নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শেহজাদ আমান

একজন সাংবাদিক ও সমাজকর্মী

শেহজাদ আমান

একজন সাংবাদিক ও সৃষ্টিশীল লেখক

শেহজাদ আমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

কালোত্তীর্ণ ল্যাতিন সাহিত্যিক হোর্হে লুইস বোর্হেস

২৭ শে আগস্ট, ২০২৫ রাত ১০:১৮



বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রভাবশালী ও গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক হিসেবে বিবেচনা করা হয় আর্জেন্টাইন লেখক হোর্হে লুইস বোর্হেসকে। ছিলেন তিনি বহুমাত্রিক একজন লেখক। রচিত ছোটগল্পের জন্য তিনি বেশি বিখ্যাত হলেও, সাহিত্যজীবনে একাধারে কবিতা, প্রবন্ধ, নিবন্ধ ও সাহিত্য সমালোচনাও লিখেছেন তিনি। অনুবাদক হিসেবেও দেখিয়েছেন অসাধারণ সব কাজ। তাঁর অসাধারণ সব সাহিত্যকর্ম অনুপ্রেরণা জুগিয়ে গিয়েছে গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ, মারিও বার্গাস ইয়োসা, মিশেল ফুকোর মতো তাঁর পরবর্তী প্রজন্মের বিশ্বখ্যাত সাহিত্যিকদের। গত ২৪ আগস্ট এই বহুপ্রজ প্রতিভার ১২৬ তম জন্মবার্ষিকী।

স্প্যানিশ ভাষার লেখক ছিলেন তিনি। ‘তিনি শুধু স্পেনের লেখক হিসেবেই সীমাবদ্ধ থাকেননি। তাঁর অসাধারণ কাজের জন্য পরিচিত পেয়েছিলেন বিশ্বব্যাপী। স্প্যানিশ সাহিত্যকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ায় তাঁর ভূমিকা অনস্বীকার্য। তাঁর অন্যতম সেরা দুটো কাজ ‘ফিকশনস’ ও ‘এল আলেফ’ প্রকাশিত হয় ১৯৪০ সালে। নাটকীয়তা, রহস্য, দর্শন, কাল্পনিক বিষয়বস্তু ও মিথলজির সম্মিলনে লেখা তাঁর বিভিন্ন ছোটগল্পের সঙ্কলন এই বই দুটো। ‘দার্শনিক সাহিত্য’ ও ‘ফ্যান্টাসি’ ঘরানায় বেশ কিছু চমৎকার কাজ উপহার দিয়েছেন তিনি। অনেকেই মনে করেন, ২০ শতকে ল্যাটিন আমেরিকার ‘ম্যাজিক রিয়ালিজম’ বা ‘জাদু-বাস্তবতা’র শুরুটা হয়েছিল হোর্হে লুইস বোর্হেসের কাজ দিয়েই। সাহিত্যজীবনের শেষদিকে তাঁর রচিত কবিতাগুলোকে তুলনা করা হয় স্পিনোজা, ক্যামোস ও ভার্জিলের কাজের সাথেবোর্হেসের জন্ম ১৮৯৯ সালে আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনোস আয়ার্সের এক শহরতলীতে। পরে তিনি তাঁর পরিবারের সাথে চলে আসেন সুইজারল্যান্ডে। ১৯২১ সালে আবার আর্জেন্টিনাতে ফিরে আসার পর তাঁর কবিতা ও প্রবন্ধগুলো প্রকাশিত হতে থাকে সেখানকার বিভিন্ন পরাবাস্তব সাহিত্যভিত্তিক জার্নালে। এরপরে গ্রন্থাগারিক ও পাবলিক লেকচারার হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি। ১৯৫৫ সালে ‘জাতীয় পাবলিক লাইব্রেরি’র পরিচালক ও বুয়েনোস আয়ার্স বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হন। তবে, অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনকভাবে ৫৫ বছর বয়সে পুরোপুরি অন্ধ হয়ে যান তিনি। তবে, অনেক সাহিত্যবোদ্ধাদের মতে, তাঁর এই ক্রমবর্ধমান অন্ধত্ব কল্পনাশক্তির মাধ্যমে উদ্ভাবনী সাহিত্য প্রতীক তৈরিতে সাহায্য করেছিল। সারাজীবন ধরে কবিতা লিখলেও অন্ধত্বকে বরণ করে নেওয়ার পর তাঁর কবিতা লেখার স্পৃহা যেন বেড়ে যায়। তখন পুরো সাহিত্যকর্মটিই মনে ধরে রাখতে পারতেন তিনি।
বিভিন্ন সময়ে লেখা তাঁর ছোটগল্পগুলো তাঁর জীবদ্দশায় সংলিত হয়েছে বিভিন্ন গল্পগ্রন্থে। তাঁর ছোটগল্পের সঙ্কলনের মধ্যে রয়েছে ‘দ্য গার্ডেন অব দ্য ফার্কিং পাথস’ (১৯৪১), আর্টিফিসেস (১৯৪৪), দ্য আলেফ (১৯৪৯), দ্য মেকার (১৯৬০), ল্যাবিরিন্থ (১৯৬২) ‘ব্রডি’স রিপোর্ট’ (১৯৭০), ‘দ্য বুক অব স্যান্ড’ (১৯৭৫) এবং শেক্সপিয়ার’স মেমরি (১৯৮৫)।

বিশ্বব্যাপী বোর্হেসের প্রধান পরিচয় মূলত গল্পকার হিসেবে হলেও গল্পকার বোর্হেসের আত্মপ্রকাশ কিন্তু তিনটি কবিতার বই ‘বুয়েনোস আইরেসের জন্য আকুলতা’ (১৯২১) , ‘সামনের চাঁদ’ (১৯২৫), ‘সান মার্তিন নোটবুক’ (১৯২৯) এবং পাঁচটি প্রবন্ধের বই দিয়ে।
মৃত্যুর এক বছর আগে প্রকাশিত তাঁর সর্বশেষ বইটিও কবিতার বই: ষড়যন্ত্রকারী । অসাধারণ সব গল্প, প্যারাবোল আর প্রবন্ধ লেখা সত্ত্বেও বোর্হেস নিজেকে প্রথমত এবং প্রধানত কবি হিসেবেই বিবেচনা করেছেন সবসময়। তাঁর গল্পগুলো গল্পের মৌলিক শর্তগুলো পূরণ করার পরেও তা সবসময় কবি মনের গভীরতম বোধ দ্বারা অনুপ্রাণিত।

বোর্হেস হয়তো এই কারণে তাঁর অন্য সব সত্তার চেয়ে কবি সত্তাকে বেশি গুরুত্বের সাথে দেখতেন। ১৯৭১ সালে বোর্হেস তাই কোনো রকম দ্বিধা ছাড়াই বলছেন যে, “ভবিষ্যতে হয়তো কবিতার জন্যই মানুষ আমাকে মনে রাখবে বা ছুড়ে ফেলে দেবে।” তাঁর এই বক্তব্য থেকেই বোঝা যায় তিনি কতটা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেছেন তাঁর কবিতাকে বা কবিসত্তাকে।

একজন উল্লেখযোগ্য অনুবাদকও ছিলেন বোর্হেস। ইংরেজি, ফরাসি, জার্মান, পুরাতন ইংরেজি ও পুরাতন নর্স ভাষা থেকে তিনি বই অনুবাদ করতেন স্প্যানিশ ভাষায়। বুয়েনোস আয়ার্সের স্থানীয় একটি পত্রিকায় প্রকাশিত তাঁর অনুবাদ করা অস্কার ওয়াইল্ডের ‘দ্য হ্যাপি প্রিন্স’ গল্পটি তাঁর প্রথম প্রকাশিত লেখা। তখন তাঁর বয়স ছিল কেবল নয় বছর। এরপর প্রাপ্তবয়ষ্ক হওয়ার পর ধীরে ধীরে অনুবাদের কাজে আরো বেশি ব্যস্ত হয়ে যান। উইলিয়াম ফকনার, হারম্যান হেস, এমব্রোস বিয়ার্সে, ফ্রাঞ্জ কাফকা, রুডইয়ার্ড কিপলিং, এডগার অ্যালান পো, ওয়াল্ট হুইটম্যান, ভার্জিনিয়া উলফের মতো নামকরা লেখকের সাহিত্যকর্ম স্প্যানিশে অনুদিত হয়েছে তাঁর হাত ধরেই।

জার্মান এবং রুশ ভাষা থেকে তিনি অনুবাদ করেছেন গ্যেটে ও দস্তভয়স্কি। মূল আরবি থেকে অনুবাদ করেছেন সহস্র এক আরব্য রজনী এবং কোরান শরীফ। পাঠকেরা জেনে আনন্দিত হবেন যে রবীন্দ্রনাথের ‘মানুষের ধর্ম’ গ্রন্থেরও অনুবাদ করেছেন তিনি। তবে বাংলা থেকে নয়, ইংরেজি অনুবাদ থেকে।

বোর্হেসের সাহিত্যকর্মগুলো আধুনিক সাহিত্যেরই অংশ যা প্রভাবিত হয়েছে প্রতীকীবাদের মাধ্যমে। ভ্লাদিমির নবোকভ ও জেমস জয়েসের মতো তিনিও স্থানীয় সংস্কৃতির সাথে ব্যাপকতর প্রেক্ষাপটের সমন্বয় ঘটিয়েছিলেন। যেখানে নবোকভ আর জেমস জয়েসের সাহিত্যকর্মগুলো হতো আকারে বিশাল, বোর্হেসের কাজগুলো হতো আকারে বেশ ছোট। আবেগচালিত শিল্পের সামাজিক বৈশিষ্ট্যগুলোর ওপর গুরুত্ব দেওয়া প্রচারমাধ্যমের মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিকেই প্রতিনিধিত্ব করতেন বোর্হেস। যদি শিল্প কোনো হাতিয়ার হয়ে থাকে, তাহলে বোর্হেসের আগ্রহ ছিল এই হাতিয়ারকে মানুষের সাথে যুক্ত করে ব্যবহার করার দিকে।

বোর্হেস ছিলেন তাঁর পরের প্রজন্মের অনেক কবি-সাহিত্যকিকদের অনুপ্রেরণার উৎস। সেই লেখকেরা পরে বিভিন্ন প্রচারমাধ্যমে বা সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন বোর্হেসের প্রতি তাদের অনুরাগের কথা। কিংবদন্তি লেখক গার্সিয়া মার্কেস উচ্ছ্বাসের সাথে বলেছেন, “তাঁর ব্যাপারে আমার কোনো সমস্যা নেই। বোর্হেসের প্রতি আমার প্রবল অনুরাগ, প্রতি রাতে তাঁর লেখা পড়ি। বুয়েনোস আইরেস থেকে একটিমাত্র জিনিসই কিনেছি আমি আর তা হলো বোর্হেসের রচনা সমগ্র। আমি যেখানেই যাই আমার স্যুটকেসের ভেতর খণ্ডগুলি থাকে, প্রতিদিন পড়ি। তাঁর গল্পগুলি ফাঁদতে গিয়ে তিনি যে সুর ও স্বর বাঁধেন, সেটা ভীষণ পছন্দ আমার।”

লাতিন আমেরিকার আরেক বামপন্থী মহান ঔপন্যাসিক আউগুস্ত রোয়া বাস্তোসও বোর্হেসের সাহিত্যিক গুরুত্বকে সম্ভ্রমের সাথেই স্বীকার করে নিয়ে বলেন, “আমার ধারণা বোর্হেসের যা টিকে থাকবে তা হলো সাহিত্যের বৈপ্লবিক রূপান্তরের সম্পর্কিত তাঁর কাজগুলো। এটা অস্বীকার করা যাবে না যে বোর্হেস ছিলেন বিপ্লবী; লাতিন আমেরিকায় তার সাহিত্যিক অবদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”

সাহিত্যে অবদানের জন্য ‘প্রিক্স ইন্টারন্যাশনাল’-এর মতো পুরষ্কার তিনি লাভ করেন ১৯৬১ সালে। ১৯৭১ সালে লাভ করেন ‘জেরুজালেম পুরস্কার’। ১৯৮৬ সালে মৃত্যবরণ করেন তিনি। তবে, প্রস্থানের পর পৃথিবীব্যাপী তাঁর সাহিত্যকর্ম ও তাঁকে নিয়ে আগ্রহ ক্রমে বাড়ছে। হচ্ছে তাঁকে নিয়ে অনেক গবেষণা। যা একজন কালজয়ী ও প্রভাবশালী সাহিত্যিক হিসেবে তাঁর গুরুত্বের ব্যাপারটাকেই প্রতিনিয়ত তুলছে নতুন উচ্চতায়।

বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রভাবশালী ও গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক হিসেবে বিবেচনা করা হয় আর্জেন্টাইন লেখক হোর্হে লুইস বোর্হেসকে। ছিলেন তিনি বহুমাত্রিক একজন লেখক। রচিত ছোটগল্পের জন্য তিনি বেশি বিখ্যাত হলেও, সাহিত্যজীবনে একাধারে কবিতা, প্রবন্ধ, নিবন্ধ ও সাহিত্য সমালোচনাও লিখেছেন তিনি। অনুবাদক হিসেবেও দেখিয়েছেন অসাধারণ সব কাজ। তাঁর অসাধারণ সব সাহিত্যকর্ম অনুপ্রেরণা জুগিয়ে গিয়েছে গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ, মারিও বার্গাস ইয়োসা, মিশেল ফুকোর মতো তাঁর পরবর্তী প্রজন্মের বিশ্বখ্যাত সাহিত্যিকদের। গত ২৪ আগস্ট এই বহুপ্রজ প্রতিভার ১২৬ তম জন্মবার্ষিকী।

স্প্যানিশ ভাষার লেখক ছিলেন তিনি। ‘তিনি শুধু স্পেনের লেখক হিসেবেই সীমাবদ্ধ থাকেননি। তাঁর অসাধারণ কাজের জন্য পরিচিত পেয়েছিলেন বিশ্বব্যাপী। স্প্যানিশ সাহিত্যকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ায় তাঁর ভূমিকা অনস্বীকার্য। তাঁর অন্যতম সেরা দুটো কাজ ‘ফিকশনস’ ও ‘এল আলেফ’ প্রকাশিত হয় ১৯৪০ সালে। নাটকীয়তা, রহস্য, দর্শন, কাল্পনিক বিষয়বস্তু ও মিথলজির সম্মিলনে লেখা তাঁর বিভিন্ন ছোটগল্পের সঙ্কলন এই বই দুটো। ‘দার্শনিক সাহিত্য’ ও ‘ফ্যান্টাসি’ ঘরানায় বেশ কিছু চমৎকার কাজ উপহার দিয়েছেন তিনি। অনেকেই মনে করেন, ২০ শতকে ল্যাটিন আমেরিকার ‘ম্যাজিক রিয়ালিজম’ বা ‘জাদু-বাস্তবতা’র শুরুটা হয়েছিল হোর্হে লুইস বোর্হেসের কাজ দিয়েই। সাহিত্যজীবনের শেষদিকে তাঁর রচিত কবিতাগুলোকে তুলনা করা হয় স্পিনোজা, ক্যামোস ও ভার্জিলের কাজের সাথেবোর্হেসের জন্ম ১৮৯৯ সালে আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনোস আয়ার্সের এক শহরতলীতে। পরে তিনি তাঁর পরিবারের সাথে চলে আসেন সুইজারল্যান্ডে। ১৯২১ সালে আবার আর্জেন্টিনাতে ফিরে আসার পর তাঁর কবিতা ও প্রবন্ধগুলো প্রকাশিত হতে থাকে সেখানকার বিভিন্ন পরাবাস্তব সাহিত্যভিত্তিক জার্নালে। এরপরে গ্রন্থাগারিক ও পাবলিক লেকচারার হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি। ১৯৫৫ সালে ‘জাতীয় পাবলিক লাইব্রেরি’র পরিচালক ও বুয়েনোস আয়ার্স বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হন। তবে, অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনকভাবে ৫৫ বছর বয়সে পুরোপুরি অন্ধ হয়ে যান তিনি। তবে, অনেক সাহিত্যবোদ্ধাদের মতে, তাঁর এই ক্রমবর্ধমান অন্ধত্ব কল্পনাশক্তির মাধ্যমে উদ্ভাবনী সাহিত্য প্রতীক তৈরিতে সাহায্য করেছিল। সারাজীবন ধরে কবিতা লিখলেও অন্ধত্বকে বরণ করে নেওয়ার পর তাঁর কবিতা লেখার স্পৃহা যেন বেড়ে যায়। তখন পুরো সাহিত্যকর্মটিই মনে ধরে রাখতে পারতেন তিনি।
বিভিন্ন সময়ে লেখা তাঁর ছোটগল্পগুলো তাঁর জীবদ্দশায় সংলিত হয়েছে বিভিন্ন গল্পগ্রন্থে। তাঁর ছোটগল্পের সঙ্কলনের মধ্যে রয়েছে ‘দ্য গার্ডেন অব দ্য ফার্কিং পাথস’ (১৯৪১), আর্টিফিসেস (১৯৪৪), দ্য আলেফ (১৯৪৯), দ্য মেকার (১৯৬০), ল্যাবিরিন্থ (১৯৬২) ‘ব্রডি’স রিপোর্ট’ (১৯৭০), ‘দ্য বুক অব স্যান্ড’ (১৯৭৫) এবং শেক্সপিয়ার’স মেমরি (১৯৮৫)।

বিশ্বব্যাপী বোর্হেসের প্রধান পরিচয় মূলত গল্পকার হিসেবে হলেও গল্পকার বোর্হেসের আত্মপ্রকাশ কিন্তু তিনটি কবিতার বই ‘বুয়েনোস আইরেসের জন্য আকুলতা’ (১৯২১) , ‘সামনের চাঁদ’ (১৯২৫), ‘সান মার্তিন নোটবুক’ (১৯২৯) এবং পাঁচটি প্রবন্ধের বই দিয়ে।
মৃত্যুর এক বছর আগে প্রকাশিত তাঁর সর্বশেষ বইটিও কবিতার বই: ষড়যন্ত্রকারী । অসাধারণ সব গল্প, প্যারাবোল আর প্রবন্ধ লেখা সত্ত্বেও বোর্হেস নিজেকে প্রথমত এবং প্রধানত কবি হিসেবেই বিবেচনা করেছেন সবসময়। তাঁর গল্পগুলো গল্পের মৌলিক শর্তগুলো পূরণ করার পরেও তা সবসময় কবি মনের গভীরতম বোধ দ্বারা অনুপ্রাণিত।

বোর্হেস হয়তো এই কারণে তাঁর অন্য সব সত্তার চেয়ে কবি সত্তাকে বেশি গুরুত্বের সাথে দেখতেন। ১৯৭১ সালে বোর্হেস তাই কোনো রকম দ্বিধা ছাড়াই বলছেন যে, “ভবিষ্যতে হয়তো কবিতার জন্যই মানুষ আমাকে মনে রাখবে বা ছুড়ে ফেলে দেবে।” তাঁর এই বক্তব্য থেকেই বোঝা যায় তিনি কতটা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেছেন তাঁর কবিতাকে বা কবিসত্তাকে।

একজন উল্লেখযোগ্য অনুবাদকও ছিলেন বোর্হেস। ইংরেজি, ফরাসি, জার্মান, পুরাতন ইংরেজি ও পুরাতন নর্স ভাষা থেকে তিনি বই অনুবাদ করতেন স্প্যানিশ ভাষায়। বুয়েনোস আয়ার্সের স্থানীয় একটি পত্রিকায় প্রকাশিত তাঁর অনুবাদ করা অস্কার ওয়াইল্ডের ‘দ্য হ্যাপি প্রিন্স’ গল্পটি তাঁর প্রথম প্রকাশিত লেখা। তখন তাঁর বয়স ছিল কেবল নয় বছর। এরপর প্রাপ্তবয়ষ্ক হওয়ার পর ধীরে ধীরে অনুবাদের কাজে আরো বেশি ব্যস্ত হয়ে যান। উইলিয়াম ফকনার, হারম্যান হেস, এমব্রোস বিয়ার্সে, ফ্রাঞ্জ কাফকা, রুডইয়ার্ড কিপলিং, এডগার অ্যালান পো, ওয়াল্ট হুইটম্যান, ভার্জিনিয়া উলফের মতো নামকরা লেখকের সাহিত্যকর্ম স্প্যানিশে অনুদিত হয়েছে তাঁর হাত ধরেই।

জার্মান এবং রুশ ভাষা থেকে তিনি অনুবাদ করেছেন গ্যেটে ও দস্তভয়স্কি। মূল আরবি থেকে অনুবাদ করেছেন সহস্র এক আরব্য রজনী এবং কোরান শরীফ। পাঠকেরা জেনে আনন্দিত হবেন যে রবীন্দ্রনাথের ‘মানুষের ধর্ম’ গ্রন্থেরও অনুবাদ করেছেন তিনি। তবে বাংলা থেকে নয়, ইংরেজি অনুবাদ থেকে।

বোর্হেসের সাহিত্যকর্মগুলো আধুনিক সাহিত্যেরই অংশ যা প্রভাবিত হয়েছে প্রতীকীবাদের মাধ্যমে। ভ্লাদিমির নবোকভ ও জেমস জয়েসের মতো তিনিও স্থানীয় সংস্কৃতির সাথে ব্যাপকতর প্রেক্ষাপটের সমন্বয় ঘটিয়েছিলেন। যেখানে নবোকভ আর জেমস জয়েসের সাহিত্যকর্মগুলো হতো আকারে বিশাল, বোর্হেসের কাজগুলো হতো আকারে বেশ ছোট। আবেগচালিত শিল্পের সামাজিক বৈশিষ্ট্যগুলোর ওপর গুরুত্ব দেওয়া প্রচারমাধ্যমের মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিকেই প্রতিনিধিত্ব করতেন বোর্হেস। যদি শিল্প কোনো হাতিয়ার হয়ে থাকে, তাহলে বোর্হেসের আগ্রহ ছিল এই হাতিয়ারকে মানুষের সাথে যুক্ত করে ব্যবহার করার দিকে।

বোর্হেস ছিলেন তাঁর পরের প্রজন্মের অনেক কবি-সাহিত্যকিকদের অনুপ্রেরণার উৎস। সেই লেখকেরা পরে বিভিন্ন প্রচারমাধ্যমে বা সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন বোর্হেসের প্রতি তাদের অনুরাগের কথা। কিংবদন্তি লেখক গার্সিয়া মার্কেস উচ্ছ্বাসের সাথে বলেছেন, “তাঁর ব্যাপারে আমার কোনো সমস্যা নেই। বোর্হেসের প্রতি আমার প্রবল অনুরাগ, প্রতি রাতে তাঁর লেখা পড়ি। বুয়েনোস আইরেস থেকে একটিমাত্র জিনিসই কিনেছি আমি আর তা হলো বোর্হেসের রচনা সমগ্র। আমি যেখানেই যাই আমার স্যুটকেসের ভেতর খণ্ডগুলি থাকে, প্রতিদিন পড়ি। তাঁর গল্পগুলি ফাঁদতে গিয়ে তিনি যে সুর ও স্বর বাঁধেন, সেটা ভীষণ পছন্দ আমার।”

লাতিন আমেরিকার আরেক বামপন্থী মহান ঔপন্যাসিক আউগুস্ত রোয়া বাস্তোসও বোর্হেসের সাহিত্যিক গুরুত্বকে সম্ভ্রমের সাথেই স্বীকার করে নিয়ে বলেন, “আমার ধারণা বোর্হেসের যা টিকে থাকবে তা হলো সাহিত্যের বৈপ্লবিক রূপান্তরের সম্পর্কিত তাঁর কাজগুলো। এটা অস্বীকার করা যাবে না যে বোর্হেস ছিলেন বিপ্লবী; লাতিন আমেরিকায় তার সাহিত্যিক অবদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”

সাহিত্যে অবদানের জন্য ‘প্রিক্স ইন্টারন্যাশনাল’-এর মতো পুরষ্কার তিনি লাভ করেন ১৯৬১ সালে। ১৯৭১ সালে লাভ করেন ‘জেরুজালেম পুরস্কার’। ১৯৮৬ সালে মৃত্যবরণ করেন তিনি। তবে, প্রস্থানের পর পৃথিবীব্যাপী তাঁর সাহিত্যকর্ম ও তাঁকে নিয়ে আগ্রহ ক্রমে বাড়ছে। হচ্ছে তাঁকে নিয়ে অনেক গবেষণা। যা একজন কালজয়ী ও প্রভাবশালী সাহিত্যিক হিসেবে তাঁর গুরুত্বের ব্যাপারটাকেই প্রতিনিয়ত তুলছে নতুন উচ্চতায়।



মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে আগস্ট, ২০২৫ রাত ১:২০

কোলড বলেছেন: You left out his support for Argentine military junta and the dirty war. Intellectual dishonesty to say the least. I also read somewhere that he came to Bangladesh after 1972 to look for some old script!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.