নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শুভখান

I will make politics difficult for the politicians

শুভখান

I will make politics difficult for the politicians

শুভখান › বিস্তারিত পোস্টঃ

রহস্যাবৃত একটি স্বপ্নের অপমৃত্যু

২৯ শে মে, ২০১৩ রাত ১০:৩৭

৩০ মে ১৯৮১। কালুরঘাট। ঘড়িতে সময় রাত আড়াইটা। এই কালুরঘাটে ১৯৭১ সালে নাটকীয়ভাবে ইতিহাসের অংশ হয়েছিলেন জিয়াউর রহমান। সেই একই স্থান থেকে জিয়াউর রহমানকে হত্যার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করছে একদল সেনা কর্মকর্তা। দমকা হাওয়ার সঙ্গে তখন ঘন ঘন বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। সাগর থেকে আসা হিমেল হাওয়ায় চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে জিয়াউর রহমান গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। তবে চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্টে জেগে আছেন জিয়ার একসময়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু মেজর জেনারেল এম এ মঞ্জুর। বলা হয়ে থাকে, তারই পরিকল্পনা অনুযায়ী এই অফিসাররা এগিয়ে যাচ্ছে তাদের চূড়ান্ত লক্ষ্যের দিকে। উত্তেজিত, কিছুটা চিন্তিত মেজর জেনারেল মঞ্জুর।



ঘাতক দলের নেতৃত্বে লেফটেন্যান্ট কর্নেল মতিউর রহমান। সৈনিকেরা অপারগতা প্রকাশ করায় মাত্র ১৬ জন অফিসারের একটি দল চূড়ান্ত আঘাত হানার জন্য প্রস্তুত। তাদের সঙ্গে আছে ১১টি এসএমজি, তিনটি রকেট লঞ্চার ও তিনটি গ্রেনেড ফায়ারিং রাইফেল। ভোর চারটার দিকে তিনটি দলে ভাগ হয়ে অফিসাররা সার্কিট হাউসে আক্রমণ চালায়। সার্কিট হাউস চত্বরে ঢুকেই লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফজলে হোসেন তার হাতের রকেট লঞ্চার দিয়ে পর পর দুটি ফায়ার করে। এতে সার্কিট হাউস ভবনে দুটি বড় গর্ত হয়ে যায়। এরপর ঘাতকেরা সার্কিট হাউজের ৯ নম্বর কক্ষে হানা দেয়। তাদের কাছে তথ্য ছিল ওই কক্ষে আছেন রাষ্ট্রপতি। তবে ওই কক্ষ থেকে বের হয়ে আসেন ড. আমিনা রহমান। এরপর বিভিন্ন কক্ষে এলোপাতাড়ি খোঁজাখুঁজি পর জিয়াউর রহমানের সন্ধান পায় মেজর মোজাফফর ও ক্যাপ্টেন মোসলেহ উদ্দীন। মোসলেহ উদ্দীন প্রেসিডেন্টকে আশ্বস্ত করতে চেয়েছিলেন। সে হয়তো তখনো জানত, তারা প্রেসিডেন্টকে বন্দী করতে এসেছেন, হত্যা করতে নয়। জিয়ার প্রশ্নের মুখে কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে মোসলেহ উদ্দীন প্রেসিডেন্টকে বলছিলেন, ঘাবড়াবেন না। আমরা শুধু আপনাকে ক্যান্টনমেন্টে নিতে এসেছি। কিন্তু একটু পরেই অপর একটি দলের নেতৃত্বে থাকা কর্নেল মতিউর রহমান এগিয়ে আসেন। তিনি সামনে এসে খুব কাছ থেকে এসএমজি দিয়ে জিয়াকে সরাসরি গুলি করেন। সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন জিয়াউর রহমান। ঝাঁঝরা হয়ে যায় জিয়ার মুখমণ্ডলসহ শরীরের ওপর অংশ।



এরপর অনেক ঘটনা ঘটে। মেজর জেনারেল মঞ্জুর পুরো ঘটনার দায়ভার নিজের কাঁধে নিয়ে নেন। ঢাকার সঙ্গে দর-কষাকষির একপর্যায়ে মার্শাল ল জারি করাসহ চার দফা দাবি পেশ করেন। তবে ঢাকা থেকে সেনাপ্রধান এরশাদ কঠোর অবস্থান নেন। সময় গড়ানোর সঙ্গে চলে সমঝোতার চেষ্টা। একসময় সব ব্যর্থ হয়। হতাশ হয়ে মেজর জেনারেল মঞ্জুর ১ জুন পরিবারসহ পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। সে প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে, চা-বাগানে এক কুলির কুটির থেকে আটক হন পুলিশের হাতে। পরে তাকে হত্যা করা হয় চট্টগ্রাম সেনানিবাসে। সেই সময় রেডিও টেলিভিশনে প্রচার করা হয়, মঞ্জুর একদল উচ্ছৃঙ্খল সেনাসদস্যের হাতে নিহত হয়েছেন। তবে অনেকেই মনে বলেন, এটা ছিল নিপাট মিথ্যাচার, বরং সেই সময়ে উচ্চপদস্থ কোনো সেনা কর্মকর্তার অনুগত এক অফিসার মঞ্জুরকে ঠান্ডা মাথায় খুব কাছে থেকে গুলি করে হত্যা করে। এ ছাড়া জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ড নিয়ে সে সময়ে ঢাকার অনেক উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তা জানত বলেও অনেক সামরিক বিশ্লেষক মনে করেন। অনেকে এ বিষয়ে তথ্যপ্রমাণও হাজির করেছেন।



জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ড নিয়ে গঠিত বিচার বিভাগীয় কমিশনের প্রতিবেদন আজও প্রকাশিত না হওয়ায় এ বিষয়ে এখনো ধোঁয়াশা রয়ে গেছে। আছে অস্পষ্টতা। আছে অনেক বিতর্ক। মঞ্জু আর জিয়া ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল। তারা একসঙ্গে পাকিস্তান থেকে পালিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয়। ৭ নভেম্বর সিপাহি জনতার বিপ্লবের পর জিয়া মঞ্জুরকে ভারত থেকে ডেকে আনেন। সে সময় দুজন কিন্তু ঘনিষ্ঠ থেকে অনেক কাজ করেছেন। তবে দ্বন্দ্ব বাধে শওকত, মঞ্জুর ও এরশাদের প্রভাববলয় নিয়ে। মঞ্জুর সেনাপ্রধান হতে চেয়েছিলেন। শওকত তার থেকে দুই থেকে আড়াই বছর সিনিয়র ছিলেন। জিয়া তাকে আগে সেনাপ্রধান করতে চেয়েছিলেন। তবে দুজনের উদ্ধত মনোভাব আর দ্বন্দ্বে বিরক্ত হয়ে জিয়া এরশাদকে সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ দেন। এতে মঞ্জুর ক্ষুব্ধ হন। তবে এ ক্ষুব্ধতা থেকে মঞ্জুর জিয়াকে হত্যা করতে পারে, এ বিষয়টি অকল্পনীয় ছিল।



তবে সে সময়ে ঘটনাপ্রবাহ ও নানা দিক বিশ্লেষণ করে বলা যায়, যারা এ ঘটনার পেছনে ছিল, তারা খুবই চতুর ছিল। তারা এক ঢিলে দুই পাখি নয়, তিন পাখি মেরেছিল। জিয়াউর রহমান, মঞ্জুর ও সেনাবাহিনীতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী অফিসার্সবৃন্দ। জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর ১৩ জনকে ফাসি ও আরও ১০-১২ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়ার পাশাপাশি সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে একধরনের শুদ্ধি অভিযান চালানো হয়েছিল, যাতে শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা অফিসারকে সেনাবাহিনী ছাড়তে বাধ্য করা হয়। যার পুরোপুরি সুফল ভোগ করেছিল তখনকার শাসকগোষ্ঠী।



তবে ১৯৮১ তে জেনারেল এরশাদের অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। এছাড়া জিয়াউর রহমানকে সরাসরি গুলি করে হত্যাকারী লে. কর্নেল মতির সঙ্গে সেনাপ্রধানের একটি অনির্ধারিত বৈঠকের কথাও শোনা গিয়েছিল। তবে মতিউরের তখন একটা কোর্সে দেশের বাইরে যাওয়ার কথা ছিল। সে বিষয়ে এরশাদ তার সঙ্গে দেখা করে থাকতে পারেন। আবার এ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র নাও হয়ে থাকতে পারে। এ ছাড়া জিয়া হত্যাকাণ্ডের কয়েক দিন আগে এরশাদের সঙ্গে মঞ্জুরের একটা আলাপচারিতার কথাও সে সময়ে চাউর ছিল। যদিও মঞ্জুর কোনোভাবেই এরশাদকে সহ্য করতে পারতেন না। এমনকি এমনও শোনা যায়, এরশাদকে স্যালুট করতেও মঞ্জুর অনেকবার অপারগতা প্রকাশ করেছিলেন। এ বাস্তবতায় মঞ্জুরের সঙ্গে এরশাদ কী নিয়ে বৈঠক করেছিলেন, তাও একধরনের রহস্য। যার জট আজও খোলেনি।



মঞ্জুর একজন চৌকস আর প্রতিভাবান অফিসার ছিলেন। অফিসার হিসেবে তার যোগ্যতা ছিল আন্তর্জাতিক মানের। তবে মঞ্জুর কেন জিয়াকে হত্যা করতে গেলেন, তা আজও আমি ঠিক বুঝতে পারি না। কারণ, চট্টগ্রামে জিয়াকে হত্যা করে অভ্যুত্থান করা সম্ভব নয়। এ ছাড়া জিয়া মঞ্জুরের বড় শত্র“ ছিল না। তবে কেন এ ঘটনা ঘটল, আমি ঠিক হিসাব মেলাতে পারি না। এ ছাড়া মঞ্জুর ঠিক জিয়াকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন কি না, সে বিষয়েও আমি সন্দিহান। কারণ, তার মতো একজন অফিসারের পক্ষে এমন অপরিপক্ব চিন্তা করা সম্ভব নয় বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।



মঞ্জু আর জিয়া ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল। তারা একসঙ্গে পাকিস্তান থেকে পালিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয়। ৭ নভেম্বর সিপাহি জনতার বিপ্লবের পর জিয়া মঞ্জুরকে ভারত থেকে ডেকে আনেন। সে সময় দুজন কিন্তু ঘনিষ্ঠ থেকে অনেক কাজ করেছেন। তবে দ্বন্দ্ব বাধে শওকত, মঞ্জুর ও এরশাদের প্রভাববলয় নিয়ে। মঞ্জুর সেনাপ্রধান হতে চেয়েছিলেন। শওকত তার থেকে দুই থেকে আড়াই বছর সিনিয়র ছিলেন। জিয়া তাকে আগে সেনাপ্রধান করতে চেয়েছিলেন।



তার মৃত্যুর খবর টেলিভিশন ও পত্রপত্রিকায় ফলাও করে প্রচার করা হয়। বলা হয় একদল উচ্ছৃঙ্খল সেনাসদস্যের হাতে তিনি নিহত হয়েছেন। কিন্তু বিষয়টা ছিল নির্জলা মিথ্যাচার। তাকে একজন অফিসার খুব কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করে। এ অফিসার কার নির্দেশে এ কাজ করেছিলেন, তা আজও জানা যায়নি। কোনো দিন হয়তো আর জানাও যাবে না। এটাই দুঃখের আর পরিতাপের বিষয়।



জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের তালিকাঃ



১. ব্রিগেডিয়ার মোহসিন উদ্দিন

২. কর্নেল নোয়াজেশ উদ্দিন

৩. কর্নেল আব্দুর রশিদ

৪. কর্নেল ফজলে হোসেন

৫. লে. কর্নেল মাহফুজুর রহমান

(জিয়াউর রহমানের একান্ত সচিব)

৬. লে. কর্নেল দেলোয়ার হোসেন

৭. মেজর গিয়াস উদ্দীন আহমেদ

৮. মেজর ইয়াজদানী ভূঁইয়া

৯. মেজর মুজিবুর রহমান

১০. ক্যাপ্টেন আব্দুস সাত্তার

১১. মেজর মুমিনুল হক

১২. ক্যাপ্টেন জামিল হক

১৩. লেফটেন্যান্ট রফিকুল হাসান



বীরউত্তম শহীদ প্রেসিডেন্ট মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান তার মায়ের মত দেশটাকে অসম্ভব রকম ভালোবাসতেন। তার যুদ্ধে ক্লান্ত - শত বছরের অত্যাচার শোষনে ক্লিষ্ট দেশটার মানুষের ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তা করতেন। কিন্তু এই তাকেই কেন এভাবে আততায়ীদের হাতে শহীদ হতে হয়েছিল ? তার পেছনের ইন্ধন দাতা কারা ছিল ? যদিও আজো সেই ইতিহাস রহস্যের এক ধুম্র ইন্দ্রজালে ঢাকা পরে রয়েছে কিন্তু কিছু দিক পর্যবেক্ষণ থেকেই রহস্যের ঘন কালো মেঘ কিছুটা হলেও পরিষ্কার হয়ে ধরা দেয় হৃদয়ের এক চাপা আর্তনাদ হয়ে।



প্রথম পর্যবেক্ষণঃ



বাংলাদেশের মরন সমস্যা ফারাক্কা নিয়ে জিয়াউর রহমান পানি ডাকাত ভারতের বিরুদ্ধে মাথা উচু করে কথা বলেছিলেন জাতিসংঘে। তার সুবাদে ভারত পানি দিতে বাধ্যও হয়েছিলো। ১৯৭৬ এ ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ অ্যাম্বেসেডর হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন এম আর সিদ্দিকী এবং বাংলাদেশে মার্কিন অ্যাম্বেসেডর হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন ডেভিস বোস্টার। এম আর সিদ্দীকীকে জিয়াউর রহমান নির্দেশ দিয়েছিলেন ওয়াশিংটন পৌছে কুটনৈতিক দেনদরবার করতে যাতে সামনের জাতিসংঘ অধিবেশনে গংগার পানিবন্টনের বিষয়টা উত্থাপন করার পর মার্কিন সরকারের সমর্থন পাওয়া যায়। এম আর সিদ্দিকীর মেরুদন্ডের দুর্বলতা বেশ ভালো ভাবেই বোঝা যায় সেখানে। এম আর সিদ্দিকী জাতিসংঘে ফারাক্কা বাঁধ / গংগার পানি ইস্যুটা তোলার বিপক্ষে ছিলেন , কারন তার ধারনা জাতিসংঘে কোন ফল না হলে বিষয়টা ভয়াবহ প্রতিকূল হয়ে যাবে বাংলাদেশের জন্য।



তিনি বোস্টার কে বলেছিলেন ভারত তার প্রয়োজন মত যথেষ্ট পানি পাওয়ার পরও কেন অতিরিক্ত পানি প্রত্যাহার/ডাকাতি/লুট করছে তিনি সেটা বুঝতে পারছেন না। কিন্তু জিয়া ঠিকই জিতেছিলেন পানির ন্যায্য আদায়ের সেই কূটনৈতিক যুদ্ধে। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ফেলে ইন্দিরার কাছ থেকে বছরে ৪০০০০ কিউসেক পানি আদায় করে নিয়েছিলেন সোজা মেরুদন্ডের জিয়াউর রহমান। ১৯৭৭ এর ডিসেম্বরে ভারতের নতুন প্রধানমন্ত্রী মোরারজি দেশাই জিয়ার সাথে ৫ বছর মেয়াদী পানিবন্টন চুক্তি করেন। এপ্রিল ১৬ - ১৮ , ১৯৭৯ তে মোরারজি দেশাই বাংলাদেশ সফরের সময়ই ভারত বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশনের রূপরেখা প্রণয়ণ হয়। এম আর সিদ্দিকীর কাছ থেকেই যেটা জানা যায় ভারতের পানি ডাকাতীর ব্যাপারে জিয়ার হার্ডলাইন পলিসির আগ পর্যন্ত জিয়া যথেষ্ট সতর্ক ছিলেন ভারতের সাথে কূটনীতি বিষয়ে মে , ১৯৭৬ এর আগ পর্যন্ত , একটি বারের জন্যও ভারতের কোন সমালোচনা করেন নি। মে , ১৯৭৬ এর পর থেকেই জিয়া কড়া অবস্থান নেন ভারতের ব্যাপারে , এর কারন সম্ভবত ফারাক্কা ইস্যুতে মে ২ , ১৯৭৬ এ সম্পূর্ন ব্যর্থ হওয়া ভারত - বাংলাদেশ কারিগরী সংলাপ । অথচ এই ২০১৩ এসে সেই ১৯৮১ সালের পর থেকে আমরা দেখেছি কি করে একের পর এক ফারাক্কা বাঁধ, টিপাই মুখ বাঁধ নিয়ে আরও কত বাঁধ নিয়ে আমরা ভারতের কাছ হতে আমাদের পানির ন্যায্য অধিকার হতে বঞ্চিত হচ্ছি একের পর এক প্রহসন মুলক নাটকের কারনে। আজ দেশের নদী গুলো সব শুকিয়ে মরুভূমিতে পরিনত হচ্ছে একের পর এক। এই দ্বায় কার ? অথচ যেখানে জিয়ার জীবিত কালে এই পানি বণ্টনের একটি চমৎকার সমাধান হয়ে গিয়েছিল অথচ তার মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ আবারো হারাল তার ন্যায্য অধিকার। খুব খেয়াল করলেই বোঝা যায় দেখুন টিপাই মুখ বাঁধ নিয়ে কিছুকাল আগে যখন ইলিয়াস আলী জোড় আন্দোলন চালিয়েছিল তখনই তাকেও গুম হতে হল। কোথায় যেন খুব স্বাভাবিক ভাবেই এর মিল খুঁজে পাওয়া যায় ১৯৮১ সালের ৩০ শে মের সেই কালো রাতের সাথে। সে যাই হোক এখন দ্বিতীয় একটি পর্যবেক্ষণ সম্পর্কে কিছুটা ধারনা নেয়া যাক।



দ্বিতীয় পর্যবেক্ষণঃ



সম্প্রতি বিএসএফ এর বর্ডার ক্রাইম সবার নজরে পড়েছে কিন্তু বিগ ব্রাদার ভারত যে ১৯৭৬ থেকেই বাংলাদেশকে বর্ডারে জ্বালিয়ে যাচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের পর ১৫ টি জাহাজে করে সব অস্ত্র ভারতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে । এক শোচনীয় পর্যায় থেকে জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীকে মেরামত করা শুরু করেছিলেন। আজকের বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নিয়ে যারা গর্বিত তাদের প্রয়োজনে জানিয়ে রাখছি মুজিবের কাছে অবহেলিত সেনাবাহিনীর ডিভিশন ছিলো ৫ টি।



জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ডিভিশন সংখ্যা করেন ৯ টি , সেনা সংখ্যা ৬০০০০ থেকে ৯০০০০ এ বৃদ্ধি করেন। শুধু সেনাবাহিনীই নয় , জিয়াউর রহমানই বাংলাদেশ পুলিশের সংখ্যা ৪০০০০ থেকে ৭০০০০ এ বাড়ি্যে তোলেন । দাংগা পুলিশ বলে পরিচিত রিসার্ভড আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন এবং ঢাকার মেট্রোপলিটন পুলিশ উনিই চালু করেন । অনেকেই জেনে বোধহয় চমৎকৃত হবেন বাংলাদেশ মহিলা পুলিশ জিয়াউর রহমানই প্রতিষ্ঠা করেন ১৯৭৬ সালের ৮ ই মার্চ। বাংলাদেশ আর্মি ২০১৩ সালে এসে এখন একটি তৃণভোজি নিরীহ প্রাণীর নাম। ১৯৭১ সালে যারা সর্বপ্রথম পাকিস্থানি হানাদার দের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিল, মহান মুক্তিযুদ্ধের ৯টি মাস যারা আমাদের বেসামরিক মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা যুদ্ধে ট্রেনিং দিয়েছিল, বীরত্ব আর সাহসিকতার জন্য সারা দেশ যাদের নিয়ে গর্ব করতো, তারা এখন একটি ক্লীব জাতিয় প্রাণি হয়ে গিয়েছে। যে আর্মি দেশের মহা বিপদে সব সময় ঝাপিয়ে পড়তো, তারাই এখন জাতিসংঘের খয়রাতি চাকরির খাতিরে দেশের স্বার্থকে উপেক্ষা করে। ৭১ এ পিলখানার হত্যাকান্ড যে আর্মিকে বিদ্রোহ করতে উদ্বুদ্ধ করেছিল, ২০০৯ এর পিলখানা হত্যাকান্ড সেই আর্মিকে আরো নিবীর্য করে দিয়েছে। সাধারণ কৃষক শ্রমিক আর পেশাজীবিদের টাকায় নিবীর্য নিরীহ তৃণভোজি এবং একান্ত আওয়ামি বংশবদ আর্মি পোষার দরকার নেই। যদি আর্মি রাখতেই হয়, তাহলে বাংলার বাঘদেরই আর্মিতে স্থান হওয়া উচিত। গরু ছাগলদের নয়। তবে এই দ্বায় কার উপর এবং কোন ঐতিহাসিক হত্যার উপর নির্ভর করে হয় সেটাই আজ জাতির বিবেকের কাছে প্রশ্ন বিদ্ধ।



তৃতীয় পর্যবেক্ষণঃ



এই জিয়াউর রহমানকে মৌলবাদী নেতার অপবাদ দেয়া হয়েছে শুধুমাত্র ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতি অপটিমাম শ্রদ্ধা দেখানোর কারনে। এই জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ মহিলা পুলিশ কে এয়ারপোর্টে রোডস অ্যান্ড স্ট্রীট ডিউটিতে ডেপ্লয় করেছিলেন। বিএনপি প্রতিষ্ঠার পরপরই জিয়াউর রহমান দলের কর্মীদের রাজনৈতিক প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে কর্মশালা আয়োজনের উদ্যোগ নেন, যার মাধ্যমে দলের কর্মীদের বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ, দলের আদর্শ, সাংগঠনিক নিয়ম-কানুন ইত্যাদি বিষয়ে শিক্ষা প্রদান করা হত।



১৯৮০ সালের সেপ্টেম্বরে এরকম একটি কর্মশালা উদ্বোধনকালে তিনি দলের কর্মীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দিতে গিয়ে বলেন, “কোন রাজনৈতিক আদর্শ ধর্মকে ভিত্তি করে হতে পারে না। একটা অবদান থাকতে পারে। কিন্তু ধর্মকে কেন্দ্র করে কখনওই রাজনীতি করা যেতে পারে না। অতীতে আমাদের অভিজ্ঞতা হয়েছে যে ধর্মকে কেন্দ্র করে পাকিস্তান সময়ে যখনই রাজনীতি করা হয়েছিল সেটা বিফল হয়েছে। কারণ ধর্ম ধর্মই। আমাদের অনেকে আছে যারা আমাদের দেশে যে বিভিন্ন ধর্ম রয়েছে, সেগুলোকে কেন্দ্র করে রাজনীতির পরিবেশ সৃষ্টি করতে চেষ্টা করেন। রাজনীতির রূপরেখা বানাতে চেষ্টা করেন, আমরা বারবার দেখেছি তারা বিফল হয়েছে। ধর্মের অবদান থাকতে পারে রাজনীতিতে, কিন্তু রাজনৈতিক দল ধর্মকে কেন্দ্র করে হতে পারে না। এটা মনে রাখবেন, এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ”



এই জিয়াউর রহমানই মাদ্রাসার সিলেবাসে সায়েন্স , ইংরেজী , সমাজবিজ্ঞান অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। যেই জিয়াউর রহমানকে " সাম্প্রদায়িক " গালি দেয়া হয় আওয়ামী বাম বুজিদের তরফ থেকে সেই জিয়াউর রহমানই সব ধর্মের ধর্মীয় উৎসবের অনুষ্ঠান জাতীয় টেলিভিশনে প্রদশর্নের ব্যবস্থা করেন। এমনকি ভারতীয় সাংবাদিকরা যেই বিষয়টির প্রশংসা করেছিলেন -বাংলাদেশের মিডিয়াতে ভারতের হিন্দু মুসলিম দাংগার খবর খুব সাবধানে ছাপানো হতো , প্রচার হতো - যেটি জিয়াউর রহমানের মিডিয়া কর্মীদের প্রতি কড়া নির্দেশ ছিলো। ভারতীয় সাংবাদিকরা অবাকও হয়েছিলেন যে এই স্বাধীন দেশটিতে এখনো পর্যন্ত কোন সাম্প্রদায়িক বিগ্রহ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠেনি। কিন্তু এই ২০১৩ সালে এসে আমরা দেখছি কি করে হিন্দু, বৌদ্ধদের ঘর- বাড়ি জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ভেঙ্গে দিয়ে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে ? কি করে শাপলা চত্তরে সাধারন ধর্ম প্রান মুসলমানদের সভা করার অনুমতি দিয়ে রাতের আঁধারে তাদের উপর হত্যা আর নির্যাতন চালান হয়েছে ? জানা প্রয়োজন আপনাদের ঘর পুড়িয়ে কারা আলুপোড়া খায় ? আপনাদের ভুল বোঝার কারনে স্থিতিশীল মধ্যমপন্থার রাজনীতি ভারসাম্য হারাচ্ছে। এবং একমাত্র জিয়ার মৃত্যুর পর থেকেই অনেকটা দেশে এমন সাম্প্রতিক দাঙ্গা আর ধর্মের দোহাই দিয়ে ফতোয়া দেয়ার রীতি চালু হয়ে গেছে যেটা তার জীবিত থাকা অবস্থায় বাংলাদেশের শান্তি প্রিয় মানুষ কখনো চিন্তাও করতে পারেনি। আজ যেই সব বামরা মুক্তাংগনে দাড়িয়ে জিয়া কে গালি গালাজ করে সেই মুক্তাংগন জিয়াই তৈরী করেছিলেন তার বিরোধীদেরকে স্বাধীন ভাবে কথা বলতে দেয়ার জন্য। অথচ এইসব বামরা ৭২-৭৫ পুলিশ আর রক্ষী বাহিনীর ঠ্যাংগানি খেয়ে শহীদ মিনারে দাড়াতেই পারতোনা। একটি কথা খুব শুনতে পাওয়া যায় যে মেজর জিয়ার মৃত্যুর পর তার ঘর থেকে ভাঙা সুটকেস ছাড়া তেমন কিছুই পাওয়া যায় নাই। এ কথা আওয়ামীলীগ সহ দেশের সকল রাজনৈতিক দল গুলো এক বাক্যে প্রচার করে যাচ্ছে এমনকি দেশের সাধারন জনগণ সেটা স্বীকার করে নিয়েছে। অতএব এ কথা স্পষ্ট প্রমানিত হয় যে বীরউত্তম শহীদ প্রেসিডেন্ট মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ছিলেন সত্যি একজন মহান দেশ প্রেমিক যা বাংলাদেশের রাজনীতির যে কোন সময়ের যে কোন নেতার জন্য এক সৎ ও নিষ্ঠাবান দেশ প্রেমিক রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে আদর্শ হয়ে থাকবে। কিন্তু আজ ২০১৩ সালে দাড়িয়ে আমরা দেখতে পাই যে কি করে দেশদ্রোহী রাজাকাররা দেশপ্রেমিক উপাধী পেয়ে নির্লজ্জের মতন হেসে বেড়ায়। এবার শেষ একটি পর্যবেক্ষণ নিয়ে আলোচনা করা যাক যেটি শেষ পর্যন্ত কাল হয়ে দাড়ায় এই মহান দেশ দরদী মানুষটির জন্য। যে কারনেই হয়ত দেশ প্রেমের চরম মুল্য তাকে দিতে হয়েছিল এবং হয়ত আজো দিয়ে যাচ্ছে তার পরিবার।



শেষ পর্যবেক্ষণঃ



১৭৫৭ সালে- ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এবং সহযোগী কোম্পানীর স্থানীয় মিত্ররা বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার নবাব সিরাজৌদ্দলাকে পরাজিত করে। কালক্রমে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এই অঞ্চলের প্রশাসনিক পূর্ণ অধিকার লাভে সক্ষম হয়। ১৮৫৪ খ্রিষ্টাব্দে বাংলা, বিহার, উড়ি্ষ্যা ও আসাম নিয়ে একটি প্রশাসনিক এলাকায় তৈরি করা হয়। এর নাম ছিল বাংলা প্রেসিডেন্সি। উল্লেখ্য এই সমগ্র এলাকার আয়তন ছিল ১,৮৯,০০০ বর্গমাইল।



১৮৬৬ সালে উড়িষ্যায় দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে চরম প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। ফলে 'বাংলা প্রেসিডেন্সি' থেকে আসামকে পৃথক করে একটি পৃথক প্রেসিডেন্সি তৈরি করা হয়। এই সময় শ্রীহট্ট, কাছাড় ও গোয়ালপাড়া ইত্যাদি বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চলকে আসামের সাথে যুক্ত করা হয়েছিল। এটাই ছিল প্রথম বঙ্গভঙ্গ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই বিভাজন কার্যকরী হয় নাই।



১৮৯৯ সালে লর্ড কার্জন বড় লাট নিযুক্ত হন। মূলত ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের স্বার্থ অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য― লর্ড কার্জন বাংলা প্রসিডেন্সি ভেঙে বাংলাকে দুর্বল করার চেষ্টা করেন। বিশেষ করে বাংলার আন্দোলনরত জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ব্রিটিশশক্তি হুমকি হিসাবে নিয়েছিল। এই প্রক্রিয়া ১৯০১ সালে বাংলা প্রেসিডেন্সি থেকে উড়িষ্যাকে পৃথক করার প্রস্তাব করা হয়। এই সময় লর্ড কার্জনের প্রধান সমর্থক ও উপদেষ্টা এ্যাণ্ডুজ ফ্রেজারকে বাংলার লেফটেনান্ট পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। ফ্রেজার বাংলা প্রেসিডেন্সির ক্ষমতা গ্রহণের পর, লর্ড কার্জনের কাছে বঙ্গবিভাগের পরিকল্পনা পেশ করেন। ১৯০৩ বঙ্গাব্দের ৩ ডিসেম্বর তারিখে লর্ড কার্জন এই পরিকল্পনা প্রায় অক্ষুণ্ণ রেখে সরকারিভাবে উত্থাপন করেন এবং তা 'ক্যালকাটা গেজেট'-এ প্রকাশিত হয়। উল্লেখ্য এই সময় এই অঞ্চল শাসিত হতো একজন লেফটেন্যান্ট গভর্নরের অধীনে।

প্রশাসনিক সুবিধার জন্য এই ব্যবস্থা নেওয়া হলেও— এই বিভাজন থেকে বিশেষ কোন প্রশাসনিক সুবিধা পাওয়ার পরিবর্তে অসুবিধাই বেশি হয়েছিল। এই প্রস্তাবে ছিল–



১. সমগ্র উড়িষ্যার সাথে বঙ্গদেশের বৃহত্তম অংশ যুক্ত হবে।

২. চট্টগ্রাম বিভাগের চারটি জেলা ও ঢাকা বিভাগের ঢাকা ও ময়মনসিংহ আসামের সাথে যুক্ত করা হবে।



১৯০৫ সালের ৫ জুলাই বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্ত সরকারিভাবে ঘোষণা করা হয়। এতে বলা হয় যে— আসাম. ঢাকা, বিভাগ, চট্টগ্রাম বিভাগ, পার্বত্য ত্রিপুরা, দার্জিলিং ও রাজশাহী বিভাগ একত্রিত করে পূর্ববঙ্গ ও আসাম নামে নতুন প্রদেশ হবে এবং ঢাকা এই প্রদেশের রাজধানী হবে। বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে যে বিক্ষোভ ও আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে, তাই ইতিহাসে বঙ্গভঙ্গ রদ আন্দোলন বা সংক্ষেপে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন নামে অভিহিত হয়ে থাকে।

বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের শুরুতে এর বিরুদ্ধে হিন্দু জাতীয়তাবাদী নেতৃবৃন্দ, বাংলা পত্রপত্রিকা, ভারত ও ইংল্যান্ডের ইংরেজি পত্রিকাগুলো প্রতিবাদ করে। ঢাকার নবাব সলিমুল্লাহকে ইংরেজরা স্বপক্ষে আনতে সক্ষম হলেও, বাংলার সমগ্র মুসলমান সমাজকে আনতে পারে নাই। ১৯০৫ সালের জুলাই মাসের ভিতরে এই আন্দোলনে স্থানীয় জমিদার এবং সাধারণ প্রজাদের সাথে চরমপন্থী দলগুলোও শরিক হয়ে উঠে। ১৯০৫ সালের ১৭ই জুলাই খুলনাতে এই আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ স্বরূপ ব্রিটিশ পণ্য বয়কটের প্রস্তাব গৃহীত হয়। ক্রমান্বয়ে এই আন্দোলন ব্রিটিশ-বিরোধী জাতীয়তাবাদী অন্দোলনে রূপ লাভ করে। এই সময় ভারতের অন্যান্য প্রদেশে এর প্রভাব ছড়িয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে ব্রিটিশ বিভেদ নীতি দিয়ে মুসলমানদেরকে এই আন্দোলন থেকে সরিয়ে রাখার চেষ্টা করে, ব্রিটিশরা ব্যর্থ হয়।



১ সেপ্টেম্বর ১৯০৫ সাল, (শুক্র ১৬ ভাদ্র ১৩১২ বঙ্গাব্দ) তারিখে ব্রিটিশ ভারতের শীতকালীন রাজধানী সিমলা থেকে বঙ্গভঙ্গ আইন ঘোষিত হয়েছিল এবং এতে বলা হয়েছিল— ১৬ অক্টোবর ১৯০৫ সাল (৩০ আশ্বিন ১৩১২ বঙ্গাব্দ) তারিখ থেকে বঙ্গভঙ্গ কার্যকরী হবে।



১৯০৫ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর কলকাতার রাজাবাজারে মুসলমানদের এক বিরাট সভায় এই আন্দোলনের পূর্ণ সমর্থন জ্ঞাপন করা হয়। ক্রমান্বয়ে এই আন্দোলন তীব্রতর হয়ে উঠলে— ব্রিটিশ সরকার কার্লাইল সার্কুলার জারি করে ছাত্রদের সভাসমিতি হরতাল নিষিদ্ধ করা হয়। এর প্রতিবাদে বাংলার যুবসমাজ নভেম্বর মাসে এ্যান্টি-কার্লাইল সার্কুলার সোসাইটি গঠন করে।



বঙ্গভঙ্গ-আইন বাতিল



ব্রিটিশ-রাজ সপ্তম এডওয়ার্ড মৃত্যুবরণ করেছিলেন ১৯১০ সালের ৬ মে তে। তাঁর পুত্র পঞ্চম জর্জের অভিষেক হয় ১৯১১ সালের ২২ জুন। ৯ নভেম্বর, ভারতের উদ্দেশে পঞ্চম জর্জ রানি মেরি-সহ ইংলন্ড থেকে রওনা হন এবং ৭ ডিসেম্বর রাজকীয় শোভাযাত্রা সহকারে তিনি দিল্লির দরবারে পৌঁছান। ১২ ডিসেম্বর তিনি দিল্লির দরবারে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা দেন।



তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য তিনটি ঘোষণা ছিলো―



• ১. পূর্বতন বাংলা ও পূর্ববঙ্গ-আসাম প্রদেশ থেকে যথাক্রমে বিহার ও আসামকে বিচ্ছিন্ন করে অখন্ড বাংলাপ্রদেশ গঠিত হবে।

• ২. বাংলা প্রদেশ প্রেসিডেন্সি স্তরে উন্নীত করে লেফটেন্যান্ট গভর্নরের স্থানে গভর্নরের শাসনাধীনে আনা হবে।

• ৩. কলকাতার পরিবর্তে দিল্লি হবে ভারতের রাজধানী।



এ-ঘোষণার দ্বারাই ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গের আইনটি বাতিল হয়ে যায়। মূলত হিন্দু বাঙালিরা এই আইন বাতিলের কারণে আনন্দিত হন। তাঁরা কলকাতায় ১৯১২ সালের ৫ জানুয়ারি, পঞ্চম জর্জকে বিপুল সংবর্ধনা দেন। ১৯১২ সালের ২৫ জুন ১৯১২ সালের ভারত শাসন আইন পাশ হয়। মাদ্রাজের সে-সময়কার জনপ্রিয় গভর্নর লর্ড মাইকেল বাংলার গভর্নর হিসেবে ১৯১২ সালের ১ এপ্রিল যোগদান করেন।



বঙ্গভঙ্গ বাংলার ইতিহাসে একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ১৯০৫ সালের ১৬ অক্টোবরে তৎকালীন বৃটিশ ঔপনিবেশিক সরকারের বড়লাট লর্ড কার্জনের আদেশে বঙ্গভঙ্গ কার্যকর করা হয়। বাংলা বিভক্ত করে ফেলার ধারনাটি অবশ্য কার্জন থেকে শুরু হয়নি। ১৭৬৫ সালের পর থেকেই বিহার ও উড়িষ্যা বাংলার অন্তর্ভুক্ত ছিল। ফলে সরকারী প্রশাসনিক এলাকা হিসেবে বাংলা অতিরিক্ত বড় হয়ে যায় এবং বৃটিশ সরকারের পক্ষে এটির সুষ্ঠু শাসনক্রিয়া দুরূহ হয়ে পড়ে। বঙ্গভঙ্গের সূত্রপাত এখান থেকেই।



কিন্তু ১৯১১ সালে, প্রচণ্ড গণআন্দোলনের ফলশ্রুতিতে বঙ্গভঙ্গ রহিত হয়। দ্বিতীয়বার বঙ্গভঙ্গ হয় ১৯৪৭ সালে। এর ফলে পূর্ববঙ্গ পাকিস্তানে এবং পশ্চিমবঙ্গ ভারতে যুক্ত হয়। এই পূর্ববঙ্গই পরবর্তীতে পাকিস্তানের কাছ থেকে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভ করে।



১৯৭৯ থেকে ১৯৮০ সাল এই দুটি বছর জিয়াউর রহমান সেই ব্রিটিশ সরকারের সাথে আলোচনা করে আসছিলেন বাংলাদেশের ন্যায্য ভূখণ্ড পুনরুদ্ধার এর দাবী আদায়ের জন্য। এবং যার কূটনৈতিক রূপরেখা হিসেবে তিনি সার্ক গঠন করেন এই উপমহাদেশের মানুষের উন্নতির এবং পারস্পরিক সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য। তিনি সম্পর্ক গড়ে তোলেন চীন ও আরব দেশ গুলোর সাথে এবং বাংলাদেশ থেকে তখন তিনি প্রচুর পরিমান লোক আরব দেশ গুলোতে পাঠানোর ব্যাপারে সমঝোতা করেন যার ফলশ্রুতিতে আজো অনেক বেকার মানুষ সেসব দেশে যেয়ে কাজ করে আবার দেশের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রেখেছে যদিও বর্তমান পরিস্থিতি এই সবের জন্য অনুকুল নয় সেটা আমরা বিগত সময়গুলোতে দেখে এসেছি আরব দেশ গুলো হতে ফেরত পাঠান ও সেখানে যাওয়া নিষেধ করার কারন। আবার সার্কের কাজের ম্লান হয়ে যাওয়ার পর থেকেই দেখে আসছি কি করে এই উপমহাদেশের ভারত ব্যাতিত বাকি দেশ গুলোর করুন পরিনতি, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও বাকি দেশ গুলোর উপর ভারতের নগ্ন হস্তক্ষেপ হয়েছে এবং হচ্ছে। যাই হোক জিয়া যখন যুক্তরাজ্য থেকে এক বুক আশা নিয়ে দেশে ফিরেছেন তার দেশের ন্যায্য ভূখণ্ড ফিরে পাবার স্বপ্নে বিভোর হয়ে অন্যদিকে কোলকাতা ও বাংলাদেশের মানুষ মাত্রই শুরু করেছিল এপার বাংলা ওপার বাংলা এক হও আন্দোলন ও বাৎসরিক এক সাংস্কৃতিক মেলা যা আজ আর বিদ্যমান নেই ঠিক তার পরপরই প্রান দিতে হয় কেন এই মহান স্বপ্ন দ্রষ্টাকে সেটা কি আমাদের সরল চিন্তায় আজো ধরা দেয় না ?



জিয়াউর রহমান তার মায়ের মত দেশটার আনাচে কানাচে কিভাবে ঘুরে বেড়িয়েছেন। কিভাবে খবর নিয়েছেন গোয়ালা থেকে কৃষক, তাতি থেকে মুচি, আবাল - বৃদ্ধ - বণিতা সবার তা জানা যায় মার্কাস ফ্রান্ডার কাছ থেকে। মাসের ১৫ দিনই জিয়া ঢাকার বাইরে থাকতেন , খুব ভোরে নাস্তা খেয়ে বের হতেন , সন্ধ্যা হওয়ার আগেই ফিরে আসতেন। হেলিকপ্টারে করে দেশের আনাচে কানাচে ছুটে যেতেন, কখনো জীপ গাড়ী, কখনো মাইলের পর মাইল হেঁটেছেন মুক্ত মাতৃভূমির সবুজ জমিনে পরমানন্দে। আর এভাবেই ৭১'র মেজর জিয়া , ৭৬'র জেনারেল জিয়া , ৭৮'র প্রেসিডেন্ট জিয়া কোমর ভাঙা নড়বড়ে মেরুদন্ডের মাতৃভূমিকে সুস্থ সবল করেছেন । ১৯৮১ 'র ৩০ মে এই ক্ষনজন্মা রাষ্ট্রনায়কের মৃত্যুতে বিশ্বের ইতিহাসে বৃহত্তম শবযাত্রা হয়েছিলো। শুধু ঢাকার রাস্তায় ঢল নেমেছিলো ৩০ লাখ মানুষের। আজ আমি আফসোস করি এই বোলে যে আমার বয়স তখন ছিল মাত্র তিন বছর বয়স যখন পৃথিবী কি সেটা বোঝার বয়স হয়নি। কিন্তু আমি বড় হয়ে শুনেছি আমিও নাকি সেদিনের শবযাত্রায় আমার বাবার কোলে অংশগ্রহন করে খুব কেঁদেছিলাম।



জিয়া স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। একাত্তরের মার্চের সেই অগ্নিঝরা দিনগুলোতে সবচেয়ে কঠিন সময় যারা পার করেছে, চরম মানসিক বিপর্যয়ে ভুগেছে, যন্ত্রণাকাতর থেকেছে, তারা নিশ্চিতভাবে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বাঙালি ইউনিটগুলোর বাঙালি সেনা সদস্যরা, সেনা কর্মকর্তা ও সৈনিকেরা। এ এক দুঃসহ দুঃসময়, এক কঠিন অগ্নিপরীক্ষা। তারা প্রত্যক্ষ করছে স্বাধীনতার চেতনায় উত্তাল গোটা দেশ। অন্যায়ের বিরুদ্ধে অত্যাচারে ফেটে পড়ছে সব মানুষ। টান টান উত্তেজনা। চরম পরিস্থিতি। শুধু মিছিল আর মিছিল চতুর্দিকে। সরকারের হুকুম কেউ মানছে না। কারফিউ ব্রেক হচ্ছে অহরহ যত্রতত্র। সেনাছাউনির পাঞ্জাব ইউনিটগুলো এরই মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়েছে নিরস্ত্র সাধারণ মানুষের ওপরে। বাঙালি সেনা অফিসারেরা, আন্ডার কমান্ড বাঙালি সৈনিকেরা কী করবে? কী করবে পঁয়ষট্টির পাক-ভারত যুদ্ধের অসীম সাহসিকতার খ্যাতিসমৃদ্ধ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের বাঙালি ইউনিটগুলো, যারা বেশ কয়েকটা ক্যান্টনমেন্টে অবস্থান করছিল? তারা কি শুধু চেয়ে চেয়ে দেখবে তাদের ভাইয়ের মৃত্যু, মায়ের অপমান, বোনের অসম্মান—শুধু নিশ্চুপ হয়ে হাত-পা গুটিয়ে থাকবে? যখন রক্তে রঞ্জিত হচ্ছে তাদের প্রিয় মাতৃভূমির রাজপথ আর প্রান্তর? অত্যন্ত কড়া নজরদারি তাদের ওপরে। ভীষণ ঝুঁকিতে তাদের সবার জীবন। তাদের মানসিক প্রতিক্রিয়া আঁচ করে তাদের নিরস্ত্র করার জন্য ছাউনির পাঞ্জাব ইউনিটগুলোকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবং তা এক্ষুনি, এ মুহূর্তে। কঠিন সিদ্ধান্ত, জীবনমরণের সিদ্ধান্ত। হয় বীরের মতো যুদ্ধ, না হয় কাপুরুষের মতো সারেন্ডার। চট্টগ্রাম সেনা ছাউনির ৮ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড মেজর জিয়া যুদ্ধই বেছে নিলেন। গোটা ইউনিটকে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়লেন। কালুরঘাটের বেতার স্টেশন থেকে স্বাধীনতার ডাক দিলেন। ইথারে ভেসে এল, আমি মেজর জিয়া বলছি। আমি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করছি। মার খাওয়া মানুষ, বিভ্রান্ত জনতা, দিশাহারা জাতি সংবিত্ ফিরে পেল। তারা উত্তর আকাশের ধ্রুবতারাকে ঠিক চিনে নিল। তারা হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার বাঁশির আওয়াজ শুনল-যুদ্ধের আওয়াজ। শুনল রণডঙ্কা, রণ দামামা। মন্ত্রমুগ্ধের মতো গোটা জাতি অস্ত্রধারী বাহিনী, ছাত্র-শ্রমিক-কৃষক-পেশাজীবী মানুষ, পুরুষ-নারী, আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা অস্ত্রহাতে যুদ্ধে নেমে পড়ল।



এর পরের ইতিহাস রক্তাক্ত মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসের কঠিন ইতিহাস। শত সহস্র গেরিলা অভিযান, রেইড, এ্যাম্বুশ শত্রুঘাঁটিতে অতর্কিত আক্রমণ, সম্মুখযুদ্ধ, এটাক, কাউন্টার এটাক, ইস্পাত কঠিন মনোবল আর মৃত্যুপণ লড়াইয়ের ইতিহাস। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রক্তের আখরে লেখা এক অনবদ্য গৌরবগাথা এক বীর জাতির বীরত্ব কাহিনী। জাতির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ অর্জনের এক অমর আখ্যান। এ মুক্তিযুদ্ধ আমাদের ব্রাকেটবন্দি করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা যুদ্ধের সঙ্গে, ব্রাকেট বন্দি করেছে মাও সেতুং পরিচালিত গণচীনের মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে হো চি মিনের কঠিন ভিয়েতনাম যুদ্ধের সঙ্গে। আমার গর্ব, আমার জাতীয় সেনাবাহিনীর জন্ম মুক্তিযুদ্ধের সূতিকাগৃহে। এর উত্থান ও বিকাশ মুক্তিযুদ্ধের রক্তাক্ত প্রান্তরে। এ সেনাবাহিনীই গোটা মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছে। ফোর্স সংগঠিত করেছে। অস্ত্র সংগ্রহ করেছে, রসদ সম্ভার জুগিয়েছে। অভিযান পরিচালনা করেছে। শত্রুকে পরাজিত করে বিজয় ছিনিয়ে এনেছে। দেশকে স্বাধীন করেছে। মেজর জিয়া ও তার পরিচালিত জেড ফোর্স গোটা মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের ইতিহাসের এক বড় অধ্যায়। স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে সেনাবাহিনী পুনর্গঠনের প্রাক্কালে আমরা জিয়াকে অবমূল্যায়িত হতে দেখেছি। তদানীন্তন সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার জানি না কোন রহস্যজনক কারণে তাকে যথাযথ মূল্যায়ন করতে ত্রুটি করে। দুর্ভাগ্যের বিষয়, পরবর্তীকালে আমরা দেখেছি জাতির ভাগ্যাকাশে দুর্যোগ, রাষ্ট্রব্যবস্থায় অনেক সঙ্কট। ঘটনার ক্রমবিবর্তনে আমরা প্রত্যক্ষ করেছি জাতির অনেক অস্থিরতা আর অনিশ্চয়তায় সংঘটিত পঁচাত্তরের ৭ নভেম্বরের সিপাহি জনতার বিপ্লব। আর এ বিপ্লবের মধ্য দিয়ে তারই উত্তাল তরঙ্গে এক মহাশূন্যতায় জেনারেল জিয়া উঠে আসেন রাষ্ট্রীয় শীর্ষ নেতৃত্বের পাদ-প্রদীপে।



সৈনিক জিয়া মহান। রাষ্ট্রনায়ক জিয়া মহত্তর। তিনি গণতন্ত্রের প্রাণ-পুরুষ। আধুনিক বাংলাদেশের নির্মাতা। তার ছিল সুদূরপ্রসারী দৃষ্টি। তিনি ছিলেন এক ভিশনারি, এক স্বপ্নদ্রষ্টা। কবি কাজী নজরুল ইসলামকে তিনি জাতীয় কবির মর্যাদা দিয়েছিলেন। নজরুলও সৈনিক ছিলেন। নজরুল লিখেছেন, চির উন্নত মম শির, শির নেহারি আমারি, নত শির ঐ শিখর হিমাদ্রির। জিয়া বিশ্বাস করতেন, জাতীয় কবির এ মহান অভিব্যক্তি বাঙালি জাতির সব মানুষের জন্য, গোটা বাংলাদেশের জন্য। নিজের দুই শক্ত পায়ের ওপর দাঁড়িয়ে বিশ্ব সভায় হিমালয়ের উচ্চতায় দৃশ্যমান থাকবে বাংলাদেশের শির। জিয়া জাতিকে একটি সত্যিকার গণতন্ত্রের শক্ত ভিত্তির উপরে দাঁড় করাতে চেয়েছিলেন। আনতে চেয়েছিলেন অর্থনৈতিক মুক্তি। দিতে চেয়েছিলেন জাতিকে সম্মান আর গৌরব, সেই মুক্তিযুদ্ধের ব্রাকেটবন্দি দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্র, গণচীন আর ভিয়েতনামের মতো।



জিয়ার রাষ্ট্র ক্ষমতার সময়কাল অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত—মাত্র পাঁচ বছর বা তার একটু বেশি। এ স্বল্প সময়ে তিনি যুগান্তকারী সব কাজ করে গেছেন। তার সঙ্গে আমি ভারতবর্ষের ইতিহাসের সেই পাঠান সম্রাট শের শাহের অনেক মিল খুঁজে পাই। শের শাহের শাসনকাল ছিল এমনি অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত। কিন্তু জনকল্যাণে সাধারণ মানুষের মঙ্গলে তার কীর্তিগুলো ছিল অভিনব। ছিল অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী প্রভাবের, যা আজও তার দূরদর্শিতার স্বাক্ষর বহন করে চলেছে। জিয়া জাতীয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রতিটি বিষয়ে একটা বড় রকমের ঝাঁকুনি দিয়ে গেছেন। রাজনীতি, অর্থনীতি, কৃষি শিক্ষা, সংস্কৃতি, ক্রীড়া ও নারী-শিশু সবকিছুতেই একটা বিপ্লব ঘটিয়ে গেছেন। গোটা জাতিকে তিনি একাত্তরের মতো একতাবদ্ধ করতে পেরেছিলেন। একটি দৃঢ় জাতীয় সংহতি সৃষ্টি করতে পেরেছিলেন। পরিচয় সংকটে আক্রান্ত হীনম্মন্যতায় ভোগা জাতি। তাকে তার সত্যিকারের পরিচয় তার আপন স্বাধীন স্বকীয়তার পরিচয় তিনি দিতে পেরেছিলেন। আর সে পরিচিতি বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের সংমিশ্রণে হাজার বছরের যে রসায়ন তারই আবিষ্কার তিনি ঘটিয়েছিলেন। নাম দিয়েছিলেন বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ। এই জাতীয়তাবাদের ওপরই প্রতিষ্ঠিত তার মন, মনন ও চেতনা—তার রাজনৈতিক দর্শন। তাই তার প্রিয় গান যা তিনি আপন মনে গুণ গুণ করে গাইতেন তা হলোঃ জীবন বাংলাদেশ আমার মরণ বাংলাদেশ।



জিয়ার এক বড় অবদান আমার কাছে মনে হয়েছে তার রচিত স্বাধীন পররাষ্ট্র নীতি। নতজানু নয়, মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে গোটা বিশ্বকে চিত্কার করে বলা আমি যুদ্ধ করে স্বাধীন হয়েছি। শৃঙ্খল ভেঙেছি। আমি এক স্বাধীন জাতি। জিয়ার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, তার দূরদৃষ্টি, তার বৈপ্লবিক চেতনা, বিশ্বাস ও স্বাধীনচেতা দৃঢ় চরিত্র আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। মহান গণচীনসহ অনেক বড় বড় দেশ বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বের হাত প্রসারিত করে। সহযোগিতায় এগিয়ে আসে। ১৯৮০ সালের জুলাই মাসে জেনারেল জিয়া গণচীন সফর করেন। আমি তখন পিকিংয়ে মাত্র কিছুদিন আগে বাংলাদেশ দূতাবাসে সামরিক এটাশে হিসেবে যোগদান করেছি। জেনারেল জিয়াকে চীনা সরকার, চীনা জনগণ অভূতপূর্ব সংবর্ধনা দেয়। বিপুলভাবে সম্মানিত করে। তিনি যখন যেখানে গেছেন, সীমাহীন মানুষের ভিড়। রাস্তার দুই ধারে ফুল হাতে কিশোর কিশোরী, যুবক-যুবতী, বৃদ্ধ ও বৃদ্ধা মংচিয়ালা মংচিয়ালা (বাংলাদেশ বাংলাদেশ) বলে চিত্কার করছে আর হাত নাড়ছে। সে এক গর্বভরা বিচিত্র অনুভূতি আমার। মাও সেতুংয়ের তিরোধানের পর তখন চীনের নেতৃত্বে প্রিমিয়ার হুয়া কুয়া ফেং। আমার সুযোগ হয়েছিল শীর্ষ বৈঠকে উপস্থিত থাকার। আমি প্রিমিয়ার হুয়া কুয়া ফেংকে উচ্ছ্বসিতভাবে জেনারেল জিয়ার প্রশংসা করতে শুনেছি। বাংলাদেশের নিরাপত্তা নিশ্চয়তায় অর্থনৈতিক উন্নয়নে চীনের পূর্ণ সহযোগিতার দৃঢ় আশ্বাস তিনি ব্যক্ত করেন। আমার মনে পড়ে, একটি হৃদয়গ্রাহী সফল সফর শেষে পিকিং পুরনো বিমানবন্দরে (নতুন বিমানবন্দর তখনও নির্মিত হয়নি) বাংলাদেশ বিমানের এয়ারক্র্যাফটে বিদায়ী রাষ্ট্রপতি যখন আরোহণ করতে যাচ্ছেন আমি তাঁকে একটি চৌকস স্যালুট করি। তিনি হাত বাড়ালেন হ্যান্ডশেকের জন্য। আমার হাতে শক্ত করে চাপ দিলেন। পিকিং বিমানবন্দরের টারমাকে দাঁড়িয়ে রাষ্ট্রপতির সেই করমর্দনের স্পর্শ আমি আজও অনুভব করি। তিনি আমাকে বলছিলেন— Mahbub, I am leaving, you will be here. China is our friend. It is a great country. Work hard, develop the relations. Promote the friendship. Do remember this is the country to which we look forward. This is the country in which we fully trust. কে জানত জেনারেল জিয়ার সঙ্গে সেই হবে আমার শেষ সাক্ষাত্। তার বিদায়বেলার কথাগুলো এখনও আমি শুনতে পাই। আমার কানে অনুরণিত হয়।



তখনও আমি পিকিংয়ে। ১৯৮১ সালের ৩০ মে’র প্রদোষে আমার বাসার টেলিফোনটি অনবরত বেজে চলেছে। এত ভোরে কখনও কেউ কল দেয় না। বুকটা ধড়াস করে উঠল। ঢাকা থেকে হবে হয়তো কোনো দুঃসংবাদ। রিসিভার তুলতেই চীনা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ফরেন লিয়াজোঁ অফিসার কর্নেল সু চুইন ফিংয়ের গলা। আপনি কি জানেন, আপনাদের রাষ্ট্রপতি জেনারেল জিয়াকে আজ গভীর রাতে চট্টগ্রামে হত্যা করা হয়েছে? কারা করেছে? কেন করেছে? তিনি আমাদের একজন খাঁটি বন্ধু ছিলেন। আমি স্তম্ভিত। আমি বাকরুদ্ধ। আমি বিদ্যুত্স্পৃষ্ট। কর্নেল সু ওদিক থেকে বলে চলেছেন, ব্রিগেডিয়ার আপনি কি শুনতে পাচ্ছেন? ব্রিগেডিয়ার, আপনি কি আমাকে শুনছেন? আমি নিশ্চুপ। আমি হতবাক। আমি নিথর।



রবীন্দ্রনাথের কবিতার দুটি লাইন আজ জিয়া স্মরণে তাকে নিবেদন করছি।



উদয়ের পথে শুনি কার বাণী, ভয় নাই ওরে ভয় নাই।

নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান, ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই।




জিয়া মৃত্যুঞ্জয়ী, জিয়া অমর। জিয়া অক্ষয়। জিয়া বাংলার আকাশে জ্বল জ্বল করা চির ভাস্বর এক নক্ষত্র।

মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে মে, ২০১৩ রাত ১০:৪৭

puronodin বলেছেন: + + + + + + +..........+++++++++++++++++++........

১২ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ১১:১৪

শুভখান বলেছেন:

বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।

২| ৩০ শে মে, ২০১৩ রাত ১:১৭

স্বাধীন শোয়েব বলেছেন: ++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++ আওয়ামী কুত্তাদের জবাবের অপেক্ষায়।

১২ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ১১:১৩

শুভখান বলেছেন:

কথায় আছে বারকিং ডগ সেলডম বাইটস।

৩| ৩০ শে মে, ২০১৩ রাত ১:৪১

নীল_সুপ্ত বলেছেন: সংগ্রহে নির্দ্বিধায় :)

১২ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ১১:১৩

শুভখান বলেছেন:

বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।

৪| ৩০ শে মে, ২০১৩ রাত ২:২৩

মাজহারুল হুসাইন বলেছেন: ধন্যবাদ ।


আল্লাহ তাকে জান্নাত নসিব করুন । আমিন ।

১২ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ১১:১২

শুভখান বলেছেন:

আমিন।

৫| ৩০ শে মে, ২০১৩ ভোর ৪:০৪

মোহাম্মদ সোহেল হাসান বলেছেন: আল্লাহ তাকে জান্নাত নসিব করুন । আমিন ।

১২ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ১১:১২

শুভখান বলেছেন:
আমিন।

৬| ৩০ শে মে, ২০১৩ বিকাল ৫:০৫

দূর আকাশের নীল তারা বলেছেন: জিয়া হত্যার যে ঘটনা আপনি বর্ণনা দিলেন, তা থেকে কয়েকটি প্রশ্ন মনে জাগল:
১) সাকির্ট হাউজের জিয়ার পাশের রুমেই বদরুদ্দোজা চৌধুরী ছিলেন, তিনিও নাকি কিছুই টের পান নি। এও কি সম্ভব হতে পারে? আপনার কি মনে হয়?
২) জিয়া হত্যার পরিকল্পনায় কোথায় কিভাবে মেজর জেনারেল মঞ্জুরের আর্বিভাব তা বলেন নি। তাহলে কি মেজর জেনারেল মঞ্জুর কোন দোষ না করেই জিয়া হত্যার দায় কাধে নেন?
৩) জিয়া হত্যার কোন মামলা হয়েছিল কি? হয়ে থাকলে সেই মামলার বর্তমান অবস্থা কি?
৪) বিএনপি দু'বার ক্ষমতায় এসেও জিয়া হত্যার বিচার করল না, অথচ মেজর জেনারেল মঞ্জুরের পরিবার মঞ্জুর হত্যার বিচার চায় - এ ব্যাপারে আপনার কি মত?
জিয়া হত্যার বাইরে কিছু প্রশ্ন:
৫) ৭৫এ যে জিয়াকে কর্ণেল তাহের বন্দী দশা থেকে মুক্ত করলেন, সেই কর্ণেল তাহেরকে জিয়া বিনা বিচারে ফাসি দিলেন। কারণটা জানেন কি?
৬) জিয়াকে ভারতের কাছ থেকে পানির ন্যায্য হিস্যা আনতে পারলেও জিয়া পত্নী, বেগম জিয়া, ভারত সফরে গিয়ে গঙ্গা পানি বন্টন নিয়ে প্রসঙ্গ তুলতেই ভূলে গিয়েছিলেন। জিয়া পত্নীর এমন অধ:পতন কিভাবে হল আপনি মনে করেন?

১২ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ১১:১১

শুভখান বলেছেন:

ভাই আমার মনে হইতাছে আপনে জানেন কে আসল খুনি একটু জাতির কাছে আপনিই জানাইয়া দেন তাইলে। হেইটা কেন করবেন করলেই আপ্নাগর জাত যাইবগা।

৭| ৩১ শে মে, ২০১৩ রাত ২:২৯

স্বাধীন শোয়েব বলেছেন: @দূর আকাশের নীল তারা > ৫ নং পয়েন্টের জবাবে বলি। জিয়াতো তাহেরকে কবর দেয়ার সুযোগ দিছে। আমি হইলে ফাঁসির পর পুন্দে বাঁশ ভইরা শাপলা চত্তরে টাঙ্গায়ে রাখতাম। কারন সে ৩০+ সেনা অফিসারের হত্যাকারী+ একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনাক্মকর্তা হয়ে সেনাবাহিনিতে শৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী।

১২ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ১১:০৯

শুভখান বলেছেন:


কঠিন কইছেন উস্তাদ।

৮| ৩১ শে মে, ২০১৩ রাত ১১:০৩

দূর আকাশের নীল তারা বলেছেন: @স্বাধীন শোয়েব: কেউ জিয়া সমালোচনা করলেই বুঝি আওয়ামী ভাদা হয়ে যায়?

১২ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ১১:০৮

শুভখান বলেছেন:

যে ভাদা ছাড়া এমন কাম আর কেউ করেনা। কারন তাহারা ভাদা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.