![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি খুব সাধারন একটা ছেলে বেড়ে উঠা গ্রামে, আর ভালোবাসি বাংলাদেশ। পড়তে খুব পছন্দ করি, মাঝে মাঝে লিখারও চেষ্টা করি।
নিহার আজ কেন যেন ঘুম আসছে না । খুব অস্থির লাগছে। বারান্দায় গিয়ে পেতে রাখা ইজি চেয়ারটায় বসল । আকাশ দেখার ব্যর্থ চেষ্টা করল কিছুক্ষণ । এতো এতো উঁচু অট্টালিকার ফাঁকে আকাশের দেখা মেলে না, চাঁদ তারা সে তো আরও পরের ব্যাপার। মন যেন আরও অস্থির হয়ে উঠলো। মনে হচ্ছে আকাশ দেখতে না পেলে আজ ঘুম ই আসবে না তার । ব্যস্ত জীবনের সময় গুলো কখন যে কেটে যায়? টেরই পায়নি কতদিন যে আকাশ দেখা হয় না। মনে মনে সে ভাবলো আজ দেখতেই হবে আকাশ। যেতেই হবে আজ ছাদে। কতো দিন যে ছাদে উঠা হয় না, কে জানে । হুম মনে পড়ছে, একদিন পূর্ণ চাঁদের পূর্ণিমায় গোসল দিতে উঠেছিল । সেই সাথে ছবি ও তুলেছিল সেই চাঁদের, একটা আলোক বিন্দু আর কি । সে যাই হোক , আজ ছাদে যাওয়া ই লাগবে। তবে আট তলা ভবনের ছাদে তো দোতলা থেকে লিফট ছাড়া উঠা কষ্ট , এই মাঝ রাতে লিফটে উঠতেও তো ভয় হচ্ছে। না হেঁটেই যাবে ছাদে। ছাদের চিলেকোঠায় থাকে এক ফ্যামিলি। এক মা তার মেয়েকে নিয়ে। মেয়েটা পরীক্ষার্থী , তাই তখনো সে পড়ছে। জানালা দিয়ে দেখতে পেল, ভয় পাবে ভেবে বলে উঠল, কি পড়ছ ? আমি দোতলার আপু , একটু ছাদে এলাম, ঘুম আসছে না তো, সে একটা মুচকি হাসি দিলো। এরপর নিহা চুপচাপ এসে পানির পাইপ লাইন গুলো গেঁথে রাখা সিমেন্টের উঁচু ধাপে বসল। এরপর আনমনে আকাশের দিকে তাকিয়ে চাঁদ আর তারাদের দেখছে নিহা। অনেক তারার মাঝে কি যেন খুঁজছে। একটা বিশেষ কোন তারা , এমন কি আর এতো রাতে দেখা যাবে, সন্ধ্যা হলে না হয় দেখা যেতো ।
হঠাৎ মনে হল কেউ একজন যেন তার পাশে দাঁড়িয়ে আকাশ দেখছে । তার এসে দাঁড়ানোর বাতাস টেরই পেলো না , পাশে ফিরে তাকাতে ইচ্ছে করছে না । মগ্ন হয়ে তাকিয়ে আছে আকাশের দিকেই । পাশ থেকে কেউ যেন বলে উঠলো …………………
আমি তারার মালা পরিয়ে দেবো তোমায় , নীল জোছনার শাড়ি দেবো , একটা তারা তোমার কপাল জুড়ে টিপ হয়ে জ্বলবে। চলো মেঘের দেশে হারিয়ে যাই………
একটা পুরুষ কণ্ঠ। নিহা মনে মনে ভাবল "এতো ভীতু আমি, এতো রাতে এখানে পুরুষ কণ্ঠ এলো কোথা থেকে , চিলে কোঠায় থাকে এক মা আর মেয়ে………… এই সব কিছু ই মাথায় এলো না। আমি উল্টো বলছি মেঘের দেশে হারিয়ে যাই এই কথা বলে তো মেঘ ই এনে দিলে। এতো সুন্দর আকাশটা নিমেষে কালো হয়ে গেলো ।" পুরুষ কণ্ঠ বলে উঠলো আমি তোমার জন্য মেঘের পালকী নিয়ে এলাম যে, চলো একবার ঘুরে আসি।
সে নিহার পাশ ঘেঁষে বসে পড়লো । নিহার হাতটা ধরল ।নিহা তার স্পর্শ টের পেল , কি শীতল! হাত সরিয়ে দিল, "বললাম না আমি আজ সারারাত আকাশ দেখবো , এখানে বসেই , তুমি চাইলে বসে দেখতে পারো " নিহা ওই পুরুষ লোকটিকে বলল । সাথে সাথে সে অট্ট হাসি দিয়ে এক চোট হেসে নিলো । এরপর গুনগুন কর গাইতে লাগলো ……… আকাশের ঐ মিটিমিটি তারার সাথে আমি কইবো কথা…………
গলাটা বেশ লাগলো। কেমন যেন চেনাচেনা কণ্ঠ, আর কষ্ট জড়ানো ।
এরপর খুব জোরে নিহার দুই বাহুতে চেপে ধরে বলল," তুমি কি পাগল ? সারারাত একা একা ছাদে বসে থাকবে , তা ও আমার সাথে ? আমাকে দেখো ভালো করে, একটু ও ভয় পাচ্ছ না তুমি ? দেখো ভালো করে , এরপর চলে যাও এখান থেকে। তুমি এইভাবে কোন দিন ই একা থাকবে না কোথাও। তোমাকে একা দেখলেই আমি আসবো , আর সেটা তোমার জন্য ভালো হবে না ।"
নিহা ভালো করে তাকিয়ে দেখল সেই চেহারার দিকে…………… এ কি! এ দেখি জয় ! জয় , সে তো কবেই মারা গেছে রোড এক্সিডেন্টে তার চোখের সামনে। না মারা যায়নি , সে আত্মহত্যা করেছিল। চরম অভিমানে , ভালবাসাকে না পাওয়ার অভিমানে। তাকে না পাওয়ার অভিমানে। নিহা বলতে লাগল "আমি তো তখন ভালবাসা কি সেটাই বুঝতাম না। শুধু এই টুকু ই বোধ ছিল, এটা অন্যায়। এই সময় এমন করা ঠিক না। এই বয়সে বখে যাওয়া ছেলেরা এই সব করে।" আর তাই তাকে প্রত্যাখ্যান করে চড় মেরে সবার সামনে অপমান করে সাজা দিয়েছিল । সেই অপমান সইতে না পেরে আর ভালবাসাকে না পেয়ে সেদিন ই জয় নিহার চোখের সামনে, সবার সামনে ঝাপ দিলো চলন্ত ট্রাকের নীচে। সেই থেকে নিহা মরছে মরমে। একটা অপরাধ বোধ তাড়া করে বেড়াচ্ছে। সব সময় মনে হতো ওকে কেন সেদিন ফিরিয়ে দিল? একবার যদি আবার আসতো সামনে , ভুল শুধরে নিত তার । হাজার রূপে সামনে আসছে জয় , অন্য কোন জয় হয়ে। সেই জয় তো আর আসবে না, অন্য কেউ এলেই বা কি? তার প্রায়শ্চিত্ত তো হবে না। জয় নিহাকে ভুলতেই দিচ্ছে না। আজ আবার এতো দিন পর , সে নিজের রূপেই সামনে হাজির। এটা কি করে হয়! জয় তো মারা গেছে।
কে তুমি ? নিহা ভয়ে আর্তনাদের কণ্ঠে চিৎকার করে উঠল। এতক্ষণ ভয় পায়নি, এইমাত্র জয়ের চেহারা দেখেই ভয়ে সে কাঁপতে শুরু করল। সে আরও কাছে এসে বলল "তোমার ঘৃণা, আর তুমি আমার অতৃপ্ত ভালবাসা।" নিহা বলল "এ হতে পারে না, যাও তুমি, আমাকে কেন ভয় দেখাচ্ছ ? ভালো ই যদি বাস, তবে এখন কেন ভয় দেখাচ্ছ ?" জয় এসে নিহার গলা টিপে ধরে বলল "এখন ভালবেসে কি পাবো তোমায়? পেতে হলে তো আমার সাথেই নিয়ে যেতে হবে তোমাকে , যাবে চলো ?" বলেই গলায় দুই হাতের চাপ আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।নিহা আরও জোরে চিৎকার শুরু করল। এতো জোরে তা ও কেউ শুনছে না যেন, একটু পর দেখে , চিলে ঘরের সেই মেয়েটি এসে তার গায়ে হাত দিয়ে ধাক্কা দিচ্ছে। আর বলছে," কি হল আপু একা একা কার সাথে কথা বলছ ? আমি তোমার গলা পেয়ে এলাম, দেখি তুমি একা একা কি যেন বিড়বিড় করে বলছ।"
কি হল এতক্ষণ ওকে কিছু না বলে নিহা বলল , কবিতা পড়ছিলাম মনে মনে। যাই, অনেক রাত হয়ে গেছে।
বিদায় নিয়ে ঘরে এসে নিহা পানি খেল। এরপর বিছানায় গিয়ে ভাবল, কি হল এইসব ? আবার জয় , তাও এখানে, কি করে ! না হতেই পারে না! এই সব ই তার কল্পনা। হঠাৎ গলায় একটু জ্বালা অনুভব করল। উঠে আয়নার সামনে গিয়ে দেখে আঙ্গুলের ছাপ পড়ে আছে গলায়, আর একটা জায়গায় একটু কেটে গেছে।
জয় তাকে এই জীবনে মুক্তি দেবে না, বুঝল। যতদিন বেঁচে থাকবে , সে নিহার পিছু ধাওয়া করবে, অতৃপ্ত ভালবাসার জন্য ।
©somewhere in net ltd.