নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মাঝে মাঝে মনে হয় জীবনটা অন্যরকম হবার কথা ছিল!

শেরজা তপন

অনেক সুখের গল্প হল-এবার কিছু কষ্টের কথা শুনি...

শেরজা তপন › বিস্তারিত পোস্টঃ

এক গেরস্ত রিক্সা চালকের গল্প!

০৩ রা মে, ২০২৩ বিকাল ৪:২৭


চল্লিশে নাকি চালসে আর বয়স পঞ্চাশে আসলে হয় পানসে। হ্যাঁ খানিকটা পানসে হয় বটে কিন্তু এই সময়টা অভিজ্ঞতার ভারে পরিপূর্ণ হয়। মানুষ জীবনের ফাঁক ঝোঁক জেনে ফেলে। প্রথম যৌবনের প্রেমটাকে নেহায়েত শিশুসুলভ ফ্যান্টাসি মনে হয়। ছেলেবেলা কিংবা স্কুলের বন্ধুগুলো দূরে যেতে যেতে এতদূরে চলে যায় যে, কোন একদিন ‘বন্ধুর জন্য জান হাজির ছিল’ সে কথাগুলোকে তখন ফাঁকা বুলি মনে হয়। বাস্তবতা আর বাস্তবতার নিষ্পেষণে মানুষ এই বয়সে এসে যৌবন আর কৈশোরের সব আবেগ ভাবাবেগ হারিয়ে ফেলে। চারপাশের সবাইকে মনে হয় ছিদ্রান্বেষী আর স্বার্থপর। এসবের সাথে তাল মিলিয়ে বড় মনেরমানুষেরাও শুধু নিজেকে নিয়ে ভাবতে শুরু করে।
আহ্ কৈশোর আর যৌবনের বন্ধুত্ব! কি দুর্দান্ত দিলখোলা বন্ধনহীন সম্পর্কটাই না ছিল সেই সময়ে।
বেশ কদিন ধরে একটা গান শুনছিলাম – ওটিটি প্লাটফর্মের একটা ওয়েব সিরিজের; আধুনিক ছেলে-পেলেদের মনের ভাব প্রকাশ-পেয়েছে দারুণভাবে কিন্তু বন্ধুত্বের অর্থ সেই আদ্যিকালের পুরনোই রয়ে গেছে;

লাগলে বলিস,
জায়গায় বসে আওয়াজ দিস।
কলিজাটা ছিঁড়ে তোকে দেবো
লবণ মাখিয়ে নিস।
একা লাগলে বলিস,
মনে মনে আমার নামটা নিস,
তোর মুড অন করে দেবো,
একটা ট্রিট দিয়ে দিস।

উড়ি একসাথে মিলে মিশে-উড়ি একসাথে মিলে ঝিলে
চল বন্ধু চল- চল বন্ধু চল- চল বন্ধু…. চল


একসময় কলিজাটা ছিঁড়ে দেবার জন্য যেই বন্ধুরা ছিল আজ তারা কোথায় হারিয়ে গেছে। বাস্তবিক জীবনের চাপে ভুলে গেছে সেই বন্ধুত্বের ভাবাবেগ। আমিও পালটে গেছি অনেক। তবুও এখন শুধু হারানোর সময়; বন্ধুদের চিরদিনের জন্য হারানোর সময়, সময় এতদিন ধরে তৈরি করা কিংবা এমনি এমনি হয়ে যাওয়া সম্পর্কগুলোর চির বিচ্ছেদের- কোন একসময় সবাইকে ছেড়ে আমার চির প্রস্থান।
এই বয়সে এসে নতুন করে অকৃত্রিম বন্ধু পাবার আর সুযোগ নেই, প্রায় সব সম্পর্কগুলো পোশাকি। এখন এঁর কেউ কারো কলিজা ছিঁড়ে দিতে রাজী নয়। যার যার কলিজা সংরক্ষণে সে সে ব্যস্ত।
ব্লগ আর ফেসবুকের কিছু সম্পর্ক তবু ফেলনা নয়। বহুদূরের এই মানুষগুলো কখনো নিকটজন আর আপনজন থেকেও অনেক আপন হয়ে যায়। আমি আষ্টেপৃষ্ঠে এই সম্পর্কগুলোর সাথে জড়িয়ে থাকতে চাই। ভাবি; ব্যক্তিগত স্বার্থ, অর্থ, যশ কিংবা সামান্য নিজের লাভের জন্য কত মানুষকেই না কষ্ট দিয়েছে, কতদিনের সম্পর্কগুলো এক টোকায় ভেঙ্গে ফেলেছি। অনেক হয়েছে আর নয়। জীবনের সব ভুলগুলো এবার শুধরে নেব। সামান্য একটা সৌহার্দপূর্ণ কথায় ২০ বছরের ভেঙ্গে যাওয়া সম্পর্ক জোড়া লেগে যায়। সেই সামান্য ব্যাপারটাকে কেন আমরা সামনে আনতে চাইনা? অল্প একটু ব্যক্তি স্বার্থের জন্য হুলস্থূল গণ্ডগোল বাঁধিয়ে ফেলি। কখনো নিজের জন্য কখনো অন্য কারো জন্য।
আসুন নিজে পাল্টাই- অন্যকে পালটে যেতে উদ্বুদ্ধ করি।
যদিও প্রবাদ আছে;
ইজ্জত যায় না ধুইলে
খাইছলত যায় না মইলে।

ভাবছি সব পালটে নিব কিন্তু খাইছলত বড্ড বেশী যন্ত্রণা দেয়- আমাকে আমার বিশুদ্ধ ভাবনায় থাকতে দেয় না।

আজ থেকে প্রায় ২২ বছর আগের লেখা ‘তিন চাকায় বাঁধা জীবনে’র এই গল্পগুলোর সাথে। আমি এই বয়সে এসে উপলব্ধি-বোধের কিছু কথা শেয়ার করব। এবার চলুন মুল গল্পে। না গল্প নয় সত্য কাহিনী; সালঃ ১৯৯৮
***
আগে আমি বৃদ্ধ রিক্সা চালকদের রিক্সায় পারতপক্ষে উঠতাম না। কারন; আমার বাবার বয়সী একজন বৃদ্ধ-লোক তার সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে প্যাডেল চাপবে আর আমার মত সুস্থ সবল একজন লোক নিষ্কর্মার মত তার রিক্সায় বসে থেকে চার পাশের দৃশ্য উপভোগ করবে ব্যাপারটা আমার কাছে নিতান্তই অমানবিক মনে হত। তাছাড়া বয়স্ক রিকশাচালকরা একটু বদমেজাজি হয়।
পরে ভাবলাম ..কেন সে এই বয়সে রিক্সা নিয়ে পথে নেমেছে ? নিশ্চয়ই সখের বশে নয়। তবে কেন? কারণটা কারোই অজানা নয়।
প্রথমত: আমি না চড়লেও কেউ না কেউ তো তার রিক্সায় চড়বে ।
দ্বীতিয়তঃ আমার মত প্রত্যেকেই যদি মানবিকতার খাতিরে তার রিক্সায় না চড়ে তবে তার সেই প্রধান উদ্দেশ্য(উপার্জন) সফল হবে কি ভাবে। আর বদ মেজাজ। ওই বয়সে শুধু পেটের দায়ে যারা প্রখর রোদ আর মুষল বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে গতর খেটে উপার্জন করে তাদের শরীর ও মন ক্ষণে ক্ষণে বিদ্রোহ করাই স্বাভাবিক ।
একদিন কাঠ ফাঁটা রোদে আমি রিক্সায় হুট টেনে বসে অন্য মনষ্ক হয়ে কি যেন ভাবছিলাম। হঠাৎ রিক্সার গতি খুব মন্থর হয়ে যাওয়াতে চোখে বিরক্তি নিয়ে চালকের দিকে তাকিয়ে রূঢ় ভাষায় কিছু বলতে গিয়ে থমকে গেলাম।
প্রথম দিকে আমি তাকে ভাল করে লক্ষ্য করিনি তবে এখন খেয়াল করলাম যে চালকটি ছিল যথেষ্ট বয়স্ক । তার সারা শরীর দিয়ে দর দর করে ঘাম ঝরছে মাঝে মাঝে সে এক হাতদিয়ে হ্যান্ডলটা ধরে অন্য হাতে রাখা ত্যানার মত ভেজা গামছা দিয়ে কপালের ঘাম মুছছে। একহাতে রাখা রিক্সার হ্যান্ডল টা তখন তির তির করে কাঁপছিল।
আমি অতিরিক্ত সতর্কতার জন্য তাড়াতাড়ি হুট চেপে ধরলাম। তার অবস্থা দেখে আমার কিছুটা করুণা হল। কিছু না বলে বিরক্ত মুখে বসে রইলাম…
কিছুক্ষণ এভাবে চালানোর পরে রাস্তার পাশ ঘেঁষে একটা গাছের নিচে রিক্সাটা দাড় করাল। আমি ভাবলাম আহা বেচারা হয়তো খুব পরিশ্রান্ত হয়ে পড়েছে একটু বিশ্রাম নিক। সে অবিশ্বাস্য দ্রুত গতিতে রিক্সা থেকে নেমেই কোমড় থেকে লুঙ্গির গিট খুলে একটা ঔষুধ বের করল। সেটাকে দুভাগ করে একভাগ জ্বিহ্বার নিচে পুরে দিয়ে কিছুক্ষন ঝিম মেরে বসে রইল। ( তখন এই ওষুধটা সন্মন্ধে ধারনা ছিল না)

মিনিট পাঁচেক হয়তো এভাবে ছিল ,তার পর আবার উঠে দাড়াল। দাঁড়াল রিকসা টাকে টেনে নিয়ে চলল তার নির্দিষ্ট গন্তব্যের দিকে ঠিক আগের মত সাবলীল ভাবে।
ব্যাপারটা স্বভাবতই আমাকে একটু আশ্চর্য ও কৌতূহলী করল। তাকে জিজ্ঞেস করলাম কি জন্যে সে ঔষধ খেল?।
সে অনেকটা অনিচ্ছাকৃত ভাবে বলল,'এমনিই।'
যথাসময়ে আমি আমার গন্তব্যে পৌঁছানোর পর প্রশ্নটা তাকে আবার করলাম। তার আকস্মিক অসুস্থতার কারন। যদিও তার এই বয়সে অসুস্থ থাকাই স্বাভাবিক কিন্তু সামান্য একটু ঔষধ খাওয়ার পরক্ষণেই সুস্থাবস্থায় ফিরে আসার কারনটা জানার জন্যই তাকে প্রশ্নটা দ্বিতীয়বার করলাম।
সে মাথাটা নিচু করে কিছুক্ষণ কি যেন ভাবল তারপর মুখ উঠিয়ে আমার দিকে ছলছল চোখে চেয়ে বলল ,’কয়দিন আগে আমার হার্ট এ্যাটাক হইছিল— ডাক্তার আমারে ওই অষুধটা দিছে। কইছে যদি আবার ওই রকম খারাপ লাগে তাইলে সঙ্গে সঙ্গে যেন ওই অষুধটা খাই। আপনারে নিয়া আসার সময় আমার ওইরকম লাগতেছিল। ’ এইটুকু বলেই সে থামল।
তার প্রতি আমি যথেষ্ট সমবেদনা অনুভব করেছিলাম তখন- তার সন্মন্ধে আরো কিছু জানতে চেয়েছিলাম প্রতিউত্তরে সে যা বলেছিল তার সারাংশ তুলে দিলাম;
‘ঢাকায় এসেছে সে বছর খানেক তার পুরো পরিবার সহ । কিছুকাল আগেও সে ছিল গ্রামের একজন অবস্থাপন্ন কৃষক- গ্রামে যাকে গেরস্ত বলে। নিজের জমি তো ছিলই প্রচুর জমি সে বর্গাতেও চাষ করত। ফসল যা পেত তা থেকে খেয়ে পরে উদ্বৃত্ত্বই থেকে যেত। পরিবার বলতে সে আর তার তিনটি মেয়ে কোন ছেলে নেই। দিন বেশ চলে যাচ্ছিল। হঠৎ নদীর ভাঙ্গন তাকে সর্বস্বান্ত করে দিল গ্রাস করে নিল তার সব জমি। এ অবস্থা শুধু তারই নয় আরো অনেকেরই হয়েছিল। জমির স্বল্পতার জন্য যেসব জমি সে বর্গায় চাষ করত সেগুলি তাদের মালিকরাই চাষ করতে শুরু করল। তাছাড়া হঠাৎ তার পরিস্থিতি অবনতির জন্য সে শারীরিক ও মানসিক ভাবে খুব ভেঙ্গে পরেছিল অনেকদিন শয্যাশায়ী ছিল। তার চিকিৎসা ও সংসার খরচ চালাতে গিয়ে গচ্ছিত যেটুকু সম্পদ ছিল সেটাও বিক্রি করতে হোল। বড় মেয়ের বয়স ছিল আঠার। দেখতে হয়তো সুন্দরীই ছিল। তার দরিদ্রতা ও অসুস্থতার সুযোগে তাদেরই গ্রামের প্রভাবশালী এক ব্যক্তির বখাটে ছেলে ও তার সাঙ্গ পাঙ্গরা মেয়েটাকে কিডন্যাপ করে । প্রিয় কন্যার হঠাৎ অন্তর্ধানে সে তখন পাগলপ্রায় । অসুস্থ শরীরে চারিদিকে আতি পাতি করে তার মেয়েকে খুঁজতে থাকে। খুঁজে সে পায় ঠিকই কিন্তু জীবিত নয় মৃত।
ধর্ষণ ও অত্যাচারের অসংখ্য চিহ্ন গায়ে নিয়ে সে পড়েছিল একটা ডোবার ধারে।
এটুকু বলে রিক্সা চালকটি তার ঘাড়ের গামছা দিয়ে চোখ মুছল। পরক্ষণেই আমার দিকে তাকিয়ে বলল,’ থাকনা ভাইজান কি হবে এইসব শুইন্যা, সবই আমার কপালের দোষ।’
আমি তাকে অনুরোধ করলাম বাকীটুকু বলার জন্য। কিছুই হয়তো করতে পারব না, তবুও ..
’অভাবের তাড়নায় ও নিজের অক্ষমতার ক্ষোভে লজ্জায় গ্রামে থাকাটাই তার কাছে দুর্বিসহ হয়ে উঠল। তার এক শুভাকাঙ্ক্ষীর অনুপ্রেরণায় বসত বাড়িটাও বেঁচে দিয়ে সব দায় শোধ করে বাকী কিছু পুঁজি নিয়ে পুরো পরিবার সহ ঢাকায় আসে। অনেক খোঁজাখুঁজি করে কোন চাকরি না পেয়ে অনেক দ্বিধা দ্বন্দ্বে ভুগে অবশেষে রিক্সা চালনাকেই পেশা হিসেবে নিয়েছে কিন্তু অনভ্যাস বয়স আর অতিরিক্ত শারীরিক ধকল সহ্য করতে না পেরে সে আবার শয্যাশায়ী হয়। আর হার্ট এ্যাটাকটাও হয় তখুনি।এবারের অসুস্থতা তাকে একেবারে কপর্দকশূন্য করে দিল।
তার বউ ও মেয়েদের অন্যান্য বস্তিবাসী প্ররোচিত করল,প্রলোভন দেখাল অন্যের বাসায় ঝিয়ের অথবা গার্মেন্টসের চাকরীর।
কিন্তু সে বেঁচে থাকতে তার বউ বাচ্চাদের এই পরিণতি দেখতে পারবে না।
ডাক্তারের নিষেধ ও অন্য সবার অনুনয়-অনূরোধ উপেক্ষা করে সে আবার রিক্সা নিয়ে রাস্তায় নেমেছে।’
কথা প্রসঙ্গে সে আমায় জানাল, ’প্রথমে আমার প্রশ্নে র দায়সারা উত্তর দিয়েছিল প্যাসেঞ্জার হারানোর ভয়ে!
প্রত্যেকেরই জীবনে নিজস্ব কিছু গল্প থাকে যেমন আছে এই সকল হত-দরিদ্র রিক্সা চালকদেরও। ক’জনের খবরই আমরা রাখি।
এই লোকটি ভাগ্যের বিড়ম্বনা ও চরম দারিদ্র্যতার জন্যই বাধ্য হয়েছে রিক্সা চালাতে।
আমাদের ঢাকা শহরে কয়েক লাখো রিক্সা চালকের মধ্যে খুঁজলে এমন অনেককেই পাওয়া যাবে এব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু এই বয়স্ক অসুস্থ লোকটির পরিবারের প্রতি ভালোবাসা, সবকিছুর ঊর্ধ্বে তার মানসিক দৃঢ়তা আমাকে ভীষণ আকর্ষণ করেছিল।
***
আগের পর্বঃ
এক শৌখিন রিকশা চালকের গল্প

মন্তব্য ৩২ টি রেটিং +১১/-০

মন্তব্য (৩২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা মে, ২০২৩ বিকাল ৫:৫২

ইসিয়াক বলেছেন:
অচেনা অজানা লোকটি ও তার পরিবারের জন্য আমার মন কেমন করছে। আহারে!
বহুদিন আগের ঘটনা।
হয়তো এখন ভালো আছেন নয়তো না।
ভালো থাকুক এটুকু আশা করছি। তাছাড়া আর কি বা করার আছে।

০৩ রা মে, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:০০

শেরজা তপন বলেছেন: হয়তো সে বেঁচে নেই- হয়তো আছে, কে জানে
নদী ভাঙ্গনে এমন কত শত পরিবার ভেসে গেছে কে আর খবর রাখে। স্রেফ এক রাতের ব্যাপার! আজকে রাজা -কালকে ফকির হয়ে পথে ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে নেমে পড়ে।
অনেক মানুষেরই অনেক দুঃখ কষ্টের অবর্ননীয় গল্প থাকে কিন্তু এই রিক্সা চালকের পরিবারের প্রতি মমত্ত্ববোধ আর এই অসুস্থ শরির মানসিক দৃঢ়তা আমাকে অবাক করেছিল।
অনেক ভাল থাকুন আপনিও।

২| ০৩ রা মে, ২০২৩ বিকাল ৫:৫২

কামাল১৮ বলেছেন: ষাটের দশকের প্রথম দিকে অমি যখন কলেজে ভর্তি হই তখন এক রিকশা ওয়ালা আমার নাম ধরে ডাকছে।বলছে তুমি ওমকের ছেলে ওমক না।আমিতো অবাক।রিকশা ওয়ালার বক্তব্য,সে আমাদের গ্রামের লোক,শহরে চলে আসে এবং রিকশা চালায়।সে যেখানে থাকে আমাকে তার ওখানে নিয়ে গেলো এবং বললো,কোন সমস্যা হলে আমাকে জানিও।কতো দিন আগের কথা,আপনার লেখা পড়ে মনে পরলো।

০৩ রা মে, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:৩০

শেরজা তপন বলেছেন: আমি এলাকায় একবার এমন এক রিক্সা চালকের রিকশায় চড়েছিলাম যে আমার সহপাঠী বন্ধু ছিল। সে আমাকে আপনি না তুমি বলবে সেই দ্বীধায় ছিল। খুব কষ্ট পেয়েছিলাম সেদিন।
আপনার ওই পরিচিত রিকশাচালক আপনাকে যে ভরসা দিয়েছিল সেইটাই অনেক বড় পাওনা।
অনেক অনেক ধন্যবাদ সাথে থাকার জন্য।

৩| ০৩ রা মে, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:২৭

মিরোরডডল বলেছেন:

ঘটনাটা খুবই কষ্টদায়ক :(





০৩ রা মে, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:৩১

শেরজা তপন বলেছেন: নিশ্চিতভাবে! দুঃখজনক ও কষ্টদায়ক

৪| ০৩ রা মে, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:৫৩

মিরোরডডল বলেছেন:

সে আমাকে আপনি না আপনি বলবে সেই দ্বীধায় ছিল।

এখানে মনে হয় লিখতে চেয়েছিলো আপনি না তুমি বলবে।
আহা! বেচারার জন্য খুব অস্বস্তিকর ছিলো।
শেরজা তুমি করে বলে তার জড়তাকে কাটিয়ে দেয়নি? ইজি করে নিতো।
সহপাঠীতো সহপাঠীই, যাই করুক না কেনো।

০৩ রা মে, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:৩৬

শেরজা তপন বলেছেন: আহা মন্তব্যেও দেখি আপনার দারুণ নজর! ঠিক করে দিয়েছি :)
আমি প্রথমে বুঝিনি। কাঁচা পাকা দাড়ি ভাঙ্গাচোড়া চেহারার মানুষটাকে বহু বছর পরে দেখে চেনার কথা নয়।
সে আমাকে বাস স্টান্ডে দেকেহ রিক্সা পাশে ভিড়িয়ে কোন কথা না বলে ব্যাগটা তুলে নিয়ে- আমার দিকে হাসি দিয়ে রিকশায় উঠতে ইশারা করেছিল। গন্তব্যও জিজ্ঞেস করেনি। আমি ভেবেছিলাম আমার মহল্লার কেউ হবে।
নামার পরে টাকা দিতে গেলে সে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে - লাজুক ভাবে বলল; আমাকে চিনতে পারেন নাই, মানে পারো নাই?
আমি তখনো চিনিনি। কিভাবে চিনব প্রায় ২৫ বছর পরে দেখা।
পরে সহজ হয়েছে।

৫| ০৩ রা মে, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:০১

শায়মা বলেছেন: রিক্সাচালানো কাজটা পাওয়া হয়ত সহজ কিন্তু এই শ্রমের কাজটা করা কতটা কষ্টের তা নিজে না রিক্সা চালিয়েও রিক্সাচালকদের পরিশ্রান্ত মুখ দেখলে বুঝা যায়।

০৩ রা মে, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:৩৯

শেরজা তপন বলেছেন: এখনতো অটো রিক্সার রমরমা সময়। গ্রামে মফস্বলে পায়ে টানা রিকশাই নাই।
আসলে রোদে, ঝড়ে বৃষ্টিতে রিকশা যে টানে সে-ই বোঝে সেটা কত খাটুনির।
আপনি স্পর্শকাতর মানুষ আপনি এ বিষয়টা আপনাকে ভীষণ পীড়া দেয় নিশ্চিত।

৬| ০৩ রা মে, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:৪৬

মিরোরডডল বলেছেন:



কামাল১৮ বলেছেন:
বলছে তুমি ওমকের ছেলে ওমক না।আমিতো অবাক


এরকম আমার সাথে হয়েছিলো, তবে রিকশাচালক বা ঢাকায় না, গ্রামে।
একবার এরকমই গ্রামে বেড়াতে গিয়ে সবাই যখন বাসায় হই হুল্লোড় করছে, আমি তখন একা একা রাস্তায় হাটতে বের হয়েছি। দুপাশে সবুজ চাষাবাদের জমি আর মাঝে হাঁটাপথ। এমন সময় অনেক বৃদ্ধ এক লোক আমাকে ডেকে তুই তুই করে বলে, ‘তুই অমুক বাড়ির (বাবার নাম ধরে) মেয়ে নাহ?
বললাম হ্যাঁ।
তখন বলে, তুই কোনটা, দেশের বাইরে থাকে যে ওইটা?

হা হা হা…… আমি কিন্তু ওনাকে চিনিনা, বুঝলাম উনি গ্রামের কোন মুরুব্বি যিনি বাবাকে চিনতেন, সামহাও আমাকেও চেনে।
এই যে অচেনা কিন্তু তুই তুই করে কথা বলা, এটা কিন্তু আমার ভালো লেগেছে, অনেক সহজ সরল আর আন্তরিক।

০৩ রা মে, ২০২৩ রাত ১১:০০

শেরজা তপন বলেছেন: অনেকদিন পরে গ্রামে একেবারে অপরিচিত(মুলত ভুলে যাওয়া) কেউ আপনজনের মত সম্বোধন করলে ভালই লাগে।
মনে হয় আসলেই আমি এখানকারই একজন।
অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ আপু।

৭| ০৩ রা মে, ২০২৩ রাত ৮:১৪

নিবর্হণ নির্ঘোষ বলেছেন: রিক্সাচালকদের নিয়ে আমার হরেক রকমের অভিজ্ঞতা আছে । তবে আপনার এবারের মত কোন অভিজ্ঞতা আমার নেই । এটাকে কী কষ্টের বলব নাকি বলব শোকে নিশ্চুপ হয়ে থাকবার মত ঘটনা , নাকি আর দশটা স্বাভাবিক অন্যায়ের প্রতি মধ্যবিত্ত ধৈর্যশীল মনোভাব নিয়ে যা বলি তাই নিয়ে ভাবনায় ডুবে থাকব ! আমি জানি না ।


মানুষের কষ্টের শেষ নেই তবে মজার ব্যাপার হলো এমন কষ্টের কথা শুনলে মনটা উদাস হয়ে যায় চোখ নাড়লেই যদি কোন অবয়বের ওপর চোখ পড়ে তো মনে হয় আচ্ছা এর মধ্যেও কোন কষ্ট আছে নিশ্চয়ই ! সেটা কী গিয়ে জিজ্ঞেস করব ?


০৩ রা মে, ২০২৩ রাত ১১:০৪

শেরজা তপন বলেছেন: আপনি বলেছেন;
মানুষের কষ্টের শেষ নেই তবে মজার ব্যাপার হলো এমন কষ্টের কথা শুনলে মনটা উদাস হয়ে যায় চোখ নাড়লেই যদি কোন অবয়বের ওপর চোখ পড়ে তো মনে হয় আচ্ছা এর মধ্যেও কোন কষ্ট আছে নিশ্চয়ই ! সেটা কী গিয়ে জিজ্ঞেস করব ?
হ্যাঁ ঠিক বলেছেন। তবে নিজেই যখন এক সমুদ্র কষ্ট মনের মধ্যে নিয়ে ঘুরে বেড়াই- তখন আর কারো কষ্টের কথা শনার ইচ্ছে থাকে না।
আপনার অভিজ্ঞতার কথাগুলো শোনার ইচ্ছে রইল।
চমৎকার মন্তব্যের জন্য সবিশেষ ধন্যবাদ।

৮| ০৩ রা মে, ২০২৩ রাত ৮:৫৭

মেহবুবা বলেছেন: মনটা কেমন হয়ে গেল।

০৩ রা মে, ২০২৩ রাত ১১:০৫

শেরজা তপন বলেছেন: অনেকদিন পরে আপনার দেখা পেলাম আপু।
ঠিক বলেছেন কারো এমন কষ্টের কথা শূনলে মনটা খারাপ হওয়াই স্বাভাবিক।
ভাল থাকবেন- শুভকামনা রইল।

৯| ০৩ রা মে, ২০২৩ রাত ৯:৩৩

কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: মানুষের কত কষ্ট, কেউ রাখি না কারো খবর। পুরাতন স্মৃতি ভালো লাগলো।

০৩ রা মে, ২০২৩ রাত ১১:০৭

শেরজা তপন বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে ফের মন্তব্যে আসার জন্য
আমাদের ক্ষমতা ভীষণ সীমিত- এত মানুষের কষ্টের কথা শুনেই বা কি করব।
পরের পর্ব পড়ার আমন্ত্রন রইল।

১০| ০৪ ঠা মে, ২০২৩ ভোর ৪:১২

জটিল ভাই বলেছেন:
জীবন বাঁকে বাঁকে,
কতোনা ছবি আঁকে!!!!

০৪ ঠা মে, ২০২৩ সকাল ৯:০২

শেরজা তপন বলেছেন: হুম- আর জীবনের প্রতি বাঁকের এই আকা ছবিগুলো আমার মত এলেবেলে লেখক কবিরা সবার সামনে তুলে আনার ব্যর্থ চেষ্টা করেন।

১১| ০৪ ঠা মে, ২০২৩ ভোর ৬:৪৭

সোহানী বলেছেন: মনটাই খারাপ করে দিলেন।

সারাদিন নায়াগ্রা টিউলিপ বাগানে ঘুরাঘুরি করে মনটা চাঙ্গা হলো আর আপনার এক লিখায় সব মূহুর্তে উবে গেল।............

জীবনে অনেক চেস্টা করেছি কারো জন্য কিছু করতে। খুব যে পেরেছি তা কিন্তু না। তাই মাঝে মাঝে খুব পীড়া দেয়। তারপরও বলবো, আমার সাধ্যের মাঝে দেশের মানুষদের জন্য, অসহায় মানুষদের জন্য অনেক কিছু করেছি। এমন কি নিজের জীবন বা অনেক কিছুর রিস্ক নিয়ে। সে গল্প বলবো নিশ্চয়।

০৪ ঠা মে, ২০২৩ সকাল ৯:০৫

শেরজা তপন বলেছেন: আপনার ভ্রমনের ।ছবি গল্পের অপেক্ষায় থাকলাম ...
জীবনের দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় আপনার যে অনেক অনেক না বলা গল্প জমা হয়ে আছে - তা লিখে ফেলুন ঝট পট।
প্রতিক্ষায় রইলাম সে গল্প শোনার।

১২| ০৪ ঠা মে, ২০২৩ সকাল ১০:৪১

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: ঢাকা শহরে অসহায় কোন পুরুষ ঢাকার বাইরে থেকে আসলে তার জন্য সবচেয়ে সহজ জিবিকা হোল রিক্সা চালানো। রিকশাওয়ালাদের সাথে আমাদের সমাজ খুব খারাপ ব্যবহার করে। রিকশাওয়ালাদের ব্যবহারেও অনেক সমস্যা আছে এটা মানি। কিন্তু কিছু হলেই আমরা রিকশাওয়ালাদের গায়ে হাত তুলে বীরত্ব দেখানোর চেষ্টা করি। আসলে যার সাথে পারি তার উপর শোধ নেই। রিকশাওলাদের মধ্যে কোন একতা নেই। এরা বেশীর ভাগই অশিক্ষিত। সমাজের নেতা বা সাধারণ মানুষ কেউ এদের নিয়ে ভাবে না। এদের অবস্থা হীরক রাজার দেশের খনি শ্রমিকদের মত। স্বাভাবিক বুদ্ধি, চিন্তা এরা হারিয়ে ফেলেছে।

আপনার পোস্টের এই বৃদ্ধ রিকশাওয়ালা একজন যোদ্ধা। কোন অবস্থাতেই সে হার মানে নি। একজন হার্টের রোগীর জন্য যে কোন শ্রমের কাজই ঝুঁকিপূর্ণ। আপনার জীবন অনেক অভিজ্ঞতায় পরিপূর্ণ।

০৪ ঠা মে, ২০২৩ দুপুর ১:১৬

শেরজা তপন বলেছেন: ধন্যবাদ।
আগে সত্যিকারে রিকশা চালক চেনার একটা উপায় ছিল- ওরা কখনো বেশী ভাড়া দাবি করত না, চালাত ঠিক ঠাক, বিশ্বাসযোগ্য ছিল।যাদের পরনে লুঙ্গি আর হাফ হাতা বুক পকেটের শার্ট-সাথে একটা গামছ কোমড় বা কাঁধে তাদের প্রফেশনাল রিকশা চালক ভেবে নিশ্চিন্তে উঠে বসতাম।
এখন অটো রিক্সার দাপটে পা-চালিত রিক্সা চালকেরা কোনঠাসা হয়ে পড়েছে। স্থানীয় প্রভাবশালীদের নিয়মিত মাসোহারা দিয়ে চালায় বলে ওদের ব্যাবহারও খারাপ।
যদিও আপনার সাথে সহমত- তবে শুধুমাত্র পা চালিত রিক্সা চালকদের ক্ষেত্রে এ কথা প্রযোজ্য। ভাল থাকুন।

১৩| ০৪ ঠা মে, ২০২৩ দুপুর ১:০৫

রাজীব নুর বলেছেন: একমাত্র রিকশা নিয়ে রবীন্দ্রনাথ কোনো লেখা লিখেন নাই।
এছাড়া সব লেখকই কম বেশি লিখছেন। এদের মধ্যে হুমায়ূন একজন রিকশা চালককে নিয়ে অসাধারন গল্প লিখেছেন।

০৪ ঠা মে, ২০২৩ দুপুর ১:১১

শেরজা তপন বলেছেন: জমিদার মানুষ ছিলেন- রিক্সায় সম্ভবত চড়েননি কখনো।
তবে একদম লেখেননি যে এবিষয়ে আমি নিশ্চিত নই।

১৪| ০৪ ঠা মে, ২০২৩ দুপুর ১:২০

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন: অহা কার জীবন কখন কি হয়ে যায় বল মুশকিল। ঘটনা শুনে খুব খারাপ লাগলো। যদি ওনাদের সাহায্য করা যেত ভালো লাগতো।

০৪ ঠা মে, ২০২৩ দুপুর ২:৩৮

শেরজা তপন বলেছেন: কতজনকে আর সাহায্য করবেন। আমার অনেক আত্মীয় আছে যারা একসময়ে বড় গেরস্ত আর পাকা দালান বাড়ির মালিক ছিল কিন্তু নদী ভাঙ্গনে একরাতে সর্বশান্ত হয়েছে!

মানুষের প্রতি আপনার মমত্ত্ববোধ দারুন। নিজেকে ধরে রাখুন এভাবে।

১৫| ০৪ ঠা মে, ২০২৩ দুপুর ১:২৫

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: আমার কাছে মনে হয়েছে পুরান ঢাকার রিকশাওয়ালারা দক্ষ রিকশা চালক। রিক্সায় ওঠার ১/২ মিনিটের মধ্যেই বোঝা যায় রিকশা কেমন চালায়। পুরান ঢাকায় রিকশাওয়ালাদের ঝগড়া মনে হয় কম হয়। একটা সামাজিক সমঝোতা রিকশাওয়ালাদের মধ্যে আছে। গলিগুলি চিপা হওয়ার কারণে জনগণের আচরণও সহনশীল।

মেশিনের রিক্সা খুব ভয়ংকর। মাঝে মাঝে এরা গাড়ির সাথেও পাল্লা দিতে চায়। এগুলি বন্ধ করা উচিত।

রিকশাওয়ালা খারাপ আচরণ অনেক সময় করে এটা আমরা জানি। কিন্তু বুঝতে চাই না যে এই খারাপ আচরণের আগে সে ইতিমধ্যে দুই একবার চর থাপ্পর খেয়ে ফেলেছে মানুষের হাতে। তার মেজাজ ঠিক থাকবে কীভাবে।

০৪ ঠা মে, ২০২৩ দুপুর ২:৩৪

শেরজা তপন বলেছেন: ঠিক বলেছেন। আপনার পর্যবেক্ষন শক্তি ভাল।
আরেকটা ব্যাপার বলতে ভুলে গিয়েছিলাম; যারা বসে বসে কোমড় দুলিয়ে রিক্সা চালায় তারা অদক্ষ, অলস টাইপের হয়। :)

সারা দেশের প্রধান রাস্তাতো বোটেই হাইওয়েতে পর্যন্ত যখন তখন এরা রিক্সা নিয়ে উঠে যায়। কাউকে তোয়াক্কা করে না। আমি দেখেছি এদের একটা বড় অংশ এডিক্টেড। :(
ফের ধন্যবাদ ফের আসার জন্য।

১৬| ০৪ ঠা মে, ২০২৩ দুপুর ১:৫৬

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: রিকশাওয়ালার গল্প শুরুর আগে কিছু ভালো কথা বলেছেন।

০৪ ঠা মে, ২০২৩ দুপুর ২:৩৫

শেরজা তপন বলেছেন: বয়স বাড়লে প্যাচাল বাড়ে। শেষ বয়সে মানুষ সময় নেই বলে তার সব কথা একবারে বলে ফেলতে চায়; এর শুরুটা হয়েছে সবে :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.