নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নতুনভাবে নিজের চিন্তার শক্তি আর ভাবনার বিশ্লেষণ করার সামর্থ অর্জনের জায়গা হল ব্লগ। বিচিত্র ভাবনারাশির আলোয় নিজেকে আলোড়িত আর আলোকিত করার উদ্দেশেই আমরা ব্লগে আসি। অবসর সময়টাকে ভালোভাবে কাটানোর জন্য এর চেয়ে মোক্ষম উপায় আর নেই। তদুপরি বিনোদন এখানে উপরি পাওনা

এস এম ইসমাঈল

মুক্তমনা, সকল রকমের সংস্কার মুক্ত, আমি ধর্মভীরু হলেও ধর্মান্ধতা আমাকে কখনো গ্রাস করে নিতে পারেনি।আমি সুস্থ্য চিন্তা আর মানবিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী। আমার শক্তি আমার আবেগ আবার সে আবেগ-ই আমার বিশেষ দুর্বলতা। নেহায়েত সখের বশে এক আধটু কাব্য চর্চা করি, এই আর কি। প্রিয় বিষয় সাহিত্য, ইতিহাস, ধর্ম, সংগীত, দর্শন, দেশ ভ্রমন আর গোয়েন্দা সিরিজের বই পড়া।ভীষণ ভোজন রসিক আমি। জন্ম যদিও চট্টগ্রামে কিন্তু ঢাকা শহরেই লেখা পড়া আর বেড়ে উঠা। আমার জীবনের গল্প তাই আর দশ জনের মতো খুবই সাদামাটা।

এস এম ইসমাঈল › বিস্তারিত পোস্টঃ

মিরাজ

৩১ শে মে, ২০১০ দুপুর ১:৪৫



প্রত্যেক আম্বিয়া আলাইহিস সালামকে মহান আল্লাহ্ রাব্বুল ইজ্জত বিশেষ বিশেষ মুজিজা দান করেছেন।যেমন- হযরত মুসা আলাইহিস সালাম’র লাঠি মাটিতে ফেলা মাত্রই জীবন্ত সাপে পরিণত হত, তাঁর লাঠির আঘাতে মাটি হতে সুপেয় পানির প্রস্রবন প্রবাহিত হয়েছিল এবং তিনি মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের সাথে সরাসরি কথোপকথন করার মত মহাসম্মানিত মযাদার আসনে অভিসিক্ত ছিলেন।হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম’র হাত থেকে আলো বের হত। তাঁর পবিত্র হাত মুবারাকের ছোঁয়ায় কুষ্ঠ রোগী সুস্থ্য হয়ে উঠত। বাতাস ও জ্বীন জাতি হযরত সুলায়মান আলাইহিস সালাম’র কথা মেনে চলত।হযরত দাউদ আলাইহিস সালাম’র পবিত্র হাত মুবারাকের ছোঁয়ায় শক্ত লোহা পযন্ত মোমের মত গলে যেত, ইত্যাদি, ইত্যাদি।ঠিক তেমনি ‘পবিত্র মিরাজ শরীফ’ও রাসুলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অসংখ্য মুজিজা সমুহের মধ্যে অন্যতম বিশিষ্ট মুজিজা।তাঁর নবুয়ত লাভের ১১ বছর ৫ মাস ১৫ দিনের মাথায় ‘মিরাজ শরীফ’ সংঘটিত হয়।



মিরাজের পুরো ঘটনাক্রমকে তিনভাগে বিভক্ত করা হয়েছে-

১। মক্কা শরীফ থেকে বায়তুল মুকাদ্দাস পযন্ত অংশকে বলে ইসরা।

২। বায়তুল মুকাদ্দাস থেকে সিদরাতুল মুনতাহা পযন্ত অংশকে বলে মি’রাজ।

৩। সিদরাতুল মুনতাহা থেকে লা-মকান পযন্ত অংশকে বলে ই’রাজ।

আর সাধারণভাবে পূণ ভ্রমন কাহিনীকে বলা হয় মি’রাজুন্নবী বা মি’রাজ।



নবুয়তের একাদশ বছরের রজব মাসের ২৭ তারিখ রাতের এক বিশেষ সময়ে পবিত্র নগরী মক্কাস্থ ‘মসজিদুল হারাম’ এর ‘হাতীমে কাবা’ থেকে যাত্রা শুরু করে মুহুতের মধ্যেই তিনি নবীদের শহর ‘বায়তুল মুকাদ্দাস’ এ সংক্ষিপ্ত যাত্রা বিরতি সহকারে সপ্ত আকাশ পাড়ি দেন।অতপরঃ সিদরাতুল মুনতাহা, বেহেশত-দোজখ, আরশ-কুরসী ভ্রমন শেষে ‘লা-মকানে’ মহাপবিত্র আল্লাহ্ রাব্বুল ইজ্জতের নুরানী ‘দিদার’ লাভে ধন্য হন। মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের সাথে নব্বুই হাযার বাক্যালাপ শেষে পুণরায় মক্কার হাতীমে কাবায় ফিরে এসে দেখলেন, ‘তাঁর বিছানা মুবারাক তখনও গরম রয়েছে, ঘরের দরজার শিকল নড়ছে, তাঁর অযু করার পাত্রের পানি তখনও কাঁপছে’।এরপর দিন সকালে তিনি যখন তাঁর এ মুবারাক, পরম বিস্ময়কর, নৈশকালীন সংক্ষিপ্ত মহাকাশ সফরের কথা জনসমক্ষে প্রকাশ করলেন, তখন একমাত্র অবিশ্বাসী কাফিররা বরাবরের মত এ ঘটনাকে রীতিমত অস্বীকার করে বসলো।শুধু তাই নয়, তারা এটা নিয়ে নানারকম ঠাট্টা-বিদ্রুপ ও তামাশা করতে লাগল।পক্ষান্তরে, মুশরিকদের সরদার আবু জেহেলের কাছ থেকে পবিত্র মিরাজের ঘটনা সম্পকে অবহিত হয়ে হযরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু সবার প্রথমে ‘পবিত্র মিরাজুন্নবী’ এর ঘটনাবলীর সত্যতায় অবিচল আস্থা ও সুদৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করে ‘সিদ্দিকে আকবর’ উপাধিতে বিভূষিত হলেন।



মিরাজের আশ্চয্যজনক ঘটনার বণনা পবিত্র কুরআনের সুরা বনী ইসরাঈলের শুরুতেই এসেছে।মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন বলেন,‘‘পবিত্রতা তাঁরই জন্য, যিনি আপন(মাহবুব)বান্দাকে রাতারাতি নিয়ে গেছেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পযন্ত, যার আশেপাশে আমি বরকত রেখেছি, যাতে আমি তাঁকে আপন মহান কুদরতময় নিদশনসমুহ দেখাই, নিশ্চয় তিনি শুনেন, দেখেন।’’



মিরাজের ঘটনা বণনায়, পবিত্র কুরআনের বাকরীতি এখানে বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়। অতি অল্প সময়ে মক্কা নগরীর পবিত্র মসজিদুল হারাম থেকে সুদুর জেরুজালেম শহরে অবস্থিত বায়তুল মুকাদ্দাস এবং সেখান থেকে সপ্ত আসমান ও সিদরাতুল মুনতাহা পেরিয়ে লা-মকানে মহান প্রভূর সাথে দেখা ও বাক্যালাপ শেষে পূণরায় যথাস্থানে ফিরে আসাটা সত্যিই এক বিরাট বিস্ময়কর ব্যপার। আর মহাবিজ্ঞ আল্লাহ্ তায়ালার অপার কুদরত ও নুর নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অসাধারণ মুজিজা তথা অলৌ্কিক ক্ষমতার সামনে এটা খুবই নগন্য একটা বিষয়। সাধারণ লোকজনের কাছে এটাকে আশ্চয্যজনক ঘটনা বলে মনে করাই স্বাভাবিক।এ বিষয়ের দিকে লক্ষ্য রেখেই কিন্তু মহাজ্ঞনী আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কালামে হাকীমে ‘সুবহানা’ শব্দযোগে পবিত্র মিরাজ রজনীর ঘটনাবলী বণনা করা শুরু করেছেন। যাতে সাধারণ মানুষজন এ ঘটনার অলৌ্কিকতার বিষয়টা খুব সহজভাবে বুঝে উঠতে পারে।আর ঈমানদার ব্যক্তি মাত্রই মিরাজের ঘটনাবলীকে বিনাবাক্যব্যয়ে সহজেই মেনে নেয়। আর তারা এটাও দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে, মিরাজের এ নৈশ ভ্রমন আমাদের নুর নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্বশরীরেই ঘটেছিল।



অথচ এখানেই অনেকের মনে সন্দেহের দোলাচাল, বুদ্ধির বিভ্রম ও যুক্তিনিষ্ঠার চেতনা এসে ঘুরপাক খায়। এটা ভেবে ভেবে যে, মিরাজের এ সফর কি নুর নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্বশরীরে ঘটেছিল, নাকি স্বপ্নযোগে হয়েছিল? মহা গ্রন্থ আল-কুরআনের বাণী আর নুর নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র মুখ নিসৃ্ত হাদীসের বণনা সমুহের মুল সুরটাই এরকম যে, পবিত্র মিরাজের নৈশ ভ্রমন তাঁর স্বশরীরেই ঘটেছিল এবং এটা মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের অসীম কুদরত ও নুর নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অসংখ্য মুজিজা’রই একটা অংশ। সবোপরি, আমাদের ঈমান কিন্তু প্রতিটা মুসলমান নর-নারীর নিকট পবিত্র মিরাজ রজনীতে সংঘটিত অলৌ্কিক ঘটনাবলীর প্রতি নিরঙ্কুশ বিশ্বাস স্থাপনের দাবীই করছে।



এ বিষয়ে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত’র আকীদা, বিশ্বাস ও ফতওয়া হল, ‘‘পবিত্র মিরাজের নৈশ ভ্রমন, আমাদের নুর নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কতৃক স্বশরীরেই ঘটেছিল’’। কেবল স্বপ্নের মাধ্যমে তা ঘটলে এখানে আশ্চযের কোন ব্যাপারই থাকত না। আর কাফির ও মুশরিকরা এর কোন্ রকম বিরোধিতাও করত না।কারণ স্বপ্নের মাধ্যমে সাধারণতঃ অনেক কিছুই দেখা যায়।তদুপরি স্বপ্নের মাধ্যমে মিরাজের ঘটনাবলী ঘটলে, তাতে আশ্চযের কিছুই থাকত না এবং এ ভ্রমনের দ্বারা আমাদের নুর নবীয়ে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিশেষ মুজিজাও প্রকাশ পেত না।বরং রাসুলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মিরাজকে স্বশরীরে ঘটেছিল বলে মেনে নিলেই কিন্তু এ অলৌ্কিক ঘটনার যথাযথ মযাদা দেয়া হয় এবং মিরাজ শরীফও মুজিজা হিসেবে আপনা আপনিই স্বীকৃ্তি পেয়ে যায়।তদুপরি এতে স্বশরীরে মিরাজের স্বীকৃ্তিদানকারী ব্যক্তির ঈমানের পূণতাও প্রকাশ পায়। ।



হযরত নক্কাশ (রহঃ), হযরত ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ)এর উক্তি উল্লেখ করে বলেন, ‘‘নবীয়ে কারীম সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের প্রভূকে দেখেছেন, অবশ্যই দেখেছেন।এভাবে তিনি এ কথাটি বার বার বলতে থাকেন, যে শেষ পযন্ত তাঁর নিঃশ্বাস বন্ধ হবার উপক্রম হয়েছিল।’’



আল্লামা কাজী আয়াজ (রহঃ)‘কিতাবুশ শিফা’য় লিখেছেন, ‘‘হযরত আবদূর রাজ্জাক (রহঃ) এরশাদ করেন, ‘হযরত ইমাম হাসান বসরী(রহঃ) আল্লাহর শপথ করে বলেছিলেন, ‘নবীয়ে কারীম সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের রবকে দেখেছেন’।এই পাথিব জগতে মহানবী সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কতৃক স্বচক্ষে নিজের রবকে দেখা এটা তাঁর বিশেষত্ব। কেননা এই পাথিব জগতে আল্লাহর প্রিয় মাহবুব ছাড়া, অন্য কারো পক্ষে আল্লাহকে স্বচক্ষে দেখা অসম্ভব।অবশ্য স্বপ্নে বা অন্তরের চোখে যে কোন নবী ও অলী আল্লাহর পক্ষে মহান আল্লাহর মজি মুতাবিক আল্লাহকে দেখা সম্ভব’। যেমন ইমাম আযম হযরত আবু হানিফা(রহঃ)এবং হযরত ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) সহ আরো অনেকে আল্লাহকে স্বপ্নযোগে দেখেছেন।



শায়খই মুহাক্কিক হযরত আবদুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (রহঃ) স্বীয় জগত বিখ্যাত 'আশিয়াতুল লুমাআ’ত’ কিতাবের ৪র্থ খন্ডের ৫২৭ নং পৃষ্ঠায় লিখেছেন, ‘‘মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পযন্ত ইসরা এবং মসজিদে আকসা হতে আসমান পযন্ত মিরাজ।পবিত্র কুরআনের দলিল দ্বারা প্রমানিত ইসরা কেউ অস্বীকার করলে কাফির হয়ে যাবে আর হাদীসে মশহুর দ্বারা প্রমানিত মিরাজ কেউ অস্বীকার করলে গুমরাহ হয়ে যাবে’’।





সুবিখ্যাত আকাঈদের কিতাব ‘শরহে আকাঈদ উন নাসাফীর’ ১০০ পৃষ্ঠায় রয়েছে, ‘‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মিরাজ স্বশরীরে জাগ্রত অবস্থায় আসমানে পরিভ্রমন অতঃপর সেখান থেকে মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের ইচ্ছায় উধলো্কে গমন ও পরিভ্রমন করা মাশহুর হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। সুতরাং এটার অস্বীকারকারী বিদ’আতী হিসেবে গণ্য হবে’’।



শায়্খ মোল্লা আহমদ জীবন(রহঃ)‘তাফসীরাতে আহমদীয়া’র’ ৩২৮ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, “মসজিদে আকসা পযন্ত মিরাজ ‘পবিত্র কিতাবুল্লাহ’ দ্বারা প্রমাণিত, আসমান পয্ন্ত ভ্রমন হাদীসে মশহুর দ্বারা প্রমাণিত আর তারও উপরে পরিভ্রমন খবরে আহাদ দ্বারা প্রমাণিত।সুতরাং প্রথমটাকে অস্বীকারকারী নিঃসন্দেহে কাফির, দ্বিতীয়টির অস্বীকারকারী বিদ’আতী এবং তৃ্তীয়টির অস্বীকারকারী ফাসিক’’। তিনি উক্ত কিতাবের ৩৩০ পৃষ্ঠায় আরো লিখেছেন যে, ‘‘বিশু্দধ মত হল, মিরাজ রুহ বিশিষ্ট শরীর সহকারে সম্পন্ন হয়েছিল এবং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত’র আকীদা এটাই। যারা মিরাজকে কেবল রুহানী আত্মিক কিংবা স্বপ্নিল বলে আকীদা বা বিশ্বাস পোষণ করে তারা বিদ’আতী, পথভ্রষ্ট এবং ফাসিক।”

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.