নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি সেলিনা জাহান প্রিয়া , জন্ম পুরান ঢাকা, নাজিরা বাজার , নানা বাড়িতে ।বাবার বাড়ি মুন্সী গঞ্জ , বড় হয়েছি ঢাকা ।স্বামীর বাড়ি কিশোর গঞ্জ ।ভাল লাগে ঘুরে বেড়াতে , কবিতা , গল্প , উপন্যাস পড়তে অজানাকে জানতে । ধর্ম বিশ্বাস করি কিন্তু ধর্ম অন্ধ না ।

সেলিনা জাহান প্রিয়া

পৃথিবির প্রতিটি গল্পের শুরু আছে শেষ নাই শুধু। আমার লিখা কবিতার সাথে গল্পের সাথে আমার জিবনের কোন মিল নেই , আমি লিখি লিখিকা হবার জন্য নয় । ভাল লাগে তাই । অনেকই মনে করে আমি ব্যক্তি জীবনে খুব কষ্টে আছি । আসলে সুখ দুঃখ নিয়েই জীবন ।, অন্য ১০ জন মানুষের মতেই আমার জীবন ।

সেলিনা জাহান প্রিয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাবার নষ্ট হাত ঘড়ী .....

১৯ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ২:৩০





সন্ধ্যা বেলা বাহিরে মসজিদে আযান হচ্ছে । বাসায় বসে টিভি দেখছি এমন সময় মা চিৎকার দিয়ে আযান হচ্ছে নবাব জাদা । আমি টিভি অফ করব ঠিক তখনেই টিভি তে দেখাচ্ছে মাগরিবের আযান । আমি ও সাউন্ড বাড়িয়ে দিলাম । মা নিজে নিজেই হাসচ্ছে আর বলছে সাউন্ড কমিয়ে দেখ - আমি নামজ শেষ করে তোমার চা দিচ্ছি । কিছু ক্ষণ পড়ে মা চা নিয়ে এলেন আমার জন্য । “কয়টা বাজে রে ?” বলে দেয়াল ঘড়িটা দিকে তাকালেন ।
শুন তোর বাবার হাত ঘড়িটা নষ্ট । আমি শুনে না শুনার ভান করে রইলাম ।
কি রে শুনছিস জমিদার বাড়ী পুত্র । তোর আব্বার ঘড়ি নষ্ট । একটা নতুন ঘড়ি কিনতে বললাম , কিছু বলেনা । নষ্ট ঘড়ি পড়ে কেউ বাহিরে যায় ?

আমি চুপ করে চা খেতে লাগলাম আর বললাম মা তোমার ভাইয়েরা তো ভগ্নী পতিদের ভাল একটা ঘড়ী উপহার দিতে । মা হেসে বলল আমার শ্বশুর সাহেব যৌতূক দিয়ে কোন পুত্র বধু আনে নাই । আমার দিকে তাকিয়ে বলল তুমিও সেই আশা কর না । দেয়াল ঘড়িটার দিকে তাকালাম । সিকো ঘড়ীর দিকে তাকিয়ে কিছুটা অতীতের ফিরে আসা হলো মনে…

ক্লাস সিক্স তে পড়ি তখন । সবাই জাপান ক্যাসিও কালো ঘড়ি পড়ে স্কুলে যায় । আমার নাই । স্কুল থেকে ফিরে সন্ধ্যায় আব্বাকে বললাম “আব্বু , আমার জন্য একটা ঘড়ি আনবা ক্যাসিও , ঠিক আছে ? কালো ।”

“আচ্ছা এনে দিবো কালকে ।” আব্বার আশ্বাস ।

পরদিন স্কুল থেকে বাসায় এসে ছটফট করছি আব্বা কখন আসবে ! নতুন ঘড়ি পড়বো , কি মজা !

আব্বা এলেন , কিন্তু ঘড়ি আনেননি । ভূলে গেছিলেন । আমি কান্নাকাটি শুরু করলাম । আমার জন্য কিছু মনে থাকে না। একা একা অনেক কান্না করলাম ।
আব্বু একটা ধমক দিয়ে বলল যাও ঘুমাও গিয়ে ।মা বলল কাল যেভাবেই হোক কিনে আনবেন । আমি শুনছিলাম না । তিনি অপরাধীর মত মুখ করে বসে রইলেন । রাতে না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম ।

পরদিন সকালে স্কুলে যাচ্ছি আমার মুখ কান্না কান্না । বন্ধুদের বলেছিলাম আজ নতুন ঘড়ি পড়ে যাবো । ঘড়ি তো নেই । আমি স্কুল গেইটে সামনে আসতেই দেখি আব্বু দাড়িয়ে । আমাদের স্কুল শুরু হতো ১১.৩০ মিনিতে । আব্বু খুব সকালে বাইতুল মোকারাম থেকে ঘড়ী কিনে নিয়ে এসেছে । আমি নাস্তা না করেই স্কুলে এসেছিলাম । আব্বু আমাকে নিয়ে স্কুল গেইট সামনে থেকে কেক কিনে দিল । আমি তো ঘড়ী পেয়ে মহা খুশী । কি ভাব - তখন একটা জাপানি ঘড়ী মানেই সেই রকম ভাব । সব বন্ধুরা আমার ঘড়ী এক বার একবার ঘরে হাতে দিল ।
পরে জেনেছিলাম , ঐরাতে আব্বা আবার বেরিয়ে গিয়ে অনেক খুঁজে ঘড়ি পাই নাই । দোকান পাট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় । প্রচুর কষ্ট হয়েছিল তার । পরের দিন আমাকে ঘুমে রেখেই সকালে আবার ঘড়ী আনতে যায় ।
অতীত থেকে ফিরে এলাম । আমার চোখেও কিছুটা পরিবর্তন । চোখটা ভেজা ভেজা !! বুকে কেমন একটা শূন্যতা ।
আম্মার হাতে আমার হাতঘড়িটা দিলাম ।

-এইটা আব্বাকে দিও । আমার কথা বইলোনা । আমি আরেকটা কিনে নিবো পরে । আমার থেকে ঘড়ির প্রয়োজন আব্বার বেশী ।

আমি রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম । আম্মা কিছুটা অবাক !

কিছুক্ষণ পর , আম্মা আব্বাকে বলছে । আমি শুনছি ।

-নাও ঘড়ি ।
-কিসের ঘড়ি ?
-আমি তোমাকে দিলাম ।
-তুমি ঘড়ি পাইছ কই ?
-ঘড়ি এনে দেয়ার লোকের অভাব আছে ? বলে আম্মা হাসতে লাগলেন ।

ঘড়ি পেয়ে আব্বার কেমন লাগে , সেটা দেখতে পর্দার ফাঁক দিয়ে আব্বার দিকে তাকালাম ।

টিভির হালকা আলোয় দেখলাম বৃদ্ধ লোকটা ঘড়ির ডায়ালটার দিকে তাকিয়ে আছে । চোখের কোণে কিছু একটার ঝিলিক ! আনন্দ অশ্রু ! আমার মনটা ভরে উঠলো । এত অল্পতে মানুষ খুশী হয় ?!

একটা সত্য উপলব্ধি হলো । শেষ বয়সে বাবা মায়ের শখ আহ্লাদ বলতে তেমন কিছু থাকেনা । একটি ঘড়ি , কয় টাকা আর সেটার দাম ? কিন্তু পরিবার থেকেই প্রাপ্তিটাই শেষ বয়সে তাদের জন্য আনন্দের উপলক্ষ্য ।

তাদের জন্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চেষ্টাগুলোই আমাদের সন্তানের জন্য পূণ্যের অবলম্বন ।

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ২:৩৯

চাঁদগাজী বলেছেন:


ভালো মেয়ে।

২| ১৯ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ২:৫৪

محمد فسيح الاسلام বলেছেন:
কি রে শুনছিস জমিদার বাড়ী পুত্র ।

পুত্ররা মা-দের কাছে সব সময়ই এমন হয়!

৩| ১৯ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ৩:৪৭

স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন:
তাদের জন্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চেষ্টাগুলোই আমাদের সন্তানের জন্য পূণ্যের অবলম্বন ।

........................................................................................
আমি এই অনুভূতি সমূহ সবার মাঝে জাগ্রত করার জন্য বলছি
তীব্র ভাবে আকুতি জানাচ্ছি ,বাংলাদেশে একটাও বৃদ্ধাশ্রম থাকতো না - পর্ব: ১,২,৩
.................................................................
আমাদের সন্তানেরা থাকুক দুধে ভাতে !

৪| ১৯ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ৩:৫৪

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: সন্তানদের মনে রাখা উচিত পিতা মাতা কত কষ্ট করে তাদের মানুষ করেছেন...

৫| ১৯ শে অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ৭:৩০

শফিউল আলম চৌধূরী বলেছেন: আমার একটা টাইম ম্যাশিন আছে!‍ সেটায় চড়ে আমি রাত ২:৩০ এ পোষ্ট হওয়া লেখা সন্ধাতেই দেখে ফেলেছি!

নাকি একই লেখা বারবার রিপোষ্ট হচ্ছে? :/

৬| ১৯ শে অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ৮:৫১

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
আহা, জীবন। জীবন তো এমনই ।

৭| ১৯ শে অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ১০:১১

সনেট কবি বলেছেন: সহজ, সরল এবং সুন্দর।

৮| ১৯ শে অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ১১:৪৫

রাজীব নুর বলেছেন: বাবা মার জন্য সন্তানের উচিত ১০০% দায়িত্ব পালন করা।

৯| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১০:৫৮

সুমন কর বলেছেন: ভালো লেখা। +।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.