![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছোটবেলা অকাম-কুকাম করার পর মা আমাকে যেইসব শাস্তি দিতেন, তাঁর মধ্যে প্রধান শাস্তি হলো কান ধরে টেনে আমাকে একহাত উপরে তুলে ফেলার চেষ্টা আর পিঠের ওপর ধুরুম-ধারুম কিল। নাওয়া নাই খাওয়া নাই, সারাদিন ঘুড়ি আর লাটিম নিয়ে সারা গ্রাম ছুটে বেড়ানো, তারপর সন্ধ্যায় বাড়িতে ফেরা, এইটা ছিলো আমার সাপ্তাহিক অভ্যাস। মানে প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার, একদিনের জন্য হলেও উধাও হয়ে যেতাম আমার ঘুড়ি অথবা লাটিমকে সঙ্গে নিয়ে। তারপর, সন্ধ্যায় লাফাতে লাফাতে বাড়িতে ফিরতাম। মা কিছু বলার আগেই হাত-পা ধুয়ে ঘরের মেঝেতে মাদুর বিছিয়ে ভদ্র ছেলের মতো পড়তে বসে যেতাম। মা মাগরিবের নামাজ পড়ার পর আমার হাত ধরে টেনে আবারও টিইবওয়েলে নিয়ে যেতেন। তারপর, শরীরে সাবান মেখে এমন ডলা ডলতেন, যেন আর কোনোদিন আমাকে গোসল না করালেও চলবে। ডলা খেয়ে আমি করতাম চিৎকার, আর আমার চিৎকারে টিউবওয়েলের পাশের পুরনো দেয়ালের পলেস্তরারাও যেন একটু একটু করে খসে খসে পড়তে চাইতো। আমার কান্নার সাথে তাল মিলিয়ে, ঝিঝিপোকারাও ডেকে চলতো। কিন্তু আমার মার মুখ থেকে একটা টু-শব্দ বের হতোনা। গোসলের পর, টান মেরে পরনের ভেজা হাফপ্যান্টটা খুলে ফেলতো। তারপর, গামছা দিয়ে সারা শরীর মুছে দিতো। তারপর, হাত ধরে টেনে নিয়ে আসতো ঘরে। তারপর, সরিষার তেল মাখানো হতো শরীরে। তারপর, সিঁথি কেটে মাথা আঁচড়ানো হতো চিরুনী দিয়ে। আর, আলনা থেকে শুকনো একটা হাফপ্যান্ট এনে পড়ানো হতো। শুকনো প্যান্টের মাঝে আমি একটা অন্যরকম গন্ধ পেতাম। এইটা এখন পাইনা। তবে ছোটবেলায় খুব পেতাম। তারপর, আবার পড়তে বসতাম। এখনও মা কোনো কথাই বলবেনা। আমি আমার মতো করে দুলে দুলে, ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে, মশা মারতে মারতে পড়তে থাকতাম। একটু পরপর, মিনমিন করে ভাত খেতে চাইতাম। তারপর, মায়ের চোখের দিকে না তাকিয়েই আবার পড়া শুরু করতাম। আমার কাছে মনে হতো, যেন জন্মের পর থেকে পড়ছি তো পড়ছিই। আমাকে কোনোদিন খেতে দেয়া হয়নি। আমাকে কোনোদিন, আলিফ লায়লা অথবা থিফ অফ বাগদাদ দেখতে দেয়া হয়নি। আমাকে আটকে রাখা হয়েছে, সুবিশাল টিনের চালার পুরনো এই ঘরে, হাজার বছর ধরে। হাবিজাবি ভাবতে ভাবতে মশা মারতে মারতে আর ঝিমুতে ঝিমুতে একসময় মুক্তি মিলতো। তারপর, কেন যেন আমার ভাত খেতে মন চাইতো না। একটু আগে ভাত ভাত করে মুখে ফেনা তুলে ফেললেও, এখন মনে হচ্ছে, যদি কোনোদিন ভাত না খেতে হতো, তাহলে কতই না ভালো হতো। কিন্তু আমার কপাল খারাপ, প্রচন্ড অনিচ্ছা সত্ত্বেও জোর করে গলা দিয়ে ভাত ভরে দিতেন মা। চোখের জলে আমার ছোট্ট ভাতের প্লেটটা সয়লাব হয়ে যেতে চাইতো। তাতে কি? প্লেটে একটা ভাত অবশিষ্ট থাকলেও খাওয়া ছেড়ে উঠে যাবার পথ নেই। তারপর, খাওয়া-দাওয়া শেষে শুরু হতো প্রশ্ন-উত্তর আর প্যাদানী পর্ব। মা আমাকে জিজ্ঞেস করতো, সারাদিন কই ছিলাম, কেন ছিলাম, আমার মধ্যে কেন ডর-ভয় নেই, জীবনে যেই শাস্তি কল্পনাও করিনি, সেই শাস্তি ভোগ করার সাধ জেগেছে কিনা ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি। আমার জবাব ছিল অনেক কমন, মুখ বন্ধ করে মাথা চুলকানো। আমার হাতটা, মাথা থেকে সরিয়ে নিয়ে শক্ত করে ধরা হতো। তারপর, আরেক হাত দিয়ে শুরু হতো কিলিং(কিল+ing)। ধুরুম-ধারুম কিলের আওয়াজে টিনের চালার পুরনো ঘরটাও যেন দাত কেলিয়ে হাসতো। আর, আমার কান্নার আওয়াজে, মশা-মাছিদের প্যানপ্যানানিও যেন বন্ধ হয়ে যেত নিমিষেই। মায়ের হাতের কিল-গুতা খেয়ে কাঁদতে কাঁদতে, মায়ের গলা পেঁচিয়ে ধরেই যে কখন ঘুমিয়ে যেতাম, সে খবর কে রাখে? আমি ঘুমিয়ে যাবার পর, আমাকে মারার কথা মনে করে, অনেক রাতে আমার মা-ও কি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতো নাকি? সে খবরই বা কে রাখে?
আজকের এই “মা” দিবসে লিখাটা আমার মা-কে উৎসর্গ করলাম।
১২ ই মে, ২০১৩ রাত ১২:৩৮
সোহাগ সকাল বলেছেন: পৃথিবীর সব মায়েরা ভালো থাকুক , পৃথিবীর সব মায়েরা সন্তানদের নিয়ে সুখে থাকুক।
২| ১২ ই মে, ২০১৩ রাত ১২:৩২
কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:
মা তুমি ভাল থেক
১২ ই মে, ২০১৩ রাত ১২:৪০
সোহাগ সকাল বলেছেন: আমার মা-কে ভালো থাকতে বললেই বলে, তোরা ভালো থাকলেই আমার ভালো থাকা হয়।
৩| ১২ ই মে, ২০১৩ রাত ১:২০
কাওসার আহমেদ খান বলেছেন: লেখাটা মন ছুঁয়ে গেল। পৃথিবীর সকল মায়েরা ভালো থাকুক।
পোষ্টে প্লাস++++++
১২ ই মে, ২০১৩ রাত ৯:১৭
সোহাগ সকাল বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ কাওসার। মায়েদের জন্য শুভ কামনা অনেক।
৪| ১২ ই মে, ২০১৩ রাত ১:৩২
কাওসার আহমেদ খান বলেছেন: আর হ্যাঁ,
"মায়ের হাতের কিল-গুতা খেয়ে কাঁদতে কাঁদতে, মায়ের গলা পেঁচিয়ে ধরেই যে কখন ঘুমিয়ে যেতাম, সে খবর কে রাখে?"
এই লাইনটা চরম।
১২ ই মে, ২০১৩ রাত ৯:১৯
সোহাগ সকাল বলেছেন: আচ্ছা!
অনেক ধন্যবাদ কাওসার।
৫| ১২ ই মে, ২০১৩ রাত ১:৫১
রাইভী বলেছেন: আসলেই চমৎকার বর্ণনা।
মায়েদের জন্য শুভকামনা।।
১২ ই মে, ২০১৩ রাত ৯:২১
সোহাগ সকাল বলেছেন: মায়েদের জন্য শুভ কামনা।।
ধন্যবাদ অনেক।।
৬| ১২ ই মে, ২০১৩ রাত ৩:৪৬
শোশমিতা বলেছেন: পৃথিবীতে সবচেয়ে সুন্দর ও মধুর শব্দটি হচ্ছে ‘মা’
মায়ের মুখ দেখে দু:খ ভুলে,
মায়ের আচলে জীবন বুঝি,
যখনই দূরে যাই আড়ালে থাকি,
নীরবে চোখ মেলে মাকে খুঁজি....
১২ ই মে, ২০১৩ রাত ৯:২৩
সোহাগ সকাল বলেছেন: "মায়ের মুখ দেখে দু:খ ভুলে,
মায়ের আচলে জীবন বুঝি,
যখনই দূরে যাই আড়ালে থাকি,
নীরবে চোখ মেলে মাকে খুঁজি.... "
লাইন চার'টে চমৎকার লাগলো। অনেক ধন্যবাদ শোশমিতা।
৭| ১২ ই মে, ২০১৩ দুপুর ১২:৪৬
সোহাগ ভাইয়া বলেছেন: চমৎকার লিখেছেন। মা তোমরা ভালো থাকো।
১২ ই মে, ২০১৩ রাত ৯:২৪
সোহাগ সকাল বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ মিতা!
ভালো থাকবেন। মায়েদের জন্য শুভ কামনা।।
৮| ১২ ই মে, ২০১৩ দুপুর ১:৩০
হাসান মাহবুব বলেছেন: অতীতভ্রমণ হল লেখাটা পড়ে। ভালো লাগলো অনেক।
১২ ই মে, ২০১৩ রাত ৯:২৭
সোহাগ সকাল বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ হামা ভাই। অনেক ভালো থাকবেন।।
অতীত নিয়ে ভাবতে ভালো লাগে।
৯| ১২ ই মে, ২০১৩ বিকাল ৪:৪৪
এরিস বলেছেন: । আমার কাছে মনে হতো, যেন জন্মের পর থেকে পড়ছি তো পড়ছিই। আমাকে কোনোদিন খেতে দেয়া হয়নি। আমাকে কোনোদিন, আলিফ লায়লা অথবা থিফ অফ বাগদাদ দেখতে দেয়া হয়নি। আমাকে আটকে রাখা হয়েছে, সুবিশাল টিনের চালার পুরনো এই ঘরে, হাজার বছর ধরে। হাবিজাবি ভাবতে ভাবতে মশা মারতে মারতে আর ঝিমুতে ঝিমুতে একসময় মুক্তি মিলতো। তারপর, কেন যেন আমার ভাত খেতে মন চাইতো না। একটু আগে ভাত ভাত করে মুখে ফেনা তুলে ফেললেও, এখন মনে হচ্ছে, যদি কোনোদিন ভাত না খেতে হতো, তাহলে কতই না ভালো হতো। কিন্তু আমার কপাল খারাপ, প্রচন্ড অনিচ্ছা সত্ত্বেও জোর করে গলা দিয়ে ভাত ভরে দিতেন মা। চোখের জলে আমার ছোট্ট ভাতের প্লেটটা সয়লাব হয়ে যেতে চাইতো। তাতে কি? প্লেটে একটা ভাত অবশিষ্ট থাকলেও খাওয়া ছেড়ে উঠে যাবার পথ নেই। তারপর, খাওয়া-দাওয়া শেষে শুরু হতো প্রশ্ন-উত্তর আর প্যাদানী পর্ব এভাবেই কালনাগিনী মায়েরা বাচ্চাদের মানুষ করে তুলছে। আমার কালনাগিনী, আপনার, সবার কালনাগিনী ভালো থাকুক, ভালবাসায় থাকুক।
১২ ই মে, ২০১৩ রাত ৯:৩২
সোহাগ সকাল বলেছেন: আজকে যে আমি লিখতে পারছি, এইটা তো আমার মা-ই শিখিয়েছিলো, সেই কবে কোনদিন!
ভালো থাকবেন এরিস।
১০| ১২ ই মে, ২০১৩ রাত ৯:০৩
না পারভীন বলেছেন: ভাল লাগছে । মা আর আপনি দুজনের জন্যই শুভ কামনা ।
১২ ই মে, ২০১৩ রাত ৯:৩৩
সোহাগ সকাল বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আর অনেক ভালো থাকবেন পারভীন।
১১| ১৩ ই মে, ২০১৩ দুপুর ২:৩২
ইরানপন্থী বলেছেন: হাসান মাহবুব বলেছেন : অতীতভ্রমন হলো লেখাটা পড়ে।
+
১৩ ই মে, ২০১৩ বিকাল ৪:২৫
সোহাগ সকাল বলেছেন: ভালো থাকা হোক। শুভ বিকেল।।
১২| ১৪ ই মে, ২০১৩ রাত ৯:১০
নিঝুম আখতার বলেছেন: মায়ের চেয়ে বহুল উচ্চারিত শব্দ আর নেই। জন্মের পর, চোখ খোলার পর যে মানুষটিকে প্রথম দেখে শিশু, সেই মানুষটি মা। পৃথিবীর যেকোনো দেশে যেকোনো ভাষায় শিশু প্রথম উচ্চারণ করে ‘ম’ শব্দটি। ‘ম’ থেকে মা। জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাস তাঁর বিখ্যাত ‘বাঙ্গালা ভাষার অভিধান’ গ্রন্থে ‘মা’ শব্দের ব্যাখ্যা করেছেন ‘সকল জাতির ভাষার আনুকৃত’।মা-হারা এক গ্রাম্য কিশোরী গভীর জ্যোৎস্না রাতে মায়ের জন্য কাঁদে আর গায়,
”মাগো তোমার মতো নেয় না কেহ আমায় বুকে টানি
আঁচল দিয়া মোছায় না কেউ আমার চোখের পানি
হায়রে মা জননী আমার, হায়রে মা জননী।’
১৫ ই মে, ২০১৩ রাত ১০:৫২
সোহাগ সকাল বলেছেন: লেখাটা ভালো লাগলো অনেক।
"মাগো তোমার মতো নেয় না কেহ আমায় বুকে টানি
আঁচল দিয়া মোছায় না কেউ আমার চোখের পানি
হায়রে মা জননী আমার, হায়রে মা জননী।"
অনেক ভালো থাকবেন নিঝুম।
১৩| ১৪ ই মে, ২০১৩ রাত ১১:৩৪
নুসরাতসুলতানা বলেছেন: মানষকে দুনিয়াতে আল্লাহ প্রদত্ত সবচেয়ে বড় রহমত হলো মা।লেখাটা ভাললাগা রইল।
১৫ ই মে, ২০১৩ রাত ১০:৫৩
সোহাগ সকাল বলেছেন: আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ নুসরাত।
অনেক ভালো থাকবেন। শুভ কামনা।।
১৪| ১৪ ই মে, ২০১৩ রাত ১১:৩৪
নুসরাতসুলতানা বলেছেন: মানুষকে
১৫ ই মে, ২০১৩ রাত ১০:৫৩
সোহাগ সকাল বলেছেন: হ্যাঁ। বুঝতে পেরেছি।
১৫| ১০ ই জুন, ২০১৩ দুপুর ১:২৮
হৃদয় রিয়াজ বলেছেন: আমার কাহিনী গুলোর সাথে অনেক মিল খুঁজে পেলাম
১০ ই জুন, ২০১৩ রাত ১০:২৯
সোহাগ সকাল বলেছেন: বলেন কি! কি কি খুজে পেলেন জানালে আরও ভালো লাগতো!
অনেক ভালো থাকবেন রিয়াজ।
©somewhere in net ltd.
১|
১২ ই মে, ২০১৩ রাত ১২:২৮
খেয়া ঘাট বলেছেন: প্বথিবীর সব মায়েরা ভালো থাকুক , প্বথিবীর সব মায়েরা সন্তানদের নিয়ে সুখে থাকুক।