![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
তারপর… হয়ত লাজুকময়একটা সন্ধ্যার আগমন ঘটবে! আলো-আঁধারের মায়ায় মিশে গিয়ে হাসিমুখে মেয়েটা আহ্বান জানাবে অথবা রাস্তার পাশের টং দোকানটা দেখিয়ে বলবে-“এসো আজ রাস্তার ধুলোয় মিশে থাকা সস্তা চায়ের কাপে স্বপ্ন উড়াই!” প্রতিউত্তরে হয়ত ছেলেটা এগিয়ে যাবে ঠিক কিন্তু তার মাঝের উদাসীনতায় চলে আসা অভিমানকে পাত্তা দিবে না মেয়েটা মোটেও বরং আকাশ দেখিয়ে বলবে-“উঁহু, যাচ্ছি না ওখানে… তারচেয়ে চলো আজ না হয় মেঘ দেখি… আচ্ছা শুনো তুমি মেঘের রূপ সম্পর্কে জানতো? পার্থক্য বোঝ তো দিন আর রাতের মেঘের? নীলচে কালো আর শুভ্রর!!”
“আহা! চুপটি হয়ে যাচ্ছ কেন! এই তুমি শুনই না, এত ভাবতে কে বলেছে তোমাকে? না বুঝলে নেই, না জানলে নাই। এটাও বাদ। আমরা আজ আর গবেষণা করব না মেঘ নিয়ে। তারচেয়ে বরং না হয় এসো আমরা দু’জনে মিলে আজ তারা গুণব। আচ্ছা, তারা নিয়ে ঐ ধাঁধাটা শুনেছিলে তো তুমি? কি বল, মনে করতে পারছ না! আহা! ঐ যে ঐ ধাঁধাটার কথা বলছি আমি। মনে পড়ল কি তোমার! হ্যাঁ গো হ্যাঁ, সেটার কথাই বলছি। ঐ যে কালো পাখি ডিম পাড়ে, কোন পাগলে গুণতে জানে! হিহিহি… দারুণ না বল তুমি? এই শুনো, আজ না হয় তুমি পাগল হয়ে যাও আর আমি তোমার পাগলী! কেমন মজা হবে বলতো? হুঁ, আজ আমরা তারাই গুণব।”
অথবা পরক্ষণেই বিজ্ঞের মত মাথা দুলিয়ে মেয়েটা পুনরায় বলবে-“উঁহু, হচ্ছে না। না, এটাও না। তারা গুণছি না আর। আজ বরং আমরা দিগন্তে মিশে যাব। হ্যাঁ চল, আজ আমরা দিগন্তেই মিশে যাব। আচ্ছা শুনো, তুমি কি কখনও গিয়েছিলে দিগন্তের শেষ প্রান্তে! কেমন ছিল সেটা? এটা কেমন হতে পারে, আজ না হয় আমরা সেটাই জানব।” বলেই মেয়েটা হয়ত মৃদু পায়ে দৌড়ে এগিয়ে যাবে সামনে, অথবা আঙুল উঁচিয়ে আকাশের শেষ দিকটা দেখিয়ে ছেলেটাকে বলে যাবে-“এই দেখ দেখ, এই তুমি দেখতে পাচ্ছ তো! ঐ যে আকাশের শেষ প্রান্তটা দেখা যাচ্ছে যেন আর একটু যেতে পারলেই ছুঁয়ে দেয়া যাবে ওকে।” বলতে গিয়েই কিছু চঞ্চলতাকে সাথী করে মেয়েটা ছুটে যাবে কিছু পথ কিন্তু পরক্ষণেই হয়ত চোখে-মুখে অবিশ্বাস ফুটিয়ে তুলে সুধাবে ছেলেটাকে-“আল্লাহ্! এই তুমি দেখ আকাশটা দূরে সরে যাচ্ছে ক্রমশ!” কিছুতেই হয়ত মেয়েটা মেনে নিতে পারবে না। বরং কিছু বিষন্নতার ভিড়ে আটকে গিয়ে হয়ত জিজ্ঞেস করে বসবে-“কেন হচ্ছে এমন? যতটা এগিয়ে যাচ্ছি আমি, যতটা কাছে যেতে চাইছি… আকাশটাকে দেখ, সরে সরে যাচ্ছে ঠিক ততটাই সমান দুরুত্ব বজায় রেখে!” একটা বিষণ্ণ চিরন্তন সত্যতায় বাঁধা সম্পর্ক সম্পৃক্ত রূপক প্রশ্নে জর্জরিত মেয়েটার মনটাকে কিছুটা ভালো লাগার আবেশে ভরিয়ে দিতেই হয়ত ছেলেটা এগিয়ে যাবে সামনে। মাথা নিচু করে রাখা মেয়েটার চিবুক উঁচিয়ে বলতে যাবে কিছু হয়ত অথবা কিছু আশ্বাসবাণী কিন্তু সেটাকে হাত দিয়েই উড়িয়ে দিবে মেয়েটা। কিংবা হতে পারে বরাবরের মত ছন্দ তুলে এগিয়ে যাবে আলতো পায়ে আর পরক্ষণেই সমস্ত ভুলে গিয়ে হাসতে হাসতেই বলবে-“উঁহু, মন খারাপের সাথে আড়ি, আজ আর যাচ্ছি না বিষণ্ণতার বাড়ি! হিহিহি… তারচেয়ে না হয় এসো, আজ আমরা একটা মজার খেলা খেলব। তুমি আমাকে শুনাবে তোমার পছন্দের কথা আর আমি আমার।তবে সত্যিটাই বলতে হবে কিন্তু নয়ত আমি আর কক্ষনও খেলব না তোমার সাথে এই বলে দিলাম। আর পছন্দ মিলে গেলে! দারুণ হবে তাই না বল? হ্যাঁ, আজ আমরা আমাদের ভালোলাগার কথাই বলব।” যেন সঠিক সিদ্ধান্তটা নিতে পেরেছে অবশেষে, এই ভঙ্গিতে মাথা দুলিয়ে হয়ত মেয়েটা বলে যাবে তার ভালো লাগার কথা-“আচ্ছা এসো তবে, তুমি বলবে-
ভালোবাস কি সবচেয়ে বেশি, মেঘ নাকি রোদ্দুর!
বল, কি টানে তোমাকে সবচেয়ে অধিক!
প্রকৃতির সৌন্দর্যের সমারোহে পরিবেষ্টিত সবুজ অরণ্য নাকি মরুভূমির শূন্যতা!
আমি তো হেঁটেছি, ভালোবেসেছিলাম কুয়াশায় ঘেরা শীতের সকাল,
তুমিও কি তাই? নাকি পছন্দ কর মন্ত্রমুগ্ধ জ্যোৎস্না স্নাত পূর্ণিমার চাঁদ!
কোলাহল কিন্তু কখনই পছন্দ করিনি আমি, বরং ভালোবেসেছিলাম
শেষ বিকেলের ম্লান হয়ে আসা মিষ্টি রোদের নির্জনতায় হেঁটে চলা!
শুনেছি, জীবন সংক্রান্ত জটিল বিষয়গুলো নিয়ে প্রায়ই চায়ের কাপে ঝড় তুলো?
নদীর বহমানতা নিয়ে কখনো কি প্রশ্ন তুলেছিলে তুমি!
বেঁচে থাকার রহস্য কিন্তু বরাবরই ভাবায় আমাকে।
আহা! বড্ড এলোপাথাড়ি জটিল চিন্তা-ভাবনা হয়ে যাচ্ছে কি!
তারচেয়ে বরং এসো আড্ডা জমাই প্রিয় রঙ, ফুল, পাখি অথবা জলছবিকে ঘিরে!
অথবা প্রিয় শিল্পী! গান শুনতে পছন্দ করো তো তুমি?
বরং হতে পারে কোন প্রিয় কবিতা, স্বপ্ন, কিংবা কল্পনা!
কোথায়! বলছ না’তো তুমি, ভালোবাস কি সবচেয়ে বেশি?
দেখতে মেঘলা আকাশ নাকি বৃষ্টি স্নাত পদ্ম পুকুর……!
তুমি কিন্তু বলছ না কিছুই। অমিল হয়ে যাওয়ার আশংকা করছ কি? বোকা ছেলেটা তুমি, কেন ভুলে যাও আমি কিন্তু অমিলের মাঝে মিল খুঁজে পেতে খুব পারদর্শী হয়ে উঠেছি আজকাল। তুমি বরং ঠিক ঠিক বলবে…” মেয়েটা হয়ত বলেই যেতে থাকবে তার মত করে। অথবা নিয়নের আলোয় ভেসে গিয়ে ছেলেটা পথ আগলে দাঁড়িয়ে বলেবে-“শিশশ… বড্ড বেশি বকো তুমি! চুপ করে দাঁড়াও এখানে। অনেক তো হলো হাঁটা, আজ বরং এসো আমরা স্বপ্ন সাজাই।” “হিহি…আমাকে কপি করা হচ্ছে, দি এক্সট্রিম কপিবাজ!” মেয়েটা ভেংচি কেটেই হয়ত উড়িয়েই দিতে চাইবে কিন্তু পারবে না খুব সহজেই। “উঁহু, খুব দুষ্টুমি হচ্ছে আজকাল। একেবারেই নয়। আমি কিন্তু অনেক সিরিয়াস। আজ আমরা স্বপ্নই সাজাব। এই নিয়নের আলোয় কিছু প্রতিজ্ঞায় উড়িয়ে দিব গোধুলী আবেশ!” মেয়েটাও হয়ত দুষ্টু হেসে ঠোঁটে আঙুল ঠেকিয়ে বলবে-“শিশশ… আর কোন বাজে বকা নয়। সিরিয়াসম্যান এখন খুব সিরিয়াস। সুতরাং আমিও খুব সিরিয়াস। আজ আমরা সপ্নই সাজাব। হিহি…!” কিন্তু ছেলেটা পাত্তা দিবে না সেটাকে মোটেও বরং বলবে-“তাহলে বল, ভালোবাসি তোমাকে অনেক…”
“তাহলে বল, ভালোবাসি তোমাকে অনেক। হিহি…”
“উফ! মেয়ে, তুমি… যাও যত পার কর দুষ্টুমি, আমি তোমাকে আর কিচ্ছুটি বলছিনে।” অভিমানে মুখ ফিরিয়ে নেয়া ছেলেটাকে রাগিয়ে দিতে পেরে খানিকটা পুলক অনুভব করার পরিবর্তে মেয়েটা হয়ত এবার একটু ঘাবড়েই যাবে। মায়া মায়া চোখে হয়ত কিম্ভূতকিমাকার হয়ে কান দু’টো ধরে বলবে-“সর্যি। বড্ড ভুল হয়ে গেছে, এবারকার মত না হয় মাফ করে দাও আমায়। আর কখনও করছি না এমন, সত্যি।” ছেলেটাও হয়ত আড়চোখে দেখে নিবে ঘাবড়ে যাওয়া মেয়েটাকে একবার, হতে পারে মিটিমিটি হেসেও নিবে একগাল কিন্তু প্রকাশ করবে না তার বিন্দুমাত্র! আর ক্ষমা? তা মেলে নাকি এত সহজেই!
“শুধু শুধু কেন চাইছ ক্ষমা? দুষ্টুমি করাটা তো তোমার বড্ড যায়! এবার কর না যত পার। আমার কথা শুনতে বয়েই বা গেছে কার!” এবার হয়ত ছেলেটার উগ্র কথায় দমকে আসা কান্নাটাকে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টায় ব্যার্থ হয়েই মেয়েটা ফুঁপিয়ে উঠে বলবে-“একটু না হয় বলেইছিলাম, তাই বলে এত রাগ? এত অভিমান? একটু কি বোঝ না তুমি আমাকে! আমি তো কেবল তোমাকেই শুনতে চাই, প্রতিনিয়ত। তোমার ভালো লাগার কথা, সপ্নের কথা জানার জন্যে কতটা উদগ্রীব হয়ে থাকি আমি, এর সবটাই কি তোমার কাছে অগোচরে রয়ে যায়! কেবল দুষ্টুমিটাই পাও বুঝি দেখতে!” অভিমানী কান্নাকুমারীর অভিযোগের প্রতিউত্তরে এবার ছেলেটা হয়ত তার একটা হাত মেয়েটার দিকে এগিয়ে দিয়েই বলবে-“পাই, সবটাই পাই দেখতে। তুমি কেবল কৃতিম অভিমান আর নিছক দুষ্টুমির মধ্যকার পার্থক্য ধরতে জানো না। নাই বা জানলে। তাতে কি? এখনকার জন্যে… রাতের অপেক্ষায় প্রায় নিভে আসা এই সন্ধ্যার শেষ প্রান্তে এসে বরং আমার হাতটাই ধর আর তাকাও না হয় আমার চোখের দিকে। এসো, আমি তোমাকে কিছু স্বপ্নের কথা বলি। চুপিচুপি… শোনাই কিছু প্রতিজ্ঞার কথা! লেট’স মেইক আও’য়ার ওউন ভাউ!” ছেলেটার আহ্বানে এবার মেয়েটাও হয়ত মন্ত্রমুগ্ধের মত এগিয়ে দিবে তার একটা হাত ছেলেটার হাতের উপরে আর মায়াভরা দৃষ্টি নিয়ে হয়ত নিজেকে ভাসিয়ে দিবে, ডুবে যেতে দিবে আরেক জোড়া সুগভীর দৃষ্টির অতলে…! “এই হাতের উষ্ণ ছোঁয়ায়, এই দৃষ্টির মায়ায় ডুবে গিয়ে বলছি, বলো, ভালোবাসি তোমাকে… এখন এবং চিরজীবনের জন্য। বলো কথা দিচ্ছ, কথা দিচ্ছি-পাশে রব তোমার দুঃখে-আনন্দে, অসুস্থতায়-সুস্থতায়, রোগে-শোকে, তোমার প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে। পাশে থাকব তখনও, তোমার রাগে-অভিমানে, ক্ষোভে, গ্রাহ্যে-অগ্রাহ্যে, উপেক্ষায়, প্রতীক্ষায়! তোমাকে ভালোবাসব, এখন, এইভাবে… এই সময়ে… প্রতিনিয়ত…! এবং একইরকমভাবে অনেক বছর পরেও। আমি তোমাকে অনুবাদ করব একইরকমভাবে, এখন যেমন করছি, ঠিক তার অনেক বছর পরেও… বলো, আমি বলছি…
আমি অনুবাদ করব, ভালোবাসব এখনকার তোমাকে এবং অনেক বছর পরের তোমাকে।
আমি একইরকমভাবে অনুবাদ করব তোমার ঐ বুড়িয়ে যাওয়া সৌন্দর্যকে।
আমি অনুবাদ করব তোমার পেকে যাওয়া চুল, সেগুলোকে।
আমি অনুবাদ করব তোমার কুঁচকে যাওয়া চামড়ার প্রতিটি ভাঁজ, তাকে।
আমি আমার দৃষ্টি স্থাপন করব গভীর ভালোবাসায় তোমার সেই ছানিপড়া চোখে, একইরকমভাবে,
যেমন আমি করি, করছি এখন এবং সবসময়।
তোমার উষ্ণতায় চাপা পড়া শীতল ছোঁয়া, তাকে,
আমি অনুবাদ করব-
অসংখ্য বলিরেখা, দুর্বলতা, বিবর্ণতা, তাকে।
আমি যেমন ভালোবাসি এখন, আমি ভালোবাসব এবং মুগ্ধ হব একইরকমভাবে,
নিজেকে আমি হারিয়ে ফেলব তোমার ফোকলা দাঁতের হাসিতে!
যেমনটা আমি হারিয়ে ফেলি আমাকে, প্রায়ই এবং মাঝে মাঝেই!
বলো তুমি, আমি বলছি, পাশে থাকব প্রতিটি পদক্ষেপে!
তীব্র কুয়াশায় ঘেরা প্রতিটি শীতের সকাল এবং জ্যোৎস্নার আলোয় আলোকিত প্রতিটি পূর্ণিমার রাতে!
আমি অনুবাদ করব তোমার পৃথক পৃথক সৌন্দর্য, ভিন্ন ভিন্ন আলোয়
এবং পরিস্থিতিতে যেমনটা আমি করতে পারি এখন এবং অনেক বছর পরেও।
আমি একইরকমভাবে বুঝে নিব, বুঝব… শ্রদ্ধায় ভালোবাসব…
আমি অনুবাদ করব, তোমার হৃদয়কে, তোমার অনুভূতিকে!
তোমার তোমাকে, আমার তোমাকে এবং তোমাকে…!
এবং বলো, তুমিও আমার পাশে রবে, যেমন আছ এখন ঠিক একইরকমভাবে। বহু বছর পরেও… বলো তুমি, আমাকে অনুবাদ করবে, গভীর ভালোবাসায়, বিশ্বাসে-অবিশ্বাসে, নির্ভরতায়, আমার যোগ্যতায়-অযোগ্যতায়, আমার বার্ধক্যতায়! বলো, পাশে থাকবে, যেমনভাবে তুমি ছিলে এবং আছ…” প্রতিউত্তরে হয়ত মেয়েটা কিছুই বলতে পারবে না অথবা চাইবে। বরং কিছু অকৃতিম অনুভূতিতে ডুবে গিয়ে, গলার কাছে এসে বাঁধাপ্রাপ্ত হয়ে আটকে যাওয়া কান্নাটাকে সেখান থেকেই ফিরিয়ে দিবে তবু সে কাঁদবে না, সামান্যও না। মেয়েটা হয়ত পূর্বেই জেনে গেছে, কিছু কিছু কান্না ভিতরে জমিয়ে রাখাই উত্তম, এটা অনুভূতির পাহাড়কে চিরতরে ডুবে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে। ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরি যে জলন্ত থেকে ভালতাইবা কে বলতে পারে! শত হলেও চিরতরে হারিয়ে যাওয়ার চাইতে ক্ষণে ক্ষণে নিজের অস্তিত্বটা জানান তো দিয়ে যেতে পারবে!
©somewhere in net ltd.