![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি দুই হাত আর দুই পা কে একসাথে সংকুচিত প্রসারিত করে একটু একটু করে সামনের দিকে এগুচ্ছি। একটি স্বচ্ছ নীলাভ জলধারা আমার শরীরের উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আমি অক্টোপাসের একটি সুসজ্জিত দলের সাথে ধাবিত হচ্ছি। অক্টোপাসের আট বাহুর গতির সাথে আমি পেরে উঠছিলাম না। দলপতি অক্টোপাস আমাকে আগ্রহ নিয়ে দেখছিল। আমাকে জিজ্ঞাসা করেই ফেলল –“তুমি কি আমাদের কেউ?” আমি বললাম আমি তোমাদের কেউ না কিন্তু তোমাদের পথের পথিক হতে চাই। আমাদের দলটি খুব ভালোভাবেই এগুচ্ছিল। কিন্তু তাদের গতির সাথে আমি কিছুতেই পেরে উঠছিলাম না। আর আমার অক্ষমতাকে দলপতি অক্টোপাসটি গুরুত্বের সাথে নিয়ে আমাকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করল। দলপতি অক্টোপাসটি অন্য অক্টোপাসগুলোকে কিছু একটা নির্দেশ দেয় আর অক্টোপাসের দল তাদের গতিকে আরো বাড়িয়ে দেয়। আর আমি পিছিয়ে পড়ি। এক সময় তাদের হারিয়ে ফেলি। তখন আমি তাদের চলরেখাকে অনুসরণ করতে থাকি। একসময় তাদের চল রেখা জলধারায় মিশে যায়। আর আমি নিজের অসহায়ত্বকে টের পাই। আমি একেবারে একা হয়ে যাই। একাকীত্ব কে আমি খুব ভয় করি।
এরপর আমি আমার সমস্ত শক্তি দিয়ে শরীরের অণু পরমাণু গুলোকে আলাদা করে ফেলি। কমিয়ে ফেলি ওদের মধ্যকার আন্তঃআণবিক আকর্ষণ বল। দুর্বল শক্তি সম্পন্ন পরমাণুগুলো নিজেদের মধ্যকার আকর্ষণ শক্তিকে হারিয়ে এক ভাসমান তরল ধারায় পরিনত হয়। আর সেই তরল আমি জলধারার সাথে মিশে যাই । আমি বুঝতে পারি জলধারা পূর্ব থেকে পশ্চিমে প্রবাহিত হচ্ছে। আমি সেই পথই অনুসরণ করতে থাকি। দেখতে দেখতে জলধারাটি একটি ত্রিমোহনায় মিলিত হয়। আর তখন আমার সমস্ত অণু পরমাণু শিরশিরিয়ে উঠে। আমি তখন উল্টো পথে ফিরে যাই ।
আমি বুঝতে পারি ভিন্ন তরলের কোমলতা নিয়ে জলধারায় অবস্থান অনিশ্চিত । আমি আমার কোমলতা ,আবেগ আর অতীতকে একটি অন্ধকার প্রকোষ্ঠে বন্দী করে তালাবদ্ধ করে দিই। আমি খানিকক্ষণ স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ি।
এবার আমি হিংস্রতার আদল গ্রহণ করি। আর আমার শরীরটাকে একটি অতিকায় হাঙ্গরে পরিনত করে হাঙ্গরের একটি সুশৃঙ্খল দলের সাথে মিশে যাই । দিন গুলো খুব ভালোই যাচ্ছিল । হাঙ্গরের দল আমাকে আপন জাতি ভেবে সাদরে নিয়েছিল। কিন্তু আমার হাঙ্গরের মত ধারালো দাঁত ছিল না। দাঁত ছাড়া আমি আমার অতিকায় দেহের জৈবিক চাহিদা পূরণ করতে পারছিলাম না। আর আমার লোহিত হৃৎপিণ্ডটা বার বার অন্ধকার প্রকোষ্ঠ থেকে কোমলতা , আবেগ আর অতীতকে মুক্ত করতে চাচ্ছিল। আমি দোটানায় পড়ে যাই। আমি ভীষণভাবে আমার হিংস্রতাকে পুষে রাখতে চাচ্ছিলাম কিন্তু আমার ভিতরটা অবিরাম আমার বিরুদ্ধ অবস্থান নিচ্ছিল। বাস্তবিক ভালোবাসা আর আবেগ আমার হিংস্রতাকে প্রচ্ছন্ন করে দিচ্ছে। আমি প্রচণ্ড ভাবে শিউরে উঠি । নরম হৃৎপিণ্ডটাকে বুঝাতে চেষ্টা করি। হৃৎপিণ্ডকে বলেই ফেলি যে পথ আমরা ছেড়েছি সে পথ ছিল কষ্টে ভরা। ভালোবাসার নির্যাসটা সবসময় কষ্টে পর্যবসিত হয়। নরম হৃৎপিণ্ড আমার অবাধ্য হয়ে উঠে । সে আমিকে ধীরে ধীরে দুর্বল করে দিচ্ছিল । আমি মস্তিস্কের মাধ্যমে তাকে সাবধান করি এই বলে আমার নির্দেশ না শুনলে আমি তার সংকোচন প্রসারণ ক্ষমতা রোধ করে দিব অসীম সময়ের জন্য ।
সাথে সাথে আমার চারিদিকে নিস্তব্ধতা নেমে আসে। আমি কাছাকাছি কোথাও ফোঁপানোর মত একটা আওয়াজ শুনতে পাই। শার্টের তিন নম্বর বোতামটা খুলি খুব ধীরে ধীরে । দেখতে পাই কোমল হৃৎপিণ্ডটা শিশুর মত করে কেঁদে যাচ্ছে । আর আমি হেরে যাই সেই শিশুটির কাছে...হেরে যাই হৃৎপিণ্ড নামধারী সেই হৃদয়ের কাছে...
©somewhere in net ltd.