নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাধারন জনগন কতৃক পেইড ব্লগার

নাম সিসিলিয়ান কিন্তু খাটি বাংলাদেশী।

সিসিলিয়ান

যে কথাগুলো খোলা মেলা বলতে পারি নাহ মনের সেই কথা গুলো বলার জন্য এসেছি এখানে। সমস্যা একটাই জানি কম বুঝি বেশি

সিসিলিয়ান › বিস্তারিত পোস্টঃ

সালতামামি ২০১২ < নাবিলের সাহস হয়েছে, আমার হয়নি>

০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:২৪

-কে? ইলিয়াস স্যার না? আপনি এখানে ঘাপটি মাইরা বইসা আছেন কেন?

-হ্যাঁ। কে আমিনুল নাকি?

-জি স্যার। চিনছেন তাইলে। আপনার মত নেতারা আমার মত সামান্য শ্রমিক নেতারে চিনবো, আল্লাহর কছম ভাবি নাই। তা স্যার, ওদিকে আপনারে আজও সবাই খুঁজতাসে আর আপনি এখানে!!



-চিনবো না কেন। রাজনীতির মানুষ। তাছাড়া I am a educated man। প্রতিদিন দুইটা ইংলিশ পেপার ও একটা বাংলা পেপার পড়ি। ইউরোপ-আমেরিকার পত্রিকায়ও তো তোমাকে নিত্য দেখি বলা যায়। যাহোক, পরকালে এসেও হাসি-তামাশা করবা না। আমাকে এখানে পাঠিয়ে হারিকেন জ্বালিয়ে খুঁজলে, কোন ‘হিন্দি চুলটা’ পাবে ওখানে!



-তা স্যার ঠিক বলেছেন। আর পেপার পত্রিকা!! হা হা। আমরা বেঁচে থাকতে কেউ আমাদের নিয়ে তেমন মাথা ঘামায় না। মরে গেলেই যা মানবতা দেখায়। আর এতে তাদের পৃষ্ঠাই খালি ভরে,



বেচা বিক্রিটাও কিছুটা ভাল হয়। সব ধান্দা আর কি।



-হু আর কথায় কথায় স্যার স্যার করো না। এখানে সবাই এক। For god sake ভাই বলে ডাকো।



-ঠিকাছে স্যার না না ভাই। আর আপনেও কথায় কথায় ইংরেজি কম বলেন। পৃথিবীতে ব্যক্তিত্ব প্রকাশে কথায় কথায় ফুটুর ফাটুর ইংরেজি বলতে হয়, এখানে নয়।



-পুরনো অভ্যাস তো। যাহোক মেনে নিলাম। ও তোমার প্রশ্নের উত্তরটাই তো দিলাম না। আসলে ছেলে মেয়েগুলোর কথা খুব মনে পড়েছিল তো তাই চুপ করে বসে ছিলাম।



-হ ভাই। আমারও মাইয়াডার কথা মনে পড়ে। আহা.....



-এই থামো। কে যায় দেখো তো, রুনি না?



-তাই তো লাগছে। কিন্তু মাটিতে খালি থু থু ফালাইতেসে কেন!! দাঁড়ান ডাইকা আনি।



-কি ব্যাপার রুনি, তুমি মাটিতে এমন থুতু ফেলছ কেন?



-ইলিয়াস ভাই। থু থু দেই আমার পেশাকে। আমি আর সাগর মরে যাবার পর আমার সহকর্মীরাই রটালো, আমরা নাকি পরকিয়ার বলি!!! ছিঃ ছিঃ



-Very sad. তো সাগর কই? ওকে যে দেখছি না।



-ইলিয়াস ভাই। যে দিন থেকে পেপারে ওই কথা ছড়ানো শুরু হয়েছে এবং আমাদের মৃত্যু রহস্য ৪৮ ঘণ্টার নাটকে আটকা পড়েছে, সে দিন থেকে সাগর আর কারো সাথে কথা বলে না। শুধু



মাঝে মাঝে বলে, “এ কোন দেশে ছিলাম আমরা!!”



তাদের কথা এখানেই শেষ । নিজেদের স্বজনের জন্য তাদের মন সব সময়েই কাঁদত। কিন্তু তারা এমন এক জায়গায় চলে গিয়েছে, যেখান থেকে হাজার চেষ্টা করলেও ফিরে আসা সম্ভব নয়।



তবে তারা বেশিদিন চুপ করে থাকতে পারে নি। হটাৎ আরও কিছু মানুষ তাদের সাথে যোগ হল। তারা নাকি খুব বিদঘুটে ভাবে মারা গিয়েছিল। কে মারা গিয়েছে আগুনে পুড়ে কয়লা হয়ে, আবার



কেউ ফ্লাইওভারের নিচে চাপা পড়ে ভর্তা হয়ে। তাই সেই সকল মানুষের সাথে কথা বলতে আবার ইলিয়াস,রুনি ও আমিনুল একত্র হল। কিন্তু কথা বলতে এগিয়ে গেল আমিনুলই।





-কিরে তোগো এই অবস্থা হইল কেমনে?



-আমিনুল ভাই। আপনি তো জানেন, আমাগো জানডার চেয়ে মালিকের মালের দাম বেশি। তাই আগুন লাগলেও চুরির ডরে তালা মাইরা রাখছিল। টিভিতে দেখছিলাম, বড়লুকরা শিককাবাব খায় রুটি দিয়া। জীবনে খাইয়া দেহি নাই তয় নিজেরাই শিককাবাব হই গেলাম। পরিবার লাশটাও চিনতে পারে নাই। বেওয়ারিশ হই গেলাম, এইডাই বড় দুঃখ।







তাদের কথা শোনার মাঝেই রুনির হটাৎ করে একটা বাচ্চা ছেলের দিকে নজর গেল। ছেলেটা দেখতে রুনির ছেলেটার মতই।



-বাবা তুমি এখানে এলে কি করে?



-আন্টি আমাদের বাসার সামনে না একটা বড় ব্রিজ হচ্ছিল। আমি রোজ ব্রিজটার কাছে গিয়ে দেখতাম, সবাই কিভাবে ব্রিজটা বানাচ্ছে। ওই দিন আমার আব্বু দুবাই থেকে দেশে ফিরেছিল। তাই আব্বুকে নিয়ে আমি বিকালে ঘুরতে বের হই। আব্বুকে আমি ব্রিজ দেখাতে নিয়ে যাই কারন আমি বড় হয়ে ইঞ্জেনিয়ার হব এবং এর চেয়েও বড় বড় ব্রিজ বানাবো। আব্বু শুনে খুব খুশি হয়। তখন আমি আব্বুকে বলি, একটা আইসক্রিম খাব। আব্বু আমাকে ওখানে দাঁড় করিয়ে একটা দোকানে যায় আইসক্রিম কিনতে কিন্তু তখই অনেক আওয়াজ করে ব্রিজটা আমার মাথার উপর পড়ে যায়।







বাচ্চাটার কথা গুলো শুনে রুনির প্রচণ্ড কান্না পেতে থাকে। তার নিজের বাচ্চা আজ মা-বাবার আদর থেকে বঞ্চিত, এই বাচ্চাটি যার এখন বিলেত ফেরত বাবার সাথে খেলার কথা, সে কিনা আজ অসময়ে এখানে !!!







এদিকে ইলিয়াস সাহেব পেপার হাতে রুনির দিকে এগিয়ে এসে, পেপারের কিছু ছবি দেখায়। ছবিতে আসলে বিশ্বজিৎ নামের এক ছেলেকে কিছু মানুষ(!) কোপাচ্ছে তার দৃশ্য। ছবি দেখা শেষ হতে না হতেই বিশ্বজিৎ তাদের মাঝে উপস্থিত হয়ে যায়। তাই ইলিয়াস সাহেব এগিয়ে যান ওকে পরকালে স্বাগতম জানাতে।







-আরে বিশ্বজিৎ যে তোমার ছবিই দেখছিলাম। তুমি তো হিট হয়ে গেলে। সামান্য দোকানি থেকে আজ তোমাকে সবাই চিনে।



-কদিন পর বোনটার বিয়ে ছিল। ইচ্ছে ছিল তার আগে বোনটাকে ভাল মন্দ কিছু খাওয়াবো,বাপের বাড়ি থাকা কালীন কিছু স্বাদ আহ্লাদ পূরণ করবো। কিন্তু কেন আমাকে মারা হল?? আমি তো কোন



রাজনীতি করতাম না, কোন দলের সাথে যুক্ত ছিলাম না। তবুও কেন কেন???????



বিশ্বজিতের প্রশ্ন শুনে ইলিয়াস সাহেব চুপ হয়ে গেলেন কারন বেঁচে থাকতে তিনিও একজন রাজনীতিবিদ ছিলেন।







আপাতত এখানেই শেষ। আসলে তারা সবাই অপমৃত্যুর স্বীকার। কেউই স্বাভাবিক নিয়মে পৃথিবীই ছেড়ে আসে নি। তাদের জোর করে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে পরকালে। তাই তারা আজ সেখানে একজোট হচ্ছে। প্রতিনিয়ত তাদের দল ভারি হচ্ছে। আর তারাও একত্রে সেখানে অপেক্ষা করছে। কারণ, যাদের জন্য অসময়ে আজ তারা পরকালে। তাদেরও এক সময় না একসময় পরকালে আসতে হবে। পৃথিবীতে না হয় কোন ভাবে পার পেয়ে যেতে পারবে কিন্তু সেখানে কি তারা ছাড়বে !!!!!!



চট্টগ্রামের প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির ১ম বর্ষের ছাত্র নাবিলের লিখা। তার সাহস হয়েছে সত্য কথাগুলো নিজ নাম দিয়ে প্রকাশ করার। আমাদের হয়নি। ভালবাসার গল্প পেজের নোট থেকে নেওয়া।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:০৯

আশিক মাসুম বলেছেন: সবাইর কি আর সাহস থাকে???

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.