![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একটি গপ্পো বলি: এক হাতুড়ে কম্পিউটার টেকনিশিয়ান কম্পিউটারের প্রসেসর পিন উল্টো করে বসিয়ে দিতেই সেটি গরম হয়ে বিস্ফোরিত হলো। কারণ হিসেবে সে জানালো প্রসেসর অত্যধিক গরম হওয়ায় ঘটনাটি ঘটেছে। কি বুঝলেন? …….
আরেকটি গপ্পো থুক্কু বাস্তব ঘটনা জানাই: গতকাল বুধবার সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডের পাশে রানা প্লাজা নামক একটি নয় তলা ভবন ধ্বসে এযাবত কালের সবচেয়ে নজিরবিহীন হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। পূর্বেই ভবনের তৃতীয় তলার একটি পোশাক কারখানায় ফাটল দেখা দিয়েছিল। ঘটনার আগের দিন সকাল ১০টার দিকে সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কবীর হোসেন সরদার সেটি পরিদর্শনে যান। তখন তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ভবনটি ভেঙে পড়ার কোনো কারণ নেই(!)।
বুধবার বিসিসিকে দেয়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মহিউদ্দিন খান আলমগীর বিবিসিকে বলেছেন, আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে ইমারত নির্মাণের নিয়ম কানুন যথাযথ অনুসরণ করা হয়নি বলেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। তবে একইসাথে মন্ত্রী বলেন, ‘কিছু হরতাল সমর্থক ভবনটির ফাটল ধরা দেয়ালের বিভিন্ন স্তম্ভ এবং গেট ধরে নাড়াচাড়া করেছে বলে তিনি জানতে পেরেছেন। তিনি বলেন, ভবনটি ধসে পড়ার পেছনে সেটাও একটি সম্ভাব্য কারণ হতে পারে। মন্ত্রী জানান, তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারপরই দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মঙ্গলবারই ভবনটিতে ফাটল ধরার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা আগে থেকেই সচেতন ছিলাম। আমরা জানতাম বলে সব লোক সরিয়ে ফেলা হয়েছিল। কিন্তু মূল্যবান জিনিস সরিয়ে নিতে সকালে লোকজন সেখানে গিয়েছিল। লিংক: Click This Link
প্রধানমন্ত্রী নিজে দায় স্বীকার করে ফেললেন কি? উনি যদি জানতেনই তবে চেয়ে চেয়ে দেখেছেন, চেয়েছিলেন মানুষ হতাহত হোক? যদি জানতেন তবে প্রশাসন কেন নিশ্চুপ ছিলো, স্থাপনাটি সিজ করা হয়নি কেন? কেন এত মানুষকে ওনার কথামত ‘মূল্যবান জিনিস সরিয়ে নিতে’ সকালে লোকজনকে সেখানে যেতে দিয়েছেন?
একদিকে প্রধানমন্ত্রী, অন্য দিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মন্তব্য একরকম পরস্পর বিরোধী বক্তব্য বলা চলে। তা যদি না হয়, তবে কি প্রধানমন্ত্রী এও জানতেন, পরদিন হরতালকারীরা এসে ভবন ধরে ধাক্কাধাক্কি শুরু করবে। যেহেতু, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘ভবন ধরে নাড়াচাড়া করা’কে সম্ভাব্য কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। আবার প্রধানমন্ত্রী বললেন, তিনি নাকি আগে থেকেই জানতেন।
প্রকৃত কথা হলো, এ ধরণের ঘটনার পর দায়িত্বশীলরা আকাশ-কুসুম মন্তব্য নির্বাচন করার সময় ও স্ট্যামিনা পান কোথায়? নাকি তারা নিয়মিত বুস্টার বা হরলিক্স খান? যদি এ স্ট্যামিনা বা শক্তিশালী নার্ভ দুর্ঘটনার প্রতিরোধ ও উদ্ধারে ব্যবহার করতেন, তবে হয়তো আমাদের এত এত ক্ষয়-ক্ষতির স্বীকার হতে হত না। দায়িত্বশীল হিসেবে এ ধরণের মন্তব্য ওনাদের কাছ থেকে দেশবাসী আশা করে না। যেখানে চারিদিকে শুধু আহতদের আহাজারি ও নিহতদের লাশের রক্তের গন্ধ, সেখানেও রাজনীতিবিদরা রাজনীতির গন্ধ খুঁজে বেড়ান। এ ধরণের ঘটনায় রাজনীতিবিদদের উচিত বিভাজন ত্যাগ করে আহতদের পাশে এসে দাঁড়ানো।
বিরোধীদল বিএনপি হরতাল প্রত্যাহার করেই ক্ষান্ত, যেন এখানেই দায়িত্ব শেষ। শুধুমাত্র জামায়াত-শিবিরকেই নাকি দেখা যাচ্ছে, নিপীড়িতদের পাশে এসে দাঁড়াতে। যাদেরকে হরতালে পিকেটিংয়ে এ্যাকটিভ থেকে, সাধারণ মানুষের ক্ষতি করতে দেখা যায়, তাদের এ ধরণের দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও আওয়ামী লীগ বা বিএনপির কাউকেই কেন দলীয়ভাবে তাদের পাশে এসে দাঁড়াতে দেখা যায় না। অন্তত তাতে জামায়াত-শিবিরের মত রাজনৈতিক ফায়দা তো হত।
ব্লগার রাজীব খুনের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী যে আবেগ দেখিয়েছিলেন, অথচ এত লাশের পরও তাঁর এ বক্তব্য বেমানান। এমনকি ঘটনাস্থল পরিদর্শনেও তিনি আসেননি। তাহলে কি তারা শাহবাগ যায়নি বলে অপরাধ করেছে? তারা হরতালকারী, নাকি হরতাল বিরোধী? যদি হরতালকারীই হোক নতুবা বিরোধীই হোক, কিন্তু তারাতো মানুষ! তাদের জীবন নিয়ে বিভাজন, যথেচ্ছাচার ও অযৌক্তিক বক্তব্য প্রদান করা কখনই কাম্য নয়।
হাজার হাজার কোটি টাকার বাহুল্য অস্ত্র কেনা হলো, কিন্তু গার্মেন্টস শ্রমিকদের কল্যাণে কিছুই করা হয় না। দুর্ঘটনা কবলিত সাধারণ মানুষের উদ্ধারের কাজে মান্ধাতা আমলের সরঞ্জাম ব্যবহার করা হচ্ছে।
অপরদিকে আরেক দলকে বলতে শোনা যায়, এটি নাকি আল্লাহর গজব। গার্মেন্টসে নারী-পুরুষ এক সাথে কাজ করায় নাকি এ গজব মানে আল্লাহ প্রদত্ত আজাব। আল্লাহ গজব দিলে তাতো তাদের জানিয়ে দেন না। আবার আমরা কুরআন-হাদিস থেকে জানতে পেরেছি, আল্লাহ প্রদত্ত গজবে কখনও কখনও নিরীহরাও আজাব ভোগ করে থাকেন, যার ব্যাখ্যা শুধু মহান আল্লাহ পাক দিতে পারেন। তাছাড়াও কিছু ব্যাখ্যা তিনি মানুষকে জানিয়েছেন, যাতে জানা যায়, এ ধরণের দুর্ঘটনার মধ্য দিয়ে তিনি তার সার্বভৌমত্ব প্রকাশ করে মানুষকে সতর্ক করেন আবার মুমিনের পরীক্ষা করার জন্যও করেন, আর সেসব কথায় যাচ্ছি না। এখন সময় সাম্প্রদায়িত তথা রাজনৈতিক সকল বিভেদ ভুলে সাধারণ মানুষের পাশে এসে দাঁড়ানোর এবং এসব দুর্ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনে আগানোর। সঠিক তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার, যাতে আর ভবিষ্যতে এমন না হয়।
দায়িত্বশীলদের কথা হতে হবে তাৎপর্যময়, আর এ তাৎপর্যময় কথানুযায়ী কাজ করেও দেখানো চাই। কয়েকদিন হৈ-হুল্লা, তদন্ত কমিটি, প্রভৃতি করে, পরে তা ধামাচাপা দেয়ার দিন সমাপ্ত করা উচিত। এতে করে নিজেরও ক্ষতি, দেশ ও জনগণেরও অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। সবকিছুর মধ্যে রাজনৈতিক ফায়দা লুটাই কি রাজনীতি?
©somewhere in net ltd.