নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কথটণ

কথটণ › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্বপ্নলতা

০৯ ই জুন, ২০১৬ বিকাল ৪:৪১

এই রাস্তায় আমি আগে কখনো আসি নি । রাস্তাটা প্রচণ্ড অন্ধকার খুব সম্ভবত এই মুহূর্তে তড়িৎ প্রবাহ বন্ধ আছে । আমি অন্ধকার গলি ধরে ধীরে ধীরে হাঁটছি। অন্ধকারে আমার কোনও সমস্যা হয় না।

আমি দূরে কিছু একটা দেখতে পেলাম। একটা বেঁটে লোক হেঁটে আমার দিকে আসছে। লোকটা আমার কাছাকাছি চলে আসলো। আমার মনে হল আমি তাকে আগে কোথাও দেখেছি । লোকটার মাথাটা একটা ভেড়ার শরীরে বসানো। আর আমি লোকটার নাম মনে করতে পারলাম। তার নাম ভেড়ানুশ । ভেড়ানুশকে আমি আগে কোথায় দেখেছি মনে করতে পারছি না। ভেড়ানুশ আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। আমি সুযোগ পেয়ে তার মশ্তিস্কে ঢুকে গেলাম।

আমি তার মশ্তিস্কে অদ্ভুত কিছু স্নায়ু দেখতে পাই। মস্তিষ্কের একটা জায়গায় পাসওয়ার্ড দেয়া। আমি আমার পাসওয়ার্ড ব্রেকার ব্যাবহার করলাম। আমার পাসওয়ার্ড ব্রেকার কাজ করছিল না। এই মুহূর্তে ভেড়ানুশ আমাকে নিয়ে চিন্তা করছে । আমি তার ভাবনা গুলোর দিকে মনোযোগ দিলাম। আর আমার সম্পর্কে নতুন কিছু তথ্য পেলাম যা আমি যানতাম না।

আমি বুঝতে পারলাম আগে আমি মানুষ ছিলাম। একটা মেয়ে মাঝে মাঝে আমার কাছে আসত । মেয়েটির নাম ছিল স্বপ্নলতা । স্বপ্নলতা আমার পায়ের কাছে ঝিম মেরে বসে থাকত । তার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে থাকত আর আমি ডান হাত দিয়ে তার কপালটার উপর থেকে চুলগুলো সরিয়ে দিতাম। ধীরে ধীরে প্রতিদিন স্বপ্নলতা আমার কাছে আসা শুরু করল। আমার-ও খুব ভাল লাগত। সারাদিন পর কাজ শেষে বাসায় ফিরে আমি তার সাথে গল্প করতাম ।স্বপ্নলতা আমার গল্পগুলো মন দিয়ে শুনত । আমি তার আগ্রহ দেখে দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে প্রতিদিনের ঘটনাগুলো বলতাম । আমি কোন কিছু বাদ দিতাম না । সারাদিন কি কি করতাম সব কিছু স্বপ্নলতাকে বলতাম। স্বপ্নলতা সারাদিন একা একা থাকত । স্বপ্নলতা টিভি দেখত না, আর কেউ কথা বলার মত ছিল না। কম্পিউটার চালাত না। স্বপ্নলতার কোন ফেসবুক আইডি ছিল না। সারাদিন আমার অপেক্ষায় বসে থাকত। আমরা সারারাত গল্প করতাম। কখনো মুভির কাহিনী বলতাম। কখনো ফেসবুক ফ্রেন্ডদের গল্প করতাম। গল্প শুনতে শুনতে স্বপ্নলতা কখনো কাঁদত আবার কখনো হাসত । হাসলে তার গালে খুব সুন্দর দুটি টোল পরত। গল্প শুনতে শুনতে স্বপ্নলতা একসময় আমার পায়ে কাছে ঘুমিয়ে পড়ত। আমি বুঝতে পেরেছিলাম স্বপ্নলতা আমার কল্পনা। আর আমি অসুস্থ। কিন্তু আমি আর কখনো সুস্থ হতে চাই নি। আমি ভীষণভাবে স্বপ্নলতাকে আমার পাশে চেয়েছিলাম।
ভেড়ানুশের কাছ থেকে এরপরের কথাগুলো জানতে পেরে আমার মেমরি সেল থেকে পিপ পিপ শব্দ বেজে উঠল। এটা মানুষের হৃদয় হু হু করে উঠার মত একটা অনুভুতি।

আমি জানতে পারলাম কেউ একজন আমাকে জোর করে এক সাইকিয়াটিস্টের কাছে নিয়ে যায়। আর সাইকিয়াটিস্ট আমাকে এক নিউরোলজিস্টের কাছে পাঠায় । ভেড়ানুশের কাছ থেকে আমি আর কোন তথ্য পেলাম না।

আমি আমার পাসওয়ার্ড ব্রেকার দিয়ে তার পাসওয়ার্ড ব্রেক করে ফেলি । আমি জানতে পারলাম ভেড়ানুশ আর আমাকে এক-ই ল্যাব -এ তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু আমাকে ওরা আর কন্ট্রোল করতে পারে নি।

আমার চার্জ ফুরিয়ে আসছে। আমি দ্রুত ভেড়ানুশের মস্তিষ্ক থেকে বের হয়ে হাটতে থাকি। অতীতের জন্য আমার মনে কোন কষ্ট নেই। স্বপ্নলতার জন্য এখন আর কোন অনুভুতি-ও নেই। রোবটদের মনে ভালোবাসা থাকতে নেই। রোবটদের কষ্ট পেতে হয় না।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই জুন, ২০১৬ সকাল ৯:৪৪

হাসান মাহবুব বলেছেন: দারুণ টুইস্ট, দারুণ লেখা। শেষ হবার পরেও রেশ থেকে যায়। খুব ভালো লাগলো।

১৭ ই জুন, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:১১

কথটণ বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.