![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
-একটা গল্প লেখ।
-গল্প!
-হ্যাঁ, গল্প। একটা গল্প লেখ তুমি আমাকে নিয়ে, যে গল্পে থাকবে ফুল, পাতা, সবুজ অরণ্য আর মাথার উপরে থাকবে নীলের বিশালতা।
-মানুষ আবদার করে তাকে নিয়ে যেন কবিতা লেখা হয় আর তুমি কিনা বলছ গল্প?
-হ্যাঁ, গল্পই বটে! তাতে দোষের কি। কবিতার মহত্ব তো অনেক গভীর। আমি মূর্খ মানুষ কন্যা, অত ভাবার্থ বুঝি না। জীবন দেখে অভস্ত আমি। বাস্তবতা কুঁড়ে খায় আমায়। দিন আনি দিন খাই কিন্তু দেখ হা-হুতাশ করি না। কল্পনার চাঁদর গায়ে বাঁচতে চাই। জীবনটাই তো একটা গল্পের মত; গাঢ়, গভীর, অদ্ভুত আর মায়াবী। কবিতা তো রূপকের কারুকার্য আর গল্প হলো জীবন। একেকটা গল্প একেকরকম, ঠিক অনেক রঙের জীবনের ন্যায়। তুমি আমাকে নিয়ে গল্পই লেখ মেয়ে; জীবনের গল্প।
-তুমি যেমনটি চাও, ঠিক তেমনটিই যেন। সবকিছুকে ছাপিয়ে আমি তোমাকে প্রাধান্য দিয়েছি। তোমার বিশালতার মাঝে আমি ক্ষুদ্র, আমি নগন্ন তোমার মহত্বের কাছে। আমি তাই করি যা তুমি বলো, সেভাবেই চলি যেভাবে তুমি চালাও। তোমার তুমি আর আমার আমি তে আমি এখন আর পার্থক্য খুঁজি না, খুঁজে পাইনা কোন ভিন্নতা, যেন তুমি আমি মিলে এখন আমরা হয়ে গেছি। তাহলে বলো কেমন গল্প চাই তোমার?
-খুব স্বাভাবিক আর সাদামিটে। কোন কাব্যিকতা চাইনা আমি। শুধু চাই তুমি সেভাবেই লেখ যেভাবে তুমি ভাবতে ভালোবাসো। তুমি জানো আমাকে, তুমি বুঝতে পারো। ওরা বাজে বকে, ওরা মনে করে আমাকে-তোমাকে-আমাদেরকে বুঝে নিতে পেরেছে ওরা। অথচ পৃথিবীতে কেউ কাউকে বুঝতে পারেনি কখনো। ওরা বুঝতে পারেনি নিজেদেরকেও কিন্তু ভুলে ভেবে বসে- অন্য কাউকে বুঝে যাওয়া খুব সহজ। জটিল এ পৃথিবীর সব বুঝে যাওয়া খুব সহজ নয়। আমি চাই তুমি একটা সহজ গল্প লেখ, একটা সাবলীল গল্প; যে গল্পে থাকবে শুভ্র মেঘের পাহাড়, থাকবে পাখি, সূর্য আর রাতের নীলচে কালো আকাশ জুড়ে চলবে তারাদের মেলা। চাঁদ বিষণ্ণ ভাবাবেগ। ওঁ বড্ড একা, আমার কষ্ট হয় ওঁর জন্য। কিন্তু ওঁ জয়ী, অসংখ্য তারার মাঝে ওঁ একা চলে ভেবে মন খারাপ হয় আমার, কিন্তু ওঁ সাহসী, ওঁ জানে কিভাবে নিজেকে সামলে নিতে হয় অসংখ্য জোনাকি পোকার মাঝেও। কিন্তু আমি পারিনা। তাই আমি চাই তুমি ওঁর বিজয়ের গল্প লেখো। একা রাত্রি যাপনের একাকিত্বের বিষণ্ণতা নয় অথবা নয় নিদারুণ কষ্টে হৃদপিণ্ডের করুণ আর্তনাদের গল্প, আমি চাই তুমি ওঁর সাহসিকতার গল্প লেখো। ওঁর সৌন্দর্য নয়, আমি চাই তুমি ওঁর মধ্যকার আগ্নিকান্ডের বিস্ফোরণের চিত্র আঁক।
-তুমি বড্ড অদ্ভুত। তোমাকে নিয়ে তাই বুঝি আমি ভাবি অত? তোমাকে কিছুতেই বুঝে উঠতে পারিনা। আমি বুঝতে পারিনা তোমার চাল-চলন, তোমার মধ্যকার চিন্তার সুতোর কিছুটাও ধরতে জানিনা। অথচ কি সহসাই তুমি ভেবে নিলে তোমাকে খুব বুঝে নিব আমি। তোমাকে বুঝতে পারাটা যে খুব কষ্টসাধ্য, তাই জন্যেই কি এত টান আমার? নাহ! তোমার জন্য গল্প নয়, কবিতাই লেখা চলে। কবিতার কাব্যিকতায় ছাপা পড়ে যাবে তোমার যত অজানা ঘনত্ব; যেভাবে তুমি লুকাও নিজেকে শামুকের ন্যায় নিজেস্ব খোলসের মাঝে।
-আফসোসের সুর ঝেড়ে ফেল মেয়ে। আমি আর তুমি কি ভিন্নতা এতে? কিবা এসে যায় তাতে? আমরা তো একই, যেন অভিন্ন দুটি সত্ত্বা। তবে কবিতা কেন, গল্পই না হয় লেখ।
-যদি এমনটাই সহজ হত সবকিছু যেভাবে তুমি বলছ!
-কেন নয়? কোনো ব্যাপার সহজ কি কঠিন তা কি আমাদের উপরই নির্ভর করেনা?
-নীতি বাক্য বুঝি না এত। তোমাকে ভুল বুঝে ফেলার ভয় হয় বড্ড। কেউই বুঝতে পারেনি তোমাকে অথচ ভুল বুঝে গেছে খুব সহসাই। এমন কি হতে পারে যে আমিও তাদেরই কেউ একজন হয়ে যেতে পারি? মানুষ একটা বাজে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় নিজেকে হারিয়ে ফেলতে পারে যখন দ্বিধা তাকে গ্রাস করে নেয় পুরোপুরি এবং সে চিনে জানতে পারেনা আর নিজেকে। তাই কখনো কখনো নিজেকে বুঝতে পারাটাও খুব প্রয়োজন। তবে না বুঝতে পারাটা অন্য ব্যাপার কিন্তু বুঝতে গিয়ে ভুল বুঝে ফেলাটা অপরাধের মতো মনে হবে আমার।
-পরিণতি নিয়ে তুমি বড্ড বেশি ভাবো। স্বাভাবিক হও মেয়ে আর একটা স্বাভাবিক গল্পই না হয় লেখ। তোমার গল্প, আমার গল্প, আমাদের গল্প- ঠিক তোমার মত করে। কি হবে এত ভেবে? লোকে বলে, জন্ম যেমন এক তেমনি মৃত্যুও এক। অথচ দেখ, এই “এক” এর কুয়াশাময় মরীচিকার ফাঁদে পথভ্রষ্ট হয়ে প্রতিনিয়ত হাজারবার মরে যাচ্ছি আমরা। লোক দেখানো সামাজিকতায় মুখে হাসি ফুটিয়ে তোলার একাধিক মুখোশের আড়ালে আপন স্বত্বাটাকেই হারিয়ে ফেলছি দিন কে দিন। ভালো আছি বলাটা খুব সহজ তবে ভালো নেই বলাটা কেন নয়? এ সকল প্রশ্নকেই না হয় ছাপিয়ে যাও তুমি। কবিতার কারুকার্য নয়, গল্পের সরলতাই না হয় আঁকড়ে ধরি এবার। রঙ ছাপানো মুখোশ নয়, তুমি না হয় এবার সত্যের গল্পই লেখ। হৃদপিণ্ড আর পাকস্থলীর বিশ্বাসঘাতকতার সাক্ষী সে সব দুঃস্বপ্নময় আর নির্ঘুম রাতগুলোকে ধূসর করে দাও। মুক্তির পথ বিচ্ছিন্ন, এটা খুবই গভীর। অত গভীরতা তুমি বোঝো না, জানোও না। জন্ম-মৃত্যুর এই ‘এক’ এর মধ্যকার সময়ে সহস্রবার মরে যাওয়ার গল্প নয়, তাই এবার না হয় তুমি বেঁচে থাকার চিত্রই আঁকো। অবিচল শ্বাসক্রিয়া পরিচালনের নিয়মমাফিক চিরায়ত প্রথা নয়, তুমি না হয় এবার একটা স্বাভাবিক জীবনের সরলতার গল্পই লেখ।
-তুমি যেভাবে বল সেভাবেই যেন হয় সবকিছু, যেমনটি আমি আগেও বলে এসেছি। শুধু একটাই আফসোস, তোমাকে কখনই বোঝা হয়ে উঠবে না আমার।
-বড্ড বেশি আফসোস করো তুমি। আফসোসের সুর ঝেড়ে ফেলে এসো এবার উৎসবে বাঁচি। বুঝতে পারো তুমি আমাকে, নিজেকে অথবা পারো না, কিবা যায় আসে তাতে? তুমি আর আমি মিলে তো আমরাই হয়ে যাই পরিশেষেঃ যেন দু’টি অভিন্ন স্বত্বা।
২৯ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১০:০৫
এ.টি. নূর শেখ লিটা বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ এত সুন্দর মন্তব্যের জন্য। আপনার জন্যেও অনেক শুভকামনা রইল।
©somewhere in net ltd.
১|
২৯ শে অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৩:৩৬
আশরাফুল এষ বলেছেন: ভালো লাগলো .।অনেক অনেক শুভকামনা।