নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুমন সওদাগরের ব্লগ

পাখি এক্সপ্রেস

সবাক

পৃথিবীর সব পাখির বাপের বাড়ি গ্রামে হয়। যে গ্রামে ঘাসফুল নেই, পাখিরা সে গ্রাম ছেড়ে চলে যায়।

সবাক › বিস্তারিত পোস্টঃ

আন্দোলনে পেটাতে হয়

০৮ ই অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৪:১০

ঢাকা মহানগর পুলিশ কার্যালয়। শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তার অফিস। একজন অধস্তন কর্মকর্তা হন্তদন্ত হয়ে উর্ধ্বতন কর্মকর্তার কক্ষে প্রবেশ করলেন।

: স্যার, অবস্থা খুব ভয়াবহ। শহরে এসেছে নতুন আন্দোলন, তাকে জায়গা করে দিতে হবে।

: কীসের আন্দোলন?

: স্যার, টিফিন শেষে চুইংগাম চিবানোর জন্য ১০ মিনিট বাড়তি সময়ের দাবিতে স্কুল শিশুদের একটি দল আন্দোলন শুরু করেছে। তারা সংখ্যায় হাজারখানেক হবে। মিরপুর ১০ নাম্বার গোল চত্বর ব্লক করে দিয়ে সেটার নাম দিয়েছে শিশু চত্বর।

: খুবই নায্য দাবি, যুগোপযোগী আন্দোলন। আমি তাদের সাথে সংহতি প্রকাশ করছি। আমাদের স্কুল জীবনে স্যাররা চুইংগাম খেতে দিতেন না। স্কুল গেইটের পাশে হারুন ভাইয়ের দোকানে চুইংগাম পাওয়া যেতো। স্যারদের ধমক খেয়ে হারুন ভাই চুইংগাম বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছিলেন। এটা ছিলো আমাদের ব্যক্তি স্বাধীনতায় কঠোর হস্তক্ষেপ। আমি এখনো তার নিন্দা করি।

: তাহলে কি আমরা এই শিশু শিক্ষার্থীদের ব্যক্তি স্বাধীনতায় সম্মান জানাবো?

: অবশ্যই! কেন নয়?

: তাহলে স্যার, আমরা এখন কী করবো?

: তাদেরকে পেটাবেন।

: কী বলেন স্যার! আপনি না বললেন তাদের ব্যক্তি স্বাধীনতায় সম্মান জানাতে?

: শোনেন, আন্দোলনে পেটাতে হয়। তাছাড়া ব্যক্তি স্বাধীনতায় সম্মান জানানো আর পেটানো, দু’টো দুই বিষয়। কখনো সম্মানের সাথে পেটানো মেশাবেন না।

: জ্বি স্যার, স্যালুট স্যার। কিন্তু স্যার ওরাতো শিশু, ওদেরকে কিভাবে পেটাবো?

: তার আগে তাদেরকে একবার বুঝানোর চেষ্টা করতে হবে। এটা জাস্ট ফরম্যালিটি মেইনটেইন করা আরকি!

: সে চেষ্টা করেছি স্যার। লাভ হয়নি। এসআই গিয়েছিলেন আন্দোলনকারীদেকে বুঝাতে যে, রাস্তা বন্ধ করে এভাবে আন্দোলন করা ঠিক হচ্ছে না, দেশের অর্থনীতি ভেঙে পড়ছে, জিডিপি কমে গেছে প্রায় এক শতাংশ, ইত্যাদি ইত্যাদি। এ সময় এক আন্দোলনকারী কানে কানে সমঝোতার কথা বলার ছু’তায় কোলে উঠে এসআই’র চুলে চাবানো চুইংগাম মেখে দিয়ে পালিয়েছে। আমরা অনেক চেষ্টা করেছি চুইংগাম খুলতে। পারিনি। পরে বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছি।

: ওহ মাই গাড! এটাতো ভয়ংকর ব্যাপার। ওই আন্দোলনকারীর বিরুদ্ধে পুলিশের কর্তব্য কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগে মামলা করে দিন। এভাবেতো আমরা কাজ করতে পারবো না। পুলিশের গায়ে হাত দেয়, কত বড় সাহস! একটা প্রিজন ভ্যান পাঠান। আর কেউ কোলে উঠতে চাইলে কোলে করে এনে প্রিজন ভ্যানে ভরে রাখুন। অন্য আন্দোলনকারীরা দেখুক, পুলিশের কর্তব্য কাজে বাধা দেয়ার পরিণাম কত ভয়াবহ হতে পারে।

: তাহলে কি স্যার আমরা খুব একশনে যাবো?

: আপনারা ঘটনাস্থলে ৩টা জল কামান নিয়ে যান। ৪ রাস্তার মুখে ৪টা রায়ট কার বসিয়ে দেন। পিপার স্প্রে নিয়ে যান বেশি করে। এক ব্যাটালিয়ন দাঙ্গা পুলিশ পাঠিয়ে দেন। আর মেয়ে শিশুদের জন্য নারী পুলিশের ব্যবস্থা করেন।

: কী বলেন স্যার! শিশু পেটাতে জলকামান দাগাবো? কামানের জল ওদের গায়ে পড়লেতো ওরা ভিজে যাবে, স্যার। ওদের ঠাণ্ডা লাগতে পারে। জ্বর, সর্দি, কাশি হয়ে যাবে। এটা অমানবিক ব্যাপার, স্যার। রায়ট কার থেকে গুলি করলে ওরা গুলি খেয়ে কান্নাকাটি শুরু করবে। আন্দোলনকারীদের অভিভাবকরা বলেছেন, বাচ্চারা কান্নাকাটি শুরু করলে উনারা কান্না থামাতে পারবেন না। এ দায়িত্ব নাকি আমাদের। তখন বাচ্চারা যদি টানা কান্নাকাটি কর্মসূচী দিয়ে বসে, তাহলে কিন্তু কেলেংকারি হয়ে যাবে স্যার। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে একসাথে এত শিশু আর কখনো কাঁদেনি, স্যার। স্যার, মানবাধিকার সংস্থাগুলো তাদের রিপোর্টে আমাদের নামে বদনাম করবে। এতে করে আমরা অনেক লজ্জা পাবো। ব্যাপারটা রিস্কি হয়ে যাবে না, স্যার?

: আপনি খুব বেশি কথা বলেন। যা বলি মন দিয়ে শোনেন। জলকামান নিবেন, কিন্তু জল ছুঁড়বেন না। ভয় দেখাবেন। রায়ট কার থেকে ভুলেও গুলি করবেন না, গুলি করার এইম দেখাবেন। আর নারী পুলিশদের বলবেন আন্দোলনকারীরা ওদের দিকে তাকিয়ে ভেংচি কাটলে যেন ওরা পাল্টা ভেংচি না কাটে। আন্দোলনকারীদের সাথে কোন রকম ঠাট্টা মশকরা করা যাবে না। এ ধরনের ঠাট্টা মশকরা আমাদেরকে আপোষকামিতার দিকে নিয়ে যেতে পারে। যে কোন ধরনের আপোষ-আঁতাত থেকে দূরে থাকতে হবে। আমরা জনগণের বন্ধু, কিন্তু বন্ধুর সঙ্গে আঁতাত করে দেশের সাথে বেঈমানি করতে পারবো না। বন্ধুর চেয়ে দেশ বড়। বুঝতে পারছেন?

: জ্বি স্যার, বুঝতে পারছি। কিন্তু স্যার, পেটাবো কখন এবং তা কিভাবে?

: লুকিয়ে বেত নিয়ে যাবেন। চত্বরে ৪টা বুথ খুলবেন। চেয়ার টেবিল নিয়ে বসবেন। ৫টা করে লাইন করবেন। তারপর আন্দোলনকারীদের বলবেন একে একে লাইন ধরে আসতে।

: কেন স্যার? ওদেরকে চুইংগাম দিবো আমরা?

: আপনাকে আগেই একবার বলেছি কথা কম বলবেন।

: স্যরি স্যার, আর বেশি কথা বলবো না। আমি ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছি। আপনি বলুন, স্যার। ওরা লাইন ধরে আসার পর আমরা কী করবো?

: বলবেন, “দেখিতো সোনা, তোমার দুই হাত বাড়াও।" তারপর হাত বাড়ালে দুই হাতে দুইবার বেত দিয়ে পেটাবেন।

: কিন্তু স্যার, আমরাতো স্কুল মাস্টার নই। আমরা পুলিশ। আমরা কেন এভাবে হাতের তালুতে বেত দিয়ে পেটাবো? তাছাড়া ওরা বেত খেতে আসবে কেন?

: বলবেন বেতের বিনিময়ে চুইংগাম দেয়া হবে।

: স্যার, এটা ভালো বুদ্ধি। চুইংগামের লোভে ওরা বেত খেতে আসবে। কিন্তু স্যার, আন্দোলনকারীরা যদি নিঃশর্ত চুইংগাম চায়? ওরা যদি কোন কিছুর বিনিময়ে চুইংগাম নিতে রাজি না হয়।

: আরে ধুর মিয়া! আপনি যানতো। বুঝিয়ে, শুনিয়ে, লোভ দেখিয়ে, ফাঁদে ফেলে, যেভাবে পারেন, যেমনে পারেন, আন্দোলনকারীদের পেটান।

: কিন্তু স্যার, বলছিলাম কী, আপনি আরেকবার ভেবে দেখুন। ছোট ছোট শিশুদের না পেটালে হয় না?

: না, হয় না। কারণ, আন্দোলনকারীদের পেটাতে হয়। এটা নিয়ম।

অধস্তন কর্মকর্তা বেরিয়ে গেলেন। ওয়্যারলেসে ৩ টা জলকামান, ৪টা রায়ট কার, এক ব্যাটালিয়ন আর্মড পুলিশ ও নারী পুলিশ পাঠানোর নির্দেশ দিলেন। কিছুক্ষণ চুপ থেকে ‘যেকোন সময় সর্বাত্মক আক্রমণের জন্য’ প্রস্তুত থাকতে বললেন।

মন্তব্য ২২ টি রেটিং +৯/-০

মন্তব্য (২২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৪:২৫

গেম চেঞ্জার বলেছেন: মগা পাইসি। তয় কামডা পুলিশে দেখলে B-))

০৮ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৮:৫৭

সবাক বলেছেন: পুলিশ দেখলে চুইংগাম খেতে না চাইলেই হলো।

২| ০৮ ই অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৪:৪৪

নূরতাজ নূর বলেছেন: আহাহাহাহহা

০৮ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৮:৫৭

সবাক বলেছেন: :)

৩| ০৮ ই অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৪:৪৫

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: আন্দোলন সফল করা কঠিন । আবার আন্দোলন নিয়ন্ত্রণ করাও কঠিন ।ধরি মাছ না ছুই পানি টাইপ কিছু ব্যাপার ইনভলভ করতে পারলে ভাল হতো ।

০৮ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৮:৫৭

সবাক বলেছেন: হ্যাঁ, আন্দোলনের সবদিক উঠে আসেনি।

৪| ০৮ ই অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৫:০০

জেন রসি বলেছেন: তাহারা শিশু দেখলে কামান নিয়া যায় আর ডাকাত দেখলে লাঠি হাতে উল্টা মাইর খায়! ;)

০৮ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৮:৫৮

সবাক বলেছেন: হ, তারা পুলিশ!

৫| ০৮ ই অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৫:০৯

হাসান মাহবুব বলেছেন: ভালো ভালো স্ট্যাটাসগুলো এভাবে ব্লগে প্রকাশ করতে পারেন। সুরক্ষিত থাকবে।

০৮ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৮:৫৮

সবাক বলেছেন: নাহ! ব্লগের জন্য নিয়মিত লেখার চেষ্টা করবো।

৬| ০৮ ই অক্টোবর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৫৫

গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: ভিয়েতনামে এক ছাত্র আন্দোলনে ছাত্ররা রাস্তায় শুয়ে রাস্তা বন্ধ করে দেয় ।
টিভিতে দেখলাম পুলিশ কোলে করে তাদের রাস্তার পাশে নিয়ে যাচ্ছে ।
যেন ছেলে খৎনা করাতে রাজী হচ্ছে না , আব্বা শাসনে ,আদরে ছেলেকে কোলে তুলে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাচ্ছে ।
আর আমাদের দেশে আন্দোলনে ছাত্রদের পেটাতে হয় এটাই নিয়ম । X((

০৮ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৮:৫৯

সবাক বলেছেন: হ, আন্দোলনে পেটাতে হয়।

৭| ০৮ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৯:১৩

আহমেদ জী এস বলেছেন: সবাক ,



দারুন স্যাটায়ার ।

কিন্তু মজা করতে গিয়ে বাঙালীদের জন্যে প্রযোজ্য আসল সত্যটি বলে ফেলেছেন । বাঙালীকে রাখতে হয় মাইরে আর দৌঁড়ে । তা হলেই তারা ঠিক ।
একটা প্রবাদ আছে - মাইরের নাম বাবাজী , ভুত পালায় যার ডরে .. ।
মাইর দিতে হবে সবাইকে । পুলিশ থেকে শুরু করে সরকারী সব কর্মকর্তা , সচিব থেকে মন্ত্রী , শিক্ষক থেকে ছাত্র , আম জনতা থেকে জননেতা ও জন প্রতিনিধিদের । বাদ যাবেনা কেউ ।

০৮ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১০:৪১

সবাক বলেছেন: ধন্যবাদ। :)

৮| ০৮ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৯:২৬

মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন:
সবাক আমাকে অবাক করে দিলেন... :)
উন্নতমানের স্যাটায়ার.... আমি তো হাসতে হাসতে টায়ার্ড :(

ধন্যবাদ নিন :)

০৮ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১০:৪২

সবাক বলেছেন: জ্বি! :)

৯| ০৮ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৯:২৭

হামিদ আহসান বলেছেন: :-P

০৮ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১০:৪২

সবাক বলেছেন: ;)

১০| ০৯ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১:১৫

মহান অতন্দ্র বলেছেন: মজার। স্যাটায়ার ভাল ছিল।

১১| ০৯ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ২:০৫

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: যদি নিঃশর্ত চুইংগাম চায়? হাসবো না কাঁদবো??
দুর্দান্ত!! বাস্তব অবস্থার প্রেক্ষীতে কিছু বলার নেই।।

১২| ১৩ ই অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৩:১৩

জসিম বলেছেন: চরিত্র আমাদের সবখানে প্রায় একই. চুইংগামের জন্যই হোক আর গণভবনের জন্যই হোক.

ভালো লিখছেন.

১৩| ০৩ রা আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৩:০০

আফরোজ ন্যান্সি বলেছেন: :D হা হা হা

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.