নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মিথ্যার অন্বেষণে

অকৃতজ্ঞের চেয়ে অধম

এস কে এস আলী

আশায় আশায় বুক বেঁধে রই

এস কে এস আলী › বিস্তারিত পোস্টঃ

সভ্যতার পরিক্রমায় আমরা কোথায়...!

০৫ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১:২৪

 ভূমিকা :

ভারতের জনক পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু রাজনৈতিক কারণে যদিও পরিচিত তবুও তিনি জ্ঞান বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অসাধারন ভুমিকা পালন করেছেন। তার বিশ্ব ইতিহাস প্রসঙ্গ নামক গ্রন্থটি যদিও ইতিহাসের কোন মেীলিক বই নয় তবুও সমগ্র বিশ্বের সংক্ষিপ্ত জ্ঞান এই গ্রন্থে বিদ্যমান রয়েছে। বিশেষ করে আধুনিক সভ্যতার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অনেক গরুত্বপুর্ন আলোচনা করেছেন। তার আলোচনায় নতুন বিশ্লেষণের ছাপ খুজে পাওয়া যায়। তার এই গ্রন্থটিকে ইতিহাসের সংক্ষিপ্ত জ্ঞানকোষ বলা যায়।

 বিশ্ব ইতিহাস প্রসঙ্গ গ্রন্থের পরিচিতি:

পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু বৃটিশশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করার জন্য ১৯৩০-১৯৩৩ পর্যন্ত কারাগারে বন্ধি ছিলেন। এই সময়ে তার কন্যাকে শিক্ষা দেওয়ার ব্যাবস্থা না থাকায় তিনি নিয়মিত পত্রাকারে মেয়েকে বিদ্বান করে তোলার ব্যাবস্থা করেন। ১৯৩৪ সালে মুক্তি পেলে এই পত্র গুলো তিনি একত্র করেন। সেই বসরে তার ভগ্নী মাননীয়া শ্রীমতী বিজয়লক্ষী পন্ডিত এই একত্রিত পত্রগুলি কে বিশ্ব ইতিহাস প্রসঙ্গ নামে পুস্তক আকারে বের করার ব্যাবস্থা করেন।এই গ্রন্থের বিষয়বস্তুর আলোচনা কোথাও অগভীর নয়।

 পাঠ্যসূচীর মধ্য থেকে যেসকল বিষয় উক্ত গ্রন্থে আলোচনা করা হয়েছে:

প্রচীন কাল থেকে শুরু করে আধুনিককাল পর্যন্ত সংঘঠিত উল্লেখযোগ্য অধিকাংশ ঘটনায় তার উক্ত গ্রন্থে স্থান পেয়েছে। তবে আমাদের সিলেবাসের যে সকল বিষয় এই গ্রন্থে আলোচিত হয়েছে তা নি¤েœ উল্লেখ করা হলো।

এক.রেনেসাঁস বা নবজাগরণ।

দুই.শিল্পবিপ্লব।

তিন. ভেীগোলিক আস্কিার।

চার.ধর্মসংস্কার আন্দোলন।

পাঁচ.ফরাসি বিপ্লব।

ছয়.কালমার্কসের সমাজতন্ত্র।

সাত. ইতালির ফ্যাসিজম।

আট.জার্মানির নাৎসীবাদ।

নয়.বিজ্ঞানের অগ্রগতি।

নি¤েœ প্রতিটি বিষয় সম্পর্কে তাঁর মতামত পর্যালোচনা করা হল :

 রেনেসাঁস:

রেনেসাঁস অর্থ নবজাগরণ এটি একটি ফরাসি শব্দ । নেহেরুর মতে রেনেসাঁ শুরু হয়েছিল ইতালিতে। এই রেনেসাঁর পিছনে যে সকল ব্যাক্তি বিশেষ অবদান রাখেন তাদের মধ্যে দান্তে,পেট্রাক,লিওনার্দো দা ভিঞ্চি,মাইকেল এঞ্জেলা ও রাফাএল হচ্ছে প্রধান। ইতালী থেকে ধীরে ধীরে পৃথিবীর নানা স্থানে এর বিস্তার ঘটে। তেরোদশ শতকে শুরু হয়ে পঞ্চদশ শতকের মধ্যে বিজ্ঞান অনেক উন্নত হয়। তাঁর মতে বিভিন্ন দেশেবিভিন্ন সময়ে রেনেসাঁ হয়েছে এবং এর পিছনে নিশ্চয় কিছু না কিছু ব্যক্তির ভুমিকা থাকে বলে ও মন্তব্য করেন। যেমন ইংল্যান্ডে শেক্্রপিয়ার ফ্রান্সে দেকার্তে প্রভৃতি। রেনেসাসঁ বলতে তিনি মুলত তৎকালীন ইউরোপের বিজ্ঞান ও সাহিত্যের অসাধারণ উন্নতিকে বুঝাইয়াছেন।

 ফরাসি বিপ্লব:

১০ ই অক্টোবর ১৯৩২ সালে নেহেরু তার মেয়ের নিকট ফরাসি বিপ্লব সম্পর্কে একটি চিঠি লেখেন তিনি বলেন “বিপ্লবের উৎপত্তি মাঠে- ঘাটে,হাটে-বাজারেএবং তার কার্যপ্রণালী অমার্জিত”। তাঁর মতে বিদ্রোহ যারা করে তারা রাজা কিংবা অভিজাতদের মত সুযোগ সুবিধা পায় না। আর ফরাসি বিপ্লবের পিছনে ক্ষুধার্ত জনগনের ভুমিকা ছিল অনেকবেশি। রাজা ও তার অনুবতী দল ষড়যন্ত্র করে নিজেদের সর্বনাশই ডেকে এনেছিল। প্রাথমিক পর্যায়ে সৈরাচারি রাজাদের কে ক্ষমতা থেকে হটানো হলে মিরাবো প্রায় দু বছর শাসন করেন। অভিজাত শ্রেণীদের প্রভাবে জনগন ঐক্যবদ্ধ হয় এবং ক্ষমতা তাদের হাতে এনে দেন। একপর্যায়ে বুর্জোয়া শ্রেণীর নেতৃতে ১৭৮৯ সালে ফ্রান্সে একটি বিপ্লব হয় যা ফরাসি বিপ্লব নামে পরিচিত। নেহেরুর মতে এর ফলে শ্রমিকেরা তাদের অধিকার ফিরে পায় এবং সাম্যের সমাজ গড়ে ওঠে। তিনি বলেন“ এই বিপ্লবে পর শাসন ব্যাবস্থায় নানা রকম পরিবর্তন ঘটে তবে এর পাশাপাশি শত্রু দেশের ও পরিমান বাড়তে থাকে।

 কাল মার্কসের সমাজতন্ত্র :

জওহর লালনেহেরু বলেন“ কাল মার্কস ছিলেন একজন জার্মাান ইহুদি ,তিনি ১৮১৮ জন্ম গ্রহন করেন । তিনি আইন,ইতিহাস ও দর্শন নিয়ে লেখাপড়া করেন পাশাপাশি সংবাদপত্র বের করতেন। কোন একটি কারণে প্যারিসে চলে যান সেখানে তিনি সমাজতন্ত্র নিয়ে গভীর অধ্যায়ন শুরু করেন”। যদিও অনেক পুর্ব থেকেই পৃথিবীতে সমাজতন্ত্রের ধারনা ছিল কিনÍু কালমার্কস তার তত্তে¦ যে বিষয় গুলো যোগ করেছেন তা অত্যান্ত যুক্তি যুক্ত ছিল। ফলে সমগ্র বিশ্বে আজ তাকে সমাজতন্ত্রের জনক হিসেবে চেনে। কালমার্কস মুলত তার ডাচ ক্যাপিটাল নামক গ্রন্থের মাধ্যমে তার এই মতবাদ প্রচার করেছেন। তার মতবাদের মুল কথা হল -” অর্থনৈতিক সময় গুলো সম্পুর্ন রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রনে থাকবে ,জনগণ ইহাতে সামর্থ অনুযায়ী শ্রম দিবে ফলে রাষ্ট্র তাদের মেীলিক চাহিদা পুরন করবে এখানে ব্যাক্তি মালিকানা বলতে কিছু থাকবেনা”। তার এই মতবাদের ফলেই ফরাসি বিপ্লব হয়েছিল। কালমার্কস ১৮৮৩ সালে মারা যান কিন্তু তার মতবাদ আজ পর্যনÍ বিদ্যমান রয়েছে।

 বিজ্ঞানের অগ্রগতি:

তের শতক থেকে আঠার দশক এর মধ্যে জ্ঞান বিজ্ঞানের অনেক পরিবর্তন আসে। নেহেরুর মতে “বিজ্ঞান হচ্ছে অতি সমান্য বিষয় গুলোকে যতœসহকারে পর্যবেক্ষণ করে আর তা থেকেই বের হয়ে আসে মুল্যবান তথ্য”। বিজ্ঞানের উন্নতির মধ্যে তিনি ডারউইনের বিবর্তনবাদ কে অন্যতম মনে করেন। এছাড়া শিল্পকারখানার যন্ত্রপাতি আবিস্কার ,সাহিত্য , ভেীগোলিক আবিস্কার ,বিভিন্ন তথ্যের সৃষ্টি এবং দৈনন্দিন জীবনের নিত্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির আবিস্কার গুলোকে বিজ্ঞানের অগ্রগতি বুঝিয়েছেন। তিনি বিজ্ঞানকে একটি পর্যায়ে পৌছার নির্ভুল পন্থা বলে মনে করেন তবে তিনি একথাও স্বীকার করেছেন যে বিজ্ঞান ও ভুল করতে পারে।



 ভোগলিক আবিষ্কার ঃ

১৯৩২ সালের ৩রা জুলাই জওহরলাল নেহেরু তার মেয়ে ইন্দ্রারা গান্ধী কে যে চিঠি দিয়েছিলেন সেটা তার বইতে ”সমুদ্রপথের আবিষ্কার” নামে পরিচিত।

তিনি তার গ্রন্থে সমুদ্রপথের আবিষ্কারের কারন তুলে ধরেছেন। নাবিকরা কিভাবে সমুদ্রপথে অভিযান করে,কেন সমুদ্রপথ আবিষ্কারের প্রয়োজন ছিল সে ব্যাপারে তিনি বলেন- রেনেসার প্রভাব, মার্কাপোলের ভ্রমনবৃত্তান্ত, অন্যান্য পর্যটকদের ভারত সম্পর্কে বর্ননা এবং প্রাচ্যের ধনভান্ডার ও মসলা ইউরোপবাসীকে সমুদ্র অভিযানে পাড়ি জমাতে বাধ্য করেছিল। অন্যদিকে ভূ-মধ্যসাগর তুরস্কের অধীনে থাকায় তাদের উল্টোপথে অভিযান করতে হয়েছে। তাছাড়া তারা ভেবেছেন পৃথিবী গোলাকার তাই আমরা ভারত উপমহাসাগর পৌছতে পারব। তাদের সেই আগ্রহের ফলে পরবর্তীতে কলম্বাস আমেরিকা আবিষ্কার করে। এছাড়া ওয়েস্টইন্ডিজসহ নানা দ্বীপের আবিষ্কার করে। এই সময় নাবিকদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন, ভাস্কো দা-গামা-(১৪৯৮), নাবিক হেনরী, কলম্বাস-(১৪৯২-৯৩),বালবোয়-(১৫১৩), ম্যাগেলান-(১৫১৯-১৫২২), আমেরিগো ভেসপাক্চি, কার্টিয়ার, কর্টেজ,জন ক্যাবট ,সেবাস্টিয়ান ক্যাবট, বার্থলুমোদিয়াজ।

 ইংল্যান্ডের শিল্পবিপ্লব ঃ

১৯৩২ সালের ২৭শে সেপ্টেম্বর জওহরলাল নেহেরু তার মেয়ে ইন্দ্রারা গান্ধীকে যে চিঠি দিয়েছিলেন সেটা তার বইতে ”ইংল্যান্ডের শিল্পবিপ্লবের আরম্ভ” নামে পরিচিত। তিনি তার বইতে শিল্পবিপ্লবের প্রেক্ষাপট,শিল্পবিপ্লব ইংল্যান্ডে সংগঠিত হওয়ার কারন উল্লেখ করেছেন। এছাড়া যেসব যন্ত্র উদ্ভাবনের ফলে শিল্পবিপ্লব হয়েছিল এবং কারা এই যন্ত্র গুলো আবিষ্কার করেছিল সে সম্পর্কে বর্ননা দেন। ১৭৩৮ সালে কে নামক একজন বিঞ্জানী তাত বোনার ফ্রাইং শাটল অথবা মাকু আবিষ্কারের মাধ্যমে বস্ত্রশিল্পের অগ্রগতি শুরুহয়। এছাড়া ১৭৬৪ সালে হারগিভ্সের স্পিনিং জেনি, ১৭৬৫ সালে জেমসওয়াটের বাস্পচালিত ইঞ্জিন,স্টিফেনস্ এর রেলওয়ে ইঞ্জিন, নিকোলাস অটোর পেট্রোল ইঞ্জিন,রুডলফ ডিজেলের ডিজেল ইঞ্জিন আবিষ্কার হয়। এসব আবিষ্করের প্রথম প্রয়োগ হল কার্পাস শিল্পে। ফলে কারখানা অথবা কাপড়ের কল গড়ে ওঠে।

পরবতীতে ইংল্যান্ডে তিনটি বৃহৎ শিল্প গড়ে ওঠে-বয়ন শিল্প, লৌহশিল্প ও কয়লাশিল্প। এছাড়া কয়লা-খনি এলাকায় এবং অন্যান্য উপযোগী জায়গায় নতুন নতুন কারখানা গড়ে উঠতে থাকে। আস্তে আস্তে ইংল্যান্ডের চেহেরা বদলে যেতে থাকে। যদিও কলকারখানা ও মেশিন আবিষ্কার ফলে বেকারত্ব বেড়ে যায়। এসব শিল্পের পিছনে অর্থে যোগান আসত উপনিবেশগুলো থেকে। ফলে ইংল্যান্ডের শিল্পব দ্রুত বিস্তার লাভ করেছিল।

 কার্ল মার্কসের মার্কসবাদ ঃ

১৯৩৩ সালের ১৬ই ফেব্রুয়ারী সেপ্টেম্বর জওহরলাল নেহেরু তার মেয়ে ইন্দ্রারা গান্ধীকে যে চিঠি দিয়েছিলেন সেটা তার গ্রন্থে “মার্কসবাদ” নামে পরিচিত। কার্ল মার্কস (১৮১৮-১৮৮৩),বৈঞ্জানিক সমাজতন্ত্র, দ্বান্দিক ও ঐতিহাসিক বস্তুবাদ এবং বিঞ্জানবিত্তিক রাজনৈতিক অর্থনীতির প্রবর্তক ও বিশ্ব সর্বহারার নেতা। তিনি ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে ইউরোপের শ্রমিক আন্দোলন এবং সমাজতন্ত্রবাদের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্তের সুচনা করেন।

তিনি ১৮১৮ সালে জম্মগ্রহন করে। তিনি একজন জার্মান ইহুদি। তিনি আইন, ইতিহাস এবং দর্শন নিয়ে পড়াশুনা করেন। ১৮৪২ সালে পি.এইচ. ডি ডিগ্রি লাভের পর তিনি ‘রাইনীস জেয়তুঙ’ পত্রিকায় যোগদেন এবং অচিরেই এর প্রধান সমাপাদক নিযুক্ত হন।

ছাত্র জীবনেই তিনি হেগেলীয়দের সঙ্গে যোগদেন এবং এদের মধ্যে উগ্র-বামপন্থি অংশের সঙ্গেই একাত্ম হন। ১৮৪৪ সালের সাইলেশিয়ার বিদ্রোহ তাকে গভীর ভাবে প্রভাবিত করে। ফলে ঐ বছর তিনি সর্বহারা শ্রেনীর ঐতিহাসিক ভুমিকা এবং সমাজবিপ্লবের অবশ্যম্ভাবিতা প্রমান করে প্রবনাধ লেখেন। এ সময় তিনি এঙ্গেলসের সংর্স্পশে আসেন এবং শুরু হয় দর্শনের ক্ষেত্রে অংশীদারিত্বের অভিনব অধ্যায়। এরই ফলশ্রুতিতে ১৮৪৫ সালে ‘হোলি ফ্যামিলি’ এবং ১৮৪৫-৪৬ সালে ‘জার্মান আইডিওলজি’ রচিত হয়। ১৮৪৫ সালে ‘ফয়েরবাখের ওপর থিসিস’ এবং ১৮৪৭ সালে ‘দর্শনের দারিদ্র’ রচিত হয়। ১৮৪৭ সালে তিনি ব্রাসেলসে এসে ‘কমিউনিস্ট লীগ’- এর সাথে জড়িয়ে পড়েন।

কার্ল মার্কস যে মতবাদ প্রচার করেন তা হচ্ছে মার্কসবাদ। মার্কসবাদের মূল উৎস তিনটি। যথা ঃ

 জার্মান দর্শন (বিশেষত হেগেলের),

 ব্রিটিশ অর্থনীতি (বিশেত রিকার্ডোর),

 ফরাসি সমাজতান্ত্রিক চিন্তাধারা।

১৮৪৮ সালে কার্ল মার্কস ও এঙ্গেলস দু‘জনে একটি ইস্তেহার বের করেছিলেন। এই ইস্তেহারের নাম দেন “কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো”। ফরসি বিপ্লব এবং ১৮৩০ ও ১৮৪৮ সালের বিদ্রোহগুলোর পিছনে কি উদ্দেশ্য ছিল, এই ইস্তেহারে তার বর্ননা ও বিশ্লেষন করেন। তিনি ইস্তেহার শেষ করেন কয়েকটি শ্লোগান দিয়ে—জগতের সমস্ত শ্রমিক এক হও তোমাদের হারাবার কিছুই নেই, শুধু শিকল ছাড়া জয় করে নেওয়ার আছে সমস্ত জগত। নেহেরু বলেন, আজকাল মার্কসবাদকেই সমস্ত সমাজতন্ত্রীবাদীদের সাধারন ধর্ম বলে মনে করা যেতে পারে। কিন্তু মার্কসবাদের মধ্যে দু‘টি ধারা লক্ষ্য করা যায়। একদিকে রাশিয়ার কমিউনিস্টরা অন্যদিকে জার্মানী বা অস্টিয়ার কমিউনিস্টরা। একটি প্রশ্ন মনের মধ্যে থেকে যায় যে, মার্কসবাদ কি? এর জবাবে নেহেরু বলেন- মার্কসবাদ হচ্ছে ইতিহাস, রাজনীতি, অর্থনীতি, মানুষের জীবনযাত্রা, মানুষের কামনা-বাসনা ব্যাখ্যা করার একটি ধারা। এটা একই সঙ্গে একটি তত্ত্বদর্শন ও কর্মসূচি। যার মাধ্যমে কার্ল মার্কস সমস্ত মানুষকে একত্রিত করতে সক্ষম হন।



 ফ্যাসিবাদ ঃ

১৯৩৩ সালের ২১ শে জুন জওহরলাল নেহেরু তার মেয়ে ইন্দ্রারা গান্ধীকে যে চিঠি দিয়েছিলেন সেটা তার “বিশ্ব ইতিহাস প্রসঙ্গ”বইতে “ইতালি; মুসোলিনিও ফ্যাসিজ্ম্্ি” শিরোনামে আলোচনা করা হয়েছে।

১৯২২ সালে বেনিটো মুসোলিনি ইতালিতে ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্টিত করেন। বস্তুত ফ্যাসিবাদ পুজিবাদেরই সন্তান। পুজিবাদীরা ফ্যাসিবাদের আশ্রয় নেয় দুটি সময়ে,এক-তার বিকাশের সময়ে । দুই –তার ধ্বংসের সময়ে। পুজিবাদ-সা¤্রাবাদের পতনের যুগে বিশ্বের অনুন্নত দেশ সমূহে ক্ল্যাসিকাল ধারায় পুজির বিকাশ আর সম্ভবপর হয়নি। তাই সা¤্রাজ্যবাদী স্বার্থ এবং সংশ্লিষ্ট দেশের আধকাচড়া ও কমবেশি মুৎসুদ্দি চরিত্র সম্পন্ন পুজির স্বার্থকে রক্ষা করার উর্দ্দেশ্যে এবং শোষিত শ্রেনীর আন্দোলন ও ক্ষমতাদখলকে ঠেকানোর উদ্দেশ্যে অনুন্নত দেশসমুহের প্রতিক্রিয়াশীল শাসকগোষ্ঠীও ক্ষেত্রবিশেষে ফ্যাসিবাদের আশ্রয় নেয়। এ কাজে তারা হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে রাষ্ট্রযন্ত্রকে,বিশেষত সামরিক বাহিনীরেক।

জওহরলাল নেহেরু তার গ্রন্থে ফ্যাসিজমের উদ্ভব ও উদ্দেশ সম্পর্কে আলোচনা করেন। বিশেষ করে তুরস্কের সাথে যুদ্ধ হলে তারাই জয়ী হয়। কিন্তু এটা তাদের অভ্যন্তরীন অবস্থার জন্য ভালো ছিলনা। অন্যদিকে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ব্যাপক সমস্যায় পড়ে। ফলে তারা সা¤্রাজ্যবাদী চিন্তায় নিমজ্জিত হল। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ভেঙে পড়ায় লোকেরা সমাজতন্ত্রে দিকে ঝুকে পড়েছিল। শ্রমিক আন্দোলন এবং সমাজতন্ত্রী দলকে ভেঙে দেওয়ার জন্য কতকগুলো সেচ্ছাসেবক বাহিনীকে ১৯১৯ সালে ধর্মচ্যুত সৈনিকদের সহ বেনিটো মুসোলিনি একটি বাহিনী গড়ে তুলেছিলেন। বাহিনীর নাম ছিল-“ফ্যাসি ডি কমব্যাটমেন্টি”। তাদের কাজ ছিল সুযোগ পেলেই সমাজতন্ত্রীদের উপর আক্রমন করা। ফ্যাসিবাদীরা আঘাত হানে প্রধানত প্রগতিশীল শক্তি ও শ্রমিকশ্রেনীে উপর।এরাই সংক্ষেপে ফ্যাস্টিবাদী নামে পরিচিত।



 নাৎসীবাদ ঃ

১৯৩৩ সালের ৩১শে জুলাই জওহরলাল নেহেরু তার মেয়ে ইন্দ্রারা গান্ধীকে যে চিঠি দিয়েছিলেন সেটা তার “বিশ্ব ইতিহাস প্রসঙ্গ”বইতে “জার্মানীতে নাৎসীবাদের জয়লাভ” শিরোনামে পরিচিত।

জওহরলাল নেহেরু তার “বিশ্ব ইতিহাস প্রসঙ্গ”গ্রন্থে নাৎসীবাদের ্্্্্্্্্উৎপত্তি ও বিকাশ সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। নেহেরু বলেন-নাজিবাদ বা (ঘধুরংস) বা জাতীয় সমাজতন্ত্র(ঘধঃরড়হধষ ঝড়পরধষরংস) । এই মতবাদের প্রবক্তা ছিলেন জার্মানির চ্যাঞ্চেলর ও ফ্যুয়েরার এডলাফ হিটলার। তার রচিত গবরহ কধসঢ় ই হল এই মতবাদের অন্যতম তাত্ত্বিক ভিত্তি। নাৎসিবাদ অনুযায়ী জার্মানীরাই প্রকৃত ও নিখুত ‘আর্য’ এবং সৃস্টির শ্রেষ্ট জাতি। এই শ্রেষ্টত্বের জন্য জার্মানিরাই বিশ্বের অন্যান্য সকল জাতির ওপর প্রভুত্ব করবে, এটাই দৈব-র্নিারিত। নাৎসিবাদীরাই মনে করে যে, তাদের এই মতবাদ কায়েমের প্রধান অন্তরায় ইহুদী সম্প্রদায়, সুতারং ইহুদিদের নিমূল করা এক অত্যাবশ্যকীয় কর্তব্য। ১৯৩৩ সালে হিটলার জার্মানির রাষ্ট্র ক্ষতায় অধিষ্টিত হয়ে এই উগ্র ও জঙ্গি জাতীয়তাবাদ মতবাদ কায়েমে ব্রতী হন এবং বিশ্বজয়ের জন্য জার্মান জাতিকে উদ্বুদ্ধ করার প্রয়াস পান। ১৯৪৫ সালে চক্রীপক্ষ (অীরং চধৎঃু)পরাজয় বরন করলে এবং হিটলারের জীবনাসন হলে, এই মতবাদের কার্যত অবসান ঘটে। আর্যদের প্রতীক স্বস্তিকা নাৎসিদেরও প্রতীক ছিল। সম্প্রতি জার্মানি ও ইতালিতে নব্য নাৎসি (ঘবড়-ঘধুরং)-দের উদ্ভব ঘটেছে।



 মূল্যায়ন ঃ

জওহরলাল নেহেরু লিখিত “বিশ্ব ইতিহাস প্রসঙ্গ”বইটি ঘটনার বিবরনী মাত্র নহে।বিবরনের দিক হতে উহা যেমন মূল্যবান,তেমনি লখকের ব্যক্তিত্বেও ছাপওউহাতে বিদ্যামান। তার অসাধারন মণীষাও অনুভ’তিপ্রবন মন এই ইতিহাস গ্রন্থকে অন্যান্য সাধারন করে তুলেছে। এর আবেদন সরল কিন্তু বিষয়বস্তু আলোচনা কোথাও অগভীর নয়। ঘটনার বিবৃত্তি বা তাৎপর্য বিশ্লেষন কোথাও সরলীকৃত হয়নি।

 উপসংহার ঃ

ভারত তথা সমগ্র পৃথিবীতে বহু ঐতিহাসিক পরিবর্তন সংগঠিত হয়েছে। এই সকল পরিবর্তনের অর্থ এবং আঘাত যেমন ব্যাপক তেমনি বৈপ্লবিক। যারা ইতিহাস হতে প্রেরনা ও পথের সংকেত পেতে চান,যারা ইতিহাসের সতর্কবানী ও চেতনার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। তাদের এই গ্রন্থ অর্থ ও ইঙ্গিতে সমৃদ্ধ ও তাৎপর্যপূর্ন হয়ে উঠেছে।জওহরলাল নেহেরু নিভ’ল এবং দুঃসাহসিক অন্তদৃষ্টি দিয়ে আমাদের জন্য ঘটনা প্রবাহের তাৎপর্যালোচনা করেছেন। উপরন্তু এই ঘটনাবলী গ্রন্থকারকে একজন শ্রেষ্ট ইতিহাসকার রুপে অভিব্যক্ত করেছে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.