নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কথটণ

কথটণ › বিস্তারিত পোস্টঃ

মাকড়সা

০৯ ই জুন, ২০১৬ দুপুর ১:০৫

একটা পাতলা চাদর গায়ে জড়িয়ে ধান ক্ষেতের আইল ধরে হাটছিলাম। পা টা একটু ঝিম ঝিম করছিল। আমি বাসায় ফিরে আসি । একটা স্ক্রু ডাইভার দিয়ে পা খুলে ফেলি। কিছুই বুঝতে পারলাম না। আর আমি একজন ডাক্তারের কাছে যাই। ডাক্তার কি যেন খুব মনোযোগের সাথে দেখছিল। আর আমাকে অদ্ভুত কিছু শব্দ ব্যাবহার করে কিছু বুঝাতে চাইল। আমি কিছুই বুঝলাম না। শুধু বুঝার ভাণ করলাম। ডাক্তার আমাকে নতুন একটা তারিখ দিয়ে অইদিন যেতে বলল। আমি মাথা নেড়ে বাসায় চলে আসি ।

বুধবার আমার কোনো কাজ থাকে না । আমি ছোট্ট একটা ঘরের মধ্যে বসে আছি। ঘরটা হালকা অন্ধকার। আমি একটা অষ্টপদী কীট দেখতে পাই। যেটা আপন মনে জাল বুনে যাচ্ছিল। নাম মাকড়সা । আমি অনেকক্ষণ ধরে তার শৈল্পিক কর্ম দেখছিলাম। কিছুক্ষনের মধ্যে সে তার সঙ্গিনীর সাথে জাগতিক খেলায় লিপ্ত হল। আর খেলার শেষে সঙ্গিনী মাকড়সা সেই পুরুষ মাকড়সাকে খেয়ে ফেলল।

জগতের নিয়ম গুলোর জন্য আমার খুব মায়া হয়। জীবনের হিসেব গুলোকে সরল অঙ্কের মত সমাধান করে শুন্য বা একের মত একটি সরল সংখ্যায় সমাধান করতে খুব ইচ্ছে হয়। মাঝে মাঝে খুব কাঁদতে ইচ্ছে করে। আমার শুধু সেই অনুভূতি আছে। কিন্তু অনুভূতি প্রয়োগের ক্ষমতা নেই।

আমি জানতাম পুরুষ মাকড়সাটি ইচ্ছে করলে দৌড়ে পালাতে পারত। কিন্তু সে করে নি । সঙ্গিনী মাকড়সার ডিম উৎপাদনের জন্য প্রয়োজন হবে প্রচুর লিপিড আর আমিষ । আর সে তাই তার সঙ্গীকে খেয়ে অতিরিক্ত লিপিড সঞ্চয় করে। প্রকৃতি এখানে বাবাদের ভুমিকাকে ছোট করে নি।

আমার মাথাটা ঝিম ঝিম করে উঠে । আমি কিছু ভাবতে পারছিলাম না। আমি আমার সমস্ত অঙ্গকে শিথিল করে ফেলি। আর আমার মধ্যে এক অদ্ভুত নিস্তব্ধতা নেমে আসে। আমি ধমনী শিরার মধ্য দিয়ে রক্ত প্রবাহের শব্দ শুনতে পাচ্ছি। হৃদ প্রস্ফুরণ আমার নীরবতাকে ব্যাহত করছিল। আর আমার ভীষণ ইচ্ছে হল হৃদপিণ্ডের ক্ষমতাকে চিরতরে ধ্বংস করে দিয়ে সেই নীরবতাকে স্থায়ী রূপ দিতে। কিন্তু আমাকে সেই ক্ষমতা দেওয়া হয় নি। আর আমি সেদিন বুঝেই ফেলি আমি আগে মানুষ ছিলাম। জৈবপ্রযুক্তি ব্যাবহার করে আমার ভিতরকার মনুষ্যত্বের কিছু গুণাবলী বদলে দেওয়া হয়েছে।

যখন মানুষ ছিলাম আমি একটি মেয়েকে দেখতাম মাঝে মাঝে। মেয়েটির নাম রেখা। রেখা আর আমি একসাথে ঘুড়ি উড়াতাম। প্রজাপতি ঘুড়ি । আমরা কাটাকাটি খেলতাম। রেখা তার ঘুড়িকে আমার সামনে নিয়ে আসত বার বার। সে চাইত আমি তার ঘুড়িকে কেটে ফেলি। আর আমিও ইচ্ছে করেই রেখার ঘুড়িকে কাটতাম না। রেখা আমাকে বার বার জিতিয়ে দিতে চাইত। আর আমিও রেখাকে বারবার জিতিয়ে দিতে চাইতাম । আর আমার খুব কাঁদতে ইচ্ছে করত।

আমাদের দুইজনের ভিতরটায় একটা ছোট্ট মাকড়সা বাস করত। সে অবিরাম জাল বুনে যেত । আর সেই জালের বিস্তার ছিল আমার হৃদয় থেকে রেখার হৃদয় পর্যন্ত। আমাদের ভিতরকার সমস্ত অনুভূতি গুলো সেই জাল দিয়ে প্রবাহিত হত।
আমি তারিখ মত আবার সেই ডাক্তারের কাছে যাই । ডাক্তারের কাছে আমার অতীতের কথা বলি। আমার রেখার কথা বলি। ডাক্তার সব শুনে আমার মস্তিষ্কে কিছু একটা পুশ করে দিচ্ছিল। আমি জানি এরপর থেকে আমার আর কিছু মনে পড়বে না। আমি নিথর হয়ে বসে থাকি। আর সব কিছু মেনে নিই।

জগতের নিয়ম গুলো বেশ অদ্ভুত। নিজের বাস্তুতন্ত্র টিকিয়ে রাখার জন্য প্রকৃতি কখনো কঠোর হয় আবার কখনো কোমল । আর জগতবাসীরা প্রকৃতির সেই স্বেচ্ছাচারিতা মেনে নেয়। মেনে নিতে হয় ।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই জুন, ২০১৬ সকাল ৯:৪৮

হাসান মাহবুব বলেছেন: মানবিক সাই ফাই। জোস্!

১৭ ই জুন, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:১৩

কথটণ বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.