![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
হালফিল এ সময়ে দ্রুত বদলে যাচ্ছে সবকিছু। মানুষের আচরণ, ভাষা, পোষাক-আষাক সবকিছুই যেন লক্ষ্যহীন এক গন্তব্যে এগিয়ে চলেছে। ভাবনার সময়টুকুও পর্যন্ত নেই। এ যেন “যে ভাবা সে কাজ” এর চক্কর চলছে চারদিকে। কী চাই তা জানা নেই। মন চাচ্ছে কি চাচ্ছেনা, মনের ভালো লাগছে কি লাগছেনা, করে যাচ্ছি যথেচ্ছা। লক্ষ্য বা ফলাফলের তোয়াক্কা না করে এভাবে ভবিষ্যতে পাখা মেলে দিয়ে মাটির সাথে যেন সম্পর্ক হারিয়ে যাচ্ছে মানুষের। অতীত হয়ে যাচ্ছে মূল্যহীন সম্পর্কহীন। যেন কোন কালে আমাদের কোন অতীত-ই ছিলনা। অথচ সহজ-সরল আর ছোট্ট কিছু বিষয় এক সময় আমাদের জীবনকে কতই না সুখ আর আনন্দে ভরিয়ে রাখতো এ প্রসংগে নিকট অতীতের একটি সুন্দর রীতি, চিঠি লেখা-লেখির কথা মনে পড়ে যায়।
এক সময় এমন ছিল আত্মীয়-স্বজন পরিচিত জনের মধ্যে যোগযোগ, সংবাদ সংগ্রহের মাধ্যম ছিল পোস্টকার্ড, চিঠি ও টেলিগ্রাম। আর একটি মাধ্যম ছিল টেলিফোন। সে সময়ে তার এতটা প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হতনা এটা সত্য। তবে টেলিফোন স্বয়ং ছিল দুঃ¯প্রাপ্য একটি বিষয়। মূলতঃ দূর-দূরান্তে কিংবা বিদেশে আপনজনের খোঁজ-খবর করা হত পত্র লিখেই। পত্র লিখে মন উন্মুখ থাকতো, কখন আসবে ডাকপিয়নের হাতে কাঙ্খিত উত্তর। চিঠি লেখার কোন বয়স ছিলনা। পিতা-মাতা-সন্তানের মধ্যে, আত্মীয় থেকে আত্মীয়ে, বন্ধু-বন্ধবে, প্রিয়জনে, কলমী-বন্ধুতে, শিক্ষক-গুরুজনে, ব্যবসায়ী-চাকরীজীবি এদর সকলের প্রয়োজনানুযায়ী কম-বেশী এক অন্যের মধ্যে লেখা-লেখি হতো। প্রিয়জনদেরকে চিঠি লেখার জন্য ছিল রঙিন খাম। ভিতরে ফুল-পাখির ডিজাইন করা রং বেরঙের কাগজে চিঠি লেখা হত। মনের মাধূরী মিশিয়ে হরেক শব্দ/ভাষায় লেখা সে চিঠি প্রাপকের বুকের ভিতর কতই না রং তৈরী করত। চিঠিতে চিঠিতে তৈরী হত কতই না সম্পর্কের। আবার প্রতারণা, ডাকাতী এসবও হত চিঠি লিখে।
চিঠির বিষয়বস্তুতে গান, কবিতা, উপমা কত কিছুইনা থাকতো। অন্তর নিঃসৃত সে পত্র লেখা কতইনা ঘটনা আর দূর্ঘটনার জন্ম দিয়েছে। সে সময়ের চিঠি ছিল মনের দর্পন। মনের না বলা কথা, তা হোক দুঃখ-বেদনা কিংবা সুখ, তা কলমের লেখা হয়ে চিঠিতে ফুটে উঠত। টিঠিকে উপলক্ষ্য করে লেখা হয়েছে হরেক রকমের গল্প, কবিতা আর সুন্দর সুন্দর গান। এর মধ্যে জগন্ময় মিত্রের গাওয়া চিঠির গান, “তুমি আজ কত দূরে”, সাবিনা ইয়াসমিনের “চিঠি দিও প্রতিদিন” হেমন্ত মুখোপাধ্যায় এর “রানার চলেছে তাই ঝুম ঝুম ঘন্টা বাজছে হাতে” লতা মুঙ্গেষকরের, “প্রিয়তম কি লিখি তোমায়” বিশেষ পরিচিত।
এখন সেদিন আর নেই। ডাকপিয়নের ঝুলিও বুঝি আজকাল অনেক হালকা হয়ে গেছে। কে লিখবে চিঠি? এ যন্ত্র যুগ কেড়ে নিয়েছে সে পত্র লেখার চল। আমরা সবাই বন্দী হয়ে গেছি ফেসবুক, টুইটার, ই-মেইল আর সেল ফোনে। বলতে গেলে এখন আর কেউই চিঠি লিখে সময় নষ্ট করে না। মোবাইলের বাটন টিপে, কাড়ি কাড়ি টাকায় কথা বলা, যখন-তখন কাছে দূরের খবর নেয়া। সময়ের এ পথ পরিক্রমায় আমাদের এখন শুধু চলে দেনা-পাওনার হিসেব কষাকষি। কি হারিয়ে গেছে, কি হারাচ্ছি এসবে আমাদের কোন খোঁজ নেই। আর কিইবা হবে খোঁজ করে। সুখ বা দুঃখ যাই হোক না কেন, স্মৃতির সবটুকুই তো কষ্টের। শখ করে কেউ কি চায় মনকে কষ্ট দিতে !
©somewhere in net ltd.