নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি, সালিহ ইব্রাহিম।

সালিহ্ ইব্রাহিম

যে বিষয়ে জ্ঞান নেই, সে বিষয় থেকে বিরত থাকা কঠিন

সালিহ্ ইব্রাহিম › বিস্তারিত পোস্টঃ

শবে বরাআতের ফজিলত, করণীয় ও বর্জনীয়

২৯ শে মে, ২০১৫ বিকাল ৪:৪৫

হযরত মুহাম্মদ বিন মাসলামা (রা.) বর্ণনা করেন হযরত মুহাম্মদ (সা.) এরশাদ করেন, বছরের দিনগুলোতে আল্লাহ্ তা’আলার খাস রহমত কোমল বাতাসের ঝাপটা বিশেষ বিশেষ দিনে বা রাতে আথবা দিনে-রাতে বিশেষ সময়ে প্রবাহিত হয়। অতএব তোমরা ওই খাস রহমত পাওয়ার জন্য সে সময়গুলোতে (ইবাদত-বন্দেগী ও দোয়ায় মশগুল থেকে ) নিজেকে পেশ কর। হয়ত বা সে রহমতের কোমল ঝাপটা তোমাকেও স্পর্শ করবে। ফলে আর কখনোই হতভাগা হবে না। (ত্বাবারানী ১৯ম খন্ড ২৩৪ পৃষ্ঠা)

সে খাস রহমতের কোমল ঝাপটার একটি নমুনা হল শবে বরাআত। আরবী শব্দ শব অর্থ রাত, বরাআত অর্থ অব্যাহতি, নিষ্কৃতি, দায়মুক্তি ইত্যাদি। শবে-বরাআত আর্থ নাজাত, অব্যাহতি, নিষ্কৃতি, দায়মুক্তির রাত। এ রাতে বান্দা যিকির, তেলওয়াতে কোরআন, তওবা-ইস্তেগফার, দোয়া ইত্যাদি আমল দ্বারা আল্লাহ্ তা’আলার আযাব, গজব থেকে মুক্তি করে বলেই এক শবে-বরাআত বলা হয়। এ বরকতময় রজনীকে হাদীস শরীফে লাইলাতুন নিফসি মিন শা’বান (তথা সাবান মাসের ১৫তম রাত) বলা হয়েছে। এর রাতের বিশেষ ফযীলত বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। এ মর্মে কিছু কিছু দুর্বল হাদিসও রয়েছে। তবে ৮ অথবা ১০ জন সাহাবায়ে কেরাম থেকে বিভিন্ন সূত্রে এর ফযীলত ও বরকত বর্ণিত আছে। আল্লামা ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) বলেন, শা’বানের ১৫তম রাতের ফযীলত শরীয়তে প্রমাণিত। সালফে সালেহীন এর মধ্যে অনেকেই এ রাতে বিশেষভাবে ইবাদত করতেন (মুখতাছার ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়া পৃষ্ঠা ২৯১) বিশ্ব বিখ্যাত আহলে হাদীস আলেম শাইখ নাসীরুদ্দীন আলবানী তাঁর প্রসিদ্ধ কিতাব সিলসিলাতুল আহাদীসিস সহীহা এর তৃতীয় খন্ডে এ বিষয়ে বিস্তারিত হাদীস উল্লেখ করে বলেছেন, শবে-বরাআত এর ফযীলত ভিত্তিহীন নয়। বিশ্ববিখ্যাত দারূল উলুম দেওবন্দের সমস্ত আকাবিরে ওলায়েমা কিরামও এর ফযীলতের বিষয়ে মত প্রকাশ করেছেন। তবে কিছু লোক যারা নামাজ পড়ে না, শুধু কেবল শবে বরআত ও শবে ক্বদরে নামাজ পড়াকেই যথেষ্ট মনে করে তারা মারাত্মক বিভ্রান্তিতে আছেন।

শবে বরআতের ফজিলত সম্পর্কিত হাদীস
হযরত মুআয বিন জাবাল (রা.) রসূলুল্লাহ্ (সা.) থেকে এরশাদ করেছেন, আল্লাহ্ তা’আলা ১৫ই শা’বান রাতে বান্দাদের দিকে বিশেষ রহমতের তাওয়াজ্জুহ্ করে তাদেরকে ক্ষমা করে দেন। তবে কাফির, মুশরিক, ও হিংসা-দ্বেষ পোষণকারী ব্যতিত। (সহীহ্ ইবনে হিব্বান, ৭/৪৭০)

হযরত মুসা (রা.) রসূলুল্লাহ্ (সা.) থেকে এরশাদ করেছেন, এ রাতে হিংসা-দ্বেষ পোষণকারী ও কাফির, মুশরিক ব্যতিত বিশেষভাবে আল্লাহ্ তা’আলা বান্দাদেরকে ক্ষমা করে দেন। (সহীহুল জামেউস সগীর, ১ম খন্ড ৩৭৩ পৃষ্ঠা, ২য় খন্ড ৭৮৬ পৃষ্ঠা)।
ওই একই হাদীস ত্ববারানী ফিল কাবীর গ্রন্থে হযরত আবু সালাবা (রা.), হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে আমর থেকে মুসনাদে আহমদ হাদীস নং ৬৬৪২, হযরত আবু হুরায়রা থেকে যাওয়াদে মুসনাদে বাযযার ২৪৫ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে।
উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (রা.) রসূলুল্লাহ্ (সা.) থেকে এরশাদ করেছেন, এ রাতে আল্লাহ্ তা’আলা দুনিয়ার আসমানে বিশেষ তাজ্জালী প্রকাশ করে রহমত নাযিল করেন এবং ক্বালব গোত্রের যাত ভেড়া, বকরী, ছাগল রয়েছে সেগুলোর পশমের সংখ্যার অধিক লোকদের ক্ষমা করেন। (তিরমীজি শরীফ ১ম খন্ড ১৪৩ পৃষ্ঠা, ইবনে মাজাহ হাদীস নং ১৩৫৯, মুসনাদে আহমদ ৬ষ্ঠ খন্ড)।

হযরত উসমান ইবনে আবিল আস (রা.) রসূলুল্লাহ্ (সা.) থেকে এরশাদ করেছেন, শা’বানের ১৫তম রাতে আল্লাহ্ তা’আলা ঘোষণা করেন, বান্দারা! কে আছ আমার নিকট ক্ষমাপ্রার্থী, আমি তাকে ক্ষমা করে দিব, কে আছ সওয়ালকারী, আমি তাকে দান করবো, এভাবে যে যে বিষয়ে দোয়া করে আল্লাহ্ তা’আলা কবুল করেন তবে ব্যাভিচারী, কাফের ও মুশরিক ব্যতিত। (দাঈফ জামিউস্ সগীর হাদীস নং- ৬৫৩)

হযরত আলী রসূলুল্লাহ্ (সা.) থেকে এরশাদ করেছেন, ১৫ই শা’বানের রাতে নামাজ পড় এবং দিনে রোজা রাখ। এ রাতে আল্লাহ্ তা’আলা সূর্যাস্তের পর হতেই তাজ্জাল্লী রহমতের মাধ্যমে দুনিয়ার আসমানে আবতরণ করে বান্দাদের উদ্দেশ্যে বলতে থাকেন, আছ কেউ ক্ষমাপ্রার্থী, আছো কেউ রিযিক্ তলবকারী, আমি তাকে ক্ষমা করব এবং রিযিক্ দান করব, আছ কোন অসুস্থ বা মুসিবতে পতিত ব্যক্তি আমি তাকে সুস্থতা দান করব এবং বিপদমুক্ত করব এভাবে সুবেহ্ সাদিক পর্যন্ত আল্লাহ্ তা’আলা তার বান্দাদের ডাকতে থাকেন। (লাতাইফুল মা’আরিফ পৃষ্ঠা ১৬০, ইবনে মাজাহ্ সূত্রে)

হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে আমর (রা.) রসূলুল্লাহ্ (সা.) থেকে এরশাদ করেছেন, ১৫ই শা’বানের রাতে আল্লাহ্ তা’আলা বান্দাদের প্রতি বিশেষ রহমত নাযিল করেন ও মাফ করে দেনস। তবে হিংসা-দ্বেষ পোষণকারী ও অন্যায়ভাবে হত্যাকারী ব্যতিত (মুসনাদে আহমদ)


এক হাদীসে বর্ণিত আছে, এ রাতে কাফির, মুশরিক, চুগোলখোর, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী, অন্যাভাবে অন্যকে কষ্ট দানকারী, পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান, মদ পানকারী, হিংসা-দ্বেষ পোষনকারী, অন্যায়ভাবে হত্যাকারী ও টাখনুর নিচে পোষাক পরিধানকারী ব্যতিত সকলকে মাফ করে দেওয়া হবে। (মাদারিজুন নবুওয়্যাত ১ম খন্ড ৬৭৪ পৃষ্ঠা)

কোন কোন বর্ণনায় আছে যে, এ রাতে আগত বছরে মানুষের রিযিক্ নির্ধারণ করা হয় এবং হায়াত-মওত লিখা হয়। (মাদারিজুন নবুওয়্যাত ১ম খন্ড ৬৭৪ পৃষ্ঠা)

অন্য আর এক বর্ণনায় আছে চারটি রাতে বিশেষভাবে রহমতের দরজা খোলা হয়। (১) ঈদুল ফিতর (২) ঈদুল আযহা (৩) ১৫ই শা’বান (৪) আরাফার রাত (মাদারিজুন নবুওয়্যাত ১ম খন্ড ৬৭৪ পৃষ্ঠা)

হযরত আলী (রা.) এ রাতে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলেছিলেন, অন্যায়ভাবে চাঁদা আদায়কারী, জাদুকর, গণক, অন্যায়ভাবে প্রহারকারী ও বাদ্যযন্ত্র দ্বারা গান গায় এমন ব্যক্তি ব্যতিত এ রাতে সকলের জন্য বিশেষভাবে দোয়া কবুল ও মাফির রাত (লাতায়িফুল মাআরিফ)

এ রাতে করণীয়
বিশেষভাবে ইবাদত-বন্দেগী, নফল নামায, তিলাওয়াতে কুরআন, যিকির, তওবা-ইস্তেগফার ইত্যাদি আমলে মশগুল থাকা এবং সকল পেরেশানী থেকে মুক্তি, হালাল রুজি রোজগার ও সকল প্রকার প্রয়োজনের জন্য আল্লাহপাকের দরবারে বিশেষভাবে দোযা করা এবং ১৫ই সাবান দিনে রোজা রাখা। নফল নামাযে দীর্ঘ সময় সিজদারত অবস্থায় দোয়া করা। সকল মুমিন, মুসলমান, নারী-পুরুষ, জীবিত-মৃত সকলের জন্য দোয়া করা। মৃতদের জন্য ইসালে সওয়াব ও দোয়ার নিয়তে কবর যিয়ারত করা। হায়েজ নেফাস ওয়ালী মহিলাগণ নামায পড়া ও কুরআন তিলাওয়াত করা ব্যততি যাবতীয় যিকির আযগার করা, তওবা-ইস্তেগার ও দোয়া দরূদ পড়ায় লিপ্ত থাকবেন। এভাবে তারাও এরাতের ফযীলত বরকত হাসিল করতে পারেন। নফল ইবাদত সর্বদাই ঘরে করা উত্তম্ তবে অলসতা বা ঘুমের আশংকা হলে মসজিদেও ইবাদত করা যাবে। এতে কোনো বিধি-নিষেধ নেই। হক্কানী উলামায়ে কিরামের ওয়াজ নসীহত শুনা অন্যান্র অনেক নফল ইবাদতের চেয়ে উত্তম। মোটকথা এই ফযীলকতপূর্ণ রজনীতে ইবাদত-বন্দেগী ও দোয়ায় লিপ্ত থেকে আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি অর্জন করা।

এ রাতে বর্জনীয়
এ রাতে বিশেষভাবে হারুয়া-রুটি, শিরনী, তবারক তৈরী করে ইসালে সওয়াবের রূসম (প্রথা) জারি করা ও জরুরী মনে করা বিদ্আ’ত। বিশেষ করে দলবদ্ধভাবে চাপ প্রয়োগ করে চাঁদা উঠিয়ে এসব করা মোটেই ঠিক নয়।
এ গুওলোর আয়োজকগণ এ কাজে ব্যস্ত থাকায ইবাদতে মনোযোগ দিতে পারেন না। অনেক ক্ষেত্রে যথেষ্ট শোরগোল হওয়ায় ইবাদতেও বিঘœ ঘটে। বিশেষ তবারক বন্টনের সময় শোরগোলের দরূন ইবাদতের পরিবেশ নষ্ট হয়। আতশবাজি ও পটকা ফুটানো সম্পূর্ণরুপে নাযায়েজ। মসজিদে বা বাড়ি-ঘরে বা কবরস্থানে আলোকসজ্জা করা সম্পূর্ণ হারাম ও বিধর্মীদের অনুকরন। মাদ্রাসা মসজিদের টাকা দিয়ে শিরনী তবারক বিতরন করা জায়েজ নয়। মাইকে মিলাদ পড়ে অন্যদের ইবাদতে ব্যাঘাত ঘটানো উচিত নয়। মসজিদে দৌড়াদোড়ি করা, গল্প-গোজব করা, থেকে শিশু-কিশোর ও তরূনদের বিশেষভাবে বিরত রেখে বয়স্কদের এ ব্যাপারে বিশেষ সতর্কতা অবল্বন করা উচিত। এবং সদা সর্বদা মসজিদের আদব রক্ষা করে ইবাদত বন্দেগীতে মনোনিবেশ করা জরুরী। সাধারন নফল নামায জামাতে পড়া মাকরূহ। রাতে দীর্ঘক্ষণ ইবাদত করে ফজরের নামায যেন কাযা না হয়, বরং ফজরের নামায জাসাতের সাথে পড়ার ইহতেমাম করা অতি জরুরী। আল্লাহ তা’য়ালা আমাদের সকলকে সকল প্রকার বিদআ’ত পরিহার করে সুন্নাত মুতাবেক জীবন-যাপন করার তাওফীক দান করুন আমীন।

তথ্য সূত্র:-
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) পেশ ইমাম ও বৃহত্তর মোমেনশাহী (ময়মনসিংহ) ফতোয়া বোর্ডের সভাপতি মুফ্তি ফজলুল হক লিখিত লিফলেট হতে সংগৃহীত










মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.