![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সাভার ট্রাজেডি নতুন করে আশা জাগা ও বাঁচতে শেখা
সাভারের একটি দৃশ্য: অক্লান্ত পরিশ্রমের কারণে রানা প্লাজার পাঁচ তলাতেই অজ্ঞান হয়ে যান হেফাজতে ইসলামের এক কর্মী, টানা চারটি দিন খেয়ে না খেয়ে নিরলস পরিশ্রমের ধকল সইবে এমন সাধ্যি কার? পাশের মানুষেরা তাকে ধরাধরি করে উপরে আনলে আন্তরিকভাবে সেবার জন্য ছুটে যান গণজাগরণ মঞ্চের মেডিকেল টিম! পরম মমতায় তাকে শুশ্রূষায় তাকে সুস্থ করে তোলেন। তারপর দেখলাম তারা গভীর মনোযোগ দিয়ে শুনছেন তার রোমাঞ্চকর উদ্ধারাভিযানের গল্প। কি দারুন ভালো লাগা! কি দারুন সৌহার্দ্যবোধ! যেনো কতদিনের আপন। অথচ কিছুদিন আগেও কি দেখেছি আমরা! মনে করতে ইচ্ছা হচ্ছে না মোটেও।
ঘটনা দেখে কি মনে হচ্ছে? এ মানবিকতা দেখলে আমাদের আরেকবার আশাবাদী হতে ইচ্ছা করে, আবার আমরা স্বপ্ন দেখি সব ক্ষুদ্র মতবিরোধ বাদ দিয়ে সত্যিই আমাদের এ আকাঙ্ক্ষিত স্বপ্নটুকু ছুঁতে পারবো, গড়তে পারবো সত্যিকারের সোনার বাংলাদেশ! কে আওয়ামী লীগ, কে হেফাজতে ইসলাম, জামায়াত-শিবির, বিএনপির কর্মী একাত্ম হয়ে একযোগে উদ্ধার কাজে লিপ্ত সবাই। গণতান্ত্রিক দেশের রাজনীতি তো সাধারণ মানুষের কল্যাণের জন্যই, এখানে বিভাজনের কোন স্থান নেই। বিভাজন হলেও তা টিকে থাকার কথাও নয়। যারা দেশের রাজনীতি নিয়ে নিরাশার আলো দেখছেন, তাদের জন্য এ এক আশার আলো।
কিছুদিন পূর্বে শাহবাগের গণজাগরণ দেখেও আমার মনে একই আশা উদয় হয়। যদিও পরবর্তীতে দেশের রাজনৈতিক কলুষতায় তা বিতর্কিত হয়ে উঠে। এখনই সময় শাহবাগ ও সাভারের ট্রাজেডি নিয়ে ঘটে যাওয়া ঘটনা থেকে আমাদের শিক্ষা নেবার। ভেঙে দেয়া হোক কলংকিত রাজনৈতিক স্বার্থ, গুঁড়িয়ে দেয়া হোক রাজনৈতিক প্রতারকদের কালো থাবা।
তবে বলতে বাধ্য হচ্ছি কোথায় মানবাধিকার সংস্থার লোকেরা, নারী আন্দোলনের নেত্রীরা। যাদের নারী অধিকার নিয়ে সোচ্চার কণ্ঠে আশান্বিত হতো নারীরা। তাদের কোন বক্তৃতা-বিবৃতি তো দেখা যায় না। তবে কি সাভারের হতাহতদের মধ্যে নারী নেই? নাকি তারা গার্মেন্টস শ্রমিক বলে, নাকি তারা গরীব, অসহায় বলে? নারীর অধিকার কি শুধু কতিপয় পুঁজিবাদী নারীদের?
কোথায় গেলো "রবি"র দেশপ্রেমিক ????? দিন বদলের চেষ্টায় ''বাংলালিংক''।
সাভারের অসহায় মানুষগুলোর দিন এখন বদলে গেছে বলেই কি ওদের কোন মাথাব্যথা নেই। নাকি তাদের সুদিন আসলে 'লবণ কই' বলে ব্যবসায়িক স্বার্থ হাসিলের জন্য যাবে।
''এয়ারটেল'' ভালোবাসার টানে কাছে আনে !! সাভারে মৃত্যুর সাথে লড়াই করা মানুষগুলোর জন্য ভালবাসা নেই ? ভালবাসা শুধু বিলাসি ও বিত্তশালীদের জন্য? যারা তাদের সংযোগ ব্যবহার করের রাত-বিরেতে আজাইরা আলাপে লিপ্ত তাদের জন্য ভালবাসা?
''গ্রামীণফোন'' দুরত্ব যতই হোক, কাছে থাকুন!! কাদের কাছে থাকে ? যারা মিনিট টু মিনিট কথা বলতে পারে তাদের কাছে থাকে ?
''টেলিটক'' আমাদের ফোন !! কাদের ? আমরা কে?
ভাল লাগলো মেরিল প্রথম আলোর ঘোষণা শুনে। শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের হল-অব ফেম-এ শুরু হয় মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান, যেটিকে প্রথম বলা হচ্ছে 'তারকা-মহাতারকাদের মিলনমেলা'।
এগিয়ে এলেন শিল্পীরা, হাত বাড়ালেন সংস্কৃতিসেবীরা। ২৬ এপ্রিল, শুক্রবারের মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার ২০১২-এর সন্ধ্যাটি পরিণত হলো ‘সাভার দুর্গতদের জন্য সংস্কৃতি’ অনুষ্ঠানে। সংগৃহীত হলো ৫৪ লাখ টাকা।
প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান জানালেন, প্রথম আলোর সাংবাদিক কর্মীদের একদিনের বেতন থেকে দুই লাখ টাকা আর মেরিল-প্রথম আলো তহবিল থেকে দুই লাখ টাকা দিয়ে আমরা একটা তহবিল শুরু করছি। এরপর স্কয়ার টয়লেট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী ঘোষণা করেন ১০ লাখ টাকা অনুদানের কথা। তারপর শিল্পী ও কলাকুশলীরা একে একে ঘোষণা করতে থাকেন তাঁদের অনুদানের কথা।
উল্লেখ্য, প্রথম দিন থেকেই প্রথম আলো বন্ধুসভা, প্রথম আলো ট্রাস্টের পক্ষ থেকে ওষুধ ও সরঞ্জাম নিয়ে কর্মীরা ঘটনাস্থলে ও হাসপাতালগুলোতে কাজ করে চলেছেন।
ওই অনুষ্ঠানেই চ্যানেল আইয়ের ফরিদুর রেজা সাগর পাঁচ লাখ, রুনা লায়লা-আলমগীর দম্পতি দুই লাখ, চলচ্চিত্র তারকা দম্পতি অনন্ত ও বর্ষা পাঁচ লাখ, ট্রান্সকম গ্রুপ পাঁচ লাখ, শিল্পী ফেরদৌসী রহমান এক লাখ, সৈয়দ আবদুল হাদী এক লাখ, চিত্রনায়িকা সাংসদ কবরী এক লাখ, মুকিমস ক্রিয়েশন দুই লাখ, সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার শামীম ৫০ হাজার, মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ৫০ হাজার, মোশাররফ করিম ৫০ হাজার, তারিন ৫০ হাজার, কুসুম শিকদার এক লাখ, শিল্পী ভাবনা ৫০ হাজার, শিল্পী বাঁধন ৫০ হাজার, কবির বকুল-দিনাত জাহান দম্পতি ৫০ হাজার, পণ্ডিত রামকানাই দাস ২০ হাজার, মিশা সওদাগর ৫০ হাজার, কানিজ আলমাস এক লাখ, প্রচিত বিজ্ঞাপনী সংস্থা ৫০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। নায়ক সাকিব খান ৫০ লাখ পূর্ণ করতে যা লাগবে, তা দেবেন বলে ঘোষণা দেন। শিল্পী জয়া ও জাহিদ হাসান টাকার অঙ্ক না বলে এই তহবিলে অংশ নেবেন বলে জানান। খবরটির লিংক: Click This Link
ধিক্কার জানাই সেসব কমার্শিয়াল মানসিকতার স্বার্থান্বেষী ভোগ্যপণ্যের সেবাদাতাদের। যারা মানুষের এমন দূর্দিনেও পাশে এসে দাঁড়ায় না।
আমাদের দূর্ঘটনা থেকে শিক্ষা নেওয়ার আছে অনেক কিছুই। আমাদের বুঝতে হবে, সব কিছুর ঊর্ধ্বে মানবতা। আজ এ দূর্ঘটনায় আমি, আপনি অথবা আমাদের আত্মীয়-স্বজন থাকতে পারতো। হয়তো আছেনও, আর যাই হোকে, তারাতো আমাদের মতই মানুষ। মানুষ মানুষের জন্য, মানুষেরই মানুষের বিপদে এগিয়ে আসা উচিত। কিছু কিছু সংবাদ কর্মীদের দেখা গেছে, উদ্ধার কাজের বিঘ্ন ঘটিয়ে উদ্ধারপ্রার্থী অসহায়দের জিজ্ঞেস করে, এ অবস্থায় আপনার অনুভূতি কি? কি দারুণ এদের মানবতাবোধ? ছিঃ। তবুও আমরা নিরাশায় ভুগি না, আশা, স্বপ্ন আমাদের বাঁচতে শেখায়। এখনও আমাদের মানবতাবোধ একেবারে মুছে যায়নি। তাইতো দেখা যায়, যার যা ক্ষমতা, সামর্থ্য তাই নিয়ে এগিয়ে আসছেন। সর্বাগ্রে বলতে হয়, এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কথা, স্যালুট জানাই হাসপাতালের চেয়ারম্যান ড. মো. এনামুর রহমান, চিকিৎসক, শিক্ষার্থী ও কর্মীদেরকে। তারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে, বিনামূল্যে ঔষধ ও চিকিৎসা সহায়তা করেছেন অসুস্থ, আহতদের।
আহ্বান জানাই রাজনীতিবিদদের। আসুন, এই সময় থেকেই আমরা সম্প্রীতি, সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ গড়ে তুলি। উদ্ধারকারী রাজনৈতিক কর্মীদের সাথে একাত্ম হয়ে আমরা ভুলে যাই অতীতে বিভেদ। রাজনৈতিক ভিন্নমত থাকতেই পারে, তাই বলে দেশের কল্যাণে তো সব দলই একমত। ভিন্ন রাজনীতি, ভিন্নমত থাকলে বিভেদও থাকতে হবে, এমন তো কথা নয়। আমরা সবাইই তো এই দেশের, এই সমাজের তথা এই বিশ্বের, সবাই তো আমরা মানুষ। আর মানুষ তো মানুষেরই জন্যে।
©somewhere in net ltd.