নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অন্যদের সেভাবেই দেখি, নিজেকে যেভাবে দেখতে চাই। যারা জীবনকে উপভোগ করতে চান, আমি তাঁদের একজন। সহজ-সরল চিন্তা-ভাবনা করার চেষ্টা করি। আর, খুব ভালো আইডিয়া দিতে পারি।

সত্যপথিক শাইয়্যান

আমার কাছে অনেক আইডিয়া আছে এবং আমি তা ব্লগে এপ্লাই করি! জানেনই তো, পৃথিবীর সব কিছুর মূলে রয়েছে আইডিয়া!

সত্যপথিক শাইয়্যান › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ আবারও বঙ্গবন্ধু

১৯ শে অক্টোবর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৫

অঙ্ক–১ | পর্ব–২: অশরীরীর প্রথম পদচিহ্ন



ঘরের ভেতরের বাতাস

ভোররাত। জানালার ফাঁক দিয়ে ঢাকার আলো ঢুকছে— ধুলোমাখা, নিস্তেজ। রাফি তখনও জেগে। চোখে ঘুম নেই, মাথায় নীল আলোর স্মৃতি। ল্যাপটপে লেখা তার শেষ বাক্য—
“আলো থাকে না, তবু প্রতিদিন সূর্য ওঠে।”

ঘড়ির কাঁটা থেমে আছে ঠিক ৪টায়। ফ্যান হালকা কাঁপছে।
কোনো শব্দ নেই, তবু কানে বাজছে একটা প্রশ্ন—
“বাংলাদেশ এখন কোথায়?”
রাফি কাঁপা গলায় বলল,
—আপনি আবার এসেছেন?
“আমি তো ছিলামই।”
—আপনি দেখতে চান আমার শহরটা কেমন?
“দেখে এসেছি। মানুষের ঘর যত বড় হয়েছে, মন তত ছোট।”

রাফি শুকনো হাসল।
—আপনি এসব দেখেন কীভাবে?
“বাতাসে। বাতাসেরও কান আছে।”
পাশের ঘর থেকে ফ্যানটা আচমকা বন্ধ হয়ে গেল। তারপর দরজার বাইরে কারও হালকা কাশির শব্দ।
রাফি দরজা খুলল— কেউ নেই।
দেয়ালে ঝুলে থাকা বঙ্গবন্ধুর ছবিটা দুলছে।
রাফি হালকা স্বরে বলল,
—এবার কি আপনি ফিরে এলেন নাকি?
“না রে, আমি ফিরে আসিনি। আমি কেবল মনে পড়েছি।”

চায়ের দোকানের সকাল

সকালে রাফি বেরোল ক্যামেরা নিয়ে। রাস্তার ধারে ছোট চায়ের দোকান— দোকানদারের নাম রহিম। রহিমের দোকানে আজ ভিড় একটু কম। রাফি চা নিল, বসে পড়ল বেঞ্চে।

হঠাৎ বাতাস এল, চায়ের কাপে ঢেউ উঠল।
রহিম বলল,
—বাতাসটাও আজ অদ্ভুত, ভাই। মনে হয় কেউ হাঁটছে পাশে।
রাফি হেসে বলল,
—কেন, বঙ্গবন্ধু নাকি?
রহিমের চোখে একচিলতে ভয়।
—এই নামটা আস্তে বলেন ভাই। এখন নামটা শুনলেই মানুষ চুপ করে যায়।

ঠিক তখন দোকানের পাশে পুরনো একটা লাউডস্পিকার নিজে নিজেই কেঁপে উঠল।
পুরনো ভাঙা সুর— “আমার সোনার বাংলা...”
সবাই তাকিয়ে রইল।
রহিম ধীরে বলল,
—এই স্পিকার তো মরা জিনিস ভাই। তিন বছর ধরে বন্ধ।
রাফি হেসে বলল,
—দেখেন রহিম, মৃত জিনিসও কখনো কখনো জেগে ওঠে।
বাতাসে যেন আবার সেই কণ্ঠ—
“বাংলাদেশ এখন কোথায়?”
রাফি নিচু গলায় বলল,
—চায়ের কাপের মধ্যে, স্যার।


মধ্যবিত্তের ঘরে অশরীরী অতিথি

রাতে রাফি গেল তার বন্ধুর বাসায়— ইমরান, বেসরকারি অফিসে কাজ করে। ইমরানের স্ত্রী রান্নাঘরে, গন্ধে ভেসে আসছে পেঁয়াজ ভাজার গন্ধ।

ইমরান টিভির দিকে তাকিয়ে বিরক্ত স্বরে বলল,
—দেশটার খবর শুনলে রাগ উঠে যায়, ভাই। নেতা সবাই নাটকবাজ।
রাফি কিছু বলল না।
ঠিক তখন ফ্যানের হাওয়া থেমে গেল।
টিভির পর্দা ঝলকে উঠল— তাতে দেখা গেল এক মুহূর্তের জন্য নীল আলো।
ইমরান অবাক।
—ওইটা দেখলেন?
রাফি শান্ত গলায় বলল,
—দেখেছি। আপনি ভয় পেয়েছেন?
—না ভাই, কিন্তু মনে হচ্ছে কেউ আমাদের দেখছে।
রান্নাঘর থেকে স্ত্রীর গলা এল,
—ইমরান, ফ্যানটা আবার বন্ধ হয়ে গেল!

ইমরান উঠতে যাবে, ঠিক তখন দেয়ালে ঝুলে থাকা ক্যালেন্ডার নড়ে উঠে, আর একটা পাতার কোণে ভেসে উঠল হালকা অক্ষরে—
“বাংলাদেশ এখন কোথায়?”
ইমরান দৌড়ে এল রাফির কাছে।
—এইটা কারা লিখল?
রাফি হালকা হাসল,
—বাতাস লিখেছে।
ইমরান কাঁপা কণ্ঠে বলল,
—তুমি কি সিরিয়াস, ভাই?
রাফি বলল,
—দেশও তো বাতাসের মতো, ইমরান। দেখা যায় না, কিন্তু শ্বাস ছাড়া থাকা যায় না।

বঙ্গবন্ধুর হাসি

রাতে ঘরে ফিরে রাফি জানালার ধারে বসে।
বাইরে চাঁদের আলো, তবু জানালার কাচে নীল রঙের ছায়া।
“রাফি, ভয় পেয়েছ?”
—না, শুধু অবাক হচ্ছি।
“ভয় পেও না। আমি রাগ নিয়ে আসিনি, এসেছি হাসি নিয়ে।”
—আপনি হাসছেন কেন?
“তোমরা যখন ঝগড়া করো, তখনও আমি হাসি। কারণ তর্ক মানে এখনো বেঁচে থাকা।”

রাফি বলল,
—আপনি কি মানুষদের ক্ষমা করে দিয়েছেন?
“ক্ষমা দিতে হলে রাগ থাকতে হয়, রাফি। আমি এখন বাতাস— কেবল ছুঁই, দাগ দিই না।”
কণ্ঠটা থেমে গেল কিছুক্ষণ।
তারপর হালকা স্বরে—
“আজ এক পুরনো স্কুলে গিয়েছিলাম। এক শিক্ষক এখনো জাতীয় সঙ্গীত শুরু করেন ‘আমার দেশ’ বলে। আমি হাসলাম। ভুল হওয়া ঠিক না, কিন্তু ভালোবাসা ঠিক।”

রাফির চোখে পানি এলো।
—আপনি যদি থাকতেন এখন, মানুষ কি বদলাত?
“আমি থাকলে কিছু বদলাত না। বদলাবে, যখন তারা একে অপরকে শুনবে।”
রাফি দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
—তাহলে আপনি কেন ফিরলেন?
“কারণ কেউ তো শুরুটা করতে হয়।”

শেষ সংলাপ

রাত গভীর।
রাফি খোলা জানালার পাশে বসে। বাইরে বৃষ্টি শুরু হয়েছে।
পানি জানালার কাচ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে— যেন চোখের জল।
“রাফি, তুমি আজ কিছু শিখলে?”
—শিখেছি, মানুষ এখনো শুনতে জানে।
“আর লিখতে?”
—লিখব, কিন্তু এবার অন্যভাবে।
“লেখা মানে কেবল শব্দ নয়। লেখা মানে সাহস।”
রাফি মাথা নেড়ে বলল,
—তাহলে আমি সাহসী হতে চাই।
“হবে। কাল সকালে তোমাকে নিয়ে যাব এক স্কুলে— যেখানে বই কম, শিশুরা বেশি হাসে।”

বৃষ্টি তীব্র হলো।
রাফির চোখে ঘুম চলে এল।
বাতাসে আবার সেই কণ্ঠ— নরম, নিশ্চুপ, তবু শক্তিশালী—
“বাংলাদেশ এখন কোথায়?— উত্তরটা তুমি খুঁজে বের করবে।”
রাফি চোখ বন্ধ করল।

বাইরে মৃদু বজ্রপাত, আর ঘরের কোণে দেয়ালে ঝুলে থাকা ছবিতে এক মৃদু আলো—
যেন অশরীরী হাসি রেখে গেলেন বঙ্গবন্ধু নিজেই।


মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে অক্টোবর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫১

স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: বাংলাদেশ এখন কোথায়?
..........................................................
এ প্রশ্নটা আজ সবার,
শুধু মনে রাখতে হবে সময় একটি বিশাল ক্যানভাস
যার যা প্রাপ্য, সঠিক সময়ে সে তা পেয়ে যাবে
অতএব আমাদের দ্বায়িত্ব
প্রতিটি মর্হুতে গ্রহনযোগ্য কাজটি সম্পন্ন করা ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.