নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আল্লাহ ছাড়া আর কোন সৃষ্টিকর্তা নেই । হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহর বান্দা ও রাসূল ।

েশখসাদী

আল্লাহ ছাড়া আর কোন সৃষ্টিকর্তা নেই । হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহর বান্দা ও রাসূল ।

েশখসাদী › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঐতিহাসিক তথ্য ও নির্ভূল কুরআনঃ ফেরাউন ও হামান

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ৭:২১

কুরআন অত্যন্ত সুস্পষ্টতা ও নির্ভূলতার সাথে নবী মুসা (আঃ) এর জীবন কাহিনী বর্ণনা করেছে। ফেরাউন ও বণী ইসরাঈলের সাথে তার দ্বন্দ্ব সংঘর্ষ এর কাহিনী ব্যক্ত করার সাথে সাথে কুরআন প্রাচীন মিশর সম্পর্কে প্রচুর তথ্য প্রকাশ করেছে। । ঐতিহাসিকগণ যারা ইতিহাস নিয়ে ঘাটাঘাটি করেন তাদের নিকট সেসব বিষয় মনোযোগ আকর্ষণ করেছে । এই তথ্যগুলো যখন পর্যালোচনা করা হয়, তখন এর নির্ভূলতা প্রমাণ করে যে এইসব তথ্য সমূহ স্রষ্টা নিকট থেকেই এসেছে ।

এই ধরনের তথ্যের নির্ভূলতার একটি উদাহরণ হলো ফেরআউনের সহযোগী "হামান" । কুরআনের ছয়টি ভিন্ন স্থানে এই নামটির উল্লেখ আছে । সুতরাং এ থেকে ধারণা করা যায় যে এই চরিত্রটি ফেরআউনের খুবই নিকটবর্তী একজন ছিলেন।

আশ্চর্যজনকভাবে, ইহুদীদের ধর্মগ্রন্হ তাওরাতে বর্ণিত হযরত মূসা (আঃ) এর জীবন কাহিনীতে হামানের কোন উল্লেখ পাওয়া যায় নি। হামানের উল্লেখ আছে ওল্ড টেস্টামেন্টের শেষ অধ্যায়ে একটি বাবিলীয় রাজাকে সাহায্যকারী হিসাবে , সময়টা হলো নবী মুসা (সাঃ) এর প্রায় ১১০০ বছর পর । যে তখন বণী ইস্রায়েলীয়দের উপর অনেক নিষ্ঠুরতা চালিয়ে ছিলো । যার ফলে কিছু অমুসলিম পন্ডিত এটা নিয়ে হাসাহাসি করছিলো আর বলছিলো যে ইসলামের নবী তাওরাত এর থেকে কুরআন কপি করেছিলো, তখন সে এই ভূলটা করেছিলো । তাদের দাবি ছিলো মুহাম্মদ (সাঃ) ভূলক্রমে হামানকে ফেরআউনের সাথে সংযুক্ত করে দিয়েছেণ কারণ, এই নামের সাথে তারা ফেরাআউনের কোন সংশ্লিষ্টতা খুজে পাচ্ছিলোনা । মুসলমানগণও কোন উত্তর খুজে পাচ্ছিলোনা, যদিও তাদের দৃঢ় বিশ্বাস ছিলো আল-কুরআন নির্ভূল ।


প্রায় ২০০ বছর আগে হঠাৎ একটি প্রত্নতাত্বিক আবিষ্কার কুরআনের নির্ভূলতা প্রমাণ করে দেয় । এই আবিষ্কারের মাধ্যমে যখন মিশরীয় বর্ণমালা হাইরোগ্লিফিক এর পাঠোদ্ধার করা হয়েছিলোম, তখন প্রাচীন মিশরীয় কিতাব সমূহে "হামান" নামটি আবিষ্কৃত হয় । যেখানে আগে ধারণা করা হয়েছিলো "হামান" শুধুমাত্র ব্যবিলনীয় রাজার সহযোগী ছিলেন, মিশরের ফেরাউনের সহযোগী নয় ।

১৮ শতকের পূর্ব পর্যন্ত, প্রাচীন মিশরের লেখা ও শিলালিপিগুলি বোঝা যায় নি। প্রাচীন মিশরের ভাষা লেখন পদ্ধতি ছিলো ভিন্ন রকমের । তারা লেখার জন্য বর্ণমালা ব্যবহার না করে প্রতীক বা ছবি ব্যবহার করত- যার নাম ছিলো হাইরোগ্লিফিক্স। তারা ছবির মাধ্যমে কাহিনী লিখে রাখত এবং তা সাধারণত শিলা বা পাথরের উপর খোদাই করে রাখা হতো । দ্বিতীয় ও তৃতীয় শতাব্দীতে মিশরে খ্রীষ্ট ধর্ম প্রচারের সাথে সাথে পুরনো ধর্মীয় বিশ্বাস ত্যাগ করার সাথে সাথে পুরোনো লেখন পদ্ধতিও মিশর ত্যাগ করে । ফলে তা ধীরে ধীরে এর ব্যবহার হারিয়ে যায় এবং এক সময় কেউ আর তা লিখতে আর পড়তে পারত না । হায়ারোগ্লিফিক লিখন ব্যবহারের শেষ পরিচিত উদাহরণ ছিল ৩৯৪ খ্রীঃ এর একটি শিলালিপি। ছবি এবং প্রতীকগুলির ভাষা মানুষ ভুলে গিয়েছিল, কেউ তা পড়তে ও বুঝতে পারত না। স্বাভাবিকভাবেই এই বর্ণমালা উপর ঐতিহাসিক এবং প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা কার্যত অসম্ভব হয়ে গিয়েছিলো।

তখন ১৭৯৯ সাল ! মিশরের 'রোজেটা' নামের জায়গায় তাবু গেড়েছে সম্রাট নেপোলিয়নের সৈন্যরা । এখানে পরিখা খনন করতে যেয়ে তারা হঠাৎ পেয়ে যায় কালো ব্যাসল্টের এক প্রকান্ড পাথর ! পাথরের মসৃণ পাশে বিভিন্ন প্রাচীন লিপি আঁকা । সৈন্যবাহিনীর প্রকৌশলী বোর্সাদ ইতিমধ্যে প্রাচীন মিশরের দুর্বোধ্য লিপির ব্যাপারে খুবই কৈাতূহলী হয়ে উঠেছিলেন । তাই পাথরের গায়ে আঁকা লিপিগুলোর অর্থ উদ্ধারে তিনি উঠে পড়ে লাগলেন । কিন্তু কাজটা খুব সহজ ছিলো না । তিনি দেখলেন পাথরের গাঁয়ে তিনটি ধাপে ভিন্ন ভিন্ন ভাষায় লেখা হয়েছে ।

প্রথম ধাপে মিসরের সেই পুরোনো ছবি আকা হায়ারোগ্লিফিক লিপি । দ্বিতীয় ধাপে ছিল পরবর্তীকালের ডেমোটিক লিপি এবং শেষ ধাপে মিশরে টলেমিদের শাসনের সময়কার গ্রিক লিপি । রোজেটায় পাওয়া গিয়েছিলো বলে পাথরটির নাম হয়ে যায় রোজেটা পাথর । বোর্সাদ পাথরটি পাঠিয়ে দেন স্বয়ং নেপোলিয়নের কাছে । নেপোলিয়ন ব্যাপারটিকে গুরুত্বের সাথে নিলেন । তিনি পাথরটির অনেকগুলো নিখুত ছবি করিয়ে সেগুলো পাঠিয়ে দেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ভাষা পন্ডিতদের কাছে । শেষ দুই ধাপের অর্থ পাওয়া গেলেও প্রথম ধাপটির অর্থ উদ্ধার করা খুবই মুশকিল ছিলো ।

অবশেষে দীর্ঘ চৌদ্দ বছর গবেষণার পর ফ্রান্সের বহু ভাষাবিদ জ্যাঁ ফ্রাঁসোয়া শ্যাম্পোলিয়র সাধন সফল হলো । শেষ দুই ধাপের সাথে মিলিয়ে তিনি প্রথম ধাপটির ভাষা ফোটাতে সফল হলেন । কথা বলে উঠল রোজেটা পাথর । রোজেটা পাথরের সূত্র ধরেই প্রাচীন মিসরের হায়ারোগ্লিফিক লিপির পাঠোদ্ধার করা সম্ভব হয় । আজ থেকে প্রায় সাত হাজার বছর আগে মিসরে এ লিপিতে লেখা শুরু হয় । রোজেটা পাথর লেখা হয়েছে অনেক পরে ১৯৬ খ্রিষ্ট পূর্বাব্দে । ৫ম টলেমি এতে হায়ারোগ্লিফিক ও ডেমোটিক লিপির পাশাপাশি গ্রিক ভাষাও ব্যবহার করেছিলেন । এতে লাভ হয়েছে পন্ডিতদের । গ্রিক ও ডেমোটিক লিপির সূত্র ধরেই প্রাচীন হায়ারোগ্লিফিক লিপির রহস্যের জট খোলা সম্ভব হয় । ফলে পৃথিবীবাসীর সামনে ভেসে ওঠে প্রাচীন মিসরের অনেক অজানা ইতিহাস আর এর সাথে সাথে এটাও প্রমাণিত হয় যে কুরআন এ কোন ভূল নেই । এটা কোন মানব রচিত গ্রন্থ নয় ।

যখন মিসরের ইতিহাস বের হতে লাগল তখন দেখা গেলো , হযরত মুসা (সাঃ) এর সময়ে হামান মিশরে বসবাসকারী একজন ব্যক্তি ছিলেন। তিনি ফেরাউনের নিকটবর্তী ছিলেন এবং নির্মাণ কাজের সাথে জড়িত ছিলেন, ঠিক যেমন কুরআনে দেওয়া হয়েছে।

মিশরে যেসব প্রাচীন টেবলেট পাওয়া গিয়েছিলো সেগুলোতে "হামান" এর নাম পাওয়া গেল । বর্তমানে ভিয়েনায় অবস্হিত হফ যাদুঘরে একটি মনুমেন্ট বা সৃতিচিহ্নে আছে, যার মধ্যেও হামান এর উল্লেখ আছে এবং সেখানে হামান ও ফেরআউনের ঘনিষ্ঠতারও ইঙ্গিত আছে ।

্এছাড়াও প্রাচীন মিশরের একজন ইতিহাসবিদ হর্মেন ​​রেনকে , তিনি মিসরের শিলালিপিগুলো থেকে প্রাপ্ত তথ্য সমূহ এক করে অভিধান রচনা করেন, যেখানে তিনি হামানকে উল্লেখ করেন খনন কর্মীদের প্রধান হিসাবে ।


"ফেরাউন বলল, হে পরিষদবর্গ, আমি জানি না যে, আমি ব্যতীত তোমাদের কোন উপাস্য আছে। হে হামান, তুমি ইট পোড়াও, অতঃপর আমার জন্যে একটি প্রাসাদ নির্মাণ কর, যাতে আমি মূসার উপাস্যকে উকি মেরে দেখতে পারি। আমার তো ধারণা এই যে, সে একজন মিথ্যাবাদী। " (কুরআন, ২৮:৩৮)


কুরআনের এই আয়াতে ফেরাউন হামানকে একটি টাওয়ার নির্মাণ করতে বলেছিলো, যা প্রত্নতত্ববিদরা মিশরে যেসব আলামত পেয়েছিলেন তার সাথে সম্পূর্ণ খাপ খায় । কারণ মূসা (আঃ) এর সময়ে ফেরাউনের আমলের এরকম টাওয়ার অস্তিস্ত্ব পাওয়া যায় ।
প্রত্নতাত্তিক এই আবিস্কার এর মাধ্যমেও, কুরআনের বিরোধীদের অযৌক্তিক দাবিগুলি মিথ্যা এবং মূল্যহীন বলে প্রমাণিত হয়। নবী (সাঃ) এর সময়ে যখন কুরআন নাযিল হয তখন বোঝা যায় নি কুরআনের এসব ঐতিহাসিক তথ্য সমূহের গুরুত্ব। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় নতুন নতুন আবিস্কার এর মাধ্যমে এই অলৌকিক কুরআন এর মাহাত্ন্য প্রকাশিত হচ্ছে ।

"অতঃপর মূসা যখন তাদের কাছে আমার সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী নিয়ে পৌছল, তখন তারা বলল, এতো অলীক জাদু মাত্র। আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের মধ্যে এ কথা শুনিনি।"(২৮:৩৬)

মূসা বলল, আমার পালনকর্তা সম্যক জানেন যে তার নিকট থেকে হেদায়েতের কথা নিয়ে আগমন করেছে এবং যে প্রাপ্ত হবে পরকালের গৃহ। নিশ্চয় জালেমরা সফলকাম হবে না।(৩৭)

ফেরাউন বলল, হে পরিষদবর্গ, আমি জানি না যে, আমি ব্যতীত তোমাদের কোন উপাস্য আছে। হে হামান, তুমি ইট পোড়াও, অতঃপর আমার জন্যে একটি প্রাসাদ নির্মাণ কর, যাতে আমি মূসার উপাস্যকে উকি মেরে দেখতে পারি। আমার তো ধারণা এই যে, সে একজন মিথ্যাবাদী।(৩৮)

ফেরাউন ও তার বাহিনী অন্যায়ভাবে পৃথিবীতে অহংকার করতে লাগল এবং তারা মনে করল যে, তারা আমার কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে না।(৩৯)

অতঃপর আমি তাকে ও তার বাহিনীকে পাকড়াও করলাম, তৎপর আমি তাদেরকে সমুËেদ্র নিক্ষেপ করলাম। অতএব, দেখ জালেমদের পরিণাম কি হয়েছে।(৪০)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.