নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি একজন স্বল্প শিক্ষিত মানুষ। অনুভূতি শেয়ার এবং শিখার জন্য লিখি।

কচি খান

কচি খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

Built-in ‘মন’

১৩ ই অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ৮:২১

সমগ্র সৃষ্টির মধ্যে মানুষ শ্রেষ্ঠতম। তবে এ মর্যাদাটা অবশ্যই মানুষকে অর্জন করতে হয়েছে প্রকৃত শিক্ষালাভ সহ জ্ঞান, বুদ্ধি ও বিবেক খাটিয়ে। জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রযুক্তিগত সাফল্যের বদৌলতে বর্তমানে মানুষ এই সুন্দর পৃথিবীর সবকিছু মন্থন করে সৌর জগতের অন্যান্য গ্রহে উকি-ঝুকি মারছে। আবার কোন বুদ্ধিমান প্রাণী মহাবিশ্বের অন্য কোথাও আছে কিনা তার স্পন্দন বা সংকেত শোনার জন্যও আকাশে কান পেতে রেখেছে। নিরন্তন হাজারও প্রশ্নের অবতারনা করে মানুষ খুজে ফিরছে সৃষ্টির রহস্য। একক বা সমষ্টিগতভাবে মানুষের এই যে উন্নতি তা বিস্ময়কর হলেও প্রতিটি মানুষই তার দেহে বয়ে বেরাচ্ছে সবচেয়ে বিশ্বয়কর বৈশিষ্ট্যপূর্ণ এক একটি “মন”। আর এ বৈচিত্রতাপূর্ণ মনের কারণে প্রতিটি মানুষের নিজস্ব পরিমন্ডল এবং আচরণ অবিশ্বাস্য রকমের ভিন্ন চিত্র কলায় পরিপূর্ণ। মনস্তাত্বিক পার্থক্যের জন্যই এক পরিবার, একই প্রকার শিক্ষা-সংস্কৃতি ও সামাজিক বন্ধনে আবদ্ধ থেকেও মানুষের আচরনে কারও সাথে কারও সাদৃশ্য সচরাচর খুজে পাওয়া যায় না। বৈচিত্রময় এরূপ মন-মানসিকতা, চরিত্র, দেহায়বব ইত্যাদির কারণে মানুষ সত্যই বিধাতার এক অনন্য সৃষ্টি।



মানুষের দেহ, মস্তিস্ক, আচরণ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও বিশ্লেষণ হয়, চলে নানা রকম বৈজ্ঞানিক গবেষনা ও চিন্তাভাবনা। কিন্তু মানব মন মানুষের কাছেই চিরকাল রয়ে গেছে অবোধ্য ও গভীর রহস্যময়। মন বস্তুটি কেমনÑ কঠিন, বায়বীয় বা তরল, তা কেও জানে না। মনকে আমরা আত্মা বলেও চিনি। কিন্তু মন বা আত্মাকে বুঝতে পারা তাকে ধরতে না পারার মতোই দুঃসাধ্য ব্যাপার। মন দিয়ে আরেকটি মনকে বুঝতে না পারার বিষয়টি নির্মম অসহায়ত্ব বই আর কিছু নয়।



মনের ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার বহিঃপ্রকাশ মানুষের আচরণে সামান্য যেটুকু প্রকাশ পায় তাতে প্রতিনিয়ত মানুষে মানুষে তর্ক-বিতর্ক, হাতা-হাতি এবং শেষে তা নিয়ে খুনো-খুনিও ঘটে যাচ্ছে। মানুষ পারিবারিক, সামাজিক, প্রাতিষ্ঠানিক এবং রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন রীতি-নীতি, নিয়ম-শৃংখলা ও বিধি-নিষেধের কারনে মনের নানান প্রতিক্রিয়ার চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ তার আচরণে সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ করতে পারেনা। কারন সভ্যতার মুখোশ তাকে পরে থাকতে হয়। কিন্তু সে মনে পুষে রাখে ভাল-মন্দ, রাগ-হিংসা, ঘৃৃণা-বিদ্বেষ ইত্যাদি অনেক অভিব্যক্তি। যার ফলাফল তাকে তাড়িত করে জনম-জনম। এমনকি অনেক সময় পরিবর্তন করে দেয় জীবনের গতিধারা। কিন্তু মন যদি বুঝতে পারতো আরেকটি মনের ভাবনা ! যদিও মানুষের চোখ-মুখ দিয়ে মনের ভাবনার অনেক রূপ-রঙ চিন্তা অনেকটা প্রকাশ হয়ে যায় কিন্তু সমাজ সংসারে বিভিন্ন সময় মানুষের মনের ভাবনার অংশগুলো যদি অন্য কেউ পড়তে পারতো তবে তা হত অতি ভয়ঙ্কর বিষয়। এটি নিশ্চিত সত্য, মনের জগত ঢেকে রাখার ক্ষমতা মানুষের মধ্যে ইঁরষঃ রহ না থাকলে পৃথিবীটা হত কুরুক্ষেত্র। এরপরও প্রতিনিয়ত একক কিংবা সমষ্টিগতভাবে মানব মনের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া তার আচরণে হর-হামেশা প্রকাশ পাচ্ছে। কখনও তা হচ্ছে সৃষ্টিশীল আবার কখনও তা ঘটাচ্ছে ধংসযজ্ঞ।



দুর্বোধ্য এ মন এবং জন্মের সাথে সাথে আরও নিয়ে আসা নিয়ন্ত্রণহীন ইন্দ্রিয়গুলোর তাড়ণায় মানুষের কৃত অমানবিক আচরণ অনেক সময় তাকে পরিচিত করাচ্ছে জীব-জন্তুর চরিত্র দিয়ে। মানুষের প্রাপ্তি ঘটছে জীব-জন্তুর নাম, চরিত্র ও আচরনের উপাখ্যান। ভাববার বিষয় যে, অনেক প্রাণীর দ্বারা কিছু মানবিক (!) ক্রিয়াকর্ম সংগঠিত হলেও তাদের আচরনকে (ভালো অর্থে) মানব চরিত্রের কোন অংশের সাথে তুলনা করে তা খুব কমই দৃষ্টান্ত হিসেবে তুলে ধরা হয়। “গরু” বা “মহিষ” কে কেউ বলেছে মানুষের মত নাক ডাকছে, এটা জগতের কেও কখনও শোনেনি। পক্ষান্তরে জীব-জন্তু-পশু-পাখি এবং তাদের স্বভাব চরিত্র নিয়ে মানুষের আচরণের সাথে তুলনা করা যেন মানুষের জন্য স্বতঃসিদ্ধ বিষয়। মানব মন সুচিন্তা কিংবা মননশীল ভাবনা বাদ দিয়ে জীবনের বিশাল একটি সময় অবসরে বা আড্ডায় একে অপরের স্বভাব-চরিত্র চিত্রায়নে ব্যাপৃত হয়। কাছের দূরের বন্ধু সহকর্মী, স্বজন, পরিচিত কেও এমনকি প্রিয়জনদের স্বভাব চরিত্র নিয়ে সেখানে কত নোংরা ও কুৎসিৎ আলোচনা চলে। আর কথায় কথায় আচরণের তুলনা করতে গিয়ে হরেক প্রানীর নাম মানুষের মুখ দিয়ে নির্দিধায় উচ্চারিত হয়। মানুষের মানবিক কিংবা ভাল দিকগুলো কেন যেন আলোচনায় আনা হয় না। আর যেটুকু আসে তা সাময়িক প্রেম-ভালোবাসা, কাওকে খুশি করা এবং যেন শুধু স্বার্থের খাতিরে। আশ্চর্যের বিষয়, জীব-জন্তু, পশু-পাখিরা কিন্তু তাদের নিয়ে মানুষের এসব তুলনার ব্যাপার কিছুই জানেনা। যদি জানতে পারতো, তাহলে পৃথিবীতে হয়তো সবচেয়ে খুশী ও গর্ব বোধ করত প্রভূভক্ত “কুকুর” এবং নোংরা “শুকর” নামের প্রাণী দ’ুটি। কারন পৃথিবীর সাড়ে ছয়শ কোটি মানুসের মূখে তাদের নাম প্রতিনিয়ত বহুবার উচ্চারিত হয়।



পারিপার্শি¦ক বহুবিধ উপাদানের প্রভাবে মানুষের প্রতি মানুষের এই যে মুহুর্মূহ পরিবর্তনশীল আচরন তা সম্পূর্নরূপে মনের অবস্থার ওপর নির্ভর করে এটা সত্য। তবে মন ভালো না থাকলেও নিরানব্বই ভাগ ক্ষেত্রে অন্যের “কেমন আছেন” প্রশ্নের উত্তরে বহু মানুষের অভিব্যক্তি “ভালো আছি” কথাটি বেশ অবলীলাক্রমে উচ্চরিত হয় ! এক্ষেত্রে অন্তরের দুঃখ-বেদনা-হতাশা যা-ই থাক না কেন, তা ঢেকে রেখে হাসিমূখে আপন-পর, শত্র“-মিত্রের সাথে কথা বলা, মন না চাইলেও অনেক সম্পর্ক ধরে রাখা, সর্বক্ষণ পাকা অভিনেতা-অভিনেত্রীর মত বিভিন্ন অংকে অভিনয়ে অভিনয়ে কাল কাটানো আর না পাওয়ার অতৃপ্তি অন্তরের গহীনে যুগ যুগ লুকিয়ে রেখেও লোক সম্মূখে আত্বতৃপ্তির অহংকার করা, এগুলো মানব মনের জন্য যেন অত্যন্ত স্বাভাবিক বিষয়। মানুষ সুনিপুন কৌশলে মনের এসব ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া অবলীলাক্রমে লুকিয়ে রেখে তার জীবন তরী বয়ে চলে, আর মনের জমিনে তৈরি হতে থাকে স্মৃতির নিজুত-কোটি সমাধি ক্ষেত্র।

মনের ভালোলাগা-ভালোবাসা, এক বিশাল গোপন অধ্যায়। চুপি চুপি নিজ মনেরও অগোচরে মন বৃক্ষ তার ডাল-পালা, শাখা-প্রশাখায় মনে মনে ভালোবাসার ফুল ফোটায়। একটি মাত্র জীবনের মানুষের মনে কে, কখন, কতকাল বাস করে সেটি কেও জানে না। যুগ যুগ ধরে একসাথে বসবাস করেও অনেক মানুষ তার পাশের প্রিয় মানুষটির মনের নাগালও হয়তো পায় না। এক্ষেত্রে মন যেন সর্বক্ষণ রঙ-তুলি নিয়ে বসে থাকা এক অজ্ঞাত শিল্পী। মনÑ মন চিনে, আবার অনেক দিনের চেনা মনও অনেক সময় অচেনা হয়ে যায়। পৃথিবীতে মানুষের “মন” নিয়ে যত গান ও সাহিত্য রচিত হয়েছেÑ তা হয়নি আর কোন শব্দ দিয়ে।



সল্পায়ুর এ জীবনে মানুষের মনের কল্পনার ব্যাপ্তি হয় তার আয়ুস্কালের সময়ের চেয়েও অনেক অনেক বেশি। কাল পর্যন্ত বেচে থাকবে এ নিশ্চয়তাও যে মানুষের নেই তার মন শত শত বছর পরের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবিত হয়। মানুষ শত বর্ষ আয়ুর প্রার্থনা করে অথচ বুড়ো হতে চায়না, আবার স্বর্গে যাওয়ার চিরন্তন আশা করলেও কেও যেন মরতে চায় না। মানুষের চাওয়া-পাওয়ার শেষ কোথায় তা মন তার যোগ্যতার বিচারে খুজে দেখে না। একারণে অনেক ক্ষেত্রেই আশা ভঙ্গ আর হতাশা তাকে কুরে-কুরে খায়। সব মিলিয়ে মানুষের মনের আত্মতৃপ্তির বিষয়টি শুধুমাত্র “ভান করা” বললে তা হয়ত কিছুতেই ভূল হবে না।



একেক বয়সের মনের একেক রুপ। শিশু, কিশোর, যুবক, পৌঢ় আর বৃদ্ধের মনের ভাবনার পার্থক্য হয় লক্ষ্য যোজন। তাই বিভিন্ন মনের সম্পর্কগুলোর ভিত্তিও হয় বয়স।



বৈচিত্রময় এ পৃথিবীর সহস্র আকৃতির মানুষ তাদের দেহের অভ্যন্তরে “মন” নামের বিচিত্র বস্তুটি জন্মের সাথে সাথেই শরীরে বয়ে বেরাচ্ছে। পৃথিবী ধংসের পূর্ব পর্যন্ত মনোবৃত্তির প্রকৃতির ব্যত্যয় ঘটবে এটা দুরাশা মাত্র। বিভিন্ন প্ররোচনা ‘মন’-কে সু ও কু প্রবৃত্বি দিয়ে এমনিভাবে মানুষের আচরণে তার মূর্ততার প্রকাশ ঘটাবে, এটাই যেন স্বতঃসিদ্ধ। অতএব মানব মন তার নিজস্ব চরিত্র নিয়ে আপন মহিমায় এ জগতে অনাগত কাল ভাস্বর থাকুক।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.