নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আবার আসিব ফিরে ধানসিড়ির তীরে এই বাংলায়

সুন্দর বাংলাদেশ চাই

শামীম আহমেদ ইভ

উন্মুক্ত লেখালেখিতে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে এসেছি।

শামীম আহমেদ ইভ › বিস্তারিত পোস্টঃ

যাদুর আংটি

০১ লা জুন, ২০১৩ সকাল ১০:২৭

আংটিটা হাতে নেয়ার পর থেকেই নিজেকে অন্যরকম লাগছে। মনের ভেতরে সদা ততপর থাকা সংকোচ, অশনি সংকেত আর ভয় হটাতই গায়েব। আমার এই চল্লিশ বছরের জীবনে এই প্রথমই মনে হয় কোন কারণ ছাড়া নিজেকে খুব সুখী মনে করছি । কেন তা আমি নিজেই জানিনা।



বিশেষ কাজে গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলাম কিছুদিন আগে। ফেরার পথে ফেরিঘাট থেকে আমাদের বাসে একজন হকার উঠলো। সে আংটি বিক্রি করে। হাতে থাকা আংটির হাজারটা গুণাগুণ বলতে বলতে প্রত্যেক যাত্রীর হাতে এক একটি করে কাগজ ধরিয়ে দিতে লাগল। বাসের মধ্যে এমনিই গরম, তারপর আবার হকারদের ওয়াজ। রাগেতে মাথার ঘিলু টগবগ করছিল। এমন সময় তিনি আমার হাতেও এক পিস মহামূল্যবান প্রচারপত্র ধরিয়ে দিলেন। বলল, আংটি নেয়া লাগবে না। এটা একটু পড়েন। আমি রেগে বলতে যাচ্ছিলাম, ওরে তোর এই আংটির গুনাগুন আমার পড়া লাগবে না। ফেরিঘাটের জ্যামে আটকে থাকতে থাকতে এগুলো আমার মুখস্ত হয়ে গেছে। এখন নেমে আমাকে রক্ষা কর বাপ।



কিন্তু বলতে পারলাম না। প্রেসারটা এমনিতেই বেড়ে আছে। ওর সাথে তর্ক করে বাসটাকে আমি জাতীয় সংসদ বানাতে পারি না। মাথা ঘুরে পড়ে গেলে আরেক ঝামেলা। তাই কাগজটাকে হাতে গুজে ওর নেমে যাওয়ার অপেক্ষা করছিলাম। ও ফিরে আসলে কাগজটা দিয়ে হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। কিন্তু ও শালা কানের কাছে দাড়িয়ে আবার বয়ান শুরু করল। ওকে সরাতে ৫০ টাকা দিয়ে একটি আংটি কিনে আঙ্গুলে পরে নিলাম।



বাসায় ফিরে আসার পর আংটি দেখে বউয়ের প্রথম প্রশ্ন, কোথায় এনগেজড হয়ে এলে নাকি?



আমি রসিকতা করে বললাম, হ্যা আমাদের পুরান বাড়ীর ভাঙ্গা দেয়ালে থাকা শাকচুন্নির সাথে।



ওমনি সে বলে উঠল, তোমার জন্য ওই বেস্ট।



যাহোক সেদিন আর কথা না বাড়িয়ে খেয়ে দেয়ে অফিসে চলে এলাম। এসে তো অবাক!! আমার রুম চেঞ্জ হয়েছে। নীচ তলার কমন রুমটা ছেড়ে দোতলায়। আমার জন্য একটি আলাদা রুম। সম্পুর্ণ এসি, সোফা, টিভি তে সাজানো।

কয়েকজন কলিগ ফুল এনে কনগ্রাচুলেট করল। ব্যপারটা বুঝতে একটু সময় লাগল। এক কলিগ বলল, আপনার তো প্রমোশন হয়েছে।



আমি তো বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না। এটা কেমনে সম্ভব?



বস্ আমার আলসেমি স্বভাবের জন্য তো আমাকে দুচোখে দেখতে পারেন না। আর তিনিই কিনা আমাকে প্রমোশন দিয়ে .................................।



হাতে চিঠিটা পেয়ে আস্বস্ত হলাম।



বাসায় ফিরলাম মিষ্টির ঝুড়ি নিয়ে। সবাই তো মহা খুশি। বউ ছেলে মেয়ে বায়না ধরল, বেড়াতে যাওয়ার। অফিসে বসকে বলতেই তিনি দশ দিনের ছুটি ও একমাসের বেতন আগাম দিয়ে দিলেন । বেতনটাও ভারি।



চলে গেলাম কক্সবাজার। বেড়ালাম মনের মত করে। বিয়ের পর থেকে আমার বউকে তেমন কিছু দিতে পারিনি। যে কটা টাকা বেতন পাই তা দিয়ে সংসার চালানোই কঠিন। আর সখ আহলাদ!! সব সময়ই বউয়ের খুটা শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা। মনের চরম অশান্তির কারণে শেষ যে কবে তার সাথে একান্ত হয়েছি তা মনে করা কঠিন।



দু রুমের একরুমে ছেলে মেয়েকে থাকতে দিয়ে আমরা নিলাম অন্যটা। আজ দু'জনের মনই খুব খুশি। শুতে না শুতেই বউ আমাকে জড়িয়ে ধরল নিবির আলিঙ্গনে।



আহ! কতদিন পরে বিয়ের প্রথমদিকটার অনুভুতি ফিরে আসছে। বউ আমাকে বলল, তুমি জানো হটাৎ তোমার এ সাফল্যের পেছনে কারণ টা কি?

আমি জানতে চাইলাম, কি?



তোমার এই আংটি।



আমিও তাই ভাবছিলাম। আমার এই পনের বছরের একঘেয়ে দারিদ্রপিড়ীত জীবনটাকে পাল্টে দিয়েছে এই আংটিটা। হটাতই।



আমরা আরো একধাপ এগুচ্ছিলাম। এমন সময় দুয়ারে করাঘাত। ভাবলাম ছেলে মেয়েদের কেউ। দরজা খুলতেই দুজন মুখোস পরা লোক আমাকে ধাক্কা দিয়ে রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিল।



চাপাতি বের করে বলল, কোন শব্দ করলে একদম জবাই করে ফেলব। কি কি আছে তাড়াতাড়ি বের কর। বলে একজন আমার বউয়ের গলায় চাপাতি ধরল। খুলে নিল ওর মা'র দেয়া স্বর্ণের গয়না গুলো।



আমাদের ব্যাগ খুলে যা পেল সবই নিতে লাগল। জামা কাপড়গুলো ছাড়া। আমি ভয়ে নির্বিকার হয়ে দাড়িয়ে রইলাম। বউ আমার দিকে ভয়ার্ত চোখ করে বসে আছে। আমি তাকে অভয় দিলাম। নিলে নিক আমি তোমাকে আবার কিনে দেব।



বউকে ছেড়ে লোকটা আমার কাছে এসে আংটি খুলতে চেষ্টা করল। আমি কাপাকাপা গলায় বললাম, এটা পিতলের আংটি। বলার সাথে সাথে সে আমাকে একটা ঘুষি দিতেই মাটিতে গড়িয়ে পড়লাম। রাগে আমি ওর পায়ে একটা লাথি মারলাম ও পড়ে গেলে অন্যজন আমার গলায় চাপাতি বসিয়ে বলল, শুয়ররে জবাই করে দেই। বউ চিৎকার শুরু করল। আমি কলেমা পড়তে লাগলাম। ভয়ে মনে হচ্ছিল কাপড় ভিজে গিয়েছে।



আমি ভয়ে হটাৎ চিৎকার দিতে গেলাম। গলা দিয়ে শব্দ বেরুচ্ছিলনা।



বউয়ের ডাক শুনে তাকালাম। দেখি সে আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে। মনে হচ্ছে খুব রেগে আছে। আমি বললাম, ওরা চলে গেছে?



বউ রেগে জবাব দিল, কারা তোমার দুলাভাইরা?



আমি বললাম, ওই যে ছুরি চাপাতিয়ালারা..........



বলে এদিক সেদিক তাকাতে মনে হল আমি আমার ঘরে খাটে শুয়ে আছি। ঘড়ির দিকে তাকাতে দেখলাম বিকাল ৪ টা।



বউ কটমট করতে করতে বলল, উঠে তাড়া তাড়ি বিছানার চাদর ধোও। এই বুড়ো বয়সে বিছানা ভেজাতে শুরু করেছ । তাও আবার দিনের বেলায়। মানসম্মান নিয়ে বাচায় অসম্ভব হয়ে গেছে। আমারে তুমি মুক্তি দেও আল্লাহ।









মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা জুন, ২০১৩ সকাল ১০:৫৩

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: দারুণ লিখেছেন।

‘আংটি’ একটা বিখ্যাত গল্প পড়েছিলাম একবার কলকাতার একটা কাগজে, প্রায় ২০ বছর আগে। সেই গল্পের হুবহু কপিপেস্ট করা একটা টেলিফিল্ম দেখলাম কিছুদিন আগে, খুব সম্ভবত এনটিভিতে।

প্রথম প্যারা পড়ে মনে হচ্ছিল- এটিও একই গল্প কিনা ;) গল্পে ভিন্নতা আছে। প্লট খুব ভালো। তবে ভিতরকার উপাদান আরো বাড়ানো যেতে পারে।

শুভ কামনা।

২| ০১ লা জুন, ২০১৩ দুপুর ১২:২৩

শামীম আহমেদ ইভ বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। লিখতে লিখতে হঠাৎ চোখ ব্যথা করছিল। এ জন্য বেশি লিখতে পারিনি। তবে চেষ্টা করে দেখব।

৩| ০১ লা জুন, ২০১৩ দুপুর ১২:৫৭

বাকি বিল্লাহ বলেছেন: ভালতো ভালোনা???

০২ রা জুন, ২০১৩ দুপুর ১২:৫৬

শামীম আহমেদ ইভ বলেছেন: ভাল!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.