নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মাঝে মাঝে মনে হয় জীবনটা অন্যরকম হবার কথা ছিল!

শেরজা তপন

অনেক সুখের গল্প হল-এবার কিছু কষ্টের কথা শুনি...

শেরজা তপন › বিস্তারিত পোস্টঃ

নেপালে বাংলাদেশপ্রেম ও ভারত বিদ্বেষ

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৩০


কাঁকড়ভিটা ( ভারত-নেপালের বর্ডারে নেপালের ছোট্ট শহর)
✦ছোট্ট বাজার আমাদের মফস্বল শহরের অনুরুপ। মিনিট বিশেকের মধ্যে এমাথা ওমাথা ঘুরে আসা যায়। এমনিতেই দেখার তেমন কিছুই নেই, তার উপরে প্রায় সব দোকানপাটই বন্ধ হয়ে গেছে। কিছুদুর এগুতেই একটা ভাঙ্গাচোরা গাঁও গেরামের ডিসপেনসারী নজরে এল। সাদা চুলের বয়স্ক বিক্রেতার কাছে এক বোতল ‘পিরিটন’ চাইতেই তিনি যে অষুধের প্যাকেটটা এগিয়ে দিলেন তার গায়ে দেখি ‘বাংলাদেশে’র নাম লেখা। ভাল লাগল দেখে- ভারতকে টেক্কা দিয়ে এখানে আমাদের দেশে তৈরি ঔষুধ যে এসে পৌছুছে এটা কম কথা নয়!

✦২০০৩ সালে নেপাল ছিল এক গভীর রাজনৈতিক সংকট ও গৃহযুদ্ধের মধ্যে আটকে থাকা দেশ। অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়েছিল, বিদেশি বিনিয়োগ হ্রাস পায়, আর পর্যটন শিল্প—যা নেপালের অন্যতম প্রধান আয়ের উৎস—প্রায় ধ্বংসের পথে ছিল।
নেপালের পর্যটন খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
✦২০০১ সালে রাজকীয় হত্যাকাণ্ড (Royal Massacre) ও চলমান মাওবাদী সংঘাতের কারণে বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা হ্রাস পেতে শুরু করেছিল, ২০০৩ সালে সেটি আরও কমে যায়।
নিরাপত্তা হুমকি, পর্যটক অপহরণ ও সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতির কারণে অনেক দেশ নেপাল ভ্রমণে নাগরিকদের সতর্কতা জারি করেছিল।

বাসে করে কাঠমুণ্ডুতে যাবার পথে এম পি চেকপোস্ট এ যাত্রীদের চেকিংঃ
✦চেকিং হচ্ছে শুধু পুরুষদেরই মেয়েদের নয়। ছেলে বুড়োরা সব নিজ নিজ মাল সামানা কাধে করে দীর্ঘ লাইনে দাড়িয়ে আছে। ভারি অস্ত্রে সজ্জিত দুজন মিলিটারি পুলিশ একে একে সবাইকে তল্লাশী করছে। তল্পিতল্পা থেকে দেহ তল্লাশী কোনটাই বাদ যাচ্ছেনা। তবু কেন যেন মনে হল তারা অসম্ভব দ্রুত গতিতে চেকিং পর্ব সারছি। আমাদের পর্ব আসতেই আমরা দুজন- আর্মি অফিসারের সামনে পাসপোর্টটা বের করে -‘বাংলাদেশী ’বলতেই –চেহারার দিকে তাকিয়ে সামান্য একটু হেসে হালকা নড করে সামনে এগুতে বলল।
‘ব্যাগ চেকের প্রয়োজন নেই ?’ আমি একটু অবাক কন্ঠেই প্রশ্নটা করলাম।
‘জ্বী-না , আপনারা গিয়ে বাসে বসুন।’ অফিসার কথাটা বলেই লাইনের পরবর্তী জনকে তল্লাশী করতে শুরু করলেন। বাংলাদেশী হিসেবে এতটুকু সন্মান পেয়েই আমারা যে বেশ অভিভুত হয়েছিলাম সন্দেহ নেই।
এরপরে পথে আরো কয়েক জায়গায় সেনাবাহিণী তল্লাশী করেছে। আমরা প্রতিবারই কষ্ট করে ব্যাগ না টেনে বাস থেকে নেমে শুধু পাসপোর্ট দেখিয়ে তল্লাশী এড়িয়ে সবার সামনে অহংকারী ভঙ্গীতে গট গট করে হেটে ফের বাসে উঠেছি।

পোখারায়‘মুনসুন বার এন্ড গ্রিল ’ পর্যটকদের জন্য যে কোন স্পেশাল ড্রিঙ্কস এর সাথে ফ্রি বারভিকিউ অফার করছে।

✦দু’জনে বসে গল্প জুড়ে দিয়েছি হাতে মকটেলের চিলড মাগ! বারবিকিউ এখনও আসেনি - বেয়ারাটা বলে গেছে সেটা আসতে মিনিট দশেক দেরী হবে।
- স্যার কিছু মনে করবেন না।
তাকিয়ে দেখি সেই বেয়ারাটা হাসিমুখে দাড়িয়ে আছে।
- হ্যা বলো?
- আপনারা কোত্থেকে এসছেন?
- বাংলাদেশ থেকে।
- ও ... বাংলাদেশ থেকে! তাহলেতো আপনারাই বোধ হয় আমাদের রেস্টুরেন্টে প্রথম বাংলাদেশী।
- তোমার নাম কি?
- রাজু -রাজু সিং। এ রেস্টুরেন্টে দুজন রাজু আছে -আমাকে রাজু সিং বললে সবাই চিনবে।
- সিং? তোমরা কি শিখ নাকি?
- নাহ্ হিন্দু ।
- হিন্দি বলতে পারো নাকি?
- হ্যা পারি। কিন্তু সে ভাষায় কথা বলতে ইচ্ছে করেনা ।
- কেন?
-ওদের আমরা পছন্দ করিনা। আমাদের এই দুরবস্থার জন্য ওরাই দায়ী। এত সুন্দর দেশটাকে ওরা ধীরে ধীরে ধ্বংস
করে দিচ্ছে।

✦পাহাড়ীরা এমনিতেই কথা একটু কম বলে, আমি নেপালের সেই দুঃসময়ে কাকড়ভিটা থেকে কাঠমুন্ডু হয়ে পোখারা ঘুরে এসেছি। কোন নেপালীর সাথে প্রথম দেখায় হাই হ্যালো করে খাতির জমাতে গেলেই তারা এক্কেবারে চুপসে যেত, বেশীরভাগ সময় এড়িয়ে যেতে পারলে যেন বাঁচে এমন ভাব। কিন্তু একবার বাংলাদেশী পরিচয় দিলেই কথার ঝাঁপি খুলে বসে। পরে জেনেছি; অরা প্রথমে আমাদের দেখে ভারতীয় বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের লোক ভাবে। ভারতীয়দের এত বেশী অপছন্দ করে নেপালিজরা সেটা আমি নেপালে না গেলে বুঝতাম না কোনদিন।

✦যাইহোক ফের আগের প্রসঙ্গে আসি; সেখান থেকে বের হয়ে ভাবলাম যাই লেকের পাড়টায় একটু হেটে আসি। আলো ঝলমলে প্রধান সড়কটা ছেড়ে অপেক্ষাকৃত অন্ধকার ও নির্জন রাস্তায় পা বাড়ালাম। অবশ্য ওখান থেকে লেক পাড় যাবার জন্য কোন বিকল্প রাস্তাও নেই।

কিছুদুর এগিয়েছি কি আচমকা জলদগম্ভীর কন্ঠে কে যেন আদেশ করল ‘হল্ট’। ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে তখুনি দাড়িয়ে পড়ে চোখ সরু করে তাকাতেই আবছা নজরে এল ফুট বিশেক দুরে অস্ত্র হাতে এক নেপালী আর্মী। আশেপাশে আরো বেশ কয়েকজন পজিশন নিয়ে দাড়িয়ে আছে। এদের হয়তো আমাদের মানে পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য রাখা হয়েছে ।
দুরে দাড়ানো আর্মি ভদ্রলোক আবার তেমনি কড়া কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন,
- কোথায় যাচ্ছেন?
- লেকপাড়ে।
- কোত্থেকে এসছেন?
- বাংলাদেশ থেকে।
বাংলাদেশ শুনে এবার যেন সুর কিছুটা নরম হল।
- কিছু মনে করবেন না। এপথ দিয়ে সন্ধ্যের পরে সিভিলিয়ানদের চলাচল নিষিদ্ধ।
- ও- স্যরি। জানতাম না।
- অন্ধকার পথে বেশী হাটাচলা করবেন না- সমস্যা হতে পারে।
- ধন্যবাদ।’ বলে বিদায় নিয়ে উল্টোপথে ফিরে চললাম।
রাস্তায় ওদের চলাফেরা নজরে না এলেও সেদিন রাতে লক্ষ্য করলাম রাস্তার পাশে কিছুদুর পর পরই বড় বড় গাছের গা ঘেষে অন্ধকারে মিশে গিয়ে টহল দিচ্ছে প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরা। ট্যুরিস্টদের থেকে মনে হয় এদের সংখ্যাই এখন বেশী হবে!


✦হোটেলে ফিরে ফের ছাদে।গতদিনের সেই তিন বিদেশী বিদেশীনীকে আজও দেখলাম।তবে আজ বিয়ারের পরিবর্তে বই নিয়ে পড়ে আছে।
ছাদে আজকে আরো দু’জন সঙ্গী পেলাম। চেহারা দেখে বুঝলাম এরা এই সাব-কন্টিনেন্টের। তবে চেহারা মোটেই নেপালীদের মত নয়। ঘন্টাখানেক পরে আড্ডা মেরে ফিরে যাবার মুখে ভদ্রলোকদ্বয় কি মনে করে ঘুরে আমাদের সামনে এসে দাড়ালেন।
-কিছু মনে করবেন না,আপনারা কোত্থেক এসেছেন?
-বাংলাদেশ থেকে।
-ওহ -বাংলাদেশ থেকে। বেড়াতে এসছেন বুঝি? কথা শুনে মনে হল ভাষটা পরিচিত,তাই আলাপ করতে এলাম।
- ধন্যবাদ। হ্যা আমরা বেড়াতে এসেছি। আপনারা ...?
-ওঁনারা নিজেদের পরিচয় দিলেন। ফের অবাক হলাম শুনে যে এরা নেপালীজ! এদের চেহারাও ভারতীয়দের মত। বার বার এক ভুল কেন হচ্ছে? সেই বন্দনা ব্রজেশ্বরী কিংবা রাজু সিং আর এই দুই ভদ্রলোক?
একজন রিয়েল এষ্টেট ব্যাবসা করেন অন্যজন নেপালী টিভির সাংবাদিক। কাল নেপালী প্রধান মন্ত্রী আসছেন এখানে, ভদ্রলোক নিউজ কাভার করতে এসেছেন।
বাংলা শুনে তার কেন মনে হল চেনা সুর জিজ্ঞেস করতেই হেসে বললেন,-আমি ন’বার গিয়েছি আপনাদের ওখানে! ধানমন্ডি মতিঝিল মিরপুর ফকিরার পুল সবই চিনি।
কথা প্রসঙ্গে; ভারত ও ভারতীয়দের নিয়ে আলাপ আসতেই তারা ব্যস্ততার ভঙ্গী করে কেটে পড়েছিল ওখান থেকে।
এর মানে কজন নেপালী সাংবাদিক ভারত বা ভারতীয়দের নিয়ে উন্মুক্ত আড্ডায় কথা বলতেও ভয় পায়।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৪০

লুধুয়া বলেছেন: বাংলাদেশী মোল্লাদের পেলে ঠেঙ্গিয়ে দেবে।

২| ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৪৮

মহাজাগতিক চিন্তা বলেছেন: সারা বিশ্ব আমাদেরকে সমিহ করুক এটাই কাম্য।

৩| ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৫৩

আমি নই বলেছেন: সমস্যা ভারতের, না হলে একটা প্রতিবেশির সাথেও সম্পর্ক ভালো নয় কেন? পাকিস্তান, চীন, নেপাল, শ্রীলংকা, মালদ্বীপ, বাংলাদেশ কারও সাথেই সম্পর্ক ভাল নয়।

৪| ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:২৯

রাসেল বলেছেন: বাংলাদেশী হিসাবে আপনি সন্মান পাওয়াতে আমিও গর্বিত। এই সন্মান সাধারণত আমরা দেশের বাহিরে পেয়ে থাকি না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.