কিছুই আমার নয়,

আমি অকারন হাওয়ায় চিৎকার

তুলে বলি,

আমার কি কোন কিছুই নাই?



করুনা করে হলেও চিঠি দিও, ভুলে গিয়ে,

ভুল করে একখানি চিঠি দিও খামে

কিছুই লেখার নেই, তবু লিখো

একটি পাখির শিশ

একটি ফুলের ছোট নাম

টুকিটাকি হয়ত হারিয়ে গেছে কিছু,

হয়ত পাওনি খুঁজে,



সেইসব চুপচাপ কোন দুপুর বেলার গল্প

খুব মেঘ করে এলে,

কখনো কখনো বড় একা লাগে,

তাই লিখো

করুনা করে হলেও চিঠি দিও,

মিথ্যে করে হলেও বলো,

'ভালোবাসি'।



৯।

সত্যবদ্ধ অভিমান

-সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়



এই হাত ছুঁয়েছে নীরার মুখ

আমি কি এ হাতে কোনো পাপ করতে পারি ?

শেষ বিকেলের সেই ঝুল বারান্দায়

তার মুখে পড়েছিল দুর্দান্ত সাহসী এক আলো

যেন এক টেলিগ্রাম, মুহূর্তে উন্মুক্ত করে

নীরার সুষমা

চোখে ও ভুরুতে মেশা হাসি, নাকি অভ্রবিন্দু ?

তখন সে যুবতীকে খুকি বলে ডাকতে ইচ্ছে হয়--

আমি ডান হাত তুলি, পুরুষ পাঞ্জার দিকে

মনে মনে বলি,

যোগ্য হও, যোগ্য হয়ে ওঠো--

ছুঁয়ে দিই নীরার চিবুক

এই হাত ছুঁয়েছে নীরার মুখ

আমি কি এ হাতে আর কোনোদিন

পাপ করতে পারি ?



এই ওষ্ঠ বলেছে নীরাকে , ভালোবাসি--

এই ওষ্ঠে আর কোনো মিথ্যে কি মানায় ?

সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে মনে পড়ে ভীষণ জরুরী

কথাটাই বলা হয়নি

লঘু মরালীর মতো নারীটিকে নিয়ে যাবে বিদেশী বাতাস

আকস্মিক ভূমিকম্পে ভেঙ্গে যাবে সবগুলো সিঁড়ি

থমকে দাঁড়িয়ে আমি নীরার চোখের দিকে....

ভালোবাসা এক তীব্র অঙ্গীকার, যেন মায়াপাশ

সত্যবদ্ধ অভিমান--চোখ জ্বালা করে ওঠে,

সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে

এই ওষ্ঠ বলেছে নীরাকে, ভালোবাসি--

এই ওষ্ঠে আর কোন মিথ্যে কি মানায় ?





১০।

যাত্রা-ভঙ্গ

নির্মলেন্দু গুণ



হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে,

মন বাড়িয়ে ছুঁই,

দুইকে আমি এক করি না

এক কে করি দুই৷

হেমের মাঝে শুই না যবে,

প্রেমের মাঝে শুই

তুই কেমন করে যাবি?

পা বাড়ালেই পায়ের ছায়া

আমাকেই তুই পাবি৷

তবুও তুই বলিস যদি যাই,

দেখবি তোর সমুখে পথ নাই৷

তখন আমি একটু ছোঁব,

হাত বাড়িয়ে জড়াব তোর

বিদায় দুটি পায়ে,

তুই উঠবি আমার নায়ে,

আমার বৈতরনী নায়ে৷

নায়ের মাঝে বসব বটে,

না-এর মাঝে শোব৷

হাত দিয়েতো ছোঁব না মুখ,

দু:খ দিয়ে ছোঁব৷

তুই কেমন করে যাবি?



১১।

দোতলার ল্যন্ডিং মুখোমুখি ফ্ল্যাট। একজন সিঁড়িতে, একজন দরোজায়-

আহসান হাবীব



: আপনারা যাচ্ছেন বুঝি?

: চ’লে যাচ্ছি, মালপত্র উঠে গেছে সব।

: বছর দু’য়েক হ’লো, তাই নয়?

: তারো বেশি। আপনার ডাকনাম শানু, ভালো নাম?

: শাহানা, আপনার?

: মাবু।

: জানি।

: মাহবুব হোসেন। আপনি খুব ভালো সেলাই জানেন।

: কে বলেছে। আপনার তো অনার্স ফাইনাল, তাই নয়?

: এবার ফাইনাল

: ফিজিক্স-এ অনার্স।

: কি আশ্বর্য। আপনি কেন ছাড়লেন হঠাৎ?

: মা চান না। মানে ছেলেদের সঙ্গে ব’সে…

: সে যাক গে, পা সেরেছে?

: কি ক’রে জানলেন?

: এই আর কি। সেরে গেছে?

: ও কিছু না, প্যাসেজটা পিছল ছিলো মানে…

: সত্যি নয়। উঁচু থেকে পড়ে গিয়ে…

: ধ্যাৎ। খাবার টেবিলে রোজ মাকে অতো জ্বালানো কি ভালো?

: মা বলেছে?

: শুনতে পাই? বছর দুয়েক হ’লো, তাই নয়?

: তারো বেশি। আপনার টবের গাছে ফুল এসেছে?

: নেবেন? না থাক। রিকসা এলো, মা এলেন, যাই।

: যাই। আপনি সন্ধেবেলা ওভাবে পড়বেন না,

চোখ যাবে, যাই।

: হলুদ শার্টের মাঝখানে বোতাম নেই, লাগিয়ে নেবেন, যাই।

: যান, আপনার মা আসছেন। মা ডাকছেন, যাই।



১২।

তুই কি আমার দুঃখ হবি?

-আনিসুল হক



তুই কি আমার দুঃখ হবি?

এই আমি এক উড়নচন্ডী আউলা বাউল

রুখো চুলে পথের ধুলো

চোখের নীচে কালো ছায়া।

সেইখানে তুই রাত বিরেতে স্পর্শ দিবি।

তুই কি আমার দুঃখ হবি?



তুই কি আমার শুষ্ক চোখে অশ্রু হবি?

মধ্যরাতে বেজে ওঠা টেলিফোনের ধ্বনি হবি?

তুই কি আমার খাঁ খাঁ দুপুর

নির্জনতা ভেঙে দিয়ে

ডাকপিয়নের নিষ্ঠ হাতে

ক্রমাগত নড়তে থাকা দরজাময় কড়া হবি?

একটি নীলাভ এনভেলাপে পুরে রাখা

কেমন যেন বিষাদ হবি।



তুই কি আমার শুন্য বুকে

দীর্ঘশ্বাসের বকুল হবি?

নরম হাতের ছোঁয়া হবি?

একটুখানি কষ্ট দিবি।

নিজের ঠোট কামড়ে ধরা রোদন হবি?

একটুখানি কষ্ট দিবি।

প্রতীক্ষার এই দীর্ঘ হলুদ বিকেল বেলায়

কথা দিয়েও না রাখা এক কথা হবি?

একটুখানি কষ্ট দিবি।



তুই কি একা আমার হবি?

তুই কি আমার একান্ত এক দুঃখ হবি?

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ২:৫২

বেলা শেষে বলেছেন: I had studied many of your writing, they are very beautiful, i like them, Salam & Respect to you, good luck , up to next time.

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ ভোর ৫:৩৬

একজন সৈকত বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ পাঠ ও মন্তব্যের জন্য। ভালো থাকুন।

২| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ ভোর ৬:৫৩

উদাস কিশোর বলেছেন: লিংক !!!!!!!????

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৭:৪৯

একজন সৈকত বলেছেন: কোন লিংক?

৩| ১৫ ই মে, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:০০

মাহমুদ০০৭ বলেছেন: প্রিয়তে নিলাম । দারুণ একখান জিনিস ।

আপনি কই ? দেখা যায় না কেন ?
কেমন আছেন ভাই ?

১৯ শে মে, ২০১৪ রাত ৯:৪৬

একজন সৈকত বলেছেন:
আমি আছি ভাই-ব্যস্ততায় তেমন ব্লগে আসি না। তবে আসলে আপনার লেখা পড়ি কিন্তু মন্তব্য করা হয় না- আজ করলাম। আপনি অনেক দিন গল্প দেন না- একটা নতুন গল্প দিবেন প্লিজ- ভালো থাকুন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.