নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আল্লাহ ছাড়া আর কোন সৃষ্টিকর্তা নেই । হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহর বান্দা ও রাসূল ।

েশখসাদী

আল্লাহ ছাড়া আর কোন সৃষ্টিকর্তা নেই । হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহর বান্দা ও রাসূল ।

েশখসাদী › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিশ্ব সভ্যতায় মুসলিম মণীষীদের অবদান । ডাঃ সাদেক আহমেদ ।

২২ শে জুন, ২০১৮ বিকাল ৪:১৩

পাশ্চাত্য জগৎ আজ বিজ্ঞানকে উন্নতির যে চরম শিখরে পৈাছিয়েছে, তার ভিত্তিই হলো মধ্যযুগীয় মুসিলিম বিজ্ঞানীদের অত্নত্যাগ ও পরিশ্রম । বিজ্ঞানের এই ক্রমবিকাশে পাশ্চাত্য জগৎ তাই বহুলাংশে মধ্যযুগীয় মুসলিম বিজ্ঞানীদের কাছে ঋণী । এটা কেবল মুসলমানদের বক্তব্য নয় । পাশ্চাত্য জগৎও এ্টা স্বীকার করে মুক্ত কন্ঠেই ।

উইল ডুরান্ট তার বিখ্যাত গ্রন্হ "দা ষ্টোরি অব সিভিলাইজেশন" এর ৪র্থ খন্ডে অনিবার্যভাবেই মুসলিম বিজ্ঞানী, দার্শনিক এবং চিকিৎসকদের বিস্তৃত বর্ণনা দিয়েছেন । ডুরান্টের মতে 'ইবনে সিনা ছিলেন ওষুধ বিষয়ক মহত্তম লিখক, আল-রাজী ছিলেন মহত্তম চিকিৎসক, আল-বেরুণী মহত্তম ভূতত্ত্ববিদ, আল-হায়তাম ছিলেন মহত্তম চক্ষূ বিশেষজ্ঞ এবং জাবির ছিলেন মধ্যযুগের সম্ভবত সেরা রসায়নবিদ ।"

মুসলিম জাতি যখন জীবনের সার্বিক ক্ষেত্রে উন্নতির চরম শিখরে পৌছে, তখন তারা ক্লান্ত হয়ে ভোগ বিলাসে মত্ত হয়ে পড়ে । ভাটা পড়তে থাকে তাদের সৃজনশীল কর্মতৎপরতায় । অন্যদিকে পাশ্চাত্য জগত মুসলিম বিজ্ঞানীদের লব্ধ জ্ঞানের পরিচর্যা করে ধাপে ধাপে উন্নতির চরম সোপানের দিকে এগুতে থাকে । নৈতিক অধঃপতনের জন্য মুসলিম জাতি ক্রমে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাও হারাতে থাকে । ফলে জ্ঞান চর্চ্চার প্রদীপও ম্লান হয়ে আসতে থাকে । ইউরোপীয়রা মুসিলম দেশগুলো একে একে গ্রাস করে তাদের কৃষ্টির প্রসার ঘটাতে থাকে । এমনি সময়ে সমর্থনের পরিবর্তে মুসলিম বিজ্ঞানীদের উপর নেমে আসে চরম বাধা-বিপত্তি । তাই ক্রমেই তাদের কর্মতৎপরতা বন্ধ হয়ে যেতে থাকে এবং তারা হারিয়ে যেতে থাকেন বিজ্ঞানের জগৎ থেকে । মুসলিম বিজ্ঞানীদের অসমাপ্ত কাজকে এগিয়ে নিয়ে পাশ্চাত্যের বিজ্ঞানীরা আজ বিজ্ঞানের কর্ণধার সেজেছে । তবু অকপটে তাদেরকেও স্বীকার করতে হয় সেই সব মধ্যযুগীয় মুসলিম বিজ্ঞানীদের কথা, যারা বিজ্ঞানের এই উন্নতির জন্য চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন । তাদেরই কয়েকজনের কথা উল্লেখ করছি ।

১. ইবনে খালদুনঃ

পাশ্চাত্য পন্ডিতরা যাকে প্রাচীন ঐতিহাসিকদের মধ্যে শীর্ষস্হানীয় মনে করে থাকেন তিনি হলেন ইবনে খালদুন । "আল ইবার ওয়া দিওয়ান আল মোবতাদা ওয়াল খবর" ( The Moral and the Book of the Subject and Object ) গ্রন্হে তিনি জাতি সমূহের বিবর্তন এবং গঠন সম্পর্কে ঐতিহাসিক সূত্রের উ্দ্ভাবন করেন । এজন্য তাকে সমাজ বিজ্ঞানের জনক বলা হয় ।

২. ইবনে রুশদঃ

ইনি হচ্ছেন সেই দার্শনিক যিনি মৃত্যুশয্যায় শুয়ে বিখ্যাত উক্তিটি করেছিলেন, "কেবল দর্শনের মৃত্যুই আমার আত্নার মৃত্যু ঘটাতে পারে ।" মুসলিম দার্শনিকদের মধ্যে ইউরোপে তার বিশেষ আধিপত্য ছিল । তিনি এরিষ্টটলের দর্শনের সবচেয়ে বড় অনুবাদক ও ব্যাখ্যাকার । ইবনে রুশদই সর্বপ্রথম মুক্ত চিন্তার উদ্ভাবক ।

৩. ইবনে সিনাঃ

তিনি চিকিৎসা বিজ্ঞানের এক সুপরিচিত ব্যাক্তিত্ব । তিনি ১৬ বছর বয়সেই স্বীয় প্রতিভার পরিচয় দেন । তার লিখা "আল কানুন ফিল তিব" গ্রন্হ খানা উনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধ পর্যন্ত ইউরোপীয় চিকিৎসকদের অন্যতম প্রধান পাঠ্য পুস্তক ছিলো । মনস্তত্ত্ব সম্পর্কিত ধারণা তিনিই প্রথম উদ্ভাবন করেন । তিনি পনির প্রকার রোগ এবং ৭৬০ প্রকার প্রতিকার পদ্ধতি আবিস্কার করেন । তিনি যক্ষা, মস্তিস্কবিল্লির প্রদাহ ও অনুরূপ আরো কয়েকটি সংক্রামক রোগের চিকিৎসা উদ্ভাবন করেন । ১০৩৬ খ্রীষ্টাব্দে এই মহান চিকিৎসকের জীবন অবসান হয় ।

৪. আল-বেরুণীঃ

গণিত, ভূগোল, ইতিহাস, জোর্তিবিদ্যা এবং ভেষজ শাস্ত্রের উপর ১০০টিরও অধিক গ্রন্হ প্রণেতা আল-বেরুণী কেবল মাত্র ভারত বর্ষের উপর "কিতাবুল হিন্দ" নামক যে অমর গ্রন্হ রচনা করেন তা সভ্যতার ইতিহাসে এক অমূল্য সংযোজন । বৃত্তের ব্যাসার্ধ নির্ণয়ের জন্য তিনি যে পন্হা উদ্ভাবন করেন তা "বেরুণী পদ্ধতি" নামে খ্যাত । তিনি Sine এবং Tangent এর ছক তৈরী করেন । আরো করেন তরল পদার্থের চাপের প্রকৃতি নির্ণয় । তিনি সমুদ্রের পানি থেকে লবণ উদ্ভাবনের প্রক্রিয়া আবিস্কার করেন ।

৫. আল-খাওয়ারিজমীঃ

অংক শাস্ত্র ও জোতিষ শাস্ত্রের অগাধ পান্ডিত্যের জন্য খলিফা মামুন তাকে বায়তুল হিকমার () এর প্রধান নিযুক্ত করেন । তিনি লগারিদমের প্রকৃত উদ্ভাবক । গণিত শাস্ত্রের উপর লেখা তার অনেক বই লেটিন ও ইংরেজী ভাষার অনুদিত হয়ে ইউরোপে বিশেষভাবে সমাদৃত হয় ।

৬. জাবির ইবনে হাইয়ানঃ

তিনিই সর্ব প্রথম এ্যসিড আবিস্কারক এবং সালফিউরিক এ্যাসিড তরলীকরণ সাফল্যে অর্জন করেন । সোডিয়াম কার্বনেট, পটাশিয়াম, আরসেনিক এবং সিলভার নাইট্রেট উদ্ভাবন তার এক অমূল্য আবিস্কার । তাকে আধুনিক রসায়ণবিদদের একজন ধরা হয় । তার রচিত ৫০০ বইয়ের মাঝে দর্শন, তর্ক ও রসায়ণ শাস্ত্রে আমরা মাত্র ৮০টি সম্পর্কে জানি ।

৭. আল-বাতানীঃ

তিনি একজন শ্রেষ্ঠ জোর্তিবিদ হিসাবে পাশ্চাত্য জগতে বিশেষভাবে সমাদৃত । বিবিধ ত্রিকোনমিতিক সমীকরণ সমাধান তার উল্লেখযোগ্য আবিস্কার । তিনি এর গাণিতিক ছক প্রস্তত করেন । প্রকৃতপক্ষে তিনিই ত্রিকোণমিতি শাত্রের জন্মদাতা । কয়েক শতাব্দী পর্যন্ত তার গ্রন্হ গুলো রেফারেন্স বই হিসাবে পঠিত হত ।

৮. আল-ইদ্দুসীঃ

তিনিই সর্বপ্রথম পৃথিবীর মানচিত্র অংকন করেন , যা যথার্থতার দিক থেকে আধুনিক মানচিত্রের কাছাকিছি ছিলো । তিনি সমান্তরাল সরল রেখা দিয়ে পৃথিবীকে ৭টি ভাগে ভাগ করেন । তার বিখ্যাত বই "নুগহাত আল মোস্তফা কিফ ইখতিরাক আল অরফাক() তিন শতাব্দী পর্যন্ত ইউরোপের প্রধান ভৈাগলিক গ্রন্হ হিসাবে পরিগণিত হত ।

৯. ইবনে আল বিতারঃ

এই বিজ্ঞানী জীব বিজ্ঞান ও চিকিৎসা বিজ্ঞানের ব্যবহারিক প্রয়োগের দিকে তিনি বিশেষভাবে মনযোগী ছিলেন । তার বিখ্যাত বই " আল জামি লি মোফরাদাত আল আদওয়াইয়া ওয়াল আগদিয়ে" () ১৮৮১ সালে ফরাসী ভাষায় প্রকাশিত হলে ফরাসী বিজ্ঞানীরা এমন ৮০টিরও বেশী বিষয়ের সাথে পরিচিত হন যা ছিলো ইতিপূর্বে তাদের অজানা । এই অভিধানটি বর্ণানুক্রমিকভাবে সাজানো হয় এবং এতে ১৪০০ প্রকার ওষুধের বর্ণনা ছিল যার ৩০০টি এর আগে কখনো জানা ছিলো না ।

১০. ইবনুল হায়তামঃ

দৃষ্টি বিজ্ঞান ও আলোক রশ্মি সংক্রান্ত গবষেণায় তিনি বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন । তিনিই সর্বপ্রথম চোখের ছবি অংকন করে আলোকের প্রতিফলন ও প্রতিসরণের নিয়মবালী ব্যাখ্যা করেন । তিনি চোখের কাঠামোতে আলোর প্রতিফলন, কর্নিয়ার উপর পতিত ছবি, আলোক রশ্মি একত্রীকরণের সূত্র, কোন ছবির সম্প্রসারণ, প্রতিফলন এবং সংযুক্ত এবং বস্তুর রং পরিদর্শন ইত্যাদি ব্যাপারে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন । ১০৩৯ খৃঃ তিনি মৃত্যুবরণ করেন

১১. আব্বাস বিন ফিরনাগঃ অটোলিলিয়ান থলের বহু শতাব্দী পূর্বেই কর্ডোভার এই বিজ্ঞানী এক জোড়া পাখা তৈরি করে ৩০০ মিটার উচু থেকে ঝাপ দিয়ে স্পেনের কর্ডোভা নগরীরর উপর দিয়ে যান । কিন্তু গতি নিয়ন্ত্রণ ও দিক পরিবর্তনের কোন ব্যবস্হা না থাকায় তিনি ভারসাম্য হারিয়ে মাটিতে পড়ে গিয়ে জীবন বিসর্জন দেন এবং ভবিষ্যৎ বংশধরদের জন্য রেখে যান চিন্তুার জগতে এক আলোড়ন ।

এমনিভাবে এমন আরো অনেক মুসলিম বিজ্ঞানী ও পন্ডিত আছেন যাদের অনেককেই আমরা জানিনা । তাই বিংশ শতাব্দীর ক্রান্তিলগ্নে দাড়িয়ে আমাদেরকে স্মরণ করতে হবে সোনালী যুগের সেই দিনগুলির কথা যখন আমরা জ্ঞানে বিজ্ঞানে বিশ্বকে নেতৃত্ব দিয়েছি । আমাদেরকে আবার জ্ঞানে বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে ঘাটতে হবে এব বৈপ্লবিক পরিবর্তন । যে বিজ্ঞানের অবদানে হবেনা হিরোশিমা ও নাগাসাকির মতো ধ্বংসলীলা , যা নিয়ে আসবে মানবজাতির জন্য এক মহা প্রশান্তি ।


শেষ পর্ব ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.