নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কবিতা লিখি , গল্প লিখি , মুভি রিভিউ লিখি , বুক রিভিউ লিখি , ফিচার লিখি । এই তো আমার লিখিময় জীবন ।
"গনহত্যা" শব্দটি দুঃখের প্রতীক হলেও ইন্টারেষ্টিং সাবজেষ্ট । বিশেষ করে আমার কাছে । কারণ এটি অধ্যায়নে অজস্র তথ্য , কাহিনী ও ইতিহাস , থাকে কবিতাও । "হোটেল রুয়ান্ডা" মুভিটি দেখতে গিয়ে আমি রুগান্ডার গনহত্যা সম্পর্কে প্রথম জানতে পারি । মুভির পেছনের সত্যিকার ইতিহাস খুঁজে পাই । খুঁজে পেলাম ১০০ দিনে ১০ লাখ মানুষকে হত্যা একটি অবিশ্বাস্য গল্প । সংখ্যাটা ভয়ংকর । রীতিমত ভয় পাইয়ে দেয় । আমার এই মুভিটির রিভিউটি মুলত রুগান্ডার গনহত্যার ইতিহাস ভিত্তিক, এতে মুভিটির গভীরতা বুঝতে সমস্যা হবে ।
.
.
.
কবিতাটি খুবই কষ্টকর । তাই একে দিয়েই শুরু করছি ।
.
রুয়ান্ডার অস্ত্রগুলো শব্দহীন ।
বিদায় নিয়েছে তল্লাসি আর উল্লাস অপমানে কুঁকড়ে শুয়ে আছে হাজারও পাহাড়
লাভাস্রোতের নয় , আর্তনাদের
অগ্নিশলাকায় তারা বিক্ষত
আহ , আমার ভাষাহীন দেশ !
.
তাদের সাহিত্যে এই কবিতাটিকে বারে বারে টেনে ইয়ং জেনারেশনের জন্য । এর ভয়াবহতা উপলদ্ধি করার জন্য । আমাদের গনহত্যার সাথে ওদের পার্থক্য হলো ওদেরটি গোত্র সংঘাত আমাদেরটা স্বাধীনতার জন্য জীবনদান ।
মানব জীবনের ইতিহাসে সবকিছুর একটি ট্রিগার পয়েন্ট থাকে আর সেটা যত ক্ষুদ্রই হোক না কেন তা মানব সভ্যতাকে মাত্রই ভয়াবহ কিছু উপহার দেয় । ১৯৯৩ সালে প্রেসিডেন্টের এর মৃত্যু যার দাম আরো ১০ লক্ষ মানুষের মৃত্যু । রুয়ান্ডা অঞ্চলটি বিশ্বদরবারে পরিচিত ছিল মধু ও দুধের দেশ হিসেবে । কারণ তাদের জীবিকার প্রধান উৎস ছিল গবাদিপশু । যাদের বেশি গবাদি সম্পদ ছিল তাদের বলা হত তুতসি বাকিরা হুতু । সে সময়ে যে কেউ বিয়ে বা সম্পদ বৃদ্ধির মাধ্যমে গোত্র পরিবর্তন করতে পারতো । এই গোত্রের মধ্যে তেমন কোন সমস্যা ছিল না যতদিন না ১৮৯৪ সালে রুয়ান্ডাকে জার্মানিরা উপনিবেশ বানায় । তারা মোট জনসংখ্যার ৮৫ ভাগ হুতু কে উপেক্ষা করে অপেক্ষাকৃত উজ্জ্বল গায়ের রং দেখে ১৪ ভাগ তুতসিদের কাজে লাগালো বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পোষ্টের দায়িত্ব দিলো । ১ম ওর্য়াল্ড ওয়ার হারার পর রুয়ান্ডা বেলজিয়ামের দখলে চলে যায় । বেলজিয়ানরাও তুতসিদের সার্পোট করে আর হুতুদের বঞ্চিত করে । কেবল তাই নয় তুতসিদের সুবিধা দিতে সবার জন্য আলাদা আইডেনটিটি কার্ডও দেয় । যেটা হুতুদের ক্ষিপ্ত করে তোলে । পরবতীতে রুয়ান্ডার স্বাধীনতার জন্য বিদ্রোহ শুরু করলে বেলজিয়ানরা হুতুদের নতুন সরকার গঠনের দায়িত্ব দেয় আর হুতুরা এই সুবিধা নিয়ে বহুদিনের জমে থাকা ক্ষোভ উগরে দেয় । ১৯৫৯ সালে দাঙ্গায় ২০ হাজার তুতসি নিহত হয় । ১৯৬২ সালে রুয়ান্ডা স্বাধীনতা লাভ করে এবং হুতরা ডেমোক্রেসির সুবিধায় নিয়ে তুতসিদের দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য করে । এরপর সেই পুরানো কাহিনী ।
.
সংখ্যালঘু তুতসিদের মাঝে চরমপন্থীদের উৎদ্ভব ঘটে । হুতুদের প্রেসিডেন্ট হাবিয়ারিমানা এক তুতসি চরমপন্থীর রকেট হামলায় মারা যায় । ঠিক সে মুহুর্তে ইতিহাসের গতি পথ বদলে যায় । ১ ঘন্টার মাঝে ক্ষিপ্ত হুতুরা গনহত্যায় নেমে যায় ।
.
আইটেনটিটি কার্ড চেক করে তুতসিদের মারতে থাকে । যারা এই হত্যা সর্মথন করে না বা মধ্যপন্থী তাদের মারতে থাকে । তারা ঘর থেকে ঘরে যায় । আমাদের গনহত্যার সাথে গনহত্যার প্রধান পার্থক্য হলো এখানে বন্দুকের গুলি খুব কমই ব্যবহার হয়েছে । ব্যবহার হয়েছে দা ছুরি বল্লম ইত্যাদি । বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় হুতুরা মৃত্যুকে ব্যবসা বানিয়ে ফেলেছিল । তারা তুতসিদের অপশন দিতো । -"গুলি খেয়ে মরতে চাইলে টাকা দে , না দিলে হাত পা কেটে জবাই তরপাতে তরপাতে মর" এইভাবে প্রতিদিন গড়ে ১০ হাজার করে তুতসী হত্যা করা হতো । সংখ্যাটা যতই অবিশ্বাস্য মনে হোক না কেন এটাই সত্য । এই ব্যাপারে একটি গুজব প্রচলিত আছে । বলা হয় সে গ্রাম বা শহরের এই গনহত্যা হতো সেদিন উত্তাপে সব রক্ত বাস্প হয়ে গিয়ে সেখানকার আকাশ লাল করে দিত ।
.
আর ধর্ষণের কথা আলাদা করে কিছু বলার নেই । এই জায়গাতে তারা পাকিস্তানীদের মতই ছিল । ধষর্ণ করতো , যৌনদাসী হিসেবে ব্যবহার অতঃপর হত্যা করা হত ।
.
একটা ঘটনা বলি । চার্চটির নাম নিয়ারুবুয়ে রোমান ক্যাথলিক চার্চ । চার্চটিতে আশ্রয় নিয়েছে ১০০০ তুতসী । স্থানীয় হুতু মেয়রই তাদের এই আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছে তারপর তিনি উগ্রবাদী হুতুদের খবর দেন । তারা বন্দুক আর দা কুঠার দিয়ে চলে আসে । তারা মানুষগুলোকে কাটতে থাকে । এই কাটাকাটির ব্যাপারে তার পার শিফট কাজ করতো । এক দল কাটতে কাটতে ক্লান্ত হয়ে গেলে আরেক দল আসতো তারপর আরেক দল তাদের জায়গা নিতে । তারা একে মজা করে বলতো ইয়েনপ্রি করা । অর্থ্যাৎ তেলাপোকা মারা । ১৯৯৫ সালে সেই মেয়রকে গ্রেফতার করা হয় ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল ট্রাইব্যুনাল ফর রুয়ান্ডায় তাকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেওয়া হয় । বর্তমানে তাকে মালির কারাগারে রাখা হয়েছে ।
.
কেউ যদি "হোটেল রুয়ান্ডা" মুভিটি না থাকে তার মুভটি দেখার পরামর্শ দিবো । ২০০৪ সালে ছবিটি তিনটি ক্ষেত্রে একাডেমি পুরস্কার মনোনয়ন লাভ করে ছবিটি। বেশিরভাগ সমালোচকই ছবিটিকে ইতিবাচক হিসেবে মনোনীত করেছেন। মেটাক্রিটিক-এ রেটিং ৭৯% এবং সেখানে দর্শকরা ১০ এর মধ্যে ৮.৫। আইএমডিবি রেটিং ৮.৪। অ্যামেরিকার ফিল্ম ইনস্টিটিউট ছবিটিকে সর্বকালের সেরা ‘প্রেরণাদায়ক চলচ্চিত্রের’ তালিকায় রেখেছে । ২০০৪ সালের সেরা ছবির তালিকায় ৯ নম্বর স্থান । ২০০৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই মুভিটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইতালি ও দক্ষিণ আফ্রিকার যৌথ প্রযোজনায় নির্মীত । মুভিটি পরিচালনা করেছেন পরিচালক টেরি জর্জ। । স্টুডিও লায়ন্স গেট ফিল্ম্স ও ইউনাইটেড আর্টিস্ট্স যৌথভাবে এই ছবির জন্য কাজ করেছে। ছবির শুটিং হয়েছে মূলত দক্ষিণ আফ্রিকাতে ও দ্বিতীয় ইউনিটের শুটিং রুয়ান্ডার রাজধানী কিগালিতে করা হয়েছে। পল ছিল হোটেল রুয়ান্ডার ম্যানেজার । নিজে ছিলেন হুতু । প্রেম করে বিয়ে করেছেন তুতসি গোত্রের তাতিয়ানাকে । তাতিয়ানার মা ভাই ভাইয়ের স্ত্রী ছয়জন ভাগনে ভাগনী নিহত হয় । তাতিয়ানাকে বাবা হুতুদের টাকা দিয়েছিলেন তাকে যেন গুলি করে হত্যা করা হয় । নাহলে তাকেও টুকরো করে হত্যা করা হতো । সে সময় কিগালির এক সাধারণ হোটেল কর্মকর্তা পল রুসেসাবেগিনা প্রায় ১২৬৮ জন হুতু ও তুতসি শরণার্থীকে রক্ষা করেন। তিনি অত্যন্ত প্রতিকূল পরিস্থিতিতে এদের সবাইকে নিজের হোটেলে আশ্রয় দিয়েছিলেন। সম্পূর্ণ সত্য এই ঘটনা অবলম্বনেই ছবিটি নির্মীত হয়েছে।
চরিত্রসমূহ-
Don Cheadle - পল রুসেসাবেগিনা
Sophie Okonedo - টাটিয়ানা রুসেসাবেগিনা
Nick Nolte as কর্নেল অলিভার (বাস্তবে Roméo Dallaire)
Fana Mokoena - জেনারেল অগাস্টিন বিজিমংগু
Joaquin Phoenix - সাংবাদিক জ্যাক ড্যাগলিশ
জঁ রেনো - স্যাবিনা এয়ারলাইন্সের সভাপতি মিস্টার টিলেন্স
Desmond Dube - ডুবে
Hakeem Kae-Kazim - জর্জ রুটাগান্ডা
অফ টপিক কিছু বলে রাখি । দিন বদলে গেছে, বর্হিবিশ্ব দেরীতে হলে নাক গলিয়েছে । বর্তমানে সেখানকার অবস্থা স্বাভাবিক । নিউ জেনারেশন এই সাম্প্রদায়িকার বিষবাস্প থেকে বেরিয়ে এসেছে । রুয়ান্ডা মুখোসের জন্য খুব বিখ্যাত । যদি কেউ কখনো কোন মুখোস কিনে আর যদি প্রশ্ন জাগে কোনটি হুতু বা তুতসী মুখ তখন যেকোন ইয়াং জেনারেশনের কাউকে জিজ্ঞাস করবেন । তাদের উত্তর পাবেন -
.
-"এখান কেবল একজন রুয়ান্ডানের ছবিই দেখা যায়"
.....
.
.
তথ্য সুত্র - মুভি , বিভিন্ন বই , পত্রিকা ও ব্লগ
৩০ শে আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ২:৩৬
শান্তনু চৌধুরী শান্তু বলেছেন: যাক কেউ তো আমার লিখাটা পড়লো ।
২| ৩০ শে আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৪:০৭
কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: হতাশ হবেন না বা মন খারাপ করবেন না, আসলে আমাদের এখানে ব্লগাররা নতুন কোন ব্লগারের লেখা হঠাৎ করে পড়তে চায় না। ব্লগাররা চায় তাদের সময়ের সর্বোচ্চ ব্যবহার। ফলে তারা পরিচিত মুখেই বেশি ঘোরাফেরা করেন। আপনিও কিছুদিন ব্লগে সময় দিন। ভালো পোস্ট করুন। আপনার লেখা তখন সবাই চেয়ে চেয়ে পড়বে।
শুভ কামনা রইল ভাই।
৩| ৩০ শে আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৪:২০
শতদ্রু একটি নদী... বলেছেন: এই গনহত্যাটা সারা বিশ্ব উপভোগ করেছিলো। মানবজাতির ইতিহাসেরই একটা বড় লজ্জা। সারা দুনিয়া জানতো যে কি হচ্ছে। জাতিসংঘ আর বড় বড় সব মানবতাবাদী দেশ আঙ্গুল চুষছে কেবল। কারন ওইখানে তো লুটপাটের খুব বেশি কিছু ছিলোনা।
পোষ্ট ভালো হইছে। ++
৪| ৩০ শে আগস্ট, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৫০
সুমন কর বলেছেন: হোটেল রুয়ান্ডা'র পিছনের সত্য কাহিনী জেনে ভাল হলো।
মুভিটি দেখা আছে। চমৎকার মুভি। আর এখন সত্য ঘটনাগুলো জানার পর, আরো বেশী ভাল লাগল।
রিভিউ বা পোস্ট চমৎকার হয়েছে। ২য় লাইক দিলাম।
আপনার ব্লগে গিয়ে দেখলাম, আপনার নিকের বয়স ২ বছরের বেশী। কিন্তু মন্তব্য করেছেন ৭৩টি, পেয়েছেন ৭৬টি !! তাই হয়তো অনেকেই জানে না, আপনি ব্লগিং করছেন। ব্লগে একটু সময় দিলে এবং ভালো ভালো পোস্টে মন্তব্য করলেই সবাই জানবে আপনি লিখতে কিংবা ব্লগিং করতে চাচ্ছেন।
শুভ সন্ধ্যা।
৫| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:০৫
শান্তনু চৌধুরী শান্তু বলেছেন: ধন্যবাদ সর্বোচ্চ চেষ্টার করিবো ।
©somewhere in net ltd.
১| ৩০ শে আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১০:০৬
কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন:
খুব চমৎকার একটি পোস্ট। অনেক কিছু জানতে পারলাম। মুভিটা খুব দ্রুত দেখে ফেলব।