নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভ্যাগাবন্ড

আবীর ফেরদৌস

আবীর ফেরদৌস › বিস্তারিত পোস্টঃ

হয়ত একটা কিংবদন্তী

২৬ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১:৩৬

সে অনেকদিন আগের কথা,কুমার নদের তখন ভরা যৌবন।জনশ্রুতি আছে দৈর্ঘ্যে আর প্রস্থে সে ছিল পদ্মার থেকেও দীর্ঘ।কুমার নদের বুকে তখন বিচরন করত বড় বড় মাছ,কুমির,ঘড়িয়াল,শুশুক এবং বড় বড় পালতোলা নৌকা।দিন যত যেতে থাকে ততই কুমার নদের অহংকার বৃদ্ধি পেতে থাকে,সে কাউকেই পরোয়া করত না,ইচ্ছে হলেই মানবকুলের সম্পদ গ্রাস করা ছিল তার জন্য অতি সাধারন ব্যাপার।পদ্মা নদীর অবস্থা তখন এখনকার চেয়েও রমরমা,দুরদুরান্ত থেকে শোনা যেতে ভরা যৌবনা পদ্মার হিংস্র গর্জন।গর্জনের মতই ছিল এই আজীবন রুপবতির চরিত্র।তার বুকে ভেসে বেরাত মাছধরা নৌকা,জাহাজ,পানশী আর ছিল ইলিশ মাছের ঝাক।একদম কুমার নদের মতই।সম্পদের দিক থেকে কুমারের থেকেও অধিক সম্পদশালী ছিল এই পদ্মা নদী।পুর্ন যৌবনা ছিল যে সে।দেবী দুর্গার থেকেও সে ছিল বেশী রুপবতি।ধীরে ধীরে পুর্নযৌবনা পদ্মার প্রেমে পরে যায় পরাক্রমশালী নদ কুমার নদ।একদিন কুমার নদ পদ্মার কাছে তার ভালবাসার কথা জানায়।ঠিক তখনই আমি রুপমকে বলে উঠলাম কি করে?হাতে আমার কুলফি মালাই,রুপম অবশ্য কিছুই খাচ্ছে না।আমি ও রুপম উভয়েই তখন পদ্মার মাঝে বসে আছি।রুপম বলল প্রত্যেক নদীরই একটা করে আলাদা সত্ত্বা থাকে,যে সেই নদ বা নদীকে রক্ষা করে থাকে,সে হয় মহাপরাক্রমশালী আর এই পরাক্রমশালীর নামেই নদীর নামকরন করা হয়ে থাকে।ও হ্যা বলতেই ভুলে গেছি রুপম হল একজন পেইন্টার,না সে ছবি আঁকে না,বিভিন্ন বাসে,দোকানে রঙ করা তার পেশা,আর তার বাড়ি কুমার নদের তীরে।যাত্রাপথেই ওর সাথে আমার পরিচয় ঘটে।
যাক গে সেসব কথা,আবারও ফিরে যাই রুপমের গল্পে।
কুমার নদ যখন পদ্মাকে তার মনের কথা প্রকাশ করে,তখন পদ্মা অট্বহাঁসিতে ফেটে পরে।অনেক কস্টে হাঁসি থামায় পদ্মা।অবশেষে বলে, কুমার!তুমি কি আমার একটা গর্জন সহ্য করার মতন ক্ষমতা রাখ?
উত্তরে বিদ্রপাদ্মক হাঁসিতে ভরে ওঠে কুমারের মুখ।অনেকটা তুচ্ছ তাচ্ছিল করেই সে বলে,শোন হে কন্যা! আমি কুমার নদ,আমার মত পরাক্রমশালী নদ আরেকটা তুমি খুজে পাবে না,যার ইচ্ছেমত চলে আশেপাশের মানুষের জীবন আর সেই কুমারকে তুমি কিনা বল তোমার গর্জন আমি সহ্য করতে পারব না?
পদ্মা হেঁসে বলে ওঠে,আচ্ছা তাহলে আমি এই প্রস্তাবে রাজী।তবে আমারও একটা শর্ত আছে।
কুমার প্রশ্ন করে কি সেই শর্ত হে পদ্মা?তোমার সকল শর্তই আমি মেনে নিতে পারব?
পদ্মা হেঁসে উত্তর দেয়, আজ রাতে তুমি বর সেজে আমার কাছে আসবে,আমি বউ সাঁজব।তুমি আসার পরে আমি আমার গর্জন তুলব আর সেই গর্জন যদি তুমি সহ্য করতে পার তাহলেই আমাকে তুমি গ্রহন করতে পারবে,নইলে পারবে না।
কুমার অট্বহাঁসিতে ফেটে পরল?এই কথা?তাহলে তাই হোক।
আমাদের ট্রলার তখন মাঝিকান্দি ঘাটে এসে পৌছাল,আমি তখন প্রচন্ড ক্ষুধার্থ,একটা ঝালমুড়ি নিলাম,রুপমকেও বললাম নিতে।কিন্তু রুপম ঝালমুরি না নিয়ে আমাকে সিগারেট খেতে আমন্ত্রন জানাল,কিন্তু আমি সিগারেট খাই না।
আবারও রুপমের গল্প শুরু হল।
কুমার সেই রাতে বর সেজে আসল,বর সাজার পরে তাকে দেখে মনে হল যেন কোন এক সম্রাট,চলছেন কোন এক দেশের রানীকে জয় করতে।
অবশেষে কুমার এসে পৌছাল পদ্মার কাছে,সেইদিন পদ্মাকেও দেখে মনে হচ্ছিল কোন এক রুপসী রানী, যে কিনা অপেক্ষা করছে মহাপরাক্রমশালী কোন এক রাজাকে বধ করবে বলে।
কুমার পদ্মার রুপে মোহিত হয়ে বলল,হে পদ্মা,তুমি তোমার শর্ত পালন কর,আমি প্রস্তুত আছি তোমার শর্ত পুরন করব বলে।
পদ্মা বলল বেশতো!তাই সই। এই বলে পদ্মা এত ভয়ানক গর্জন দিল যে গর্জনের ধাক্কায় আশেপাশে মহাপ্রলয় শুরু হল,ওদিকে কুমার ভীতসন্ত্রস্ত।
এক সময় কুমার সহ্য করতে না পেরে বলল " মা তুই থাম আমি বাড়ি যাই।"তবে তোর দাপটও কি বেশীদিন টিকবে?
এই বলে কুমার চলে গেল।
সেইথেকে কুমারের সম্রাজ্যের পতন শুরু হল,এখন তার বুকে নেই কোন পালতোলা নৌলা,নেই কোন কুমির,কচ্ছপ কিংবা ঘড়িয়াল,আছে শুধু মানুষের বসতি।রুপমদের বাড়িট্ব মুলত সেই কুমার নদের উপরে,তীরে নয়।নদীর উপরে ওরা ধান ফলায়।এদিকে পদ্মার অবস্থাও সেই আগেকার মত না থাকলেও আভিজাত্যটা ঠিকই আছে,তার বুকে ভেসে বেরায় প্রতিদিন হাজার হাজার লঞ্ছ,স্টিমার,কার্গো,নৌকা,ট্রলার কিংবা স্পিডবোট।দিন দিন পদ্মাও বৃদ্ধ হচ্ছে কুমারের ন্যায়।নদীর বুকে জেগে উঠেছে শত শত চর,সেখানে আবার গড়ে উঠেছে মানুষের ঘরবসতি।
পদ্মায় ভেসে থাকা অবস্থায় আমারও পদ্মার ঐতিহ্য ইলিশ খাওয়ার লোভ হল।রুপমের সাথে কথা বলতে বলতে আমাদের ট্রলার এসে পৌছাল কাওরাকান্দি,আমরা দুজনেই নেমে গেলাম।আমার উদ্ধেশ্য টুঙ্গিপারা হয়ে নাজিরপুর আর রুপমের উদ্দেশ্য মাদারীপুর।কথা বলতে বলতে রুপমকে হারিয়ে ফেললাম।তাকে আর খুজে পেলাম না।অতঃপর আমি আমার পথে রওনা হলাম আর হ্যা ইলিশ খেতে কিন্তু ভুলি নিই।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ২:০২

চাঁদগাজী বলেছেন:




রূপকথার মতো লাগাতে পড়লাম, না পড়লে সময়টুকু বেঁচে যেতো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.