নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অন্যদের সেভাবেই দেখি, নিজেকে যেভাবে দেখতে চাই। যারা জীবনকে উপভোগ করতে চান, আমি তাঁদের একজন। সহজ-সরল চিন্তা-ভাবনা করার চেষ্টা করি। আর, খুব ভালো আইডিয়া দিতে পারি।

সত্যপথিক শাইয়্যান

আমার কাছে অনেক আইডিয়া আছে এবং আমি তা ব্লগে এপ্লাই করি! জানেনই তো, পৃথিবীর সব কিছুর মূলে রয়েছে আইডিয়া!

সত্যপথিক শাইয়্যান › বিস্তারিত পোস্টঃ

সাহিত্যে এবারের নোবেলজয়ী লাস্‌লো ক্রাস্‌নাহোরকাই: এক মহাকাব্যিক লেখকের অন্ধকার, সৌন্দর্য ও বিস্ময়ের গল্প

১৫ ই অক্টোবর, ২০২৫ বিকাল ৫:৩০



১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরির দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ছোট্ট শহর জিউলা—রোমানিয়ার সীমান্ত ঘেঁষা এই নিভৃত গ্রামেই জন্ম নেন ইউরোপীয় সাহিত্যের এক রহস্যময় ব্যক্তিত্ব, লাস্‌লো ক্রাস্‌নাহোরকাই। প্রকৃতির নির্জনতা, প্রান্তিক জীবনের নীরব গতি, আর সময়ের ছায়ায় ঢাকা এই ভূমিই হয়ে ওঠে তার প্রথম উপন্যাস Sátántangó (স্যাটানট্যাঙ্গো)-র পটভূমি। ১৯৮৫ সালে প্রকাশিত এই বইটি যেন হাঙ্গেরির সাহিত্যজগতে এক বিস্ফোরণ ঘটায়—একইসাথে অস্বস্তিকর, বিমোহিত, আর গভীরভাবে দার্শনিক।

এই উপন্যাসে আমরা দেখি এক পরিত্যক্ত সমবায় খামারে বসবাসরত মানুষের দলকে—কমিউনিজম পতনের ঠিক আগের হাঙ্গেরীয় গ্রামের প্রান্তে। চারপাশে নীরবতা, বাতাসে অজানা অপেক্ষা। হঠাৎ করেই ফিরে আসে দুই ‘মৃত’ মানুষ—ইরিমিয়াস ও তার সঙ্গী পেত্রিনা। তারা যেন কোনো দ্যূতের বার্তাবাহক—কেউ ভাবে আশার, কেউ ভাবে সর্বনাশের। বইয়ের শিরোনামে ‘শয়তান’ যে উপাদানটি লুকিয়ে আছে, তা প্রকাশ পায় মানুষের আত্মসমর্পণ-প্রবণ দাস মনোভাব আর ইরিমিয়াসের ধূর্ত ছলনায়। সবাই কোনো অলৌকিক ঘটনার প্রতীক্ষায়—আর এই অপেক্ষাই হয়তো তাদের আশাকে গিলে খায়। উপন্যাসের শুরুতেই কাফকার একটি উক্তি এই অনুভূতিটিকেই প্রতিফলিত করে:
“In that case, I’ll miss the thing by waiting for it.”

এই মহাকাব্যিক উপন্যাসটি পরে বেলা টার-এর পরিচালনায় ১৯৯৪ সালে একটি অনন্য চলচ্চিত্রে রূপ নেয়, যা আজও সমকালীন সিনেমার এক অবিস্মরণীয় দৃষ্টান্ত।

“Apocalypse”-এর কারিগর

প্রখ্যাত আমেরিকান সমালোচক সুজান সন্টাগ তাকে অভিহিত করেছিলেন—

“সমকালীন সাহিত্যের ‘Master of the Apocalypse’।”

এই উপাধি তিনি দেন ক্রাস্‌নাহোরকাইয়ের দ্বিতীয় বই The Melancholy of Resistance (১৯৮৯) পড়ার পর। একটি ছোট্ট হাঙ্গেরীয় শহরে এক ভূতুড়ে সার্কাসের আগমনে হঠাৎ করেই শুরু হয় এক জ্বরগ্রস্ত আতঙ্ক। একটি বিশাল তিমির মৃতদেহ—এই সার্কাসের মূল আকর্ষণ—যেন শহরের ভেতর অদৃশ্য শক্তিকে নাড়া দেয়। সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে, সেনাবাহিনীর ব্যর্থতায় অরাজকতার মধ্যে একনায়কতন্ত্রের সম্ভাবনা জন্ম নেয়।

ক্রাস্‌নাহোরকাই স্বপ্নময় দৃশ্য, বিকৃত চরিত্র আর ভয়ংকর বাস্তবতার মিশেলে শৃঙ্খলা বনাম বিশৃঙ্খলার এক নৃশংস লড়াই ফুটিয়ে তোলেন। সন্ত্রাসের প্রভাব থেকে কেউই রেহাই পায় না।

সীমান্তের বাইরে — যুদ্ধ ও যাত্রার গল্প

১৯৯৯ সালে প্রকাশিত War & War উপন্যাসে তিনি সীমান্ত ছাড়িয়ে যান। এবার নায়ক একজন বিনয়ী আর্কাইভ কর্মী কোরিন, যে জীবনের শেষ সিদ্ধান্ত নেয়—বুদাপেস্ট ছেড়ে নিউইয়র্কে যাবে, যেন বিশ্বের কেন্দ্রবিন্দুতে এক মুহূর্তের জন্য দাঁড়াতে পারে। তার হাতে রয়েছে এক প্রাচীন মহাকাব্য, যা সে সারা বিশ্বের কাছে পৌঁছে দিতে চায়। এই উপন্যাসেই ক্রাস্‌নাহোরকাইয়ের স্বতন্ত্র গদ্যশৈলীর পরিপূর্ণ বিকাশ দেখা যায়—দীর্ঘ, অবিরাম বাক্যপ্রবাহ, যেন নদীর মতো বয়ে চলে।

এই ধারা আরও পরিণত রূপ পায় Baron Wenckheim’s Homecoming (২০১৬)-এ। এক ব্যর্থ জুয়ারু ব্যারনের নির্বাসিত জীবন শেষে মাতৃভূমিতে ফেরা, হারানো প্রেমের খোঁজ, আর এক তীক্ষ্ণ রসবোধে ভরা সামাজিক নাটক—সব মিলিয়ে এটি তার সাহিত্যিক উত্তরাধিকারকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যায়।

ভয় ও সৌন্দর্যের অসম্ভব মিলন

২০২১ সালের উপন্যাস Herscht 07769 আমাদের নিয়ে যায় জার্মানির থুরিঙ্গেন প্রদেশে—একটি আপাত সাধারণ ছোট শহরে, যেখানে বাস্তব জীবনের সামাজিক অস্থিরতা, খুন আর অগ্নিসংযোগের ভেতর দিয়ে এক ভয়ংকর কাহিনি এগোয়। কিন্তু এই আতঙ্কের প্রেক্ষাপটেই বাজে জোহান সেবাস্টিয়ান বাখের সঙ্গীত—ভয় আর সৌন্দর্য একসাথে নিঃশ্বাস ফেলে।

পূর্বের পথে — নীরবতা ও সৃষ্টির সন্ধান

শুধু ধ্বংস আর অরাজকতার গল্পই নয়, ক্রাস্‌নাহোরকাইয়ের লেখায় আছে পূর্বের প্রতি আকর্ষণ, ধ্যানমগ্ন ভাষা ও অন্তর্মুখী অনুসন্ধান।
২০০৩ সালের A Mountain to the North, a Lake to the South… উপন্যাসে আমরা পৌঁছে যাই কিয়োটোর দক্ষিণ-পূর্বে এক রহস্যময় বাগানে। এই বই যেন তার পরবর্তী মহাকাব্যিক রচনা Seiobo There Below (২০০৮)-এর ভূমিকা।

সেইওবো—জাপানি পুরাণের অমরত্বদাত্রী দেবী—যার বাগানে প্রতি তিন হাজার বছরে একবার ফল ধরে। এই পুরাণকে কেন্দ্র করে বইটি রচিত হয়েছে সৃষ্টির রহস্য নিয়ে—একটি চিত্রকর্মের জন্ম, কারিগরের নিরব ভূমিকা, আর শিল্পীর অদৃশ্য উপস্থিতি।

এক সাহিত্যিক মহাবিশ্বের মানচিত্র

ম্যানহাটনের পটভূমিতে লেখা তার ছোট উপন্যাস Spadework for a Palace (২০১৮) যেন তার সৃষ্টিশীল দিগন্তের আরেকটি প্রান্ত। হারম্যান মেলভিলের আত্মা, সাহিত্যিক উন্মাদনা আর অনুকরণের অভিশাপ—সবকিছু মিলেমিশে এক অদ্ভুত, উজ্জ্বল, প্রায় উন্মাদ গল্প।

লাস্‌লো ক্রাস্‌নাহোরকাই কেবল একজন লেখক নন—তিনি একটি সাহিত্যিক মহাবিশ্বের নির্মাতা। তার কলমে সময়, সমাজ, আতঙ্ক, সৌন্দর্য ও নীরবতা একত্রিত হয়ে জন্ম নেয় এমন এক সাহিত্য, যা একবার পড়লে আর সহজে ভোলা যায় না।


সূত্রঃ আন্দ্রে অলসন, নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান
অনুলেখনঃ নাম না জানা সত্য পথের এক ব্লগার

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই অক্টোবর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫১

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: আপনি বই পড়েন ? কোন জনরা লাইক করেন ? নোবেল জিতেছেন এমন একজন রাইটারের বই suggest করেন যেটা আপনার খুব ভালো লেগেছে ।

১৫ ই অক্টোবর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:০৪

সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন:




আপনার জন্যে মিডনাইট চিলড্রেন সাজেস্ট করতে পারি, বুকার পুরস্কার বিজয়ী সালমান রুশদীর লেখা।

নোবেল পুরস্কারজয়ী সাহিত্যিকদের লেখা একটু কঠিন হয়ে যাবে!

ধন্যবাদ।

২| ১৫ ই অক্টোবর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:২৬

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: আপনি Pearl s Buck এর দি মাদার পড়ে দেখতে পারেন। আমেরিকান ১ম ওমেন নোবেল লরিয়েট(লিটারেচার) ।

১৫ ই অক্টোবর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৩৪

সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন:



ওকে। পড়ে দেখবো।

ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.