![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আচ্ছা যদি কোনদিন হারিয়ে যাই দূরে কোথাও? প্রতিদিন বিকেলে আমার জন্য যে রজনীগন্ধার একটা সটীক নিয়ে আসো ধরো একদিন এসে দেখলে আমি নেই । আমার জায়গাটা শুন্যতা দখল করে নিয়েছে। কি করবে তুমি? আমি ভাবি । ভাবতে থাকি। ভেবে পাই না কি করব। আবারো ভাবি। অস্পষ্ট ভাবনা। অদ্ভুত শুন্যতা সৃষ্টিকারী ভাবনা। আমি বললাম অই ফুলটা তখন অন্য কোন তুলনাকে দিয়ে দিব। তুলনা হাসে। আর আমার বুকের ভিতরটা মোচড় দিয়ে উঠে । তুলনা উঠে দাঁড়ায়। আমরা হাটতে থাকি।
আমি তখন প্রথম বর্ষে পড়ি। তখন আজিমপুরে একটা ছেলেকে পড়াতাম। টিউশনি করে ফেরার পথে আজিমপুর স্কুল এন্ড কলেজের সামনে প্রতিদিন তুলনাকে দেখতাম দাড়িয়ে ফুচকা খাচ্ছে। কিছু কিছু সৌন্দর্য প্রথম দেখাতেই সবার ভালো লাগবে। তুলনার মধ্যে এমন কিছু ছিল না। আবার কিছু কিছু ভালো লাগা মানুষের ব্যাখ্যার অতীত। তুলনাকে আমার কেনো ভালো লাগে তার কোন ব্যাখ্যামূলক উত্তর আমি আজো দিতে পারব না। এটাই ছিল তুলনার সাথে আমার পরিচয়ের প্রেক্ষাপট।
ধীরে ধীরে আমাদের পরিচয়টা সুপরিচয়ে পরিনত হয়। আমি তুলনার ছোট ভাইকে পড়ানো শুরু করি। পড়ানোর সময় তুলনা একেকদিন একেক অজুহাতে আসে। কখনো নাস্তা নিয়ে। কখনো এসে ছোট ভাইয়ের পড়াশুনার খবর নিত। আবার মাঝে মাঝে এসে কি যেন খুঁজত । সেই কি যেন টা হল অদৃশ্য । তাকে কখনো খুজে পাওয়া যায় না।
তুলনা আর আমি একি ভার্সিটির স্টুডেন্ট । ভার্সিটির অফ ডে গুলোতে আমরা নিয়ম করে দেখা করি। শপিংয়ে যাই । মাঝে মাঝে মুভি দেখতে যাই। তুলনা ধীরে ধীরে আমার সমস্তটা জুড়ে নেয়।
তুলনার প্রতি জন্মদিনে আমার কাছে গিফট চেয়ে নেয়। এইবার সে আমার কাছে অদ্ভুত এক গিফটের আবদার করল। আলতা। নিউমার্কেটের দোকানগুলোতে গিয়ে যখন আলতা চাই ওরা আমার মুখের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকে মনে হচ্ছিল মঙ্গল গ্রহের মাটি চেয়েছি। অবশেষে এক দোকানে পেয়েছিলাম। আলতা পেয়ে তুলনা কি যে খুশি হল!
তুলনা পায়ে আলতা পড়েছে। একটা সামান্য তরল যে মানব মনকে এতটা আকর্ষণ করতে পারে আমি তখন বুঝতে পারি। আমি অদ্ভুত মুগ্ধতা নিয়ে তুলনার আলতা পড়া পায়ের দিকে তাকিয়ে থাকি। আমার ঘোর লাগে। বুকের ভিতরটা মোচড় দিয়ে উঠে।
আমি সেদিন তুলনার ছোট ভাইকে পড়াতে যাই । গিয়ে দেখি তুলনাদের ফ্ল্যাট তালা দেয়া। আমি ফোন দেই। ফোন বন্ধ। একদিন পর আবার যাই। একি অবস্থা। পাশের ফ্ল্যাট থেকে জানতে পারি তুলনা রোড এক্সিডেন্ট করে মারা গেছে। সবাই গ্রামের বাড়িতে চলে গেছে। আমার বুকের ভিতরটা মোচড় দিয়ে উঠে ।
তখন আমার তৃতীয় বর্ষের ফাইনাল এক্সাম চলছে। এক্সাম আর টিউশনির চাপ আমার ভিতর থেকে তুলনাকে সরাতে পারছিল না। আমি সব সময় আশায় থাকতাম এক্ষুনি হয়তো স্বপ্নটা ভেঙ্গে যাবে। রাতের বেলা ঘুমুতে গেলে খুউব কষ্ট হত। খালি হাশপাশ করতাম। মনে হত বুকের ভিতর কিছু একটা আটকে আছে। চোখ বন্ধ করলেই তুলনাকে দেখতে পেতাম। আর তখন আটকে থাকা জিনিসটা হৃৎপিণ্ডকে সুইয়ের মত করে ফুটো করে দিতে চাইত।
এভাবে অনেকদিন কেটে যায় । ব্যস্ততা তুলনাকে ভুলিয়ে দিতে অবিরাম চেষ্টা চালিয়ে যায় । আবার নিসঙ্গতা তুলনাকে কাছে টেনে আনে।
চতুর্থ বর্ষের গ্রীষ্মের ছুটি চলছে। ছুটি কাটাতে পঞ্চগড় গেলাম। আমি দেবীগঞ্জ সদরে দাড়িয়ে আছি এক বন্ধুর অপেক্ষায় । আমার ঠিক পাশ কাটিয়ে একটা মোটর সাইকেল চলে গেল। মোটর সাইকেলে একটি মেয়ে বসা। মেয়েটিকে আমার খুব পরিচিত মনে হচ্ছিল। একসময় মেয়েটি পিছনে ফিরে তাকিয়ে মিষ্টি করে একটা হাসি দিল। আমার বুকের ভিতরটা মুচোড় দিয়ে উঠে। আমি হতবিহবলের মত তার চলে যাওয়ার পথে তাকিয়ে থাকি আর মুখ দিয়ে অস্পষ্ট একটা আওয়াজ বের হল তুলনা!!..............
©somewhere in net ltd.