নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি সেলিনা জাহান প্রিয়া , জন্ম পুরান ঢাকা, নাজিরা বাজার , নানা বাড়িতে ।বাবার বাড়ি মুন্সী গঞ্জ , বড় হয়েছি ঢাকা ।স্বামীর বাড়ি কিশোরগঞ্জ ।ভাল লাগে ঘুরে বেড়াতে , কবিতা , গল্প , উপন্যাস পড়তে অজানাকে জানতে । ধর্ম বিশ্বাস করি কিন্তু ধর্ম অন্ধ না ।

সেলিনা জাহান প্রিয়া

পৃথিবির প্রতিটি গল্পের শুরু আছে শেষ নাই শুধু। আমার লিখা কবিতার সাথে গল্পের সাথে আমার জিবনের কোন মিল নেই , আমি লিখি লিখিকা হবার জন্য নয় । ভাল লাগে তাই । অনেকই মনে করে আমি ব্যক্তি জীবনে খুব কষ্টে আছি । আসলে সুখ দুঃখ নিয়েই জীবন ।, অন্য ১০ জন মানুষের মতেই আমার জীবন ।

সেলিনা জাহান প্রিয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প @ অ-মানব’-(২৯ তম পর্ব)

২৪ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ৩:৩৩



———————— সেলিনা জাহান প্রিয়া



কাজের মেয়ে মিতা রাতের বেলা একা একা ছাদে বসে থাকে। এটা নিয়ে রেবেকা বেগম তাকে বহু দিন বকাঝকা করে ঠিক করতে পারে নাই। যখন মিতার মন খুব খারাপ থাকে তখন সে সারারাত ছাদে থাকে। আজ মিতার মন খারাপ কারন ড্রাইভার আলি তাকে ধমক দিয়েছে। আলি চা চাইলে মিতা তাকে চা দেয় নাই এই জন্য তাকে বান্দি বলেছে।
আমজাদ সাহেব বসে টেলিভিশন দেখছে। রেবেকা বেগম মিতা কে না পেয়ে অ-মানব কে ডাক দিল।
—- সালাম আম্মা জান।
—- অ-মানব তুমি কি মিতা কে দেখেছ?
—- জি আম্মাজান ছাদের দিকে যেতে দেখেছি।
— যাও ওকে একটু ডেকে আনো।
— আম্মাজান ওকে ডাকলে বা এই বিষয়ে বকা দিলে এই কাজটা সে বারবার করবে।
— তোমাকে যা বলেছি তাই কর।
— আমজাদ সাহেব হেসে বলল তা অ-মানব। না ডাকলে কি আসবে?
— হা আসবে একটা কাজ করতে হবে?
— কি কাজ বল।
— আলি মিয়া কে দিয়ে ডাকাতে হবে। এবং বলতে হবে সে যেন মিতা কে ছাদ থেকে
আনে।
—- কেন?
—- সমস্যা সে তো করেছে।
— আচ্ছা তুমি আলি কে ডাক।
অ- মানব ড্রাইভার আলি কে বলল – বড় স্যার তোমাকে ডাকছে।
—- আমাকে কেন?
—- এটা কি আমি জানি বাড়ির মালিক কেন কাকে ডাকে।
আমজাদ সাহেবের সামনে আলি এসে বলল স্যার আমাকে ডাকছেন।
— হা মিতা কে ছাদ থেকে ডাক।
— স্যার আমি তো ওর সাথে কথা বলি না।
— কেন?
—- যে কোন কাজের কথা বললে বলে আমি পারব না।
—- এই অ-মানব ও তো মিতার সাথে কথা বলে না।
—- স্যার আপনার বাড়ি আপনার লোকজন আপনার কথা শুনে না। আপনি ডাকতে
বলেছেন সে যাচ্ছে না। কত অসম্মান করছে আপানকে।
—- আমজাদ সাহেব তাই তো।
—- রেবেকা বেগম বলল হে অ-মানব তুমি তো গেলে না।
— আমি তো বাবুর্চি আমার কাজের সাথে তো কাউকে ডাকার সম্পর্ক নাই।
—- আমজাদ সাহেব বলল রাইট। এই বাসায় যে যার কাজ করবে।
—- অ-মানব বলল এই বাসার সমস্যা হল এটাই। সবাই কাজ ফাকি দিতে চায়।
ঠিক আছে আমি ডাকতে গেলাম কিন্তু মিতা ছাদে যায় একা একা কাদে এটা একটা মানসিক রোগ। এই রোগে মানুষ যে কোন সময় মারা যেতে পারে। তখন আপনারা সবাই বিপদে পরবেন।
— রেবেকা বেগম বল কি অ-মানব।
— হা আম্মাজান। এরা অল্প তে খুব অভিমান করে। তবে এদের সাথে ভাল ব্যবহার করলে তারা ভাল হয়ে যায়।
— আমজাদ সাহেব বলল আলি তুমি মিতা কে ডেকে আনো। আর যদি না আসে
তবে চাবি রেখে রাতেই এই বাসা ছেড়ে যাও।
—- জি স্যার যাচ্ছি।
মিতা ছাদের কোনায় বসা। আলি এসে বলল মিতা তোমাকে বড় স্যার ডাকে
—- আমি একটা বান্দি তুমি বান্দি কে ডাকতে আসছো কেন?
—- আমি ভুল বলেছি কারন আমি হলাম গোলাম। এটা আমি ভুলে গিয়েছিলাম। এখন তুমি আমার সাথে না গেলে আমার চাকুরী থাকবে না। এখনি আমাকে চলে যেতে হবে এই বাড়ি ছেড়ে।
— মিতা বল কি? খালুজান এমন কথা বলতে পারলো। না তোমার চাকুরী চলে যাবে এটা হতে পারে না। চল আমি যাব। মিতা এসে বড় স্যারের সামনে দাঁড়ালো।
আলি বলল স্যার ভুল আমার হয়েছে আমি মিতা কে বকা দিয়েছিলাম। মিতা বলল
খালুজান আপনার কিছু লাগবে। রেবেকা বেগম বলল যা দেখে আয় পারু আর দুলাল কি করে? মিতা তাদের দেখতে যায়। রেবেকা কিছুটা অবাক হল। মিতা ছাদে গেলে এই রাতে সে ছাদেই থাকে কিন্তু আজ চলে আসলো। আমজাদ সাহেব আলি কে এত কঠিন কথা বলল। বাসার সব কাজ অ-মানব একা একা করে। এটা কি মানুষ না কি দানব।
সকালে মালি বাগানে দেখে সব গাছে পানি দেয়া। ছাদে সব গাছে পানি দেয়া। সারা বাড়ি ঝাড়ু দেয়া। সকালে সবার নাস্তা ৮ টার মধ্য রেডি। সবার কাপড় ইস্ত্রি করা। বাজারের ব্যাগ নিয়ে রেবেকা বেগমের সামনে এসে দাঁড়ালো।
একটা বড় বাজারের ফর্দ। রেবেকা বেগম বলল – এত বড় ফর্দ কেন? আম্মাজান যে বাজার গুলো মাসে একবার করা দরকার সেই গুলো একবারেই আনলে সময় কম লাগে এবং অনেক আয় হয়।
মাসে কত চাউল ডাইল লবণ তেল। চিনি চা পাতা। মসলা। সাবান আর অন্য সব কিছু। আর আম্মজান আপনি যদি নিজে বাজার করেন তাহলে আপনি বাজার থেকে দাম দর করে যেই টাকা বাচবে তা দিয়ে প্রতিমাসে একটা করে ভাল কাজ করতে পারবেন।
—- রেবেকা বেগম বলে আমি বাজার করব। তুমি আমাকে বাজারের কথা বলতে পারলে অ-মানব।
—- খালামনি আমার কথায় কষ্ট পেলে ক্ষমা করবেন। যদি একটু বলার সুযোগ দেন
তা হলে বলতে পাড়ি।
—- আমার মেজাজ খারাপ কর না সকাল বেলা। তা তুমি বাজারে গেলে এখন নাস্তা
দিবে কে।
—- আম্মাজান নাস্তা টেবিলে সবার মেনু মতে বানানো আছে। ফ্লাক্সে গরম পানি
দেয়া আছে যে যার চা খেতে পারবে।
—- রেবেকা বেগম দেখল সব ঠিক। অ-মানব কে বলল কত লাগবে। বাজারে অ-মানব বলল। আপনি আমাকে দেন। বাসায় এসে সব হিসাব দিচ্ছি অ-মানব টাকা নিয়ে বাজারে চলে গেল সাথে নিয়ে গেল আলিকে। আজ আলির মন খুব খারাপ। কারন এত দিন আলি বাজার করত আজ অ-মানব বাজার করছে। আলি সব সময় অ-মানবের দিকে খেয়াল রেখেছে। কিন্তু অ-মানব বাজার সব হিসাব মত করে বাসায় ফিরে এসেছে। রেবেকা বেগম বাজার দেখে অবাক। আজ খুব সুন্দর বাজার হয়েছে। রেবেকা বেগমকে টাকা হিসাব করে দিয়ে বলল। আজ বাজার থেকে ১২ শত টাকা বেঁচে গেছে। এটা আপনি নিজের মত করে জমা রাখেন। রান্না করতে অ-মানব রান্না ঘরে চলে যায়। চালক আলি এসে রেবেকা বেগমকে বলে আম্মাজান এই মানুষ টা একটা চোর। সারা বাজার ঘুরে বাজার করেছে। আর আমার হিসাব মতে সে বার শত টাকা চুরি করেছে। রেবেকা বেগম বলল – তোমাকে তো হিসাব করে টাকা দেই। সব সময় বল টাকা কম পরেছে। আজ তো টাকা কম পড়ে নাই। অ- মানব আমাকে বার শত টাকা ফেরত দিল। যাও নিজের কাজ কর। রেবেকা বেগম রান্না ঘরে এসে দেখে অ-মানব নিজের মনে কাজ করে চলছে। রেবেকা বলল
—-এত সুন্দর করে কাজ করা তুমি কোথায় শিখলে।
—- আম্মাজান আমরা গরীব মানুষ। আমাদের কাজ করে খেতে হবে। তাই কাজ কে
ভালবাসি।
— তা তুমি এত সুন্দর কাজ পার। কোন মালিক তো সহজে তোমাকে কাজ থেকে
বাদ দিতে চাইবে না।
— আম্মাজান ঠিক বলেছেন। এই যে আপনি কত সুন্দর। আপনার আর কত বয়স ৫০ হবে। কিন্তু আম্মা দেখুন আপনাকে নিয়ে কেউ ভাল কিছু বলতে পারে না।
যেমন আপনি চাইলে অনেক কিছু করতে পারেন। আম্মাজান মানুষ কাজের মধ্যে
বেঁচে থাকে। আপনি যদি কোন দিন মরে যান তাহলে আপনাকে নিয়ে আপনার মেয়ে মেয়ের জামাই নাতি পুতি সবাই কি বলবে জানেন।
— কি বলবে?
— বলবে মেয়েরা, আমার মা কোন কাজেই পারত না। জামাই বলবে শাশুড়ির হাতের একদিন রান্না খেলাম না। নাতই পুতি বলবে আমাদের নানু ছিল খুবোই অলস। আর কেউ কোন কাজ না করলে বলবে। একদম রেবেকা বেগম হয়েছে।
— রেবেকা বেগম বলল তুমি ঠিক কথা বলেছ তো। আসলেই আমি কিছু পাড়ি না।
— আম্মাজান আমি যা যা জানি আপনাকে শিখিয়ে দিব।।
—- আম্মাজান কাজের মধ্যে কোন লজ্জা নাই। আপনি কাজ জানলে কেউ আপনাকে
ভুল শিখাতে পারবে না।
রেবেকা বেগম নিজ ঘরে বসে ভাবছে। এই ছেলেটা তো ঠিক কথা বলেছে।
পারু অ-মানব কে ডেকে বলল। আমার খাবার আমার ঘরে দিয়ে আসতে। তাই অ-মানব খাবার নিয়ে পারুর ঘরে গেল।
পারুর স্বামী অ-মানব কে বলল। অহ তুমি নতুন কাজের মানুষ।
— অ-মানব মাথা নেরে বলল জি স্যার।
— তা শুনলাম তুমি নাকি হে একাই সব কাজ করে ফেল।
—- জি স্যার আমি একাই সব কাজ করে ফেলি।
—- তা কি কি কাজ করতে পার?
—– স্যার মানুষের কাজের কোন শেষ নাই। তবে আমি এক সাথে বার রকমের
কাজ পাড়ি।
—- যেমন।
—- যেমন ভাতের চাউল গরম পানিতে দিয়ে। শাক সবজি কেটে ফেলি। ভাত রান্নার সাথে সাথে আরও পাঁচটা কাজ শেষ করতে পাড়ি।
—- খুব ভাল। আমার জামা কাপড় ধোঁয়া খুব সুন্দর হয়েছে।
—- থ্যাংকস স্যার।
—- বাহ ইংলিশ এ থ্যাংকস।
—- স্যার আপনি কি করেন। সারাদিন দেখি ঘরের মধ্যে থাকেন রাতের বেলা বের
হন।
—– একটা চাকুরী ছিল। এখন নাই। নতুন কাজ না হলে বাহির হয়ে কি করব।
—- স্যার আমি একটা কথা বলি। না কাদলে মা শিশুকে দুধ দেয় না।
কেউ আপনাকে ডেকে কাজ দিবে না। বরং কাজের জন্য বের হন কাজেই
আপনাকে পছন্দ করে নিবে।
পারু বলল — আমার বাবার কি টাকা কম আছে। কাজ করতে হবে না। তুমি তোমার কাজ কর। ওর অফিসে কয়দিন ঝামেলা চলছে। ঝামেলা শেষ হলেই কাজে যাবে।
—– জি আপা ঠিক আছে। আপনার পছন্দের রান্না এখানে সব আছে।
—- দুলাল বলল আচ্ছা অ-মানব তোমার সাথে পরে কথা হবে।
—- অ-মানব হেসে বলে স্যার। নারীদের কথায় চলবেন না। কারন এই বাসার কেউ
কাজ জানে না। তাই একদিন আপনিও অকাজের হয়ে যাবেন। আমি আসি। রাত বারটা দারোয়ান, ড্রাইভার, মালি মিলে গল্প করছে। এমন এক বোকা লোক এনেছিস জাফর। আমাদের সব কাজ করে দেয়। জাফর বলল গত রাতে কিন্তু বেটা অ-মানব আমার দারোয়ানির কাজ করে দিয়েছে। আলি বলল – আমার সমস্যা হয়েছে বাজার থেকে যা ইনকাম হত তা শেষ। দেখ তোমাদের ইনকাম শেষ হবে।
অ-মানব আমজাদ সাহেবের পায়ে তেল মালিশ করে দিচ্ছে আর বলছে স্যার আমি
মনে করি সকালে আপনার হাটা উচিৎ। তাহলে আপনার শরীরের সব ব্যাথা চলে যেত। আর স্যার বাগানের কাজ যদি ভোর বেলা করেন তাহলে প্রকৃতির সাথে আপনার মনের সম্পর্ক হত। আপনি যা পড়েছেন তা লিখতে শুরু করতেন। আপনার লিখা পরে এই সমাজের কিছু মানুষ মানুষের মত জীবন পেত।
—- আমজাদ সাহেব অ-মানবের দিকে চেয়ে বলল তুমি ঠিক বলেছ। আচ্ছা কাল থেকে তুমি আমি এক সাথে কাজ শুরু করব।।

চলমান ———–

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.