| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস | 
    আমেরিকাতে  বেড়ানোর  জন্য  ছোটভাই স্পন্সর করল। সেই  অনুযায়ী  আবিদজানে  অবস্থানকালীন প্রস্তুতি নিলাম আমেরিকার  উদ্দেশ্যে যাত্রা করার । আল্ল¬াহর  অশেষ   রহমতে  অবশেষে  ১৪  সেপ্টেম্বর  ২০০৫  যাত্রা  করলাম  আমেরিকার  নিউইয়কের  উদ্দেশ্যে ।  সেপ্টেম্বরের ৪/৫  তারিখ  আবিদজানের সাতগুরু  ট্রাভেলসে  গিয়ে  টিকেট  করে  এলাম। এয়ার লাইন্সের নাম রয়েল এয়ার  মরক। সব  মিলিয়ে  ৫,৫০,০০০.০০  সিএফএ  লাগল,  প্রায়  ১০০০  ডলার।  আবিদজান  টু  কাসাব্লাংকা,  সেখান  থেকে  নিউইয়র্ক  জন  এফ  কেনেডি  বিমান  বন্দর  এবং  ফেরত ।  ফেরার  পথে  কাসাব্ল¬াংকাতে  একদিন  হোটেলসহ  থাকার  ব্যবস্থা।  ১৪   তারিখ  রাত  একটা পচিঁশ মিনিটের   ফ্লাইট, রাত  ৯ টার পর  এয়ারপোর্টে  এলাম।  চেক  ইনের  জন্য  আরো  দুই  ঘন্টা ।  আমি  একা  দাড়িয়ে  থাকলাম  আবিদজান  এয়ারপোর্টে । বসার  ব্যবস্থা  নেই । রাত দশটা পঁচিশ  এর  দিকে  চেকইন  করলাম ।  টার্মিনালের  ভিতর  গেলাম।  ওয়েটিং  এরিয়াতে  প্রায় রাত বারটা চল্লিশ পর্যন্ত  বসে  ছিলাম সব চুপচাপ শান্ত নতুন  একটা  মহাদেশে  প্রথম   যাচ্ছি  ।  প্লে¬নে  করিডোরের  পাশে  সিট  । ৩  সিটে  ২  জন  বসেছি  একটা  খালি ।  প্লে¬ন  টেকঅফের পর প্রথমে জুস  দিল ,  তারপর  রাতের  খাবার,  ডিম,  মার্মলেড, আলু  সেদ্ধ , ব্রেড  ইত্যাদি। খারাপ  লাগেনি । 
৪ ঘন্টা ১০  মিনিট  ফ্লাইট  শেষে  কাসাব্লাংকা  পঞ্চম মোহাম্মদ  আন্তর্জাতিক  এয়ারপোর্টে প্লেন  ল্যান্ড  করল।  তখন সময়  সকাল  ৬ টা  । প্লে¬ন  থেকে  নেমে  বাসেকরে  টার্মিনাল  ও  ট্রানজিট  লাউঞ্জে এলাম।  সকালের  ফযরের  নামাজ  পড়লাম, নামাজের  জন্য  আলাদা  জায়গা  আছে এয়ারপোর্টে  ।  ৯ টার  পর চেক  ইন  হবে।  তেমন  কোন  কাজ  নেই  কোথাও  যাওয়ার  ও  নেই।  ডিউটি  ফ্রি  সপগুলোর  সামনে  বসে  বসে  সময়  কাটালাম, কিছু  কিনতে  ইচ্ছে  করল  না  । ১০ টার  দিকে  বোর্ডিং  কার্ড  নিয়ে বোর্ডিং  এরিয়াতে  গেলাম।  হ্যান্ড  লাগেজ  সব  চেক  করল, রেজর রেখে  দিল,  নেয়ার নিয়ম নেই । প্লে¬নটা  সুন্দর, নতুন  বোয়িং  ৭০৭।  আমি  ভাল  সিট  পেলাম তাই পা  ছড়িয়ে  বসলাম। পাশের  সিটের   যাত্রীর  নাম  মোহাম্মদ,  মরক্কোর  অধিবাসী।  এখন  ইউএস  সিটিজেন, ফ্লোরিডাতে  ব্যবসা  করে। ১১-৩০এ  প্লে¬ন  টেক অফ  করল, এরপর  আটলান্টিক  মহাসাগর।  কুলকিনারা  ছাড়া  ৭  ঘন্টা  ফ্লাইট।  একমাত্র  আল্ল¬াহই  এই  অবস্থায়  হেফাজত  করেন।  টানা  জার্নি  বেশ  কস্ট। ২ বার  খাবার  দিল ।  ডিনার  ছিল  মাংশ,  অল্প  ভাত, ভেজিটেবল, স্প্রাইট  ও  জুস, ভাল  ভাবেই   খেলাম ।  নিউইয়র্ক  সময়  বিকাল  ৩ টায়  জন এফ কেনেডি বিমান  বন্দরে  প্লেন  ল্যান্ড করল । 
নিউ ইয়র্ক শহরের কথা ভাবলেই ষ্টাচু অব লিবার্টির ছবি মনে ভেসে উঠে । এটা  আমেরিকার  প্রাচুর্য এবং সুযোগের কথা ইমিগ্রান্ট এবং পর্যটকদের মনে করিয়ে দেয় । ইটালিয়ান পর্যটক জিওভানি ডি ভেরাজানো প্রথম ইউরোপিয়ান, যে ১৫২৪ সালে বর্তমান নিউ ইয়র্ক এলাকায় আসেন । তারো অনেক পরে ১৬০৯ সালে হেনরি হাডসন আসার পর কলোনাইজেশন সুরু হয় । হেনরি হাডসন চীন যাওয়ার পথ আবিষ্কার করতে গিয়ে নিউ ইয়র্কে চলে আসেন । অনেক উত্থান পতন এবং দ্বিতীয় এ্যাংলো ডাচ যুদ্ধের পর ১৬৮৫ সালে ডিউক অব ইয়র্ক এর নামানুসারে এই জায়গাটা নিউ ইয়র্ক নামকরন করা হয় এবং তা একটা ব্রিটিশ ক্রাউন কলোনীতে পরিণত হয় । প্রথমে  ইমিগ্রেশন ফরমালিটিজ ।  ৩ নং  গেটে  গেলাম,  লাইনে  ১০/১২  মিনিট  দাঁড়ানোর  পর  ইমিগ্রেশন  অফিসারের  সামনে  এলাম, স্পেনিশ  বংশোদ্ভুত  বলে  মনে  হলো।  পাসপোর্ট  দিলাম,  সাথে  আই-৯৪, অবতরণ  কার্ড  ও  আইডি  দেখালাম।  বলল  কোথায়  এসেছি, বললাম  ভাইকে  দেখতে ।  ডান  ও  বাম  হাতের  আংগুলের  ছাপ  নিল,  ক্যামেরার  দিকে  তাকাতে  হলো।  জিজ্ঞাসা  করল  কতদিন  থাকব ?  বললাম  সেপ্টেম্বরের  ২৮ পর্যন্ত।  ৬  মাসের  ভিসার  সীল  মেরে  দিল।  খুব  সহজে  পার  হলাম ।  এরপর  নাথিং  টু  ডিকলার  লাইন  দিয়ে  বের  হয়ে  গেলাম  ।  ওয়েটিং  এরিয়াতে  আসার  আগে  লাগেজ  কালেকশন  করলাম।  ওয়েটিং  এরিয়া  থেকে  সিটি  ম্যাপগুলো  নিলাম  ।  এখানে র্যাকে  পর্যটকদের জন্য  ফ্রি বুকলেট ও ম্যাপ সাজানো আছে । তারপর  ১  ঘন্টার  বেশী  অপেক্ষা।  
ওয়েটিং  এরিয়ার  লোহার  বেঞ্চে বসেছিলাম ,এসি আছে  কাজেই  কোন  সমস্যা  নেই।  ৪-২০  এর  দিকে  দেখি ছোটভাইরে বড়  ছেলে  চাচ্চু  বলে  দৌড়ে  এলো । ওকে আদর  করে  কোলে  নিলাম  ও  খুব  খুশী  ।  বাইরে  এলাম ।  ছোটভাই  প্রথমে আমাকে খুজে  পায়নি  তাই  গাড়ী  পার্কিংএ  রেখে এসেছে ।  ছোট  ভাই  গাড়ী  চালাচ্ছিল। সুন্দর  গাড়ী,  ২০/৩০  মিনিট  ড্রাইভ  করে  জ্যাকশনহাইটে  ওর  বাসায়  আসলাম  ।  জ্যাকশন  হাইট  হলো  বাংলাদেশীদের  আস্তানা।  এর  কাছেই কুইন্সে ভাইয়ের  বাসা  । নিউইয়র্কে   ৫ টা  বরো  বা  এলাকা  আছে,  কুইন্স  তাদের  একটা ।  ম্যানহাটান , ব্র“কলিন, ব্র“নক্স  এগুলো  ভিন্ন  বরো। ছোট ভাই আমাকে  ব্র“নক্স  থেকে  দুরে  থাকতে  বলল। বাকী  জায়গা  গুলোতে  মোটামুটি  নিরাপদে  ঘুরতে  পারি ।  ব্র“নস্ক  কালোদের  এলাকা ,সস্তা  এলাকা   কিন্তু  এর  নিরাপত্তা  ব্যবস্থা  বেশী  ভাল  না, তাই  না  যাওয়া  উত্তম,  ১৫ দিন  নিউইয়র্ক  অবস্থানকালীন  সেখানে  যাইনি কখনো  । আমেরিকার  ৫১ টা  ষ্টেট  ঘুরে  দেখা  এক  জীবনে  সম্ভব  কিনা  জানি না  তবে  ৪০  ভাগ  আমেরিকান  তাদের  জীবনে  নিজের  এলাকা  ছেড়ে  বাইরে  কখনও  যায়নি  । 
এপার্টমেন্টটা  বেশ সুন্দর । ডিম, মুরগীরান্না, ফ্রাই  চপ  পোলাউ, রাশান  সালাদ  রান্না হয়েছে ।  ভালই  লাগল।  রাতে  আর  কোথাও  যাইনি  ঘরে  বসে  সময়  কাটালাম। একটু  গরম  আবহাওয়া, ফ্যান  এ  কাজ  হচ্ছে  না। ওদের  লিভিংরুমে  থাকার  ব্যবস্থা ।  রাত  ১ টার  দিকে  ঘুম  দিলাম।  সকালে  ঘুম  থেকে  উঠে  সিরিয়াল  দিয়ে  নাস্তা  খেলাম  তারপর  বাচ্চাদেরকে  স্কুলে  দিয়ে  এলাম।  সব  বিভিন্ন  জাতির  লোকজন।  কাজেই  জাতিগত  বা  বর্ণগত  কোন  সমস্যা  নেই। এশিয়া, ল্যাটিন  আমেরিকা, চীন  ইউরোপ  সব  দেশের  লোকজনের বাচ্চা এখানে  আছে ।  মা  বা  বাবা  সাথে  নিয়ে  আসছে ।  টিচাররা  ভেতরে  নিয়ে  যাচ্ছে  বাচ্চাদের।  দুর্গের  মত  স্কুল, ছাত্ররা  ছাড়া  কেউ  ভেতরে  যেতে  পারে  না।  বৃষ্টি  ছিল, ছাতা  নিয়ে  ঘুরলাম  কিছুক্ষণ,  ৯ টায়  ফেরৎ  এলাম  বাসায়  ১০ টায়  আশে  পাশের  ২/৩  কিঃ মিঃ  এলাকার  বিভিন্ন  দোকান  পাটে  ঘুরলাম। রাতে সবাই মিলে আইসক্রিম কিনতে ডিপার্টমেন্টার স্টোরে গেলাম। 
 
জেসি  পেনি  ডিপার্টমেন্টাল  ষ্টোর  
পরদিন  শুক্রবার  নাস্তাকরে  বাচ্চাদের  স্কুলে  দিয়ে  ১০ টার  দিকে  বের  হলাম ।  আজ  বহুদুর  হেঁটে  টার্গেট,  জেসি  পেনি  ইত্যাদি  ডিপার্টমেন্টাল  ষ্টোরে ঘুরলাম ।  এখানে  সবকিছুর  দাম  বেশী  তবে  কোয়ালিটি  প্রোডাক্ট।  প্রায়  ২/৩  ঘন্টা  হাটলাম। ৫/৬ টা  ছোট বড়  ষ্টোরে  ঢুকলাম  তবে  তেমন  কোন  জিনিষ কেনা হলো না। একটায় জুম্মার  নামাজ  পড়তে  গেলাম । “ কুইন্স ” এর  বাংগালী  মসজিদে  ।  ২ টার  মধ্যে  নামাজ শেষ  হলো ।  মিলাদ  পড়লাম,  তবারক  বাসায়  নিয়ে  এলাম।  সিংগারা  ও  লাড্ডু  । রাতে বাসার চারপাশের এলাকা ঘুরলাম , বহু দিন পড়ে দুই ভাই গল্প করে সময় কাটালাম ।  এখানকার  ব্যবসার  প্রসপেক্ট  সম্বদ্ধে  অনেক  কথা  হলো ।  
দুপুর  বেলা  নিউইয়র্ক  ম্যানহাটনের  কাছে  নদীর  পাড়ে  গেলাম ।  টিউবে করে মানহ্যাটানের বিভিন্ন জায়গা ঘোরাফেরা করলাম । আবার ম্যানহাটানের টাইম স্কোয়ার বেশ প্রসিদ্ধ জায়গা অনেক নাম শুনেছি আজ নিজ চোখে দেখলাম । এখানে ছবি তোলার অনেক ইচ্ছে ছিল কিন্তু তোলা হলো না । রাস্তা গুলোতে সারি সারি গাড়ি চলছে । আকাশচুম্বী সব ভবন । আকাশের দিকে সোজা তাকাতে গেলে ঘাড় ভেংগে যাওয়ার অবস্থা । কর্নারগুলোতে কফিশপ ও বসার ব্যবস্থা আছে । পর্যটকরাই মূলত সেখানে কফি পানও  বেড়ানোর ফাঁকে ফাঁকে আড্ডায় মশগুল । 
 
টাইম স্কোয়ার
৪২ ষ্ট্রীট ষ্টেশনে নামলেই টাইম স্কোয়ার এলাকা । ১৯২০ সালে নিউ ইয়র্ক  টাইমস পত্রিকার হেড অফিস এখানে স্থাপন করা হয় এবং এই নামটি সেখান থেকে আসে । হাজার হাজার নিয়ন সাইনে টাইম স্কোয়ার আলোকিত এবং রাতের নিউ ইয়র্কের একটি দর্শনীয় জায়গা এই স্কোয়ার । রেকটর ষ্ট্রীট সাবওয়ে ষ্টেশন থেকে ওয়াল ষ্ট্রীটে যাওয়া যায় । এটা নিউইয়র্কের অর্থনৈতিক প্রানকেন্দ্র, এর পশ্চিম কোনায় ট্রিনিটি চার্চ আছে । চার্চের সামনে একটুখানি জায়গা সেখানে বসার ও ব্যবস্থা আছে । ১৮৪৬ সালে অ্যাংগলিকান চার্চের কতিপয় সদস্য গোথিক স্থাপত্যকলায় এই চার্চ নির্মাণ করে । এর টাওয়ার প্রায় ২৬ মিটার উচু এবং তখনকার সময়ে এটা সবচেয়ে উচু বিল্ডিং ছিল । সকাল  বেলা  এসব এলাকার আশে  পাশে  ঘুরলাম । সেখানে  লাঞ্চ,  তারপর  ছবি  তুললাম  কিছু  ।  এরপর  ২/৩  টা  ডিপার্টমেন্টাল  ষ্টোর, কনওয়ে, বিগবাইতে গেলাম। তাওয়াল, মোজা  ও  চকলেট  কিনলাম  কনওয়ে  থেকে। পরে  ৯৯  সেন্ট  এর  দোকান  থেকে  কয়েকটা  জিনিষ  কিনলাম  ।  
 
ব্রুকলিন ব্রিজ
নিউইয়র্কের দিনগুলোতে বেশ কয়েকবার ব্রুকলিন ব্রিজ পার হয়েছি। এটা পৃথিবীর প্রথম ষ্টীলের তৈরী সাসপেনশন ব্রিজ। ১৮৬৯ সালে এটা বানানো শুরু হয় ১৮৮৩ সালে এটার কাজ শেষ হয় । প্রায় ১০৯১ মিটার লম্বা  এই ব্রিজটি তখনকার সময়ের একটা বিশাল ইঞ্জিনিয়ারিং অগ্রগতির নিদর্শন। সকালে নাস্তা  খেতে  খেতে  ১১ টা  বেজে  গেল আজ,  বাইরে  যাওয়ার  প্ল¬ান  আছে। সব গুছাতে  গুছাতে  ২ টা।  তারপর  ষ্ট্যাচু  অব  লিবারটি  দেখার  জন্য রওয়ানা  হলাম । সাবওয়ে স্টেশন থেকে টিউবে সাউথ  ফেরীতে  গেলাম। কাউন্টার থেকে  লিবার্টি  আইল্যান্ড  এর  টিকেট  কাটা  হলো  । বড়দের  জন্য  ১১.৫০  ডলার  বাচ্চাদের  জন্য  ৪.৫০  ডলার । প্রথম  ফেরী  মিস  করলাম  কিছুক্ষণ  অপেক্ষা  করে  পরবর্তী  ফেরীতে  উঠলাম । কিছুক্ষণ পরপরই জাহাজ আসছে । যাত্রির কমতি নেই । সারা বছর হাজার হাজার পর্যটক এই দ্বীপে আসছে স্বপ্নের আমেরিকার স্বাধীনতার প্রতীক দেখতে । বিভিন্ন দেশের যুবক, যুবতী, বৃদ্ধ ,বৃদ্ধা , শিশুদের ভীড়ে ফেরী এবং আশেপাশের এলাকা জমজমাট । কাউন্টার এলাকার আশেপাশে হকররা স্যুভেনিরের দোকান খুলে বসেছে । পর্যটকরা দেদারসে কিনছে যেসব স্মৃতি চিহৃ । এখানে দাম একটু বেশী লিবার্টি আইল্যান্ড থেকে । 
 জাহাজ থেকে ম্যানহাটানের সুউচ্চ ভবন গুলোতে সূর্যের আলোর প্রতিফলন অসম্ভব সুন্দর লাগে । বাড়ীগুলোর বাইরের নানা রং এর কাঁচ এবং বিভিন্ন আকার একটা চমৎকার দৃশের সৃষ্টি করছে । সবার ক্যামেরা ক্লিক করছে। সাদা কালো কোন ভেদাভেদ নেই এখানে, তবে কালো পর্যটকদের সংখ্যা কম, ইউরোপিয় এবং স্পেনিশ বংশদভুত লোকজন বেশী, এশিয় পর্যটক সীমিত । ফেরী  তিন  তলা।  জাহাজে  অনেক  ছবি  তোলা  হলো।  ১০/১৫  মিনিটের  ভিতর  দ্বীপে  পৌঁছে  গেলাম। ষ্টাচু  অব  লিবার্টি  দেখার  জন্য , লিবার্টি , আইল্যান্ডে  নামলাম।  
 
লিবার্টি  আইল্যান্ড  
 ছবি  তুললাম  কিছু,  সূর্য  বড়  বড়  আকাশছোয়া  বাড়ীগুলোর  উপর  পড়ছে।  দ্বীপে  ছবি  তুললাম,  তারপর  ঘুরলাম  এক  চক্কর ।  ম্যাকডোনাল্ডস  থেকে  বার্গার  কেনা  হয়েছিল, সেগুলো পেপসি  দিয়ে  খেলাম  সবাই  মিলে।  দিনের  আলোছিল  তখনো।  ফেরীতে  করে  কিছুক্ষণ  পরপরই  একেকটা  পর্যটকেরদল  নামছে  এর  জেটিতে আবার  আরেকদল  ফিরে  যাচ্ছে  ।  দ্বীপটা  মানুষে  গমগম  করছে  । তবে  খোলামেলা  ও  বিশাল  ফাঁকা  এলাকা ।  সব  সময়  আমেরিকা  বলতেই  এই  ষ্টাচু অব  লিবার্টির  ছবি।  বিশাল এই  মুর্তিটাই  দ্বীপের  অন্যতম  আকর্ষণ  এতে  চড়ার  জন্য  এবং  এর  কাছে  দাঁড়িয়ে  ছবি  তোলার  জন্য  মানুষ  ব্যস্ত  ।  পর্যটকদের  জন্য  পার্কের  মত  ব্যবস্থা  আছে  সেখানে  বসে  খাওয়া  দাওয়া  করা  যায় ।  ফেরীটাও  সুন্দর  খোলা  ডেকে  চেয়ার  লাগানো  আছে।  অকৃপন   সূর্যের  আলোতে  ভিজে  নিউইয়র্ক  শহর  দেখতে  দেখতে  দ্বীপে  পৌঁছানো  যায়।  খোলামেলা  বলে  দুর  থেকে  ছবি  তোলার  বেশ  ভাল  সুযোগ  আছে ।  বেশ  কিছুদুর  হেঁটে  লিবার্টি  মুর্তির  সামনে  যেতে হয় ।  এর চারদিকে  রাস্তা  ভূমি থেকে বেশ  উচুতে  ।  টিকেট  করে  এর  ভেতরে  উঠার  ব্যবস্থা  আছে।  আমরা  সেখানে  যাইনি  ।  বাইরে  বসে  ছবি  তুলেছি  ও  আশেপাশের  প্রকৃতি  দেখে  সময়  কাটিয়েছি।  ফ্রান্স  থেকে আসা  এক  পর্যটকের  সাথে  দেখা  হলো , প্রথম বারের  মত  এসেছে  নিউইয়র্ক  এ  এই  মূর্তি  ফ্রেঞ্চ  সরকার  দিয়েছিল  তাই  দেখতে  এসেছে । আমেরিকাতে বন্ধুর বাসায়  থেকে  কয়েকটা  দিন  কাটাবে।  ঠান্ডা  বাতাস, সূর্যের  আলো , নির্মল  পরিবেশ  সব  মিলিয়ে আমাদের  কয়েক ঘন্টার অবস্থান  বেশ  আনন্দঘন  ছিল। বাচ্চারা  লিবার্টি  আইল্যান্ড  থেকে  ফিরে  এসে  ব্যাটারী  পার্ক  এর  কাছে বিশাল  ষাড়ের পিতলের মূর্তির  পাশে  অনেক  ছবি  তুলল  ও  খেলাধুলা  করল।  লিবার্টি  আইল্যান্ডে  ফেরার  সময়  দেখলাম যে  একটা  সাবওয়ে  বন্ধ  হয়ে  গেছে  ।  তখন  অন্য  সাবওয়ে  দিয়ে  বাসায়  ফেরার  জন্য ট্রেন  ধরতে  গেলাম  । গাড়ীটা  একটা  সাবওয়ে  ষ্টেশন  এর  পাশে  রাখা।  ২ বার  ট্রেন  চেঞ্জ  করতে  হলো  ।  গাড়ীটা  নিরাপদে  আছে  কোন  সমস্যা  নেই । তারপর  মার্কেট  থেকে  জিনিষপত্র  কেনাকাটা  করে  রাত  ৯-৩০  এ  বাসায়  এলাম  ।    
নিউইয়র্ক  প্রবাসী অনেক  বাংগালী  খুব  সরল  জীবন  যাপন  করে  অর্থ  সঞ্চয়  করে  দেশে  কিছু  একটা  করার  চেষ্টা  করেন। এদের  কষ্টার্জিত  অর্থে  আমাদের  দেশ  অনেক  উপকৃত  হয়। আমি  এদের  সম্মান  করি ।  আমেরিকাতেও  তাঁরা  বাংলাদেশের  মতই  সরল  জীবন  যাপন  করেন। পরদিন  নতুন  ২/৩ টা  ডিপার্টমেন্টাল  ষ্টোরে  গেলাম কিছু মজার চকলেট  কিনলাম । দুপুর  বেলা  পার্কে  বসে কিছু সময় কাটালাম । 
 
জ্যাকসন  হাইট  
নামাজ  পড়লাম  জ্যাকসনহাইটের  এক মসজিদে, অযুও  সেখানে  করলাম ।  জ্যাকসন হাইটের আশেপাশে কুইন্স এলাকায় বহু বাংগালী থাকে । এসব জায়গায় বাংলা লিখা দোকানের সাইন বোর্ড ও বাংলা হরদম শোনা যায় ।  দোকান গুলোতে অনেক বাংলাদেশী জিনিষ ও স্থানীয় বাংলা পোষ্টার পাওয়া যায় । একদিন দেখলাম একজন বয়স্ক লোক ফুটপাতে একটা মেশিন দিয়ে পাতা পরিস্কার করছে এবং আরো কয়েকদিন দেখলাম সে এই এলাকায় মেশিন নিয়ে এ কাজ করে । পরে জানতে পারলাম ভদ্রলোক গ্রীস থেকে যৌবনকালে নিউইয়র্কে এসেছিলেন খালি হাতে । জীবন সংগ্রামে তিনি আজ প্রতিষ্ঠিত, তার দু ছেলে ইঞ্জিনিয়ার।  এখন স্বামী স্ত্রী একসাথে নিজেদের বাড়ীতে থাকে । সাথের দোকানটা তার , কাজের ফাঁকে ফাঁকে নিজ বাড়ী ও দোকানের আসেপাশের এলাকা নিয়মিত পরিছন্ন করে রাখেন ।
পরদিন  সকালবেলা  ছোটভাইয়ের  অফিসের  আশেপাশে  ঘুরলাম ।  এইটথ  অ্যাভিনিউ  ৩৬  ষ্ট্রীট।  টিউব  ষ্টেশন  হলো  ৩৪  ষ্ট্রীট  ষ্টেশন।  সেখান  থেকে হেঁটে  যেতে হয় অফিসে। এরপর মেট্রোতে চড়ে লোয়ার ম্যানহাটানে গেলাম। এলাকাটা তুলনামুলকভাবে একটু দরিদ্রদের বলে মনে হলো । দুপুরে খাবার জন্য ম্যাগডোনাল্ডস এ ঢুকলাম। এখানে একটা মিল নিলে কোক যত ইচ্ছা তত খাওয়া যায়। তবে দুই গ্লাসের বেশী খাওয়া সম্ভব হলো না। পাশের নদী ও কাছাকাছি এলাকা গুলো কাঁচের ওপাশ থেকে দেখতে দেখতে আস্তে আস্তে লাঞ্চ সারলাম। এরপর বিশাল এক লাইব্রেরীর সামনে দাড়ালাম, দরজার বাইরে অনেই বই। বইগুলোতে বিভিন্ন মানের ডিসকাউন্টের ট্যাগ লাগানো, এই রাস্তার আরো বেশ কয়েক জায়গায় ফুটপাথে  পুরানো ও নতুন বই রয়েছে । নিউইয়র্কে বইয়ের এ ধরনের এলাকা পেয়ে ভালই লাগল। লাইব্রেরীর ভেতর কয়েক তলা, পড়ার জন্য টেবিল আছে, সেলফ থেকে একটা বই নিয়ে যতক্ষন খুশী পড়ে রেখে দেয়া যায়  কিংবা কিনতে চাইলে কাউন্টারে পেমেন্টের ব্যবস্থা আছে । 
২| 
২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৩  দুপুর ১২:২২
টেকনিসিয়ান বলেছেন: বেড়ানোর সাথে ডিপার্টমেন্ট স্টোরে গেলাম চকলেট, আইসক্রিম কিনলাম...... মেগডোনাল্টে গেলাম একটি কিনে দুবার কোক খেলাম..., অতপরঃ বইপুস্তক কিনে বের হয়ে গেলাম.....              
উল্লেখযোগ্য কোন স্থাপনাতে গেলাম না বা ছবিও দেখলাম না..... অপূর্ণ থেকে গেলা ভ্রমণ  
  
  
  
  
  
  
  
  
  
   
৩| 
২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৩  দুপুর ১২:৫০
বিডি আইডল বলেছেন: ![]()
©somewhere in net ltd.
১|
২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৩  দুপুর ১২:০০
নতুন বলেছেন: ভ্রমনের লেখা ছবি ছাড়া?