নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নতুনভাবে নিজের চিন্তার শক্তি আর ভাবনার বিশ্লেষণ করার সামর্থ অর্জনের জায়গা হল ব্লগ। বিচিত্র ভাবনারাশির আলোয় নিজেকে আলোড়িত আর আলোকিত করার উদ্দেশেই আমরা ব্লগে আসি। অবসর সময়টাকে ভালোভাবে কাটানোর জন্য এর চেয়ে মোক্ষম উপায় আর নেই। তদুপরি বিনোদন এখানে উপরি পাওনা

এস এম ইসমাঈল

মুক্তমনা, সকল রকমের সংস্কার মুক্ত, আমি ধর্মভীরু হলেও ধর্মান্ধতা আমাকে কখনো গ্রাস করে নিতে পারেনি।আমি সুস্থ্য চিন্তা আর মানবিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী। আমার শক্তি আমার আবেগ আবার সে আবেগ-ই আমার বিশেষ দুর্বলতা। নেহায়েত সখের বশে এক আধটু কাব্য চর্চা করি, এই আর কি। প্রিয় বিষয় সাহিত্য, ইতিহাস, ধর্ম, সংগীত, দর্শন, দেশ ভ্রমন আর গোয়েন্দা সিরিজের বই পড়া।ভীষণ ভোজন রসিক আমি। জন্ম যদিও চট্টগ্রামে কিন্তু ঢাকা শহরেই লেখা পড়া আর বেড়ে উঠা। আমার জীবনের গল্প তাই আর দশ জনের মতো খুবই সাদামাটা।

এস এম ইসমাঈল › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঢাকায় শাহানশাহে সিরিকোট রাহমাতুল্লাহি আলাইহি

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:১০



হাজারো অলি আউলিয়ার পদধূলি সিক্ত বাংলার জমিনে সুন্নী জনতার দ্বীন-ঈমান সংরক্ষণের অগ্রপথিক, মাসলাকে আলা হযরতের মশালধারী, ‘সীমান্ত পীর’ ‘পেশোয়ারী সাহেব’ ‘শাহানশাহে সিরিকোট’ প্রভৃতি অভিধায় বিভূষিত এক মহান ব্যক্তিত্ব হচ্ছেন হযরত সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ সিরিকোটি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি। এ বিশাল কর্মবীর মহাপুরুষের বর্ণাঢ্য জীবনের মাত্র খণ্ডাংশ ব্যয়িত হয়েছে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী রাজধানী শহর ঢাকায়। প্রবীণ পীর ভাইদের শ্রুতি-স্মৃতি ও লেখা থেকে সংকলন করে তা সুপ্রিয় পাঠক/পাঠিকাদের খেদমতে পেশ করছি ঃ

সময় পেশা কর্মস্থল

আনুমানিক ১৮৫৭ খৃঃ জন্ম

আনুমানিক ১৮৫৭ খৃঃ থেকে ১৮৭১ খৃঃ , বাল্যকাল, কুরাআন হিফজ।

আনুমানিক ১৮৭২ খৃঃ - ১৮৮৬ খৃঃ ভারতে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ।

আনুমানিক ১৮৮৭ খৃঃ থেকে ১৯১২ খৃঃ ব্যবসা/ধর্ম প্রচারক দক্ক্ষন আফরিকা ।

১৯১২ খৃঃ থেকে ১৯২০ খৃঃ সংসার জীবন/পীরের খেদমত হরিপুর/সিরিকোট, পাকিস্তান।

১৯২০ খৃঃ থেকে ১৯৩৯ খৃঃ ধর্ম প্রচারক/কাদেরিয়া তরীকার পীর, রেঙ্গুন, বার্মা (মায়ানমার)।

১৯৩৯ খৃঃ থেকে ১৯৪৪ খৃঃ সংসার জীবন হরিপুর/সিরিকোট, পাকিস্তান।

১৯৪৪ খৃঃ থেকে ১৯৫৮ খৃঃ ধর্ম প্রচারক/কাদেরিয়া তরীকার পীর চট্টগ্রাম/ঢাকা, বাংলাদেশ।

এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে যে, বাংলার জমিনে তাঁর মূল কার্যকাল ছিল - ১৯৪৪ খৃঃ থেকে ১৯৫৮ খৃঃ = ১৪ বছর।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর বাংলায় তাঁর আগমন ছিল শুধুই বার্মার প্রবাস জীবনের সঙ্গী, চট্টলার বিশিষ্ট ও প্রিয় মুরিদানদের অনুরোধ রক্ষার্থে। এ সময়ে চট্টগ্রামে তাঁর মুরীদান এর সংখ্যা ছিল প্রায় শতাধিক। ১৯৫৪ সালে তা বেড়ে গিয়ে ১ হাযারের কাছাকাছি গিয়ে দাঁড়ায়। তিনি লাহোর থেকে বিমানযোগে ঢাকা আসতেন। চট্টগ্রামের মুরীদানগণ তাঁর জন্য প্লেনের রিটার্ন টিকেট কেটে পাঠিয়ে দিতেন। কখনো তিনি একাই আসতেন। আবার কখনো কখনো চট্টগ্রাম থেকে কেউ গিয়ে তাঁকে আগ বাড়িয়ে নিয়ে আসতেন। তাঁর এদেশে আসার খবর পত্রিকায় ফলাও করে প্রকাশ করা হত।

১৯৫১ সালের ১২ই অক্টোবর ‘’সাপ্তাহিক কোহিনুর’’ ১ম বর্ষ ৩৭-৩৮ সংখ্যক সংখ্যায় দাদা হুজুর কেবলার এদেশে শুভগমনের সংবাদ পরিবেশিত হতে দেখা যায়। যেমন -

“হযরত মৌলানা ছাহেবের অসংখ্য মুরিদানের অবগতির জন্য জানাইতেছি যে তিনি তাঁহার মুরিদানের অনুরোধ উপরোধ এড়াইতে না পারিয়া অবশেষে আমাদিগকে দর্শন দিবেন বলিয়া আশ্বাস দিয়াছেন। তিনি অতি বৃদ্ধাবস্থায় অতি কষ্টে সুদূর উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ হইতে চট্টগ্রামে আগমন করিতেছেন। আগামী ৩রা নভেম্বর তারিখে হাওয়াই জাহাজে লাহোর হইতে ঢাকার টিকেট খরিদ করিয়া তাঁহার নিকট পাঠাইয়া দেওয়া হইয়াছে। আশা করা যাইতেছে যে তিনি আগামী ৩রা নভেম্বর তারিখে হাওয়াই জাহাজে ঢাকায় অবতরণ করিবেন। হয়তঃ তাঁহার ঢাকার মুরিদানের অনুরোধে তথায় ২/৩ দিন অবস্থান করিতে পারেন। তিনি আগামী ৬/৭ তারিখের মধ্যে চট্টগ্রাম পৌঁছিবেন বলিয়া আশা করা যায় এবং চট্টগ্রাম “কোহিনূর মঞ্জিলে” কোহিনূর ইলেকট্রিক প্রেসের উপর তলায় অবস্থান করিতে পারেন। ইহা কেবল তাঁহার মুরিদানের জ্ঞাতকরণে দেয়া গেল।”

এ সংবাদের ফিডব্যাক একই পত্রিকার ৩৯-৪০ সংখ্যক সংখ্যায় প্রকাশিত হতে দেখা যায়।

সংবাদটা ছিল এরকম, “জনাব হযরত আলহাজ্ব মৌলানা ছৈয়দ আহমদ সাহেবের শুভাগমন । তিনি আগামী ৬ই নভেম্বর রোজ মঙ্গলবার চট্টগামে শুভ পদার্পণ করিবেন। তিনি আন্দরকিল্লাস্থ কোহিনূর মঞ্জিলে (কোহিনূর ইলেকট্রিক প্রেসের উপর তলায়) অবস্থান করিবেন। জনাব হুজুরের অনেক মুরিদান আমাকে তাঁহার আগমন সংবাদ জ্ঞাপন করিবার জন্য অনুরোধ জানাইয়াছেন। তাই এই পত্রিকার মারফত তাহার মুরিদানদের জন্য এই খবর জ্ঞাপন করিলাম। খাদেম এম আবদুল খালেক ইঞ্জিনিয়ার।’’

আনন্দের আতিশয্যে চট্টগ্রাম থেকে ২০-৩০ জনেবর কাফেলা নিয়ে ইমুরিদানরা রাত সাড়ে ১০ টার ঢাকা মেইল ট্রেনে করে ঢাকা রওয়ানা দিয়ে পরদিন ভোরে ফুলবাড়িয়া ষ্টেশনে নামতেন। আসলে ঢাকা ছিল তাঁর সাময়িক বিরতি ও বিশ্রামের স্থান।

তখন ঢাকা বিমান বন্দর ছিল তেজাগাঁও এ। ওটাই ছিল তখনকার দিনে দেশের একমাত্র আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। এখনকার মত উন্নত যাতায়াত ব্যবস্থা ও যানজট তখন ছিল না। ঢাকার জন সংখ্যা ছিল কয়েক লাখ। পায়ে হেঁটে দল বেঁধে সবাই মিলে বিমান বন্দর থেকে হুজুরকে অভ্যর্থনা জানিয়ে কায়েৎটুলি খানকায় নিয়ে আসতেন। যাবার পথ ছিল ফুলবাড়িয়া-নিমতলি থেকে কার্জন হলের পাশের রাস্তা দিয়ে বর্তমান তিন নেতার মাযার হয়ে বাংলা একাডেমী পেরিয়ে সোজা এগিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগার। সেখান থেকে আর্ট কলেজ পেরিয়ে শাহবাগ। শাহবাগ থেকে একটা রাস্তা তখন ময়মনসিংহ রোড নামে তেজাগাঁও বিমানবন্দর হয়ে জেলা শহর ময়মনসিংহ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।

তখনকার দিনে দাদা হুজুর কেবলা হযরত শাহানশাহে সিরিকোটি (রহঃ) অবস্থান করতেন ফুলবাড়িয়া রেল ষ্টেশনের কাছাকাছি নিমতলি এলাকার কায়েৎটুলিতে। বাসার হোল্ডিং নং ছিল ৪৩/২ বি কে গাঙ্গুলী লেন। বাসার পূর্ব দিকে রোড বরাবর হিন্দুদের দেবী মনসার মুর্তি সম্বলিত একটা মন্দির ছিল। লোকে ওটাকে সাপ মন্দির নামে জানতো। এখনো ওই মন্দিরটা কোন রকমে টিকে আছে। ঐ বাসায় থাকতেন দাদা হুজুর কেবলার (রহঃ) এক অতি প্রিয় শিষ্য কাজী হাফেজ আহমেদ সাহেব। তিনি সরকারের পি ডব্লিউ ডি বিভাগে ঠিকাদারি ব্যবসা করতেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের মিরেরসরাই এলাকায়।

কাজী হাফেজ আহমেদ সাহেব শেষ বয়সে মাদ্রাসার টাকা কালেকশন এর গুরু দায়ীত্ব খুবই সুচারুভাবে এবং সুনামের সাথে পালন করেছেন। তাঁর মত হালকা পাতলা একজন মানুষের দৈহিক গঠন দেখে কারো পক্ষে অনুমান করা সম্ভব ছিল না যে, কী অসাধারণ প্রাণ শক্তির আধার ছিলেন এ কর্মবীর মানুষটা। সকাল-সন্ধ্যা তিনি একটা ছোট ব্যাগ হাতে ঢাকা শহরের অলি-গলিতে মাদ্রাসা-মসজিদ-খানকা’র চাঁদা সংগ্রহের জন্য রোদ-বৃষ্টি-ঝড় মাথায় করে ঘুরে বেড়াতেন। এমনকি তাঁর ইন্তেকালও হয়েছিল মাদ্রাসার জন্য চাঁদা সংগ্রহ করতে গিয়ে। স্বাধীনতা উত্তরকালে ৭০ দশকের শেষ দিকে এক সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি শহীদ হন। তাঁর বেওয়ারিশ লাশ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রায় তিন চার দিন অযত্নে গড়াগড়ি খাচ্ছিল। পরে মর্গ থেকে তাঁর লাশ সংগ্রহ করে তা মরহুমের নিজ বাড়ি মিরের সরাই এ পাঠানো হয়। আমার পরম শ্রদ্ধেয় পিতা-মাতা ও আমাদের পরিবারের সদস্যদের সাথে তাঁর খুব আন্তরিক সম্পর্ক ছিল। আমার মাকে তিনি বড় বোনের মত ভক্তি করতেন। ১৯৭২ সালে আমার পরম সম্মানিত বাবা-মায়ের সাথে তিনি হজ্ব ও পালন করেন। আঞ্জুমান নিয়ন্ত্রিত ঢাকার প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রাথমিক পর্যায়ে তাঁর অসামান্য অবদান আমরা আজ অতি শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি।

জনাব কাজি সাহেবের সাথে আরো বেশ কয়েকজন পীর ভাই একসাথে ঐ বাসায় মেসের মত রান্না করে থাকা খাওয়া সারতেন। (পটিয়ার) আবদুল আজিম সাহেব তাঁদের একজন । তিনি ছিলেন কাজী সাহেবের নিকটাত্মীয়। আজিম সাহেব ছোট-খাট ব্যবসা করতেন। তিনি বহু বছর ঐ খানকাহ শরীফের নিঃস্বার্থ খেদমত করে গেছেন। বর্তমানে তিনি খুবই বয়োবৃদ্ধাবস্থায় অবসর জীবন যাপন করছেন। তৎকালীন পুরাতন ঢাকার বিভিন্ন মহল্লায় খতমে গাউসিয়া-গেয়রাভী শরীফ ও মিলাদ কিয়াম পরিচালনায় তাঁর ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য। আমরা তাঁর সুস্থ্য ও নেক হায়াত বৃদ্ধির জন্য পরম করুণাময়ের মহান দরবারে কায়মনোবাক্যে বিনীত প্রার্থনা করছি।

যাই হোক চট্টগ্রাম থেকেই বেশিরভাগ লোকজন দাদা হুজুর কেবলাকে (রহঃ) সঙ্গ দিতে ঢাকায় আসতেন। তাঁদের মধ্যে হাজি ওয়াজের আলী সওদাগর (রহঃ)(১৯১৫-৮০খৃঃ) , তাঁর ছোট ভাই মরহুম হাজি নজির আহমদ সওদাগর (রহঃ), হাজী আবদুল মজিদ সওদাগর (রহঃ)(১৯১৫-৮২খৃঃ) প্রমূখ অন্যতম ।

তখনো ঢাকার স্থানীয় লোকদের মধ্যে তাঁর কোন মুরিদান ছিল না।তবে তখন ঢাকার পরীবাগ এলাকায় আবদুর রহিম নামে তাঁর স্বদেশী হরিপুর জেলার একজন লোক বাস করতেন।হযরত খাজা চৌহরভীর রহঃ মুরিদ ঐ লোকটার সাথে তিনি মাঝে মধ্যে দেখা করতেন বলে জানা যায়।দাদা হুজুর কেবলার (রহঃ) ওফাত শরীফের কয়েক মাস আগে ১৯৬১ সালে তাঁর ইন্তেকাল হয়। তাঁর দ্বারা স্থাপিত পরীবাগ শাহ্‌সাহেব বাড়ির খানকায় তাঁকে সমাহিত করা হয়েছে। বাবার কাছে শুনেছি, খুব ছোট বেলায় তখন আমার বয়স ২ থেকে ৩ বছর হবে। তাঁর কাছে আমাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। মুখ দোষের জন্য আমি নাকি কয়দিন কোন খাবারই মুখে তুলতে পারি নাই। তিনি নাকি আমার পিঠে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলেছিলেন, “খায়েগা!খায়েগা! খায়েগা! এর পর থেকে নাকি আমি ঘুমের মধ্যেও নাবিস্কো বিস্কুট খেতাম।

বাঞ্ছারামপুরের বেশ কয়েক জন ছিলেন, তাঁরা হলেন সর্বজনাব আবু বকর, সৈনিক আবদুস সোবহান এবং আরও অনেকে। জনাব আবু বকর সাহেব ছিলেন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের মেধাবী ছাত্র। দাদা হুজুর কেবলা (রহঃ) কে এক নজর দেখেই তিনি এ মহাপুরুষের পদতলে নিজেকে নিবেদন করে পড়ালেখার পাঠ চিরতরে চুকিয়ে দেন। দাদা হুজুর কেবলাও (রহঃ) তাঁকে নিরাশ করেননি। নিজ হাতে তাঁকে একজন সুযোগ্য সাগরিদ হিসেবে গড়ে তোলেন। পরে তিনি খিলাফেতের অমূল্য রত্ন লাভে গৌরবান্বিত হয়েছিলেন। বাঞ্ছারামপুরে তাঁর মাযারে প্রতিদিন বহু ভক্তের ভিড় জমে।সেখানে তাঁর নামে একটা মাদ্রাসাও চালু হয়েছে। প্রতিবছর ধূমধামের সাথে মাযার প্রাঙ্গণে তাঁর ওরস মুবারাক উদযাপিত হয়। তাঁকে আমি মামা বলে ডাকতাম। তিনি আমাকে খুব স্নেহ করতেন।

সৈনিক আবদুস সোবহান বিগত কয়েক বছর আগে সুবেদার মেজর হিসেবে অবসর নিয়েছেন। সৈনিক আবদুস সোবহান সাহেব দায়ীত্ব পালন করতে গিয়ে একবার পাকিস্তানে যান। তখন তিনি দাদা হুজুর কেবলার (রহঃ) গ্রামের বাড়ী সফর করার সৌভাগ্য অর্জন করেন। এ বৃদ্ধ বয়সেও তিনি ঢাকা আঞ্জুমানের সকল কর্মসূচীতে তৎপর রয়েছেন। আল্লাহ্ পাক তাঁর সকল খেদমতকে কবুল করুন এবং তাঁর মত সৎ ও নিঃস্বার্থ কর্মবীরকে সুস্থ্যতার সাথে নেক হায়াত বখশিশ করুন! আমীন!!

এবার ঐ বাড়ীটার কথায় আসা যাক, যেখানে জমানার গাউস দাদা হুজুর কেবলা (রহঃ) আরাম করতেন। পাকা দেয়াল ঘেরা টিনশেড এ বাড়িতে ছিল মোটে ২টা কামরা, একটা বড় আর একটা ছোট। সাথে একফালি বারান্দা। মেঝে ভূমি থেকে প্রায় ৩/৪ ফুট উঁচু। উঠানামা করার জন্য এর নীচে ২/৩ ধাপ পাকা সিড়ি ছিল। তারপাশেই ছিল প্রায় ২০-৩০ হাত লম্বা খোলা আঙিনা। একটা সেকেলে ধরণের কাঁচা পায়খানা আর গোছলখানা ছিল বাড়ির উত্তর প্রান্তে। তাও বেশ উঁচুতে। খাবার ও অযু-গোছলের জন্য সরকারি লাইনের পানি সংগ্রহ করে তা জমিয়ে রাখা হত। পানির কাটতি হলে অনেক সময় ভিস্তী ওয়ালার মশক থেকে পানি কেনা হত। বর্তমানে দাদা হুজুর কেবলার (রহঃ) পবিত্র স্মৃতি মণ্ডিত ঐ কামরাটিকে সংস্কার করে সংরক্ষণ করা হয়েছে। কামরাটিতে দাদা হুজুর কেবলার (রহঃ) ব্যবহৃত একখানা কাঠের পালঙ্ক রাখা হয়েছে। যা দর্শনার্থী ও ভক্তদের জন্য সব সময় উম্মুক্ত।

দাদা হুজুর কেবলার (রহঃ) খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা উপস্থিত সব ভাইয়েরা মিলে মিশে সমাধা করতেন। ঢাকার কর্মজীবী পীর ভাইয়েরা রোজ সকালে দাদা হুজুর কেবলার (রহঃ) সাথে ফজরের নামাজ আদায় করতেন। দাদা হুজুর কেবলা (রহঃ) প্রতিদিন ফজরের নামাজের পর তাঁর প্রিয় মুরীদানদেরকে পবিত্র কুরআন-হাদীসের আলোকে ওয়াজ-নসীহত করতেন। তারপর কিছুক্ষণ তাসবীহ-তাহলীল পড়ে এশরাকের নামাজ আদায় করতেন। এরপর উপস্থিত ভাইদের পক্ষ থেকে সকালের নাস্তা পরিবেশন করা হত। সবাইকে একসাথে নিয়ে হুজুর কেবলা (রহঃ) নাস্তা গ্রহণ করতেন।এরপর সবাই যার যার কাজে চলে যেতেন। আর হুজুর কেবলা (রহঃ) বিশ্রামে যেতেন। এদের মধ্যে কেউ কেউ অবশ্য দুপুরে এসে যোহরের নামাজে শরিক হতেন। যাবার সময় অনেকেই তাজা ফলমূল আর এটা ওটা হাদিয়া নিয়ে যেতেন। নামাজের পর চলতো দুপুরের খাবার পালা। তবে বেশির ভাগ লোকই মাগরিবের নামাজে শরিক হবার চেষ্টা করতেন। কেউ কেউ আবার এশার নামাজে এসে শরিক হতেন। এশার নামেজের পর রাতের খাবার পরিবেশিত হত। একটা বড় থালায় করে হুজুর কেবলাকে (রহঃ) খাবার দেয়া হত। উপস্থিত মুরীদানদেরকে তিনি নিজের পাত থেকে খাবার তুলে দিতেন। এতে তাঁরা সবাই এ কথা মনে করতেন যে, হুজুর কেবলা (রহঃ) তাকেই যেন বেশী পছন্দ করেন। তিনি বলতেন, “বেটা খুব খাও, জ্বী ভরকে খাও”। কেউ কেউ দাদা হুজুর কেবলার (রহঃ) কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নিজের বাসায় চলে যেতেন। আর বাকিরা ঘরের বারান্দায় কোন মতে রাত পার করে দিতেন।

দাদা হুজুর কেবলাকে (রহঃ) “পেশোয়ারী সাহেব” নামেই তখন সবাই একবাক্যে চিনত। “শাহানশাহে সিরিকোট” নামটি তখনো প্রচলিত হয় নাই। এ বিশেষণটা স্বাধীনতা উত্তর কালে প্রবর্তিত হয়েছে। ৮০ এর দশকে এটা বিপুল ভাবে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে, যা আজো বহাল আছে।

উল্লেখ্য যে, স্বাধীনতা উত্তর কালে ৭০ এর দশকের শেষ দিকে খানকা শরীফের জন্য এ জায়গাটি কিনে দিয়েছেন দাদা হুজুর কেবলার (রহঃ) নৈকট্যপ্রাপ্ত অতি আদরের মুরিদ, চট্টগ্রামের চাঁদগাঁও নিবাসী স্বনামধন্য ব্যবসায়ী, বিশিষ্ট দানবীর, জনাব আলহাজ আমিনুর রহমান আল কাদেরী (রহঃ) (১৯০৬-৮৩খৃঃ)। জায়গাটি ক্রয় করে তিনি সেটা খানকাহ’র নামে ওয়াকফ করে দেন। আমরা এ মহাপ্রাণ ব্যক্তিটির ঋণ পরম শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ ও স্বীকার করছি। মহান আল্লাহ্ পাক তাঁকে জান্নাতে সুউচ্চ মর্যাদার আসনে আসীন করুন! আমীন!!

ঢাকায় অবস্থানকালীন সময়ে ৫০ এর দশকে (১৯৫০-৫৭খৃঃ) দাদা হুজুর কেবলার (রহঃ) হাতে অপারেশন করা হয়েছিল। কথিত আছে, তিনি প্রায় একযুগ ধরে প্রতিদিন ছিরিকোট এর পাহাড়ী অঞ্চল থেকে হযরত খাজা চৌহরভী (রহঃ) এর খেদমতে লাকড়ি কাঠ কেটে নিয়ে যেতেন। বিপদসঙ্কুল পাহাড়ি রাস্তায় ১৮ মাইল পথ পাড়ি দিয়ে হরিপুরে লাকড়ির বোঝা কাঁধে বয়ে হুজুর হযরত খাজা চৌহরভী (রহঃ) এর দরবারে নিয়ে যেতেন। একসময় দাদা হুজুর কেবলা (রহঃ) এর এ অমানুষিক কষ্ট দেখে হযরত খাজা চৌহরভী (রহঃ) তাঁকে এভাবে লাকড়ি আনতে নিষেধ করে দেন। কিন্তু পীরের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে দাদা হুজুর কেবলা (রহঃ) আগের মত লাকড়ি আনা অব্যাহত রাখেন। পরিনামে এক বিষাক্ত ফোঁড়া দেখা দিল তাঁর মুবারক হাতে। এক সময় এ ফোঁড়া এমন ভয়াবহ যন্ত্রনা দিতে শুরু করল যে, সেটা অপারেশন করাতে হল। অস্ত্রপচার করে সম্পূর্ণ আরোগ্য হতে প্রায় ৯ মাস সময় লেগেছিল। উল্লেখ্য তাঁর হাতের সে দাগটি সারাজীবন স্থায়ী ছিল। সে দাগটি সম্পর্কে পরবর্তী জীবনে দাদা হুজুর কেবলা (রহঃ) বলতেন, এটা আমার মুরশীদ প্রদত্ত মোহর। এরপর ঐ স্থানটাতে চুমো খেতেন।

তাঁর প্রবাস জীবনের শেষ পর্যায়ে তিনি প্রায়শঃই বলতেন, "মাই বুড়া হো গ্যায়া হু, বুড়াপীর আচ্ছা নেহী। তুমহারা লিয়ে এক নও জওয়ান আওর মজবুত পীরকা ছকত জরুরত হ্যায়।"

আসলে এটা ছিল তাঁর চির প্রস্থানের ইঙ্গিতবহ এবং সাথে সাথে হযরত সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ (রহঃ) স্থলাভিষিক্ত হবার ঈশারা। তিনি বেলায়েতি দৃষ্টিতে দেখতে পাচ্ছিলেন, এদেশের রাজধানীর মাটিতে সুন্নীয়তের বিজয় নিশান উড্ডীন করছেন তাঁরই সুযোগ্য উত্তরসূরী। সম্ভবতঃ সে কারণেই দাদা হুজুর কেবলা (রহঃ) ঢাকায় নতুন করে কোন স্থাপনা গড়ার উদ্যোগ নেন নাই।

আমাদের দাদা হুজুর কেবলার (রহঃ) দোয়া ছিল, “এয়া আল্লাহ্! দুনিয়ামে রিযিককা কমী না হো,আখেরাতমে নেকী কমী না হো। ইজ্জত কা জিন্দেগী নসীব হো, বেইজ্জতি সে বাচা”। সুবহানাল্লাহ! কত উত্তম দোয়া। এক জীবনে এর চেয়ে বেশী আর কী চাই? আলহামদুলিল্লাহ্! দাদা হুজুর কেবলার (রহঃ) বাচ্চাগন সত্যিই ভাগ্যবান। তাঁর প্রত্যেকটা কথা আজ অক্ষরে অক্ষরে সত্য বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। উপরের দোয়ার মোট চারটা অংশ দেখা যাচ্ছে। ১। এই দুনিয়াতে যাতে রিযিকের অভাব না হয়, ২। আখেরাতে যাতে নেকী বা পূণ্যের অভাব না হয় ৩। সম্মানের জীবন নসীব হোক, ৪। আর অসম্মান থেকে যেন রক্ষা পাই। সুম্মা আলহামদুলিল্লাহ! এ দোয়ার প্রথম তিনটা অংশ আমরা সত্যি হতে দেখেছি। চতুর্থটাও বাস্তবায়িত হবে ইনশাআল্লাহ্‌! তবে সেটা এ দুনিয়াতে পাবার জিনিষ নয়। কেবল মৃত্যুর পরই তা আমাদের হস্তগত হবে। আল্লাহ্‌র অলীদের কথা ব্যর্থ হবার নয়। আমরা তাই আশাবাদী এবং এ আশাটুকু অন্তের রেখেই কবরে যেতে চাই। দয়াময় আল্লাহ্‌! আপনি আমাদের সকলকে দা হুজুর কেবলার (রহঃ) আধ্যাত্মিক সন্তান হিসেবে কবুল করুন! আমীন!!

দাদা হুজুর কেবলার (রহঃ) পবিত্র ওফাত শরীফের আজ প্রায় সুদীর্ঘ ৫৪ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। ভাবতে অবাক লাগে, সে মহান ব্যক্তির সৌভাগ্যবান উত্তরসূরী ভেবে আমরা আত্মপ্রসাদ অনুভব করি। অথচ দাদা হুজুর কেবলার (রহঃ) পূর্ণাংগ জীবনী’র প্রামাণ্য সংকলন আজো আমাদের পক্ষে বের করা সম্ভবপর হয়নি। ব্যক্তি ও গোষ্ঠীগত পর্যায়ে বিচ্ছিন্নভাবে এ বিষয়ে কিছু প্রচেষ্টা দেখা গেছে। আঞ্জুমানের পক্ষ থেকে দাদা হুজুর কেবলার (রহঃ) পূর্ণাংগ জীবনী ও কারামতের প্রামাণ্য সংকলন প্রকাশ করা এখন সময়ের দাবী। তা নাহলে সময়ের স্রোতে হয়ত একদিন হারিয়ে যাবেন তথ্যদাতা সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ আর অনেক মূল্যবান প্রমান। আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম বঞ্চিত হবে এক মহান নেয়ামতের ভাণ্ডার থেকে। আশা করি মাননীয় আঞ্জুমান কতৃপক্ষ এ বিষয়ে সদয় দৃষ্টি দেবেন।

আমরা আরও আশা করবো আঞ্জুমান কতৃপক্ষ দাদা হুজুর কেবলার (রহঃ) পুণ্য স্মৃতি ধন্য এ পবিত্র খানকাটির যথাযথ সংরক্ষণ করবেন এবং দর্শনার্থীদের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির দিকে সুনজর দিবেন। এখানে একটা ছোট পাঠাগার গড়ে তোলা যায় কীনা তাও বিবেচনা করার জন্য সবিনয় অনুরোধ জানাচ্ছি। কারণ বাংলাদেশে এটাই দাদা হুজুর কেবলার (রহঃ) একমাত্র অক্ষত স্মৃতি চিহ্ন। আল্লাহ্ পাক আমদের সকলকে এ মহান অলি আল্লাহর নেক নযরে রাখুন! আমীন!! সুম্মা আমীন!!!

যার পদচারণা না হলে বাতিল ফেরকাগুলো গ্রাস করে নিত এদেশের সুন্নী জনতার দ্বীন-ইমান। হাযারো আউলিয়ার পূণ্যভূমি বাংলার শ্যামল প্রান্তরে পথ হারাতো মূল ধারার ইসলাম, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত। তাঁর পবিত্র ওরস মোবারক উপলক্ষ্যে এদেশে মাসলাকে আলা হযরতের প্রবক্তা ও পৃষ্ঠপোষক, কাদেরীয়া তরীকার অতি উজ্জল নক্ষত্র,আশেকানে রাসুলদের পথ প্রদর্শক, দাদা হুজুর কেবলা, “শাহানশাহে সিরিকোট” হযরতুল আল্লামা আলহাজ্ব সৈয়দ আহমদ শাহ্‌সিরিকোটি (রহঃ), এর পবিত্র চরণে অশেষ কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।











মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.