নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সৌরভ পাল কুণ্ডু

সৌরভ পাল কুণ্ডু › বিস্তারিত পোস্টঃ

অল্প খরচে একাএকাই কলকাতা-আগ্রা-মথুরা-বৃন্দাবন-দিল্লি-কলকাতা ঘুরে এলাম । ( খরচ ৮৫০০ টাকা প্রায় )

২০ শে জানুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৩১

একাএকা ঘুরে এলাম কলকাতা, আগ্রা, মথুরা, বৃন্দাবন ,দিল্লি।

যেখানেই ঘুরতে যাবেন শুধু ছবি ছাড়া আর কিছু তুলে নিয়ে আসবেন না আর পদ চিহ্ন ছাড়া কিছু ফেলে আসবেন না । পরিবেশ নষ্ট করবেন না। ভিন দেশে দেশের অসন্মান হয় এমন কোন কাজ করবেন না ।

১ম দিনঃ খুলনা থেকে যাত্রা শুরু, সকাল ৬ টায় খুলনা থেকে ট্রেনে বেনাপোল আসলাম। সেখান থেকে বর্ডারে ভ্যানে করে যেতে হবে। আগে থেকে ট্রাভেল টাক্স দেওয়া থাকলে ভালো হয়, আমার দেওয়া ছিল না । বর্ডারে আমার এক বন্ধু আছে তার সহযোগিতায় ট্রাভেল ট্যাক্স দিয়ে ঢুকে পড়লাম কাস্টমস এ। কোন ঝামেলা নাই , ব্যাগ চেক শেষে ইমিগ্রেশন পুলিশ পাসপোর্টে ছাপ দিয়ে দিল। তারপর ইন্ডিয়া সিমান্ত এলাকা বনগাঁ ঢুকে পড়লাম । সেখানেও রিতিমত একই কাজ করে চাওলে আসলাম ইন্ডিয়া। এসে আগের পরিচিত ঘর থেকে টাকা রুপিতে কনভার্ট করে নিলাম । সেখান থেকে সি এন জি করে চলে আসলাম বনগাঁ রেল স্টেশন। কিছুক্ষণ পরপর কলকাতার ট্রেন পাওয়া যায়। লোকাল ট্রেনে চেপে শিয়ালদাহ স্টেশনে আসতে আনুমানিক ২.৩০ মিনিটের মত লাগে। ইন্ডিয়ায় ঢুকেই আমাদের দেশের সাথে নানা মিল অমিল লক্ষ্য করা শুরু করলাম ।
সবজায়গায় বাংলা ইংরেজির পাশাপাশি হিন্দি লেখা, বিলবোর্ড গুলোতে পরিবর্তন( :P আমাদের দেশে যেখানেই যাই সাকিব-আল-হাসানের বিলবোর্ড দেখতে পাই , তা পেলাম না ) । ট্রেনে হকারের আওয়াজ আলাদা ( দাদা জল খান জল , ঠাণ্ডা জল খান ) ।
মেয়েদের দেখলাম দারুন ভাবে সাইকেল চালিয়ে স্কুলে বা কাজে যাচ্ছে, সি এন জির সামেন ও মেয়েরা বসে পড়ছে। আর ট্রেনে প্রচণ্ড ভিড়েও প্রচুর মহিলা কাজে যাচ্ছে। এক জায়গায় দেখলাম শুকরের মাংস সাইনবোর্ড টানিয়ে বিক্রি হচ্ছে। সব জায়গায় ইন্ডিয়ান ফ্লাগ উড়ছে, সিন এন জি তে লাইনে দাড়িয়ে উঠতে হচ্ছে ।
এই সব ভাবতে ভাবতে আর দেখতে দেখতে বিদ্যুৎ চালিত লোকাল ট্রেনে প্রচণ্ড ভিড় আর গরম সহ্য করে চলে আসলাম তিলোত্তমা নগরী কলকাতায়।
বিকালে ঘুরতে বের হলাম একাই, মুলত ফেয়ারলি প্যালেস এর লোকেশন দেখতে বের হয়েছিলাম। বাসে ফেয়ারলি আসলাম সেখান থেকে টিকিট কাটার জায়গা দেখে খোঁজ খবর নিয়ে চলে আসলাম মিলেনিয়াম পার্ক। হুগলী নদীর পাড়েই সুন্দর পার্ক, কিছুক্ষণ বসে ঘুরে ৬ টাকা দিয়ে ফেরিতে উঠলাম, নদীতে ঘুরতে। নদীর মাঝখান থেকে হাওড়া ব্রিজটা অসাধারণ লাগে সন্ধ্যায়। বেশকিছু ছবি তুললাম,আশ্চর্য হলাম সম্পূর্ণ সেতুতে কোন পিলার নাই :O।
নদীর ওপারে রাজপ্রাসাদের মত একটা বিল্ডিং
দেখতে পেলাম, পরে কাছে যেয়ে দেখি এটা হাওড়া রেল স্টেশন। শিয়ালদাহর মতই বিশাল বড় স্টেশন। সবকিছু দেখতে দেখতে আবার নদীর পাড়ে আসলাম । ফেরার টিকিট কাটাই ছিল, ওখান থেকে কলকাতা শহর টা দেখতে দারুন। পাশেই সুন্দরি হাওড়া সেতু আর হুগলী নদীর বাতাস খেতে খেতে কয়েকটা ফেরি আসল গেল, আমি ভাবলাম একটু পরেই যাই । শেষ মেশ কিছু বুঝে ওঠার আগেই বুঝলাম ৮ টায় লাস্ট ফেরি, এর পরে আর ফেরি নাই। পড়লাম ঝামেলায়, অবশ্য দাগ থেকে দারুন কিছু হয়ে গেল। হেটেই পার হলাম সেতু। সে আর এক
দারুন অভিজ্ঞতা। আমার যতদূর ধারণা কলকাতায় দূর দুরান্ত থেকে মানুষ রেগুলার অফিস করে। ট্রেনে আসে সকালে আবার সন্ধ্যায় চলে যায়। হাজার হাজার মানুষ পায়ে হেটে সেতু পার হচ্ছে। আর সেতুর উপর দিয়ে চলেছে কলকাতার বিখ্যাত হলুদ ট্যাক্সি। হেটে হেটে সেতু পার হয়ে এপারে চলে আসলাম ওপার মুগ্ধতায়। এপার থেকে বাসে করে চলে আসলাম সাইথ সিটি সপিং মলে। আগে থেকেই ঠিক ছিল একটা মোবাইল কিনব। মোবাইল কিনে কাকার বাসায় চলে আসলাম ।
খরছঃ ( খুলনা-বেনাপল ট্রেন ৪৫+
অটো বেনাপোল টু বর্ডার ১০
ট্রাভেল ট্যাক্স ৫৪০+
বর্ডার টু বনগাঁ ৩০+
বনগাঁ টু শিয়ালদাহ(যাদবপুর ) ২০+
নাস্তা অন্যান্য ৫৫ ।
-----------------------------
মোট =৭০০ টাকা।

দ্বিতীয় দিনঃ
কলকাতায় আমার কাকার বাসা আছে সেখানে ২ দিন থাকলাম, কেনাকাটা করলাম। সে হিসাব এখানে দিচ্ছিনা।পরেরদিন সকালে চলে গেলাম ফেয়ারলি প্যালেস নামক জায়গায় বাসে করে। কলকাতায় বাস ভাড়া আমার কমই মনে হয়েছে। ১১ টাকার বেশী বাস ভাড়া দেয়নি যত দুরেই গিয়েছি।
ফেয়ারলি প্যালেস থেকে বন্ধন, মৈত্রী সহ ভারতের সব দূর পাল্লার ট্রেনের টিকিট কিনতে পাওয়া যায় ,এখানে শুধু বিদেশীদের টিকিট দেওয়া হয়, যত সকালে পারুন চলে যান, টিকিট পাবার সম্ভবনা তত বেশী হবে , দিনে দিনের টিকিট ও পেয়ে যেতে পারেন ।
সকাল থেকেই লাইন দেওয়া শুরু হয়, ৯ টা থেকে টিকিট দেওয়া শুরু হয়। এখানে বেশিরভাগ বাংলাদেশি টিকিট কিনতে আসে। অল্প কিছু বিদেশিও পাবেন। সিরিয়াল দিয়ে ভিতরে অপেক্ষা করুন । যদি সম্ভব হয় নেট থেকে যেখানে যাবেন তার ট্রেনের নাম ধাম জেনে যান ।
না জানলেও সমস্যা নাই, অনাদের বললে অনারা সব বুঝিয়ে বলবে আপনাকে সময় দিবে তার পর টিকিট কেটে ফেলুন ।
আমি আগ্রার( আগ্রা ফোরট স্টেশনের) টিকিট কাটলাম স্লিপার ক্লাসে, যাত্রা রাত ১১.২৫। অবশ্যই মূল পাসপোর্ট এবং পাসপোর্টের ফটোকপি একটা কলম খুচরা টাকা নিয়ে যাবেন সাথে করে। এর ভিতর একবার প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিলাম ৫ টাকার বিনিময়ে। কলকাতায় কিছুদুর পরপর সরকারি টয়লেট আছে। পরিষ্কার আছে ভালোই। আসলে আমি যা যা ভালো পেয়েছি আমাদের ঢাকার তুলনায় সেই গুলোই লিখছি, কারণ চাই আমাদের ঢাকায় ও অন্তত এইসব জনসেবা থাকুক।
কলকাতায় বাস ভাড়া নিয়ে কোন ফ্যাসাদ করা লাগেনা। সরকারের দেওয়া মেশিনে টিকিট কেটে একটা করে স্লিপ দেয়। যা ভাড়া তাই রাখে, বেশী কম নাই। রিক্সা ভাড়াও ফিক্সড, সিএনজি তে লাইন ধরে উঠতে হয়। সিনিয়র সিটিজেন মহিলাদের জন্য সিট বরাদ্দ আছে। বাস গুলো লক্কর ঝক্কর না। সবাই মোটামুটি ট্রাফিক সিগন্যাল মেনে চলে, নিরাপত্তা ও ভালো মনে হয়েছে । সব মিলিয়ে ভালো।
এবার কাকার বাড়ি চলে আসলাম এসে রাতের জন্য রেডি হলাম সব কিছু গুছিয়ে নিলাম। রাতে কাকার বাসা থেকে খেয়ে সাথে কিছু রুটি আর আলু ভাজি ডিম ঝুরি নিয়ে ১০.৩০ এর ভিতর কাকাকে নিয়ে স্টেশনে চলে আসলাম। দুরপাল্লার ট্রেন গুলোতে সাধারণত ৩০ মিনিট আগেই রেল প্লাটফর্মে চলে আসে। আর নোটিশ বোর্ডে ইংরেজিতে সব ইনফরমেশন দেখতে পাওয়া যায় । কোন ট্রেন কোন প্লাটফর্মে দাঁড়াবে।
উঠে পড়লাম ট্রেনে, আমার এলাকায় বাকি সবাই দেখি বাংলাদেশী তাও আবার খুলনার, এক বৌদি-দাদা সাথে আরও এক ফ্যামিলি আঙ্কেল আনটি আর একটা বাচ্চা ছেলে। ব্যাস তাদের সাথে গল্প জুড়ে দিলাম। তবে সবাই যখন জানল আমি একাই আগ্রা যাচ্ছি তাআ রিতিমত ভয় পেয়ে গেল। যাই হোক কাকা কে বিদায় দিয়ে দিলাম। ঠিক ১১.২৫ এই ট্রেন ছেড়ে দিল। শুরু হল আমার দিল্লি যাত্রা।
এবার গল্পের পালা, দেশি বৌদি পেয়ে আলাপ জমিয়ে দিলাম ;) । কোথায় পড়াশুনা করি, প্রেম করি কিনা, না বলাতে সেই ঘটকালি শুরু করে দিল :P
এত দূরে কেন একা একা যাচ্ছি কবে ফিরব ইত্যাদি ইত্যাদি। CSE থেকে পড়েছি শুনে একটু বেশিই আপ্লূত হল :P। যাই হোক পার্ট সার্ট নিতে পারিনা জন্য মেয়ের ঠিকানা জানা হল না। এক সময় সবার ঘুম আসতে লাগল,
এদিকে বাইয়ে মোটামুটি ভালোই বৃষ্টি হচ্ছে, আমার লোয়ার সিট ছিল। মিডিল আর আপার দাদা বৌদির।আসানসোল স্টেশনের পর ব্যাগ বালিশ বানিয়ে আমি ঘুমিয়ে পড়লাম ।
খরচঃবাস ভাড়া (ফেয়ারলি যাওয়া আসা ১১+১১=২২
টিকিট ৮২০
শিয়ালদাহ যাওয়া ২০
অন্যান্য ৩৮ রুপি
-------------------------
মোট = ৯০০ রুপি ।
তৃতীয় দিনঃ ভোরে ঘুম থেকে উঠে দেখি বাইরে শুধু তাল গাছ আর তাল গাছ। যেন তাল গাছের জঙ্গল। ৫০ কিমির মত রাস্তা পার হলাম শুধুই তাল গাছ ছাড়া আর তেমন কোন গাছ চোখে পড়ল না । বুঝলাম বাংলার বাইরে চলে এসেছি। দেখলাম মাঠে ২ জনে ওপেনে কাজ :P সারছে। ওনারা গয়ায় যাবে ধর্মীয় কাজে। দেখতে দেখতে গয়ায় চলে আসলাম। যখন ওনারা নেমে যাবেন সবাই বিদায় নিলেন। আমার যাত্রার শুভ কামনা করে দাদা বৌদি আঙ্কেল অ্যান্টি এমনকি বাচ্চাটাও যাওয়ার সময় নিজেদের লোকের মত করে বিদায় জানালেন।
এর পর বিহারিরা উঠল । এমনিতে বাংলা ভাষী তার উপর নিজের দেশের লোক আমার ও একটু খারাপ লাগল ওনারা যাওয়ার সময়। বিহারিরা উঠেই হিন্দি ভোজপুরি বলা শুরু করল। এতখন আঙ্কেলের সাথে মনের মাধুরি মিশিয়ে বাংলার আর বিহারের প্রকৃতির পরিবর্তন আলোচনা করছিলাম সেই
আলোচনার আলো নিভে গেল। আমি শুধু বাইরে তাকিয়ে তাকিয়ে নানান দেশ আর তাদের বিচিত্র বাড়িঘর মাঠ ফসল লোকালয় দেখতে লাগলাম। এই প্রথম নিজেকে বিদেশি মনে হতে শুরু করল । তারা হিন্দিতে কিছু জিজ্ঞাসা করলে আমাকে ইংরেজিতে উত্তর দিতে হচ্ছিল বা ইশারায় বুঝাচ্ছিলাম :P। আমি হিন্দিটা মোটেই পারিনা, বললে বুঝি মোটামুটি কিন্তু বলতে পারিনা ।
যাই হোক কাজ চালিয়ে নিতে লাগলাম। সবাই কিছুটা অবাক হিন্দি জানিনা দেখে। বিহারের আগে পরে ঝাড়খণ্ড নামক প্রদেশ। ঘুমিয়ে থাকার কারনে দেখতে পারিনি একটুও। তবে এখানে বর্ণনা দিচ্ছি আসার সময় দেখেছি সেটার। আসানসলই পশ্চিম বাংলা তথা বাংলা ভাষাভাষীদের শেষ স্টেশন।
এর পর ধানবাদ স্টেশন, পরে ঝাড়খণ্ড এর ভিতরে। ঝাড়খণ্ডে প্রচুর কয়লা খনি রয়েছে। ট্রেন থেকেই দেখা যায় কয়লা তোলার মহাযজ্ঞ। ঝাড়খণ্ডে মানুষের বসতি কম মনে হয়েছে। জঙ্গল আছে, ছোট ছোট পাহাড় আছে। ট্রেনে এমনকি সুরুঙ্গর ভিতর দিয়েও যায়। আর মাইলের পর মেইল জঙ্গল। সম্পূর্ণ ভিন্ন এক আবহাওয়া। মাটি লাল । ফসল খুব কম আর যেখানে পাহাড় নেই সেখানেও সমতল না বন্ধুর পথ। উচুনিচু পথ, ঝাড়খণ্ডের পর যে রাজ্য সেটা বিহার। বাংলার ভিতরে বর্ধমান,দুরগাপুর রানিগঞ্জ,আসানসোল এই স্টেশন গুলো। ঝাড়খণ্ডের ভিতরে
ধানবাদ, পরশুরাম, কেদরনাথ ইত্যাদি জংশন।
বিহারের এর ভিতর গয়া, দেহরি অন সান, সাসারাম ইত্যাদি জংশন। সকালে সেই রুটি আর আলু ভাজি খেলাম। বিহারে মনে হল জমি অনুরবর, ফসল লালচে । আর দেখলাম মহিলারা কাপরের আচল উলটা দিক থেকে দেয়। মানুষেরা বাড়িতে প্লাস্টার করেনা, অধিকাংশ বাড়িতে কোন জানালা নাই।
এক সময় যমুনা নদীর উপর চলে আসলাম । এই নদীই বিহার এবং উত্তরপ্রদেশ আলাদা করেছে। উত্তর প্রদেশে ঢুকে পড়লাম। দুপুর হয়ে গেলে ট্রেনের ভিতরেই আণ্ডা চাভাল( ভাত এর হিন্দি) ৮০ টাকার বিনিময়ে খেয়ে নিলাম। মাঝে হালকা বাদাম চিপস খাইলাম । বিকালে কানপুর জংশনে চলে আসলাম । মাঝে মুঘল সরাই, বারানাসি,এলাহাবাদ প্রভৃতি জংশন পড়ল। কানপুর সেন্ট্রাল নামক স্টেশনে অনেকক্ষণ ট্রেন থামল। এবার একটু ট্রেন থেকে নাম্লাম :) । ব্যাগ সাথে করেই নামলাম । স্টেশন থেকে ঠাণ্ডা জল বোতলে নিয়ে নিলাম।
ট্রেন বিকালেই পৌঁছানোর কথা ছিল কিন্তু ৩-৪ ঘণ্টা লেট। আগ্রা যেতে রাত ৯-১০ টা বাজবে। কানপুর থেকে ট্রেন ছেড়েদিল এর পর তুন্ডলা স্টেশন। স্টেশন গুলোতে হিন্দি উর্দু এবং ইংরেজিতে লেখা আছে। তুন্দলা স্টেশনে সন্ধার আগেই পউছাল। এবার দেখলাম মাঠে ময়ূর :) চরে বেড়াচ্ছে। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। এর পর আরও ময়ূর দেখতে পেলাম। অসাধারণ :) প্রাকৃতিক ময়ূর, কিন্তু ট্রেন প্রায় ১২০ কিমি গতিতে যাওয়ার কারনে ছবি তুলতে পারিনি ।
সবশেষে আগ্রা ফরট স্টেশনে আসলাম ৯.৩০ এর দিকে। মোবাইল ভরসা । সব সময় GPS এ ম্যাপ দেখে চলা অভ্যাস আমার। সবাই যে পথে বের হচ্ছে আমিও সেই পথে বের হলাম । আগে থেকে জানি তাজগঞ্জ থানার কাছে যাব আমি। হোটেল ওখানেই। কিন্তু আগ্রায় প্রচুর দালাল, আমার পিছনেও
দালাল লেগে গেল হোটেলে নিয়ে যাবে জন্য । আমি যেই ইংরেজিতে কথা বলেছি অম্নি বুঝে গেল আমি চিনিনা। ব্যাস নাছোড়বান্দা। আমি আগে থেকে UBER OLA MakeMyTrip Booking ইত্যাদি প্রয়োজনীয় এপ নামিয়ে রেখেছিলাম। আমি uber ওপেন করে ভাব নিলাম :) যে আমি uber এ যাব । ওমনি সব দালাল চলে গেল । :P পরে ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে এসে পুরানি মান্ডি নামক জায়গায় আসলাম। রাত হয়ে গেছিলাম একটু ভয় ভয় করছিল কারণ আমি একা ছিলাম। যাই হোক gps map দেখে হোটেলে গেলাম । ওনারা জানাল ৪০০ টাকায়
ওনাদের একটা রুম আছে কিন্তু বর্তমানে বুকড। সমস্যা নাই আশে পাশে আরও অনেক হোটেল পেলাম একটা হোটেল ৬০০ টাকায় পছন্দ হল কিন্তু বাংলাদেশী জেনে দিতে রাজি হল না। তার পর এক চাচার রেস্টুরেন্টে গেলাম চাচার নিজের থাকার হোটেল নাই কিন্তু সে আমাকে পাশের
এক হোটেলে নিয়ে গেল এবং বাংলাদেশী যেনে বেশ খাতির করল। সেই হোটেলটা সুন্দর ছিল। ৫৫০ টাকায় হোটেল বুক করে স্নান করে চাচার রেস্টুরেন্টে চলে গেলাম রাতের খাবার খেতে। তাজমহলের পাশেই রেস্টুরেন্ট , ছাদে বসে চাঁদের আলোয় অপরূপ তাজমহলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। অনেকক্ষণ বসে থাকলাম। তারপর রাতে ৮০ টাকা দিয়ে এগ ফ্রাইড রাইস খেলাম :)
চাচা খুব খাতির করল। হোটেলে একটা হোটেল বয় এর সাথে গল্প জুড়ে দিলাম , তার নাম রাসেল , আমি বললাম আমার রাসেল নামে ২ টা বন্ধু আছে। সে আমাকে দারুন একটা ইনফরমেশন জানাল । বলল আগামিকাল ঈদ উপলক্ষে সকাল ১০ টার আগে কোন টিকিট লাগবেনা । ব্যাস কেল্লা ফতে ১০০০ টাকার টিকিট এর পয়সা বেচে গেল ।
হোটেলে ব্যাক করে ঘুমিয়ে পড়লাম।
খরচঃ ( দুপুরের খাবার ৮০
স্টেশন টু হোটেল ১০
হোটেল ভাড়া ৫৫০
রাতের খাবার ৮০
-----------------
মোট = ৭২০ রুপি ।
চতুর্থ দিনঃ
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি ৮ টা বাজে :O । তাড়াহুড়া করে স্নান করে চলে গেলাম গেটে। আমি একেবারে গেটের কাছেই ছিলাম । ১ মিনিটের দুরত্তে , যেয়ে দেখি সবাই ঈদের নামাজ পড়ে বের হচ্ছে। তবে এই গেট দিয়ে ঢুকতে দিল না । অন্য পাশের গেটে গেলাম যেয়ে দেখি সত্যি পুরোপুরি ফ্রি
। দেরি না করে ভিতরে গেলাম । প্রথমে তাজমহলের গেট । তিন দিকে তিনটা গেট পড়ে । গেট দিয়ে ভিতরে যেতেই দেখলাম সগৌরবে দাড়িয়ে আছে পৃথিবীর সপ্তম আশ্চার্য The TAJ . মুঘল সম্রাট শাহাজাহানের অপার কীর্তি । মুগ্ধ নয়নে দেখতে থাকলাম। সেই সাথে দেখলাম অনেক সাদা চামড়ার বিদেশি বিদেশিনী । সাউথ ইন্ডিয়ান, পাঞ্জাবী নানা বর্ণের নানা পোশাকের নানা ভাষার নানান দেশের সব মানুষ। আমি শুধু তাজমহল দেখতে আসিনি এসেছি পুরো ভারত দেখতে, ভারতের সংস্কৃতি, খাবার, ভাষা, সবকিছু দেখতে এসেছি।
তাজমহলের সৌন্দর্য লিখে প্রকাশ করা যায় না। না গেলে বোঝান যায় না । শ্বেত পাথরের বিশাল তাজমহলের পরতে পরতে নানা বর্ণের পাথর কেটে কেটে মনকড়া ডিজাইন করা। পাশেই বয়ে চলেছে যমুনা নদী। নদীটা আমাদের বুড়িগঙ্গা নদীর মত দূষিত নয় স্বাভাবিক ভাবেই বয়ে চলেছে।
এমনকি কলকাতার পাশের হুগলী নদীও দূষণ মুক্ত। দূষিত শুধু আমাদের বুড়িগঙ্গা তুরাগ :'( ।
তাজমহলের উপরে উঠে একটা প্যাকেট দেয় জুতার উপরে পরার জন্য । যাতে করে জুতার ময়লা নিচেয় কোন ইফেক্ট না ফেলে। ঘুরেঘুরে সম্পূর্ণ তাজ মহল দেখে ফেললাম। একটু চালাকি করে কোন গাইড নেইনি। যারা গাইড নিয়েছে তাদের আশে পাশে থাকলেই সব যেনে যাচ্ছি কোথায় কি আছে। অযথা টাকা খরছ করা লাগল না :P । এখানে আমার মত একাকি ভ্রমণকারী কম বেশির ভাগ কাপল তবে ফ্যামিলি বা গ্রুপ ট্যুরের প্রচুর দর্শনার্থী রয়েছে। সবাই অমায়িক একটু রিকুয়েস্ট করে ছবি তুলে নিয়েছি অনেক। ধন্যবাদ দিতে ভুলিনি, অনেককে তুলেও দিয়েছি অনেক ছবি।
ইউরোপের এবং USA এর বিদেশি পর্যটক বেশী এছাড়া জাপানী দেখলাম । কালো দের কমই দেখা মিলল । সাদা চামড়ার মানুষই বেশী। তাজমহল ঘুরতে হলে খুব ভোরে চলে আসুন । ভোরে লোক কম থাকে এবং গরম থাকেনা। পাথুরে এলাকায় একটু রোদেই ভীষণ গরম।
মনের খায়েশ মিটিয়ে তাজমহল দেখলাম ১২ টা পর্যন্ত। প্রচুর ছবি তুললাম আর মানুষের সাথে আলাপ করলাম হোক ইন্ডিয়ান বা নন ইন্ডিয়ান। সাউথের লোকদের মালায়লাম তেলেগু তামিল ভাষায় কথা বলা উপভোগ্য :D । কিচ্ছু বোঝা যায় না। সিনেমাতে শোনা আর সামনাসামনি শোনার
পার্থক্য আছে। তাদের পোশাক আশাখ ও আলাদা। মাথায় সাদা সাদা কি যেন দিয়ে দাগ দেয় , পাঞ্জাবিরা বেশ শালীন। মেয়েদের ড্রেস আমাদের দেশের মেয়েদের মতই।
তাজমহল দেখে চলে আসলাম। আসার সময় দেখলাম সবাই টিকিট কেটেই যাচ্ছে । ইয়াহুউ :) ফ্রি ফ্রি তাজমহল দেখে ফেললাম। রেস্টুরেন্টে সেখানে মোঘলাই চিকেন নামক এক পদ এর সাথে ভাত খেলাম। খাবার টা খুব সুস্বাদু ছিল। এবার আগ্রা ফরট চলে আসলাম সিএনজি করে। এসে দেখি বিদেশীদের জন্য ৬০০(সম্ভবত) রুপি আর ইন্ডিয়ান্দের ২০ । ব্যাস একটু রিস্ক নিলাম দেখতে ভারতীয় তাই ২০ টাকার টিকিট কাটলাম। (অনুতাপ নাই কারণ এগুলো যখন বানান হয়েছে আমারা একই ছিলাম সবাই ভারতীয়)। এখানেও পাইলাম এক কলকাতার আঙ্কেল অ্যান্টির গ্রুপ যারা গাইড নিয়েছে
তাদের সাথেই পুরো আগ্রা ফোর্ট দেখে ফেললাম। আগ্রা ফোর্ট বানিয়েছিলেন সম্রাট আকবর। আর শাজাহান তাজমহল। আর শাহাজাহান এর পুত্র আওরঙ্গজেবের হাতে বন্দি হয়ে আগ্রা ফোর্ট এই এক কামরায় শাহাজাহানের মৃত্যু হয়। কথিত আছে আগ্রা ফোর্ট এ বন্দি অবস্থায় প্রায় ২ কিমি দূর থেকে তারই তৈরি তাজমহল দেখতে দেখতে সাহাজানের মৃত্যু হয়।
আগ্রা ফোর্ট অনেক অনেক বড় জায়গা নিয়ে অবস্থিত। পুরোটা ঘুরে দেখাও যায়না। যাই হোক ঘণ্টা দুয়েক ঘুরে দেখে বেরিয়ে আসলাম । এবার ফতেপুর সিক্রি যাবার পালা।
আগ্রা ফোর্ট থেকে ফতেপুর সিক্রি বাসে করে যেতে হয় প্রায় ৫০ কিমি।
চলে আসলাম ফতেপুর সিক্রি ৩ টার দিকে। এটাও আকবর তৈরি করেছেন। রাজস্থান জয় করে এটা নির্মাণ করেন। আকবরের ৩ জন স্ত্রী ছিলেন হিন্দু মুসলিম আর খ্রিস্টান, তাই তিনি সব জায়গায় তিন রিতির চিহ্ন দিয়েই ইমারত নির্মাণ করেছেন। ফতেপুর হল জায়গার নাম আর সিক্রি মানে
বিজয়। ফতেপুর বিজয় করেই এই দুর্গ নির্মাণ করেন জন্য এর নাম ফরেপুত সিক্রি। এখানে আছে পৃথিবীর সব চাইতে বড় বুলন্দ দরজা। জামা মসজিদ, সেলিম চিশতীর মাজার। আর এখান থেকে সুরুংগ কেটে নাকি দিল্লি পর্যন্ত রাস্তা আছে কিন্তু সেটা এখন সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রনে।
পুরো বিল্ডিং অনেক অনেক উচুতে। সিঁড়ি ভেঙ্গে ভেঙ্গে উঠতে হয়। সেলিম চিশতীর মাজারে সাদা মারবেল পাথরে তৈরি। আকবরের নাকি সন্তান হচ্ছিল না । সেলিম চিশতী ভবিষ্যৎ বানী করেছিলেন তারপর সন্তান হয়। তাই সেলিম চিশতীর নামে এখানে মাজার তৈরি করেন। মাজারের কারুকাজ দারুন।
মোট ১৬ রকমের ডিজাইনের নকশা আছে। জামা মসজিদ বুলন্দ দরজা সবকিছুই দেখার মত।এখানেও দালাল আছে। এখানে কোন টিকিট লাগেনা। দালালের খজজোপরে পরবেন না। সব কিছু নিজেই ঘুরে ঘুরে দেখতে পারবেন। আর ভুলেও মাজারে চাদর ফুল কিনে দিতে যাবেন না।
ফতেপুর সিক্রি দেখা শেষে আবার আগ্রা ফোর্ট ফিরে এলাম । রাত হয়ে গেল। ফেরার পথে আবার ময়ুর চোখে পড়ল। সুন্দর বিকালে আসতে আসতে আমার আগ্রা ফোর্ট চলে এলাম সন্ধ্যায়।
এসে দিল্লি টু কলকাতার টিকিট কেনার খোঁজ করতে গেলাম স্টেশনে। ৮ টার বেশী বেজে গেছিল তাই আর কোন খোঁজ পেলাম না । তবে ওনারা জানাল সকালে আসলে টিকিট পাব ফরেন কোঠায়। রাতে এসে রেশমি কাবাব আর রুটি দিয়ে আহার শেষ করে হোটেলে ফিরে গেলাম।
তারপরে ব্যাগ গুছিয়ে দিলাম ঘুম।
খরচঃ ( দুপুরের খাবার ১২০+
আগ্রা ফোরট ১০ +
টিকিট ২০ +
বাস স্টেশন ১০ +
ফতেপুর সিক্রি যাওয়া আসা ৫০ + ৫০
রাতের খাবার ১৫০ )=
ফল্মুল খেয়েছি স্থানীয় খাবার খেয়েছি । পানি কিনেছি সব মিলিয়ে ১১০ রুপী ধরলাম আনুমানিক।
------------------------------------------------------------
মোট ৫২০ রুপি।
পঞ্চম দিনঃ সকালে উঠে ফ্রেশ হয়ে ব্যাগ সাথে নিলাম আজকে। হোটেলে চেক আউট করে আগ্রা ফোর্ট স্টেশনে এসে পরের দিনের দিল্লি টু কলকাতার টিকিট কেটে নিলাম। সেখান থেকে মথুরার বাস খুজে বের করে উঠে পড়লাম। মথুরা হিন্দুদের তীর্থ স্থান। শ্রীকৃষ্ণের জন্মস্থান। ১০ টার দিকে মথুরা পৌঁছলাম। বাস থেকে ১০ টাকার ভাড়া দিয়ে ইজিবাইকে শ্রীকৃষ্ণের জন্মস্থানের মন্দিরে গেলাম।
মাঝে সকালে নাস্তা করে নিয়েছি ডিম টোস্ট দিয়ে। এখানে ব্যাগ মোবাইল ক্যামেরা কিছুই নিয়ে প্রবেশ করতে দিবেনা। তবে ২ টাকার বিনিময়ে রাখা যাবে। রেখে ভিতরে গেলাম আফসোস হল ভিতরতা খুব সুন্দর কিন্তু ছবি নিতে পারলাম না। হাজার হাজার কবুতর আছে ভিতরে।পূজা শেষ হল ১১.৩০ দিকে। প্রসাদ নিয়ে বাইরে এসে দুপুরের খাবার খেলাম নিরামিষ থালি । ভাত ডাল পনির সবজি লেবু আরও সবজি ইতাদির এক প্লেট।
এবার বৃন্দাবন যাবার পালা। অটোতে করে ভ্রিন্দাবন চলে এলাম । এখানে একে একে প্রেম মন্দির, ইস্কন মন্দির, মদনমোহন মন্দির ইত্যাদি দেখে দিল্লি যাওয়ার বাস স্টেশনে চলে এলাম অটোতে করে। হরিয়ান এর ভিতর দিয়ে সরকারি বাস দিল্লির পথে যাত্রা করল। দিল্লি যাওয়ার রাস্তা চমৎকার। একেবারে মসৃণ, বাস ১০০ ১০০ টান দিল। তিনটার দিকে রওয়না দিয়েছিলাম বৃন্দাবন থেকে বাস দিল্লিতে সন্ধ্যায় পৌঁছাল । বাস থেকে নেমে গুগল ম্যাপ দিয়ে কাছাকাছি মেট্রোরেল স্টেশনে যেয়ে সোজা নিউদিল্লি স্টেশনে চলে গেলাম।
কারণ ওখানে মেইন বাজার নামে একটা জায়গা আছে ওখানে সস্তায় হোটেল পাওয়া যায়। হোটেল ৫০০-৬০০ টাকার ভিতর পাওয়া যাচ্ছিল কিন্তু ওনাদের ফরেনার রাখার অনুমতি না থাকায় দিচ্চিল না । পরে পেলাম এক কলকাতার দাদার হোটেল (নিলিমা হোটেল) সেখানে ৪০০ টাকায় রাজি হল , ওই তাই নিয়ে নিলাম, আগ্রার মত এটা এত ভালো না। তবে অফ সিজন বলে দাম কম নইলে এই হোটেল ১৫০০ তেও পাওয়া যাবেনা। ডাবল বেড , টিভি, এতাস্ট বাথ্রুম সবই ছিল।
এবার স্নান করে হোটেল থেকে বেরিয়ে পড়লাম দিল্লি দেখতে। কাছেই আরও একটা মেট্রোরেল স্টেশন আছে সেটাতে করে চলে গেলাম ইন্ডিয়া গেট দেখতে। উফফ রাতের ইন্ডিয়া গেট দারুন দেখতে। একই ভাবে ব্যাক করলাম হোটেলে। মাঝে অনেকটা পথ হাঁটলাম। দিল্লির রাজপথে, সে এক অভিনব অনুভুতি। একা একা দিল্লি ঘুরছি সব মিলিয়ে দারুন লাগছিল। এবার ফিরে এলাম হোটেল রুমে । রাতে এখানেই খেলাম আর বাইরে যেতে ইচ্ছা করছিলনা। রাতে মাছ ভাত খেলাম। এখানে ২ টা করে পিস দেয় । ডিম ও খেলেও ২ টা ডিম দেয় । ১২০ টাকায় মাছ ভাত খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।
খরচঃ আনুমানিক (হোটেল ভাড়া ৫৫০
স্টেশন ১০
টিকিট ৮৫০
মাথুরা ৭০
নাস্তা ২০ +
মন্দিরে যাওয়া ব্যাগ রাখা ২০
দুপুরে খাওয়া ৮০ +
বৃন্দাবন যাওয়া ২০
দিল্লি যাওয়া ১৫০
হোটেলে যাওয়া ২০ +
ইন্ডিয়া গেট যাওয়া আসা ২০ + ২০
হোটেল ভাড়া + ৪০০ +
রাতে খাওয়া ১২০+ অন্যান্য ৯০ =
----------------------------
মোট = ২৪৪০ রুপি )

ষষ্ট + সপ্তম দিনঃ

আগেই হোটেলের ম্যানেজার দাদাকে বলে রেখেছিলাম আমি ১২ টায় চেক আউট করব না। তাই সকালে ব্যাগ নিয়ে বের হলাম না। দিল্লির পুরোটাই ঘুরেছি মেট্রোরেলে । দিল্লির মেট্রো রেলের মোট ৬ টা কালারের লাইন আছে । লাল পারপাল হলুদ ইত্যাদি। রাজিবচক হল মোটামুটি ৪ টার ক্রসিং । আর বাকি ২ টার কাছাকাছি অন্য দুটি স্টেশনে।
আমি যে দিকের লাইনে গিয়েছি প্রথমে সেই দিকের লাইনের একেবারে শেষের স্টেশনে গিয়েছি তার পর দেখতে দেখতে ফিরেছি রাজিব চক মেট্রোরেল স্টেশন এর দিকে । এভাবে আমি রামকৃষ্ণ আশ্রম, বিড়লা লক্ষ্মী নারায়ণ মন্দির, বুদ্ধ মন্দির, আবার ইন্ডিয়া গেট, কুতুব মিনার, লোটাস টেম্পেল, আক্সারধাম মন্দির, হুমাহুন এর কবর, জন্তরমন্তর, চাঁদনী চক। এই জায়গা গুলোতে ঘুরেছি। আমার বিকালে ৫.৩৫ এ নিউদিল্লি থেকে কলকাতার টিকিট কাটা ছিল তাই একটু কম ঘুরাঘুরি হয়েছে।
সকালে প্রথমেই গেলাম রামকৃষ্ণ আশ্রমে। সেখান থেকে মেট্রোরেল এ করে লক্ষ্মীনারায়ণ মন্দির, বুদ্ধ মন্দির । এবার গেলাম কুতুব মিনার স্টেশনে। সি এন জি করে কুতুব মিনার। এখানেও ইন্দিয়ান টিকিট কেতেছিলাম । কুতুবমিনার ১১০০ সালের দিকে বানান। বিশাল মিনার । লাল পাথরের তৈরি। মিনারের গায়ে কোরআন শরীফের ক্যালিগ্রাফি করা। আগে মিনারের উপরে উঠতে দিত শুনেছি এখন আর দেয় না। কুতুবমিনার কমপ্লেক্সে আর বেশকিছু জিনিশ আছে। আছে অশোক স্থম্ভ। এটা একটা লোহার পিলার যার অজঞ্জ ৬০০০ কেজি। এটা আনুমানিক প্রায় ২৩০০ বছর আগে বানান।
ধাতুবিদ্যার উন্নতি নিয়ে এখনকার ধাতুবিদদের সসশয় যে এত বছর আগে এই ভাবে গলিয়ে কি করে এই পিলার বানান হল। এতে ফসফরাস মেশান আছে তাই মরিচা পড়েনি এখন পর্যন্ত। এর গায়ে ব্রাক্ষী লিপিতে লেখা রয়েছে। এছাড়া কুতুব মিনার কমপ্লেক্সে আরও অনেক সম্পূর্ণ অস্পম্পুরন স্থাপনা রয়েছে। কুতুব মিনার দেখে চলে আসলাম জন্তর মন্তর দিল্লি।
যন্তর মন্তরে রয়েছে মান ঘড়ি, গ্রহ নক্ষত্র ইত্যাদির গতিপথ জানার নানা উপকরণ। এ ছাড়া গালিলির সময়েই প্রথিবির কোন শহরে কখন দুপুর হচ্ছে তাও এখান থেকে জানা যেত। জন্তর মন্তর থেকে ইন্ডিয়া গেট আসলাম । ইন্ডিয়ে গেট দিল্লির একেবারে মাঝখানে। ইন্ডিয়া গেট ঘুরে গেলাম অন্য আর এক দিকে হুমায়নের মাজারে।মোঘল সম্রাট হুমায়ুনকে এখানেই কবর দেওয়া আছে। প্রথমে দেখলে মনে হবে তাজমহল। এর পর গেলাম বাহাই ধর্মাবলম্বীদের উপাসানালয় লোটাস টেম্পেল।
লোটাস টেম্পেলে যেয়ে এক বিদেশি ছবি তুলে দিতে অনুরোধ করল। তুলে দিয়ে নিজের ও একটা তুলে নিলাম। দেশের কথা শুনে জানলাম ইজ্রাইলি। যাই হোক ইজরাইল এক মাত্র দেশ যেখানে আমরা যেতে পারিনা তাই আগ্রহ বাড়ল, সাথে সে ইহুদি। কথা হল অনেক বিশয় নিয়ে, সে মাত্র ১৯ বছর বয়েসে ইউরোপের অনেক দেশ ইউএসএ জাপান ঘুরে ফেলেছে। বাংলাদেশ সম্পর্কে জানতে চাইল , বললাম পৃথিবীর সবচাইতে সুন্দর দেশ ( সত্যিই তাই )। আমিও ফিলিস্তিনিদের কেন অত্যাচার করা হচ্ছে জানতে চাইলাম। সে বলল ওটা নাকি ইহুদিদের আদি দেশ। তাড়া ছিল আমার তাই বেশী গাজালাম না। সেখান থেকে চেলে গেলাম
আক্সারধাম নামক স্টেশনে। দিল্লি মেট্রো রেলের টিকিট যে কোন জায়গা থেকে যে কোন জায়গার যাওয়ার জন্য কাটা যায় কিন্তু সময় মত করসিং এ নেমে রেল পরিবর্তন করতে হয়। সাধারণত ১ মিনিটের ভিতরেই রেল চলে আসে। রেল খুবই পরিষ্কার পরিছন্ন। যেখানে সেখানে ময়লা থুথু ফেললে সাথে সাথে জরিমান। আর ভীষণ কড়াকড়ি চেক হয়। যাই হোক আক্সারধাম যমুনার ওই পাড়ে। অনেক অনেক জায়গা নিয়ে এই মন্দির। সারাদিন লাগবে খুটে খুটে দেখতে গেলে। পুরোটাই পাথরের মন্দির। কোথাও কোন ইস্পাত ব্যবহার হয়নি। আক্সসারধাম দেখে চলে আসলাম চাঁদনী চক। চাঁদনী চকের বিখ্যাত বিরিয়ানি খেয়ে দেখি আর বেশী সময় নাই ।
সেখান থেকে আমার হোটেল কাছেই নিউ দিল্লি মেট্রো স্টেশন চলে আসলাম। এসে ব্যাগ নিয়ে দাদা কে ধন্যবাদ দিয়ে ৪.৩০ এই স্টেশনে এসে বসলাম। দাদা বলে দিয়েছিল ১৫ নং প্লাটফর্মে ট্রেন আসবে। যথাসময়য়ে পূর্বা নামক ট্রেন চলে আসল। স্লিপার ক্লাস এস ৩ তে উঠে পড়লাম নিজের জায়গা খুজে। এবার ট্রেন অন্য পথে ফিরবে। প্রথমে আসল আলীগড় তারপর একে একে নানা স্টেশন পার করতে লাগলাম। প্রায় সবাই নন বাঙালি। এক ভাই কে পেলাম মুর্শিদাবাদ বাড়ি বিএসএফ এ চাকরি করে। তার সাথে হালকা পাতলা কথা হল। ভোরের দিকে বিহারে আসলাম। বিহার থেকে কলকাতা পর্যন্ত গল্প আগেই বলেছি। পথে রাতের খাবার রুটি ভাজি কিনে নিয়েই উঠেছিলাম। সকালে বিস্কুট খেয়েই পার করলাম।
দুপুরে আন্ডা চাভাল :P (ভাত) খেলাম । সন্ধ্যায় কলকাতা পউছালাম। বাসে করে চলে এলাম কাকার বাসায়।
খরচঃ ( রেলে আনুমানিক ৩০০ +
বিরিয়ানি ২১০ +
রুটি ভাজি বিস্কুট জলের বোতল রাতের জন্য ১৫০ +
দুপুরের খাবার ৮০ +
বাসে ২০ টাকা কাকার বাসা পর্যন্ত =৭৬০ + ৪০ অন্যান্য
--------------------------------------
মোট = ৮০০ রুপি ।

অষ্টম দিনঃ এইদিন দেরিতে ঘুম থেকে উঠলাম। দুপুরের দিকে বের হয়ে গেলাম বেলুড় মঠ দেখতে নদীর ওপারে যেতে হয় । যেয়ে দেখি ৪ টার আগে খুলবে না। অপেক্ষা করলাম ৪ টা পর্যন্ত। বেলুড় মঠ ঘুরে ফেরিতে করে চলে আসলাম দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে। এখানে আসতে আসতে সন্ধ্যা হয়ে
এল। তারপর আসল বৃষ্টি। রাতের মন্দিরের ভিউ চমৎকার।বৃষ্টি থামলে পাক-সার্কাস সেভেন পয়েন্টে বিখ্যাত আর্সেনালের বিরিয়ানি খেতে চলে আসলাম। খেয়েদেয়ে আবার কাকার বাসা ফিরলাম।
খরছঃ (বাস ১১+ বাস ৯+ বাস ১১+ ফেরি ১১+ বিরিয়ানি ২৩০+ বাস ১১=২৮৫+ ১৫ অন্যান্য =৩০০ রুপি)

নবম দিনঃ সকালে শিয়ালদাহ স্টেশনে আসলাম এবং বনগাঁ হয়ে বর্ডারের সমস্ত কাজ শেরে ৩ টা নাগাদ খুলনা পৌঁছলাম। :) ইন্ডিয়া ভ্রমণ সমাপ্ত হল।
খরচঃ ( রিক্সা ১০+ বাস ১০+ ট্রেন ২০+ অটো ৩০ + ঘুষ ১২০ + বাস ভাড়া ১৫০ খাওয়া ৮০ =৪২০ রুপি)
মোট খরচঃ ৬৮০০ * ১.২ = ৮১৬০ টাকা । কম বেশী ৮০০০~৮৫০০ টাকার মত খরচ হয়েছে।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ৮:৩৯

nakkhatra365 বলেছেন: অসাধারণ লিখেছেন। সহজ সরল, প্রাঞ্জল

২| ২০ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১১:২৫

সৌরভ পাল কুণ্ডু বলেছেন: ধন্যবাদ :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.