| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস | 
   ১৯৪৫ সালে ইগোর  গোজেনকো সোভিয়েত  গুপ্তচরবৃত্তির কলাকৌশল  সম্পর্কীয় অনেক  মূল্যবান  তথ্য  নিয়ে  কানাডাতে  রাজনৈতিক  আশ্রয়  নেয়ার  পর  পশ্চিমা  বিশ্ব  সোভিয়েত  গোয়েন্দাবৃত্তি  সম্পর্কীয়  ফুলানো  ফাঁপানো  তথ্য  ও  এর  ভেতরের  খবর  গুলো  সম্বন্ধে  বিশদ  ধারণা  লাভ  করতে  থাকে । 
 বিভিন্ন  দেশের  দুতাবাস  গুলোতে  গোয়েন্দা  সেল  থাকত সেই সব  সেল  গুলোর  কোড  নেম  এর মাধ্যমে  পরিচিত  ছিল  এবং  এর  মধ্যে  গুপ্তচরদের  যদিও  নিজস্ব  নামেও  মাঝে  মাঝে  পরিচিতি  দেয়া হতো তথাপিও  ব্যবস্থা  এমন  ছিল  যে  একজন  ধরা  পড়লেও  বাকীদের  তথ্য  তার  কাছে  পাওয়ার কোন সম্ভাবনা ছিল না। গোজেনকো  একজন  সাইফার  ক্লার্ক  এবং  তার  একটা  কোড  নেম  ছিল  ক্লারক  ।  তার  আসল  পরিচয়  ছিল  সে  একজন  কমার্শিয়াল  কাউন্সিলার  এবং  একজন  অর্থনীতিবিদের  কাভারে ছদ্মবেশে সে  দুতাবাসে  চাকুরী  করত।  গোজেনকোর  কানাডিয়ান  সেলের  জি আর ইউর  ডাইরেক্টর  ছিল  কর্ণেল  জাবোতিন  এবং  দোভাষী হিসেবে রুনী  নামে একজন কর্মরত ছিল। কর্ণেল জাবোতিনের  কোডনেম  ছিল  গ্রান্ট।  এই  সেলের  মাধ্যমে  রাশিয়ানরা  ওন্টারিওর  চক  রিভার  এ  অনুষ্ঠিত  আনবিক  বোমা  পরীক্ষানিরীক্ষার  গোপন  তথ্য  জানার  পাশাপাশি  ইউরেনিয়াম  ২৩৫  এর  নমুনা  সংগ্রহ করতে হয়।  একাজে  এলান  নানমে  নামের  একজন  গুপ্তচর  সহযোগীতা  করেছিল । যার  কোড  নেম  ছিল  অ্যালেক । নানমে  একজন  কমুনিষ্ট  ছিল,  ব্রিটেন  ত্যাগ  করে  কানাডাতে  আনবিক  গবেষণায়  যোগদানের  পূর্বেই  । তবে  প্রকাশ্যে একথা  সে  কখনো  বলত  না। মে  রাশিয়ানদের পক্ষে  দুই  বছরের  মত  কাজ  করেছিল। এবং  পশ্চিমের  সমূহ  ক্ষতি  করে  অমূল্য  অনেক  তথ্য  পাচার  করেছিল রাশিয়ানদের  কাছে । ১৯৪৫  সালে  সে  কানাডা  থেকে  ইংল্যান্ডে  ফিরে  আসে  ।  সে  সময়  গ্রান্টও  মস্কো  সদর  দপ্তরের  সাথে  সে  সব  তারবার্তার  মাধ্যমে  তথ্য  পাঠানো  হচ্ছিল  সেগুলো  পর্যবেক্ষণ  করলে  সোভিয়েত  গুপ্তচর  বৃত্তির  ঐতিহ্যগত বিনিময়  কলাকৌশলের  প্রকৃতি  বোঝা যায় ।  
 সোভিয়েত  সদর  দপ্তর  থেকে  তাদের  কোন  এজেন্টকে  কোন  জায়গায় তার  নিজের  ইচ্ছায়  কাজ  করার  অধিকার  দেয়া  হতো  না  এবং  এধরনের  স্বেচ্ছা  সিদ্ধান্তের  বিরুদ্ধে  কেজিবি  নানা  ধরণের প্রতিবন্ধকতা  সৃষ্টিকারী  ঘটনা  ঘটাতো। সেই সব  তারবার্তায়  লন্ডনে  মে’র  সাথে  সার্বক্ষণিক  যোগাযোগ  রক্ষার  কথা  বলা  হয় এবং  এ  সমস্ত  তথ্য  সদর  দপ্তরের  একজন  অজ্ঞাত  ডাইরেক্টরের  কাছে  এবং  গ্রান্টের  কাছে কানাডার  অটোয়াতে অবস্থিত  সোভিয়েত  দুতাবাসের  সাইফার  রুম  থেকে  নিয়মিত  পাঠানো  হতো।  বার্তাগুলো  অনেকটা  এ  ধরণের 
ঃ ৩০.৭.৪৫  
হতে  মস্কো  
প্রতি  গ্রান্ট  
রেফারেন্স  নং ২১৮     ( ২২.৭.৪৫ ) 
 আলেক  এর  সাথে  মিটিং  এর  আয়োজন  এর  ব্যবস্থা  কর  এবং  টেলিগ্রাফের  মাধ্যমে  তা  জানাও  ও  লন্ডনে  আমাদের  এজেন্ট  থেকে  আলেক  এর  পাসওয়ার্ড  জেনে  নাও। 
৩১-৭-৪৫
হতে  অটোয়া  
গ্রান্ট
প্রতিঃ ডাইরেক্টর
 আমরা  আলেক  এর  সাথে  লন্ডনে  একটা  মিটিং  এর  সম্ভাব্য  পরিকল্পনা  করেছি।  আলেক  ষ্ট্রান্ড  এর  কিংস  কলেজে  কাজ  করবে।  টেলিফোন  বুকের  মাধ্যমে  তাকে  সেখানে  খুজে  পাওয়া  সম্ভব।  
মিটিং ঃ অক্টোবর  ৭.১৭.২৭  ব্রিটিশ  মিউজিয়ামের  সামনের  রাস্তায়, সময়ঃ রাত  এগারোটা।  
চেনার  উপায় ঃ বাম  বগলের  নীচে  একটা  খবরের  কাগজ  পাসওয়ার্ড  ঃ ‘বেষ্ট রিগার্ড  টু  মাইক’
 সে  ( নুন মে)  কানাডায়  থাকতে  পারবে না।  সেপ্টেম্বরের  শুরুতে  তাকে  অবশ্যই লন্ডনে  চলে  আসতে  হবে। আসার  আগে  সে  পিটাওয়া  জেলার  ইউরেনিয়াম  প্লান্টএ  যাবে  এবং  সেখানে  দুই সপ্তাহের  মত  থাকবে।  যদি  সম্ভব  হয়  সে  আমাদের  সাথে  দেখা  করবে  বলে  প্রতিজ্ঞা  করেছে।  সে  আগামী  বছর  এক  মাসের  জন্য  অবশ্যই  কানাডা  আসবে।  আমরা  তাকে  ৫০০  ডলার  দিয়েছি । গ্রান্ট 
২২/৮/৪৫
প্রতিঃ গ্রান্ট
রেফারেন্স  নং  ২৮৮
তোমাদের  মিটিং  এর  আয়োজনের  পরিকল্পনা  সন্তোষজনক  নয়। আমি  তোমাদেরকে  একটা  নতুন  পরিকল্পনা  জানাচ্ছি। 
স্থান ঃ লন্ডনের  ব্রিটিশ  মিউজিয়ামের  সামনের  গ্রেট  রাসেল  ষ্ট্রীটের উল্টা  পার্শ্বে  মিউজিয়াম  ষ্ট্রীট  এর  কাছে  টুটেনহাম  কোর্ট  রোডের  পার্শ্বে । আলেক  টুটেনহাম  ফোর্ট  রোড  থেকে  হেঁটে  আসবে  এবং  কন্টাক্ট  পারসন  উল্টাদিকের  সাউথ  হ্যাম্পাটন  রোড  থেকে  আসবে।  
 সময়ঃ  তুমি  যে  সময়  বলেছ  তা  ঠিক  থাকবে।  তবে  যদি  আলেক  এর  কোন  অসুবিধা  না  থাকে এটা  রাত  ৮ টা  হলে  ভাল  হয় ।  কারণ  রাত  ১১  টায়  বেশ  অন্ধকার ।  সময়ের  ব্যাপারে  আলেকের  সাথে  আলোচনা করে  আমাকে  জানাও । যদি  অক্টোবরে  মিটিং  সম্ভব  না  হয়  তবে  একই  ঘটনা  পরের  মাসে  পুনরাবৃত্তি  হবে। সনাক্তকারী  চিহ্ন ঃ আলেকের  বাম  বগলে  খবরের  কাগজ  থাকবে, দি  টাইমস কন্টাক্ট  পারসন  এর  বাম  হাতে  একটা  ম্যাগাজিন  থাকবে ঃ  পিকচার  পোষ্ট।
পাসওয়ার্ড ঃ  কন্টাক্টম্যান ঃ ষ্ট্রান্ডে  যাওয়ার  সবচেয়ে  সংক্ষিপ্ত  রাস্তা  কোনটা ?
আলেকঃ আমার  সাথে  আসো  আমি  সে  পথেই  যাচ্ছি।  কথা  বার্তার  শুরুতে  আলেক  বলবে  ‘বেষ্ট  রিগার্ড  ফ্রম  মাইক। ডাইরেকটরের  কাছ থেকে অবস্থার  বর্ণনা  সংক্রান্ত  প্রেরিত  রিপোর্ট  ।  ২২/৮/৪৫
পরবর্তীতে  নান মের  বিচার  চলাকালীন  বর্ণিত  মিটিং  সংগঠিত  হওয়ার  ব্যাপারে  কোন  তথ্য  পাওয়া  যায়  নাই। বিচার  শেষে  তাকে  দশ  বৎসরের  কারাদন্ড  দেয়া  হয়।  
১৯৫১  এবং  ৫২  সালে  সুইডেনে  এবং  ১৯৫২  সালে  প্যারিস,  লিঁও  ও  তুঁলোতে  গুপ্তচরবৃত্তির  বিরুদ্ধে  সংগঠিত  পাল্টা  হামলাগুলোতে  রাশিয়ানদের  লিখিত  দলিল  দস্তাবেজের  উপর  অত্যধিক গুরুত্বের  ব্যাপারটা  ধরা  পড়ে।  এ  ধরণের  দলিল     দস্তাবেজের  কারণে  তাদের  নিয়োজিত  এজেন্টদেরকে  ধরা  ও  পরবর্তীতে  দোষী  সাবস্ত  করা  সহজ  হতো।  এ  ধরণের  হয়রানি মূলক  ও  অপমানকর  ঘটনার  ফলশ্র“তিতে  কেন্দ্র  থেকে তথ্য  আদান  প্রদানে মাইক্রোডট  ও  মাইক্রো  ফটোগ্রাফির  উপর  গুরুত্ব  দেয়ার  ব্যবস্থা  নেয়া হয়।  
 অষ্ট্রেলিয়ান  রয়াল  কমিশনের  কাছে  স্বীকারোক্তিমূলক  জবানবন্দীতে  পেটরভ  জানিয়েছিল  যে  তার  এবং  মস্কোর  মধ্যে  ডেভেলপ  না  করা  ফিল্ম এর  মাধমে  তথ্য  আদান  প্রদান  হতো।  এ  ধরণের  ফিল্ম  গুলো  লাইট প্র“ফ  কাগজ  দিয়ে  মোড়ানো  থাকত  যাতে  নষ্ট  না  হয়ে  যায়।  তল্লাসীর  সময়  যদি  কেউ  খুলে  দেখতে  চাইত  তাহলে  এ  ফিল্মগুলো  আপনা  আপনি  ঝাপসা হয়ে  যেত ও  তার  মধ্যে রাখা  সব  তথ্য  গুলো  মুছে  যেত।  এজেন্টদের  নাম,  কোডনেম  ইত্যাদি  দাহ্য  পদার্থ  দিয়ে  তৈরী  ফিল্মে  সংরক্ষণ  করা  হতো ।  যখনই  বিপদ  আঁচ  করা  হতো  তখনই  সেকেন্ডের  মধ্যে  তা  ধ্বংস  করে  দেয়া হতো ।  রেসিডেন্স  ডিরেক্টরকে  এ  ব্যাপারে  মস্কোর  কাছে  প্রত্যায়ন  করতে  হতো  যে  দলিল  ধ্বংসের  জন্য  যে  আদেশ  দেয়া  হয়েছিল  তা  ঠিকমত  পালন  করা  হয়েছে।  
 দুঃখজনক হলেও  সত্য যে  কানাডাতে  এই  ধরনের তথ্যের  ধ্বংস  নিশ্চিত  করতে  দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল  ইগোর  গুজেনকোকে ।  তাকে  কর্ণেল  জাবোটিন’এ  কাজের  জন্য  দায়িত্ব  দিয়েছিল। 
 ডঃ  ক্লাউস  ফুস  আনবিক  বোমা  সংক্রান্ত  তথ্য  পাচারের  জন্য  নিয়োগকৃত এ  রকম আরেকজন গুপ্তচর ।  সে  সোভিয়েত  রাশিয়ার  পক্ষে  কাজ  করছিল। তাকে  একটা  টেনিস  বল  নিয়ে  তার  কন্ট্রাক্ট  হ্যারি  গোল্ড  এর  সাথে  দেখা  করার  জন্য  নির্দেশ  ছিল  অন্যদিকে  হ্যারিকে একটা  বই  ও  গ্লাভস  নিয়ে  আসতে বলা  হয়েছিল  ।  ডেভিড  গ্রীনগ্লাস  ছিল  আমেরিকান  সেলের  আরেকজন  গুপ্তচর ।  তাদের  প্রথম  সাক্ষাতের  সময়  গোল্ড  সনাক্ত  করণের  চিহ্ন  স্বরুপ  জেলিপাউডারের  একটা  ছেড়া  প্যাকেট  নিয়ে  এসেছিল । বাকী  অংশটুকু  গ্রীন  গ্লাসের  স্ত্রীর  কাছে  ছিল  ।  তাদের  পাসওয়ার্ড  ছিল ‘আমি  জুলিয়াসের  কাছ  থেকে  এসেছি’। 
 রেড  অর্কেষ্ট্রা  দ্বিতীয়  বিশ্বযুদ্ধের  সময়  অন্যতম  সফল  একটা  গুপ্তচর  চক্র।  তারা  হিটলারের  ওয়ার  কেবিনেটের  অনেক  গোপন  খবর  বিস্তারিত  ভাবে  সংগ্রহ করে  তা  সাফল্যের  সাথে  মস্কোতে  পাচার  করতে  পেরেছিল।  এই  চক্রেরই  একজন  সদস্য ছিল  আলেকজান্ডার  ফুট  নামের  একজন  ইংরেজ  ।  যুদ্ধের  পর  তাকে  নতুন দায়িত্ব দিয়ে নিয়োগ দেয়ার  জন্য  রাশিয়াতে  ফেরত  পাঠানো  হয়।  পরবর্তীতে সে বিভক্ত  বার্লিন এ  গুপ্তচর  হিসেবে  গোপনে  প্রবেশ  করে  । ফুট  প্যানকড  এলাকায়  বাস  করত।  তাকে  যে  কোন  জরুরী  প্রয়োজনে  কেন্দ্রের  সাথে  যোগাযোগ  করার  নির্দেশ  দেয়া  হয়েছিল। 
 ফুটের  বক্তব্য  থেকে  জানা  যায়  কেন্দ্র  তার  সাথে  যোগাযোগ  করার  জন্য  তাকে  প্রেনজলাউয়ের  ষ্টেশনে  প্রতি  মাসের  শেষ  রবিবারে  আসতে  হতো।  সেখানে  সে  এক  হাতে  চামড়ার  বেল্ট  ও  অন্য  হাতে  তার  হ্যাট  নিয়ে  আসত।  কেন্দ্র  থেকে  তাকে  কোন  তথ্য  বা  যোগাযোগ  স্থাপনের  প্রয়োজন  হলে  তার  কাছে  আরেকজন  এসে  বলত,  শেষ  ট্রেন  কখন  ছাড়বে ?  তার  উত্তর  ছিল  আগামী  কাল  রাত  ১০ টার  মধ্যে  ।  এছাড়া  তার  যদি  কখনো  কেন্দ্রের  সাথে  যোগাযোগের  প্রয়োজন  হতো  তখন  সে  নির্ধারিত  একটা  পাবলিক  নোটিশ  বোর্ডে  একটা  নোটিশ  ঝুলিয়ে  দিত  নোটিশে  লেখা  থাকত ‘‘একটা  বাচ্চার  জন্য  সাইকেল  প্রয়োজন  এবং  পরের  দিনই  সেই  একই  ষ্টেশনে  একজন  এজেন্ট  এসে  হাজির  হতো। এতে  বুঝা  যায়  কেজিবি  তাদের  এজেন্টদেরকে  বেশ  নিবিড়  পর্যবেক্ষণে  রাখত।  
 এজেন্ট  এসেই  বলত  আমি  সেই  অ্যাডটা  দেখেছি  এবং  ফুট  তাকে  দেখেই  চিনতে  পারত।  কারণ  এ  ধরণের  এজেন্টদের  মাধ্যমেই  তার  সাথে  প্রত্যেক  মাসে  কেন্দ্রের  সাথে  যোগাযোগ  হতো।  
১৯৬১  সালে  ব্রিটিশ  প্রতিরক্ষা  মন্ত্রনালয়  থেকে  ফ্রাংক  বোসার্ড  নামে  একজন  লোককে  কেজিবি  রিক্রুট  করে।  তাকে  বিশেষ  বিশেষ  রাতে  রেডিও  মস্কো  থেকে  প্রচারিত  অনুষ্ঠান  শুনতে  বলা  হয়েছিল। তার  আদেশগুলো  ৫টা  গানের  সুরের  মধ্যে  থাকত।  এই  গানগুলো  ছিল  কোড  ওয়ার্ড  ।  ‘ভোলগা  মাঝির  গান’ ‘সোয়ান  লেক’ ‘মস্কোর  রাত’ ‘স্যাবর  নাচ’  এবং  কালিনকা  গান  বাজলেই  বুঝতে  হতো  তাকে  কাজে  নেমে  পড়তে  হবে। 
 জন  ব্যারন  এর  লেখা “কেজিবি  সোভেয়েত  গুপ্তচরদের  গোপনীয়  কার্যক্রম”  বইটাতে  লেখক  কেজিবি  সম্বন্ধে বিশদ  গবেষণা  লব্ধ  তথ্য  উপস্থাপন  করেছে।  এতে  কেজিবির  একজন  ইলিগাল  কার্লো  টুমির  গোয়েন্দবৃত্তির  কৌশল  বিশদ  ভাবে  তুলে  ধরা  হয়েছে।  ধরা  পড়ার  পর  সে  ডাবল  এজেন্ট  হিসেবে  আমেরিকার  এফ বি আই  এর  সাথে  কাজ  করত।  কার্লো  টুমি  ট্রেনিং  শেষে  মস্কোর  ইয়েরোস্লাভস্কি  ট্রেন  ষ্টেশনে  নামার  পরপরই  এক  ব্যক্তি  এসে  তাকে  বলে ‘সুপ্রভাত’ ।  আপনার  ইয়েফিম  চাচা  কেমন  আছেন ?  উত্তরে  বিনীত  ভাবে  টুমি  বলে  ‘ আমি  দুঃখিত  তিনি  মারা  গেছেন। ’  এই  উত্তরে  সে  ব্যক্তি  সন্তুষ্ট  হয়ে  বলে  ‘ আমি  দুঃখিত  আপনি  আমার  সাথে  আসুন  প্লিজ ’’ ।
 আমেরিকাতে  টুমিকে  ইলিগ্যাল  হিসেবে  প্রতিষ্ঠিত  করার  পর  তাকে  কতগুলো  পোষ্ট  বক্স  নাম্বার  দেয়া  হয় । সে  গুলোর  মাধ্যমে  তাকে কেন্দ্রের  সাথে  যোগাযোগ  রক্ষা  করার নির্দেশ দেয়া হয়।  তার  কাছে  আসা  মেসেজ গুলো  ম্যাগনেটাইজড  কন্টেইনারে  রাখা  থাকত। এগুলো  বিভিন্ন  জায়গায়  রাখা  হতো।  নিউইয়র্ক  বরোর  কুইন্স  এর  রেলওয়ের  ব্রিজের  নীচে,  সেন্ট  মাইকেল  সিমেট্রির  উত্তর  পূর্ব  কোণের  ল্যাম্পপোষ্টের  পাশে,  ব্র“নক্স  এর  ম্যাকলীন  ও  ডান  ফোর্টল্যান্ড  অ্যাভিনিউর  একটা  ঝোপের  পাশে  এগুলো  ছিল।  আমেরিকাতে  রাশিয়ার  গুপ্তচর  বিভাগের  কেন্দ্র  ‘ইউনাইটেড  নেশন’  ছিল  তার  কন্টাক্ট  পয়েন্ট। কোন  খবর  পেলে  একটা  সাধারণ  পোষ্টকার্ডের  মাধ্যমে  তাদেরকে  সতর্ক  করতে  হতো  যে  খবর  আছে  এবং  তা  সংগ্রহ  করতে  হবে । পরবর্তীতে  তাকে  আরো  বিশদ  নির্দেশ  দেয়া  হয়েছিল।  তাকে  প্রতি  শনিবার  সকালে  একটা  বিশেষ  রাস্তা  দিয়ে  হেঁটে  যেতে  হতো  এবং  কমলার  খোসা  পড়ে  আছে  কিনা  তা  দেখতে  হতো ।  যদি  রাস্তায়  সেরকম  কিছু  পড়ে  থাকত তবে  বুঝতে  হতো  তার  জন্য  যে  কোন  একটা  বক্সে  খবর  আছে ও  তা  সংগ্রহ  করতে  হবে। প্রাপ্তিস্বীকার  একই  নিয়মে  পোষ্ট  কার্ডের  মাধ্যমে  স্থানীয়  কেন্দ্রে  জানাতে  হতো। 
 এফ বি আই  টুমিকে  খুঁজে  পাওয়ার  পর  তাদের  কাজে  লাগায়  ।  এ জন্য  ব্যুরো  তাদের  নিজেদের  কিছু  গোপন  তথ্য  টুমিকে  দেয়  যা  সে  কেন্দ্রে  পাঠায়।  তার  পাঠানো  এসব  তথ্যে  তারা  চমৎকৃত  হয়  এর  ফলে  কেজিবি  সিদ্ধান্ত    নেয়  যে  টুমি  আমেরিকাতে  অবস্থানরত  আরেকজন  রাশিয়ান  এজেন্ট  এর  সাথে  দেখা  করবে  কিন্তু  এটা  আদৌ  ঘটেনি।  মিটিং  এর  নির্দেশ  আসার  সংকেত  ছিল,  একটা  সাধারণ  ডাকে  একটা  অ্যাড  আসবে  যার  বাম  কোনা  মোড়ানো  বা  ভাঁজ  করা  থাকবে।  এটা  বোঝাত  যে  এর  উল্টা  দিকে  এনকোডেড  নির্দেশ  আছে।  কোড  ভাংগার  পর  দেখা  যায়  তাতে  লেখা  আছে,  “আমরা  একটা  মিটিং  এর  ব্যবস্থা  করছি,  সময়  রবিবার  ২৩  সেপ্টেম্বর  ০৯০০  ঘটিকা । স্থান  হাডসন  নদীর  উল্টাদিকে  ওয়েষ্টচেষ্টার  কাউষ্ট্রির  গ্রে ষ্টোন  রেলওয়ে  ষ্টেশন।  লাল  রং  এর  প্লাষ্টিকএ  মোড়ানো  একটা  বড়শী  ও  মাছ  ধরার  লাইসেন্সসহ  ইয়ংকার  শহরের  উত্তরে  ড্রাইভ  করে  যাবে ।  সেখান  থেকে  ওয়ার  বার্টন  অ্যাভিনিউ  হয়ে  গ্রেষ্টোন  ষ্টেশনে  এসে  পার্কিং  লটে  গাড়ী  পার্কিং  করে  রাখবে।  পায়ে  হাঁটা  ব্রিজ  পার  হয়ে  নদীর  পাড়  বরাবর  হেটে  ৪২৯ নং  টেলিফোন  পোলের  কাছে  যাবে।  এই  পোলের  কাছে  তুমি  মাছ  ধরবে।  সংকেতঃ কেউ  এসে  বলবে  এক্সকিউজ  মি  গত  বছর  আপনার  সাথে  ইয়ংকারস  ইয়ট  ক্লাবে  দেখা  হয়েছিল  কি ?  টুমির  উত্তর  হবে  না  স্যার  আমি  ১৯৬০  সালে  ক্লাব  ছেড়ে  এসেছি।  মাছ  ধরতে  ধরতেই  কন্টাক্টের  সাথে  আলোচনা  করতে  হবে । কোড বার্তায়  এই নির্দেশ ছিল।  
 টুমি  যদি মিটিং  এর  জন্য  প্রস্তুত  থাকে  তাহলে  ইউনাইটেড  নেশন  কেন্দ্রে  একটা  ধর্মীয়  পোষ্ট  কার্ড  পাঠাতে  হবে।  যেখানে  সাইন  করতে  হবে  আর,স্যান্ডস  এবং  সে  যদি  শর্তগুলো  না  বুঝে  তাহলে  সাইন  করতে  হবে  ডি.সি.কট। 
 হার্ডসন  নদীর  পাড়ে  মাছ  ধরতে  আসা  লোকটি  ছিল  আলেক্সি  ইভনোভিচ  গ্যালকিন  এই  লোকই  মস্কোতে তার প্রশিক্ষক ছিল ।  গ্যালকিনের  মিশন  ছিল  আরো  ৩ টা  এজেন্টকে  টুমির  অধীনস্থ  করা।  প্রায়  একবছর  টুমি  ডাবল  এজেন্ট  এর  কাজ  করে  এবং  পরবর্তীতে  আমেরিকায়  আশ্রয়  নেয়।  পরবর্তীতে তাকে    এফ বি আই  একটা  নতুন  পরিচয়ে পুনর্বাসিত করে । 
 ১৯৮২  সালের  এপ্রিলে  এফ বি আই  এজেন্টরা  জর্জিয়ার  অগাষ্টাতে  অবস্থিত  কনফেডারেট  ওয়ার  মেমোরিয়াল  এর  কাছে  গোপনীয়  কাগজপত্র  আদান  প্রদানের  সময়  ৫০  বৎসর  বয়স্ক  হাঙ্গেরিয়ান  অটো  আটিলা  গিলবার্টকে  গ্রেফতার  করে  ।  গিলবার্ট  ছিল হাঙ্গেরিয়ান  সামরিক  গোয়েন্দা  সংস্থার  একজন  সদস্য ।  ১৯৭৭  সাল  থেকে  এই  গোয়েন্দা  সংস্থা  হাঙ্গেরীয়  বংশোদ্ভুত  আমেরিকান  সেনাবাহিনীতে  কর্মরত  ওয়ারেন্ট  অফিসার  জানোস  জোমেলকাকে  দলে  টানার  জন্য  চেষ্টা  চালিয়ে  যাচ্ছিল  ।  তবে  তারা  জানত  না  যে  জানোস  তাদের  প্রথম  সাক্ষাতের  সাথে  সাথেই  এই  তথ্য  আমেরিকার  কাউন্টার  এসপিওনাজ  এজেন্টদেরকে  জানিয়ে  দিয়েছিল । 
 অগাস্তাতে  মিটিং  এর  জন্য  গিলবার্টের পরিচিতির সংকেত  হিসেবে বলা ছিল  সে  জোনাস  এর  কাছে  গিয়ে  জিজ্ঞাসা  করবে  পিচ ট্রি  প্লাজা  কোথায় ?  আমি  এ  শহরে  নতুন  এসেছি  ।  জোনাস  কে  চেনার  জন্য  সে  তার  ডান  কাঁধে  বিভিন্ন  রং করা ষ্ট্রাপ এর সাথে  ক্যামেরা  ঝুলিয়ে  রাখবে  এবং  তার  ডান  হাতে  একটা  অগাস্তা  হেরল্ড পত্রিকার  কপি  থাকবে। 
 জোনাস এর  কাছে  যে  তথ্য  আছে  তা  হাঙ্গেরিয়ান  গিলবার্টকে  জানানোর  জন্য  ও  তাকে  ফাঁদে  ফেলতে  জোনাস  প্যারিসে  চিঠির  মাধ্যমে  জানিয়েছিল  তার  কাছে  ১৯৬৪  সালের  ‘কানাডা  হাফ  ডলার  আছে’।  এটাতে  বুঝানো  হয়েছিল  এগুলো  সামরিক  বিষয়  সংক্রান্ত  তথ্য  ।  জোনস  জানিয়েছিল এগুলো  ‘মিন্ট  কন্ডিশনে’  আছে। এর জবাবে  সে  ভিয়েনা  পোষ্ট  অফিসের  ষ্ট্যাম্প  দেয়া  চিঠিতে  সংকেত পেয়েছিল তা ছিল,  ‘ইসাবেলার  বিয়ে  হচ্ছে’।  জোনাস  ও  গিলবার্ট  এর  মিটিং  এর  দিন  ধার্য  করা  হয়  ২৭  এপ্রিল  এবং  এটাকে  বিয়ের  তারিখ  হিসেবে  দেখানো  হয়।  
 কেজিবির গোয়েন্দবৃত্তির কারিগরী কলাকৌশল  এর  খবর  ১৯৭৮  সালে  তেহরানে  আর্মি  ডেপুটি  চিফ  অব  লজিষ্টিক, জেনারেল  মোঘারেবীর  এবং  আলী  নাগহী  রাব্বানী  নামের শিক্ষামন্ত্রনালয়ের একজন কর্মকর্তার  গ্রেফতারের  পর  রেরিয়ে আসে । কেন্দ্র  থেকে  নির্দেশগুলো  রেডিও  সিগন্যালের  মাধ্যমে  পাঠানো  হতো  ।  এগুলো  রাশিয়ান  সাটেলাইটের  মাধ্যমে  পকেট  ক্যালকুলেটরের  মত  দেখতে  একটা  রিসিভারের  সাহায্যে  গৃহিত  হতো।  রাব্বানী  ছিল  একজন  কাটআউট  তার  কাজ  ছিল  ক্যালকুলেটরকে  উল্টা  ভাবে  ধরে  সংখ্যাগুলোকে  লেখায়  পরিণত  করা  এবং  সেখান  থেকে  সে  আদেশ  গুলো  পড়তে  পারত। মোঘারেবী  যে  সমস্ত  তথ্য  পাঠাতে  চাইত  সে  সমস্ত  তথ্য  একটা  মিনিয়েচার  টেপ  রেকর্ডারে  রেকর্ড  করে  রাখত।  তার  কেজিবি  কন্টাক্ট  সাথে  সাথে  তার  সাথে  যোগাযোগ  করত।  সে  তার  গাড়ী  মোঘারেবীর  বাড়ীর  কাছে পূর্বে  নির্ধারিত  সময়  অনুযায়ী পার্ক  করে  রাখত । তার  সাথে  একটা গ্রাহক  যন্ত্র  থাকত।  তাদের  দুজনের  কাছেই  দ্রুত  বার্তা  প্রেরণ  ও  গ্রহনের  যন্ত্র  থাকত।  বিশ  মিনিটের  তথ্য  তারা  বিশ  সেকেন্ডের  ভেতর  পাঠাতে  পারত। 
 ১৯৭৮  সালে  অটোয়া  থেকে গোয়েন্দাবৃত্তির অভিযোগে ১৩ জন  রাশিয়ানকে  বের  করে  দেয়া হয় ।  সেই  অপারেশনে ভুল  বশত  একজনকে  কেন্দ্র  দায়িত্ব  দেয়।  যে  আসলে  কেজিবির  হয়ে  কাজ  করছিল  না।  অপারেশনের নির্দেশ গুলো  অটোয়ায়  শপিং  সেন্টারের  পিলারে  টেপ  লাগানো  থাকত।  কেন্দ্র  থেকে  নির্দেশ  ছিল  টেপটি  যদি  খাড়া  থাকে  তাহলে  অপারেশন  হবে। টেপটি  আড়াআড়ি  থাকলে  অপারেশন মন্ট্রিলের বদলে  হবে  অটোয়াতে।  হলুদ  রং  এর  হলে  রুটিন  মিটিং  এবং  কাল  রং  এর  হলে  তাৎক্ষণিক  মিটিং  হওয়ার  নির্দেশ  ছিল। 
 ডাবল এজেন্টদেরকে ব্যবহার করে এফ বি আই ফেলেদেয়া  মার্লবরো  সিগারেটের  বাক্সে  ফাঁকা  সিগারেট  এর  মধ্যে  ভুল  তথ্য  ভরে  রাশিয়ানদেরকে বিভ্রান্ত করার জন্য  দেয়া হতো।  কন্টাক্ট  বেশ  ভাল  ভাবেই  প্রশিক্ষিত  ছিল এবং  একজন ভাল  কেজিবি  এজেন্ট  হিসেবে  বিশ্বাস  করত।  সে  তার  গাড়ী  পার্ক করে  বনেট  খুলে  রাখত।  তার  গাড়ীর  পেছনে  এক  কপি  ম্যাকলিন  ম্যাগাজিন  এর  কপি  থাকত  যা  জানালা  দিয়ে  দেখা  যেত।  একজন  লোক  আসার  জন্য সে অপেক্ষা  করত  যে  এসে তাকে  বলত  তুমি  কি  আমাকে  পিংক  লেক  কোন  দিকে  বলতে  পার  ?
 কমলার  খোসা কেজিবির  একটা  বিখ্যাত  আইডেনটিফিকেশন  সিগন্যাল  ছিল।  নিউইয়র্কের  টুমির  মত  কানাডিয়ান  কন্টাক্ট ও  কোন  পূর্ব  নিধারিত  স্থানে  কমলার  খোসা  ফেলে  রাখত  এতে  বোঝা যেত যে  একটা  ফেলে  দেয়া  কোকাকোলার  ক্যানে  খবরগুলো  আছে। 
 কলার  খোসা  ও  কমলার  খোসা  ফেলে  রেখে  তথ্য  আদান  প্রদান  বা  মিটিং  এর  ব্যবস্থার ব্যাপারটা  জানাজানি  হওয়াতে  কেজিবি  বেশ  অস্বস্থির  মধ্যে  পড়েছিল।  
 এগুলো  থেকে  বুঝা যায়  কেজিবি  তার  এজেন্টদেরকে  বিশদ  নির্দেশ  দিয়ে  তা  পুরোপুরি  মেনে  চলতে  বাধ্য  করত ।  এজেন্টরা  তাদের  ইচ্ছামত  কোন  কাজ  করতে  পারত  না  এবং  তাদের  সমস্ত  চলাফেরা  কেজিবি  পর্যবেক্ষণে  রাখত।  এতসব  কড়াকড়ি  সত্ত্বেও  এজেন্টরা  যখন  দলত্যাগ  করত  তখন  কেজিবি  বুঝে  উঠার  আগেই  এসব  তথ্য  বের  হয়ে  যেত।  
 
১৩ ই মার্চ, ২০১৪  রাত ৮:১৬
শোভন শামস বলেছেন: ধন্যবাদ, অনেক দিন পর পেছনের লিখাগুলো দেখছিলাম
তখন বাংলা টাইপ করতে পারতাম না তাই সব জবাব দিতে পারিনি।
আবারো ধন্যবাদ
২| 
২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৩  সকাল ১০:২৬
জুন বলেছেন: মাসুদ রানা বা এ্যলিয়েষ্টার ম্যাকলিন্সের গোয়েন্দা বিবরনী পড়লাম। অনেক অজানা তথ্য জানা হলো গোয়েন্দাদের সম্পর্কে। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে 
  
 
২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৩  সকাল ৯:২৩
শোভন শামস বলেছেন: আমার বইটা পড়ে ভাল লেগেছিল তাই অনুবাদ করেছিলাম। ভাল লেগেছে জেনে ধন্যবাদ । আপনার মন্তব্য আমাকে আরও ভাল লিখতে সাহায্য করবে ।
©somewhere in net ltd.
১|
২২ শে জানুয়ারি, ২০১৩  রাত ১১:৫৯
মনিরা সুলতানা বলেছেন: পড়লাম