নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গাছ যদি মানুষ হত আর মানুষ যদি গাছ হত ! ঠায় দাঁড়িয়ে সেই জন্ম লগ্ন থেকে কি করত মানুষ তখন ? মানুষ, মানুষের ইচ্ছা , তার ভাবনা ।মানুষ আজ তার শরীরী অবয়ব নিয়ে চলমান সে বন্দী করতে চায় সব, প্রকৃতির সব রূপরস গন্ধ। তখনও কি মানুষ তাই চাইত ?মানুষ কি তখন তার জীবনে বৈচিত্র্য আনতে পারত? এখন মানুষের লক্ষ জীবনকে সাজানো নানা ভাবে তখন মানুষ তার জীবনকে কিভাবে সাজাতো? তখনও মানুষ তার জীবন রাঙ্গাত জীবন সাজাত, প্রশ্নটি হবে কি দিয়ে সাজাত ? মানুষ কথা বলতে পারতোনা তাহলে মনের ভাব প্রকাশ করত কি করে ? মানুষের চোখ থাকতো না , দেখত কিভাবে ? হয়ত কেবল অনুভব করতে পারত । কিন্তু তখনও মানুষের মন থাকতো মনের ভাবনা থাকতো কারণ এটাই তো মানুষের মূল বৈশিষ্ট , চিন্তা করার ক্ষমতা ।
গাছ আর মানুষের মধ্যে পার্থক্য কি ? উভয়ের মধ্যে কি খুব বেশী পার্থক্য? মানুষ তার শরীরী অবয়বে বন্দী , সে তার শারীরিক দুর্বলতার কাছে বন্দী । মানুষ অক্সিজেন , পানি , খাদ্য,মাটি ছাড়া বাচবেনা বা টিকে থাকতে পারবেনা ।পৃথিবীর বাইরে অন্য কোথাও যেখানে এই সকল উপাদান নেই মানুষ সেখানে টিকবেনা। আবার গাছের প্রয়োজন কার্বন-ডাই-অক্সাইড, সূর্যের আলো , মাটি এবং পানি। এই উপাদানগুলো যেখানে নেই সেখানে গাছও টিকবেনা। পৃথিবীতে সকল প্রাণীর দৃশ্যমান বা অদৃশ্য শেকড় রয়েছে । কোনভাবে এই শেকড় ছিন্ন হলে কোন প্রাণী টিকবেনা অস্তিত্ব বিলীন হবে।সেদিক থেকে দেখলে গাছ আর অন্যসকল প্রাণী একই কেবল বাকী সবাই চলমান ।
পৃথিবীর বাইরে মানুষের জ্ঞানের সীমায় এমন কোন স্থানের খোঁজ এখনো মানুষ পায়নি যেখানে পৃথিবীর ন্যায় প্রাকৃতিক অবস্থা বিরাজমান বা পৃথিবী থেকে ভিন্ন অবস্থা কিন্তু প্রাণী বিদ্যমান ।
মানুষের যখন কোন একটি অংশ বিকল হয় তখন সে তার নিজস্ব প্রক্রিয়ায় তার অন্য অংশের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে ফেলে । যে অন্ধ তার শ্রবণ শক্তি প্রখর , যে বোবা তার বোঝা এবং বোঝানর ক্ষমতা প্রখর, যার হাত নেই তার পা বেশী সক্ষম , যার পা নেই তার হাত বেশী সক্ষম । অর্থাৎ মানুষের প্রতিটি অংশের অনুপস্থিতি তার অন্য কোন না কোন অংশ সে অভাব বা প্রতিবন্ধকতা পূরণে এগিয়ে আসে। এটি শারীরিক দিক। কিন্তু কিভাবে হয় বা করে । এই কাজটি করে মানুষের মন । মানুষ তার মনের শক্তি তার যে অংশ দুর্বল তা পূরণে অন্য যে অংশ সক্ষম তার উপর মনের শক্তি খাটিয়ে কর্মক্ষম করে তলার চেষ্টা করে ।
মানুষের মনের এই শক্তিটি একই থাকবে কেবল সে শারীরিকভাবে হয়ে যাবে গাছ । চলমান কোন অংশের অস্তিত্ব মানুষের শরীরে থাকবেনা । কি হবে ? কেমন হবে ? কি ভাবছেন? ভাবছেন মানুষ আরও বেশী দুর্বল আর অক্ষম হয়ে যাবে।
আসুন এবার একটু অন্যভাবে ভাবি। মানুষ হয়ে গেল প্রকৃতির সবচেয়ে শারীরিকভাবে শক্তিশালী জীব । শারীরিক ক্ষমতার দিক দিয়ে মানুষের সমকক্ষ কেউ নেই । মানুষের রয়েছে বাঘের থাবা , মহিষের শক্তি , চিতার ক্ষিপ্রতা , কিন্তু মনের ভাবনার ক্ষমতাটি কিন্তু থাকবেই । ঠিক আছে মানুষের ক্ষমতা আরও বাড়িয়ে দিই । আমরা দেবতা বা শয়তানকে কল্পনা করি তাদের নানা বাহ্যিক ক্ষমতা যেমন পাখা আছে , উড়তে পারে , বজ্র বা এই ধরনের প্রাকৃতিক অস্ত্র তার করায়ত্ত মানুষের সেই ধরনের সকল ক্ষমতা আছে , সাথে আছে ভাবনার ক্ষমতা । কি হত ? কেমন হত ?
আমরা জীন ও ফেরেস্তার অস্তিত্তের কথা জানি কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞান দ্বারা প্রমানিত নয় বা মানুষের কাছে এদের অস্তিত্ব কেবল কল্পনায়। শয়তানের কথাও জানি , ধারণা করা হয় শয়তান জিন প্রজাতির । জিন আগুনের তৈরি, ফেরেস্তা নুর বা আলোর তৈরি । খুব স্বাভাবিক ভাবেই শারীরিক দিক থেকে এরা মানুষের চেয়ে অনেক ক্ষমতাশালী ।
কোরআনে এদের কথা বলা আছে এবং এও বলা আছে ,মানুষ সৃষ্টির পর খোদার হুকুম হল , মানুষকে সেজদা কর । কিন্তু শয়তান করেনি কারণ তার সেই শারীরিক ক্ষমতার কারণে আমি আগুনের তৈরি আমি কিনা তুচ্ছ মাটির তৈরি জীবকে সম্মান দেখাবো হতেই পারেনা ।
মানুষের যদি জীন বা ফেরেস্তার মত ক্ষমতা থাকতো সে তার মনের শক্তির বিন্দুমাত্র ব্যয় করতনা । কারণ সে তার শারীরিক ক্ষমতা দিয়েই প্রকৃতির সকল প্রতিবন্ধকতা জয় করত ভাবনার ক্ষমতা ব্যয় বা ব্যবহার করার কোন প্রয়োজনই সে বোধ করতনা । আর মানুষ তখন জানতেই পারতোনা তার কি ক্ষমতা রয়েছে ।
সৃষ্টির মূল কারণই হয়ে যেত অর্থহীন । মানুষ আজ তার শরীর ব্যবহার করে প্রকৃতির সকল প্রতিবন্ধকতা জয় করেছে । সে তার মনের শক্তিকে তার ভাবনার ক্ষমতাকে শারীরিকভাবে কাজে লাগিয়ে এই প্রতিবন্ধকতা জয় করেছে। ঠিক যেভাবে মানুষ মেশিন বা কম্পিউটার ব্যবহার করে নানা জটিলতার সমাধান করে।
আসি এবার মানুষের গাছ হওয়ার ভাবনায় । মানুষ গাছ হলে মানুষের তখন মনের বা ভাবনার ক্ষমতা ছাড়া বাহ্যিক বা শারীরিক আর কোন ক্ষমতাই থাকতো না । মানুষ তখন পুরোপুরি নির্ভরশীল হয়ে পরত তার ভাবনার উপর(এখন যেভাবে মানুষ নির্ভর করে তার শরীরের উপর), মানুষের মূল লক্ষই হত মনের শক্তিকে আরও শক্তিশালী করা । চিন্তার বা মনের সকল ক্ষমতা সে ব্যবহার করার জ্ঞান অর্জন করত। মানসিকভাবে মানুষ হয়ত হয়ে যেত প্রচণ্ড শক্তিশালী ।
আজ যেভাবে সারা পৃথিবীতে মানুষ নিজের নিয়ন্ত্রণ করে রেখেছে তখনও নিয়ন্ত্রণ করত। পৃথিবীর একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে যোগাযোগের জন্য মানুষের মনের একটি ইচ্ছাই যথেষ্ট হত।হয়ত মানুষ তাঁরমনের ক্ষমতাকে এত উচ্চ স্তরে নিয়ে যেত যেখানে মানুষ তাঁর আত্মা বা মনকে শরীর থেকে আলাদা করে ফেলতে পারত কিন্তু মানুষের মৃত্যু হতনা। মনের শক্তিতেই মানুষ বিচরণ করত বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডে।ঠিক যেমনটি হয় এখন মানুষের ভাবনায় বা স্বপ্নে ,ভাবনার জগতে বা স্বপ্নে মানুষ চলে যায় সীমাহীনতার জগতে কিন্তু মৃত্যু বা শেষ হয়না মানব জীবনের। যেখানে থাকেনা কোন বাঁধা।
আজ যেমন মানুষ মুক্তির স্বপ্ন দেখে পাখি হওয়ার। মানুষ যদি গাছ হতো পাখি যেমন সাঁঝের বেলা তার নীড়ে ফিরে মানুষও তেমনি ফিরত সাঁঝে তার আশ্রয়স্থল গাছে আবার ভোর হলেই পাখা মেলত সীমাহীনতার জগতে। এখনো এই রক্তমাংসের শরীর আত্মার ক্ষণিকের আশ্রয়স্থল মাত্র যা চলমান । কিন্তু চলমান এই শরীরী আশ্রয়স্থলের পরিবর্তে যদি স্থির গাছ হত আত্মার আশ্রয়স্থল আর তখন যদি আত্মা পাখা মেলতে পারত সীমাহীনতায় মানুষ অবলীলায় মেনে নিত। তখন প্রতিটি আত্মার থাকত নির্দিষ্ট একটি আশ্রয়স্থল গাছ আজ যেমন শরীর। কি এমন পার্থক্য তাতে একটি রক্তমাংসের অন্যটি রস বাকলের।কিন্তু মানুষ তার মনের সত্যিকারের ক্ষমতার পরিচয় এই নশ্বর জগতে অনেক খানি উপলব্ধি করতে পারত যা আজ বেশীরভাগ মানুষ কল্পনাও করতে পারেনা ।
এখন যদি আমাকে প্রশ্ন করা হয় গাছ হতে চাও না দেবতা ?? আমি বেছে নেব গাছ। কিন্তু বর চাই দিতে হবে আত্মার মুক্তি । আর হতোও তাই । যদি মানুষ গাছ হত সেক্ষেত্রে মানুষ কতটা এগিয়ে যেত জীবনযাত্রায়? যদি একটু ভাবি সৃষ্টির পরে আজ পর্যন্ত মানুষ সেই উৎকর্ষতার ধারে কাছে পৌছুতে পারেনি।
গাছ তার নিজের খাদ্য নিজের শরীরেই তৈরি করে , অন্যের আশ্রয়ের প্রয়োজন হয়না বরং সে নিজেই অনেক প্রাণীর আশ্রয় , বংশ বিস্তার হয় অসম্ভব সুন্দর কিছু প্রক্রিয়ায় যেখানে জটিলতা অনেক কম। জীবনযাত্রায় জটিলতা কুটিলতার কোন স্থান নেই , নেই একে অপরের সাথে প্রতিযোগীতা।এইজন্যই হয়ত সাধু সন্ন্যাসীদের পছন্দ বন। গাছ হলে পরিবার বা সংসারের মায়ার সমস্যাও থাকতো না , মায়া কাটানোর অসম কষ্টের মুখোমুখি হতে হতনা কারণ সংসারই থাকতো না।
পৃথিবীতে গাছই একমাত্র জীবন যার কোন অভিযোগ নেই । তুমি তাকে মারো কাটো কিংবা বাঁচিয়ে তোল তার কোন অভিব্যাক্তি নেই কারণ গাছের অনুভুতি প্রকাশের কোন উপায় নেই । তার না আছে শব্দ না আছে চোখের ভাষা।
সৃষ্টির প্রথম থেকেই মানুষ হয়ে যেত পৃথিবীর মায়া থেকে পূর্ণ স্বাধীন। গাছের যেটুকু প্রয়োজন অর্থাৎ আলো , বাতাস আর পানি প্রকৃতিতে তা অফুরন্ত। অর্থাৎ সৃষ্টির বা জন্মের পর মানুষ যে সকল জটিলতার সম্মুখীন হয় তার কোনটিই তার সম্মুখীন হতে হতনা। কেবল একটি বিষয় ছাড়া তা হল মুক্তি ।
মানুষ জন্মের পর থেকে কেবল একটি ভাবনাই থাকত কেবল একটি লক্ষ মুক্তির জ্ঞান। শরীরী অবয়ব থেকে মুক্তির পথ কিন্তু জীবনের শেষ বা মৃত্যু নয় । অর্থাৎ এখন শরীরী এই অবয়বে মানুষ তার নানা জটিলতা ও সীমাবদ্ধতা কাটাতে যে মেধা ও চিন্তা শক্তি ব্যয় করত তার সবটুকুই তখন ব্যয় হত মুক্তির জ্ঞান আহরণে। সমগ্র মানবজাতি কেবল একটি সমস্যা নিয়ে ভাবত তা হল মুক্তির জ্ঞান এবং অবশ্যম্ভাবী ভাবেই মানুষ পৌঁছে যেত তার অভিষ্ট লক্ষে । তারপর হয়ত মানুষের লক্ষ হত অন্য কোন নতুন জ্ঞান।
মানুষ তার মনের বা ভাবনার উৎকর্ষতা সাধন করতে পারে এজন্যই মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব।
কিন্তু গাছ যদি মানুষ হত তখন দু পেয়ে একটি জীব ছাড়া আর তেমন কিছুই হতনা আর দশটা প্রাণীর মত মানুষরূপি গাছও তখন প্রকৃতিতে টিকে থাকা ও বংশ বিস্তার ছাড়া আর তেমন কিছুই হতনা । হয়ত তখন গাছের নাম হত মানুষ । আর মানুষ এই দু পেয়ে প্রাণীটির নাম দিত গাছ ।
©somewhere in net ltd.