![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অনেক সুখের গল্প হল-এবার কিছু কষ্টের কথা শুনি...
সম্রাট আকবর শুয়ে আছেন ফতেহপুর সিক্রিতে। সম্রাট শাহজাহানের কবর আগ্রার তাজমহলে। আর বাংলা সনের জনক শুয়ে আছেন আজকের নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায়। বাংলাকে ভালোবেসে এ দেশকে শেষ শয্যার জন্য বেছে নিয়েছিলেন সিরাজী। পরে স্থানটির নাম রাখা হয় ফতেহউল্লাহ। যা আজ ‘ফতুল্লা’য় নিমজ্জিত হয়েছে ।
আর আধুনিক বাংলা সনের কারিগর ড. শহীদুল্লাহর কবরটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হল প্রাঙ্গণে; বারো ভুঁইয়া নেতা বীর ঈসা খানের পুত্র মুসা খানের মসজিদ ও কবরের পাশে।
***
পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষের সূচনা করেছিলেন সম্রাট আকবর। তিনিই এ উৎসবের প্রতিষ্ঠাতা, সম্রাটই নির্ধারণ করে দেন শেষ চৈত্র হবে খাজনা পরিশোধের। ১ বৈশাখ দেশের মানুষ উৎসব করবে। হবে হালখাতা, জমে উঠবে মেলা, খেলা, নানাবিধ প্রদর্শনী। এর সঙ্গে যুক্ত হয় নানান লোকজ উপাদান, যেমন পুণ্যাহ, গাজনের গান, ঢোপবাড়ি খেলা, ভাড়াভুড়া খেলা, ঘোড়দৌড়, সঙখেলা, বারোয়ারী জারী ও তরকারী লাগানোর মতো বিষয়গুলো।
অধ্যাপক আবূ তালিব বলেন, ‘বাংলা ও হিজরি সন মূলত একই সন এবং একই সময়ে (৬২২ খ্রি.) একই উৎস থেকে উৎসারিত। শুধু যে হিজরি সনের সঙ্গে নবি মুহাম্মদের হিজরতের স্মৃতিবিজড়িত তাই নয়, বাংলা সনের ইতিহাসের সঙ্গেও তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। বস্তুত হিজরি সনের একটা শাখারূপেই বাংলা সনের প্রতিষ্ঠা হয়েছে।’
মনে রাখা জরুরি, ‘জন্মকালের দিক দিয়ে বাংলা ও হিজরি সন সমবয়সি। অর্থাৎ ৬২২ খ্রিষ্টাব্দ থেকে উভয়ের শুরু ধরা হয়েছে। এ বছর নবি মুহাম্মদ (সা.) কুরাইশদের অত্যাচারে জন্মভূমি মক্কা থেকে মদিনায় আশ্রয় নেন। এ গমনকে হিজরত বলা হয়। হিজরতের স্মৃতি রক্ষার্থে সনের প্রচলন করা হয় বলে একে হিজরি সন বলা হয়। হিজরতের ৯৬৩ বছর পর দিল্লির সম্রাট আকবর সিংহাসনে আরোহণ করেন। সম্রাটের সিংহাসন আরোহণের স্মৃতির সঙ্গে যুক্ত করে বাংলা সনের প্রতিষ্ঠা করা হয়। তাই এ সন একাধারে রাসুল্লাহর হিজরত (৬২২ খ্রি.) এবং আকবরের সিংহাসন আরোহণের (১৫৫৬) স্মারক হিসাবে উল্লেখযোগ্য। সম্রাট আকবরের সিংহাসন আরোহণের কাল হলো ৯৬৩ হিজরি অর্থাৎ ১৫৫৬ খ্রিষ্টাব্দ। তাহলে দেখা যাচ্ছে, জন্মকাল থেকেই বাংলা সন খ্রিষ্টীয় সন থেকে ৫৯৩ বছরের অনুজ। তাই খ্রিষ্টাব্দ থেকে ৫৯৩ বিয়োগ করলে বাংলা সন মেলে।
বাংলা সনের আগের সনগুলো;
আজকের প্রজন্ম তো বটেই, প্রবীণদেরও হয়তো জানা নেই বাংলা সনের আগেও এ দেশে বেশ কয়েকটি সন প্রচলিত ছিল। এর অন্যতম ছিল লক্ষণাব্ধ, প্রগনাতি সন, মঘী সন, বিষ্ণুপুরী সন, সর্বসিদ্ধ সন, মিলিক সন, ত্রিপুরাব্দ ও চৈতন্যাব্দ সন।
আবার বাংলায় ফসলের সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধান করে খাজনা আদায়ের জন্য সম্রাট আকবর যে বাংলা সনেরই পত্তন করেন তা নয়। তিনি উড়িষ্যার জন্য আমলী সন, বিশেষ বিশেষ অঞ্চলের জন্য বিলায়তী সন এবং মহারাষ্ট্রের জন্য সুরসন প্রবর্তন করেন। এ সনগুলোকেও ফসলি সনই বলা হয়। যেমন বাংলা সনকে বলা হয়।
বাংলা সনের আগে রাজস্ব আদায়ের ঝামেলা মেটানোর জন্য সম্রাট ‘ইলাহী সন’ নামে আরও একটা সন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। কিন্তু সেটা চলেনি। বিরক্ত সম্রাট চাইলেন ত্রুটিমুক্ত বিজ্ঞানসম্মত সন। যা জাতিধর্মনির্বিশেষে সবার জন্য আদর্শ হবে। বাংলা সন সম্রাটের প্রত্যাশা পূরণ করেছিল। কারণ বাংলা হিজরি থেকে উৎসারিত হলেও সে হিজরি নয়। আবার এর গঠন প্রক্রিয়ার সঙ্গে শকাব্দের মিল থাকলেও এটা শকাব্দ নয়। শকাব্দের সঙ্গে এর সম্পর্ক শুধু এটুকুই, এর মাস ও দিনের নাম সেখান থেকেই গৃহীত হয়েছে।
বাংলা সন থেকে চান্দ্র পদ্ধতি পরিত্যাগ;
চাঁদ ও সূর্যকেন্দ্রিক সনের জটিলতা নিরসন এবং কৃষকের কাছ থেকে খাজনা আদায়ের সুবিধার্থে, তাদের ক্লেশ দূর করার জন্য অবশেষে সম্রাট আকবর শাহী ফরমান জারি করলেন, ‘যেহেতু ভারতে প্রচলিত সনগুলো সৌর পদ্ধতির এবং তার মাসগুলো চান্দ্র পদ্ধতির, তাই আমার নির্দেশ এই প্রস্তাবিত সনটি যেন পূর্ণাঙ্গ সৌর পদ্ধতির হয়।’ আকবরের এ আদেশের ওপর ভিত্তি করে শুরু হলো নতুন একটি সৌরসন সৃষ্টির কাজ।
ফতেউল্লাহ সিরাজীর অমূল্য কীর্তি;
সম্রাট এই সন সৃষ্টির জন্য খুঁজছিলেন যোগ্য মানুষ। সেই মানুষ হলেন সেই সময়কার ভারতের সর্বশ্রেষ্ঠ গণিতবিদ ও জ্যোতির্বিজ্ঞানী মহাপণ্ডিত আমির ফতেহউল্লাহ সিরাজী। সিরাজী ছিলেন বিজাপুরের সুলতানের সভাসদ। আকবর তাকে টেনে নেন নিজের কাছে। পরবর্তীকালে তার নবরত্ন সভার পরামর্শ মোতাবেক তার হাতেই বাংলা সন প্রবর্তনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব অর্পণ করেন সম্রাট ১৫৮৪ খ্রিষ্টাব্দে।
সিরাজী পাণ্ডিত্য সম্পর্কে ঐতিহাসিক আবুল ফজল লিখেছেন, ‘যদি এমন দুর্ঘটনা ঘটে যে, দেশের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো বিনষ্ট হয় আর সিরাজী সাহেব জীবিত থাকেন, তাহলে তিনি একাই তার পুনর্গঠন করতে সক্ষম হবেন।’ অধ্যাপক আবূ তালিব বলেন, ‘এহেন সিরাজী সাহেব রাজদরবারে এসে সম্রাটের নির্দেশে শুধু নবতর ইলাহী সনই প্রতিষ্ঠা করেন না, তিনি আদর্শ বাংলা সনসহ আরও কতিপয় নবতর সৌরসনের প্রতিষ্ঠা করেন।’ সবই ছিল ফসলি সন।
আমির ফতেহউল্লাহ সিরাজীর প্রয়াসে বাংলার জন্য প্রবর্তিত হলো আজকের বাংলা সন। বাংলা সন প্রবর্তিত হয় ১৫৮৪ খ্রিষ্টাব্দে। প্রথম নাম তারিখ-ই-ইলাহী। ১৫৮৪ খ্রিষ্টাব্দের ১১ মার্চ এর নামকরণ করা হয় বংলা সন।
একসাথে শুরু হলেও কেন আজ হিজরি ও বাংলা সালের এত ফারাক?
বাংলা সন গণনা শুরু হয় ১৫৫৬ খ্রিষ্টাব্দের ৫ নভেম্বর থেকে। ২য় পানিপথের যুদ্ধে হিমুর বিরুদ্ধে আকবরের বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে। একই সঙ্গে সম্রাটের সিংহাসন আরোহনের দিনটিকেও। সিরাজী হিজরি সনকে মডেল হিসাবে নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন। সেজন্য ৯৬৩ হিজরির মহররম মাস থেকে বাংলা বর্ষের ৯৬৩ অব্দের সূত্রপাত হয়। হিজরি মহররমের সঙ্গে বৈশাখের মিল থাকার জন্য প্রচলিত শকাব্দের চৈত্র মাসকে বাতিল করে বৈশাখকে করা হয় প্রথম মাস। আজ ৪৬৯ বছর পর হিজরি সনে বঙ্গাব্দের পার্থক্য দাঁড়াল ১৪ বছর।
বাংলা সন সহজ করতে সম্রাট শাহজাহানের কীর্তি;
শুরুতে বাংলা মাসের ৩০ দিনের ৩০টা নাম ছিল - ভাবা যায়? নামগুলো মনে রাখা ছিল ভীষণ কষ্টকর। এবার এগিয়ে আসেন সম্রাট শাহজাহান। তিনি তার সময়ে বাংলা পঞ্জিকা সংস্কারে প্রথমবারের মতো হাত দেন। একজন পর্তুগিজ পণ্ডিতের সহায়তায় দীর্ঘ আলাপ-আলোচনা সাপেক্ষে প্রতিটি মাসকে ৪টি ভাগ করে সূচনা করা হয় সপ্তাহের। প্রতিটি সপ্তাহ ৭ দিন। গ্রেগরিয়ান পদ্ধতিতে দিনগুলোর নামও ঠিক করা হয়। যেমন ঝঁহ থেকে রোববার। গড়ড়হ থেকে সোমবার ইত্যাদি।
সূচনালগ্নে মাসগুলোর নাম ছিল খোরদাদ, মেহের, শাহরিয়ার, ইসকান্দ এ রকমের। শাহজাহান পরে বিভিন্ন তারকা ও গ্রন্থের নাম থেকে শকাব্দ স্টাইলে মাসগুলোর নাম রাখেন বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ় ইত্যাদি।
বাংলা পঞ্জিকায় শাহজাহান যে যে বিপুল পরিবর্তন এনেছিলেন তাই চলে আসছিল শতকের পর শতক। বাংলা বর্ষপঞ্জি যদিও আমাদের নিজস্ব; কিন্তু বিশ্ব চলে খ্রিষ্টাব্দের পথ ধরে। বাংলা সনকে তার সঙ্গে সংগতি রাখা দরকার হয়ে পড়ে। বিশেষ করে লিপইয়ার ঝামেলা দূর করার এবং বাংলা সনকে যুগোপযোগী করার ভাবনা থেকেই ১৯৬৬ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকার ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর নেতৃত্বে গঠন করে দ্বিতীয় সংস্কার কমিটি। বাংলা সনের বর্তমান রূপটি এ কমিটিরই অবদান-যা এখন আমরা মেনে চলছি।
( মুল; দৈনিক যুগান্তর- আব্দুল হাই শিকদার)
***
প্রাচীন বাংলা সন বা বর্ষের গল্প;
—প্রাচীন বাঙলার রাজা শশাঙ্করের আমল (৫৯০-৬২৫) থেকে বাংলা সন গণনা শুরু হয় ( সিংহাসনে আরোহণ করে তিনি বঙ্গাব্দ চালু করেন। বাংলা ক্যালেন্ডার তৈরির কৃতিত্ব শশাঙ্কের। বঙ্গাব্দ (বাংলা সন) শব্দটি আকবর যুগের থেকে বহু শতাব্দী পুরনো দুটি শিব মন্দিরেও পাওয়া যায়, যা থেকে জানা যায় যে আকবরের সময়ের অনেক আগে থেকেই আদি বাংলা ক্যালেন্ডার বিদ্যমান ছিলো। চীনা সন্ন্যাসী জুয়ানজাং-এর লেখায় তাকে শে-শাং-কিয়া বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তাকে শশাঙ্ক নরেন্দ্রগুপ্তও বলা হয়, যা প্রাথমিকভাবে দাবি করে যে তিনি পরবর্তী গুপ্তদের বংশধর ছিলেন। মগধের সিনহার রাজবংশীয় ইতিহাসে, 'শশাঙ্ক' এবং 'সোম' নামগুলো পরস্পর পরিবর্তনযোগ্যভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। ধারনা করা হয় তিনি শৈব ধর্মের অনুসারী যা ভক্তিমূলক দ্বৈতবাদী আস্তিকতা যেমন শৈবসিদ্ধান্ত থেকে যোগ-ভিত্তিক অদ্বয়বাদী অ-ঈশ্বরবাদ সমর্থন করে।)। পশ্চিম ও পূর্ব বাংলা,বিহার,আসাম ও ঊড়িষ্যা নিয়ে ছিল তাঁর রাজ্য বিস্তীর্ন ছিল। তাঁর শাসনামলে জুলিয়ান পঞ্জিকা অনুসারে বাঙলা বর্ষ গণনা শুরু হয়। সূর্য -এর ভিত্তি করেই “সোলার ক্যালেন্ডারের উৎপত্তি।
বাঙলা সনের প্রবর্তন যিনি করেন তিনি কোন বাংলা ভাষী না বাঙালি নন। তিনি ছিলেন চেঙ্গিস খান ও মহাবীর তৈমুর লঙের সুযোগ্য বংশধর বিশ্ববিখ্যাত মোঘল সম্রাট আকবর। সেই দিল্লীর সিংহাসনে অধিষ্ঠিত তিনি এই দেশে বাংলা সন প্রবর্তন করেন।”সন’ ও ‘তারিখ’ দুটিই আরবী শব্দ।
সন অর্থ হল ‘বর্ষ’ অথবা—‘বর্ষপঞ্জী’ও তারিখ অর্থ দিন হিন্দি ও উর্দুতে ‘তারিখ’ শব্দের অর্থ আবার ইতিহাসও। ‘সাল’ হচ্ছে ফারসী শব্দ যার অর্থ হল বৎসর। বাংলা সনের সূত্রপাত হয় আরবী হিজরী সনের ওপর ভিত্তি করে। অর্থাৎ ইসলামী সনের ওপর ভিত্তিতে একজন অবাঙালী মুসলমান বাদশাহ কর্তৃক বাংলা সনের প্রবর্তন। যারা ইতিহাস সম্পর্কে অজ্ঞ তারাই মনে করি বাংলা সন হিন্দু বা অমুসলিমদের দ্বারা প্রবর্তিত একটি বর্ষপঞ্জী।
***
আকবরের রাজত্বকালে তারই নির্দেশে ৯৯৮ হিজরী মোতাবেক ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দে বাংলা সনের প্রবর্তন হয়। বাদশাহ আকবর ৯৬৩ হিজরীতে অথাৎ ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দে (১৪ ফেব্রুয়ারি তারিখে) দিল্লীর সিংহাসনে আরোহণ করেন। এই ঐতিহাসিক ঘটনা চিরন্তরণীয় করে রাখার জন্য ৯৬৩ হিজরী অবলম্বন করেই বাংলা সন চালু করা হয়। অর্থাৎ ১, ২, ৩-এভাবে হিসেব না করে মূল হিজরী সনের চলতি বছর থেকেই বাংলা সনের গণনা শুরু হয়। ফলে জন্ম বছরেই বাংলা সন ৯৬৩ বৎসর বয়স নিয়ে যাত্রা শুরু করে।
৯৬৩ হিজরীতে মহররম মাস ও বৈশাখ মাস একই সঙ্গে আসে। ফলে, তদানীন্তন শকাব্দের প্রথম মাসটি গ্রহণ না করে হিজরী সনের প্রথম মাস মহররমের অর্থাৎ বৈশাখ মাসকেই বাংলা সনের মাস হিসাবে পরিচিহ্নিত করা হয়।
কেন বাংলা সনের নব্যরূপ?
সম্রাট আকবরের আমলে সুবা-এ-বাংলা (বাংলা-বিহার-উড়িষ্যা) মোগল শাসনের আওতাভুক্ত হয়। কিন্তু রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে এক জটিল সমস্যা দেখা দেয়। প্রজাদের দেয় খাজনা ফসলের মাধ্যমে আদায় করতে হলে বছরে একটি সময় নির্দিষ্ট থাকা আবশ্যক। কিন্তু সে কালের রাজকীয় সন অর্থাৎ হিজরী সন চন্দ্র সন হওয়ার প্রতি বছর একই মাসে খাজনা আদায় সম্ভব হতো না। ফলে, সম্রাট আকবর একটি সৌরভিত্তিক সন প্রচলনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। উল্লেখ্য, চান্দ্র বৎসর ৩৬৫ দিনের না হয়ে ৩৫৪ দিনের হয়ে থাকে। ফলে, চান্দ্রভিত্তিক আরবী মাস বৎসরের সৌরভিত্তিক ঋতুর সঙ্গে সুনির্দিষ্ট কোন সামঞ্জস্য বহন করে না। উদাহরণস্বরূপ উল্লেখ করা যায় যে, বাংলাদেশে পবিত্র রমযান এখন পুরোপুরি না হলেও প্রায় শীতকালে উদযাপিত হয়। কিন্তু ১৫-১৬ বৎসর পূর্বে এটি প্রচণ্ড ও দুর্বিষহ গ্রীষ্মের সময় উদযাপিত হতো।
নতুন বাংলা ক্যালেন্ডারের প্রচলন হলো পরবর্তী ফসল কাটার সময় যখন কৃষকেরা অপেক্ষাকৃত অর্থনৈতিকভাবে ভাল অবস্থায় ছিলেন। ফসল কাটার সময়কাল স্মরণে রেখে তৈরি বলে শুরুর দিকে এটা ‘হারভেস্ট ক্যালেন্ডার’ বা ‘ফসলী সন’ বলে পরিচিত ছিল। মোঘল আমলে বাংলা ক্যালেন্ডারকে সাম্রাজ্যব্যাপী সরকারী মর্যাদা দেয়া হয়। হিন্দু জ্যোতিষশাস্ত্র-সম্মতভাবেই রাখা হয় মাসগুলোর নাম।
বর্তমান ভারতের জাতীয় সন হচ্ছে শকাব্দ। রাজা চন্দ্রগুপ্ত ৩১৯ অব্দে গুপ্তাব্দ প্রবর্তন করেন। এই সন পরে ‘বিক্রমাব্দ’ নামে অভিহিত হয়। এই ‘অব্দ প্রথমে শুরু হতো চৈত্র মাস থেকে। পরবর্তী পযায়ে কার্তিক মাসকে বছরের প্রথম মাস হিসেবে পরিচিহ্নিত করা হয়। খ্রিস্টপূর্ব ১৫ সালে ভারতে শক সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়। শক সনের স্মারক হিসেবে ৭৮ খ্রিস্টাব্দে শাকাব্দ চালু করা হয়। ( বিতর্ক থাকলেও পণ্ডিতেরা মনে করেন, শকাব্দ মূলত যিশু খৃষ্টের জন্মের ও পূর্বে বৌদ্ধ ও জৈন রাজাদের হাত ধরে এসেছে আর ইন্টারেস্টিং বিষয় হচ্ছে শক বা শকরাজ ছিল ছিল একটি যাযাবর ইরানি জনগোষ্ঠী যারা ঐতিহাসিকভাবে উত্তর ও পূর্ব ইউরেশীয় সমতলভূমিতে ও তারিম সমতটের তৃণভূমিতে বসবাস করতো। ধারনা করা হয়; ৭৮ খ্রিস্টাব্দে রাজা খস্তনের হাত ধরে শকেরা ক্ষমতায় আরোহন করেন।)
সুত্রঃনেট
—বাংলা সন মূলত : ইসলামী হিজরী সনের উপর নির্ভরশীল হলেও শকাব্দের নিকটও সে ঋণী। বাংলা সনে আমরা বর্তমানে দিন ও মাসের যে নামগুলো ব্যবহার করি সেগুলো শকাব্দ থেকেই গৃহীত। সপ্তাহের নামগুলো রবি, সোম, মঙ্গল, বুধ ইত্যাদি গৃহীত হয়েছে গ্রহপুঞ্জ ও সূর্য থেকে। মাসের নামগুলো, যেমন বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ়, শ্রাবণ ইত্যাদি আমরা পেয়েছে নক্ষত্রপুঞ্জ থেকে।
***
এতদূর পড়ে কি বুঝলেন? আচ্ছা বলুনতো বাংলা অধিবর্ষ বা লিপ-ইয়ার কোন মাসে? * যারা জানেন না তাদের জন্য শিরোনামের ছবিতে ইঙ্গিত আছে।
০৭ ই জুন, ২০২৫ রাত ১০:৫০
শেরজা তপন বলেছেন: তিনি অন্যতম সাম্যবাদী মোঘল মুসলিম শাসক ছিলেন বলে আমার ধারনা। তবে তার ধর্মীয় মতবাদ মুসলিম-হিন্দু কোনপক্ষই মানে নাই।
২| ০৭ ই জুন, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৫৫
জুন বলেছেন: এখনো পড়ে শেষ করি নাই তপন, তবে প্রিয় ব্লগারের সামান্য ভুল শুধরে দিতে আসলাম। আকবর ফতেপুর সিক্রিতে মারা যান তবে তার দাফন হয় সেখান থেকে ৩৭ কিমি দূরে আগ্রার সেকেন্দ্রায়। আমরা স্টুডেন্ট থাকতে দেখেছিলাম প্রথম।
+
০৭ ই জুন, ২০২৫ রাত ১০:৫৭
শেরজা তপন বলেছেন: আপনাকে দেখে দারুণ প্রীত হলাম।পুরো লেখা পড়ে মন্তব্য করবেন এই প্রত্যাশা করি।
ভুল শুধরে দেবার জন্য ধন্যবাদ। আপনি কি 'জাটদের' দ্বারা আকবরের সমাধিক্ষেত্র ধ্বংসের কাহিনী জানেন?
প্রতিমন্তব্যের অপেক্ষায় রইলাম...
৩| ০৭ ই জুন, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৮
ফেনিক্স বলেছেন:
@কু-ক-রা ,
বাদশাহ আকবর অবশ্যই আমাদের খলীফা ও বাকী বেদুইনদের চেয়ে অনেক বেশী জ্ঞানী ছিলেন; উনার ধর্ম কাজ করলে, আজকের ভারত, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান জংগী হিব্দু, জংগী জামাত-শিবির ও তৈয়বে লস্কর মুক্ত থাকতো।
৪| ০৭ ই জুন, ২০২৫ রাত ৮:২১
কু-ক-রা বলেছেন: শকুনের দোয়ায় যেমন গরু মরে না, তেমন পাঁদগাজীদের প্রার্থনায় বদশাহ বকবর সফল হয় না।
৫| ০৭ ই জুন, ২০২৫ রাত ৮:৫৬
কামাল১৮ বলেছেন: আপনার পোষ্ট মানে অনেক তথ্য জানা।
০৭ ই জুন, ২০২৫ রাত ১০:৫৯
শেরজা তপন বলেছেন: বহুদিন বাদে ব্লগে এসে আমার পরিচিতজনদের দেখে ভাল লাগল। ভাল থাকুন নিরন্তর কামাল ভাই।
মন্তব্যের জন্য কৃতজ্ঞতা।
৬| ০৭ ই জুন, ২০২৫ রাত ৯:৩০
মিরোরডডল বলেছেন:
এর অন্যতম ছিল লক্ষণাব্ধ, প্রগনাতি সন, মঘী সন, বিষ্ণুপুরী সন, সর্বসিদ্ধ সন, মিলিক সন, ত্রিপুরাব্দ ও চৈতন্যাব্দ সন।
আর কোন কঠিন শব্দ অবশিষ্ট নেই!!!!
খটমট খটমট.....
বাংলা আমাদের মাতৃভাষা কিন্তু অন্য ভাষার মানুষের জন্য বাংলা শেখা কঠিন।
কারণ বাংলা ভাষাটা অনেক কঠিন!
আমাদের ভাষা কঠিন।
আমাদের চিন্তাভাবনা জটিল কুটিল।
আমাদের জীবন যাপনে এতো এতো নিয়ম, এই করা যাবে না ওই করা যাবে না, এটা করতে হবে, ওটা করতে হবে।
আচার-অনুষ্ঠানের কোন শেষ নেই।
এতো প্যারা কেনো!!!!
০৭ ই জুন, ২০২৫ রাত ১১:০২
শেরজা তপন বলেছেন: একদম খাঁটি কথা।
যদি ত্রিশ দিনের ত্রিশখানা এমন খটমট নাম থাকত তাহলে তো চিত্তির!!!
আগেকার পণ্ডিতেরা সরলভাবে ভাবতে পারতেন না। সাধারণ মানুষের যাতে বোধগম্য না হয় আর তাদের পণ্ডিতি ফলানোর জন্য সবকিছু এমন জটিল কঠিন করতে ফেলতেন।
আমরা আসলেই একটা কুটিল জটিল জাতি।
কতদিন বাদে আপনার মন্তব্য পেলাম। আমিও হারিয়ে গেছি আপনিও আমাকে আর খুঁজেন না
৭| ০৭ ই জুন, ২০২৫ রাত ৯:৪৩
মিরোরডডল বলেছেন:
আচ্ছা বলুনতো বাংলা অধিবর্ষ বা লিপ-ইয়ার কোন মাসে?
শেরজা, এমন কেউ কি আছে যে জানে না লিপ-ইয়ার ফেব্রুয়ারি মাসে?
এমন কোন বাঙালি আছে যে জানে না এন্ড অভ ফেব্রুয়ারি ফাল্গুন মাস?
অন্য মাসের আপডেট না রাখলেও বৈশাখ আর ফাল্গুনের টা সবাই রাখে।
০৭ ই জুন, ২০২৫ রাত ১০:৪৮
শেরজা তপন বলেছেন: আপনার আশে-পাশের কিছু বাঙ্গালীকে জিজ্ঞেস করে দেখেন, উত্তরটা পেয়ে যাবেন
©somewhere in net ltd.
১|
০৭ ই জুন, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭
কু-ক-রা বলেছেন: উহার (বদশাহ আকবরের) ষড়যন্ত্র সফল হয় নাই। উহা দ্বীন-ই ইলাহি নামক মিথ্যা ধর্ম প্রতিষ্ঠা করিতে সমর্থ হয় নাই।