নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

[email protected]

শ।মসীর

At present I am living in the consequences of a choice made earlier বেঁচে আছি এটাই আনন্দের.........।। ইচছা হয় সারাদিন ঘুরি পথ থেকে পথে ঘোরা হয়না..............................।।

শ।মসীর › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাড়িওয়ালির অশরীরি মেয়ে -১৮ তম পর্ব

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫৩



শানু ভিন্ন ধারার এক জীবন যাপন করে চলেছে । বন্ধুবতসল শানু এখন কদাচিত লম্বা সময় ধরে আড্ডা দেয় । আগে যেখানে উইকএন্ডে বন্ধুরা সব তার এই চিলেকোঠায় এসে হাজির হত এখন সে আর কাউকেই আসতে বলেনা , তারা আসতে চাইলেও সে নানা অজুহাতে এড়িয়ে চলে । বন্ধুরা এই নিয়ে তাকে খেপায়ও । সে কি বিয়ে শাদী করে ফেলেছে কিনা এই নিয়েও তারা সন্দেহ পোষন করে , শানু হাসে । অশরীরি মেয়েটার সাথে ভিন্ন স্বাদের এক জীবনে অভ্যস্ত হয়ে গেছে সে । সে নিজেও মাঝে মাঝে বুঝেনা এই জীবন কি বাস্তব না তার কল্পনা । এই ঘোর থেকে বের হবার কোন উপায়ও তার জানা নেই ।

শানু শুয়ে শুয়ে হিন্দী সিনেমা দেখছে । বিছানার এক পাশে মেয়েটিও বসে আছে । নির্মোহ চোখে সে সিনেমা দেখছে । মাঝে মাঝে হাসছে । হাসির কারন জানতে চাইল শানু ।
না এমনিতেই হাসছি বলে উত্তর দিল সে ।

না তুমি এমনিতে হাসছনা, কোন কারন নিশ্চয় আছে ।

সিনেমার এই সব প্রেম ভালবাসা দেখলে আমার হাসি পায়, তাই হাসছি । মানুষ কি আগ্রহ নিয়ে দেখে, এটা দেখেই আমার মজা লাগে । সিনেমার নায়ক নায়িকার কষ্ট দেখলে আপার দেখা যেত চোখে পানি চলে আসছে । এই নিয়ে আম্মা আর ভাইয়া তাকে কত খেপাইত । প্রেমে পড়লাম, তারপর থেকে আমারও এমন কষ্ট লাগত । সে কষ্টের ভার সইতে না পেরে এক সময় নিজের জীবনটাই হারালাম । কি বড় বোকামিই না করেছিলাম , আর তার ফল এখন ভোগ করে চলেছি । এভাবে কতদিন । এই অশরীরি জীবন থেকে আমি মুক্তি চাই । এমন যদি হত যারা মারা যায় তারা সবাই এই অশরীরি জীবন পায় তাহলে একটা কথা ছিল ।

যদি আমি আমার বাবা মাকে দেখতে পেতাম তাহলে আমার আর কিছুই লাগতোনা । আমি আমার মার হাতটা ধরে সারাদিন বসে থাকতাম । মার কোলে মাথা রাখতাম । আমার আর ভাল লাগেনা, আমি মুক্তি চাই । আপনি কোন দিনও বুঝবেননা আমার কি কষ্ট । এইভাবে মানুষ কে দেখার কষ্ট যে কি ভয়ংকর তা বুঝবেননা । আমাকে মুক্তির একটা উপায় বের করে দেননা প্লীজ ।

মেয়েটা বেশ আবেগী হয়ে উঠে । মানুষ হলে হয়ত চোখে পানিও দেখা যেত । কিন্তু তার অবয়বে কেবল বিষন্নতার রেখায় দেখতে পাচ্ছে শানু ।

শোয়া থেকে উঠে সে মেয়েটির পাশে বসল । যে কাজটি কোনদিন করেনি সে আজ সে কাজটি করে বসল ।

শানু এতদিন ভেবেছিল মেয়েটির এই অবয়ব বায়বীয় । শূণ্যের মাঝে তার অবয়ব হয়ত সে দেখতে পাচ্ছে । তাই মাঝে মাঝে মেয়েটিকে ছুয়ে দেখার ইচ্ছা জাগলেও সে ইচ্ছাকে সে চাপা দিয়ে রেখেছিল । পাছে মেয়েটি যদি আবার রাগ করে তাই ।

আজকে তাকে আবেগে আক্রান্ত হতে দেখে আগপাশ না ভেবে বিছানায় রাখা মেয়েটির হাতের উপর শানু নিজের হাতটা রাখল । দুজনেই একসাথে চমকে উঠল ।
দুজনেই দুজনের অস্তিত্ত্ব টের পাচ্ছে । দুজনেই অনেকটা স্হির হয়ে গেছে ।
শানু টের পাচ্ছে মেয়েটি একটু যেন কাঁপছে । তার নিজের ও কেমন যেন লাগছে, ব্লাড প্রেশার হয়ত বেড়ে গেছে । সে কল্পনাও করেনি এভাবে অশরীরি মেয়েটির অস্তিত্ত্ব অনুভব করতে পারবে । রক্ত মাংসের মানুষের হাতের মতই সে মেয়েটির হাত এর উপর হাত রেখেছে । সে আরেকটু শক্ত করে মেয়েটির হাত ধরল ।

মেয়েটি শানুর দিকে তাকাচ্ছেনা । সে মনিটরে সিনেমার দিকে তাকিয়ে আছে । সেও শানুর হাত তার হাতের উপরে টের পাচ্ছে । কিছুক্ষন সময় নিয়ে বলল হাতটা ছাড়েন, ব্যথা পাচ্ছিত ।

শানুকে সম্বিত ফিরে পেয়ে হাসতে হাসতে বলল তুমি না অশরীরি, তুমি ব্যথা পাচ্ছ কি ভাবে !

সে শানুর দিকে তাকিয়ে বলল আমিওত তাই ভাবছি, আমিত জানতাম আামর কোন অনুভূতি নেই, কিন্তু এখন আপনি আমার হাতে চাপ দেয়ার পরত দেখি ব্যথা পাচ্ছি । অবশ্য আমি জানবই বা কিভাবে, আগেত কেউ এমন করে অশরীরি জীবনে আমার হাত ধরেনি ।

আপনি ঘুমান বলে মেয়েটি হঠাত করে নাই হয়ে গেল ।

শানু জানে সে যতই অপেক্ষা করুক আর ডাকাডাকি করুক মেয়েটি এখন আর তার সামনে আসবেনা । সে সিনেমায় মনোযোগ দেয়ার চেস্টা করল ।








সিনেমা দেখতে আর ভাল লাগছেনা । মেয়েটির হাতের উপর হাত রাখার অনুভূতি সে মন থেকে দূর করতে পারছেনা । সিনেমা বন্ধ করে একটা সিগারেট ধরিয়ে রুম থেকে বাইরে এল সে , ছাদে হাঁটার জন্য ।

মেয়েটি দাঁড়িয়ে আছে লেবু গাছের পাশে , ঠিক প্রথম যেভাবে দেখেছিল সেভাবে । শানুর দিকে মুখ করে, মুখে মনে হচ্ছে আলতো হাসি লেগে আছে । শানুকে দেখে সে উল্টোদিকে ঘুরে গেল ।

শানুও তাকে দেখতে পেয়েছে । মেয়েটির কাছে এগিয়ে গেল সে । কি ব্যাপার কি করছ এখানে ।
আমার লেবু পাতার ঘ্রান খুব ভাল লাগে , তাই যখন মন খারাপ থাকে তখন এই গাছটার পাশে এসে দাঁড়িয়ে থাকি ।
কি করলে মন ভাল হয় তোমার ।
তাতো জানিনা, খারাপ হয়, আবার নিজে নিজে ভাল ও হয়ে যায় কিছু সময় পরে ।

আচমকা শানু একটা কান্ড করে বসল । সে মেয়েটিকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরল । মেয়েটি একটুও চমকায়নি, একটুও নড়েনি, ঠিক যেভাবে ছিল সেভাবেই দাঁড়িয়ে আছে । শানুই বরং কিছুটা নার্ভাস বোধ করল । তবুও সে ঠিক ওভাবেই জড়িয়ে ধরে থাকল ।

কেউ দূর থেকে এই দৃশ্য দেখলে নিশ্চিত শানুর মাথায় সমস্যা আছে বলে ধরে নিত । মাঝ রাত বলে সে সম্ভাবনা এখন নেই ।

শানুর নাকেও এখন লেবু পাতার ঘ্রান আসছে । সে মেয়েটিকে বলল ব্যাপার কি তোমার গায়ে লেবু পাতার গন্ধ কেন ।
মেয়েটি জবাব দিল আমাকে শেষ গোসল দেয়ার সময় কেউ একজন পানিতে অনেকগুলো লেবু পাতা মিশিয়ে দিয়েছিল । তারপর থেকে এই গন্ধ আমার শরীরে স্হায়ী হয়ে গেছে । কেবল এই গন্ধটাই আমি টের পাই, আমার ভাল লাগে , এইজন্যই লেবু গাছের পাশে দাঁড়িয়ে থাকি ।

দুজনেই চুপ হয়ে যায় । কারো মুখে কোন কথা নেই । শানু অমন ভাবেই মেয়েটিকে জড়িয়ে আছে ।
হঠাত মেয়েটি বলে আপনার সিগারেট টা ফেলে দিন, হাত পুড়ে যাবে ।
ও তাইত, শানু খেয়াল করেনি, হাতে সিগারেট টা এমনি এমনি পুড়ছে ।
সে সেটা ফেলে দিয়ে মেয়েটিকে আরো শক্তভাবে ধরল ।

শানু টের পেল, মেয়েটিও নিজেকে আরো ভাল ভাবে শানুর কাছে সপে দিয়েছে ।



শানুর পৃথিবী আরো ছোট হয়ে গেছে, অফিস শেষেই রুমে ফিরে আসা ছাড়া আর কোন কাজ নেই তার । বন্ধুরাও বিরক্ত হয়ে এখন যোগাযোগ প্রায়ই ছেড়ে দিয়েছে । মাস দুয়েক ধরে সে বাড়িও যাচ্ছেনা । বাবা মা ফোন করে তাকে বাড়ি আসতে বললে সে অফিসের দোহায় দিয়ে পাশ কাটানোর চেস্টা করে ।

শানু নিজেই অবাক হয়ে ভাবে অশরীরি একটা মেয়ের সাথে সে কিভাবে দিনের পর দিন নেশারমত একটা জীবন কাটাচ্ছে । অফিসে কাজের ফাঁকে সে মাঝে মাঝে আনমনা হয়ে ভাবতে থাকতে, তার জীবনের এই ঘটনা প্রবাহ । কোন কূল কিনারা সে পায়না । পরক্ষনে নিজেই নিজেকে প্রবোধ দেয়, ধূর চলতে থাকুক । খারাপতো লাগছেনা ।
অফিস শেষে অনেকদিন পর আজ বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে গিয়েছিল সে । অশরীরির সাথে এই জীবন নিয়ে কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে সে ইদানিং । এই জীবনের যে কোন নাম নেই এই কথা আজকাল তার মাথায় ঘুরছে । এই নেশা থেকে মুক্তির পথ ও তার জানা নেই । আড্ডায় বন্ধুরা তাকে অনেক গালাগালি করল, তার আসলে কি হয়েছে জানার চেস্টা করল । অফিসে ভাল সময় যাচ্ছেনা এই অজুহাত দেখিয়ে সে কোন রকমে পাশ কাটিয়ে বাঁচল । বেশ ভাল সময় কাটিয়ে রুমে ফিরল সে ।

শানু রুমে ফিরতেই মেয়েটি হাসতে লাগল । সে অবাক হয়ে জানতে চাইল ব্যাপারকি ।
অশরীরি হাসির মাত্রা বাড়িয়ে দিয়ে বলল, এই বিল্ডিং এ আশরাফুল এর আগমন চিরদিনের জন্য বন্ধ করে দিয়েছি ।
শানু কিছুটা ভয় পেয়ে গেল, সে কিছুটা জোর গলায় জানতে চাইল কি হয়েছে আশরাফুলের ।

বিকেলে আশরাফুল তার বউ নিয়ে এসেছিল এইখানে । আম্মার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল তার বউ এর । এরপর সে তেল আনতে চলে গেল । তার বউ আম্মাকে তারা কত সুখে আছে এই গল্প বলছিল । শুনতে শুনতে আমার মেজাজ খুব খারাপ হয়ে গিয়েছিল । আশরাফুল হারামজাদা এত সুখে থাকবে কি কারনে ।

তো তুমি কি করলে ।

তেল নিয়ে এসে আশরাফুল গাড়িটা গ্যারেজে না রেখে বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখেছিল । এরপর সে তার বউকে ডাকতে উপরে উঠল । তার ইচ্ছা ছিল বউকে গাড়িতে করে বাসায় রেখে আসবে । আমি তার আগেই একটা ঘটনা ঘটিয়ে দিলাম । আম্মার তো ডুপ্লেক্স বাসা, তিন তালার ব্যালকনিতে অনেকগুলো গাছের টব ঝোলানো আছে । সেখান থেকে দুটো টব গাড়ির উপর ফেলে দিলাম । একটায় গাড়ির গ্লাস ভেঙ্গে চুড়মার, সাথে ছাদ ডেবে গেছে, আরেকটায় গাড়ির সামনের বনেট বাঁকা হয়ে গেছে ।

বল কি এটা কি করলে তুমি ।

কি করলাম জানিনা, এই ঘটনা ঘটানোর পর ওর উপর আমার রাগ কিছুটা কমে গেছে, নিজের উপর ও রাগ অনেকটা কমে গেছে । আম্মা দৌঁড়াইয়া বারান্দায় আসল । এই দৃশ্য দেখার পরত তার মাথা পুরোপুরি আউট হয়ে গেল । আশরাফুলের চৌদ্দগোষ্ঠীকে গালাগালি করল তার বউ এর সামনে, সাথে সাথে তার চাকরিও নট করে দিল । এই মাসের বেতন ও সে পাবেনা । বলে দিছেন এই এলাকায় যেন তারে আর না দেখেন ।

কি দরকার ছিল এমন করার । তুমি এখন তোমার মত আছ, সে আছে তার মতন ।

দরকার ছিল, এমন কিছু না ঘটলে সে সারা জীবন অন্যায় করে যাবে আর ভাববে অন্যায় করলেত কোন সমস্যা হয়না । আম্মাত বলে বসেছে আমার পালক মেয়েটা মরার পেছনেও কেন জানি মনে হয় তুই দায়ি । এটা বলার পরত ওর বউ এর চোখ প্রায় উল্টে যাচ্ছিল । অবিশ্বাস্য চোখে সে একবার আম্মার দিকে আরেকবার আশরাফুলের দিকে তাকাচ্ছিল । এতক্ষন যে আশরাফুল মাথা নিচু করে ছিল, এই কথা বলার পর তার চেহারাও হয়েছিল দেখার মত । তার চোখমুখ কুঁকড়ে ছোট হয়ে গিয়েছিল ।

আমার অনেক ভাল লাগছে আজকে । হারামজাদাটার মিনিমাম একটা শিক্ষা হয়েছে । অল্পের উপর দিয়ে সে পার পেয়ে গেছে ।

শানু বিহবল চোখে তাকিয়ে আছে । মেয়েটি তার দিকে এগিয়ে আসছে, গভীর ভাবে সে শানুকে জড়িয়ে ধরল ।

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ৮:১৬

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: উরিব্বাস!

অশরীরর শরীরি স্পর্শ!
কঠিন টুইষ্ট দিলেন! ;) দেখা যাক তারপর কি হয়!

অশরীরি বাচ্চা কাচ্চা না হলেই ভালো ;) :P =p~ =p~
হা হা হা

দারুন লিখছেন।পাঠককে টেনে নিচ্ছে গল্প তরতর করে - - -

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ৮:৪৬

শ।মসীর বলেছেন: কল্পনায় পোলাউ কোর্মা নিয়ে ভাবাটাই বেটার ;)

২| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ৯:২৭

সৈয়দ মোজাদ্দাদ আল হাসানাত বলেছেন: চলুক না ভালোই লাগছে ।

৩| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১০:৫২

রাজীব নুর বলেছেন: লিখতে গেলে এই এক সুবিধা যা মন চায় লেখা যায়।

১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ৮:৩৩

শ।মসীর বলেছেন: এটাই মনে হয় লেখালেখির মজা :)

৪| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১২:৪৪

নেওয়াজ আলি বলেছেন: আগেও পড়েছি আজও পড়লাম আগামীতে কি হয় দেখি

১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ৮:৩৪

শ।মসীর বলেছেন: শুভকামনা

৫| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০২০ সকাল ১০:৫৪

দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: পরে পড়বো।

১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ৮:৩৪

শ।মসীর বলেছেন: ওকে

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.