নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অন্যদের সেভাবেই দেখি, নিজেকে যেভাবে দেখতে চাই। যারা জীবনকে উপভোগ করতে চান, আমি তাঁদের একজন। সহজ-সরল চিন্তা-ভাবনা করার চেষ্টা করি। আর, খুব ভালো আইডিয়া দিতে পারি।

সত্যপথিক শাইয়্যান

আমার কাছে অনেক আইডিয়া আছে এবং আমি তা ব্লগে এপ্লাই করি! জানেনই তো, পৃথিবীর সব কিছুর মূলে রয়েছে আইডিয়া!

সত্যপথিক শাইয়্যান › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ আবারও বঙ্গবন্ধু

১৯ শে অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ৮:৩৫

অঙ্ক–১ | পর্ব–১: আলোর নির্দেশ



নীল আলো

ঢাকার রাত।
রাস্তাগুলো ফাঁকা, বাতাসে ধুলোর গন্ধ। টেম্পোও নেই, কুকুরও ঘেউ ঘেউ করছে না— এমন নীরবতা শহরে সচরাচর পাওয়া যায় না।
রাফি ক্যামেরাটা কাঁধে ঝুলিয়ে হাঁটছিল। সে ‘আজকাল’ পত্রিকার তরুণ সাংবাদিক। রাতে “মিরপুরের ছাদের গাছের রহস্য” নামে একটা রিপোর্ট করবে ভেবেছিল— 'কারও বাসার ছাদে নাকি আলো জ্বলে আবার নিভে যায়'।
রাফি হঠাৎ থেমে গেল।
আকাশে একটা আলো— নীল।
গাড়ো নীল নয়, তবে যেন রঙের চেয়েও গভীর।
মনে হলো, আলোটা তার দিকে তাকিয়ে আছে।

সে ক্যামেরা তুলল, ফ্রেম ঠিক করল। হঠাৎ আলোটা বড় হয়ে তার চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে।
মুহূর্তে নিস্তব্ধতা ভেঙে যায়— বাতাসে একটা গুঞ্জন, যেন কেউ খুব ধীরে ফিসফিস করে বলছে,
“আমি ফিরেছি... কথা বলবে?”
রাফি চমকে উঠল।
কণ্ঠটা পুরুষের, বয়স বোঝা যায় না। কিন্তু সেই স্বরটা... কোথায় যেন শোনা।
বুকে কাঁপুনি উঠল।
সে ক্যামেরা নামিয়ে চারদিক দেখে— কেউ নেই! কেবল বাতাস, কেবল সেই নীল আলো।
“কে আপনি?”
উত্তর এল না।
কিন্তু বাতাসে গাছের ডাল নড়ছে— যেন কেউ বলল,
“ভয় পেয়ো না, আমি তোমারই দেশের মানুষ।”

ঘরের ভেতরের কান্না

রাফি বাসায় ফিরে দরজা লাগিয়ে দিল।
দরজার ফাঁক দিয়ে এখনো নীল আলো ঢুকছে, জানালার কাঁচে প্রতিফলন।
সে টেবিলে বসে ল্যাপটপ খুলল, কিছু লিখতে চাইছে— কিন্তু হাত কাঁপছে।
টাইপ করতে পারল কেবল তিনটি শব্দ—
“আমি ফিরেছি, কথা বলবে?"

হঠাৎ পর্দার হালকা নড়াচড়া।
বিদ্যুৎ নেই, কিন্তু বাতাসও নেই— তবু পর্দা দুলছে।

তারপর আবার সেই কণ্ঠ, এবার আরও পরিষ্কার।
“তুমি সাংবাদিক, তাই না?”
“হ্যাঁ।”
“তাহলে লিখো— আলোর ইতিহাস শুরু হয় অন্ধকারে।”
“কে বলছেন?”
“একজন মৃত মানুষ। যার মৃত্যু এখনো শেষ হয়নি।”

রাফির গলা শুকিয়ে গেল।
সে দাঁড়াতে চেষ্টা করল, কিন্তু হাত-পা অবশ।
তবু কোনো ভয় নেই— বরং এক অদ্ভুত শান্তি।
“তুমি কি বিশ্বাস করো, মানুষ মরার পরও ফিরে আসতে পারে?”
“না।”
“তাহলে আজ থেকে বিশ্বাস করো।”
রাফি চুপ।
কণ্ঠটা এবার নরম হলো, যেন কেউ হাসছে।
“আমাকে দেখতে চাও?”
“আপনি... আপনি কে?”
“যার নাম নিতে তোমরা এখনো ভয় পাও, অথচ প্রতিদিন যার ছবি ছাপাও।”
রাফি বুঝে ফেলল। ঠোঁট শুকিয়ে গেল।
সে ধীরে বলল, “বঙ্গবন্ধু?”
একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাসের শব্দ এল।
“তোমরা আমাকে মাটি দিয়েছো, কিন্তু আমার স্বপ্নকে নয়। আমি ফিরে এসেছি, সেই স্বপ্নটা খুঁজতে।”

অশরীরীর উপস্থিতি

রাফি জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়াল।
বাইরে এখনো নীল আলো ঝিলমিল করছে— এক অচেনা শান্তি।
দেয়ালের ঘড়ি থেমে গেছে, কিন্তু সময় চলেছে, অন্যভাবে।

“তুমি কি জানো, রাফি, এখন বাংলাদেশ কোথায়?”
“মানে?”
“মানুষের মুখে নয়, মানুষের মনে আমি এখন হারিয়ে গেছি। তোমরা দেশের গল্প বলো, কিন্তু দেশের কথা শোনো না।”
রাফি মুখে কিছু বলল না।
এই প্রথম সে বুঝল, শব্দেরও গন্ধ আছে— এই কণ্ঠে মাটির গন্ধ, নদীর গন্ধ।
“তুমি আমার সঙ্গে থাকবে?”
“আমি তো সাংবাদিক, কাজ করি খবরের কাগজে।”
“তাহলে খবর লেখো, কিন্তু এমন খবর যা মানুষকে মানুষ হতে শেখাবে।”

রাফি কিছু বলল না। মাথার ভেতর একধরনের সুর বাজতে লাগল— পুরোনো স্বাধীনতার গান, খুব নিচু স্বরে।
“আগামীকাল সকালে তোমার ক্যামেরা নিয়ে বের হবে। শহরটা দেখবে আমার চোখে। প্রতিটি হতদরীদ্রের মুখ, প্রতিটি চায়ের দোকানের আলো— সবখানে আমি আছি। কিন্তু কেউ আমাকে চিনছে না।”
রাফি ধীরে বলল,
“আপনি কি ফিরে এসেছেন পৃথিবীতে?”
“আমি আলো হয়ে ফিরেছি। কেউ চায় দেখুক, কেউ চায় না। কিন্তু আলোর কাজ দেখা নয়, ছুঁয়ে যাওয়া।”

পরদিন সকাল

ভোরবেলা রাফি হাঁটছে মগবাজারের দিকে।
আকাশে হালকা কুয়াশা, কিন্তু শহরটা যেন আজ অন্যরকম।
রাস্তায় যে ফেরিওয়ালা রোজ চা বিক্রি করে, আজ তার হাসি বেশি উজ্জ্বল।
এক বৃদ্ধা পথের ধারে বসে আজ ভিক্ষা করছে না— ছেলেদের চুল আচড়াচ্ছে।
রাফি ক্যামেরা তুলল, কিন্তু শাটার চাপার আগেই বাতাস ফিসফিস করে বলল—
“ছবি নয়, গল্প লিখো।”
সে থেমে গেল।
তার মনে হচ্ছিল, কেউ পাশে হাঁটছে— চোখে দেখা যায় না, কিন্তু উপস্থিতি ভারী।

এক জায়গায় কিছু ছেলেপেলে ফুটবল খেলছে। রাফি বলের দিকে তাকিয়ে ভাবল, স্বাধীনতার পরের প্রজন্ম এমনই হয়— নির্ভার, কিন্তু অজানায় বাঁধা।
একটা বৃদ্ধ কণ্ঠ যেন আবার বলল,
“দেখে রাখো, এই শিশুরা একদিন আলো বানাবে। তারা আর ইতিহাস মুখস্থ করবে না, ইতিহাস বাঁচবে তাদের ভেতর।”
রাফি চুপ করে গেল।
তার মনে হলো— এই শহরের প্রতিটি শব্দ যেন নতুন অর্থ নিচ্ছে।

রাতের পুনরাগমন

রাত নেমেছে আবার।
রাফি টেবিলে বসে রিপোর্ট টাইপ করছে— কিন্তু তার লেখা বদলে যাচ্ছে নিজে নিজে।
সে লিখছে “আকাশে নীল আলো দেখা গেছে”— কিন্তু মনিটরে শব্দ বদলে যায়—
“বাংলার আকাশে ফের জেগেছে আলো।”
সে চমকে উঠে পেছনে তাকাল।
আবার সেই কণ্ঠ, এবার একটু ক্লান্ত স্বরে—
“রাফি, ইতিহাস কাগজে নয়, মানুষের মগজে লেখা হয়। তোমরা ভুলে গেছো সেই জায়গাটা।”
“আমি কী করতে পারি?”
“তোমার কাজ শুধু দেখা নয়, দেখানো। আমার কণ্ঠকে শব্দে রূপ দাও, কিন্তু নিজের নয়— মানুষের নামে।”
রাফি হালকা হাসল।
“আপনি কি এবার থাকবেন?”
“থাকা-না-থাকা এখন অর্থহীন। আলো থাকে না, তবু প্রতিদিন সূর্য ওঠে।”

বাইরে মৃদু বাতাস।
তারপর দরজার ফাঁক দিয়ে আবার নীল আলো ঢুকে পড়ল, জানালার পর্দা দুলে উঠল।
“রাফি, কাল ভোরে নদীর ধারে যাবে। সেখানে কিছু মানুষ এখনো বিশ্বাস করে, আমি ফিরে আসব। তাদের কাছে যেও। সেখানে শুরু হবে তোমার সত্যিকারের রিপোর্ট।”
রাফি ধীরে মাথা নেড়ে বলল,
“আমি যাব।”
“তাহলে শুভরাত্রি।”
এক মুহূর্তের নীরবতা।
তারপর ফিসফিসে এক কণ্ঠ—
“শুরু হয়েছে সময়ের পুনর্জন্ম।”

রাফি জানালার পাশে দাঁড়িয়ে দেখল—
আকাশে নীল আলো মিলিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু তার বুকের ভেতর সেই আলো রয়ে গেল।


মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে অক্টোবর, ২০২৫ দুপুর ১২:২৯

রবিন.হুড বলেছেন: সঠিক আলোর দিশা পাওয়ার জন্য ধন্যবাদ। বাংলাদেশ আবারও শকুনের দৃষ্টি থেকে মুক্ত হয়ে সমৃদ্ধ হবে।

১৯ শে অক্টোবর, ২০২৫ দুপুর ২:০৩

সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন:



শকুন খোদা সৃষ্ট প্রাণী। লক্ষ্য করে দেখবেন, শকুন প্রকৃতির অনেক উপকার করে।

ধন্যবাদ।

২| ১৯ শে অক্টোবর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৩

সৈয়দ মশিউর রহমান বলেছেন: ভালো হয়েছে কাব্যিক কবিতা।

১৯ শে অক্টোবর, ২০২৫ দুপুর ২:০৫

সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন:




ধন্যবাদ।
ধারাবাহিক গল্প লেখার চেষ্টা করছি।
আমাদেরকে ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বদের নিয়ে বেশি বেশি সাহিত্য রচনা করতে হবে।

শুভেচ্ছ নিরন্তর।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.