নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফেসবুকে আমিঃ www.facebook.com/sohag143

অরণ্যের কাব্যে পারিজাত

অরণ্যের কাব্যে পারিজাত › বিস্তারিত পোস্টঃ

ব্রেকআপ... পর্ব ১

১৭ ই জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৩:২৭

অনি খুব বেশি কথা বলে। বাসায় এসেই চিৎকার শুরু করল- ঐ ইপ্সিতা, তোর মোবাইল বন্ধ কেন?
কতবার ফোন দিলাম। কী? দাম বেড়ে গেছে? মোবাইল বন্ধ করে রাখা শুরু করছিস ইদানীং?

- আস্তে কথা বল। এতো চিৎকার করার কি আছে? মোবাইল হারিয়ে গেছে।
- কিভাবে রে? ছিনতাই হইছে মোবাইল? তোর কোন ক্ষতি হয় নায় তো?
- ওহো আস্তে বল। বাসায় শুনলে সমস্যা হবে। চল আজ মোবাইল কিনব নতুন।

অনি আর ইপ্সিতা মোবাইল আর সিম কিনে দোকান থেকে বের হবার সময় অনিকের সাথে দেখা হল।
অনিক ইপ্সিতার ছোট বেলার বন্ধু আর ইহসানের ক্লাসমেট।
- কি অবস্থা তোমাদের? কতদিন পর দেখা। শুধু ইহসানের থেকে গল্পই শুনি।
- এইতো ভাল। তুমি কেমন আছ?
- হ্যাঁ ভাল। নতুন মোবাইল কিনলে?
ওকে গিফট করবে?
- না ইহসানের সাথে আমার ব্রেক আপ হয়ে গেছে।
- কি বলো!! কবে? গত পরশু ও তোমার কথা বলল।
- কাল। এসব নিয়ে আর কথা বলতে ইচ্ছা করছে না। আমরা আসি। একটু কাজ আছে তো।
- আচ্ছা যাও। নাম্বারটা দিয়ে যাও। বন্ধুদের মাঝে মাঝে মনে কইর। আমি তোমাকে আর শুদ্ধকে অনেক ভাল বন্ধু ভাবি। কিন্তু তোমরা বুঝ না। উপমা নাম্বারটা দিয়ে বলল- ইহসান কে দিও না কিন্তু নাম্বার। আর আমার সাথে দেখা হইছে এটাও বলবে না।

যতদিন রিলেশন ছিল বলছ ওকে। কিন্তু এখন ব্যাপারটা আলাদা। আচ্ছা বাই, আসি তাহলে। ভার্সিটির দিকে যাচ্ছে অনিক। ইহসানের
থেকে পুরো ব্যাপারটা জানতে হবে। এতো সুন্দর সম্পর্ক দুজনের।ব্রেক আপ হয় কি করে? ভার্সিটিতে অনিক অনেক খুঁজল ইহসান কে।
অবশেষে পাওয়া গেল একটা চা সিগারেটের দোকানে। খুব মনোযোগ দিয়ে হা করে তাকিয়ে ,বড় ভাই আর ক্লাসমেটদের সিগারেট খাওয়া দেখছে সে। নিজে খায় না, তবে খাওয়া শুরু করতে হবে, তাই এতো মনোযোগ।

ধূমপায়ী গুণীজনদের বাণী, এক টানেই মনের সব দুঃখ কষ্ট দূর হয়ে যায়। ইহসান এখন কষ্টে আছে। তাই এটা করতে হবে। আচ্ছা সত্যি যদি এক টানে, সব দুঃখ ভুলে যাওয়া যায়, তাহলে তো এক কাজ করা যায়, যারা সুইসাইড করে ,তাদের সামনে একটা করে সিগারেট নিয়ে বলতে হবে, ভাই একটা টান দিন, তারপর মরার ইচ্ছা থাকলে মইরেন।

ইহসানের এসব ভেবে কাজ নেই। ওকে খাওয়া শিখতে হবে। অনিক এসেই তার শেখার মাঝে ব্যাঘাত ঘটাল।
- কিরে পাগলা, কি করিস এখানে?
- শিখতেছি।
- কি শিখিস?
- সিগারেট খাওয়া। ধূমপান করা। আগে দেখব। তারপর ধরব।
- মাথা খারাপ হইছে তোর? ঘুষি দিয়ে নাক থেতলে দিব। তুই করবি স্মোকিং? আমারে গাধা পাইছিস?
- সিরিয়াসলি। আমি তো ছ্যাকা খাইছি। তাই মনে খুব কষ্ট। তুই কাছের বন্ধু তাই বললাম। অন্য কাউরে বলিস না।
-আমি তো আগে থেকেই জানি।
- মানে?
- মানে হল, তুই আমার বন্ধু না? তোর মনের খবর আমি রাখি।
- বল তো ধূমপান করার সিদ্ধান্ত টা ঠিক আছে না? তুই তো ভাল জানিস, এক টানেই সব কষ্ট ধোঁয়া হয়ে বের হয়ে যাবে।
- কইসে তোরে? উঠ চল তো। তোরে দিয়ে স্মোকিং হবে না। তুই হাবাগোবা, সহজ সরল ছেলে, তোরে দিয়ে এসব হবে না। আমার সাথে চল, আমি সব ঠিক করে দিচ্ছি।

- এক টান দিয়ে যাই না?
- বললাম না তোরে দিয়ে হবে না। তুই জাতির ভবিষ্যৎ, তোরে পুড়ে ছাই করলে, দেশেই আগুন লেগে যাবে। ওসব আমার মত ফাতরা পোলাপানের জন্য। চল তো আমার সাথে। ইহসান উঠে আসল। আর ধূমপায়ী হওয়া হল না।একটা মরা গাছের গুড়ির উপর বসে আছে অনিক আর ইহসান। সব বলল অনিককে। সে আবারও কাঁদছে। কান্নার উপর মানুষের কোন হাত নেই। ইচ্ছা হলেই থামিয়ে রাখা যায় না।

"কান্না একটি অনৈচ্ছিক পেশী,যাকে ইচ্ছা করলেই নিয়ন্ত্রণ করা যায় না।"

ডাক্তাররা শুনলে রাগ করবে, তাই নিজের মনেই নিজের আবিষ্কার রেখে দিল ইহসান। এভাবে কারও জন্য কাউকে কখনও কাঁদতে দেখেনি অনিক। অনিকের নিজেরও খুব খারাপ লাগছে। কি বলে সান্ত্বনা দিবে বুঝছে না। কাউকে সান্ত্বনা দেয়া পৃথিবীর কঠিন কাজগুলোর একটা। কারও কষ্ট দেখলে খুব কষ্ট লাগে। কিন্তু কি বলে সান্ত্বনা দেওয়া উচিৎ, তা খুঁজে পাওয়া যায় না। অনিক ইহসানের কাঁধে হাত রেখে বলল-

-এই পাগলা, কাঁদিস কেন? একেবারে ভুঁড়ি ফুটা করে দিব। যাহ, তোর তো ভুঁড়িই নাই। শুটকি মাছ একটা। খাওয়া দাওয়া করে একটু মোটা হ। একে তো খাস না,তার উপর আবার রাত জেগে কান্নাকাটি করে,বডি বিল্ডার হইতেছিস। আরে বলদ, বয়ফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ড হল লোকাল বাসের মত, একটা মিস তো তা নিয়ে মন খারাপ করার কোন দরকার নেই । পিছনে আর একটা আসতেছে, শুধু একটু অপেক্ষা কর।

একজন চলে গেছে তাই কেঁদে টেদে এক করে ফেলতেছে।
-হইছে। খালি বকস তোরা। আমার কষ্ট লাগলে আমি কি করব? আমি ভালবাসছি না? ছেড়ে দেবার জন্য ভালবাসছি নাকি? আমাকে ছেড়ে যাবে তো ভালবাসছিল কেন? আর কান্না অনৈচ্ছিক পেশী, ইচ্ছা করে কেউ কাঁদতে পারে না, থামাতেও না।
- মানে কি? তোর মাথা পুরাই শেষ। এতক্ষণ ধরে তোরে কি বুঝালাম?

আরে ইপ্সিতা কি কাঁদতেছে? দিব্বি শপিং করে বেড়াচ্ছে গিয়ে দেখ। এরা মেয়ে, বেশি বুঝতে গেলেই, সব কিছু ভাবলেই পাগল হয়ে যাবি। ঐ মেয়ে তোকে ছাড়া থাকতে পারলে, তুই ও পারবি। তুই কম কিসে? দেখিয়ে দিবি তুই। আমি তোকে সাহায্য করব।
- কি করতে বলতেছিস?
- আমি অনেক ভেবে দেখলাম তোর এই কষ্ট থেকে বাঁচার একটাই উপায়। নতুন প্রেম করা।
- কি বলিস? আমি? সম্ভব না। আমি ইপ্সিতাকে ভালবাসি।
- যেই মেয়ে তোরে ফাঁকি দিয়ে চইলা গেছে, তারে তুই ভালবাসিস এখনও? তুই তো দুনিয়ার সবচেয়ে বড় বেহায়া। তুই ওকে দেখিয়ে দেখিয়ে প্রেম করবি। তুই একা কষ্ট পাবি, আর ওপাবে না,এটা হতে দেয়া যায় বল?

এটা পুরো ছেলে জাতির মান সম্মানের ব্যাপার।
- দোস্ত, আমি পারব না।
- আরে পারবি। মেয়েটার একটু শাস্তি হওয়া দরকার। তুই কষ্ট পাবি আর সে শপিং করবে, তা তো হবে না। আমি সব ব্যবস্থা করতেছি। তোরে আমি ১০ মিনিটের মধ্যে রিলেশন করাইয়া দিতেছি।
- এতো তাড়াতাড়ি ভালবাসব কি করে? ভালবাসতে সময় লাগে তো।
- মেয়ে সুন্দর। সে তোরে ১০ মিনিটের মধ্যে বাসতে পারলে তোর, সমস্যা কি?
- যদি ইপ্সিতা দেখে ফেলে?
- তুই আসলেই বলদ,ওকে দেখানোর জন্যই তো প্রেম করবি।
- আমার ভয় লাগতেছে।
- চুপ চাপ বসে থাক। আমি একটু ঐদিক থেকে নীলার সাথে কথা বলে আসি।
- নীলা কে?
- যার সাথে তুই প্রেম করবি, সে অনিক মোবাইল নিয়ে গাছের আড়ালে গেল। কি করছে এসব অনিক? মাথা এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে ইহসানের। আবার কান্না পাচ্ছে। কিন্তু এবার চোখ দিয়ে পানি বের হল না। অনিক কিছুক্ষণ পর এসে বলল, সব
হয়ে গেছে। মেয়ে রাজি।

তোকে ইপ্সিতাকে দেখিয়ে দিতেই হবে। আমি এখন তোদের কথা বলিয়ে দিচ্ছি। ঐ মেয়েকে বলবি না তোর আগে প্রেম ছিল, তাহলে কিন্তু সব শেষ। মেয়ে খুবই সুন্দর। কথা বলার মাঝখানে বলবি যে,তুই ওর সাথে দেখা করতে চাস, কণ্ঠটা অনেক সুন্দর।ওর
নামটা সুন্দর, আর কেঁদে দিস না আবার কথা বলতে গিয়ে। মোটামুটি মুখস্থ করিয়ে দিল।
- আমার না ভয় করে দোস্ত।
- চুপচাপ আমি যা যা বলছি বলবি। আমি তোর বন্ধু,
আমি তোর খারাপ চাইব না কখনও। অনিক ফোন করে ধরিয়ে দিল ইহসান কে।

শেখানো কথা সব বলল সে। নিজের কষ্ট থেকে বাঁচতে হবে, তার জন্য সব করা যাবে। কথা শেষ হলে অনিক বলল- সাবাস, অসাধারণ বলছিস। নীলা তো পাগল হয়ে গেছে তোর জন্য, আমি নিশ্চিত। দেখা করতে রাজি হইছে?
- হ্যাঁ। বলল তো কাল দেখা করবে।
- আরে বাহ, কালকে দেখা হলে প্রপোজ করবি।
তারপর একসাথে রিকশা করে ঘুরে বেড়াবি ওকে দেখিয়ে।ইহসান কিছু বলল না। মাথা নিচু করে চলে গেল অনিকের সামনে থেকে।

অনিক বলল- কাল অবশ্যই দেখা করবি। ইপ্সিতা তোকে ছাড়া থাকতে পারলে তুই ও পারবি।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.