নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শেহজাদ আমান

একজন সাংবাদিক ও সমাজকর্মী

শেহজাদ আমান

একজন সাংবাদিক ও সৃষ্টিশীল লেখক

শেহজাদ আমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলাদেশ, তারুণ্য ও জুলাই- কোনোটারই প্রতিনিধিত্ব করে না এনসিপি

২০ শে মে, ২০২৫ সকাল ১১:৪৮





১। জুলাই-আগস্টের সেই তারুণ্য বনাম বর্তমানের কথিত তরুণদের দল

কী একটা দারুণ সময়ই না ছিল ২০২৪-এর সেই জুলাই-আগস্ট!
যে তারুণ্য নিয়ে আমরা দেশবাসী ছিলাম হতাশ, যে তারুণ্য নিয়ে কথা বললে ইতিবাচক কথার চেয়ে নেতিবাচক কথাই বেশি বলা হতো, সেই তারুণ্যের শক্তিই পতন ঘটিয়েছিল দীর্ঘ ১১-১২ বছর ধরে জোর করে দেশের মানুষের উপর চেপে থাকা আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী শাসনের। কী দারুণ, কী প্রখর ছিল সেই তারুণ্যের শক্তির প্রকাশ!
জুলাইয়ের শেষদিকে ও আগস্টের প্রথমদিকের সেই দিনগুলোতে তাদের আন্দোলন যখন তুঙ্গে, আমার প্রতিটা রাত বলতে গেলে প্রায় নির্ঘুম কেটেছিল তাদের সব খবরাখবর রাখতে, তাদের মঙ্গল কামনায়!
আসিফ মাহমুদ বা হান্নান মাসুদের অত্যন্ত ক্ষীণ দেহের কিন্তু দারুণ সাহসী তরুণরা কীভাবে শুকনো মুখে আবার কখনো কখনো কান্নাজড়িত কণ্ঠে যেভাবে ভিডিও বার্তা আপ করতেন সোশ্যাল মিডিয়ায়, সেটা দেখে আবারও হৃদয় ছুঁয়ে যেত, চোখে জল চলে আসত এই ভেবে যে ওরা ব্যর্থ হলে ওদের পরিণতি কী হবে।
তারপর ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর তো এরা হয়ে গেল আমাদের নয়নের মণি! এর পরের কিছুদিনও তারা আমাদের কাছে সেটাই থাকল! মনে পড়ে, এদের শক্তিশালী অবস্থান ও স্ট্যান্স ৮ আগস্টে নতুন সরকার গঠিত হবার পরও সেটাকে নড়বড়ে হওয়ার হাত থেকে বাঁচিয়েছে। আনসাররা যখন কথিত প্রতিবাদ ও দাবি আদায়ের জন্য সমাবেশ করল সচিবালয়ের সামনে এবং মারাত্মক অস্থিতিশীলতার অবস্থা সৃষ্টি করল, তখন হাজারখানেক আনসারকে সেখান থেকে হটিয়ে দিয়েছিল এই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ও অন্যান্য তরুণেরা। তারা শয়ে শয়ে সচিবালয়ের সামনে এসে আনসারদের সেখান থেকে সরে যেতে বাধ্য করল। এমনকি আনসারের সদস্যরা লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালালেও তারা পিছু হটেনি; বরং পিছু হটতে বাধ্য করেছে আনসারদেরই। কথিত ছিল সেই আনসারদের অনেকেই আওয়ামী লীগের সাথে জড়িত এবং তাদের সেই বিক্ষোভ ছিল নবগঠিত সরকারকে আনসেটল করে দেওয়ারই একটা পরিকল্পনা! যখন দেশে পুলিশ একেবারেই কার্যকর ছিল না, সেনাবাহিনিও ঠিকভাবে নিজেদের দায়িত্ব বুঝে উঠতে পারেনি, সেই সময়ে এই দুঃসাহসী তরুণরাই নবগঠিত, অসংগথিত সরকারকে মারাত্মক একটা আনরেস্ট ও নড়বড়ে হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছিল!
এরপরেও বিভিন্ন ইস্যুতে তাদের সাহসী ও সময়োচিত কিছু কাজ, সিদ্ধান্ত ও মনোভাবের কারণে দেশব্যাপী তাদের সেই জুলাই-আগস্টের সুনাম অক্ষুণ্ণ ছিল। ফ্যাসিবাদ বিরোধী সকল অপক্ষই ছিল তাদের শুভাকাঙ্ক্ষী। দেশের জনগণের একটা বিরাট অংশ তাদেরকে দেশের রাজনীতিতে ইতিবাচক এক ভবিষ্যৎ হিসেবেই দেখেছে। আশা করেছে, তাদের হাত ধরেই সামনে রাজনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন সূচিত হবে।
কিন্তু সেই আশা কী বর্তমানে এখনো বিন্দুমাত্র সেই পরিমাণের আছে? আসুন, আলোচনা করে দেখা যাক!


২। পতনের শুরু


কখন থেকে জুলাই-আগস্টে গণঅভ্যূত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্র নেতৃত্বের পতন হতে শুরু করে? আমার মনে হয় ১৬ ডিসেম্বএ ২০২৪ সাল থেকেই। আপনারা সবাই জানেন, ১৬ ডিসেম্বরে জাতীয় নাগরিক কমিটি (যেটা থেকে পরবর্তীতে গঠিত হয়েছে নাগরিক পার্টি) একটা র‍্যালি বের করেছিল, যে র‍্যালিতে বিশাল প্ল্যাকার্ডে ১৯৪৭-কেও ১৯৯৭১ ও ২০২৪-এর সাথে মিলিয়ে লেখা হয়েছিল। শোভযাত্রার ব্যানারে লেখা ছিল 'আজাদী-৪৭, মুক্তিযুদ্ধ-৭১, স্বাধীনতা-২৪'। সামনের সারিতে ছিলেন জুলাই অভ্যুত্থানে আহতরা। দ্বিতীয় সারিতে থাকা আন্দোলনের নারী কর্মীরা বহন করছিলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, আবুল কাশেম ফজলুল হক, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীসহ দেশভাগের সময়কার নেতাদের ছবি।
এরপরই এটা নিয়ে শোরগোল উঠে গেল! ৪৭-কেও কেন ৭১-এর সাথে তুলনীয় করছে, এটা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন অনেকেই, যাদের ভিতর অনেক দেশখ্যাত বুদ্ধিজীবীও রয়েছেন। আমার কাছেও মনে হয়েছে, ২০২৪-এর কথা ১৯৭১-এর সাথে একসঙ্গে উচ্চারিত হতে পারে; তবে ১৯৪৭ কেন? ১৯৪৭ কি কোনো কাঙ্ক্ষিত কিছু ছিল বাঙ্গালীর জন্য, নাকি ৪৭-এর মাধ্যমে বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছিল? সৃষ্টি হয়েছিল তো পাকিস্তান! আর ৪৭-এর প্রতি এই কথিত তরুণদের এত মাখামাখি দেখে অনেকেই প্রশ্ন তুললেন, এরা কি পাকিস্তানপন্থী নাকি!
সেই ১৬ ডিসেম্বরেই এই ছাত্র-তরুণদের নেতৃত্বে থাকা অনেকেই আবার যখন ১৬ ডিসেম্বরেই স্রেফ ২৪-এর কথা বলছিল, তাদের সমর্থিত সরকারও যখন ২৪-কেই যখন অনেক বেশি গুরুত্ব দেওয়ার ভাব দেখাল, তখন মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনাধারী, অসাম্প্রপ্দায়িক চেতনার অনেকেই একে ভালো চোখে নেননি। আর আওয়ামীপন্থীদের তো কথাই নেই! তারা ডাইরেক্ট এদেরকে পাকিস্তানপন্থী, জামায়াতপন্থী হিসেবে উল্লেখ করল। আর তারা যে এটা ভেবেছিল, এতে করে তাদেরও কি খুব বেশি দোষ দেওয়া যায়?
জামায়াত বা কথিত অনেক ধর্মীয় দল হয়তো তাদের বুঝিয়েছিল যে, ২৪-এর গণঅভ্যূথানকে আরেকটা ‘মুক্তিযুদ্ধ’ টাইপের কিছু হিসেবে দেখাতে পারলে সেটা তোমাদের জন্যই রাজনৈতিকভাবে সুবিধাজনক হবে। আর ৪৭-কেও বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের সাথে জড়িত জিনিস বা একেবারে ‘আজাদী’ হিসেবে দেখানো গেলে। হয়তো, সেজন্যই ৪৭-কেও অন্তর্ভুক্ত করে শোভাযাত্রা করেছিল কথিত জাতীয় নাগরিক কমিটি।
তো, পরে যে অনলাইনে, অফলাইনে অনেকেই ২৪ –কে ৭১-এর সমতূল্য বলে মনে করেছিল, সেটা তো বলাই বাহুল্য! এসব তুলনামুলনার দায় কি কিছুটা জুলাই আন্দোলনের কিছু সেনানীদের উপরে পড়ে না?

৩। মবের রাজত্বের সৃষ্টি ও প্রসার

শেখ হাসিনার পতনের পর দেশ বেশ খানিকটা অনিশ্চিত ও অস্থিতিশীল অবস্থার মধ্যে পড়েছিল। দেশে কোনো সরকারই ছিল না টানা তিন দিন। এই তিন দিনে দেশে কত ডাকাতি, হামলা, লুটপাটের ঘটয়ান ঘটেছিল, তাঁর ইয়ত্তা নেই। এছাড়া, হাসিনা সরকার পুলিশ বাহিনিকে ‘পুলিশ লীগ’-এ পরিণত করার পর, তাদের জনগণের মুখোমুখি করার পর, তাদের দিয়ে মানুষ হত্যা করানোর পর, পুরো পুলিশ বাহিনিকে জনগণের শত্রু বানিয়ে দিয়েছিল। তাই, স্বাভাবিকভাবেই হাসিনার পতনের পর অনেক থানায় হামলা, অগ্নিসংযোগ হয়েছে, কিছু পুলিশও ক্ষুব্ধ জনতার হাতে মারা পড়েছে। সেটা মোটেও অস্বাভাবিক ছিল না। এই যে থানায় হামলা ও পুলিশ হত্যা, এর দায় অনেকটাই আমি মনে করি ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনা সরকারেই, কেননা হাসিনা এই পুলিশ বাহিনিকে এমনভাবে ব্যবহার করে মানবতাবিরোধী কাজ করেছিল, তাতে ক্ষুব্ধ জনতা সুযোগ পেয়ে স্বাভাবিকভাবেই তাদের উপর ক্ষোভ ঝেড়েছিল।
এর পাশাপাশি, বলপূর্বক পতত্যাগ করানো, এই পদ ওই পদ দখল, এমন কোনো মববাজি নাই, যেটা হয়নি। স্কুলের শিক্ষার্থীদেরকেও দেখা যেত যে প্রধান শিক্ষক বা অধ্যক্ষকে বলপ্রয়োগ করে পদত্যাগে বাধ্য করতে— এমন উদাহরণও নিশ্চয় অনেক দেখেছেন আপনারা।
হাসিনা পতনের পর প্রথমদিকে এমন মবের রাজত্ব হয়তো স্বাভাবিক ছিল। এরপর তো ধীরে ধীরে সবকিছু স্বাভাবিক হওয়ার কথা ছিল…সেটা কি হয়েছিল?
কোনো সরকারের মধুচন্দ্রিমা পিরিয়ড ধরা হয় প্রথম ১০০ দিন। সেই সময় কোনো সরকার ভুলভ্রান্তি করলেও, অনেক ক্ষেত্রে শৈথিল্য দেখালেও জনগণ বা রাজনৈতিক অঙ্গনের অনেকেই সেটাকে ক্ষমার চোখে দেখে বা মেনে নেয়। কিন্তু এরপর কি তারা সেটা মেনে নিতে পারে, বা সরকারের অদক্ষতা ও অযোগ্যতা কি এরপরের সময়কালে গ্রহণযোগ্য??
আসুন, একটু ফিরে দেখি এই সময়কালে দেশে কী কী হয়েছে? দেশে কিন্তু তখনো মববাজি থামেনি। সেই সময়ে নিশ্চয় আপনাদের মনে আছে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো না হওয়ায় এবং ধারাবাহিকভাবে ছিনতাই, রাহাজানি, মাস্তানি চলার প্রেক্ষিতে স্বয়ং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাত ৩ টায় সংবাদ সম্মেলন আয়োজন পর্যন্ত করেছিলেন।
এই যে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবস্থা খারাপ হয়ে গিয়েছিল, এর অন্যতম বড় কারণ কিন্তু মব সংস্কৃতিকে বাড়তে দেওয়া এবং একে উস্কে দেওয়া। আমরা যদি নিজেদেরকে সভ্য জাতি হিসেবে বিবেচনা করি, যদি গণতান্ত্রিক ও ‘ল-বাউন্ড’ রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে নিজেদের দাবি করি, তবে কথিত মব জাস্টিস’ বা প্রকারান্তে মব সন্ত্রাসকে কখনোই জাস্টিফাই করতে পারি না। ৫ আগস্ট হাসিনা অতনের পর ‘হিট অব দ্য মোমেন্ট’-এর কারণে দেশে অনেক মব বা গণরোষের ঘটনা ঘটেছে। সেটা স্বৈরাচার পতনের পর মানুষের বাঁধভাঙ্গা ক্ষোভের প্রকাশ হিসেবে দেখে সাময়িকভাবে জাস্টিফাই করা যায়। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হবার কয়েক মাস পরও যখন দেশের বিভিন্ন জায়গায় মবের তাণ্ডব দেখা যায়, তখন সেটাকে নিশ্চয়ই আর জাস্টিফাই করা যায় না।
মবের প্রতি এই তরুণ ছাত্র নেতৃবৃন্দের ‘প্রেম’ দেখা যায় এরও কিছুদিন পরও। অথবা সেই মবপ্রেম সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় এই বছরের ফেব্রুয়ারির ৫ তারিখে বঙ্গবন্ধুর ৩২ নামারের বাড়ি ভাঙ্গার ঘটনাকে কেন্দ্র করে। আসুন দেখি এনসিপির নেতারা তখন কী লিখেছিলেন, বা বলেছিলেন
শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের এমপি-মন্ত্রীদের বাড়ি ভেঙে জুলাই আন্দোলনে শহীদ পরিবারের জন্য ভবন নির্মাণ করে ফ্ল্যাট উপহার দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসউদ।বুধবার (৫ আগস্ট) সন্ধ্যায় নিজের ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে এ দাবি জানান তিনি।
পোস্টে হান্নান লিখেন,‘খুনি হাসিনাসহ সকল ভোটচোর ফ্যাসিস্ট এমপি-মন্ত্রীর আবাস ভেঙে সেখানে ভবন করে প্রতিটি শহীদ পরিবারকে ফ্ল্যাট উপহার দেয়া এখন সময়ের দাবি।’
এর কিছুক্ষণ পরই অপর একটি স্ট্যাটাসে এই সমন্বয়ক লেখেন, এটা এই প্রজন্মের ক্ষোভ। বাপকে বেইচা মানুষকে গুম-খুন করার ক্ষোভ। চোখের সামনে তাদের ভাই-বোনদের রক্ত ঝরানোর ক্ষোভ। এটা যে কোনো স্বৈরাচারের-অত্যাচারীর জন্যে বড় শিক্ষা হয়ে থাকবে। যদিও কেউ-ই ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয় না।
এদিকে বুধবার রাতে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে ফেসবুক স্ট্যাটাসে সমন্বয়ক সারজিস আলম লিখেছেন, আবু জাহেলের বাড়ি এখন পাবলিক টয়লেট!

নিউজ লিংকঃ Click This Link

উপরে নিউজ পোর্টালের লিংকসহ এনসিপির নেতাদের বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে। হ্যাঁ, তখনো এনসিপি গঠিত হয়নি; হয়েছে ২৮ ফেব্রুয়ারি। তবে, উপরে যাদের বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে, তারাই তো পরে নাগরিক কমিটির ভায়া হয়ে এনসিপির বড় পদে আসীন নেতা হয়েছেন।
অনেকেই বলতে পারেন, এরা তো পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের স্মৃতিচিহ্নটাকে ধ্বংস করতে এমন করেছে। কিন্তু সেই কাজটাই বা ঠিক হয়েছে কি বিন্দুমাত্র? বঙ্গবন্ধুর ৩২ নাম্বারের বাড়ি জাতীর জন্য একটা ঐতিহাসিক স্মৃতিচিহ্ন। কেননা, বঙ্গবন্ধু হচ্ছেন শহীদ জিয়াউর রহমান, তাজউদ্দিন আহমদ, মাওলানা ভাসানী, শেরে বাংলার মতোই একজন সত্যিকারের জাতীয় নেতা, যার অবদানকে আপনি কোনোদিনই অস্বীকার করতে পারবেন না। ১৯৭১-এর পর বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা নিয়ে অনেক প্রশ্ন তোলা যায়; কিন্তু ১৯৫৪ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত ঙ্গাংলাদেশিদের মুক্তি সংগ্রামে তাঁর অবদান তো কম নয়। আপনার যদি ভাঙ্গার ইচ্ছে হতো, তাহলে গুলিস্তানে অবস্থিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় অফিসটি গুঁড়িয়ে দিতেন। সেটাকে যদি ফ্যাসিবাদের সূতিকাগার বলে গুঁড়িয়ে দিতেন, অনেকেই হয়তো সেটাকে সঠিক কাজ বলে মেনে নিতেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর বাড়ির মতো ঐতিহাসিক স্মৃতিচিহ্ন কি গূঁড়িয়ে দেওয়া যায়? গূঁড়িয়ে দিলেই কি স্মৃতি থেকে, ইতিহাস থেকে সেটা মুছে দেওয়া যায়? যায় না!
আর, ৩২ নাম্বার বাড়ি ভেঙে, গুঁড়িয়ে দেওয়ায় নেতৃত্ব বা উস্কানি দেওয়ার ভূমিকা তো এনসপির বর্তমান নেতাদেরই ছিল, সেটা তো উপরের লিংক থেকে বোঝাই যায়। আর, অনলাইনে সার্চ দিলে আপানরাও এমন অনেক কিছু পাবেন, যেখানে এনসিপি বা বৈষম্যবিরোধীদের কিছু না কিছু মানুষকে পাওয়া যায়। যেমন, ৩২ নাম্বারের বাড়ি ভাঙ্গার পরের কয়েকদিন আওয়ামী লীগের পলাতক অনেক নেতাকর্মীর বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে, বাড়িতে ভাঙচুর, গুঁড়িয়ে দেওয়া বা লুটপাট চালানো হয়েছে। ‘বুলডোজার সংস্কৃতি’ বা ‘বুলডোজার সংস্কার’-এর সৃষ্টি তো এথেকেই! আওয়ামী লীগ অবশ্যই জুলাই আগস্টের গণহত্যা, এবং এর আগের ১৫ বছর অসংখ্য গুম, খুন, দুর্নীতির জন্য দায়ী। সেজন্য অবশ্যই লীগের দোষী ও অপরাধী ব্যক্তিদের ধরে আমরা আইনানুযায়ী বিচার করে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করব। কিন্তু, ভেঙে দেওয়া, গুঁড়িয়ে দেওয়া, এসব কি দেশের আইন সমর্থন করে, আর নাকি সেটা সমর্থন করে সভ্য সমাজ! এসব মবের কাণ্ডকারখানার দায় কি তারা এড়াতে পারেন?
যদি না পারেন, তবে, এরা কি দেশের সিংহভাগ মানুষকে প্রতিনিধিত্ব করেন? দেশের ও আন্তর্জাতিক আইন, সভ্য সমাজের আইন নিঃসন্দেহে কোনো মববাজিকে কোনোভাবেই সমর্থন করে না, মেনে নেয় না। যদি তাই হয়ে থাকে, তবে এরা কি বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করেন? কোনোভাবেই না!
বৈষম্যবিরোধী ও এনসিপির যারা বিরোধী আছেন, তারা ক্রমাগত বলে যাচ্ছে তারা নাকি ৭১-এর চেতনাকে ধারণ করেন না! তাদের এই ধরনের কাজ কি তাদের সমালোচকদের দাবিকেই জোরালো করে না? কেননা, ৩২ নাম্বারের বাড়ির সাথে তো বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিও জড়িত রয়েছে।

৪। জনবিরোধী, গণতন্ত্রবিরোধী অবস্থান?

দেশে বর্তমানে সংস্কার তো হতেই হবে। এনসিপি যদি মনে করে, বিএনপি সংস্কার ছাড়াই নির্বাচন চায়, তাহলে তারা স্রেফ এর বিরুদ্ধেই শক্ত অবস্থান নিতে পারত। বলতে পারত, ‘যথাযোগ্য সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হবে না।“ কিন্তু এর বদলে আমরা কী দেখলাম?!? ‘ইউনুস সরকারকে আরও পাঁচ বছর চাই,’ অথবা এর চেয়েও এক্সট্রিমভাবে যখন, “নির্বাচনই চাই না’ মার্কা ক্যাম্পেইন অনলাইন, অফলাইনে গড়ে ওঠে, তখন কি আর মানুষের এটা বুঝতে বাকি থাকে যে এই ক্যাম্পেইনের পিছনের আছে কিংস পার্টি এনসিপি ও তাদের সমর্থিত সরকারের একাংশ?
কেন রে ভাই? এনসিপি অনেক ছোট একটা দল। কিন্তু তারাই জুলাইয়ের অভ্যূত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছিল। কাজেই তারা প্রেশার গ্রুপ হিসেবে সঠিকভাবে একটিভ থেকে দেশের রাজনীতিতিতে আমূল পরিবর্তনে ভূমিকা রাখতে পারত। বড় দলগুলোকে চাপ দিয়ে দেশের রাজনীতিতে সংস্কার ও পরিবর্তন আনতে চাপ দিতে পারত। সেটা যে তারা করছে না, তা না (যদিও তা সঠিকভাবে পারছে না।)। তবে, সেটা করার চেয়েও ডঃ ইউনুসকে অনির্বাচিতভাবে পাঁচ বছর রাখা, বা নির্বাচন চাই না মার্কা প্রচারণার দিকেই যেন তাদের এবশি মনোযোগ দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন বট বাহিনি নামে-বেনামে যেসব সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্ট থেকে ‘…আরও পাঁচ বছর চাই,’ জনগণ ডঃ ইউনুসকে চায়,’ ‘নির্বাচন ভরে দেওয়া হোক’ টাইপের যে ইভেন্ট বা প্রচারণা করছে, এর পিছনে এই তরুণ দলের কতিপয় ব্যক্তিকূল ক্রিয়াশীল বলেই জনমনে ধারণা। এই দাবি যে অমূলক, সেটা কি এই পার্টির লোকেরা জোর গলায় বলতে পারবেন?
এই সরকার যে কথিত তরুণদের সরকার এবং এনসিপি যে সরকারেরই পৃষ্ঠপোষকতায় তৈরি ‘কিংস পার্টি, সেটা তো ওপেন সিক্রেট। দেশের প্রায় সব শ্রেণীর মানুষ যে জুলাইয়ে নেমেছিল, এর ভিতরে ছিল প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর বিপুল সংখ্যক কর্মী। বিএনপির দাবি অনুযায়ী, জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে নিহত হয়েছিল তাদের মোট ৪৯ জন। আর এই আন্দোলনে নিঃসন্দেহে অংশ নিয়েছিল ছাত্রদল, যুবদলের হাজার-হাজার নেতাকর্মী। এছাড়া অন্যান্য যেসব মূল ধারার ছোটখাটোর রাজনৈতিক দল আছে, যেমন নাগরিক ঐক্য, গণসংহতি আন্দোলন, সিপিবি, বাসদ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণধিকার পরিষদ, এমনকি জামায়াতে ইসলামী সহ বিভিন্ন ইসলামী দল— কে ছিল না এই আন্দোলনে। সোজা কথা, আওয়ালীগ ও তাঁর দোসরদের সাথে থেকে হালুয়ারুটির ভাগ যারা পেত, এরা ছাড়া সবাই ছিল এই আন্দোলনে— প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে।
এই মূল ধারার রাজনীতি করা সব দলই শেখ হাসিনার আমলে মারাত্মকভাবে নির্যাতিত হয়েছিল, ঠিকমতো নির্বাচন কেউই করতে পারেনি, পারেনি এমনকি রাজনৈতিক কাজকর্ম ঠিকমতো পরিচালিত করতে। এদের মধ্যে সবচেয়ে ওয়ার্স্ট সাফারার ছিল বিএনপি ও জামাত। গুম, খুন, মামলা, হামলা, দমন-নিপিড়নে এদের অবস্থা রাজপথে দাঁড়াবার মতোও ছিল না। ২০২৪-এর কোটা সংস্কার আন্দোলনে গুলি চালিয়ে যখন আওয়ামী সরকার মানুষ মারা শুরু করল, তখন গত ১৫ বছর ধরে নির্যাতিত এসব মূল ধারার রাজনৈতিক দলগুলো একটা সুযোগ পেয়ে গেল…তখন ছাত্র নিহতের প্রতিক্রিয়ায় দেশের সাধারণ ছাত্র-জনতা যখন ক্ষোভে ফেটে পোড়ে রাস্তায় নামল, তখন তাদের সাথে এসে যোগ দিল এসব মূল ধারার রাজনৈতিক দলগুলোর হাজার-হাজার নেতাকর্মী। তখন রাস্তায় নামা বিক্ষোভকারীদের সংখ্যা যে এত বেড়ে গেল, এর মূল কৃতিত্ব তো অবশ্যই এই রাজনৈতিক দলগুলোর।
এই দলগুলো কী চেয়েছে? কী চায় এই দলগুলো? তারা চায় প্রথমেই যে দেশে যে ক্ষতি আওয়ামী সরকার করে গেছে,সেটার মেরামত করে এবং বিবাদমান ত্রুটিপূর্ণ ব্যবস্থাকে সংস্কার করে একটা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করে দেশকে গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরিয়ে আনা। প্রকৃত রাজনৈতিবিদদের হাতে দেশের দায়িত্ব তুলে দেওয়া।
জুলাইয়ের আর সকল স্টেকহোল্ডারদের দাবিকে আগ্রাহ্য করা, সেগুলোর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যাওয়াটা স্রেফ জনবিরোধী আর গণতন্ত্রবিরোধী অবস্থান ছাড়া আর কিছু না। জনতার কথা বলা, গণতন্ত্রের কথা বলা আর মানায় না এনসিপির জন্য।

৫। তাদের দেখে মনে পড়ে যায় আওয়ামী লীগের চেতনা ব্যবসার কথা

জুলাই গণঅভ্যূত্থান দেশের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় অংশ, যা না হলে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী শাসন থেকে দেশবাসীর মুক্তি মিলত না। ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ, ৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের মতোই ইতিহাসের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু জুলাই গণঅভ্যূত্থানকে কেন্দ্র করে ব্যবসা করাটা বা একে কাজে লাগিয়ে যা খুশি করাটা কি জায়েজ হয়ে যায়?
আওয়ামী লীগ তাঁর ১৫ বছরের শাসনে যে কাজটা সবচেয়ে নিকৃষ্টতমভাবে করেছিল, সেটা হলো কথা কথায় কথিত ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’র ব্যবহার। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ব্যবহার করতে করতে তারা এমন পর্যায়ে নামিয়ে এনেছিল যে মানুষের কাছে মুক্তিযুদ্ধ কথাটাই তেতো হয়ে গিয়েছিল। ঠিক সেই কাজটিই কি করছে না বর্তমানে এনসিপি? কথায় কথায় জুলাইয়ের চেতনার কথা তুলছে তারা; দ্বিমত পোষণ করলেই অথবা তাদের দুর্নীতি, মববাজির সমালোচনা করলেই জুলাইয়ের বিরোধী বানিয়ে দিচ্ছে তারা। এমনকি কেউ আজীবন আওয়ামী বিরোধী অবস্থানে থাকলেও, স্রেফ এনসিপি বা তাদের সমর্থকদের সাথে না মিললে তাদের কাউকে কাউকে বলা হচ্ছে ‘ফ্যাসিবাদের দোসর!”
এমনকি গত ১৫ বছর ধরে ফ্যাসিবাদবিরোধী প্রধান শক্তি বিএনপিকেও এই এনসিপি ও তাদের প্রমোটার জামাত মিলে ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ বা ‘আওয়ামী লীগের দালাল’ বানিয়ে দিচ্ছে।
চেতনা ব্যবসায় কি আওয়ামী লীগের মতোই বাজে উদাহরণ দেখাচ্ছে না এই এনসিপি বা তাদের সমর্থকেরা?
আওয়ামী লীগ চাইত যেনতেনভাবে নির্বাচন করে, কারচুপি বা ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করে, হত্যা,খুন, দমন-নিপিড়ণ করে ক্ষমতায় থাকতে। তেমনি, রাজনৈতিকভাবে প্রজ্ঞাবান কেউ যদি মনে করে যে এনসিপি ও এর সমর্থকদের ‘পাঁচ বছর, পাঁচ বছর’, ‘নির্বাচন চাই না’ টাইপের কথাবার্তা এবং প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপিকে শত্রুজ্ঞান করাটা তাদের ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার একটা অপচেষ্টা, তবে সে কি খুব বেশি ভুল করবে?
বিএনপির সাথে মিলেমিশে নিঃসন্দেহে থাকতে পারত এনসিপি। কেননা, ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে নিঃসন্দেহে তারা একে অপরের সহযোদ্ধা। কিন্তু, দেশের জনগণের একটা বিরাট অংশ মনে করে যে ধীরে ধীরে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠা পেয়ে ভবিষ্যতে কোনো এক সময় ক্ষমতায় যাবার বদলে তারা এখনই বা কিছুদিনের মধ্যেই ক্ষমতায় যেতে চায়; অথবা, এখন তারা যেমন ক্ষমতার একটা অংশ, সেইভাবে ক্ষমতাটাকেই তারা যেমনে পারে যতদিন খুশি দীর্ঘ করতে চায়। তাই তো তারা বিএনপিকেও এখন গোনে না!

৬। মৌলবাদী-ডানপন্থীদের সহযোদ্ধা, প্রমোটার

এই অভিযোগটা এখনো তাদের নামে অনেকটাই লেগে আছে। জুলাই গণঅভ্যূত্থানের পর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামি ও অন্যান্য ইসলামী দলের সাথে নিয়মিতই সখ্য দেখা গিয়েছে তৎকালীন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং বর্তমানের এনসিপির নেতাদের। বিস্ময়করভাবে বিএনপি বা অন্যান্য মধ্যপন্থী গণতান্ত্রিক দলগুলোর নেতাদের সাথে ওঠাবসা করতে তাদের তেমন একটা দেখা যায়নি। দেখা যায়নি জুনায়েদ সাকি বা মাহমুদুর রহমান মান্নার দলের নেতাদের সাথে। কিন্তু দেখা গেছে ডানপন্থী দলের নেতাদের সাথে। এমনকি হেফাজতের সাথেও। এই কারণে তাদের গায়ে কিন্তু লেবেল লেগে গেছে যে এরাও ডানপন্থার দিকে ঘেষা। অনেকেই, বিশেষ করে, তাদের বিরোধীরা এমনও বলছেন যে এই ইসলামিস্টদের নিয়েই দেশে এক ধরনের ডানপন্থী বিপ্লবের স্বপ্ন দেখে এরা। বা এদের কাজে লাগিয়ে দেশের ডানপন্থীরা সেই ধরনের স্বপ্ন দেখছে। লেখাটা যখন লিখছি, তখন শাহবাগের সমাবেশকে কেন্দ্র করে জামাতের অবস্থান ও ‘গোলাম আযমের বাংলায়, নিজামির বাংলায়’ মার্কা স্লোগানের কারণে নাকি জামাত ও এনসিপির নেতাদের মধ্যে বাদানুবাদ দেখা যাচ্ছে। কিন্তু বিরাট প্রশ্ন এক্ষেত্রে থেকে যায় যেঃ ‘দুদিন আগেই যাদের লোকবলের সহায়তায় (যেহেতু নিজেরা এখনো পর্যন্ত লোকজন নিয়ে আসতে পারেন না তাদের সমাবেশে) শাহবাগে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের আন্দোলন করলেন, এমন কি হলো যে তাদের সাথে এমন লেগে গেল হুট করে? নাকী এসবই তাদের সাজানো নাটক, বা বিরাট কোনো ‘মেটিকুলাস প্ল্যান’-এর অংশ?

৭। এ কেমন নতুন বন্দোবস্ত?

দুর্নীতির অনেক অভিযোগ উঠেছে এনসিপির কিছু নেতা এমনকি উপদেষ্টা পরিষদের ছাত্র উপদেষ্টা এবং তাদের কতিপয় এপিসদের বিরুদ্ধে। এই অভিযোগ উঠেছে এখনো টিকে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন-এর সাথে যুক্ত থাকা লোকজনের নামে। নিয়োগ বাণিজ্য করে কোটি কোটি টাকা গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে এদের অনেকেরই নামে। এসব অভিযোগের কয়টা তারা উড়িয়ে দিতে পারবে?
প্রথাগত রাজনীতিতে আমরা দেখেছি যে মিনিমাম ৫-১০ বছর সক্রিয় ও শীর্ষ পর্যায়ের রাজনীতি করার পর অনেকেই বাড়ি ও সম্পত্তি করেন। আর এখানে দেখা গেল মাত্র ৫-৬ মাসেই এই নেতাদের অনেকেই গাড়ি হাঁকান, বিলাসবহুল জীবনযাপন করেন। তাঁর মানে এটা কোন ধরনের নতুন বন্দোবস্ত? পুরাতন বন্দোবস্তের তুলনায় ১০ গুণ তাড়াতাড়ি বড়লোক হওয়াটাই কি ‘নতুন বন্দোবস্ত?’ :D
জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের কী হলো, তা তো সবাই জানেন। এর দায়িত্বে থাকা শীর্ষ ব্যক্তিদের মধ্যে সারজিস আলম প্রথমে পদত্যাগ করেছিলেন কয়েক মাস আগে, আর মীর স্নিগ্ধ পদত্যাগ করলেন কয়েকদিন আগে। আর এদিকে জুলাই গণঅভ্যূত্থানে আহতরা সুচিকিৎসা না পেয়ে চিকিৎসার দাবিতে রাস্তায় নামেন- তাদের চিকিৎসা ঠিকমতো হয় না। এর দায় কি জুলাই গণঅভ্যূত্থানের নেতারা এবং তাদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা পার্টিটি এড়াতে পারে, যখন তাদের একটা অংশই কিনা সরকার, যখন কিনা প্রধান উপদেষ্টাই বলেন, ছাত্ররাই তাকে নিয়োগ দিয়েছে…?
কাজেই, মহান গণঅভ্যূত্থানের স্পিরিটও তারা কতটুকু ধারণ করেন এই পার্টি ও এই পার্টির নেতারা, এটাও বিরাট প্রশ্ন।
মনে করেন, মোহাম্মদপুর এলাকায় দুই বাসিন্দা বাস করে। একজন স্কুলের প্রধান শিক্ষক, আরেকজন সেই এলাকারই একজন বখাটে ছেলে। সেই বখাটে ছেলেটি যদি রাস্তাঘাটে মেয়েদের টিজ ও হয়রানি করে বেড়ায়, সেক্ষেত্রে কিন্তু অনেকেই বলবে সে তো এমন করতেই পারে, যেহেতু সে বখাটে। কিন্তু সেই প্রধান শিক্ষকটি যদি রাস্তাঘাটে মেয়েদের হয়রানি বা টিজ করে, তা হলে…দুজনের অপরাধ কি সমান হবে? নিশ্চয় প্রধান শিক্ষকের কাজটিই অনেক বেশি গর্হিত বলে বিবেচিত হবে।
ঠিক, তেমনি, জুলাই গণঅভ্যূত্থানের সেই প্রধান শিক্ষক বা মূল নেতৃত্বস্থানীয় ভূমিকায় থাকা তরুণরা আর তাদের দলও যদি পুরনো বন্দোবস্ত অনুযায়ী বিভিন্ন অনিয়ম, অন্যায় শক্তিবাজি ও দুর্নীতির সাথে জড়িয়ে পড়ে মাত্র কয়েক মাসেই, তবে বিএনপি-আওয়ামী লীগের থেকেও এরা যে বেশি খারাপ বা এদের দোষ বেশি, তা অনেকেই বলবে।

৮। কিংস পার্টির অভিশাপ

জুলাই আন্দোলনের মতো মহান ও অসাধারণ ব্যাপারের মাধ্যমে যে তরুণদের দলটি বাংলাদেশের রাজনীতিতে যুক্ত হলো, সেটা কিনা শুরু থেকেই ‘কিংস পার্টি’ হিসেবে পরিচিত পেল এবং সেভাবেই এগোল। এনসিপির সমর্থকেরা অজুহাত দেয় যে ‘বিএনপিও তো কিংস পার্টি’ ছিল। কিন্তু কথা হচ্ছে, জুলাই আন্দোলনের মতো মহান জিনিসের নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের সাথে কি কোনো ‘কিং’ বা সরকারের সকল ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে পার্টি গঠন করা, চালানো এবং সেই সকল ধরনের সহায়তা ও সমর্থন নিয়ে রাজনীতি করাটা কি মানায়? এসব ছাড়া রাজনৈতিক দল হিসেবে গড়ে ওঠাটাই কি তাদের পক্ষে স্বাভাবিক ও সুন্দর হতো না? সেটাই কি জুলাই গণঅভ্যূত্থানের সাথে বেশি সঙ্গতিপূর্ণ হতো না?
আর, বিএনপি যখন জিয়াউর রহমানের অধীনে দল গঠন করে তখন কিন্তু জিয়াউর রহমান সেটা গোপন করেননি। কিন্তু বর্তমানে সরকার ও এর লোকেরা কিন্তু সেটা বলছে না যে এই পার্টির পিছনে তারা আছে। তারা এটা স্পষ্টতই গোপন করেছে, করছে আর গোপন কোনো কিছুই ভালো না এবং সেটা অনেক চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রের কারণ হতে পারে বলে সন্দেহ রয়েই যায়?

৯। লঙ্কায় গেলে কি সবাইকেই রাবণ হতে হবে?

তারা আমার এক সময়ের সহযোদ্ধা!
মনে পড়ে...২০১৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো এক প্রোগ্রামে এক ভাই আমাকে তাদের সংগঠনের এক নতুন সদস্যের সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিল এটা বলে, "শেহজাদ আমান ভাই এই সময়ের সবচেয়ে অ্যাকটিভ ইয়ুথ অ্যাকটিভিস্ট!" সত্যি বলতে আমার পুরো জীবনে এত চমৎকার কোনো কমপ্লিমেন্ট খুব কমই পেয়েছি!
মনে পড়ে, অনেকদিন পর এক প্রাক্তন নারী সহযোদ্ধার সাথে যখন হুট করেই দেখা হয়ে গিয়েছিল সম্প্রতি, তখন অতি ব্যস্ততার মাঝেও সে নিজে থেকেই তাঁর মোবাইল নাম্বার আমাকে দিয়েছিল যোগাযোগ রাখার জন্য।
তারা এখন দেশব্যাপী সবচেয়ে বেশি আলোচিত-সমালোচিত 'তরুণদের রাজনৈতিক দল'টির কেন্দ্রীয় কমিটির অতি উচ্চ পদে আসীন 'নেতা।' আমার এমন প্রাক্তন সহযোদ্ধা বা পূর্ব পরিচিত তাদের দলে আছেন আরো বেশ কয়েকজন।
এমন বড় মনের বা সৌজন্যতাসম্পন্ন মানুষদের কি আমি নেতিবাচকভাবে দেখতে পারি কখনো?
কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, এদের নিয়ে গত কয়েকমাসে ডাইরেক্টলি বা ইনডাইরেক্টলি যত ফেসবুক পোস্ট দিয়েছি, এর আটটাতেই এদেরকে নিয়ে নেতিবাচক কথা আমাকে বলতে হয়েছে; কঠোর সমালোচনা করতে হইয়েছে। এটা করতে কি আমার ভালো লাগে? কিন্ত, ফ্যাসিবাদের পতনের পর দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এদের আবির্ভাব ও কার্যক্রম, চলাফেরা,আচার-আচরণ এমন অবশ্বাস্য রকম নেতিবাচক হয়ে গেছে যে ওদের দলটিকে নিয়ে যখন কথা বলতে যাই, 'ইতিবাচক' কিছু খুব কমই বের হয়...সামনেও এর ব্যতিক্রম হবার লক্ষণ তেমন একটা দেখছি না।
এ দায় নিঃসন্দেহে আমার নয়...!
আসলে ব্যাপারটা কী? লঙ্কায় (ক্ষমতা বা ক্ষমতার আশেপাশে) গেলে কি সবাই রাবণ হয়? সেটা কি হতেই হবে? কেন হতে হবে রে, ভাই?

শুধু ২০১৪ সালে আমার লেখা 'পরাজিত সময়ের কথন' কবিতা থেকে দুটো লাইন বলতে চাইঃ
"যদিও আমাকে ঢেকে রাখতে পারে ঘোরতর নৈঃশব্দ
শেষ পর্যন্ত আমি ছুয়ে দেব তোমাদের বোধির সীমা।"



(*আমার বিশ্লেষণটি ভালো লাগলে সোশাল মিডিয়া প্রফাইলে শেয়ার করার অনুরোধ রইল)






মন্তব্য ৭ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে মে, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৮

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: এনসিপি অভ্যুত্থান পরবর্তী জন্ম নেয়া সবচেয়ে বড়ো দল। তাদের সম্ভাবনা এখনো নষ্ট হয়ে যায় নি। মাহফুজ আলম কে আহবায়ক পদে বসালে নতুন গতি পাবে। একমাত্র তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। সারজিস, আসিফের ব্যাপারে কঠোর হতে হবে।

২০ শে মে, ২০২৫ দুপুর ২:০৫

শেহজাদ আমান বলেছেন: বড় দল কেমনে বলেন? সরকারের বিভিন্ন ধরুনের সহযোগিতা পেয়েও এরা এদের সমাবেশে এক হাজার লোকও আনতে পারে না। যতদিনা ইউনুস সরকার ক্ষমতায়, ততদিনই এরাও ক্ষমতায়, বা চলবে এদের সবরকম দাপট। এরপর এদের দেশের কেউই দাম দিবে না বলেই মনে করি।

২| ২০ শে মে, ২০২৫ দুপুর ২:০৭

শেহজাদ আমান বলেছেন: বড় দল কেমনে বলেন? সরকারের বিভিন্ন ধরুনের সহযোগিতা পেয়েও এরা এদের সমাবেশে এক হাজার লোকও আনতে পারে না। যতদিনা ইউনুস সরকার ক্ষমতায়, ততদিনই এরাও ক্ষমতায়, বা চলবে এদের সবরকম দাপট। এরপর এদের দেশের কেউই দাম দিবে না বলেই মনে করি.।!

৩| ২০ শে মে, ২০২৫ দুপুর ২:৩২

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: বাকি যে নতুন দলগুলো আত্নপ্রকাশ করেছে তাদের চেয়ে বড়ো দল। তারা রাজনীতি করতেই পারে। আমি জাস্ট তাদের সসম্ভাবনা ১ শতাংশ কিভাবে বাড়ানো যায় তার আইডিয়া দিলাম।।

২০ শে মে, ২০২৫ বিকাল ৪:৪৯

শেহজাদ আমান বলেছেন: কী রাজনীতি করার কথা ছিল তাদের, আর করছে কী?!? এরা তো এখন দেশ ও জনগণের বিরুদ্ধে এসে দাঁড়িয়েছে।

৪| ২০ শে মে, ২০২৫ দুপুর ২:৪৫

লুধুয়া বলেছেন: কারণ এটা কোনোদিনই সাধারণ ছাত্র আন্ধোলন ছিলোনা। এটা ইউএসএ / paki জামাতিদের সংঘ্যাবধ্য এক ক্যু ছিলো। যারা মুখ্য আন্দোলনে ছিলেন তারা পাকিস্তান পন্থী জনতা ছিলো। সাধারণ জনগণ ধোকা খেয়েছে।

২০ শে মে, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

শেহজাদ আমান বলেছেন: জানি না কী আসল ঘটনা? থাকতে আপ্রে ভিতরে অনেক ব্যতাপার-স্যাপার; কিন্তু সাধারণ মানুষ তো হাসিনার পতন চেয়েছিল নিশ্চিত। আর সেটার তো দরকারও ছিল। কিন্তু পরিবেশ পরিস্থিতি এখন এমন জায়গায় গিয়েছে যে এরা এবং এদের সমর্থিত সরকারই যেন আরেক হাসিনা হয়েছে উঠেছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.