নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি সেলিনা জাহান প্রিয়া , জন্ম পুরান ঢাকা, নাজিরা বাজার , নানা বাড়িতে ।বাবার বাড়ি মুন্সী গঞ্জ , বড় হয়েছি ঢাকা ।স্বামীর বাড়ি কিশোরগঞ্জ ।ভাল লাগে ঘুরে বেড়াতে , কবিতা , গল্প , উপন্যাস পড়তে অজানাকে জানতে । ধর্ম বিশ্বাস করি কিন্তু ধর্ম অন্ধ না ।

সেলিনা জাহান প্রিয়া

পৃথিবির প্রতিটি গল্পের শুরু আছে শেষ নাই শুধু। আমার লিখা কবিতার সাথে গল্পের সাথে আমার জিবনের কোন মিল নেই , আমি লিখি লিখিকা হবার জন্য নয় । ভাল লাগে তাই । অনেকই মনে করে আমি ব্যক্তি জীবনে খুব কষ্টে আছি । আসলে সুখ দুঃখ নিয়েই জীবন ।, অন্য ১০ জন মানুষের মতেই আমার জীবন ।

সেলিনা জাহান প্রিয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প @ অ-মানব’- (৩০ তম পর্ব)

২৪ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ৩:৩৪

আমজাদ সাহেব খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে ডাকতে গেল অ-মানব কে । কিন্তু অ-মানব কে দেখে
আমজাদ সাহেব অবাক বাগানের মাঝ খানে ধ্যান ধরে বসে আছে । হাত দুটা বিশেষ কায়দায় উপরের দিকে করে ।
—- এই অ-মানব
—- স্যার আপনার পায়ে দু ই জাতের জুতা । একটা ম্যাডামের অন্য টা আপনার ।
—–আমজাদ সাহেব পায়ের দিকে চেয়ে একটু অবাক হয়ে বলল তোমার তো চোখ বন্ধ ।
কি করে দেখলে ?
—- স্যার আমার চোখ বন্ধ কিন্তু অন্তর তো বন্ধ না। যেমন স্যার আকাশ দেখে কি বুঝা যায়
আমরা ভেসে আছি এই আকাশের মাঝে ।
—- না বুঝা যায় না।
—– ঠিক আমি স্যার বলতে চাই আপনার মনটা আকাশের মত বড় । কিন্ত আপনি পৃথিবীর খবর
রাখেন না।
—- আরে দাড়াও । জুতা বদলে আসি ।
—- স্যার যেতে হবে না। কারন এত ভোরে কেউ ঘুম থেকে উঠবে না। শুধু পশু পাখি ছাড়া ।
—- ঠিক বলেছ অ-মানব । অনেক দিন পড় সকালে ঘুম থেকে উঠলাম । সকালের মিষ্টি বাতাস
খুব মজা ।
—- স্যার তাই তো সকালে পশু পাখি জেগে উঠে । কারন যারা সকালে ঘুম থেকে উঠবে তারা
সকালের তাজা বাতাস পাবে । ফুসফুস তাজা বাতাস মনে শরীর তাজা ।
—-অ-মানব এখন চোখ খুল ।
—- স্যার আপনি আমার কাছে আসুন । শরীর থেকে জামা টা খুলে একটা ধ্যান করুন ।
—- ধ্যান করলে কি হবে ?
—- স্যার জগতের সব মহা মানব ধ্যান করত । যেমন । গৌতম বুদ্ধ । বট গাছ তলে । ইসলামের
শেষ নবী মোহাম্মদ সাঃ হিরা পর্বতে ।
—- ঠিক তো । আমি চিন্তা করি নাই ।
—- ধ্যান হল স্যার আপনার জীবনের প্রাথমিক স্কুল । যদি পাশ করেন তার পড় স্যার হাই স্কুল ।
—– তুমি এত কিছু কি করে জান ।
—– স্যার আমি তো ভাল রান্না করি । তো দেশের বিভিন্ন জেলায় অনেক দিন পীরদের আস্তানায়
রান্না করেছি । তখন পীরদের কাছে থেকে শিখেছি । যে পীর রা মানুষ কে কি করে বোকা
বানায় ।
—- ভাল তো স্যার আজ কি গাছে যত্ন নিবেন । না কি ধ্যান করবেন ।
—- কোনটা করলে ভাল হয় ।
—- আসুন স্যার আগে ৩০ মিনিট ধ্যান ।
আমজাদ সাহেব কে অ-মানব ধ্যানে বসিয়ে বলল স্যার আপনি আজ চেষ্টা করুন । চোখ বন্ধ করে
৩০ মিঃ থাকতে । ৩০ মিনিট হলে আমি আপনাকে বলব । এমন এক সময় আসবে কত মিনিট হয়েছে আপনি নিজেই জেনে যাবেন । আমজাদ সাহেব ৩০ মিনিটের ধ্যানে বসা । অ-মানব আমজাদ সাহেব কে রেখে চলে যায় রান্না ঘরে । খুব সুন্দর করে চা বানায় । সাথে নিয়ে আসে গরম
দুইটা রুটি আর একটা খাতা কলম । অ-মানব আমজাদ সাহেব কে বলে স্যার ৩০ মিনিট হয়েছে । আমজাদ সাহেব বলল
——খুব শীত লাগছে ।
—– স্যার গরম চা খান । খুব ভাল লাগবে ।
—– আমজাদ সাহেব বলল চা কোথায় পেলে ।
—– স্যার বানিয়ে আনলাম । সাথে গরম পাতলা রুটি ।
—- আমজাদ বলল তুমি তো বাবু আমাকে রীতি মত চমক দেখালে ।
এটা আমার জিবনে একটা অন্য রকম চমক ।
—- স্যার আপনি ধ্যানে বসে মনে মনে গরম চায়ের কথা চিন্তা করছিলেন ।
—- আরে একদম ঠিক ।
—- স্যার একমাস সকাল বিকাল ধ্যান করলে কার মনে কি আছে জেনে যাবেন ।
তখন স্যার খুব মজা হবে।
আমজাদ চা আর রুটি শেষ করে বলল । খাতা কেন । খাতা দিয়ে কি হবে অ-মানব ।
— স্যার আপনার মালি কি বলবেন বাগানে কি কি গাছ আছে । তার নাম আপনি
লিখবেন । আর যা মালি চিনে না। আপনি আপনার মোবাইল দিয়ে ছবি তুলবেন ।
—- তার পড় ।
—- স্যার ইন্টার নেট থেকে এবং বই থেকে কি গাছ কি ভাবে যত্ন নিতে হয় । তার
উপর একটা ধারনা নিবেন । এত গাছ কিন্তু ফুল আর ফল নাই কেন । এটা
আপনার জানা দরকার । স্যার নিজের হাতের লাগানো গাছের ফুল ফল সবজি
আলদা একটা মজা দেখে খেয়ে ।।
——আমজাদ সাহেব বলল তুমি কোথায় যাও ।
—– বাসার অন্য সবার নাস্তা বানাতে ।
আমজাদ সাহেব বাগানে প্রবেশ করে দেখে বাগানে আজ একটাও ময়লা নেই ।
আমজাত সাহেব ভীমরুল খাঁ মালি কে ডাক দিল । এই ভীমরুল খাঁ ।
ভীমরুল খাঁ লাফ দিয়ে উঠে আমজাদ সাহেবর কাছে এসে দাঁড়ালো । আমজদা সাহেব
বলল সকাল ৬.৩০ টা বাজে । কয়টা থেকে কাজে লাগার কথা । শুনি ।
— স্যার ৫.৩০ মিনিট থেকে ।
—-এখন কয়টা বাজে । এটা কি মামার বাড়ি । এক বিঘা একটা বাগান । তাই না
এখন চল আমার সাথে । পিছন থেকে অ-মানব স্যার আপনার জুতা আর
মেডিসিন ।
— অহ । থ্যাংকস । বুদ্ধিমান ছেলে । এই ব্যাটা ভীমরুল খাঁ । দেখ কাজ কাকে বলে ।
আমজাদ সাহেব প্রতিটা গাছের নাম নাম লিখছে । সারা বাগানে মাত্র দেসি কিছু
গাছের নাম পেল । বাকি ৭০% গাছের নাম আমজাদ সাহেব জানে না। ভীমরুল খাঁ
জানে না। আমজাদ সাহেব যেন নিজেই আজ নিজের কাছে অচেনা ।

রেবেকা বেগম রান্না ঘরে । অ-মানব বলল আম্মাজান আপনি এত সকালে ।
আর বল না অ-মানব । কাল সারারাত ঘুমাতে পাড়ি নাই । বিয়ে হয়েছে ৩০ বছর
কেউ তোমার মত করে বলে নাই । আমাকে আজ থেকে রান্না শিখাও । আর মিতা কোথায় ।
— আম্মাজান মিতা তো নয়টার আগে ঘুম থেকে উঠে না।
—- এটা কোন কথা হল ।
—– আম্মাজান আগে আপনি সাত দিন ঘুম থেকে উঠে স্যার কে নিয়ে একটা বাগানে
সময় দিন । পরে আমার সাথে রান্না । এই সাত দিন কাউকে কিছু বলবেন না।
যদি তাদের নিজেদের লজ্জা সরম থাকে তখন দেখবেন নিজ থেকে কাজ করছে ।
—- রেবেকা একটু হেসে বলল । বাবা তুমি কিন্তু আসলেই একটা চমৎকার ছেলে ।
এত কিছু কিভাবে শিখলে ।
—- আম্মাজান মানুষ যে খানে ঠেকে সেই খানেই শিখে । শিক্ষার কোন শেষ নাই ।
এই যে আপনি কত লিখা পড়া করা একজন মানুষ । আপনি বলুন এই লিখা
পড়া এখন কোন মানুষের কাজে লাগছে । কিন্তু আমি রান্না পাড়ি তাই আমার
একটা কাজ আছে । মানুষ তো কাজের মধ্যে বেছে থাকে ।

আমজাদ সাহেবের একমাত্র ছেলে রাজ । একটু অন্য রকম । বাসার কারো সাথে
তেমন কথা বলে না। কে আসলো কে গেল কোন কিছুর খবর রাখে না। এই পর্যন্ত
অ-মানবের সাথে দেখা হয় নাই । যখন যা লাগবে সব কিছু মা । বাসা থেকে বের হলে সবাই তাকে ভয় পায় । দারোয়ান জাফর তার আসা যাওয়ার সময় হিসাব করে রাখে ঠিক ঐ সময় সে গেইটের সামনে থাকে । অ-মানব সিঁড়ি ঝাড়ু দিতেছে এমন সময় রাজ নামছে । মিতা এসে বলল – এই যে সিঁড়ি থেকে সরেন ছোট স্যার নামবে ।
—- ওকে ঠিক আছে ।
—- আপানকে আম্মাজান ডাকছে ।
অ-মানব ঝাড়ু হাতে নিয়ে আম্মাজানের সামনে এসে দাঁড়ালো ।
— কি অ-মানব কি কাজ এখন ।
— আম্মাজান সিঁড়ি ঝাড়ু দিব । পানি দিয়ে মুছব ।
— না তোমাকে করতে হবে না। এই মিতা এই দিকে আয় । এই গড়ি রাখ ।
আমি দেখলাম এই ছেলে এই ঝাড়ু আর মুছার কাজ ৩৫ মিনিটে করে । অ-মানব
তোমার খাতায় টাইম কত লিখা ।।
—- আম্মাজান ৩৫ মিনিট ।
— ঠিক আছে । মিতা কি কি কাজ করবে আমি দেখে দিচ্ছি ।
—- এই মিতা আমার দুই মেয়ে কে ডেকে আন ।
সায়লা পারু এসে হাজির । আম্মা জান ডেকেছেন ।
—- হা দুই জন দুইটা খাতা নিয়ে এক ঘণ্টা পরে আমার সামনে আসবে । যাও ।
মিতা তুমি এখন ৩৫ মিনিটে ঝাড়ু মুছার কাজ শেষ করে আমার সামনে আসো ।
অ-মানব আমাকে নিয়ে বাজারে চল । যেই বাজারে মেয়ে বাজার করে ।
—- জি আম্মাজান । ১১ টায় বাজারে যাব ।
আমজাদ সাহেব রেবেকার কথা শুনে হাসছে । তুমি বাজারে যাবে ।
—- সাহেব কি নিয়েই যাব । কোন কাজ না করতে করতে আমরা সব আলসের
সরদার হয়েছি । এত টুকু ছেলে কাজ করে । মাগো । রান্না বান্না কাপড় কাচা । ঝাড়ু মুছা , বাজার , ঘর গোছানো । আমাদের কখন কি লাগবে । এটা আমি
দেখে আবাক । এমন সময় রাজ মায়ের কাছে এসে বলল মা টাকা লাগবে । কত টাকা
বাবা । দাও হাজার দশেক ।
— আচ্ছা দিছি ।
—- অ-মানব ছেলের চোখের দিকে তাকিতে অবাক হয়ে আছে । এমন সময়
রাজ বলল কি ব্যাপার তুমি কে আর আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছ কেন ।।
—- রেবেকা বলল এ আমাদের বাবুর্চি বাবা ।
— ও কত কয়দিন তোমার রান্না খাচ্ছি ।।
—- অ-মানব বলল জি ভাই জান ।।
—- আমাকে ভাই জান বলবে না । ছোট স্যার বলবে ।
—- জি ভাইজান ।
—– আবার ভাই জান বললে কেন । একবার বললে কি কানে শুনা যায় না।
—– জি ভাই জান যায় ।
—- আবার ভাই জান ।
—– জি আবার
—- এই ব্যাটা আবার কি ?
—- ভাই জান ।
—- তোমাকে একটা চর দিব কিন্তু
—- আমারও তো হাত আছে ।
—- কি আমাকে মারবে ।
—- না ভাইজান ফিরাব । আমি কেরাটি মাইর এ পুরুস্কার পাওয়া মানুষ ।
আর কিছু দিন কোন ফু শিখেছি , বলে একটা হাসি দিয়ে বলল । আপনি আমাকে
যতই মারেন আমি কিন্তু ভাইজান ডাকবো ।
—-এত দেখি পাগল আম্মু ।
সবাই হেসে দিল । এমন সময় রাজ বলল আসলেই এই বাড়িতে সব পাগল থাকে ।
তা এই পাগলের নাম কি আম্মু ।
— ওর নাম অ-মানব ।
—- কি অ-মানব । এটা কি নাম । এই অ-মানব । তোমার এই নামের মানে কি ?
—- স্যার আমি মানব হতে চাই কিন্তু পাড়ি না।
—- কেন পার না।
—- ভাইজান যারা মানব তারা মানুষ কে বিশ্বাস ও করে অবিশ্বাস ও করে ।
তারা স্বার্থ ছাড়া কিছুই করে না। তাদের সব কিছুই চাই আর চাই । মোট
কথায় তারা ভোগে আনন্দ পায় । তাদের মাঝে লোভ লালসা সুখ দুঃখ আছে ।
কিন্তু আমার মাঝে কিছুই নাই । মানব হতে চেষ্টা করি কিন্তু পাড়ি না।
—- বাহ চমৎকার । মানুষ হতে কত দিন লাগবে ।
—- ভাই জান আপনার শরীরে কোন বিষ ফুরা হয় । এটা কবে পেকে বের
হবে আপনি বলতে পারবেন । বা আপনি যে ছবি তুলেন তা কেমন হবে না দেখে
কি বলতে পারেন ।।
—- না পাড়ি না।
—- আমিও কবে মানুষ হব বলতে পাড়ি না।
—- তা কি বলতে পার ।
—– ভাই জান এটা সবার সামনে বলতে চাই না। তবে আমি বলতে পাড়ি আপনি
রেগে যাবেন । তবু বলছি আপনি আজ যাকে নিয়ে সময় ব্যয় করবেন ।
তাকে বলবেন । আমারা বাবা তার সব সম্পদ আমার দুই বোনের নামে লিখে
দিয়েছে ।
—- কাকে বলব ।
—- আজ সন্ধ্যায় যে বন্ধু নিয়ে চাইনিজ খাবেন ।
—– রাজ বলল পাগলের দল । মা আমি যাই । আমার কাজ আছে ।

চলমান ———–

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৩:৪৯

প্রামানিক বলেছেন: এপর্বও ভাল লাগল। ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.