![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সময় তখন ২০১০ সাল। আমি তখন ঢাকার একটা সরকারি হাই
স্কুলে পড়তাম। পড়ালেখায় অসম্ভব ফাঁকিবাজ। আমার সেই ফাঁকিবাজি
জীবনের অন্যতম দুই বন্ধু ছিল ফয়সাল আর রবিন। একদিন টিফিন
এ স্কুল পালাইয়া তিনজন মিলে একটা বাসে উঠে পড়লাম। গন্তব্য
স্টেডিয়াম। বাংলাদেশ বনাম ইংল্যান্ডের টেস্ট খেলা চলতাছে।
স্টেডিয়ামে পৌঁছে তিনটা লোকাল গ্যালারীর টিকেট কিনে
ঢুকে পড়লাম স্টেডিয়ামে। গ্যালারীতে ঢুকেই রোদ কম
আছে এমন একটা কোনায় গিয়ে আমরা বসে পড়লাম। একদম যে
আরামের জায়গায় বসেছি তা কিন্তু না। এইখানে বসার অন্যতম কারন
হল আমাদে সামনের সিটে তিনটা পরী বসে আছে। কোন
বেকুব আছে যে এইখানে না বসে অন্য কোথাও বসবে।
.
কিছুক্ষন খেলার প্রতি মনোযোগ দিয়ে হাল ছেড়ে দিলাম।
ইংল্যান্ড যেভাবে ব্যাটিং করতাছে পুরাদিনে একটা উইকেট পড়বে
কিনা সন্দেহ। কি যে একঘেয়ে অবস্থা। নাহ! বোর হইলে
চলবেনা। খেলার প্রতি মনোযোগ ছেড়ে দিলাম। ফয়সাল তখন
সমানে ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যান গুলারে ঠেকাঠেকি করার জন্য গালি
দিয়ে যাচ্ছে। আর রবিন দেখলাম ঘুমাচ্ছে। এই গাধাটায় পারেও
ঘুমাইতে। হঠাৎ আমাদের সামনে বসা মেয়েগুলার দিকে নজর
পড়লো। তাদের অবস্থাও আমাদের মত। দুইজন দেখলাম কি
একটা সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন পড়তেছে আর অন্য একজন
হেডফোন লাগাইয়া গান শুনতেছে। আমি দেখলাম, এই সুযোগ
মজা করার। যেহেতু মেয়েটা গান শুনছে তার মানে বাইরের
কোন আওয়াজ তার কানে ঢুকবেনা। ফয়সাল আর রবিনরে বললাম
বাকি দুইটা মেয়েরে সামলাইতে আর আমি
হেডফোনওয়ালীরে। তারা ইতিমধ্যেই মেয়েদেরকে
পচানো মার্কা জোকস জোড়ে জোড়ে পড়তাছে যাতে ঐ
মেয়েগুলা সেটা শুনে ক্ষ্যাপে। আর আমি
হেডফোনওয়ালীরে সমানে আই ল্যাপিউ আই ল্যাপিউ কইতাছি।
হঠাৎ করে মেয়েটা পিছনে ফিরে বলল,
-এই ছেলে তোমার সমস্যা কি?
- কিসের সমস্যা? (আমি)
- পিছন থেকে বার বার ফালতু কথা বলতাছো কেন?
- আমি ভাবলাম খাইছে আমারে সব শুনছে মনে হয়। তবুও গলার
বেশ জোড় এনে বললাম, আমার মুখ আমি যা ইচ্ছা তাই বলমু।
তোমারে শুনতে বলছে কে?
- মেয়েটা ঠাশ করে আমার গালে একটা থাপ্পড় মেরে
বলল,আমার হাত আমিও যা ইচ্ছা তাই করবো। এই বলে তার পাশে
বসা অন্য মেয়েগুলাকে নিয়ে আরেকটা সিটে গিয়ে বসলো।
আমি এক্কেবারে আবুল হয় বসে গেলাম। মাইয়াটায় যুক্তি দিয়া প্যাচ
মাইরা গেছে। লজ্জায় আমি শেষ। আমার দুইবন্ধু তখন হাসতে
হাসতে মরে যায় অবস্থা। আমি মনে মনে ভাবলাম, এই অপমানের
বদলা নিতেই হবে। যেভাবেই হোক।
.
কোথায় যেন পড়েছিলাম, শত্রুতে কাবু করতে হলে আগে
তার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতে হয়। আমি বেশকিছুক্ষন লক্ষ
করার পর দেখতে পেলাম, তাদের টিকেটগুলা পাশের সিটে
বোতলের নিচে রাখা। ব্যাস আর পায়কে। আমার শয়তানি মাথায়
তুফানি আইডিয়া আসলো। আস্তে করে তাদের সিটের পিছনে
দাড়িয়ে টিকেটগুলা নিয়ে ফেললাম। মুচকি হেসে মনে মনে
বললাম, এবার বুঝবা কত লঙ্কায় কত ঝাল। গ্যালারীর মেইন
গেটের পাশে সবসময় পুলিশ দাড়িয়ে থাকে। তাদেরকে গিয়ে
বললাম,আঙ্কেল ঐ মেয়েগুলা টিকেট ছাড়া স্টেডিয়ামে
ঢুকছে। আমার কথা শুনে পুলিশ গুলা সাথে মেয়েদের কাছে
গিয়ে জিজ্ঞেস করলো, এই মেয়েরা তোমাদের টিকেট
দেখাও। হেডফোনওয়ালী মেয়েটা মুচকি হেসে যখজ পাশ
থেকে টিকেট নিতে যাবে তখন দেখলো টিকেট নাই। আর
পায় কে? পুলিশ সাথে সাথে মেয়েগুলাকে গ্যালারী থেকে
বেরিয়ে যেতে বলল। প্রথম দুই মেয়ে আমার দিকে বিষ দৃষ্ট
দিয়ে চলে গেল। আর হেডফোনওয়ালী মেয়েটা তখন
প্রায় কান্না কান্না ভাব। অবাক এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল। সেই
দৃষ্টিতে অবিশ্বাসের স্পষ্ট ছাপ। হঠাৎ মেয়েটার প্রতি
একধরনের তীব্র মায়া অনুভব করলাম। তার চলে যাওয়ার করুন
মুখটার কথা বারবার মনে পড়তে লাগলো।
.
দৌড়ে স্টেডিয়াম থেকে বেরিয়ে গেলাম তাদের কাছে ক্ষমা
চাওয়ার জন্য। কিন্তু বের হয়ে কাউকে আর দেখতে পেলাম
না। তীব্র এক অপরাধবোধ নিয়ে আমি বাড়ি ফিরে গেলাম। এক
মুহূর্তের জন্যও মেয়েটাকে ভুলতে পারিনি। হয়তো তার
প্রেমে পড়েছিলাম। এরপর অনেক বার স্টেডিয়ামে গেছি।
অনেক জায়গায় তাকে খুঁজেছি। অনেক মেয়েকেই দেখি।
কিন্তু সেই মেয়েটিকে আর দেখিনি। অপরাধের গ্লানি দিয়ে
সে চলে গেছে। আর রেখে গেছে তার জন্য অসীম
ভালোবাসা।
২| ২৫ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ১২:০৫
শরীফ শাওন বলেছেন: ক্রাশ ভাই।
©somewhere in net ltd.
১|
২২ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ২:২২
মো: হাসানূর রহমান রিজভী বলেছেন: হায় প্রেম!