নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সজীব রকিবুল ইসলাম

সাধারন একজন মানুষ

রকিবুল ইসলাম সজীব

সাধারন একজন মানুষ

রকিবুল ইসলাম সজীব › বিস্তারিত পোস্টঃ

গার্মেন্টস সেক্টরের কিছু কথা।

০৩ রা মে, ২০১৩ সকাল ১০:৫৯

আমি বাংলাদেশের গার্মেন্টস সেক্টরের সাথে জড়িত ২০০৫ সালের মে মাস থেকে! আমার জব ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই! অলমোস্ট ৮ বছর হলো বলে! কমনা কিন্তু। আমি কখনো কল্পনা করতে পারি নাই আমি কখনো গার্মেন্টস সেক্টরের সাথে এমন ভাবে জড়িয়ে যাবো। কারন এই সেক্টরের ব্যাপারে আমার কখনোই ভালো ধারনা ছিলো না। চিন্তা করতাম মানুষ কেমন করে গার্মেন্টসে কাজ করে? কিন্তু সেই আমি এই ২০০৫ সাল থেকে নানান ধরনের ইন্ড্রাঃ তে অডিটের সাথে সাথে গার্মেন্টস সেক্টরেও অডির করছি, গার্মেন্টে মূলত আমি অডিট করি সোস্যাল কমপ্লাইস, এনভাইরনমেন্ট কমপ্লাইন্স, হেলথ এন্ড সেফটি কমপ্লাইন্স, সিকিউরিটি কমপ্লাইন্স। ২০০৫ সালে যখন আমি সোস্যাল কমপ্লাইন্স অডিটে ঢুকেছিলাম তখন কিন্তু গার্মেন্টসের কাজের পরিবেশ আগের তুলোনায় অনেক ভালো বলা যায়। তার পরও অনেক কিছু ছিলো না আন্তর্জাতিক নিয়ম নীতি অনুযায়ি অনেক কিছু বাকি ছিলো।



শুরুর দিকে বাংলাদেশের গার্মেন্টস গুলোর কথা আপনারা চিন্তা করতে পারবেন না, এমনকি আমি নিজেও না। গার্মেন্টস গুলো ছিলো গোডাউনের মত। নূনতম সুবিধা বলতে যা বুঝায় কিছুই ছিলো না। ছিলো না কোন কাজের পরিবেশ।



সকাল ৮টা তে কাজে ঢুকত কখন বার হবে তার কোন টাইম টেবিল ছিলো না।



সারারাত ধরে কাজ করা কোন ব্যাপারই ছিলো না। সকাল ৮টা থেকে রাত ৭টা পযন্ত কাজ করার পর ওয়ার্কারদের সময় দেওয়া হত ঘন্টা খানেক! এর মধ্যে বাসা থেকে কিছুটা সময় বিশ্রাম নিয়ে আবার কাজ শুরু করতো রাত ৯টা থেকে! কাজ হত ফজরের আজান পযন্ত! তার পর ছুটিতে পেতো ঘন্টা খানেক বিশ্রামের জন্য, তারপর আবার সকাল ৮টা থেকে কাজ শুরু হত! এমন করেই যেতো দিন! মাস শেষে পেতো লামসাম কিছু টাকা! বেতনের কোন ঠিক ঠিকানা ছিলো না। ছিলো না কোন ডাক্তার, ছিলো না কোন নার্স, ছিলো না কোন চাইল্ড কেয়ার রুম, ছিলো না ভালো একটা পরিবেশে বসে দুপুরের খাওয়া খাওয়ার ব্যাবস্থা!



আজ গার্মেন্টস অনেক উন্নত্ হয়েছে,



আজ গার্মেন্টসে গেলে আপনি দেখতে পাবেন,



গার্মেন্টস গুলোতে ডাক্তার আছে, নার্স আছে, আছে একটা মেডিকেল রুম আর প্রতি ১৫০ জন ওয়ার্কারের জন্য একটি করে ফাস্ট এইড বক্স।

গার্মেন্টস গুলোতে প্রতি ৫০০ স্কয়ার ফিটে একটি ফায়ার এক্সটিংগুইসার আছে।

গার্মেন্টগুলোতে বছর শেষে ৫% প্রফিট শেয়ারের কালচার শুরু হচ্ছে।

বাচ্চা রাখার জন্য চাইল্ড কেয়ার রুম! ক্যান্টিন আছে, আর অনেক গুলো ফ্যাক্টরিতে হাজার হাজার কর্মীকে মান সম্মত দুপুরের খাওয়াও দেওয়া হয়।

আর্ন লিভ, সিক লিভ, মেটারনিটি লিভ এই সবের সাথে বাংলাদেশের গার্মেন্টস গুলোর ওয়ার্কার খুব ভালো করেই পরিচিত।

৮ ঘন্টার রেগুলার কাজের শেষে যেই দুই ঘন্টার ওভার টাইম কাজ হয় তার হিসাবে বেসিকের ডাবল হিসাবে ওয়ার্কাররা পায়।



আজ গার্মেন্টস গুলোতে রেগুলার থার্ডপার্টি অডিট হয় শুধু মাত্র এটা নিশ্চিত করার জন্য তারা শ্রমিকদের সব ধরনের সুবিধা দিচ্ছে, গার্মেন্টসের কর্মপরিবেশ ঠিক আছে আর আরো উন্নতি করার জন্য কি করতে হবে তার গাইডলাইন। আর এই সব অডিটের জন্য এক একটা অডিটের জন্য গার্মেন্টস গুলোকে দিতে হচ্ছে হাজার হাজার ডলার।

উপরে উল্লেখিত সুযোগ সুবিধার কিছু আমি উল্লেখ করেছি মাত্র। এই সব সুযোগ সুবিধা কিন্তু বাংলাদেশের শুধু মাত্র গার্মেন্টসের জন্য না এই সব হওয়ার কথা প্রতিটি অফিস, ইন্ড্রাস্ট্রিতে। কিন্তু তা কিন্তু হচ্ছে না। আপনার আশে পাশে দেখুন কয়টা ইন্ড্রাঃ তে দেখেন?



পাবেন না।



হোক না তা স্টিল ইন্ড্রাঃ ,

হোক তা ফুড ইন্ড্রাঃ,

হোক তা সিমেন্ট ইন্ড্রাঃ।



গার্মেন্টস গুলোতে টাকা হয়তো কম পাচ্ছে কর্মীরা কিন্তু বাংলাদেশের গার্মেন্টস গুলোতে যেই সব নিয়ম কানুন মেনে চলা হয়া তা অন্য ক্ষেত্রে কিন্তু খুব কমই মানা হয়। শ্রম আইন আর বিল্ডিং কোড শুধু মাত্র গার্মেন্টসের জন্য না কিন্তু এটা প্রতিটি কর্মক্ষেত্রের জন্য প্রযোজ্য কিন্তু তা হচ্ছে কি?



গার্মেন্টস ছাড়া আর কোথায় আপনি চাইল্ড কেয়ার, মেডিকেল ফ্যাসিলিটি, ডাক্তার, নার্স, ফায়ার ফাইটিং টিম, ফায়ার ফাইটিং ইকুপমেন্ট, প্রফিটের ৫% শেয়ার এই সব দেখতে পারি? হ্যা এটা ঠিক টাকা হিসাবে তারা যা পায় তা বর্তমান প্রেক্ষাপটের তুলনায় অনেক কম। কিন্তু আমাদের বোঝা উচিত এই সেক্টর আস্তে আস্তে এগুচ্ছে, বিশ্ববাজারে আজ বাংলাদেশের একটা শক্তিশালী অবস্থান হয়েছে। আমাদের প্রচুর সুযোগ আছে পোশাক শিল্পতে। প্রচুর প্রচুর প্রচুরররর…



বাংলাদেশ থেকে এই পোশাক শিল্পটাকে সরিয়ে নেবার জন্য অনেকদিন ধরেই আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র হচ্ছে, নানান সময় নানান ভাবে হচ্ছে, তার সাথে এই সব এক্সিডেন্ট গুলো সেই সবকে আরো গতিময় করে দিচ্ছে।



এই সব কিন্তু একদিনে হয়নি! আস্তে আস্তে হয়েছে, আমরা যদি আমাদের এই গার্মেন্টস সেক্টরকে এখন থেকে ২০ বছর আগের সাথে তুলোনা করি তখন যে কেউ বলতে বাধ্য হবেন বাংলাদেশের গার্মেন্টস সেক্টরের কাজের পরিবেশ অনেক অনেক অনেক উন্নত্ হয়েছে।



বাংলাদেশে বিশ্বের নামিদামি ব্র্যান্ড গুলো কাজ করছে। নাইকি, এডিডাস, ওয়েলমার্ট, মার্কস্পেন্সার, প্রাইমার্ক, ফ্রুট অফ দা লুম, সিয়ার্স, কোলস সহ আরো অনেক অনেক অনেক বায়ার আছে যারা এখন বাংলাদেশে কাজ করছে।



বায়ার গুলো যখন বাংলাদেশে কাজ করে তখন তারা বাংলাদেশি ফ্যাক্টরি গুলোকে নিজেদের বলেই মনে করে। তাই সব ধরনের মনিটরিং ওদের থাকে, ফ্যাক্টরীর ভালো খারাপ সব কিছুর সাথে তারা জড়িত থাকে, এখন যদি বাংলাদেশের কোন ফ্যাক্টরিতে কোন প্রকার প্রব্লেম হয় তখন তা ক্ষতি করে সেই বায়ারের ইমেজে যারা বাংলাদেশের ফ্যাক্টরিতে কাজ করছিলো। আর প্রব্লেমের কারনের তাদের প্রচুর আর্থিক ক্ষতি হয়। বাংলাদেশে যেমন ব্যাবসায়ীদের মধ্যে কামড়া কামড়ি আছে ঠিক তেমন ওদের মাঝেও আছে! তাই এমন প্রব্লেম পেলে এক বায়ার অন্য বায়ারে ইমেজর ক্ষতি করার জন্য ভালোই চেষ্টা করে।



সো যখনই এমন সব প্রব্লেম হতে থাকবে আস্তে আস্তে বাংলাদেশ থেকে বায়ারদের ইন্টারেস্ট কমে যাবে, ওরা অবশ্যই চাইবে না ঝামেলা মাথাতে নিয়ে কাজ করতে। জাস্ট তারা মুভ করবে অন্যদেশে।



এটা অবশ্যই ঠিক বাংলাদেশে ওরা অনেক কম রেটে কাজ করে, সেই প্রোডাক্টের জন্য ওরা চীন, পাকিস্তান, ইন্ডিয়াতে ১০ ডলার করে দেয় তার জন্য বাংলাদেশে ওড়া ৫ ডলার দিচ্ছে! এটা খুবই অন্যায় কিন্তু এটার জন্য কিন্তু আমরা বাংলাদেশিরাই দায়ী! প্রতিযোগিতার কারনের বাংলাদেশি গার্মেন্টস ব্যাবসায়ীরা কম দামে কাজ নিচ্ছে আর করছে! কিন্তু তা কিন্তু আসতে আসতে উন্নতি হচ্ছে। বাংলাদেশে এখন অনেক অনেক ভালো বায়ার আসছে ভালো রেট নিয়ে প্রচুর অর্ডারের কাজ আছে।



কিন্তু আমাদের এই তাজরিন, রানা টাওয়ার আর ওয়ার্কার আনরেস্ট এই সবের কারনের কিন্তু বায়াররা আস্তে আস্তে আমাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, কি দরকার এত্তো ঝামেলার মাঝে কাজ করার? এমন ও শুনেছি Banglades কে ওরা এখন ডাকা শুরু করেছে “Blood Desh” এটা আমাদের জন্য মোটেই ভালো কোন সিম্পটম না। বায়ার যদি চলেই যায় হলে কিন্তু গার্মেন্টস গুলো অবস্থা দিনে দিনে আরো খারাপ হয়ে যাবে আর তা কিন্তু একটা সময় বন্ধ হয়ে যাবে আমাদের সোনালি আঁশ পাটের মত করে।



আমি এমন কোন ব্যাক্তি না যে আমি উপদেশ দেবো আমাদের কি করা উচিত না করা উচিত। জাস্ট এটাই বলব প্লিজ আমরা এমন কিছু না করি যার জন্য বাংলাদেশের ইমেজের ক্ষতি হয়, আমাদের গার্মেন্টের ক্ষতি হয়। আমি আমার কর্ম অভিজ্ঞতা শেয়ার করলাম। আমাদের বাংলাদেশের জন্য গার্মেন্টস সেক্টর খুবই ইম্পরটেন্ট! আমাদের অর্থনীতি খুবই ইফেক্টেড হবে যদি এই সেক্টরের কিছু হয়।



আশায় আছি বাংলাদেশের গার্মেন্টস সেক্টরের অবস্থান অবশ্যই আগের থেকে আরোবেশি শক্তিশালী হবে, শ্রমিকরা আরো বেশি মজুরী পাবে, গার্মেন্টের কাজের পরিবেশ আগের থেকে আরো অনেক বেশি উন্নত হবে।



আর! আর… আমাদের মাঝে শুদ্ধি আসবে।



মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:৪০

আরিফ আহমেদ বলেছেন: টক লট ব্যবসায়ীদের জন্য সাইট লট হাট ভিজিট করার আমন্ত্রন রইল

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.