নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সভ্যতার সংকট

সভ্যতার সংকট › বিস্তারিত পোস্টঃ

পবিত্র হজ্জঃ বিশ্ব বিপ্লবের নাটক মঞ্চায়ন

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:৪৯

বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে ফেরাউন, কারুন ও বালাম স্ট্রাকচারঃ প্রসঙ্গ হজ্জ(পর্ব-১)

“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” অর্থাৎ ইলাহ (বিধানদাতা) হিসেবে আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে মানিনা। এই বাক্যটিই ইসলামের সারকথা। ইসলামে কালিমা, নামাজ,রোজা,হজ্জ,জাকাত,অন্যায়ের উচ্ছেদ ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা এই মূলভিত্তি গুলোর মূলেও রয়েছে এই শক্তিশালী বাণীটি।“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” দ্বারা পুঁজিবাদ ,সমাজতন্ত্র, মানবতাবাদ, অস্তিত্ববাদ, ব্যক্তিসাতন্ত্রবাদসহ যত মানুষের তৈরি মতবাদ রয়েছে সব মতবাদকে প্রত্যাখ্যান করা হয় এবং উচ্ছেদের পরিকল্পনা গ্রহন করা হয়। ইসলাম এমনি একটি বিপ্লবী মতবাদ। ইসলামে নামাজ,রোজা,হজ্জ এই মূলভিত্তি গুলোর যেমন রয়েছে প্রতীকী অর্থে আচার অনুষ্ঠান তেমনি রয়েছে জ্ঞানগত ভিত্তি। এইজন্য ইসলামে জ্ঞানচর্চার উপর সর্বপ্রথম ও সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করে রাসুল (সঃ) বলেছেন- “জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক নরনারীর জন্য বাধ্যতামুলক”। পবিত্র কোরানে আল্লাহপাক বলেছেন-“ ইকরা বিস্মি রাব্বি কাল্লাজি” অর্থাৎ জ্ঞান অর্জন কর তোমার প্রতিপালকের নামে। এখানে “প্রতিপালকের নাম” বলতে বুঝানো হয়েছে আল্লাহর নিদর্শন বা Sign of God। আকাশমণ্ডলী, সৌরজগৎ, পৃথিবী ও পৃথিবীতে বসবাসরত প্রানীজগত এই সবই আল্লাহর নিদর্শন। মানুষ নিজে এক খোদা প্রদত্ত অপূর্ব নিদর্শন। লক্ষ্যনীয় বিষয় হল, এই সকল নিদর্শন থেকেই প্রথম জ্ঞান অর্জন করতে বলা হয়েছে। তাই সর্বপ্রথম মানুষ তারপর আকাশ মণ্ডলী, সৌরজগৎ ও পৃথিবী (শৃঙ্খলা ও কার্যকারণ) সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করলে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” এর মত শক্তিশালী বিপ্লবী বাণীটি উপলব্ধি করা যাবে। আর জ্ঞান না থাকলে নামাজ,রোজা, হজ্জ শুধু আচার অনুষ্ঠানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়বে। এই সুযোগটি গ্রহন করে ইসলামের শত্রুরা ইসলাম সম্পর্কে বিরূপ ধারনা ও মন্তব্য করে থাকে। যেমন গত ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ তারিখে পবিত্র হজ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লতিফ সিদ্দিকী বলেন, ‘আমি কিন্তু হজ আর তাবলিগ জামাতের ঘোরতর বিরোধী। আমি জামায়াতে ইসলামীরও বিরোধী। তবে তার চেয়েও হজ ও তাবলিগ জামায়াতের বেশি বিরোধী।’ তিনি বলেন, ‘এ হজে যে কত ম্যানপাওয়ার (জনশক্তি) নষ্ট হয়। হজের জন্য ২০ লাখ লোক আজ সৌদি আরবে গিয়েছে। এদের কোনো কাম নাই। এদের কোনো প্রডাকশন নাই। শুধু ডিডাকশন দিচ্ছে। শুধু খাচ্ছে আর দেশের টাকা বিদেশে দিয়ে আসছে।’
http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article

ইরানের দার্শনিক ডঃ আলী শরীয়তী তার “হজ্জ আমাদের কি শিখায়” বইতে অত্যন্ত চমৎকার ভাবে হজের বিপ্লবী শিক্ষাকে তুলে ধরেছেন। সাধারণত হজ্জ বিশ্ব মানবের সম্মীলন কেন্দ্র। বিশ্বের সকল তৌহিদী জনতার শফত অনুষ্ঠান। ডঃ আলী শরীয়তী বলেছেন- হজ্জের সার কথা হল আল্লাহর উদ্দ্যেশে মানুষের অভিযাত্রা। আদমকে সৃষ্টি করার পেছনে যে দর্শন কাজ করেছে হজ হল তার প্রতীকী বহিঃপ্রকাশ। আরও বিশদ ভাবে বললে হজ্জ পালনের পুরা অনুষ্ঠানটা হল একই সঙ্গে অনেক কিছুর মঞ্চায়ন বা প্রতীক স্বরূপ। যেমন “সৃষ্টির মঞ্চায়ন”, ইতিহাসের মঞ্চায়ন”, “ ইসলামী আদর্শের মঞ্চায়ন”, এবং সমগ্র উম্মার মঞ্চায়ন”। হজ্জ অনুষ্ঠানের এই মঞ্চায়নে আল্লাহ রয়েছেন মঞ্চ ব্যবস্থাপকের ভুমিকায়। আদম (আঃ), ইব্রাহীম (আঃ) ও হাজার (আ) যেন এই নাটকের মূল চরিত্র। দৃশ্যপট হল মসজিদুল হারাম, কাবার পরিপার্শ্ব, মাসা, আরাফাতের ময়দান মাসআর এবং মীনা। মূল প্রতীক গুলো যেন কাবা সাফা, মারওয়া, দিন, রাত্রি, সূর্য উদয়, সূর্যাস্ত, মূর্তি এবং কোরবানির আনুষ্ঠানিকতা। নাটকের সাজ পোশাক যেন ইহরাম, হালগ ও তাকসির। আর এই নাটকের বিভিন্ন ভুমিকায় যে অভিনয় করে সে মাত্র একজন। হজ্জের নিয়তে যিনি দাঁড়িয়েছেন অর্থাৎ আপনি নিজেই। আপনি নারী হন বা পুরুষ হন, যুবক বা বৃদ্ধ, সাদা কিংবা কালো আপনি হলেন এই অনুষ্ঠানের মূল। আল্লাহতালা ও শয়তানের বিরোধের পরিপেক্ষিতে আদম (আ), ইব্রাহীম (আ) ও হাজর (আ) এর যে ভুমিকা সেইটিই আপনাকে অভিনয় করতে হবে। তাই ব্যক্তি হিসেবে আপনাকে এই নাটকের নায়ক বলা যায়।

পাঠক, মহান হজ্জের প্রত্যেকটি আনুষ্ঠানিকটাকে গভীর দর্শন, বুদ্ধিবৃত্তির আলোকে গভীর ও বিস্তৃত ভাবে ব্যখ্যা বিশ্লেষণ করা সম্ভব। মানুষের জ্ঞানগত মাত্রা যত সুগভীর হবে তত বেশী হজ্জের তাৎপর্য উপলব্ধি করা যাবে । আমরা এখানে মাত্র একটা আনুস্থানিকতার তাৎপর্য আলোচনা করার চেষ্টা করব।
যখন আরাফাত থেকে জনতা দলে দলে মাশআরে আসে এবং তারা দ্রুত গতিতে পাহাড় বেয়ে উঠে এবং সংগ্রহ করে প্রয়োজনীয় পাথর। জামারাহ নামে একধরনের কংকর পাথর। পাহাড়ে রাতের অন্ধকারে সকলে মিলে পাথর সংগ্রহ করে। কারন এর পরবর্তী পর্যায় হল মিনা (যুদ্ধক্ষেত্র) । মিনা হল সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী ও সর্বশেষ স্তর। এই মিনাতেই পৃথিবীতে শয়তানের সবচেয়ে বড় আশ্রয় কেন্দ্রটি ধ্বংস করা হবে। কিংস স্ট্রীট বরাবর অবস্থিত তিন শয়তানের তিনটি প্রতীকী মূর্তি একশ মিটার দূরে দূরে অবস্থিত। শয়তানের এই তিন মূর্তিকে লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপ করা হবে। প্রথমেই তৃতীয় মূর্তিটিকে আঘাত করতে হবে এরপর প্রথম ও দ্বিতীয় মূর্তিগুলোকে পরপর আঘাত করতে হবে। কারন তৃতীয় মূর্তিটির শক্তিতেই প্রথম ও দ্বিতীয় মূর্তিগুলো টিকে আছে। এই প্রতীকী নাটক টুকুকে আমরা বাস্তবতার আলোকে ব্যাখ্যা করব।

এখানে ডঃ আলী শরীয়তী উল্লেখ করেছেন- পাথর গুলো হল যুদ্ধের অস্ত্র অর্থাৎ বুলেট, শেষ মূর্তিটি হল ফেরাউন, প্রথম ও দ্বিতীয় মূর্তিটি হল বালাম ও কারুনের প্রতীক। আর মিনা হচ্ছে যুদ্ধক্ষেত্র । যে ব্যক্তি পাথর নিক্ষেপ করবেন তিনি থাকবেন ইব্রাহিম(আ) এর ভুমিকায়।তিনি প্রতীকী ফেরাউন, কারুন ও বালামকে বুলেট নিক্ষেপ করে পরাজিত করবেন। এবং বিজয়ী বেশে ঈদ উদযাপন করবেন।
উল্লেখ্য যে, ফেরাউন হচ্ছে অত্যচার, জুলুম নির্যাতনের প্রতীক। এর কাজ স্বৈরাচার, রাজনীতি, বল ও শক্তি প্রয়োগ করা।
কারুন হচ্ছে,ধন ও ধনতন্ত্রের প্রতীক। এর কাজ শোষণ, সম্পদ লুণ্ঠন, বানিজ্য ও রক্তপাত করা।
বালাম হচ্ছে চাতুরী ও ভণ্ডামির প্রতীক। এর কাজ হল পথভ্রষ্ট করা, মগজ ধোলাই, ইমান নষ্ট ও প্রতারনা করা।
আগেই বলে রাখছি, ফেরাউন, কারুন ও বালাম এখন শুধু ব্যক্তি না। তারা এখন একেকটি দর্শন (Philosophy),একেকটি কাঠামো(Structure) এই তিনটি হতে পারে একেকটি প্রতিষ্ঠান (Organization) এবং প্রশাসন কিংবা হতে পারে কোন দেশ বা জাতি । অর্থাৎ যে বা যারাই এই তিনটি ব্যক্তির রূপ ধারন করে তাদের ভুমিকা পালন করে তারাই এই ফেরাউন, কারুন ও বালাম কাঠামোর অন্তর্ভুক্ত।
এরপর ডঃ আলী শরীয়তী বলেছেন- “হজ্জের যিনি স্রষ্টা তিনি নিশ্চয় জানেন যে, যেকোনো সভ্যতা ও সংস্কৃতিতে, সমাজে ও সমাজ কাঠামোতে সর্বকালেই এই তিন শয়তানী শক্তি রাজত্ব করে এবং এর একটি থাকে মূল ভুমিকায়। আর অপর দুটি থাকে সহযোগী হিসেবে”। যেহেতু সকল সমাজ কাঠামোতে সর্বকালেই এই তিন শয়তানী শক্তি রাজত্ব করে। তাই এবার আমরা বিশ্লেষণ করে বের করবো বর্তমানে বিশ্ব সমাজ ও সমাজ কাঠামোতে এই তিন শয়তানী শক্তি( ফেরাউন, কারুন ও বালাম) কোন কোন ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। অর্থাৎ তিন শয়তানের বর্তমান রূপ কি কি।

 বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে ফেরাউন, কারুন ও বালাম স্ট্রাকচারঃ

আমেরিকা = ফেরাউন কাঠামোঃ আমরা ফেরাউনকে জানি স্বৈরাচারী শাসক হিসেবে,যে অত্যচার, জুলুম নির্যাতনের প্রতীক।
সেই সময় ফেরাউনের পরিষদবর্গ বা পুরো প্রশাসনই ছিল স্বৈরাচারী। তারা জনগনকে দাশে পরিনত করেছিল। জুলুম নির্যাতনের স্ট্রিম রোল চালাত বনী ইজরাইলের উপর। পুরুষদেরকে হত্যা করত নারীদেরকে জীবিত রেখে নির্যাতন করত, জনগণকে রাজনৈতিক দমন, নিপীড়ন, শোষণ চালিয়ে দারিদ্র ও বঞ্চিত করে রাখতো যাতে তারা শক্তিশালী হয়ে স্বৈরাচারী প্রশাসনের বিরুদ্ধে না দাঁড়াতে পারে। জনগনের কোন স্বাধীনতা ছিল না। ছিল আজকের সাম্রাজ্যবাদীতা, আধিপত্তবাদীতা, জায়নবাদীতা, যুদ্ধ দখলদারিত্ব ও ক্ষমতা আরোহণের প্রতিযোগিতা (যদিও তখন সিম্পল সোসাইটি হওয়াতে সাম্রাজ্যবাদীতা, আধিপত্যবাদীতা, জায়নবাদীতা, যুদ্ধ দখলদারিত্ব স্বল্প পরিসরের এবং ভিন্ন ধাঁচের ছিল)। এখন জ্ঞান বিজ্ঞান বিকশিত হওয়াতে ফেরাউন কাঠামো অনেক সূক্ষ্ম ও জটিল রূপ ধারন করেছে। ফেরাউন এখন আর কোন ব্যক্তি না, ফেরাউন এখন একটি দেশে রূপান্তরিত হয়েছে। আর সেটি হল আমেরিকা।এর সহযোগী হিসেবে রয়েছে জাতিসঙ্ঘ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে বিজয়ী মিত্রশক্তি পরবর্তীকালে যাতে যুদ্ধ ও সংঘাত প্রতিরোধ করা যায়, এই উদ্দেশ্যে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠা করতে উদ্যোগী হয়। জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের ৫টি স্থায়ী সদস্য (যাদের ভেটো প্রদানের ক্ষমতা আছে) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া,এবং গণচীন । নিরাপত্তা পরিষদের শান্তিরক্ষা অপারেশন, আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা এবং নিরাপত্তা পরিষদের রেজুলেশন মাধ্যমে সামরিক অভিযানের ক্ষমতা রয়েছে আছে, এটি জাতিসংঘের এমন একটি অঙ্গ, যেটি থেকে জারি করা রেজুলেশন সদস্য দেশগুলোর জন্য মানা বাধ্যতামূলক।
বলা হচ্ছে এই প্রতিষ্ঠানের নাম বিভিন্ন জাতিদের সঙ্ঘ। অত্যন্ত সুন্দর মুখরোচক নাম জাতিসঙ্ঘ। আসলে এটি বিশ্বের বিভিন্ন জাতিদের সঙ্ঘ না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে এটি মুলত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে পুজিবাদী ও সমাজতান্ত্রিক পাঁচটি দেশ নিয়ে । যারা সকলেই সাম্রাজ্যবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী চেতনা লালন করে। এদের রয়েছে ভেটো ক্ষমতা। যে ক্ষমতা পেয়ে তারা হয়েছে চরম স্বৈরাচারী। এদের মধ্যে আমেরিকা সবচেয়ে বেশী ক্ষমতাদর্পী। অনেক সময় আমেরিকা নিজের ক্ষমতাবলে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্তকে অগ্রাহ্য করে একক সিদ্ধান্ত গ্রহন করে। সারাবিশ্বকে করায়ত্ত করে রাখতেই আমেরিকা বিশ্বে ৮০০ অথবা এর বেশী সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করেছে। জোর করে মিথ্যা অজুহাতে দেশে দেশে আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে।জাতিসঙ্ঘ একটা দুর্নীতিগ্রস্থ প্রতিষ্ঠান যার মাধ্যমে আমেরিকা দুনিয়ার সকল অপকর্মের বৈধতা পাচ্ছে। জাতিসংঘ আমেরিকার স্বৈরাচারী, বলদর্পী বৈশ্বিক শাসন প্রতিষ্ঠার হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে। জাতিসঙ্ঘ আলাদা একটা প্রতিষ্ঠান হলেও তাকে আমেরিকা থেকে আলাদা করে দেখা যাবে না। কারন জাতিসঙ্ঘ আমেরিকার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। জাতিসঙ্ঘের অপরাধ গুলো মূলত আমেরিকায় করেন যাচ্ছে।

মানবতাবিরোধীদের মুখে মানবতার জয়গান। স্বৈরাচারীরাই আজকের গনতন্ত্রের জয়গান গাচ্ছে। বিশ্বব্যাপী পশ্চিমাদের গনতন্ত্রের আলোড়ন অথচ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে কোন গনতন্ত্র নেই।নিরাপত্তা পরিষদে পাঁচটি দেশের ভেটো ক্ষমতা (Absolute Power) আছে সবাই নিজের স্বার্থে স্বৈরাচারী সিদ্ধান্ত নিতে পারে কিন্তু কোন গনতন্ত্র নেই। নিরাপত্তা পরিষদে পাঁচটি দেশের মধ্যে ভোটাভুটি মাধ্যমে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়না। ফলে আমেরিকার স্বৈরাচারী সিদ্ধান্তের কারনে ফিলিস্তিন আজো বিশ্বের ১৩৫ টি দেশের স্বীকৃতি পাওয়া সত্ত্বেও স্বাধীন হতে পারছে না। বর্তমানে আমেরিকা আইএসকে লক্ষ্য করে সিরিয়াতে সম্পূর্ণ স্বৈরাচারীভাবে হামলা করে যাচ্ছে। দেশটির সরকারের অনুমতি কিংবা আলোচনারও প্রয়োজন মনে করছে না।
ফেরাউন অত্যন্ত উদ্ধত সহকারে নিজেকে আল্লাহ দাবী করতো। আর আমেরিকা এখন চাতুরতার সঙ্গে, কৌশলে নিজেদের আল্লাহ দাবী করে, কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আল্লাহর অবস্থানে অবস্থিত হতে চায়। আমেরিকা নিজেকে সারা বিশ্বের সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী মনে করে । অথচ একমাত্র আল্লাহই সার্বভৌম ক্ষমতা মালিক।
বর্তমান বিশ্বের তিনটি আদর্শ বিদ্যমান( ইসলাম, পুঁজিবাদ ও সমাজতন্ত্র)। অথচ এই জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে পাঁচটি দেশের মধ্যে পুঁজিবাদ ও সমাজতন্ত্র( যদিও সমাজতন্ত্র আদর্শের কোন অস্তিত্ব নেই এমনকি বিলুপ্তির পথে, কার্যত রাশিয়া ও চীন পুজিবাদের দিকে ধাবিত ) আদর্শের প্রতিনিধি রয়েছে কিন্তু ইসলামী আদর্শের কোন প্রতিনিধি নাই। মিশরীয় ফেরাউনের সময় ইজারায়েল বংশের কোন ব্যক্তির ফেরাউন প্রশাসনের দায়িত্ব দিত না, তাদের কোন ধরনের পোস্ট দেওয়া হতনা। পদমর্যাদাহীন,বঞ্চিত ও অবহেলিত করে রাখত। যাতে তারা( বনী ইজরায়েল) শক্তিশালী হয়ে ফেরাউনের প্রশাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে না পারে। ঠিক একমাত্র পুঁজিবাদী বিশ্বের বিশ্বশাসন টিকিয়ে রাখার জন্য জাতিসংঘে নিরাপত্তা পরিষদে মুসলিম বিশ্বের কোন দেশকে ক্ষমতা বা শক্তিশালী পদ দেওয়া হয়নি। কারন একটায় বিশ্বব্যাপী ইসলামী শক্তির উত্থান ঘটলে বৈশ্বিক ফেরাউন কাঠামোর(আমেরিকার) পতন ঘণ্টা বেজে উঠবে। যার কারনে মুসলিম বিশ্বকে অবনত করে রাখতেই দেশগুলোকে ভেঙ্গে খন্ড খন্ড করে দুর্বল রাষ্ট্রে পরিণত করেছে, আগ্রাসন চালিয়ে সভ্যতার নিদর্শন গুলো ধ্বংস করেছে। মুসলিম দেশ গুলো যেন জ্ঞান বিজ্ঞানে উন্নত না হতে পারে সেই জন্য মিত্থ্যা অজুহাতে অবরোধ আরোপ করছে। যুদ্ধ, গনহত্যা, মানবতা বিরোধী অপরাধ করে উন্নয়নকে বিপর্যস্ত করে দিচ্ছে।

তাই আপনারা যারা প্রতীকী ফেরাউনের মূর্তিটিকে লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপ করেছেন, অবশ্যয় আপনাদের সচেতন থাকতে হবে যে ঐ মূর্তিটিই হচ্ছে আজকের আমেরিকা এর সহযোগী হিসেবে ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য এবং আরও কয়েকটি দেশ, যারা ফিলিস্তিন, কাস্মির, রোহিঙ্গা, চেচনিয়া, বসনিয়া, তাতার, উইঘুর, সোমালিয়াসহ বিশ্বব্যাপী মজলুম জনতাকে জুলুম নির্যাতন করে আসছে। আপনি এখন ইব্রাহীম(আঃ) এর মত বিদ্রোহী ও বিপ্লবী, মজলুম জনতার বিপ্লবী নেতা। আপনার উপর দায়িত্ব পড়েছে জনগণকে স্বৈরাচারী আমেরিকার কবল থেকে মুক্ত করা। অতএব আপনি গুলি করুন, যেন আপনার গুলিটি আমেরিকাকে ভেদ করে চলে এবং বিপর্যস্ত হয় আমেরিকা তথা ফেরাউন কাঠামো। আপনি যখনি আমেরিকার দিকে গুলি ছুড়বেন, তারমানে তখন আপনি “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” অর্থাৎ ইলাহ হিসেবে আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে মানিনা এই শক্তিশালী বাণীটি বাস্তবায়ন করছেন। অবশ্যই আপনাকে বিশ্বের মজলুম জনতাকে সঙ্গে নিয়ে লড়তে হবে। আমি বলছিনা যে আপনি আইএস ও আলকায়েদারমত এখনই গিয়ে বোমা হামলা করুন প্রথমে আপনাকে অসচেতন জনগণকে সচেতন করতে হবে, এই জন্য আপনাকে বুদ্ধিবৃত্তিক লড়াই করতে হবে। বিশ্বব্যাপী জনগন সচেতন হলেই আমেরিকার পতন ঘটবে। জালিম শাসকেরা তখনই শাসন ক্ষমতা চালাতে পারে যখন জনগন থাকে অসচেতন।

বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে ফেরাউন, কারুন ও বালাম স্ট্রাকচারঃ প্রসঙ্গ হজ্জ(পর্ব-২)
বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, ডব্লিউটিও, অন্যান্য বহুজাতিক কোম্পানি ও পুঁজিপতি শ্রেণী = কারুন কাঠামো
পবিত্র কোরানে কারুন সম্পর্কে বলা হয়েছে, কারুন ছিল অনেক ধন ভাণ্ডারের অধিকারী, তার ধনভাণ্ডার এতো বেশী ছিল যে, এই ধনভাণ্ডারের চাবী বহন করা একদল লোকের পক্ষেও কষ্ট সাধ্য ছিল। তার ধনভাণ্ডার নিয়ে সে অনেক দম্ভ করত। সে যখন জাঁকজমক পূর্ণ জীবন যাপন করত, তা দেখে পাড়া প্রতিবেশী পার্থিব লালসায় আক্ষেপ করত। সাধারণত, সমাজে অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার না থাকলে বা শোষণ, সম্পদ লুণ্ঠন থাকলে কারুনের মত অল্প কিছু মানুষ বিশাল ধনভাণ্ডারের মালিক হতে পারে। আর যদি সমাজে অল্প কিছু লোক অধিক সম্পদের মালিক হয়, তাহলে সেই সমাজে ডাকাতি, ছিনতাই, সন্ত্রাসী, কালোবাজারি, খুন, রক্তপাত বেঁড়েই চলবে। তাই আমরা কারুনকে উল্লেখ করেছি ধন ও ধনতন্ত্রের প্রতীক হিসেবে এবং এর কাজ শোষণ, সম্পদ লুণ্ঠন, বানিজ্য ও রক্তপাত করা।
ডঃ আলী শরীয়তী বলেছেন- “প্রকৃত পক্ষে এইকি সত্যি নয় যে তিন মূর্তি আসলে এক শয়তানেরই স্মারক” অর্থাৎ তিনি বলেছেন- শয়তান একটায় কিন্তু এক শয়তানই ভিন্ন ভিন্ন রূপ ধারন করে আছে। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, ডব্লিউটিও এই প্রতিষ্ঠান গুলোর পেছনে মূলত এক শয়তান রয়েছে মূল ভূমিকায় আর অন্যরা রয়েছে এর সহযোগী হিসেবে। এই শয়তানটাই হল আমেরিকা। এরা হচ্ছে পুঁজিবাদী আদর্শের ধারক। এই আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো আমেরিকার বিশ্বব্যাপী স্বৈরাচারী শাসন,দখলদারিত্ব,আগ্রাসন,ধ্বংসলীলা ইত্যাদি কর্মকাণ্ডে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। কারুন ছিল ফেরাউনের পরিষদের একজন। কারুন ছিল পুজিবাদী আদর্শের ধারক। যে ফেরাউনের স্বৈরাচারী শাসন ক্ষমতাকে সহযোগিতা ও বৈধতা দিত। ফেরাউন ও কারুন পারস্পারিক সহযোগিতা করত। ঠিক একই ভাবে আমেরিকা বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, ডব্লিউটিও কে প্রতিষ্ঠিত করেছে, পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রন করছে। তেমনি ভাবে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, ডব্লিউটিও আমেরিকার বৈশ্বিক সাম্রাজ্য বিস্তারে সহযোগিতা করছে। আমেরিকা বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, ডব্লিউটিও এর মাধ্যমে ঋণ ও সুদী কারবারি করে দরিদ্র দেশগুলোকে ঋণের জালে ফেলে যেমন বিশ্বব্যাপী শোষণ করছে তেমনি ভাবে এই প্রতিষ্ঠান গুলো দরিদ্র দেশগুলোকে শর্ত আরোপ করে পূঁজিবাদী আদর্শ গ্রহন করতে বাধ্য করে যাচ্ছে,দেশগুলোর রাজনীতি, অর্থনীতিতে অযাচিত হস্তক্ষেপ করে সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করছে। সারা বিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রায় ৭৫ শতাংশ বহুজাতিক কোম্পানি গুলোর মালিকানা আমেরিকা একাই। এই বহুজাতিক কোম্পানি গুলো খনিজ সম্পদ উত্তোলনের নামে বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী তেল, গ্যাস ও অন্যান্য খনিজ সম্পদ লুণ্ঠন করে যাচ্ছে (বিশ্বের অন্যান্য সাম্রাজ্যবাদী দেশ যেমন ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়া, চীন এরাও লুণ্ঠন করছে তবে স্বল্প পরিসরে)। প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক একমাত্র আল্লাহ অথচ কৌশলে এই প্রাকৃতিক সম্পদের মালিকানা দাবী করছে আমেরিকার বহুজাতিক কোম্পানি গুলো, দাবী করে অন্যের সম্পদ লুটপাট করে নিয়ে যাচ্ছে। ফলে পশ্চিমা পূঁজিপতিরা আরও বেশী পুজির মালিক হচ্ছে। এভাবে তারা কোর স্টেট গড়ে তুলেছে। অন্যদিকে পেরিফেরী স্টেট গুলো আরও বেশী দরিদ্র থেকে দরিদ্র হচ্ছে। । আমেরিকার অকুপাই ওয়াল স্ট্রিটে পুজিবাদ বিরোধী আন্দোলনের কথা আমরা সবাই জানি। যেখানে বলা হয়েছিল- ৯৫ শতাংশ মানুষের সম্পদ মাত্র ৫ শতাংশ পূঁজি পতির হাতে পুঞ্জি ভুত হয়ে আছে। গ্লোবাল রিসার্চের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে-“ যুক্তরাষ্ট্রের ১৪ জন ব্যক্তির নিকট কুক্ষিগত হয়ে আছে বিশ্বের ৫০ কোটি মানুষের খাবারের অর্থ। অল্প কয়েক ব্যক্তির নিকট বিশ্ব মানুষের সম্পদ কুক্ষিগত হওয়ার ফলে বিশ্বের প্রান্তিক দরিদ্র দেশগুলো যেমন আফ্রিকার সোমালিয়া, ইথিওপিয়ার মত দেশগুলোতে দুর্ভিক্ষে অর্ধহারে, অনাহারে মানুষ মারা যাচ্ছে।

তাই আপনারা যারা হজ্জের ময়দানে মিনায় প্রতীকী অর্থে দ্বিতীয় মূর্তিটিকে পাথর নিক্ষেপে আঘাত করেছেন । এই দ্বিতীয় মূর্তিটিই আজকের বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, ডব্লিউটিও, অন্যান্য বহুজাতিক কোম্পানি ও পুঁজিপতি শ্রেণী। আপনারা যারা যেখান থেকে এসেছেন নিজ নিজ এলাকা, কর্মক্ষেত্রে, নিজের দেশে থেকে সংগ্রাম করুন এই বৈশ্বিক পুঁজিবাদী কারুন কাঠামোর বিরুদ্ধে। বুলেট নিক্ষেপ করুন এই সকল বিশ্ব ব্যাংক, আইএমএফ, ডব্লিউটিও, অন্যান্য বহুজাতিক কোম্পানি ও পুঁজিপতি শ্রেণীর বিরুদ্ধে। উৎখাত করুন তাদের প্রভাব প্রতিপত্তি আপনার নিজস্ব সমাজ তথা বিশ্ব সমাজ থেকে। জনগণকে জাগিয়ে তুলুন, আন্দোলন করুন এই সকল তাগুতি কাঠামোকে উচ্ছেদ করার জন্য। প্রতিষ্ঠিত করুন সকল সম্পদের উপর একমাত্র আল্লাহর মালিকানা ও সার্বভৌমত্ব। ঘোষণা করুন সকল সম্পদের মালিক একমাত্র আল্লাহ, কোন পুঁজিপতি বা শিল্পপতি নয়। কারন আপনি সেই বিদ্রোহী নবী ইব্রাহীম (আঃ) এর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন।

স্যাকুলার বিশ্ববিদ্যালয়সমুহ, আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা,স্যাকুলার বুদ্ধিজীবীশ্রেণী ও গনমাধ্যম = বালাম কাঠামো
ডঃ আলী শরীয়তী বালামকে উল্লেখ করেছেন- চাতুরী ও ভন্ডামীর প্রতীক হিসেবে।অর্থাৎ তারাই বালাম ও বালাম কাঠামোর অন্তর্ভুক্ত যে বা যারা মানুষকে মুক্তির পথে পরিচালিত না করে,অজ্ঞতা ও বিভ্রান্তির পথে পরিচালিত করে। যারা চাই মানুষ সচেতন না হোক। মানুষের বিধানদাতা একমাত্র আল্লাহ অথচ এরাই মানুষের বিধান রচনা করে এবং শিক্ষা দেয়।এই বালামই ফেরাউন ও কারুনের অপকর্মকে মানুষের মগজ ধোলাই দিয়ে বৈধতা দেয়। মানুষের জীবন কি? জগত কি? মানুষের লাইফ স্টাইল কি হবে? সমাজ ব্যবস্থা কি হবে? স্যাকুলারিজম না অন্য কিছু, পুজিবাদ না সমাজতন্ত্র ইত্যাদি দর্শন মানুষকে বাতলে দেয় এবং বিভিন্ন ভাবে মানুষকে মিসগাইড করে। ফলে মানুষ বিভ্রান্ত ও পথভ্রষ্ট হয়ে পড়েছে ।

আজকের সমাজে বালামের রূপ পরিবর্তন হয়ে বালামের স্থান দখল করে বসে আছে স্যাকুলার বিশ্ববিদ্যালয়সমুহ, আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা,স্যাকুলার বুদ্ধিজীবীশ্রেণী ও গনমাধ্যম। পশ্চিমা উপবেশিক কাল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা ব্যবস্থা পশ্চিমা স্যাকুলার পুঁজিবাদী, ভোগবাদী মতাদর্শের আলোকে গড়ে তোলা হয়েছে। বর্তমানে বিশ্বায়ন সাম্রাজ্যবাদের যুগে এই দায়িত্ব গ্রহন করেছে আমেরিকা, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও ডব্লিউটিও। ঠিক ফেরাউন ও কারুন যেমন বালামকে সহায়তা করত তাদের কর্মকাণ্ড ও পুঁজিবাদী মতাদর্শকে বৈধতা দেওয়ার জন্য। একইভাবে আমেরিকা, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও ডব্লিউটিও প্রতিষ্ঠিত, প্রনয়ন ও সহায়তা করেছে বিশ্বেব্যাপী আজকের স্যাকুলার বিশ্ববিদ্যালয়সমুহ, আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা,গনমাধ্যম ও এক শ্রেণীর স্যাকুলার বুদ্ধিজীবী। যারা বর্তমানের ফেরাউন ও কারুন কাঠামোকে বৈধতা ও প্রতিষ্ঠিত করে যাচ্ছে।ফলে বিশ্বব্যপী ত্রিমূর্তির একটা শৃঙ্খল তৈরি হয়েছে। এই তিনটি মূর্তি একে অপরকে সাহায্য করে বাঁচিয়ে রেখেছে।
ডঃ আলী শরীয়তী বলেছেন-“ফেরাউন বৈধ করে দিচ্ছে কারুনের সম্পদ লুণ্ঠন। কারুন পৃষ্ঠপোষকতা করছে বালামকে অর্থাৎ অসৎ বুদ্ধিজীবীকে।পুনরাই বালাম ফতোয়া দিচ্ছে ফেরাউন দুনিয়ার বুকে আল্লাহর প্রতিনিধি”। অর্থাৎ বালাম জনগণকে পরামর্শ দিচ্ছে যে ফেরাউনের আনুগত্য করতে হবে। আর বর্তমানে আমেরিকা টিকিয়ে রেখেছে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও ডব্লিউটিও মত পুঁজিবাদী প্রতিষ্ঠান গুলো। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ তৈরি করে দিচ্ছে স্যাকুলার বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর শিক্ষা ব্যবস্থাকে।এই শিক্ষা ব্যবস্থা দ্বারা শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে কিভাবে আমেরিকার আনুগত্য করা যায় এবং পুঁজিবাদী তথা সাম্রাজ্যবাদীদের দাসে রুপান্তরিত হওয়া যায়।
আজকের স্যাকুলার বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ হচ্ছে স্যাকুলার পুঁজিবাদী তথা সাম্রাজ্যবাদী মতাদর্শ প্রচার কেন্দ্র। বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে আমেরিকা, বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ অর্থায়ন করে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহতে আমেরিকা, বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ এর প্রেসক্রিপশনে শিক্ষাব্যবস্থা প্রনয়ন করে থাকে। এই স্যাকুলার পুঁজিবাদী তথা সাম্রাজ্যবাদী শিক্ষাব্যবস্থার মগজ ধোলাই পেয়ে তৈরি হয়েছে একটা বিশাল বুদ্ধিজীবীশ্রেণীর। যারা আমেরিকা বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও ডব্লিউটিও এর সাম্রাজ্যবাদী প্রজেক্ট সমর্থন ও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।আমেরিকা, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও ডব্লিউটিও প্রভাব প্রতিপত্তিকে মেনে নিয়ে আনুগত্য করার জন্য জনগণকে শিক্ষা দিচ্ছে। একশ্রেণীর চেতনাহীন ছাত্র সমাজ ও জনগণও তৈরি হয়েছে যারা পুঁজিবাদী তথা সাম্রাজ্যবাদী গুষ্ঠিগুলোর আনুগত্য করেছে, যারা নিষ্ক্রিয়, নির্জীব বহুজাতিক কোম্পানির দাসে পরিনত হয়েছে। বর্তমানে আমেরিকা বিশ্বব্যাংকের মাধ্যমে নিওলিবারেল পলিসি বাস্তবায়ন করার জন্য স্যাকুলার বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ শিক্ষাব্যবস্থা প্রনয়ন করে যাচ্ছে। বিজ্ঞানের নামে মানুষকে বিপথগামী করা হচ্ছে। বাংলাদেশের সমাজে আজকের বালাম হল মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও মুন্তাসির মামুনের মত শিক্ষাবিদ ও বুদ্ধিজীবীবৃন্দ, হলিউড, বলিউড ও স্টার জলসার মত ভারতীয় টিভি চ্যানেল গুলো । যে গনতন্ত্র আজ পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রেখেছে এই গনতন্ত্র বালামী চিন্তার ফসল।

অন্যদিকে, সমগ্র বিশ্বকে বাজারে পরিনত করা ও ভোগবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠা করার জন্য পশ্চিমা গনমাধ্যম (বিবিসি, রয়টার্স, সিএনএন, এএফপি) বালামের ভুমিকা পালন করছে। গনমাধ্যম যেমন সাম্রাজ্য বিস্তারে সাহায্য করছে তেমনি ভাবে মানুষের আদর্শ ও সংস্কৃতি কি হবে তা নির্মাণ করে দিচ্ছে। বৈশ্বিক গনমাধ্যম এমনই এক দৈত্য শুধু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ছাড়া পরিবারসহ সকল প্রতিষ্ঠানে প্রভাব বিস্তার করছে। গনমাধ্যমের দ্বারা অতি দ্রুত সমাজ পরিবর্তন ঘটছে। প্রতিটি ঘরে ঘরে টেলিভিশন আজ মানুষকে বিজাতীয় সংস্কৃতি চর্চার প্রশিক্ষন দিচ্ছে। ঘরে ঘরে আজ টেলিভিশন রূপী বালাম প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করছে। বাংলাদেশে বহুল জনপ্রিয় পত্রিকা “প্রথমআলো” প্রগতিবাদী বালাম হিসেবে তরুন সমাজের মগজ ধোলাই দিচ্ছে।প্রথমআলো তরুন সমাজের জীবনদর্শন নির্মাণ করে দিচ্ছে। প্রথমআলো আজ চাতুরী ও ভন্ডামির মাধ্যমে তরুন সমাজকে পথ প্রদর্শন করছে।

আবার সমাজে প্রচলিত অন্ধ ধর্মের মধ্যেও বালাম স্ট্রাকচার রয়েছে। সমাজের পথ বিচ্যুত আলেম ওলামাও ধর্মের নামে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। পবিত্র কোরানে আল্লাহপাক বলেছেন- “আল্লাহ ছারাও তারা তাদের রাব্বি,তাদের সাধুদেরকে এবং মরিয়ম তনয় ঈসাকেও তাদের পালন কর্তা করে ফেলেছে”(সুরা-তাওবা-৩১)।
ইমানদারদেরকে তাগুতি কাঠামোকে সমাজ থেকে উৎখাত করে আদর্শ, শান্তিপূর্ণ ও উন্নত সমাজ গঠনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাগুতি কাঠামো কখনো শান্তিপূর্ণ ও উন্নত সমাজ গঠন করতে দিবে না। তাই ইব্রাহীম (আঃ) এর অনুসারীদের নিজ নিজ সমাজ ও বিশ্ব সমাজ সম্পর্কে গভীর জ্ঞান গবেষণা থাকতে হবে। তাহলে প্রচলিত সমাজে ফেরাউন, কারুন ও বালাম কাঠামোকে চিিহ্নত করা যাবে।

তাই আপনারা যারা প্রথম মূর্তিকে লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপ করেছেন । আপনাদের অবশ্যই জানতে হবে এই প্রথম মূর্তিটিই আজকের স্যাকুলার বিশ্ববিদ্যালয়সমুহ, আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা,স্যাকুলার বুদ্ধিজীবীশ্রেণী ও গনমাধ্যম।অতএব জিহাদ করুন বৈশ্বিক বালাম কাঠামোর বিরুদ্ধে। মানুষকে মুক্ত করুন চিন্তার দৈন্যতা ও শৃঙ্খল থাকে। জিহাদ করুন বাংলাদেশের তথাকথিত বুদ্ধিজীবীদের বিরুদ্ধে। জিহাদ করুন বিজ্ঞানবাদ, পুজিবাদ, মুক্তবাজার অর্থনীতি ও পশ্চিমা গনতন্ত্রের বিরুদ্ধে। পাথর নিক্ষেপ করুন বাংলাদেশের সমাজে আজকের বালাম প্রথমআলো, হলিউড, বলিউড ও স্টার জলসার মত ভারতীয় টিভি চ্যানেলগুলোর প্রভাব এবং মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও মুন্তাসির মামুনের মত শিক্ষাবিদ ও বুদ্ধিজীবীবৃন্দের বিরুদ্ধে। ঘোষণা করুন একমাত্র আল্লাহ্‌ই আমাদের বিধান দাতা কোন স্যাকুলার বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষাব্যবস্থা, স্যাকুলার বুদ্ধিজীবীশ্রেণী ও গনমাধ্যম নয় ।
অতএব হজের ময়দানে আপনি যেহেতু তিনটি মূর্তিকে আঘাত করে প্রতীকী অর্থে বিজয় লাভ করেছেন। অতএব আপনার সমাজে অস্তিত্তবান ঐ তিন মূর্তি বিরুদ্ধে আপনার সংগ্রাম অনবরত চলতেই থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত না আপনি ফেরাউন ,কারুন ও বালাম কাঠামোকে বিপর্যস্ত করে বিজয় লাভ না করছেন। এক সময় ইব্রাহীম (আ)এর অনুসারীদের বিজয় অনিবার্য। এই জন্যই মহান আল্লাহ তিন মূর্তির সঙ্গে যুদ্ধের পরেই বিজয় লাভের জন্য ঈদ আয়োজন করেছেন। এই হচ্ছে তাগুতি কাঠামোর বিরুদ্ধে চীরন্তন সংগ্রাম তা যতক্ষণ পর্যন্ত না সমগ্র পৃথিবীতে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ” বানী প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে তত দিন পর্যন্ত চলবেই।কারন আল্লাহ তালা নিজেই ঘোষণা করেছেন-“আমার যোগ্যতা বান্দাগন পৃথিবীর অধিকারী হবে”
উপসংহারে ডঃ আলী শরীয়তী আমাদের করণীয় সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আকারে বলেছেন- আপনার কাধেই আজ ইব্রাহীম (আঃ) এর দায়িত্ব অর্পিত । আপনাকে যুদ্ধ করতে হবে শোষণ নির্যাতন অত্যাচার ও উৎপীড়নের বিরুদ্ধে। যুদ্ধ করতে হবে নিজের জনগনের জন্য। আপনাকে ঝাপিয়ে পরতে হবে জেহাদে। জনগণকে জাগিয়ে তুলতে হবে। জনগন নমরুদের হাতে আজ অত্যাচারিত, উৎপীড়িত। জনগনের পাশে আজ আপনাকে দাঁড়াতে হবে ইব্রাহিমের মত। লড়াই করতে হবে নমরুদের সাথে।


মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.