নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চিন্তায় মুক্ত - ভাষায় প্রকাশে ভীত , কল্পনার সীমানা মহাকাশ ছাড়িয়ে - বাস্তবতায় পা বাড়াই না সীমানার বাহিরে

শান্তনু চৌধুরী শান্তু

কবিতা লিখি , গল্প লিখি , মুভি রিভিউ লিখি , বুক রিভিউ লিখি , ফিচার লিখি । এই তো আমার লিখিময় জীবন ।

শান্তনু চৌধুরী শান্তু › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রিয় নতুন বৌঠান

০৮ ই মে, ২০১৫ রাত ১১:৪৭

প্রিয় নতুন বৌঠান ,
.
পত্রের শুরুতে নমঃস্কার জানাচ্ছি । এই নমঃস্কার গ্রহণ করিবার সাধ্য আপনার আছে কিনা জানিতে আমি অসমর্থ । এই ব্যাপারে ধর্মগ্রন্থ সমূহের ঘাটিবার ইচ্ছা থাকিলেও সেই ইচ্ছাও আজ সুদূর পরাহত । আপনি গত হয়েছেন আজ বহুদিন , অথচ তারপরও আপনার চালচলন বাচন ভঙ্গিমা আজো আমি ভুলিতে পারি নাই , সবই এই হৃদয় কুটুরে জমে আছে । এই বিশাল জমিদার বাড়িতে আপনি যখন পা রাখেন তখন আমি সদ্য মা হারা । মায়ের দুঃখ ভুলিবার চেষ্টায় ভীষণ রৌদ্রের মাঝে আমি ছায়া খোঁজায় রত । আর তখনই আপনি আমার মাথার উপর ছায়া হয়ে আঁচল বিছিয়ে পাশে এসে বসেছেন । আপনার সেই ঋণ আমি আজো শোধিতে পারি নাই । অথচ কতই বা বয়স ছিল আপনার ? আমার চেয়ে এক বছর বেশি ?
.
মাত্র ৮ বছর বয়সে যে বছর আপনি যখন আমার নতুন বৌঠান হয়ে আসেন , সেই বছরেই আপনার জন্য প্রথম বর্ণ পরিচয়ের প্রথম ও দ্বিতীয়ভাগ কেনা হয়েছিল । আর সেই বিদ্যায় আপনি যে কখন আমাদের মধ্যমনিতে রূপান্তরিত হইয়াছেন তা আমরা আপনার গত হইবার পরে উপলদ্ধি করি । বহু যুগ পরেও আজো নিজের মাঝে প্রশ্ন জাগে আপনার কি এমন বিশেষত্ব ছিল যে এই বাড়ির অজস্র ফুলকে এক সাথে ফুলের তোড়ার বাধনে বাঁধিতে পারিলেন ? উত্তরটি আজো ব্যাখ্যার অতীত ।
.
আপনি ছিলেন আধুনিকা রমণীনা বাঙালী , যিনি রীতিমত সুপারী কাটিতেন, প্রতিদিন তরকারী কাটার আসরে উপস্থিত থাকিতেন, বাড়ির ছোট ছোট ছেলেমেয়েদেরকে দেখাশোনা করিতেন । কারো জ্বর হলে শিয়রে দাড়িয়ে তাদের সেবা করিতেন আর প্রয়োজনে সবেগে ঘোড়াও চড়িতেন ।
.
নতুন বৌঠান , জানেন আজ আমার লিখা লইয়া , আমার প্রতিভা নিয়া ব্যাপক গবেষণা হয় , অথচ সবই তো আপনারই দেওয়া । আপনি সবসময় আমায় উসকে দিতেন , বলিতেন
.
-“ রবি দেখতে সবচেয়ে কালো আর গলার যে অবস্থা তাতে সে কোনদিন ভালো গান গাইতেই পারবে না , আর কবিতা ? কোনকালে বিহারী চক্রবর্তীর মতো লিখতে পারলে জানিও”
.
এত কথা শুনিবার পর আমার শুধু একটাই চেষ্টা থাকিতো কি করে এমন হইব যে, বড় বৌঠান আমার মাঝে আর কোন দোষ ক্রটি খুঁজে পাবেন না । আজ আমার লিখায় কোন দোষ নেই , ক্রটি নেই । আর যখন সেটা উপলব্ধি করিলাম তখন আপনি চিরতরে হারিয়ে গেছেন । সে দুঃখ আজো এই অন্ধকার রজনীতে আমার কন্ঠে বাজে,
.
-"নয়ন সমুখে তুমি নাই
নয়নেরই মাঝখানে নিয়েছো যে ঠাই"
.
এত সুখের মাঝে আপনার কষ্ট ছিল লুকায়িত কারণ আপনি ছিলেন সন্তানহীনা , স্বামীর পরকীয়া মগ্নতা দেখে যাওয়া এক দগ্ধ রমণী ।
.
“যদি কেহ শুধাইত, আমি জানি কী যে সে কহিত
যতদিন বেচে ছিল, আমি জানি কী তারে দহিত”
.
আপনার সকল দুঃখ সুখের একমাত্র সাথী ছিলাম আমি । অথচ শেষমেষ আপনিই আমাকে ফেলে আত্মহত্যা করিলেন ?
.
আপনি চলে গেলেন , জীবনখানা শুন্য হইয়া গেলো । আমার জীবনে গতিপথ বদলে গেলো । সাথে সাথে বদলে গেলো আমার লিখার গতিপথ ।
.
"নতুন বৌঠান" এই শব্দ যুগল কখনো আমার কাছে পুরোন হয়নি । ভবিষৎও হইবে কিনা সন্দেহ । কারণ আমার মনঃতাত্ত্বিক বিকাশে আপনার সে ভূমিকার আজো আমার পাঠকদের কাছে গবেষণা বস্তু । অনেকেই আজও প্রশ্ন করে আপনি কি আমার প্রেমে পড়িয়াছিলেন ? নাহলে আমার বিবাহের কিছু দিন পরেই কেন আত্মহত্যা করিলেন ? উত্তরে আমি হাসি । প্রশ্নটি বরং হওয়া উচিত আমি আপনার প্রেমে পড়িয়াছিলাম কি না ?
.
সেই প্রাচীন কাল হইতে মানুষের সাথে মানুষের অনেক ধরনের সম্পর্ক হইয়াছে । নর ও নারীর সম্পর্ক ও তার ব্যতিক্রম কিছু নহে । সভ্যতার সাথে যুগে যুগে মানুষ তার সম্পর্কগুলোকে আলাদা নাম দিতে ও ব্যাখা করতে শিখেছে । তারপরও একটা কথা থেকেই যায় । সব সম্পর্ককেই কি সব সময় ভাষায় ব্যাখা করা যায়? নাকি সব ভালোলাগাকেই চিরাচরিত নামসবর্স্ব ভালোবাসা বা প্রেমের আবরনে মুড়িয়ে দেয়া যায় ?
.
আপনার আমার সম্পর্ক এমনই । আজ ২৫ শে বৈশাখ । আমার জন্মদিন । আমার জন্মদানে আপনার কোন ভূমিকা না থাকিলেও আমার নবজন্মের সকল ভূমিকা কিন্তু আপনারই করে দেওয়া । এই জগৎ আমায় স্মরণ রেখেছে আমার কার্যে আমার কবিতায় , কেউ কি জানে এর পিছনের কার অবদান বেশি । সেটা আপনি নতুন বৌঠান আপনি ।
.
ইতি আপনার আদুরে দেবর
"রবি"
.
.
.
.
রবী ঠাকুরকে ছুঁতে চাওয়া বোকামী । তাই সেই বোকামী করতে চাইনা । কেবল মনের ভিতর একটি ইচ্ছে । কখনো যদি -
.
"রেলগাড়ির কামরায় হঠাৎ দেখা ,
ভাবি নি সম্ভব হবে কোনোদিন ।
আগে ওকে বারবার দেখেছি লালরঙের শাড়িতে দালিম ফুলের মতো রাঙা ;
আজ পরেছে কালো রেশমের কাপড় ,
আঁচল তুলেছে মাথায়
দোলনচাঁপার মতো চিকনগৌর মুখখানি ঘিরে
মনে হল
কালো রঙে একটা গভীর দূরত্ব ঘনিয়ে নিয়েছে নিজের চার দিকে ,
যে দূরত্ব সর্ষেখেতের শেষ সীমানায় শালবনের নীলাঞ্জনে ।
থমকে গেল আমার সমস্ত মনটা ;
চেনা লোককে দেখলেম অচেনার গাম্ভীর্যে । "
.
মত একটা লিখা লিখতে পারি সেদিন হয়তো মরেও শান্তি পাবো ।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই মে, ২০১৫ রাত ১২:৪০

এন জে শাওন বলেছেন: হুম। উনাকে ছুতে পারব এই ধারনা শুধু বোকারাই করে।

২| ০৯ ই মে, ২০১৫ রাত ৩:০২

শান্তনু চৌধুরী শান্তু বলেছেন: অথচ আমরা কেবল সেই চেষ্টাই করে চলেছি :-(

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.